এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • চলন্তিকা বোর্ডিং (৪) সিমলা 

    Goutam Dutt লেখকের গ্রাহক হোন
    ১২ অক্টোবর ২০২০ | ১০১৫ বার পঠিত


  • এই সিমলে চত্বর আরো কতো ঘটনা’র সাক্ষী।

    সিমলে মানে শুধু নরেন দত্ত আর গিরীশ-নকুড়ের জলভরাই নয়, সিমলে হল সে সময়কালের একটা জীবন্ত উপাদান। ঘটনাবহুল। হীরের নাকছাবির ঔজ্জ্বলে চক্‌মক্‌। আসুন, দেখে নিই হাতে পাওয়া কিছু তথ্যের সালতামামি।

    ১৭৯৩ খ্রীঃ অব্দে, অপজনের ম্যাপে আমরা দেখি — “নেটিভ টাউনের বিস্তৃতি বড়বাজার হইতে বৈঠকখানা বাজার পর্য্যন্ত ছিল।”

    ‘হোগলকুড়িয়ায়, অতিশয় হোগলাবন ছিল। প্রচুর সিমুল-গাছ পূর্ণ ছিল বলিয়া, সিমুলিয়া নামকরণ হইয়াছিল। অবশ্য এই সমস্ত নামোৎপত্তি সম্বন্ধে কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ নাই – সবই অল্পমানিক সিদ্ধান্ত মাত্র। পাকা রাস্তা আদতে ছিল না। বড়লোকেরা প্রাসাদ-তুল্য বাড়ী নির্ম্মাণ করিতেন বটে, কিন্তু চোর-ডাকাতের ভয়ে, তাহাদিগের সিপাহী-শাজির ব্যবস্থা করিতে হইত। ভদ্র বাঙ্গালীগণ দলবদ্ধ হইয়া এক এক পল্লীতে বাস করিতেন’। এই হোগলকুড়িয়া-ই হ'ল সিমলের আদি নাম।

    সুকুমার সেন তাঁর কলিকাতার কাহিনী’তে বলেছেন – “হোগলকুঁড়ে – দর্জিপাড়ার পূবে। এই অঞ্চলে ঈশ্বর গুপ্তের নিবাস ছিল। হোগলকুঁড়া নামটির অর্থ যে ‘কুণ্ডে’ অর্থাৎ ডোবায় বা মজা পুকুরে হোগলা গাছ ভর্তি। মনে হয় আসলে এ নাম হেদোরই। হেদো মানে হেজে যাওয়া পুকুর বা ডোবা"।

    কলকাতার ইতিহাসের সাথে সিমলে নামটা লতায়পাতায়। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি তখনকার ভারতসম্রাট ফারুকশায়ারের কাছ থেকে যে ৩৮টি গ্রাম খাজনার ভিত্তিতে লাভ করেছিল, তার মধ্যে সিমলা গ্রাম অন্যতম। সিমলাকে সে সময়ে ডিহি বা মৌজা উভয় নামেই অভিহিত করা হত।সে সময়ে সিমলা বলতে : পরগনা কলিকাতার উত্তরাংশ, সুতানুটির দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বাংশ মির্জাপুর পর্যন্ত এবং পূর্বে মানিকতলা পর্যন্ত। শহরতলির অন্তর্গত ডিহি সিমলার মধ্যে ছিল দুটি গ্রাম-বাহির সিমলা ও নারিকেলডাঙ্গা।

    মহেন্দ্রনাথ দত্ত আরেকটি পুরানো সিমলা বাজারের কথা উল্লেখ করেছেন : পাড়ার বুড়োদের কাছে শুনতাম সিমলা বাজার প্রথমে এখন যেটা মহেন্দ্র গোস্বামীর গলি, তার কোন এক স্থানে ছিল। একটা বড় শিমুল গাছ ছিল, তাহার নীচে বাজার বসত। আমরা কিন্তু ওই শিমুল গাছ দেখিনি এবং ওই স্থানটিতে খোলার ঘর দেখিয়াছি। আমাদের সময় যেটা সিমলার বাজার ছিল সেটা হলো এখনকার বেথুন কলেজের বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ এবং খানিকটায় বেথুন কলেজের পশ্চিম দিককার রাস্তা হইয়াছে।

    এসব ১৯২৯ সালেরকথা। মহেন্দ্রনাথ দত্ত ‘পুরাতন কথা’ নাম দিয়ে কয়েকটা অধ্যায় ভাষণ দিয়ে বলছেন। সিমলে পাড়ার চারপাশের কথা দিয়ে শুরু করছেন তাঁর বই–‘কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা’। শোনাই একটু…

    “কলিকাতার সহর এখনকার হিসাবে দুই আনা বা ছয় পয়সার সহর ছিল। এখনকার Oxford Mission কলুবাড়ী ছিল, তাহার পর হাড়ীপাড়া। মহেন্দ্র গোঁসাই গলিটা ডোমপাড়া ছিল। মধু রায় গলি গয়লাপাড়া ছিল এবং দক্ষিণ দিকে প্রকাণ্ড একটা মাঠ ছিল তাহাতে মরা গরু, বাছুর ফেলিয়া দিত। সে একটা গো-ভাগাড় ছিল। দিনে শকুনীর উৎপাত, রাত্রে শেয়ালের উৎপাত। হাতীবাগান অরণ্য বীজবন ছিল। লোকজনের বাস ছিল না। প্রকাণ্ড মাঠ, মাঝে মাঝে ঝোপ, ডোবা ও কাটানটের ঝাড়, জনকতক হাড়ী বাস করত! রাস্তায় অন্ধকারে একলা যাইলে জিনিসপত্র কাড়িয়া লইত। গ্রে ষ্ট্রীট বাহির হইবার পর, সে বড় মাঠটা টুকরা টুকরা করিয়া বিক্রয় হয় এবং লোকে খণ্ড খণ্ড করিয়া জমি খরিদ করিয়া বসতি করিতে লাগিল। এইরূপে বসতি হইল। আমরা ছেলেবেলায় ওটাকে অরণ্য বীজবন বলিতাম। নিমতলার দিকে বাঁধান ঘাট কিছুই ছিল না, আগে আনন্দময়ীর তলাতেই ঘাট ছিল এবং একটা চাঁদনী বহুদিন ছিল ; সেখানে নাপিতেরা ক্ষৌরি করিত এবং মাড়োদের গঙ্গাযাত্রীর ঘর এখনও আছে। সেটা এখন কাঠের গুদাম হইয়াছে।”

    সিমলে তখন গ্রাম থেকে মফঃস্বল হচ্ছে। একসময় নাকি সিমলে গ্রামে তুলোর জন্য প্রচুর শিমূল গাছ ছিল। একে তখন কেউ কেউ কাপাসডাঙ্গাও বলতো কারণ কাপাস তুলোগাছেরও চাষ হ’ত। এছাড়া পুরোনো বিভিন্ন লেখায় জানা যায় যে, শিমুল গাছ ছাড়াও এখানে অনেক জায়গায় বড় বড় তেঁতুল, অশ্বত্থ ও নারিকেল প্রভৃতি অনেক প্রকারের গাছ ছিল। সিমলা পল্লীতে কাপাস তুলোর সুতো দিয়ে নানা প্রকারের মূল্যবান ছিট কাপড় তৈরি হত।

    ‘সিমলা নামটি কলিকাতার ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে যে ৩৮টি গ্রাম খাজনার ভিত্তিতে লাভ করেন, তার মধ্যে সিমলা গ্রাম অন্যতম। সিমলাকে সে সময়ে ডিহি বা মৌজা উভয় নামেই অভিহিত করা হত। সে সময়ে সিমলার সীমানা ছিল এইরূপ : পরগনা কলিকাতার উত্তরাংশ, সুতানুটির দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বাংশ মিজীপুর পর্যন্ত এবং পূর্বে মানিকতলা পর্যন্ত। শহরতলির অন্তর্গত ডিহি সিমলার মধ্যে ছিল দুটি গ্রাম-বাহির সিমলা ও নারিকেলডাঙ্গা’।

    ১৮৬৬ সালেশক সাহেব কলকাতার জনগণনার যে রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন তাতে কলকাতা শহরের ৪৩৮টি রাস্তার একটি লিস্ট আছে। ওই লিস্টের ১১৯ নম্বরেরয়েছে সিমলা স্ট্রিট।

    সে এক কলকাতা ছিল বটে ! ১৮৯৭ সালের আগে বাবুদের বাড়ির চাকরেরা গোঁফ রাখতেই পারতো না। তবে সে সময় চাকর বা ঝি যে বাড়িতে একবার ঢুকতো কাজের জন্যে, আমৃত্যু কিন্তু সে বাড়িতেই থাকতো। এমন কি তাদের ছেলে-মেয়েরাও তারপরে কাজে বহাল হ’ত।

    সিমলা তখন অজ পাড়া-গাঁ। আমি বলছি ১৭১৭ সালের জুন মাসের কথা। কি করে ধুর্ত ইংরেজ বানিয়ারা এই সিমলা সহ আরো ৩৮ খানা গ্রাম নিজেদের দখলে নিয়েছিলেন সে এক বিরাট গল্প।

    বাঙ্গলাদেশ তখন সম্রাট ফারুকশিয়ারের মুকুটের এক মণি।

    ফারুকশায়ার সে সময়ে মুর্শীদকুলি খাঁ’র সাথে ঝগড়া করলেও তাকেই বাঙলা দেওয়ান পদে বহাল করেছিলেন। মুর্শীদকুলি খাঁ ইংরেজদের খুব একটা ভাল নজরে দেখতেন না। এক্কেরে পাই পয়সা বুঝে নিতেন ইংরেজদের কাছ থেকে বাদশাহী ফর্ম্মান অনুযায়ী। তাতে ইংরেজদের ব্যবসায় ‘লাভে লাভ’ হচ্ছিল না ঠিকমতো। তাই ইংরেজরা একটু ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাবার ফন্দী আঁটলেন। ঠিক হল, দিল্লীর দরবারে দূত পাঠিয়ে উপঢৌকন মানে ঘুষ পাঠাতেই হবে। কলকাতার বাণিজ্য দপ্তরের এক সাহেব বড়বাবু মিঃ হেজেস এর ওপর দূত নির্বাচন করার ভার পড়ল। জন সম্মান ও এড, ওয়ার্ড নিকল্‌সন নামক দুইজন প্রবীণ সহ কলকাতার দুর্গের ডাক্তার হ্যামিলটন নির্বাচিত হলেন। এদের সাথে দোভাষী হিসেবে খোজা সরহাদ বলে এক বড়লোক আর্ম্মাণী ব্যবসাদার ভিড়ে গেলেন। রথ দেখার সাথে কলা বেচাও হবে তার, এই আশায়।

    সে সময়ে মানে ১৭১৫ সালে সম্রাট আর তাঁর কর্মচারীদের উওপহার দেবার জন্য সোয়া তিন লক্ষ টাকার বাজেট হয়ে গেল। উৎকৃষ্ট কাঁচের বাসন, বহুমূল্য বিদেশী ঘড়ি, কিংখাপ, আর সেরা রেশমী ও পশমী বস্ত্রের কেনাকাটা হয়ে গেল। খোজা সরহাদ এরই মধ্যে দিল্লীতে এক পত্তর পাঠিয়ে জানালেন যে সম্রাটের জন্য ইংরেজ বানিয়ারা দশ লাখ টাকার উপহার নিয়ে দিল্লী আসছেন। ব্যস সম্রাটের হৃদয় গলে গেল এ খবর শুনেই।

    ইংরেজরা যে রাস্তা দিয়ে দিল্লী যাবে সেই সেই জায়গার শাসন কর্তাদের সম্রাট এত্তেলা পাঠালেন এই বলে যে —“তোমরা যথাসাধ্য এই ইংরাজদলকে দিল্লী পৌছিবার সহায়তা ও সুব্যবস্থা করিবে। পথিমধ্যে তাহাদের কোনরূপ অসুবিধা না হয় এরূপ বন্দোবস্ত করিবে।” ইংরেজরা নৌকা চেপে কলকাতা হইতে পাটনা অব্দি গেলেন। তারপর পাটনা হইতে হাঁটা পথ ধরলেন। তিনমাস এইভাবে রাস্তা চলে, তাহারা ১৭১৫ খ্রীষ্টাব্দের ৮ই জুলাই তারিখে, দিল্লী পৌছিলেন। দিল্লীতে পৌছনোমাত্র নতুন সম্রাট তাহাদের সাদরে গ্রহণ করলেন।

    দিল্লী থেকে ভায়া কলকাতা হয়ে লণ্ডনে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর সদর দপ্তরে পৌঁছলো সরকারী বার্তা। “আমরা প্রথমবারে প্রয়োজনীয় উপহার গুলি লইয়া, সম্রাট সাক্ষাতে গেলাম। এই উপহারের মধ্যে ১০০১ মোহর, টেবিলে রাখিবার উপযুক্ত মণিমুক্তা খচিত একটা বহুমূল্য ঘড়ী, সমগ্র ভূখণ্ডের একখানি মানচিত্র ও আরও অনেক বহুমূল্য দ্রব্যাদি ছিল। এরূপ ধরণের জিনিসপত্র আমরা লইলাম, যাহা দেখিলেই বাদসাহ আমাদের উপর সন্তুষ্ট হইবেন। আমরা এই সমস্ত নির্ব্বাচিত উপহার দ্রব্যের এক একটী হাতে করিয়া, সম্রাট দরবারে উপস্থিত হইলাম। উপহারদ্রব্য দৃষ্টে মহা সন্তুষ্ট হইয়া সম্রাট সর্ম্মান সাহেবকে “একপ্রস্থ বহুমূল্য পরিচ্ছদ ও মণি-খচিত একটী কলগা উপহার দিলেন।” খোজা সরহাদের অদৃষ্টে ও এইরূপ উপহার লাভ ঘটিল। সম্রাট আমাদের যথেষ্ট সমাদর করিলেন। দরবারান্তে আমরা ডেরায় ফিরিয়া আসিলাম। সে দিন উজীর সলাৰৎ খাঁর বাটীতেই—আমাদের সকলের ভোজের নিমন্ত্রণ হইল।”

    ঠিক এই সময়েই বাদশা খুবই ব্যস্ত হয়ে উঠলেন নিজের বিয়ের তাগিদে। যোধপুরের রাজা অজিত সিংহের কন্যা বাদশার ভাবী স্ত্রী। বাদশা সহজে আর ইংরেজদের পাত্তা না দেওয়ায় গোটা টিম কলকাতায় ফেরার জন্য তৈরি হতে থাকলেন। আর ঠিক এই ক্রান্তিকালেই বাদশাহের শরীর খারাপ হ’ল। আর ইংরেজদের কাছে এটা একটা অভাবনীয় ভাবে সুযোগ এসে গেল। বাদশা’র খাস হাকিমদের ওষুধ কোনো কাজে লাগল না। সম্রাট দিন দিন আরো অসুস্থ হয়ে পরছিলেন। তাঁর বিয়ে প্রায় কেঁচে যায় যায়—এমন সময় কলকাতার টীমের ডাক্তার হ্যামিলটন সম্রাটকে বলে পাঠালেন যে তাঁকে একবার চিকিৎসার চেষ্টা করতে দেওয়া হোক। প্রায় বয়ে-ফস্কে যাওয়া সম্রাটের কাছে নাকরার কি আর উপায় ছিল? আপনারা কি বলেন?

    ডাক্তার হ্যামিলটন ওই টীমে না থাকলে হয়তো কলকাতার তথা ভারতের ইতিহাস আজ অন্যরকম কিছু লেখা হ’ত। ডাক্তার হ্যামিলটন এর চিকিৎসায় সাড়া দিলেন সম্রাট। আর পায় কে? গোটা শহরময় ছড়িয়ে পড়লে এই ডাক্তারের কথা। সুস্থ হয়ে ওঠা সম্রাট ফারুকশিয়ার প্রকাশ্য দরবারে সম্মানিত করলেন ডাক্তার হ্যামিলটন’কে। তিনি তাঁকে এক বহুমূল্য পরিচ্ছদ, মণিমুক্তাখচিত একটা কল্‌গা, দুটো বহুমূল্য হীরাঙ্গুরীয়, একটা হাতী, একটা ঘোড়া আর নগদ পাঁচহাজার টাকা মানে পাঁচসহস্র স্বর্ণমুদ্রা উপহার দিলেন। যে অস্ত্র দিয়ে তিনি সম্রাটের অস্ত্রোপচার করেছিলেন,—সম্রাট সেই অস্ত্র গুলি সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে দিলেন। এছাড়া কামিজে পরবার জন্য একসেট স্বর্ণনির্মিত, মণিখচিত বোতাম পর্য্যন্ত উপহার দেন। ডাক্তার সাহেবের চুল আঁচড়াইবার ব্যবস্থা করতেও তিনি ভোলেন নি। কারণ এই সঙ্গে হ্যামিলটন সোনাবাঁধান মণিখচিত একটা চিরুনী অব্দি পেয়েছিলেন।

    জুলাই মাসে ইংরাজ-দূতেরা দিল্লীতে এসেছিলেন। আর সম্রাট যখন সুস্থ হলেন, তখন নভেম্বরের শেষভাগ। বর্ষা, শরত, হেমন্ত গিয়ে এই ছ মাস পরে শীতের আবির্ভাব হল দিল্লীতে। এই ছমাস ইংরেজরা কিছুই করতে পারেন নি। তাঁহাদের উপহারগুলোর যেটুকু অবশিষ্ট ছিল, সেগুলো এবার দেওয়া হল। ডিসেম্বর মাসে মহা সমারোহে সম্রাটের উদ্বাহকার্য্য মানে বিয়ে হয়ে গেল। তার পর ১৭১৭ সালের জুন মাসে, ইংরেজরা তাহাদের অভীষ্ট সেই বাদশাহী-ফর্ম্মান পেলেন। আর তাঁর সাথে পেলেন কলকাতার পার্শ্ববর্তী ৩৮ খানি গ্রামের জমিদারী স্বত্ব কেনবার অনুমতিও।

    এবারে আরেক বিপদ হ'ল ডাক্তার সাহেবের। বাদশা কিছুতেই ডাগদার সাহিব কে সম্রাটের খাস ডাক্তার হিসেবে বহাল করার প্রস্তাব করলেন। ডাক্তার হ্যামিলটন কিন্তু দিল্লীতে থাকতে অনিচ্ছুক ছিলেন। এদিকে বাকি তিনজনও ডাক্তারকে রেখে দিয়ে কলকাতা ফিরতে পারছেন না সৌজন্যের খাতিরে। হ্যামিলটন পরিশেষে অন্যন্যোপায় হয়ে সম্রাটকে বললেন --- “আমি বহুদিন দেশত্যাগী। আপনার অনুমতি পাইলে, আমার স্ত্রী পুত্রগণকে একবার দেখিয়া আসি। এখানে যে সমস্ত ঔষধ পাওয়া যায় না, বিলাতে গেলে সে সমস্ত অদ্ভুত ফলপ্রদ ঔষধগুলিও আপনার জন্য আনিতে পারি। আর দেশ হইতে একবার ঘুরিয়া আসিয়াই আমি সাহান্‌সাহের অধীনে চাকুরী গ্রহণ করিব।”

    সম্রাট আর আপত্তি করিতে পারলেন না। হ্যামিলটন দলবল নিয়ে কলকাতায় ফিরে এলেন। দিল্লী হইতে ফেরার পর-পরই তিনি সাংঘাতিক অসুস্থ হ'য়ে এই কলকাতাতেই ইহলীলা শেষ করেন।

    কলকাতার জনক যাঁকে বলা হয় সেই জব চার্ণকের সমাধি'র পাশে, সেই সেন্ট জন গির্জার নির্জন গোরস্থানেই, এই স্বার্থত্যাগী মহাপ্রাণ ইংরেজর দেহ সমাহিত হয়। আজও এ সমাধিস্থান বর্তমান। আপনারা ইচ্ছা করলে দেখেও আসতে পারেন। জব চার্ণকের সাথে কিন্তু ডাক্তার হ্যামিলটন না থাকলে কলকাতার খণ্ডিত রূপ হয়তো আমরা দেখতাম আজ।

    # ©গৌতমদত্ত #
    কৃতজ্ঞতা
    ১) কলকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা - মহেন্দ্র নাথ দত্ত।
    ২) কলকাতার ইতিবৃত্ত – প্রাণকৃষ্ণ দত্ত।
    ৩) কলিকাতার কাহিনী – সুকুমার সেন।
    ৪) কলিকাতা সেকালের ও একালের – হরিসাধন মুখোপাধ্যায়।
    ৫) কলিকাতার রাজপথ সমাজ ও সংস্কৃতিতে – অজিতকুমার বসু।
    ৬) ছবির জন্য গুগুল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন