কেন্দ্রে মসনদে বসে থাকা দলটির ব্লিৎস্ক্রিগ ক্যাম্পেইন, হেভিওয়েট প্রচার, বিপুল ধনবল এবং মিডিয়ার উচ্চরবের মুখোমুখি হয়েও আম আদমী পার্টির এমন একতরফা বিজয়ের পর উঠে আসছে একগুচ্ছ প্রশ্ন।
যেমন, কি করে হ?, কেন হল? এটা কি হেট স্পীচের রিজেকশন? এটা কি ধর্মীয় রাজনীতির ভ্যালিডেশন? এটা কি কেজরিওয়ালের সফট হিন্দুত্বের জয়? এর ফলে কি দীর্ঘকালীন ক্ষতি হবে না ? এটা কি ফ্রিবি' রাজনীতির জয়? কেজরি কি ভেনেজুয়েলার হুগো স্যানচেজের মত দিল্লিকে গরীবের পায়ে লুটিয়ে দিয়ে ভাঁড়ার খালি করে কাট মারবে? ইডিওলজি বিনা রাজনীতি-- সোনার পাথরবাটি? দিল্লির লোক শস্তা বিজলি/শস্তা জল আর বিনেপয়সায় বাসে চড়ায় বিকিয়ে গেল? নাকি মুসলমানের ভোটে তফাৎ করে দিল? বিহার বঙ্গে কী হবে?
আমি হিন্দিবলয়ে আছি বলে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করব এবং কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে আমি সবজান্তা নই । আলোচনা চলবে আশা করি ।
আলোচনাটা চারটি পর্বে বাঁধতে চাইছিঃ
এক, আপ সরকারের বাজেট এবং ফ্রিবি'র অভিযোগ।
দুই, নির্বাচনী রণনীতি এবং রণকৌশলঃ বিজেপি এবং আপ।
তিন, রাজনৈতিক, মতাদর্শগত প্রশ্ন , উচিত/অনুচিত।
চার, হাতে কী রইল-- কোন অলটারনেটিভ মডেল, নাকি আদর্শবিহীন প্র্যাগম্যাটিজমের কানাগলিতে ঢোকা?
আজ রাতে শুধু প্রথম পর্ব।
্দিল্লির ২০১৯-২০ বাজেট পেশ হয় ২৬/২/২০১৯শে। তখন দিল্লির স্টেট জিডিপি ছিল ৭,৭৯,৬৫২ কোটি টাকা, যা আগেরবারের (৬,৯০,০৯৮ কোটি ) চেয়ে ১৩% বেড়েছে। কেন্দ্রের জিডিপি বৃদ্ধির দর সবারই জানা।
বাজেট (রাশি কোটি টাকায়)
জমা খরচ
রেভিনিউ আমদানি ৫০.৭৬৭ (+১০.৭) ** পুঁজিগত ব্যয় ১৫,২১৯ (+৪৭.৭%)
ধার ৪,৭৮৬ (--১৭.৫%) রেভিনিউ ব্যয় ৪৪, ৭৮১ (+১২.৩%)
মোট ৫৫,৫৫৩ (+৭.৫%) মোট ৬০,০০০ (+১৯.৫%)
(রেভিনিউ সারপ্লাস ৫,২৩৬) (+৬.২%)
বিত্তীয় হানি ৫৯০২ * । এটি স্টেট জিডিপি'র ০'৭% মাত্র । কেন্দ্রের দর ৫% ছুঁয়েছে । গতবছর ছিল ৬৮৯ কোটি মাত্র ।
* অন্য সম্ভাবিত আমদানি ৭৫০ কোটিকে বাদ দিয়ে )
**গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধির প্রতিশত বন্ধনীতে দেখানো হয়েছে।
( আমার আনাড়িপনায় চার্ট একটু নড়ে গেছে, নিজগুণে বুঝে নেবেন, প্লীজ।)
সরকারি তথ্য অনুযায়ী দিল্লির ফিসক্যাল ডেফিসিট --রাজ্য জিডিপির % হিসেবে --সমস্ত রাজ্যের তুলনায় সব থেকে কম। সবচেয়ে বেশী মণিপুর।
এবার প্রধান খরচগুলি এবং তা বাজেটের কত প্রতিশত দেখুন। প্রথমে বহুনিন্দিত জলকর ( মাসে ২০,০০০ লিটার) ভর্তুকি, বিজলি ভর্তুকি ( মাসে ২০০ ইউনিট) এবং মহিলাদের জন্যে ফ্রি বাস রাইড।
দিল্লি জলবোর্ড ৪৬৮ কোটি ( বাজেটের ০.৮%),
বিজলি ১৭২০ কোটি (৩%),
মহিলাদের বাসভাড়া বাবদ ১০৮ কোটি (০.১৭%),
ম্যানহোল থেকে মেশিন দিয়ে ময়লা সাফ ৪৮২ কোটি (০.৮%)
সিনিয়র সিটিজেনদের পেনশন ১২১০ কোটি (২%)
দিব্যাঙ্গদের জন্যে ২৫৩ কোটি (০.৩%)।
আন- অথরাইজড কলোনির ইনফ্রাস্ট্রাকচার ৯৯৫ কোটি (১.৬%)
তাহলে বড়খরচ কীসে ? ক্যান লোকে ভোট দিল? এবার দেখুনঃ
শিক্ষা ১৫, ১৩৩ কোটি (২৫%)
স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ ৭,৪৮৫ কোটি ( ১৩.৮%)
ট্রান্সপোর্ট ৫৮৮২ কোটি (৯.৫%)
শুদ্ধ পেয়জল আপুর্তি এবং এনভায়রনমেন্ট ৫২৮০ (৯%)
বাকি আলুচানা কালকে।
একটি স্বঘোষিত দেশপ্রেমিক চ্যানেল ( যারা নতুন ২০০০ টাকার নোটে এমন চিপস আছে যে নকল হলে স্যাটেলাইটে ধরা পড়বে বলে দাবি করেছিল) বলছে দিল্লির লোকজন 'মুফতখোর', কাজ না করে নিজেদের পেট ভরলেই খুশি। ওদের দেশ, পুলবামা এসব নিয়ে কোন চিন্তা নেই । তাই কি ?
এবার দেখুন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তুলনা।
গরীবদের বেশি ভর্তুকি দিচ্ছেন মোদী সরকার। পিএম কিসান যোজনায় সমস্ত কৃষকের খাতায় সোজা যাবে ৬০০০ টাকা করে , সে চাষই করুক বা ঘরে বসে থাকুক। দিল্লির মহিলারা কিন্তু ঘরে থাকলে সুবিধে পাচ্ছেন না । কাজে বেরিয়ে যাতায়াত (আর্থিক বা ব্যক্তিগত) করলে তবেই। ভারত সরকারের বাজেট সাবসিডি ২.৬৪ লাখ কোটি । যোগ করুন ফুড সাবসিডি ২.০০ লাখ কোটি এবং পিএম কিসান যোজনা ০.৭৫ লাখ কোটি । মোট ভর্তুকি ৫.৩৯ লাখ কোটি, অর্থাৎ বাজেটের ১৮.৫%; এদিকে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি তা-না-না করেও ৫% ছুঁতে চলেছে।
অথচ দিল্লি সরকারের জল-বিজলি-বাস ভর্তুকি -- যা নিয়ে এত ট্রোলিং-- তাহল একুনে ২৪৭৮ কোটি , অর্থাৎ বাজেটের ৪.১%। আর দিল্লির রাজস্ব ঘাটতি হল রাজ্য জিডিপি'র মাত্র ০.৭%। মনে হচ্ছে কেজরি পাবলিকের ট্যাক্সোর পয়সায় দানছত্র খুলে সরকার দখল করেছে কথাটা ডাহা মিথ্যে। গরীবদের বেসিক প্রয়োজনগুলোতে সরকারের ভর্তুকি দেওয়া যদি ব্যাড ইকনমিক্স এবং ফিসক্যাল মিসম্যানেজমেন্ট হয় তাহলে আঙুল কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই ওঠা উচিত, আপ সরকারের দিকে তোলা কঠিন।
এবার দেখা যাক দিল্লি সরকার কোন বিশেষ বিশেষ খাতে কেমন খরচ করছে।
শিক্ষাঃ
সর্ব শিক্ষা অভিযানে ২০০০ কোটি , তৃণমূল স্তরে লোকাল বডির মাধ্যমে প্রাইমারি শিক্ষার জন্যে ১৫৫৮ কোটি ।
স্বাস্থ্যঃ
কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য ড্রাগ অথরিটির মাধ্যমে সাপ্লাইয়ের জন্যে ৪৫০ কোটি । পেনসনপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারিদের জন্যে ২৫০ কোটি । মহল্লা ক্লিনিকের জন্যে ২২০ কোটি ।
যাতায়াতঃ ডিটিসিকে ঘাটতি পূর্ণ করতে ১৮৭৬ কোটি , সড়ক যোজনায় ৮০০ কোটি ; একইভাবে বাসপাস (মহিলা) ১০৮ কোটি , বাসের সংখ্যা বাড়াতে ৭০০ কোটি ইত্যাদি।