
dc | 103.195.***.*** | ২৭ মে ২০২০ ১৭:৫১731710
b | 14.139.***.*** | ২৭ মে ২০২০ ১৮:৪০731711
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 2402:3a80:a1a:dfc6:d998:9a8b:3533:***:*** | ২৭ মে ২০২০ ২০:১৮731712
dc | 103.195.***.*** | ২৭ মে ২০২০ ২১:২৫731713
b | 14.139.***.*** | ২৮ মে ২০২০ ১২:০৬731725
Amit | 203.***.*** | ২৮ মে ২০২০ ১২:১০731726
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 42.***.*** | ২৮ মে ২০২০ ১৩:২১731727
Amit | 110.175.***.*** | ২৮ মে ২০২০ ১৪:৫৯731728
dc | 103.195.***.*** | ২৮ মে ২০২০ ১৬:০১731729
এবড়োখেবড়ো | ২৮ মে ২০২০ ১৬:৪৬731730আমি নিজে 'পরিযায়ী' শব্দটিকে বাদ দিয়ে 'অভিবাসী লিখে আনন্দবাজারে উত্তর-সম্পাদকীয় লিখেছি দুটি পর্বে। সেখানে এই সাইটটির সাহায্য নিয়েছিলা। কারও কাজে লাগতে পারে ভেবে সেটা এখানে রাখলাম।
sm | 2402:3a80:a7b:e66b:0:62:8ae9:***:*** | ২৮ মে ২০২০ ১৮:১৪731731ও, এব্রোখেব্রো বাবু।বাংলায় একটা গুছিয়ে সারাৎসার লিখেন না কেন?একটু এবড়ো খেবড়ো হলেও চলবে।
এবড়োখেবড়ো | ২৮ মে ২০২০ ২১:৪৪731733এসেম, কী করিতে হইবে? আনন্দবাজারের লেখাটি এখানে টুকসাঁটাই করিতে হইবে? কিন্তু ইহা খ-এর সুতো। তাঁহার অনুমতি না নইলে তাহা করা বিলক্ষণ খারাপ কাজ হইবে। খ রাগিয়া যাইতে পারেন। খ আমার বড় প্রিয় মানুষ। তাঁহাকে আমি রাগাইতে চাহি না।
!@#$%^&* | 49.37.***.*** | ২৮ মে ২০২০ ২১:৪৬731734
sm | 42.***.*** | ২৮ মে ২০২০ ২২:১২731735আমি সাময়িক ভাবে খ কে রেড কার্ড দেখাইয়া মাঠের বাহির করিলাম।আপুনি নিশ্চিন্ত মনে লিখিতে থাকুন।
খ,ততক্ষণে, 'ভারতের অর্থনৈতিক দুর্নীতির দরুন,ব্রিটেনের করোনা সঙ্কট' বিষয়ে নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখে ফেলুক।
বোধিসত্ত্ব | 2402:3a80:aa7:94b:e583:e632:6f7f:***:*** | ২৯ মে ২০২০ ০১:১৪731736
বোধিসত্ত্ব | 2402:3a80:aa7:94b:e583:e632:6f7f:***:*** | ২৯ মে ২০২০ ০১:১৯731737
বোদাগু | 2402:3a80:aa7:94b:e583:e632:6f7f:***:*** | ২৯ মে ২০২০ ০১:২২731738
এবড়োখেবড়ো | ২৯ মে ২০২০ ০১:৪৬731739খ আসলে আমি এলেবেলে, আপুনার একনিষ্ঠ ভক্ত। এর আগে এখানে কে একজন আবাজ দিয়েছিলেন যে আপনি নাকি আমার মধ্যে কীসব খুঁজে পেয়ে আমাকে ভালো বলেছেন, তাপ্পর থেকে আমি সামান্য সিঁটিয়ে থাকি আজকাল। আরে টই যে কারও একার না সে আমিও জানি। শুধু ভাবছিলাম লেখাটা এখানে দেওয়া প্রাসঙ্গিক হবে কি না। এসেমকে দীর্ঘদিন ধরেই চিনি। তাতে তিনি তিনো কি মুলো ওসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই, তবে লোক খারাপ নন একেবারেই। বেশ আজ রাত হয়েছে। কাল লিখব এখানে।
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 2402:3a80:a05:c9e:f233:79e1:1e96:***:*** | ২৯ মে ২০২০ ০৮:৫৭731745
sm | 2402:3a80:a06:19ff:0:52:9ab2:***:*** | ২৯ মে ২০২০ ০৯:৫৯731748খ, কে আরো দু একটি ফরমায়েশি প্রবন্ধ লিখতে অনুরোধ করা হলো।
চৈনিক পঙ্গপালের, দৈনিক অগ্রগতি।
করবিন ও তাঁর দূরবীন।
ট্রাম্পের কেচ্ছা ও ব্রিটেন এর অভিবাসন নীতি।
এবড়োখেবড়ো | ২৯ মে ২০২০ ১৬:২২731753[মুলত এসেম-এর অনুরোধে এবং খ-এর প্রশ্রয়ে গত ২৩ ও ২৪ মার্চ আনন্দবাজারে প্রকাশিত উত্তর-সম্পাদকীয়টি এখানে রাখলাম। লেখাটিকে সাম্প্রতিক করার জন্য কেবলমাত্র মৃত্যুজনিত তথ্য হালনাগাদ করা ছাড়া আর কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। আনন্দবাজারীয় বানানকে অযথা গুরুত্ব না দিলেও চলবে। তবে ইদানীং পোক্ত হওয়ার সুবাদে বিভাগীয় সম্পাদককে আনন্দবাজারীয় বানানও সংশোধন করার সুযোগ দিই না!]
গত ৯ মে আনন্দবাজারের প্রথম পাতায় ছিল শিউরে ওঠার মতো অথচ এক আশ্চর্য তাৎপর্যবাহী ছবি। একটা সমান্তরাল রেললাইন, সেই লাইন থেকে পুলিশের তত্ত্বাবধানে এক শ্রমিকের দেহ বস্তায় করে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কতিপয় উদ্ধারকর্মী। রেললাইনকে যদি সভ্যতার সমার্থক ভাবি আর মৃত শ্রমিকের দেহকে তার অমোঘ পরিণতি, তা হলে সভ্যতার করাল থাবা গ্রাস করেছে এই শ্রমিকদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে।
গত ২৫ মার্চ অগণিত দেশবাসীকে কোনও রকম পূর্ব প্রস্তুতির বিন্দুমাত্র সুযোগ না দিয়ে, মাত্র চার ঘন্টার নোটিসে দেশজোড়া লকডাউনের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে গৃহবন্দিত্বের মেয়াদ। লকডাউনের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ অভিবাসী (‘পরিযায়ী’ নয়, কারণ একই দেশে মানুষ কর্মসূত্রে স্থানান্তরিত হলে আলাদা হয়ে যান না) শ্রমিক। কলকারখানা, নির্মাণকর্ম, ব্যবসাবাণিজ্য, গৃহসহায়ক-সহায়িকার কাজ দুম করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে, তাঁরাই পড়েছেন সবচেয়ে আতান্তরে। এত দিন যাঁদের শ্রমের বিনিময়ে তিল তিল করে জমে উঠেছে যে বিশাল পুঁজির পাহাড়, সেই পুঁজির মালিকেরাই সবার আগে তাঁদের বেতন বন্ধ করেছেন।
কাজ বন্ধ, রোজগার বন্ধ, মালিক বা ঠিকাদার এই দুঃসময়ে তাঁদের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না; ফলে তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই সীমিত সঞ্চিত অর্থ ফুরিয়েছে। শহরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোনও রকমে দিন গুজরান করতে বাধ্য হওয়া এই অসহায় মানুষগুলো, বাড়িওয়ালাদের বকেয়া ভাড়া মেটানোর অসামর্থ্যের কারণে মাথার উপর ছাদের ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও হারিয়েছেন এক ঝটকায়। নিজের গ্রাম-মফস্সল থেকে দূরে কর্মস্থল, মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করা এবং প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের হাতের কাছে রেশন কার্ড না থাকার ফলে বেশির ভাগ শ্রমিকেরই সামান্য সরকারি খুদকুঁড়োটুকুও জোটেনি দীর্ঘ দিন।
যদিও সরকারি ভাবে এই অভিবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা নিয়ে কোনও তথ্য নেই, তবুও গত ১২ মে ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে জানা যাচ্ছে যে, ভারতে ভিন্ রাজ্যে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি এবং এই শ্রমিকদের যথাক্রমে ২৫ ও ১৪ শতাংশ মানুষ আসেন উত্তরপ্রদেশ ও বিহার থেকে। এছাড়াও, অভিবাসী শ্রমিকের নিরিখে উল্লেখযোগ্য রাজ্যগুলি হল রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা।
পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হুগলি ও মালদহ থেকে লাখ লাখ শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে বিভিন্ন ধরনের কাজে যান। কেউ যান কেরল ও চেন্নাইয়ে নির্মাণ কাজে, অনেকে হিরে কাটার কাজ করেন মুম্বই ও গুজরাতে। এমনকি গুজরাতে মার্বেল নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত মুর্শিদাবাদের অনেক শ্রমিক। নিজের রাজ্যে কাজের অনিশ্চয়তা, যৎসামান্য পারিশ্রমিক, সারা বছর চাষের কাজের উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব ইত্যাদি নানাবিধ কারণে নিতান্ত পেটের দায়েই অন্য রাজ্যে যেতে বাধ্য হন তাঁরা। বছরের পর বছর কেরল, মুম্বই, গুজরাত বা চেন্নাইয়ে কাটিয়ে দেন যা হোক ভাবে।
দেশ জুড়ে চলতে থাকা এই দমবন্ধ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের আশায় অবশেষে তাঁরা কয়েকশো এমনকি হাজারখানেক কিলোমিটার দূরে পাড়ি জমিয়েছেন নিজেদের ফেলে আসা ভিটেমাটির টানে। কেউ একা, কেউ বা সপরিবার। এই ভরসায় যে, কোনও ক্রমে যদি নিজের নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেন, তবে অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু মিলবে। দুবেলা দু’মুঠো খেয়েও বেঁচে থাকা যাবে। তাই শুরু হয়েছে অনন্ত হাঁটার মিছিল, আসলে অগণন মৃত্যুমিছিল।
২৫ মার্চ গোটা দেশে লকডাউন জারির আগেই ২২ মার্চ মধ্যরাত থেকে যাত্রিবাহী ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছিল রেল। লকডাউনে ট্রেন চলছে না ভেবে গত ৮ মে সন্ধ্যায় ঔরঙ্গাবাদের জলনার একটি ইস্পাত কারখানার জনা কুড়ি শ্রমিক জলনা থেকে ১৫৭ কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রদেশের ভুসাবলের পথে রেললাইন ধরে হাঁটা দিয়েছিলেন। পথশ্রমে ক্লান্ত হয়ে জলনা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে করমাড এলাকায় রেললাইনের উপরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বাড়ি পৌঁছনোর আগেই তাঁরা চলে গেলেন চিরঘুমের দেশে। মনমাডগামী মালগাড়ির চাকায় পিষে গেলেন ১৬ জন। রেললাইনে ইতস্তত পড়ে রইল কয়েকটা শুকনো রুটি, ছেঁড়া চটি, গামছা এমনকি মাস্কও।
মহারাষ্ট্রের ওই দুঃখজনক ঘটনার মাত্র দু’দিন পরে গত ১০ মে ফের অভিবাসী শ্রমিকেরা মারা গিয়েছেন মধ্যপ্রদেশে। হায়দরাবাদ থেকে আসা আম-বোঝাই ট্রাকটির গন্তব্য ছিল ঝাঁসি হয়ে উত্তরপ্রদেশের আগরা। ওই ট্রাকের উপরেই বসেছিলেন শ্রমিকেরা। শনিবার রাত সাড়ে এগারোটায় ভোপাল থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে মুঙ্গওয়ানিতে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ট্রাকটি উল্টে যায়। মারা যান আট হতভাগ্য অভিবাসী শ্রমিক।
এ ছাড়াও, দিল্লি থেকে সাইকেল চালিয়ে বিহারের পূর্ব চম্পারণের বাড়িতে ফেরার পথে গাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন সাগির আনসারি নামে এক শ্রমিক। দিল্লি থেকে বিহারেরর খাগারিয়া পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা সাইকেলে পাড়ি জমানো সাত জন শ্রমিকের মধ্যে ধরমবীর নামক একজন মারা গেছেন উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে। এই রকমই সাইকেলে মহারাষ্ট্রের ভিওয়ান্ডি থেকে উত্তরপ্রদেশে পাড়ি দেওয়ার পথে মধ্যপ্রদেশের বারাবনিতে মারা গিয়েছেন তাবারক আনসারি নামে অন্য এক জন শ্রমিক।
আসলে এই বিপুল সংখ্যক প্রান্তিক শ্রমজীবী মানুষ যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন এবং এই হঠাৎ ডাকা লকডাউনের প্রেক্ষিতে তাঁরা যে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে বাধ্য হবেন, সে কথা কেন্দ্রীয় সরকারের চিন্তাভাবনার মধ্যেই ছিল না। ফলে, খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা অভিবাসী শ্রমিক তাঁদের নিজেদের ভিটেমাটিতে কী ভাবে নিরাপদে ও নীরোগ অবস্থায় পৌঁছবেন, তা নিয়ে গোটা এপ্রিল মাস জুড়ে প্রশাসনিক স্তরে কোনও সমন্বয় চোখে পড়েনি। তবুও এরই মধ্যে ২০ এপ্রিল লকডাউন কিছুটা শিথিল হলে, বাসে চেপে ফেরার ব্যবস্থা করেছে কিছু কিছু রাজ্য। তেমন ভাবেই রাজস্থানের কোটা থেকে বাসে এ রাজ্যে ফিরেছেন পড়ুয়ারা; কেরলের কোচি ও রাজস্থানের অজমের শরিফ থেকে বিশেষ ট্রেনে ফিরেছেন প্রায় আড়াই হাজারের বেশি শ্রমিক, তীর্থযাত্রী, পড়ুয়া এবং রোগী ও তাঁদের পরিজন।
অবশেষে বিস্তর টালবাহানার পরে গত ৩ মে অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউনের শেষ দিনে, ভারতীয় রেল নানা রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেন চালানোর কথা ঘোষণা করে। যে রাষ্ট্র চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের অভিনন্দন জানানোর জন্য কোটি কোটি টাকা অপচয় করে আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি করতে পারে, বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের বিনা পয়সায় বিশেষ বিমানে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারে, সেই একই রাষ্ট্র প্রায় নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত শ্রমিকদের থেকে চড়া ভাড়া আদায় করেছে নির্মম ভাবে। ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের চরম দুর্দশা ও একের পর এক মৃত্যু দেখেও কেন্দ্র অভিবাসী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর জন্য কেন পিএম-কেয়ারসের টাকা খরচ করবে না, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অসংখ্য মানুষের মনে সেই প্রশ্ন উঠেছে সঙ্গত ভাবেই।
শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়ে বিতর্কও কম দানা বাঁধেনি। ৪০ দিন আটকে থাকা কয়েক হাজার শ্রমিক যখন বেঙ্গালুরু থেকে বিশেষ ট্রেনে ঘরে ফেরার প্রত্যাশায় মুখিয়ে ছিলেন, তখনই কর্নাটকের ইয়েদুরাপ্পা সরকার ট্রেন স্থগিত রাখার অনুরোধ জানায় রেলের কাছে। সরকারের দাবি ছিল, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ফের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় সেই কাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরে গেলে নির্মাণকাজে বিঘ্ন ঘটবে। অর্থাৎ শ্রমিকদের খাদ্য-বাসস্থানের নিরাপত্তার চাইতেও নির্মাণ সংস্থার স্বার্থ দেখাই সরকারের কাছে বেশি জরুরি! যদিও প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে কর্নাটক সরকার। অন্য দিকে, নিজ নিজ রাজ্যে ফিরতে না-পারার ক্ষোভে সুরতে পথে নেমেছেন বস্ত্র, হিরে ও নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন রাজ্যের হাজার হাজার শ্রমিক।
যখন লক্ষ-লক্ষ শ্রমিক প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যে কোনও ভাবে নিজেদের রাজ্যে ফিরতে মরিয়া, ঠিক তখনই অর্থনীতিতে করোনার ধাক্কা সামলানোর ‘অজুহাত’ দেখিয়ে একের পর এক শ্রমিকবিরোধী পদক্ষেপ করছে গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য। উত্তরপ্রদেশ সরকার আগামী তিন বছরের জন্য রাজ্যে শ্রম আইন শিথিল করেছে। বলা হয়েছে দিনে কাজের সময় ৮ ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘন্টা করার কথাও।
অথচ, এ দেশে শিল্পের ৯০% ক্ষেত্রই অসংগঠিত, যেখানে শ্রমআইন হয় ঢিলেঢালা নতুবা কার্যত নেই। এমনকি, সংগঠিত ক্ষেত্রেও অনেক স্বল্পমেয়াদি ঠিকাকর্মী আছেন, যাঁরা বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কাজেই, এই অবস্থায় শ্রমআইন আরও শিথিল করার অর্থই হল দেওয়ালে পিঠ ঠেকে থাকা কর্মীদের নামমাত্র টাকায় যথাসম্ভব নিঙড়ে নেওয়ার বন্দোবস্ত আরও পাকা করা। দিল্লি স্কুল অব ইকনোমিক্সের অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতির মতে, “শ্রম আইন শিথিল হলে কর্মীদের বিপত্তি বাড়বে। সহজ হবে ছাঁটাই। আরও বেশি হাত পড়বে ন্যূনতম বেতন, পিএফে।”
চলছে গৃহবন্দিত্বের তৃতীয় দফা। অথচ, করোনার দাপট কমেনি। কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে, তারও ঠিক নেই। ২৯ মে দুপুর ৩টে অবধি ভারতে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত মোট ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫০ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭১ হাজার ৩৬৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৭৯৭ জনের। পাশাপাশি, এ দেশে প্রতি বছর যক্ষায় মারা যান প্রায় ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার জন। ফলে মৃত্যুর নিরিখে করোনার ভয়াবহতা অনেকানেক রোগের তুলনায় অনেকটাই কম। কিন্তু করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পরে প্রায় দেড় মাস দেশের আর্থিক কার্যকলাপ বন্ধ ছিল। তাতেই চারদিকে ‘ত্রাহি রব’ উঠেছে। লকডাউনের প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রকট হয়েছে বেকারত্ব বৃদ্ধির ছবি। সরকার ও মানুষের কাছে স্পষ্ট যে, করোনার প্রকোপ এখনই কমবে না। ঘর করতে হবে একে নিয়েই।
এ কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ড চালুর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। টানা প্রায় ছ’সপ্তাহ বন্ধ থাকার পরে মঙ্গলবার ১১ মে থেকে ধাপে ধাপে যাত্রিবাহী ট্রেন চালু করেছে রেল মন্ত্রক। ১৮ মে থেকেই যাতে সীমিত সংখ্যক ঘরোয়া উড়ান চালানো যায়, তারও পরিকল্পনা চলছে পুরোদমে। তৃতীয় দফার লকডাউন ১৭ মে শেষ হওয়ার আগে থেকেই রেল যে ভাবে ট্রেন পরিষেবা চালু করে দিয়েছে, যে ভাবে ঘরোয়া উড়ানও চালু হতে চলেছে, তা থেকে স্পষ্ট, কেন্দ্র সরকার এ বার করোনার জন্য সাবধানতা বজায় রেখেই দেশে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে চাইছে। গত ১২ মে দেশবাসীর প্রতি তাঁর পঞ্চম বার্তায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ দফার লকডাউন সম্পূর্ণ অন্যরকম হবে বলে যে ঘোষণা করেছেন, তাতে এই পদক্ষেপ স্পষ্টতর হয়েছে।
২৯ মে দুপুর ৩টে পর্যন্ত ভারতে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত মোট ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫০ জন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ৯৫ হাজার ৩৫৩ জন মাত্র সাতটি শহরের বাসিন্দা। শুধু তাই নয়, সারা ভারত জুড়ে যে ১৭০টি জেলাকে হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার প্রায় অধিকাংশই এই শহরগুলোর অন্তর্গত। এই শহরগুলি হল মুম্বই (৩৫,৪৮৫), দিল্লি (১৭,৩৮৭), চেন্নাই (১২,৭৬১), আমদাবাদ (১১,৩৪৪), থানে (৮,২২০), পুণে (৬,৮৯৬) এবং ইনদওর (৩,২৬০)। মাত্র সাতটি শহরের জন্য জনজীবনকে এভাবে বন্ধ করার সার্থকতা কতটা, সেই নিয়েও সঙ্গত কারণেই মানুষের মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে শুরু করেছে।
অন্য দিকে, তেজেশ জি এন, কণিকা শর্মা এবং আমনের সাম্প্রতিকতম সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ থেকে ২২ মে পর্যন্ত লকডাউনের কারণে মারা গেছেন মোট ৬৬৭ জন। এঁদের মধ্যে অনাহার এবং আর্থিক বিপর্যয়ে মারা গেছেন ১১৪ জন, হাঁটা ও দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর ক্লান্তিজনিত পরিশ্রমের কারণে ৪২ জন, পুলিশি বর্বরতার কারণে ১২ জন, চিকিৎসায় সহায়তা না পাওয়ার জন্য বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ মারা গেছেন ৫৪ জন, সংক্রমণের আতঙ্ক ও নানাবিধ কারণে এখনও পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছেন ১২০ জন, নিজের রাজ্যে ফেরার সময়ে সড়ক বা ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন ২০৫ জন, অ্যালকোহল-উইথড্রয়ালের কারণে মৃত্যু হয়েছে ৫০ জন ব্যক্তির এবং অন্যান্য নানা কারণে মারা গেছেন ৭০ জন।
টানা ৬৬ দিন দেশ জুড়ে লকডাউন চালু করলেই যে করোনাকে মোকাবিলা করা যাবে না, থালা বাজিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে কিংবা পুষ্পবৃষ্টি করেও যে সংক্রমণ আটকানো যায় না– এ বাস্তব সত্য সরকার নিজেই উপলব্ধি করেছে এতদিনে। তাই সময় এসেছে দাবি তোলার, করোনা সংক্রমণের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা যে ভাবে নিয়মিত প্রকাশ করা হয়, লকডাউনের ফলে মৃত শ্রমিকদের সংখ্যাও সে ভাবে প্রকাশ করা হোক। তাঁদের অসহায় পরিবারবর্গকে দেওয়া হোক উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও বিকল্প রোজগারের নিশ্চয়তা। রাষ্ট্রের অবিমৃষ্যকারিতা ও উদাসীনতার খেসারত যাঁরা প্রাণের বিনিময়ে দিলেন, তাঁদের হয়ে আমরা অন্তত এই সামান্য দাবিটুকু সরকারের কাছে করতেই পারি।
সাহায্য চাই | 2402:3a80:a6a:7e04:0:2e:d425:***:*** | ৩১ মে ২০২০ ১৮:২৭731766
b | 14.139.***.*** | ০১ জুন ২০২০ ১২:৪১731767