এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • জয় রাষ্ট্র-জয় সরকার,মহিমা অসীম তোমার

    পারভেজ খান লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৫ জুন ২০২০ | ১৭২০ বার পঠিত
  • না আমরা নাগরিক হিসেবে যে সচেতন নই তার প্রমাণ অনেকদিন থেকে দিয়ে আসছি। আমাদের শাসক রাও যে নন সেও দেখে আসছি।একটা কথা বাজারে ভালো চলছে " যেমন নাগরিক, তার তেমন শাসক" উলটো করে বললে যেমন শাসক তার তেমন ই নাগরিক। আমাদের নেতারা ভোট এলে যত জাত ধর্ম সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তার কিছু শতাংশ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অধিকার, নিরাপত্তা, আইন শৃঙ্খলা, বিচার ব্যবস্থা, আয় রোজগার, নিয়ে করে না। তারপর আমরা গদগদ হয়ে ভোট দিই, বা দেওয়ানো হয়, বা দিয়ে দেওয়া হয় অথবা দিইনা। বণিকদল আমদের দেশের সরকার তৈরি করে। তারপর নেতারা বণিকমহলের হয়ে কাজ করবে না তো আমাদের জন্য করবে! তারপর মাঝে মাঝে আসে কিছু প্রকৃতিক বিপর্যয়, প্যাকেজ ঘোষণা হয়, আমরা ভুলি ওটা আমাদের ই টাকাপয়সা, আবার আমরা গদগদ হয়ে যাই, কারণ আমরা জানিনা আমাদের প্রাপ্য কি! কিছু তো দিচ্ছে।আমাদের মনে হয় ওহ কি মহৎ, অসীম দয়া তোমার রাষ্ট্র!

    আজ প্রায় ৫০-৬০ দিন ধরে গোটা দেশে লকডাউন চলছে, লাখ লাখ শ্রমিক নিজ রাজ্যের বাইরে কাজ করেন, তাদের ব্যাপারে যে সরকারের আগাম কোনো ভাবনা চিন্তা ছিলনা, সে তো ইতিমধ্যেই পরিস্কার। অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন রাজ্যের বর্ডারে, তাদের থেকে কেউ করোনা সংক্রামিত হলে, তা যে একটা বিস্ফোরণ হতে পারে, সবাই জানতো!তাদের মধ্যে অনেকেই পায়ে হেঁটে ফিরতে গিয়ে খিদেতে মারা গেছেন। এর দায়িত্ব এবং ব্যার্থতা কার? হ্যা সরকারের।কিন্তু এমনই অবস্থা মুখ ফুটে সেটুকু বলার সাহস আমরা হারিয়ে ফেলছি দিন দিন।

    অনেকের ঘরে বসে থাকার ক্ষমতা আছে, কিন্তু তারা ভীড় করছে বাজারে, প্রায় প্রতিদিন। বিশ্বজুড়ে বড় বড় তীর্থস্থান গুলো বন্ধ। আমাদের দেশে অনেক জায়গায় পুণ্যস্নান চলছিল।অনেক মানুষ একসাথে। বড় গায়িকা আক্রান্ত হয়েও পার্টি করছিলেন, তাতে যোগ দিয়েছিলেন বড় বড় নেতারা। দিল্লির নিজামুদ্দিন এ তবলীগ সম্প্রদায়ের কনক্লেভ চলছিল, সেখানে দেশ বিদেশ এর বিভিন্ন জায়গার প্রায় আড়াই হাজার মানুষ ছিলেন, তাদের অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মন্ত্রী আমলাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে চলছিল।আর এখন তো ধর্মস্থান গুলো সব খুলেও গেছে!দোকানগুলোতেও উপচে পড়া ভীড়, স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা কে করে! জানলে তো করব!

    সার্বিক ভাবে যে স্বাস্থ্য সচেতনাতা গড়ে ওঠা এতদিনে উচিৎ ছিল সেটা যে হয়নি বোঝাই যাচ্ছে। রাস্তায় থুতু ফেলা যে ঠিক নয় সেটা বোঝাতে পুলিশের ডান্ডা লাগে, দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা থাকে "এখানে প্রস্রাব করিবেন না", তার 'না' টা আবার মুছে দেওয়া হয়! গলদ কোথায়? অবশ্যই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও সামাজিক কাঠামোয়। দেশের ১৩০ কোটি জনসংখ্যা, বেশি সংখ্যক গ্রামে, শহরে, বস্তিতে মানুষ ঠাসাঠাসি করে কোনোমতে বেঁচে থাকে, সেখানে কোথায় থুতু ফেলছি আর কোথায় শৌচকর্ম করছি সে ভাবনা পরে! দ্বিতীয় আমাদের অবহেলিত প্রাথমিক শিক্ষা ও একটা ডিসক্রিমিনেটিং শিক্ষা ব্যবস্থা। আমাদের দেশে সবচেয়ে কম গুরুত্ব পায় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা।আর সেখানেও শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগে দূর্নীতি কম নয়। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার এই হাল হলে তার প্রভাব স্বাস্থ্য সচেতনতায় পড়তে বাধ্য। ডিসক্রিমিনেটিং শিক্ষা ব্যবস্থা কেন বললাম? উচ্চ মধ্যবিত্ত বা বিত্তবান মানুষেরা চায় তাদের সন্তানেরা বেসরকারি স্কুলে পড়াশুনো করুক একদম প্রাথমিক স্তর থেকেই। ফেলো কড়ি মাখো তেল ব্যবস্থায় সেসব স্কুল গুলো এখন ব্যবসার জায়গা, টাকা ঢালতে পারলে অনেক বেশি পরিকাঠামোয়, ঝকঝকে জায়গায় পড়তে পারবে। আর সরকারি স্কুলের টয়লেটের কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো। দেশের বেশির ভাগ মানুষ নিন্ম মধ্যবিত্ত বা নিন্মবিত্তের, তাই সরকারি স্কুলে পড়ার সংখ্যা বেশি। কিন্তু সেখানে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো যদি ঠিক না থাকে তাহলে সার্বিক আমাদের এই স্বভাব হতেও বাধ্য।তাই এই স্বাস্থ্য সচতনতার যে অভাবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সরকার তার জন্য অনেকাংশেই দায়ী।

    না আপনার আল্লা আপনাকে বাঁচাবে না। না আপনার ভগবান আপনাকে বাঁচাবে না। গমূত্রও বাঁচাবেনা। মাদুলি, তাবিজ, দোয়াও বাঁচাবে না। আপনি আপনাকে বাঁচাতে পারেন। ওপরের যে কয়েকটি ঘটনা বললাম তার সবগুলোতে সরকার যতটা দায়ী, ততটাই দায়ী আপনি আমি। কারণ আপনি আমি মিডিয়া টপিক পেয়ে গেছি, হিন্দু মুসলিম খেলার, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ব্যবস্থা, শিক্ষা এসব এদেশে মানুষ খায়না।যা খায় সেটা ধর্ম।

    আর একটা কথা, হয়ত খুবই জরুরী প্রসঙ্গ, যেটা এই করোনা আবহে এড়িয়ে যাচ্ছি। আমাদের রজ্যে প্রচুর এমন রোগী আছে যারা প্রায় সপ্তাহে বা মাসে বিভিন্ন দূরের জেলা থেকে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে আসতেন। অনেক ওষুধ ই ফ্রী তে পেতেন তারা। লকডাউনের জন্য ট্রান্সপোর্ট বন্ধ থাকায় সেটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, এমনকি অনেক প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না গ্রামে গ্রামে। আনিয়ে দিতে বললে বেশি দাম নিচ্ছে। আর গত কয়েক মাসে প্রায় সব ওষুধের দাম ১০% এর উপর বেড়েছে। যদিও সে নিয়ে কেউ রা কাড়বে না। আপনি বলতেই পারেন কি করবে সরকার?এ অবস্থায় কি করতে পারে? পারে, চাইলেই পারে, বাকি রোগীদের মৃত্যু মুখে ঠেলে না দিয়ে ওষুধ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলো তে পাঠাতে পারে যাতে মানুষ তার কলকাতার হাসপাতালে দেখানো প্রেসক্রিপশন দেখিয়েই প্রয়োজনীয় ওষুধ পেতে পারে।


    ও হ্যা, আর রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করা, অধিকার বুঝতে চাওয়াটা আবার দেশদ্রোহিতা ধরা হচ্ছে ইদানীং। আমরা তিনহাজার কোটি খরচ করে মূর্তি বানাতে পারি আর চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিশ্বে শেষের সারিতে হাসতে হাসতে থাকতে পারি।যাই হোক ভালো থাকবেন।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন