এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • প্রচারই সারঃ আটকে থাকা মানুষকে ঘরে ফেরাতে সরকারী তঞ্চকতা!

    সৈকত মিস্ত্রী
    অন্যান্য | ১০ মে ২০২০ | ২১০০ বার পঠিত
  • চাইলেই ঘরে ফেরা যায় না।ফিরতে গেলে সিঁড়ি ভাঙতে হয়, পার হয়ে আসতে হয় অনেক পথ। ঘরে ফিরতে গিয়ে তার কিছুটা আঁচ পেলাম। কিছু প্রভাবশালী লোকজনের সাথে যোগাযোগের সুবাদে হয়ত এতটা বেগ পেতে হয়নি। যাদের তেমন কোন পরিচিতি নেই, ফেরার ভাড়া জোগাড়ের সামর্থ্য নেই, চেনা জানা না থাকায় থানার বাইরে দিনের পর দিন হত্যে দিয়ে থাকতে হয়, পায়ে হেঁটে চলতে হয় মাইলের পর মাইল পথ। লাভ করা অভিজ্ঞতা বিনিময় না করে পারলাম না।

    প্রচারই সারঃ আটকে থাকা মানুষকে ঘরে ফেরাতে সরকারী তঞ্চকতা!

    মার্চে পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছিল।টের পাচ্ছিলাম।ফিরব ফিরব করছি।তারমধ্যে চারঘন্টার নোটিসে লকডাউন ঘোষণা করলেন মহামহিম। ফলত কর্মস্থলে আটকে ছিলাম।তবে অন্য অনেক মানুষ যে জাগতিক সমস্যাগুলো ভোগ করেছে, সে সমস্যায় আমায় ভুগতে হয়নি।খাদ্য- আশ্রয়ের কোন সমস্যা এখানে ছিলনা। কিন্তু মায়ের একা থাকাটা উদ্বেগ বাড়িয়েছে।দুদফার লকডাউনের পরও রাষ্ট্র যখন লকডাউন খেলাকে আরও বাড়িয়ে নিতে চেয়েছে, তখন ফেরার উদ্যোগ নেই। স্থানীয় থানায় গিয়ে আধিকারিকের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কোন কথা না শুনে আমায় দেখেই বললেন - " এখানেই থাকুন"। অনুরোধের ভঙ্গীতে বললাম - বাড়ির সমস্যা কে মেটাবে? বললেন - পারলে চলে যান।বললাম কি ভাবে? তিনি আর কিছু বললেন না। বাধ্য হয়ে আমার পৌরঅঞ্চলের পৌরপ্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলে দেখি তাদের গয়ংগচ্ছং ভাব।দেখছি দেখবোতে আটকে আছেন। শেষে হাত তুলে দিলেন। একজন জনপ্রতিনিধি নিজের অপারকতার কথা বললেন।বললেন ফিরতে পারলে স্থানীয় কেউ সমস্যা করলে তিনি সাহায্য করবেন। অতঃপর রাজ্যসরকারের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে দেখি তারা আরও সরেষ। হয় সারাদিন লাইন ব্যস্ত না হলে রিং বেজে গেলেও কেউ উত্তর দেননা।গোটাকয়েক মেল করলাম।যদিও এখনও উত্তর আসেনি।
    অতঃপর জনৈক "ব্যস্ত" সাংসদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে,তিনি হোয়্যস অ্যাপ করতে বলেন। আমার ফেরাটা জরুরি একথা জানালে তিনি সৌজন্য রক্ষা অবশ্য করেছেন।সাথে সাথেই তিনি উত্তর দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন -" ফেরা যাবেনা"। আর তাঁর সাথে কথা বাড়াইনি।স্থানীয় বিধায়কের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সংবেদনশীলতার সাথে জানালেন কোথাও বাধা পেলে সাহায্য করবেন। আমি আস্বস্ত হতে পারছিলাম না। এত দূরের পথ সমস্যা হলে কতবার তাঁকে ওভার ফোনে জানাব। কাজের সময় নেটওয়ার্ক সমস্যা করলে? লাইনে না পেলে?অন্তত লিখিত অনুমতি জরুরি।

    [![11.jpg](
    [IMG-1-of-2.jpg](https://postimg.cc/MnMJhJkX)




    স্থানীয় আয়রন কারখানার সামনে সার বেঁধে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে।এখনও দুএকটা ট্রাককে যেতে দেখেছি। প্রথমদিকে অনুমতি না পাওয়ায় ভেবেছিলাম কলকাতা গামী কোন ট্রাকে ফিরব।দিন দুয়েক খোঁজ নিয়ে জানতেন পারলাম দুএকটা ট্রাক মাল নিয়ে কলকাতা যায়।তাদের ড্রাইভারকে অবস্থা বলায়,তারাও অসহায়তা জানায়। ট্রাকে দুজনের বেশি লোক থাকলে নাকি বুদবুদ টেকপোস্ট থেকে আর এগোতে দেবে না। ফলে তারা কোন সাহায্য করতে পারবে না জানালো। হাবড়ায় আমার এক ব্যবসয়াী বন্ধুর কথা মনে আসতে তাকে ফোন করি। তাদের ট্রাক চলাফেরা করছে।তবে পশ্চিমবর্ধমানে আসছে না। সে খোঁজ নিয়েও কোন ব্যবসায়ীর কোন ট্রাকের সন্ধান দিতে পারল না। প্রায় একরোখা হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলাম যা হয় দেখা যাবে, বেরতে হবে।





    রাজ্য সরকার পি বি সেলিম বলে নোডাল অফিসার নিয়োগ করেছেন। তাঁকে কিছুদিন আগে হোয়াস অ্যাপ করি।তিনি সপ্তাহে দু একবার হোয়াস অ্যাপে অনলাইনে আসেন। সপ্তাহের মঙ্গল বার অন হলেন কিছু সময়ের জন্য, তারপর শুক্র কি শনিবার। না তাও কোন প্রাপ্তি স্বীকার করেননা চিঠির, উত্তর তো নাই। সম্প্রতি সরকার হোয়াস অ্যাপে ই পাসের ব্যবস্থা করেছেন বলে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।নাম্বারটি হল -৮০১৭৮৪৫৫৫৫। এই নাম্বারে 'হায়' বলতেই স্বাগতম বলে অপসন আসল।সেখানে ১ ও ২ এর একটা অপশন দেওয়া। ১ নাম্বার ই পাস পাওয়া গেলে তার নাম্বারের জন্য। ফিরতে চাইলে ২ নাম্বার প্রেস করতে বলা আছে।২ নাম্বার পাঠানোর সাথে সাথে ২৩ টি জেলার নাম এল।তার মধ্যে থেকে আমার অবস্থানকারী জেলা নির্বাচন করাতে বলা হল। এখানে এসেই হোঁচট খেলাম।সরকারি ব্যবস্থাপনায় এমন পোগ্রামিং আপনি যত বার জেলাটির নাম বলবেন, ততবার রেজিস্ট্রেশন থমকে যাবে। বার বার জেলাকে নির্বাচনের নির্দেশ দেবে। বার দশেক পৌনঃপুনিক চেষ্টায় ঘায়েল হয়ে থামলাম।
    খুব বিরক্ত ও অসহায় লাগছিল।দুঃসময়ে পরিচিত রাজনীতিক, ক্ষমতাসীনরা এভাবে হাত তুলে দেয়। ধ্যুস ফিরব না।যত অসুবিধা অপর প্রান্তের লোকগুলোর হোক। সারা জীবন আটকে থাকতে হলে থাকব।এসব ভাবছিলাম। তার মধ্যে যা হয় হবে এমন দ্বিধা ও অনিশ্চয়তা নিয়ে যখন বেরবার কথা ভাবছি,আবার পিছিয়ে আসছি তখন আমার এক সংবাদমাধ্যম বন্ধুকে সাধারণ কথাবার্তার মাঝে বিষয়টি বললাম।সে নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়ে পাশের ব্যবস্থা করল।প্রশাসনিক আধিকারিকের সাথে কথা বলে আমায় পরদিন থানায় যেতে বললেন। পরদিন থানায় যেতে সন্ত্রস্ত সেন্ট্রি এগিয়ে এলেন -" কি বিষয়?" বললাম -" বড় বাবুর সাথে কথা হয়ে গেছে।" তিনি শুনে ভিতরে গিয়ে একটু বাদে ফিরে এলেন। বললেন - আবেদনপত্রটি দিতে। আবেদনপত্র জমাদেওয়ার একটু বাদে আবেদন পত্র সই হয়ে ফিরে এল।" কিছুক্ষণ থানার বাইরে বেঞ্চে বসে দেখলাম অনেক দরকারী কাজে অনুমতি নিতে এসে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। বড় বাবু আমার সাথে সরাসরি কথা বলার দরকার হয়নি। আমার বন্ধুটকে তিনি বলেছিলেন -" বুঝতেই পারেন, উপরের চাপ আছে।"




    উপরের চাপ বলতে যে সরকারি চাপ তা বোঝার অসুবিধা নেই। বাঁকুড়া মেডিকেলে একজনকে নিয়ে যাবেন। তাই অনুমতি নিতে এসেও দুদিন ঘুরতে দেখালাম একজনকে। উপর মহল বেঁধে দিয়েছে, তাই যে " বড়বাবু" যত কম অনুমতি দেবেন তার দক্ষতা কর্তাদের কাছে তত সাবাসী কুড়োবে।
    জিটি রোড ধরে ফেরার পথে পশ্চিম বর্ধমানের সীমানা পার করে পূর্ব বর্ধমানে ঢোকার মুখে বুদবুদে এক প্রস্ত চেক হল। হুগলি ঢোকার মুখে একপ্রস্ত চেক পোস্ট চোখে এল। কিন্তু খাঁ খাঁ করছে। আর উত্তর ২৪ পরগণা পর্যন্ত পুরো রাস্তাই গড়ের মাঠ। বজ্রআঁটুনি ফসকা গেরো।
    ঘটনাপ্রবাহ থেকে কতগুলো আশঙ্কা মনে এল। যাদের চেনা জানা মহল নেই বললেই চলে।যারা সরকারি গোলকধাঁধায় পথ হারাবেন, কিভাবে মেল করতে হয় জানেন না তারা বহু সঙ্কটে থেকেও, আমার থেকে বহুজরুরি দরকার সত্বেও তারা অনুমতি পত্র জোগার করতে শুকতলা খুইয়ে বসবেন।
    পরিযায়ী শ্রমিকরা আজ সত্যি বিপন্ন। আটকে থাকা অনেকেই তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছেন।রেশন থেকেও ওরা বঞ্চিত। দুদিন থানায় যেতে হওয়ায় এমন অনেকের সাথে কথা হল। সকলে ফিরতে চায়।এত গেরোর প্যাঁচ অনেকে জানেনা। দীর্ঘ শ্বাস আর অসহায়তা চোখের জল তাদের একমাত্র সঙ্গী। তাদের সবার পক্ষ থেকে প্রটোকল সর্বস্ব সরকারের কাছে অনুরোধ -" নিয়মকে পাশে রেখে, প্রচারের মিথ্যেকে সরিয়ে এদের পাশে দাঁড়ান।সর্বস্ব সরকারের কাছে অনুরো-" নিয়মকে পাশে রেখে, প্রচারের মিথ্যেকে সরিয়ে এদের পাশে দাঁড়ান।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন