এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আরো দূর অন্ধকারে ( গল্প)

    Moumita Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৬ এপ্রিল ২০২০ | ২৭২৪ বার পঠিত
  • আরও দূর অন্ধকারে..( করোনাত্মক নয়; একশোভাগ প্রেমের গল্প)
    তামিমৌ ত্রমি

    সেপিয়েন্সিও দলের আর সবাইকে গুহায় স্থিতু করে চারপাশটা দেখতে বেরোল। বেশ পছন্দ হয়েছে তার জায়গাটা। যে জিনিষটায় তারা চান করে, তেষ্টা পেলে খায়, সেই জিনিষটা শীত বাড়লে কঠিন হয়ে যায়। আর মাঝে মাঝে কী একটা যেন বয়ে যায় আর দেহে কাঁপুনি ধরে। সে যে কী কষ্টের জীবন, তা বলে বোঝানোর নয়, গুহা থেকে বেরনো যায় না শীতের চোটে। চকমকি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তার পাশে গোল করে বসে থাকলে একটু আরাম হয়। বাইরে পা রাখাই বড় বালাই। তার মধ্যে শিকার করা। হাড়ে হাড়ে ঠকঠক। তাছাড়া পশুরাও ঘাপটি মেরে থাকে। তবু বেরোতে হয়। খেতে হয়। গাছেরাও শুকিয়ে যায়। ফলের যোগান কমে যায়। শিকারী পশুদের চামড়া ভেড়ার পশম..তবুও রক্তে শিরশির। গায়ে দিয়েও ভিতর থেকে শিরশির করে। কিন্তু সে কষ্টের দিন গিয়েছে।

    হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি...

    আরো একটা হিমযুগ শেষ হল। আরো একটা আসবে। মাঝখানে কয়েক হাজার বছরের তাপিত সুখ। সুখের দিনে ঐ তেষ্টার জিনিসটা আবার কঠিন থেকে পাতলা হয়ে যায়। খেতেও গলা টনটন করে না। আর চারদিক একটা অদ্ভুত রঙে ভরে যায়। গাছের মাথায় যে রং থাকে, সেই রঙ। গাছেদের মাথাগুলোয় চুল গজায়, যেমন তাদের মাথাতেও গজায়। কিন্তু তার রঙ আলাদা। সেই রঙ সদ্য গজিয়ে ওঠা ঘাসেও দেখা যায়। আর চোখ তুললে মাথার উপর একটা ছাদ দেখা যায়। তবে সেটা তাদের গুহার ছাদের থেকে অনেক উঁচু আর অনেক বড়। শেষ নেই তার। তার আবার আরেক রং। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার চোখ নামালে ঐ তেষ্টা মেটানোর যে তরলটা বিরাট জায়গা জুড়ে থাকে, তার রঙও ঐ ছাদটার মতো। আবার গুহার গায়ের রঙ অন্য রকম তার গা বেয়ে যে তরলটা ছল ছল করে গড়িয়ে পড়ে, সেটা আঁজলা ভরে খেয়েও তাদের তেষ্টা মেটে। তার আবার অন্য রকম রঙ।

    আহা, সুখের দিন এলে কতই না রঙের বাহার। সেই সঙ্গে শুরু মহাযাত্রার তোড়জোড়। নতুন নতুন জায়গা, যেখানে অনেক ঘাস আছে। গোষ্ঠীর পশুরা পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পাবে। শিকারেরও অভাব হবে না। অনেক মিষ্টি ফলের গাছ থাকবে। আর রসালো কন্দ, শেকড় বাকড় - তিরতিরে তেষ্টা মেটানোর তরল জীবন । ওহ, আর কি চাই! সেই কবে যাত্রা শুরু করেছিল তারা - সেপিয়েন্সিও তার ৮৮,০০০ বছর আগেকার জ্ঞান - বুদ্ধি দিয়ে জানে না যে তার আদি বাসভূমির নাম হবে আফ্রিকা। সেই আফ্রিকাকে আবার টুকরো টুকরো করে প্রতিটি টুকরোর আলাদা নাম দেওয়া হবে। যেমন যে টুকরোটা থেকে সেপিয়েন্সিওরা যাত্রা করেছিল, তার নাম হবে ইজিপ্ট। সেখানে মারা যাবার পর লোককে একটা তেকোনা ঢাকনায় চাপা দিয়ে রাখা হবে। তারাও যেমন চাপা দিয়ে দেয় মাটি দিয়ে- যখন তারা দেখে কেউ আর নড়ছে আর তার বুক ওঠানামা করছে না, তারা মাটি চাপা দিয়ে দেয়। আবার কখন এমনি ফেলেও চলে যায়।সেপিয়েন্সিও ' র সত্যিই ধারণা নেই, সাহারা আর সিনাইয়ের মতো এমন গাছের মাথার রঙের ঘন ঘাসজমি, একদিন মরুভূমি হয়ে যাবে। শুকনো ধূসর, ধূ ধূ...। অধুনা লেভেন্ট অর্থাৎ সাইপ্রাস ইসরায়েল জর্ডন সিরিয়া লেবানন টার্কি পেরিয়ে শেষপর্যন্ত তাদের দলটা হাঁটতে হাঁটতে এসে পোঁছল ইউরেসিয়ার দক্ষিণে।গুহা, ঝর্ণা, পর্যাপ্ত পশু, দিগন্ত বিস্তৃত ঘাসজমি.. বেঁচে থাকার জন্য এক্কেবারে মানানসই জায়গা। ঘচ ঘচ ঘচ ঘচ। সেপিয়েন্সিও মনের আনন্দে পাথরে শান দিতে লাগল, পাথর যত সূঁচালো হবে, তত সহজে না শিকারকে ঘায়েল করা যাবে। শান দিতে লাগল সেপিয়েন্সিও। চোদ্দ হাজার বছর ধরে... ঘচ ঘচ ঘচ ঘচ....

    দারুচিনি - দ্বীপের ভিতর...

    সেপিয়েন্সিয়াস হো হো করে দুটো হাত আকাশে তুলে হেসে উঠল। পাথরের বল্লমের এক ঘায়ে লোমশ গন্ডারটাকে ঘায়েল করেছে। লক্ষ্য ছিল গলার নরম মাংসল জায়গাটা। একেবারে মোক্ষম লেগেছে। আহ, কতটা মাংস পাওয়া গেল। গুহায় পা রাখলেই সেপিয়েন্সিও'র উত্তরসূরী সেপিয়েন্সিয়াসকে সবাই ধন্য ধন্য করবে।
    ম্যা ম্যা... হঠাৎ পেছনে একটা ভেড়ার আওয়াজ শুনে পেছন ফিরে তাকাল সে। বা বা, আজকে তো দারুণ মজা। এক হাতে গন্ডার আর এক হাতে ভেড়া নিয়ে গুহায় ফেরা যাবে। কদিন এখন আর শিকারের পাট থাকবে না। সেপিয়েন্সিয়াস গন্ডারের রক্তমাখা সূচলো পাথরটা হাতে তুলে নিয়ে ভেড়াকে লক্ষ্য করে ছুঁড়তে যাবে যেই.. একটি এলোমেলো মোলায়েম কন্ঠস্বর ছুটে এল এক কুহকিনী নিয়ে।

    তেমনি দেখেছি তারে...

    পৃথিবীর সব কাজ থেমে গেছে। ঘাসজমির প্রতিটি ঘাস, প্রতিটি গাছ যেন প্রাগৈতিহাসিক খাতায় এক একটা দাঁড়ি। দুজন অপলক দুজনকে চোখে চেখে নিল। সেপিয়েন্সিয়াস আগে এমন মেয়ে দেখেনি। আকাশে রোজ যে আগুনের গোলাটা ওঠে, মেয়েটার তেমন রঙ। চুলও তেমন, ভ্রু দুটি ঘন, নাক উঁচু। মাথার পিছন দিকটা যেন কেউ জোর করে খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। ছুটে ছুটে আসার জন্য তার বুকের ওঠাপড়া একটু বেশিই চোখে পড়ার মতো। চামড়ার পোশাকের নীচে যে দুটো নরম গোল মাংসের তাল আছে, যাতে নতুন ছোট্ট সেপিয়া শিশুরা ঠোঁট চেপে দুধ খায়, আর সেপিও পুরুষদের যে দুটো দেখলে মুখ ঘষে চুষে টিপে কামড়ে দিতে ইচ্ছে করে আর দু পায়ের ফাঁকে যেটা থাকে, সেটা খাড়া হয়ে যায়.. তাদের স্পষ্ট আভাস পেল সেপিয়েন্সিয়াস।
    মেয়েদের ঠিক বোঝে না সে। তাদের জায়গা দিয়ে ঝাঁঝালো তরল বহ্য পড়ে, মাঝে মাঝে সেই জায়গা দিয়েই লাল তরল পড়ে। অথচ কোন কাটা ছেঁড়া নেই, এমনিই পড়ে। আবার কখনও পেট ফুলতে থাকে। ফুলতে ফুলতে ঐ ফুটোটা দিয়েই একটা নতুন 'কেউ' বেরিয়ে আসে। দেখতে তাদেরই মতো কিন্তু ছোট্ট।

    মেয়েদের ভয় করে সে। আবার তাদের মাঝে মাঝে শরীরের সঙ্গে মিশিয়ে পিষে ফেলতে ইচ্ছে করে। সেপিয়েন্সিয়াকে নিয়ে এমন পাগলামি করে ছিল সে একদিন। সেপিয়েন্সিয়া ঐ লম্বা সুঁচলো জিনিষটা নিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিল তার ফুটোয়। গুহার গা চুঁইয়ে যেমন তিরতিরে তেষ্টার তরল পড়ে কিছুক্ষণ পর একটা দুধের মতো তরল সেপিয়েন্সিয়ার ফুটো চুঁইয়ে গড়িয়ে পড়েছিল।
    কিন্তু এই মায়াবিনী তো সেপিয়েন্সিয়ার মতো দেখতে নয়। তাদের গোষ্ঠীর কারোর মতো দেখতে নয়। এ তাহলে কে?

    এতোদিন কোথায় ছিলেন?...
    পাজি নচ্ছার ভেড়াটা কী দৌড়ই না করাল নিয়েন্ডারথালিনীকে। উত্তরের ঠান্ডা থেকে বাঁচতে ওদের দল একটু নেমে এসেছে - কদিন হল। মাশরুমগুলো তুলে গুহার ভাঁড়ারঘরে তুলে রেখেই দেখতে পেল, ভেড়াটা হাতের নাগালেই মনের আনন্দে ঘাস খাচ্ছে। দেখেই সে সুচোল পাথরটা নিয়ে পা টিপে টিপে তার তাকে ধাওয়া করতে লাগল। ব্যাটা ঠিক টের পেয়েছে আর সঙ্গে সঙ্গে দে দৌড়। প্রাণ বাঁচানোর দৌড় যাকে বলে আর কি। দৌড়তে দৌড়তে কখন যে এতটা পথ সে ছুটে এসেছে, তা তার খেয়াল নেই। থাকার দরকারও নেই। এই হতচ্ছাড়া ভেড়াটাকে শিকার না করে ওর শান্তি নেই। একের পর এক বুনো ঘাস পায়ে মাড়িয়ে নিয়েন্ডারথালিনী ছুটে আসছে একেবারে ঝড়ের দিনের মতো। ওই যেদিন মাথার উপর বড় ছাদটার রং পালটে যায়। আগুনের গোলাটা মিলিয়ে গেলে যেরম রং হয় সেরকম, কিন্তু গরম আগুনের গোলাটা মিলিয়ে গেলে অন্যদিন যেমন ঠান্ডা আগুনের গোলাটা দেখা যায়, সেইসব গাছ ওলট পালট করার দিনে সেই গোলাটাকেও দেখা যায় না। সেই ওলটপালট ছন্দে সে পিছু নিয়েছিল, অথচ কাকে দেখে তার পা থেমে গেল? এ কে? এ তো ওর গোষ্ঠীর পুরুষদের মতো নয়। এর গায়ের রং যেন ঠান্ডা আগুনের গোলা মাখা অন্ধকার ছাদটার মতো। ভ্রু দুটো সরু, নাকটা বোঁচা, চোখ দুটো ছোট, কিন্তু তাতে কী যেন একটা আছে। সেটা যে বুদ্ধির ঝলক, তা বোঝার মতো জটিলতা চুয়াত্তর হাজার বছর আগের যুবতী নিয়েন্ডারথালিনী'র ছিল না। ঐ চোখ দুটোই নিয়েন্ডারথালিনীর মন কাড়ল। আসলে ওই চোখেই লেখা আছে তাদের সব্বাইকে পিছনে ফেলে একদিন এগিয়ে যাওয়ার আর গোটা বিশ্ব জয় করার স্বপ্নিল রাস্তার দিশা।

    পান্ডুলিপি করে আয়োজন তখন গল্পের তরে...

    সেপিয়ান্স নিয়েন্ডারথালিনীকে হাতের ইশারায় ডাকল! এমনভাবে ডাকা যায়! তারা তো স্পর্শ বিনা ডাকতে পারে না। আর এই পুরুষ কি না এত দূর থেকে তার সঙ্গে এত সহজে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে! ভারি আশ্চর্য তো! নিয়েন্ডারথালিনী সেই আহবান উপেক্ষা করতে পারল না। সে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল। সেপিয়েন্সিয়াস ঘ্যাঁক করে জড়িয়ে ধরল তাকে। নিয়েন্ডারথালিনী ' র সারা শরীর ঝিমঝিম করে উঠল। দুটো অবশ ও উদ্যত শরীর ঘাসজমিতে ডুবে স্নান সারতে লাগল।
    থাকে শুধু অন্ধকার...
    স্নানের যোগাড় যন্ত্র করছিল আরো একজন। এক আগ্নেয়গিরি। হাজার হাজার বছর বাদে সেই জায়গাটার কেউ নাম রাখবে টোবা। কিন্তু এখন সে এক অনামিক আগ্নেয়গিরি যার বুকে লাভারা আস্ফালন আলোড়নের লোফালুফি খেলছিল অনেকদিন ধরে। নিয়েন্ডারথালিনীর সঙ্গে আদিম ধ্বস্তা ধস্তির শেষে যখন সেপিয়েন্সিয়াস লাভা মোচন করে এলিয়ে পড়ল নিয়েন্ডারথালিনী র বুকে, তখন ফেটে পড়ল রাজকীয় আগ্নেয় সেই অনামিক।

    সেই আকস্মিক প্রাণে বাঁচিয়া যাওয়া ভেঁড়া, সেই ওলটপালট পথ, সেই তাহাদের গুহা, তাহাদের দল, কুড়িয়ে রাখা মাশরুম, রক্তমাখা দুইটি সুচোল পাথর, কিয়তক্ষণ পূর্বে লয়প্রাপ্ত একটি গন্ডার, প্রস্তর - কন্দরের অঙ্গ প্লাবিত নির্ঝরিণী, নিয়েন্ডারথালিনীর গূঢ় কন্দরে প্লাবিত দুগ্ধবর্ণাভ প্রস্রবন, তৃণভূমিগণ, বৃক্ষরাজি, নিমেষে জ্বলিয়া পুড়িয়া গলিয়া জুড়িয়া মুহুর্তে ছাই হইয়া গেল।

    মুখোমুখি বসিবার...
    স্বপ্নিল এলিয়ে আছে কমলিনীর বুকে। লাভা উন্মোচনের আগেই অবশ্য সে সামলে নিয়েছে নিজেকে। এখন কমলিনীর বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে সে অপরাধবোধে জর্জরিত হচ্ছে।এই সময়ে যৌনতাকে প্রশ্রয় না দিতেই বলছেন ডক্টররা। যে রোগ এক হাতের মধ্যে এলে সংক্রামিত হয়, সেই করোনা যে যৌনরসকে রেহাই দেবে না, বলাই বাহুল্য। তাছাড়া আদরের সময় তো মাথার ঠিক থাকে না। কতবার কমলিনীকে নানা অঙ্গে চুমু খেয়েছে। আঁচড়েছে। নখেও তো ময়লা থাকে। এটা ঠিক হল না - ১২৫১ ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বে আক্রান্তদের সংখ্যা কিছুদিনের মধ্যেই আট লাখ ছাড়িয়ে যাবে। ২১ দিনের হাজতবাস। ই এম আই, ফাইলিং সবকিছু তিনমাসের জন্য পেছিয়ে দেওয়া হল।এর মধ্যে আনন্দ বিহারিছে। দেশভাগের পর মাথায় চিনির ডেলা নিয়ে এমন অজগরীয় পিঁপড়ের সারি আর কী দেখা গেছে? ডিনারের পর স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়েছিল তো? এটিএম থেকে টাকা তোলার সময় হাতে ওয়াইপ্স জড়িয়ে সুইচ প্রেস করেছিল, কিন্তু কার্ডটা তো মেশিনে হাত দিয়েই ইনসার্ট করেছিল। কি গাধা কি গাধা, ইনফেকশন তো ওখান থেকেও ছড়াতে পারে। সারা বিশ্বে বাইশ হাজার আক্রান্ত। রাজা উজির মন্ত্রী কারোর নিস্তার নেই। জপের মালা আর ইষ্টমন্ত্র এখন শুধু কোভিড নাইন্টিন, কোয়ারান্টাইন, স্যানিটাইজার, সোশাল ডিস্ট্যান্সিং... নিজের মোবাইলে হাত দিতেও ছ্যাঁকা লাগে। এ টি এম ' থেকে টাকা তুলে গেঞ্জি আর জিন্স তো ছেড়েছিল, কিন্তু জাঙ্গিয়া... সে তো সেই চান করার সময়ে ছেড়ে ছিল,তার মধ্যেই কিছু... স্বপ্নিলের কেমন পাগল পাগল লাগছে। তার বাড়ির পিছনের গলিতে একজনের বাড়িতে স্ট্যাম্প মেরে দিয়েছে।
    দুই ধানের গোলার মধ্যে শান্ত ছাগল ছানা যেমন খড় খুঁটে খায়, ঠিক তেমনই অসহায় স্বপ্নিল কমলিনীর দুই স্তনের মাঝে আশ্রিত নাক ঘষতে ঘষতে বলে চলে,
    - আচ্ছা লিনী, করোনা, হানটা, ডেঙ্গি, ফ্লু, দাঙ্গা, ক্রুসেড, কেমিকাল ওয়েস্ট, নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোশন, টেরর এগেন্সট ওয়ার, ওয়ার এগেন্সট টেরর, বন্দুকের নল, আর্সেনিকের জল, গ্লোবাল ওয়ার্মিং ... তোমার কী মনে হয় মানুষ জাতটা বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে?

    - তাহলে তোমায় একটা গল্প বলি। গল্প নয়, ইতিহাস। আজ থেকে চুয়াত্তর হাজার বছর আগে সুমাত্রার টোবায় এক আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে গোটা পৃথিবীর ক্লাইমেট চেঞ্জ হয়ে যায়। ইস্ট এশিয়া থেকে ইস্ট আফ্রিকা গুঁড়ো গুঁড়ো ছাইয়ের আস্তরণে ঢেকে গিয়েছিল।
    - তারপর?
    - তারপর আর কি? পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে যা হয়, আবার নতুন করে শুরু হয় গল্পের তরে পান্ডুলিপির আয়োজন। পৃথিবী আবার বাসযোগ্য হল, আবহাওয়া ধীরে ধীরে ঠান্ডা হল, ছাইরা গেল উড়ে, গাছেরা মাথা তুলল, শোনা গেল পশু পাখিদের কলরোল। আফ্রিকার জঙ্গলে কোন এক বিবর্তিত সাউদার্ন এপ চার পায়ে চলতে চলতে হঠাৎ দুই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াল আর মাথা চুলকে ভাবল, এই যে হাত দুটো ছাড়া পেলাম, এই দুটোকে কী কী কাজে লাগানো যায়? মাথা চুলকোতে চুলকোতে সে যত চিন্তা করে, তত তার মস্তিষ্কের ক্রিয়া বাড়তে থাকে। মাথার আয়তন বাড়তে থাকে। সেই শ্রেষ্ঠ ও জটিল মাথাটা নিয়ে কালে কালে সে বিদ্যা গজগজ সেপিয়েন্স হয়ে সারা পৃথিবী নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিল।
    - তাহলে বলছো, বিপর্যয়ের পরেও মাথা তোলার আশা আছে?
    - আশা নয়, বিবর্তন আছে। আশা কল্পনা; বিবর্তন বিজ্ঞান।
    - তুমি বড় বড্ড করে ভাবো সবকিছু। আমি তো ভাবছি কালকের কথা। কাল যদি আমার কিছু হয়, তাহলে আমাদের কী হবে?
    - কিছু না কিছু তো হবেই একদিন না একদিন, আমরা তো এমনিতেও চিরকাল থাকব না। কিন্তু 'আমরা' চিরকাল থাকব, হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথে পথে হেঁটে বেড়াব। ভরসা রাখো। মানুষের প্রতি।
    - তাহলে আর কি, আপাতত এই হাত দুটোকে একটা কাজে লাগাই।
    - কি কাজ?
    - তোমাকে জড়িয়ে ঘুম যাই।
    কমলিনী স্বপ্নিলের নাকটা আলতো করে টিপে দিল। তারপর মাথাটা টেনে নিল বুকে। হাত দুটো চিলের মতো বিছিয়ে দিল স্বপ্নিলের পিঠে,যত্নে মুছে দিতে লাগল বিন্দু বিন্দু ঘামের শিশির..

    সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল....
    ঠিক এমনই এক ব্রাহ্মচিল মুহুর্তে এক কোল বাচ্চার বাবা, এক কাঁখে বাচ্চার মা.. এবং ওরা আরো কয়েকজন দিল্লী নয়ডা হরিয়াণা থেকে হাঁটতে শুরু করল সিনাই সাহারা লেবানন সিরিয়া ইসরায়েল ইউরেশিয়া ইউরেকা আটলান্টিস ইউটোপিয়া এল- ডোরাডো 'দ্যাশ' কিংবা 'গাঁও' এর দিকে।
    তামিমৌ ত্রমি
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন