এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  বিবিধ

  • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এবং ভারতীয় দর্শনে নিরীশ্বরবাদ

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০১ অক্টোবর ২০২০ | ২৬৮৭ বার পঠিত | রেটিং ৪ (৩ জন)
  • (১) কেন দেবীপ্রসাদের চিন্তা ও কাজ আজকে বেশি প্রাসংগিক?


    (১.১)


    দর্শনের বিশিষ্ট অধ্যাপক এবং গবেষক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের(১৯১৮-১৯৯৩) শতবার্ষিকী দু’বছর আগে পালিত হয়েছিল মুলতঃ অ্যাকাডেমিক জ্ঞানচর্চার আঙিনায়। কিন্তু আজকে তাঁর চিন্তা ও কাজ নিয়ে আলোচনা বেশি প্রাসঙ্গিক জনবাদী আন্দোলনের প্রাঙ্গণে, সক্রিয় অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে। আজ যখন চারদিকে ভারতীয় চিন্তন - পরম্পরা ও ঐতিহ্যের নামে অর্দ্ধসত্য, অজ্ঞান, কুসংস্কার এর বোলবোলাও --- যখন হাইকোর্টের বিচারক ময়ুরের ব্রহ্মচর্য্য এবং তার চোখের জল থেকে গর্ভধারণ নিয়ে ফরমান দেন বা পার্লিয়ামেন্টের স্পীকার ব্রাহ্মণের জন্মসিদ্ধ শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কথা বলেন, যখন প্রাচীন ভারতের জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই করতে গিয়ে শাসকদলের প্রতিনিধি টিভি চ্যানেলে বৈদিক গণিতের উপযোগে 'নাসা' র মহাকাশ অভিযানের সাফল্যের কথিত উদাহরণ অম্লান বদনে তুলে ধরেন বা দেশের বিজ্ঞান চর্চার রাষ্ট্রীয় কনফারেন্সে পৌরাণিক যুগে ভারতে আকাশযান ছিল এবং তাতে ব্যাকগিয়ার ছিল গোছের ‘রিসার্চ পেপার’ পড়া হয় - তখন দেবীপ্রসাদ আমাদের আশ্রয় হয়ে দাঁড়ান।


    একই ভাবে যখন গণেশের শুঁড় হয়ে যায় প্লাস্টিক সার্জারির প্রমাণ বা অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে সঞ্জয়ের দিব্যদৃষ্টিতে মহাভারত যুদ্ধের রানিং কমেন্ট হয় টেলিভিশনের প্রমাণ তখন জানতে ইচ্ছে হয় সভ্যতার আদিযুগে আমাদের পূর্বপুরুষেরা 'প্রমাণ' বলতে কী বুঝতেন।


    (১.২) দেবীপ্রসাদ কী করেছেন?


    দর্শনে আমরা/ওরার মিথ ভেঙে দেওয়াঃ


    আমরা ছোটবেলা থেকে শিখেছি যে ভারতের উন্নত দর্শনচর্চার মূল সুরটি হোল আধ্যাত্মিক। তারা মূলতঃ আত্মা, ঈশ্বর, পরজন্ম, মোক্ষ  বা এই দুনিয়া থেকে মুক্তি নিয়ে কথা বলে। আর বিজ্ঞান এবং নিরীশ্বরবাদ নিয়ে চিন্তাভাবনা হোল পাশ্চাত্য দুনিয়ার বৈশিষ্ট্য।


    অর্থাৎ, ওরা ব্যস্ত জড়জীবন বা স্থুল দুনিয়া নিয়ে, যেখানে আমাদের পূর্বপুরুষ ভাবতেন সূক্ষ্ম জগত নিয়ে। আমরা মূলতঃ আস্তিক, ওরা নাস্তিক। কাজেই এদেশে যারা বেশি নাস্তিকতার চর্চা করে তারা মূলতঃ বিদেশি ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। নাস্তিকতা বা নিরীশ্বরবাদ আমাদের মহান ঐতিহ্যের পরিপন্থী।


    দেবীপ্রসাদ দেখালেন পুরো ব্যাপারটাই দাঁড়িয়ে আছে ভারতীয় চিন্তার বিশাল ঐতিহ্যের আংশিক জ্ঞানের এবং ইচ্ছাকৃত বিকৃতির উপর ভর করে।


    ইউরোপেও মধ্যযুগের চার্চ আশ্রিত স্কোলাস্টিক দর্শন, পরবর্তী কালের যুক্তিবাদী দেকার্ত, লাইবনিজ এবং স্পিনোজা ও হেগেল ঈশ্বরবাদী। আবার মধ্যযুগের বেকন, হিউম থেকে পরবর্তী কান্ট এবং মার্ক্স নিরীশ্বরবাদী।


    তেমনই বৈদিক ষড়দর্শনের মধ্যে পরবর্তী ন্যায় এবং উত্তর মীমাংসা (বেদান্ত) বাদ দিলে অধিকাংশই নিরীশ্বরবাদী। আবার বেদবিরোধী চার্বাক, প্রাচীন জৈন ও বৌদ্ধদর্শন (হীনযান) নিরীশ্বরবাদী হলেও মহাযানী বৌদ্ধ দর্শন ঈশ্বরবাদী।


    কাজেই পাশ্চাত্ত্য চিন্তা মানেই নাস্তিক এবং জড়বাদী এবং ভারতীয় দর্শন মানেই অধ্যাত্মবাদী -- -- ব্যাপারটা এত সরল, এত একমাত্রিক নয়, বরং ক্ষমতার স্বার্থে বহুপ্রচারিত একটি মিথ মাত্র।


    আমরা এবার ওঁর মূল বক্তব্যের সংক্ষিপ্তসার পেশ করছি।


    (২) ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে আস্তিক ও নাস্তিক



    (২.১)


    উনি প্রথমেই দেখালেন যে ভারতীয় চিন্তায় আস্তিক ও নাস্তিক শব্দদুটো প্রচলিত অর্থে ঈশ্বরবিশ্বাসী ও নিরীশ্বরবাদী নয়। দর্শনের আঙিনায় যারা বেদ কে মানে তারা আস্তিক এবং যারা মানে না তারা নাস্তিক।


    তাই প্রাচীন ষড়দর্শন বা ছয়টি দর্শন - সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, পূর্ব মীমাংসা এবং উত্তর মীমাংসা - হল আস্তিক দর্শন, কারণ তারা বেদকে প্রামাণ্য মানে। আবার চার্বাক, জৈন এবং বৌদ্ধ দর্শন - এই তিনটি হোল নাস্তিক দর্শন, কারণ তারা বেদকে প্রামাণ্য বা অথরিটি মানে না। এর সঙ্গে ঈশ্বরকে মানা বা না মানার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই।


    যেমন - সাংখ্য, যোগ, প্রাচীন ন্যায়, বৈশেষিক এবং পূর্ব মীমাংসা বেদকে মানলেও ঈশ্বর মানে না। অদ্বৈত বেদান্ত (শংকরাচার্য) ব্রহ্ম বা বিশুদ্ধ চেতনাকে মানে, কিন্তু জগত মিথ্যা বা মায়ার সৃষ্টি বলে; তাই কোন সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে মানে না।


    আবার পরবর্তী ন্যায় (উদয়নাচার্য), বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী বেদান্ত (রামানুজ) বেদও মানেন এবং পুরোপুরি ঈশ্বরবাদী।


    এবার প্রশ্ন ওঠে ঈশ্বর অর্থে কী বুঝব?


    (২.২) ঈশ্বর


    প্রাচ্য হোক কি পাশ্চাত্ত্য, আমরা সমস্ত দর্শনেই ঈশ্বর বলতে তিনটি লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যকে বুঝি।


    এক, আদি কারণ (মেটেরিয়াল কজ), যাঁর থেকে বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি।


    দুই, নিমিত্ত কারণ (এফিসিয়েন্ট কজ), যাঁর দ্বারা বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি হয়েছে।


    তিন, নৈতিক নিয়মের স্রষ্টা এবং নিয়ন্তা (এথিক্যাল সিস্টেম), যিনি সমস্ত ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের বোধ করান, এবং নিয়মের পালন এবং লঙ্ঘন করলে পুরস্কার বা শাস্তি দিয়ে থাকেন। যাঁর জন্যে দুনিয়াটা চলছে।


    এবার আমরা সংক্ষেপে ওই বিন্দুগুলোতে উপরোক্ত দর্শনগুলোর অবস্থান দেখব।


    (২.৩)  ছয়টি আস্তিক দর্শনঃ


    - সাংখ্যমতে প্রমাণের অভাবে ঈশ্বর অসিদ্ধ। নিষ্ক্রিয় পুরুষ (চেতনা) এবং সক্রিয় স্ত্রী শক্তির (প্রকৃতির) মিলনে সত্ত্ব-রজঃ-তমঃ এই তিনগুণের ভারসাম্য নড়ে গিয়ে একের পর এক পঁচিশটি তত্ত্ব (এলিমেন্ট) সৃষ্ট হয়।


    - যোগদর্শন সাংখ্যেরই প্রায়োগিক দিক, কোন স্বতন্ত্র দর্শন নয়। যোগ চিত্তবৃত্তি নিরোধের মাধ্যমে পুরুষ (চেতনা)কে প্রকৃতির বন্ধন থেকে মুক্ত করে তার শুদ্ধস্বরূপে ফিরিয়ে আনার কথা বলে। এর জন্যে স্মরণ মনন নিদিধ্যাসন আদি আটটি প্রক্রিয়ার কথা বলে। ‘ঈশ্বরপ্রণিধানাৎ' বা শ্লোকের মাধ্যমে একে আটটি প্রক্রিয়ার অন্যতম বলা হয়েছে, শ্রেষ্ঠ বা একমাত্র পদ্ধতি নয়। এই ঈশ্বর কিন্তু সৃষ্টিকর্তা পালনকর্তা নন। ইনি এক বিশিষ্ট পুরুষ (চেতনা বা আত্মা) যার ক্লেশ, দুঃখ বা বিকার নেই।


    - ন্যায়দর্শনে ভারতীয় চিন্তার লজিক উন্নতমানে পৌঁছেচে। দেবীপ্রসাদের মতে ন্যায়দর্শনের পঞ্চপদীন্যায় বা ফাইভ-স্টেপ-সিলজিসম অ্যারিস্ততলের ত্রিপদীন্যায় বা থ্রি-স্টেপ-সিলজিসমের থেকে উন্নত। এতে বিতর্কে একটা জরুরি স্টেপ হচ্ছে বাস্তব জগত বা জীবন থেকে উদাহরণ দেয়া। যেমন ধোঁয়া দেখলেই আগুন আছে – খালি বললেই হবে না, উদাহরণ দিয়ে বলতে হবে ‘যেমন পাকশালায়’। বিরোধীপক্ষ যদি বিপরীত উদাহরণ দিয়ে দেখাতে পারে যে আগুন না থাকলেও ধোঁয়া দেখা যেতে পারে, অর্থাৎ ধোঁয়া এবং আগুনের সম্পর্ক সার্বজনীন (ইউনিভার্সাল) নয়, তাহলেই প্রথমজনের যুক্তিটি উড়ে যাবে। এই ইহজগত-মুখীনতা দেবীপ্রসাদের চোখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


    - কিন্তু ঈশ্বরের ভূমিকা গৌণ। উনি আদি বা উপাদান কারণ ন’ন, শুধু নিমিত্ত কারণ। মানব সমাজের আদি পেশা কুমোরের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে কুমোর যেমন মাটি, কাঠের চাক, লাঠি বা সূতো বানায় না, শুধু সেগুলো নিয়ে বাসন বানায়, তেমনই ঈশ্বর আকাশ (স্পেস), অণু সৃষ্টি করেন না। ওগুলো আগে থেকেই আছে। উনি শুধু কুমোরের মত ওগুলো নিয়ে সৃষ্টি করেন।


    - পরবর্তী ন্যায়দর্শনে আচার্য উদয়নাচার্য ঈশ্বরের উপর জোর দিয়ে তার অস্তিত্বের দশটি প্রমাণ দিয়েছেন। যেমন, আকাশের তারারা যে সেঁটে আছে, পড়ে যায় না তার কারণ হলেন ঈশ্বর।


    - কণাদের বৈশেষিক দর্শন ন্যায়ের মূল লজিক মেনে শুধু পদার্থের ক্লাসিফিকেশন এবং অণু-পরমাণু নিয়ে চিন্তা করেছে। এ হল ভারতীয় চিন্তায় প্রথম পরমাণুবাদ; ঈশ্বর কোথায়? দুটো অণু জুড়ে দ্ব্যণুক (ডায়োড) এবং তিনটি দ্ব্যণুক জুড়ে ত্রসরেণু (ট্রায়োড) তৈরির কাজে ব্যস্ত নিমিত্তকারণ মাত্র।


    - পূর্ব-মীমাংসা দর্শন (মহর্ষি জৈমিনি এবং কুমারিল ভট্ট) মনে করে এই বিশ্বব্রহ্মান্ড কখনই একসংগে ধ্বংস বা সৃষ্ট হয় না। এটা সদা গতিশীল, কারণ সবসময় এর কোন অংশ ক্ষয় হচ্ছে এবং কোন অংশ সৃষ্ট হচ্ছে। কাজেই ঈশ্বরের কোন ভূমিকা নেই;  ঈশ্বর নেই। কিন্তু এই দর্শন বেদের কর্মকান্ড, যাগযজ্ঞ অথর্ববেদের তুকতাক এসবে বিশ্বাস করে।


    - তাহলে যজ্ঞের মন্ত্রে যে দেবতাকে ডাকা হয়, ভোগ দেওয়া হয় ? কুমারিলের মতে কোন দেবতা নেই। কেউ ভোগ খেয়ে যায় না। আসলে সবটাই একটা ম্যাজিক রিচুয়ালের অংগ। যদি ইন্দ্র বলে কোন দেবতাই আরাধনার উদ্দিষ্ট হতেন তাহলে তাঁকে তাঁর অন্য যে কোন নাম - পুরন্দর, সহস্রলোচন, দেবরাজ - ধরে ডাকলেই তাঁর সাড়া দেবার কথা। কিন্তু কড়া বিধান আছে  কোন মন্ত্রে যে নির্দিষ্ট নাম আছে তাই উচ্চারণ করতে হবে, অন্য নামে ডাকা চলবে না। অর্থাৎ দেবতা শব্দময়ী।


    এতে ফল পাওয়া যায়। তাই বেদ সত্যি। কুমারিলের মতে ইন্দ্রিয়ের দ্বার রুদ্ধ করে ধ্যান করলে জ্ঞান বা মোক্ষ লাভ হয় এই বিশ্বাস বন্ধ্যানারীর সঙ্গে সঙ্গম করে পুত্রলাভের চেষ্টার সঙ্গে তুলনীয়।


    - উত্তর-মীমাংসা (বেদান্ত) দর্শন এ প্রধান দুটি ধারা - অদ্বৈত এবং বিশিষ্টাদ্বৈত (শংকরাচার্য এবং রামানুজ, মধ্বাচার্য ইত্যাদি)।


    অদ্বৈত মতে ব্রহ্ম সত্য জগত মিথ্যা। জগত হোল মায়া (ইল্যুশন), যা চেতনায় অবিদ্যাজনিত ময়লার ফলে দেখা যাচ্ছে। যেমন সর্পতে রজ্জু বলে ভ্রম হয় । কাছে গিয়ে ভালো করে দেখলে সাপের জায়গায় দড়ি বলে চেনা যায় তেমনই।


    আছে কেবল বিশুদ্ধ চেতনা বা ব্রহ্ম। এ অনেকটা পাশ্চাত্ত্যের বিশপ বার্কলির মত। জগত যেহেতু একটা ভ্রান্তি, অস্তিত্বহীন কাজেই তার সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের প্রশ্ন ওঠে না। অন্যদিকে রামানুজাচার্যরা শংকরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জগতকে মায়া অথবা ভ্রান্তি না বলে ব্রহ্মের প্রজেকশন অথবা সৃষ্টি বলে স্পষ্ট ঈশ্বরবাদী অবস্থান নিয়েছেন। অবিদ্যার প্রলেপ সরে গিয়ে চেতনা শুদ্ধ রূপে এলে মায়াজাল কেটে সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম বা সবই আসলে ব্রহ্ম বলে প্রতিভাত হয়। দাক্ষিণাত্যের অন্য আচার্যরা যেমন মধ্ব (দ্বৈতবাদী), নিম্বার্ক (দ্বৈতাদ্বৈতবাদী) এবং বঙ্গের শ্রীচৈতন্য (অচিন্ত্যভেদাভেদ) কোন না কোন ভাবে জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন।


    এরা জগতের জলজ্যান্ত অস্তিত্ব নাকচ করে দেন কেমন করে?


    আসলে এঁরা সত্যি ও মিথ্যের মধ্যে তফাৎ করছেন একটা অন্য মাপদন্ডেঃ যা পরিবর্তনশীল তা মিথ্যা এবং যার পরিবর্তন হয় না তাই শাশ্বত। জগত পরিবর্তনশীল - তার রূপ বদলায় ক্ষণে ক্ষণে। অতএব নামরূপের এই জগৎ মিথ্যা।


    আর এর বিপ্রতীপে এঁরা ব্রহ্ম বলে একটি ধারণা (ক্যাটেগরি) তৈরি করেছেন যা কিনা অজর, অমর, অক্ষয়; যার জন্ম-মৃত্যু নেই, যা অণুর থেকেও সূক্ষ্ম এবং একই সঙ্গে সবচেয়ে বৃহৎ বিশাল। এর পরিবর্তন নেই, তাই শাশ্বত এবং সত্য।


    যাকে 'ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গিয়েও আর পেলাম না'।


    কিন্তু রামানুজাচার্য শংকরের ‘জগত মিথ্যাত্ব’ অবস্থানের বিরুদ্ধে সাতটি আপত্তি তুলে ধরেছেন যার তার্কিক ওজন সহজে নাকচ করা যায় না।


    দেবীপ্রসাদ মনে করতেন যে দর্শন জগতের অস্তিত্বই স্বীকার করে না, তার চোখে তো মানবজগতের কোন সমস্যাই বাস্তব নয়  - সব ঝুট হ্যায়।


    তাই প্রচলিত বহুমতের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁর মতে শংকরের অদ্বৈত বেদান্ত হল মানুষের জন্যে সবচেয়ে নেতিবাচক দর্শন। এই দর্শন মানুষকে বাস্তব সমস্যার বাস্তব সমাধান খুঁজতে প্রেরিত করে না। তুলনায় রামানুজ এবং অন্যদের বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ - যার ব্যবহারিক ধর্মচর্যা হল বৈষ্ণব ধর্ম - সহজেই সমাজের নিম্নবর্গের আশ্রয় হয়েছে এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক কালখণ্ডে সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যম হয়েছে। চৈতন্যদেবের 'আচন্ডালে ধরি দেই কোল' স্মর্তব্য।


    খেয়াল করুন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও বেদান্তকে ভ্রান্ত দর্শন বলতেন। তাই মেট্রোপলিটান কলেজের কোর্সের ব্যাপারে চিঠি লিখে বেদান্ত এবং সাংখ্যের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতিষেধক হিসেবে জন স্টূয়ার্ট মিলের 'লজিক' পড়ানোর প্রস্তাব রেখেছিলেন।


    (২.৪) তিনটে নাস্তিক বা বেদবিরোধী দর্শন


    চার্বাক দর্শনের নাস্তিকতা - ঈশ্বর, আত্মা, পরলোকে অবিশ্বাস - সর্বজনবিদিত। রামায়ণে জাবালি মুনি ভরতের সঙ্গে রামকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে পরলোক নেই বলে রামের কাছে খাসা বকুনি খেয়েছিলেন। রাম তখন রেগে গিয়ে নাস্তিক, বৌদ্ধ এবং বেদবাদিন (কর্মকান্ডী মীমাংসা দর্শনের অনুযায়ী) হেরেটিকদের কড়া শাস্তি দেওয়া উচিত বলেছিলেন।


    আদি বৌদ্ধধর্ম হোল অনাত্মবাদী। যে আত্মাই মানে না সে ঈশ্বরকে মানবে কী করে! বুদ্ধ নিজে আত্মা, ঈশ্বর, পরজন্ম, শাশ্বত কোন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা অপ্রয়োজনীয় মনে করে বিরক্ত হতেন।


    কিন্তু মহাযানী বৌদ্ধধর্ম, বিশেষ করে নাগার্জুনের শূন্যবাদ এবং যোগাচারের বিজ্ঞানবাদ (অসঙ্গ ও বসুবন্ধু) অনেকটা বেদান্তের শংকরাচার্য্যের মত। তাই শংকরাচার্যকে “প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ” অপবাদ শুনতে হয়েছিল। পরে এতে তন্ত্রমন্ত্র, বজ্রযান, ডাকিনীযান, বুদ্ধের হাজার জন্ম এসব এসে একে পুরোপুরি ঈশ্বরবাদী ধর্মের রূপ দিল।


    জৈন দর্শন এর স্যাদবাদে ঈশ্বরের স্থান নেই, আত্মার স্থান নেই । আজ যেভাবে জৈন ধর্মে আরাধনা করা হয় তার সঙ্গে আদি দর্শনের সম্পর্ক ক্ষীণ।


    ** উপসংহার **


    এইভাবে দেবীপ্রসাদ দেখান যে প্রাচীনকাল থেকেই বৈজ্ঞানিক এবং বস্তুবাদী চিন্তা, লজিক, সুস্থ বিতর্ক এবং প্রকৃতির নিয়মকে বোঝবার ইচ্ছে ভারতীয় ঐতিহ্যেই আছে। এগুলো বাইরে থেকে আমদানী করা নয়। এই চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল অন্ধবিশ্বাস, নিয়তিবাদ, অযৌক্তিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে। সেই সময়ের উৎপাদন পদ্ধতির ভিত্তিতে চিন্তাধারায় যতটুকু বিকাশ হয়েছিল তাতে আমরা গর্ববোধ করতে পারি। অমর্ত্য সেন এই চিন্তাধারার খোলা বিতর্কের ঐতিহ্যের কথা মনে রেখেই লিখেছেন “আর্গুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান”।


    তাই আজ খোলা চোখে পড়তে গিয়ে উপনিষদেও গোধন দেখি, গোমাতার পূজো নয়। জনকসভায় যাজ্ঞবল্ক্য বিতর্কে জিতে সোনা দিয়ে শিং বাঁধানো সহস্রগাভী নিয়ে যাবার সময় বলেন আমার গোধনে প্রয়োজন ছিল।মহাভারতে অজ্ঞাতবাস কালে (উত্তর-গোগৃহ-রণ পরিচ্ছেদ) বিরাট রাজার গরু লুঠে নিয়ে যাওয়ার সময় বৃহন্নলা-অর্জুনের যুদ্ধে স্পষ্ট হয় গাভী মাতা নয়, সম্পদের প্রতীক ছিল। মাকে কেউ দান দেয় বা বাজারে কেনাবেচা করে?


    মহাভারতের বনপর্বে কৌশিক মুনি ও ধর্মব্যাধের আখ্যানে দেখি ধর্মব্যাধ মোষ এবং পাখির মাংস বিক্রি করছেন এবং জানাচ্ছেন যে রাজা রন্তিদেবের পাকশালায় রোজ দু’হাজার গো-বংশ বধ হয় রান্নার জন্যে।


    ‘প্রমাণবার্তিক’ রচয়িতা বৌদ্ধ দার্শনিক আচার্য ধর্মকীর্তি ঘোষণা করেন যে বর্ণাশ্রমে আস্থা, বিশেষ নদিতে স্নান করলে এবং দান দিলে পুণ্য হয় এমন বিশ্বাস, এবং কোন পুস্তককে অভ্রান্ত মানা এবং দেহহীন আত্মায় বিশ্বাস - এগুলো মূর্খতার পঞ্চ লক্ষণ। 


    “বেদপ্রামাণ্যং কস্যচিৎ কর্তৃবাদঃ
    স্নানে ধর্মেচ্ছা জাতিবাদ্যাবল্পেঃ
    সন্তাপাবম্ভঃ  পাপহানায়
    চেতি ধ্বস্তপ্রজ্ঞানাং পঞ্চলিঙ্গানি জাড্যে”।


    এভাবেই আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যে রয়েছে বিতর্ক এবং বিপরীত মতের সহাবস্থান। তার জন্যে কাউকে দেশদ্রোহী বা অশান্তি ফেলাচ্ছে বলা হত না। আজকের মতন অসহিষ্ণু বাতাবরণ ছিল না। ভারতে প্রাচীন চিন্তার  বিপুল ঐশ্বর্যের কথা না বলে শেখানো হচ্ছে অবিদ্যা, অজ্ঞান ও কুসংস্কার। তাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মীদের কাঁধে বর্তেছে সত্যিটা তুলে ধরার দায়িত্ব।এভাবেই আমরা দেবীপ্রসাদের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।


    “অসতো মা সদ্গময়ঃ, তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ”


    অসত্য থেকে সত্যের পথে যাত্রা, অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোকে যাত্রা - এই পথচলা শেষ হবার নয়।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • তাতিন | 203.***.*** | ০২ অক্টোবর ২০২০ ১১:৫৩732867
  • এইটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতীয় দর্শনগুলি (আস্তিক ও নাস্তিক) প্রথম সহস্রাব্দ অবধি প্রায় সকলই নিরীশ্বর ছিল।  ঈশ্বর প্রসঙ্গ এলেও, তাঁদের ভূমিকা ঈশ্বরের নয়, ঠাকুরের। শীতলার কৃপায় বসন্তের আরোগ্য নিতান্ত লৌকিক বিষয়, তার জন্য শীতলাকে অমনিপ্রেজেন্ট অমনিপোটেন্ট সর্বজ্ঞ হতে হয় না।
    উত্তর মীমাংসা বা শাংকর বেদান্তদর্শনকে যদি সেশ্বর দর্শন ধরি, সেখানে ব্রহ্ম সমস্তের মূল বলা আছে। কিন্তু, সেই ব্রহ্ম তো ঠুঁটো জগন্নাথ। জাগতিক ক্রিয়ায় ব্রহ্মের কোনও হাত নেই। ব্রহ্ম সত্য হলে যেমন জগৎ মিথ্যা, জগতের বাস্তবে ব্রহ্ম অপ্রয়োজনীয়, শুধুমাত্রই সাইকোলজিকাল বর্গ।  আমার তো মনে হয় নিরীশ্বর দর্শনের শেষকথা শংকরই বলেছেন :P



    সম্ভবতঃ বৌদ্ধদের হাত দিয়ে এদেশে ভক্তিবাদের প্রসার, যে ভক্তিবাদ সেশ্বর দর্শনের একটি উৎস হয়ে থেকেছে। আমার মনে হয় অপর উৎস অবশ্যই ইসলাম। কারণ দশম শতাব্দী থেকে এদেশে সেশ্বর চিন্তাভাবনার প্রসার, আর সেইটাই ইসলামের ভারতে আগমনের মূল টাইমলাইন।

  • Ranjan Roy | ০২ অক্টোবর ২০২০ ২৩:৫৭732870
  • তাতিন,


       একটু খটকা।


    শংকরের অদ্বৈত বেদান্তকে একনিঃশ্বাসে 'সেশ্বর দর্শন' এবং 'নিরীশ্বর দর্শনের শেষকথা' বলা বিরোধাভাসী নয়? 


    ১  ঈশ্বর বলতে যা বুঝি অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি-পালন-সংহার কর্তা এবং নৈতিক নিয়মের (ভালো/মন্দ) উৎস, তা শাংকর বেদান্তে নেই, কারণ ওই মতে জগত হল মায়া(ইল্যুশন), অবিদ্যাজনিত ভ্রম, মরীচিকা বা রজ্জুতে সর্পদর্শনের মত। যখন জগত ব্যাপারটাই মিথ্যা তখন তার সৃষ্টি-ধ্বংস ইত্যাদির প্রশ্নই ওঠেনা। 


    কিন্তু নিরীশ্বরবাদী বলাও যাবেনা । কারণ নির্বিকার ব্রহ্মকে একমাত্র সৎ এবং শ্বাশ্বত বলা হয়েছে। আসলে এই দর্শনে ব্যক্তি বা সাকার-ঈশ্বর নেই, আঁচে নিরাকার ঈশ্বর। কাজেই সেশ্বর তো বটেই , নিরীশ্বর কদাপি নয় ।


    ২ আমার ব্যক্তিগত মতে শ্রেষ্ঠ আস্তিক ( বেদে আস্থাবান) অথচ নিরীশ্বরবাদী দর্শন হল পূর্ব-মীমাংসা বা কর্মমীমাংসা, যার জৈমিনীসূত্রের শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার কুমারিল ভট্ট। ক্যান?


     ওদের বেসিক উপপাদ্যগুলো দেখুন।


     ২.১ সমগ্র ব্রহ্মান্ড আদি অনন্ত সদা গতিশীল। এটি কখনই একসঙ্গে সৃষ্টি বা ধ্বংস হয়না। সর্বদা কোন একটি ক্ষুদ্র অংশ ক্ষয়ে যাচ্ছে, আরেকটি অংশ জন্মাচ্ছে।


    ২.২ তাই এর কোন স্রষ্টা ঈশ্বর নেই। দেবতা বলে কিছু নেই। 'দেবতা' শব্দময়ী। মন্ত্রের সঠিক উচ্চারণের ম্যাজিক্যাল পাওয়ার। ভোগ চড়ালে কোন দেবতা খেয়ে যায় না। পরিবেশের কারণে খারাপ হয় , ডিকম্পোজড হয়।


    ২.৩ চোখ বুজে ইন্দ্রিয়ের দ্বার রুদ্ধ করে প্রার্থনা করে অভীষ্ট ফল পাওয়ার আশা বন্ধ্যানারীর সঙ্গে সঙ্গমে সন্তানপ্রাপ্তির আশার সমান।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন