"বাংলা লেখা লিখির একদম দশক ভিত্তিক প্রজন্ম ধরে ইংরেজি বা অন্য ভারতীয় বা বিদেশী ভাষায় অনুবাদ এর উদ্যোগ নিলে" - এটা কেন দরকার বুঝছি না। 'অনুবাদ পত্রিকা' বলে একটা দীর্ঘ সময়ব্যপী চলা পত্রিকা আছে, যারা শুধু অনুবাদ নিয়েই কাজ করে চলেছে। সেই বিতস্তা ঘোষাল এর সাথে বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত যোগাযোগ করতে পারেন, র্যাদার, করবেন নাই বা কেন বোঝা দায়। সেখানে এরকম বহু অনুবাদকের সাথে পরিচিত হতে পারবেন বলেই মনে হয়।
মিথ্যে কথা না কথা বলতে কি, এই প্রজন্ম, "মূলতঃ বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির ছাত্র ছাত্রী"রা এত ডিগ্রি, পরীক্ষা, চাকরি, পিপিটি, এসওপি, প্রসিডিওর, পেপার, রিভিউ - দৈনন্দিন ইংরিজিতে উদ্ধার করে বিশ্ব সাহিত্যের অনুবাদ বাংলায় কেন পড়তে পারছি না বলে বিলাপ করলে আরেকটু মুশকিল হয়। বোধিসত্ত্ব নিজে বিশ্ব সাহিত্যের কজন দিকপালের লেখা বাংলায় পড়েছেন জানতে সাধ হয়, এবং, সুতরাং বাকি পাঠককে সেগুলি বাংলায় পড়ানোর জন্যে এমন আকুল প্রস্তাবের ভিত্তি বুঝতেও মুঞ্চায়। মানবেন্দ্র বাবু সারাজীবন অসাধারণ কাজ করে গিয়েছেন, কিন্তু সে কাজ মূলত বাংলা সাহিত্যপাঠী মানুষদের বিশ্বসাহিত্যের স্বাদ দেওয়ার তাড়নায় যেমন, সঠিক জানা নেই, তার মধ্যে নিজের প্রতি নিজের নেওয়া কোনো চ্যালেঞ্জও রয়ে গিয়েছিল কিনা, যে, এঁদের বাংলা ভাষায় নিয়ে আসতে আমি নিজে কতটা কমপিটেন্ট তার একটা হাতে কলমে পরীক্ষা দেওয়া যাক। থাকতেই পারে, আমরা তাঁর মনের মধ্যে ঢুকে দেখতে যাইনি। কিন্তু চল্লিশোর্ধ টেকনোক্র্যাটরা বরং মানবেন্দ্রবাবুর সংগ্রহ বা আবিষ্কার করা লেখকদের যেভাবে হোক, ইংরিজিতে পারলে ইংরিজিতেই, পড়ে ফেলার মরিয়া চেষ্টা না করে, বা সেই সমস্ত সাহিত্য, নাহয় ইংরেজিতেই, সকলের হাতের নাগালে এনে দেওয়ার চেষ্টাটাও না করে, শুধুমাত্র বাংলায় অনুবাদের ওকালতি করছেন, এটা বরং বিস্ময়ের।
তুলনামূলক সাহিত্যের বিভাগ যেখানে আছে সেখানে কি ভাবে বিষয়, সিলেবাস নির্বাচন করা হচ্ছে জানতে সেসমস্ত জায়গায় নিজে ফোন বা মেল করে খবর নেবেন না কেন, বোঝা মুশকিল।
সরকার, স্কুল বা কলেজের ভাষা নির্বাচন বা মাষ্টারমশাই/দিদিমনি নিয়োগ করার সময় তুলনামূলক ভাষা ও সাহিত্যের ডিগ্রীধারী দের গুরুত্ব দেন কিনা, দিলে কি ভাবে দেন, লোকের অধ্যাপনা বা অন্য চাকুরি (ডিপ্লোমাসী, বিজনেস ট্রান্সলেশন, প্রকাশনা) তে কি ভাবে এই ডিগ্রী কাজে লাগছে সেটা নিয়ে জানতেও - সরাসরি কলেজে, প্রফেসরদের, ফাইনাল ইয়ার/পাস আউট স্টুডেন্ট বা প্লেসমেন্ট সেল এর লোকেদের ফোন কেন করবেন না বোঝা দুষ্কর।
বলার কথা একটাই যে সব প্রশ্ন বোধিসত্ত্ব জানতে চেয়েছেন, সেগুলো তিনি নিজেই জেনে নিতে পারেন ন্যূনতম পরিশ্রমে এবং চাইলে আর কজনকে জানাতে নিজেই লিখে ফেলতে পারেন। যে সব সার্ভে ভিত্তিক লেখা তিনি পড়তে চেয়েছেন, সেগুলো নিজেই গড়ে নিতে পারেন, যেসব বিদেশী লেখককে যুথবদ্ধতায় পড়তে চেয়েছেন, নিজেই তাঁদের পড়ে , চাইলে পাঠপ্রতিক্রিয়া, বিশ্লেষনাত্মকভাবে জানাতেও পারেন। যূথবদ্ধতাটি সেক্ষেত্রে ইনিশিয়েশনের দায়িত্বও তিনি নিলেন। বেশ কয়েকটি কাজ অডিও মাধ্যমে করে তিনি নিজেই ইতিমধ্যে আশাকরি অবগত যে, সে-সমস্ত, লোককে জানাবার জন্য লিখে না ফেলে, শুধু রেকর্ড করে শেয়ার করলেও যথেষ্ট। হাঁ করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে না পড়ে কানে হেডফোন গুঁজে অন্য কিছু করার ফাঁকে বা নিতান্ত চোখকে আরাম দিতে দিতেও আমরা সেগুলি শুনে নিতে পারি, সবাই।
আরেকটা কথাও বলার, গুরুচন্ডালিতে বিদেশী বা দেশী অনুবাদ সাহিত্য আলোচনা করার তার অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরণের হোস্টাইল প্রতিক্রিয়া পেয়েছে বলে বোধিসত্ত্বের আক্ষেপের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে একটা এক্সপেক্টেশন জড়িত, যে - আকাদেমিয়ার বাইরের লেখা পড়া বৌদ্ধিক চর্চার একটা জায়গা হয়ে ওঠার একটা সচেতন প্রয়াস গুরুচন্ডালির ছিল। না। এইখানে একটু কারেকশন দরকার। প্রথম এখানে ঘুরতে আসার সময় সে ইমপ্রেশন থাকলেও, বা কেউ এমনটা বলে থাকলেও - যে - ওখানে লোকে খুব পড়াশুনা করে, সমমনস্ক পাঠক প্রচুর পাবে - আসলে গুরু চিরকাল ই খানিক ক্যাওড়া খানিক পাঠকরত্ন এবং সখের / ভালোলাগার পড়াশোনাকে বরং ইন্সটিটিউশনাইজড বৌদ্ধিক চর্চার একটা জায়গা হয়ে উঠতে না দেওয়ারই একটা সচেতন প্রয়াসে মগ্ন থেকেছে। সেখানে সাধারণ পোঁয়াপাকামির ছ্যাবলামোর মধ্যে সেই ব্যক্তিগত নিবিড় পাঠাভ্যাসের অমোঘ বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠছাপ নজর এড়াবার না হলেও, পড়াটুকুকেই, এমনকি সিরিয়াসপড়াশোনাটুকুকেই শুধু ফোকাস ও আলোচনার একমাত্র কেন্দ্র করে, তার চারদিকে নিজেই উপগ্রহসুলভ ঘূর্ণনচক্রে বাঁধা পড়ে যাওয়ায় গুরুচন্ডাল সবারই আপত্তি ছিল বলেই অনুভব করেছি। সোজা বাঁকা নানাভাবেই হয়তো সেটা জানাবার চেষ্টা হয়েছে, যার ডাকনাম 'হোস্টাইল প্রতিক্রিয়া' হলেও ভালোনাম হতেই পারে 'বুঝিয়ে বলা'।