এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে - গুজরাট

    স্বাতী
    অন্যান্য | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | ৩০২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • swati | 113.197.***.*** | ২৮ মার্চ ২০১৭ ০৯:৫৯727993
  • #গুজরাট ( ডিসেম্বর ২০১৬ - ৫ম দিন)
    The Salt Economy.

    যদি ২০০ টাকা প্রতি টন নুনের দাম হয় তাহলে ৬০০ টনের দাম কত? একদম সরল ঐকিক নিয়ম. কাকেশ্বর কুচকুচে অবধি চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে কষে ফেলবে...এত সহজ এই অঙ্ক। কিন্তু এর মধ্যে এবার যোগ করা যাক চার বা পাঁচ জনের একটি পরিবারের ছ মাসের তিল তিল পরিশ্রম। অঙ্কটা একটু জটিল হতে শুরু করল।

    পরিশ্রমটাও যে সে নয়। একটু দেখে নেই বরং। বর্ষাকালে রণের এলাকা জলে ডুবে থাকে। বর্ষা চলে গেলে ধীরে ধীরে জল শুকায়। অক্টোবর মাসে সরকারের থেকে জমি লীজ নিয়ে চারপাশে আল দেওয়ার কাজ শুরু হয়। সব জায়গায় জল তখনো পুরো শুকায় নি। তাই অনেক জায়গাতেই পায়ে হেঁটে ছাড়া পৌছানোর উপায় নেই। যেসব জমি গ্রামের কাছাকাছি সেখানে তবুও সুবিধা। আগারিয়া ( সল্ট ওয়ার্কার) দের গ্রামের থেকে অনেক দূরে যেসব জমি, সেখানে সপরিবারে জমির পাশে গিয়ে বসবাস করা ছাড়া উপায় নেই। প্রথমে তৈরি হবে সল্টপ্যান। পর পর অনেকগুলো চৌকো খোপ, আল বাঁধা এমন কায়দায় যাতে এক খোপ থেকে প্রয়োজনে অন্যতে জল যেতে পারে. LRK তে মাটির নীচের জল নোনতা। জলে নুনের পরিমাণ জায়গাভেদে ১০ থেকে ২০ (এটার ইউনিট জানতে চাইলে বলতে পারব না) যেখানে ১০ থেকে ১৫র উপর সেখান থেকে তৈরী হয় গুঁড়ো নুন। মিডলম্যানের হাত ঘুরে সেটি এসে পৌঁছায় টাটা বিড়লাদের হাতে। তারপর আয়োডিন ইত্যাদি যুক্ত হয়ে সুন্দর মোড়কে ভর্তি হয়ে এসে পৌঁছায় আমাদের খাওয়ার টেবিলে। আর ১৫ র উপড়ে যেখানে জলের স্যালাইন কনটেন্ট, সেখানে তৈরী হয় কৃস্ট্যাল নুন। ইন্ড্রাস্টিয়াল প্রয়োগ হয় এর। সল্টপ্যান তৈরী হলে কুয়ো খোঁড়ার পালা। স্তরে স্তরে মাটি সরিয়ে প্রায় ৩৫ ফুট গভীরে গেলে জল আসে। তবে সব জায়গায় পাওয়া যায় এমন না। জল যদি না জোটে, তবে আবার কুয়ো খুঁড়তে হবে। আমাদের কুয়োর মত এখানে মাটির পাড় বসাতে হয় না অবশ্য. শুধু মাটি কাটলেই হল.

    এরপর জল তোলা শুরু হবে। আগে তো ডিজেল পাম্পে জল তোলা হত। ছ মাসে নাকি প্রায় ৬০ -৭০ হাজার টাকার ডিজেল খরচ হয় একটি মাঝারি সল্টপ্যানে। আজকাল অবশ্য SEWA প্রভৃতি NGO র দৌলতে সোলার প্যানেল বসান হয়েছে। তার বিদ্যুতে পাম্প চলে। ডিজেলের খরচটা অন্তত বাঁচে । প্রথম সল্টপ্যানে জল খানিক শুকোনোর পর সেই জল যাবে দ্বিতীয় প্যানে। সেখান থেকে তৃতীয়ে আর প্রতি ধাপে জলের নুনের মাত্রা বাড়বে। এমনি করে যখন সেটা ২৪ এ পৌছাবে তখন তার থেকে নুন তৈরী হবে। জল শুকোতে সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা হয় একটি রেকের মত যন্ত্র। দিনের মধ্যে বহুবার এই জল ওলটপালট করতে হবে। তবেই ঠিক মত জল শুকাবে। এই পর্ব চলবে কম বেশি মার্চ বা এপ্রিল অবধি। তবে তৈরী হবে নুন।

    যারা সপরিবারে সল্টপ্যানের পাশে বাস করে তাদের সম্বল একটি সাড়ে চার বা পাঁচফুট লম্বা তাঁবু। ছোট্ট তাঁবু। কোনক্রমে র্পাঁচজন ধরে এই অবধি. লাগোয়া একটি চার ফুট বাই চার ফুটের রান্না তাঁবু। এরমধ্যে যাপিত হবে মরুভূমির কনকনে শীতের রাত , সাবজিরো তাপ মাত্রা। কখনো কখনো বা গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দুপুর - ৪৫ ডিগ্রি অবধি আকছার ওঠে তাপমাত্রা তখন। নুন তৈরী শেষ হলে এজেন্টের হাতে তা তুলে দিয়ে তবে ঘরে ফেরা।

    দিনের পর দিন জনমানবহীন প্রান্তরে কাটিয়ে দুটো মানুষ দেখতে পেলেই কি খুশি সবাই। একটি পরিবারের সঙ্গে আলাপ হল। স্বামী স্ত্রী , একটি ষোল সতের বছরের মেয়ে আর একটি কোলের শিশু। জানা গেল বড় মেয়েটি, নাম ঊষা, দশ ক্লাস অবধি পড়েছে. ওর অন্য বোনটি গ্রামে রয়েছে। পড়ছে স্কুলে। ঊষার কাছে জানতে চাইলাম, পড়া ছাড়লে কেন?তুরন্ত উত্তর এল, বাবাকে সাহায্য করব বলে। কি অনাবিল হাসি মা মেয়ের। চা খেয়ে যাওয়ার জন্য রীতিমত ঝুলোঝুলি। অথচ ওদের নিজেদের রেশন আসে বিশ দিনে বা মাসে একবার দশ কিমি দূরের গ্রাম থেকে। ওদের সংসারের খুঁটিনাটি দেখে মুখ বুজে ফিরে এলাম। আমাদের নাগরিক চাকচিক্য, চাওয়া পাওয়া, তৃপ্তি অতৃ্প্তির ঠিকমত মূল্যায়ণ করার জন্য এই রকম এক একবার সত্যিকারের জীবনের মুখোমুখি হওয়া খুব দরকার.

    ছমাসের পরিশ্রমে নীট রেভেনিউ ১ লাখ ২০ হাজার. ডিজেল খরচ ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক খরচ বাদ দিলে হাতে থাকবে হাজার চল্লিশেক বা পঞ্চাশেক। যদি জমি জমা থাকে তাহলে ঘরে ফিরে আবার ক্ষেতি জমিতে চাষ। পরিশ্রম না করে বসে থাকার জো আছে নাকি!
    গুজরাট বললেই মনের চোখে ভেসে ওঠে ডাণ্ডি মার্চের ছবি। সেই এক জননায়কের সমুদ্রতটে নুন-মুষ্টির ছবি। এতো দিনে জানলাম সেই নুনের স্বাদ কতটা লবণাক্ত। এরপর থেকে আর ভাতের পাতে নুন নষ্ট করব না.

    টুটিফুটি কচ্ছের জমি




    পাখি দেখা আজো ছিল বটে। সকাল থেকে উঠে অজয়ভাই এর সাথে জিপে করে টহল দিচ্ছি এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম। কখনো ক্ষেতের ধারে, কখনো বিলের জলে আবার কখনো ধু ধু প্রান্তরে। অজস্র অজস্র পাখির ছবি মনের খাতায় তুলে নিচ্ছি শুধু। তার মধ্যে কতগুলো বুনো শুয়র এসে সামনে দিয়ে তুড়ুক তুড়ুক করে লাফিয়ে গেল। এরই মধ্যে অজয় চেনালেন সুয়েডা গাছ। গাধার খাবার নাকি সেগুলো। আর দেখালেন এক রকম ছোট্ট ছোট্ট ঘাসের মত জিনিষ। নাম ভুলে গেছি তার। stork মাটি খুঁড়ে বার করে সেগুলি খায়। আর দেখলাম গাধার পাল। জিপের সামনে দিয়ে এক বিশাল দল চলে গেল। আমরা চুপটি করে বসে শুধু চোখ ভরে দেখলাম।



    এই বুনো গাধার দল এখন ভারতে শুধু দুটো জায়গাতেই পাওয়া যায়। তারমধ্যে কচ্ছ এলাকায় মেলে খর (Khur) আর লাদাখে মেলে কিয়াং (kiang)। এদের বলে Asiatic Wild Ass. এদের পূর্ব পুরুষেরা ছিলেন সারা ইউরেশিয়া জুড়ে চল্লিশ হাজার বছরেরও আগে। এমনকি মার্কো পোলোর আমলেও এরা সব গোটা মধ্য এশিয়া জুড়ে নাকি পালে পালে ঘুরে বেড়াত। এখন সে সব ইতিহাস মাত্র। জীববিদ্যায় আমার জ্ঞান খুব সীমিত। তাই এই সব তথ্যের সত্যি মিথ্যা জানি না। শুধু বুঝি ভগবানের দুনিয়াতে সবার সমান অধিকার। তাতে মানুষ যদি নিজেকে একমাত্র অধিকারি ভেবে সব সম্পদ একার ভোগে লাগাতে চায়, তাহলে সেটা কারোর জন্যেই ভালো না। কবে যে আমরা এ বাবদে যথেষ্ট সচেতন হব!

  • San | 113.245.***.*** | ২৮ মার্চ ২০১৭ ১১:১৫727994
  • একদম অন্যরকম ট্রাভেলোগ। আগ্রহ করে পড়ছি ।
  • swati | 113.197.***.*** | ২৮ মার্চ ২০১৭ ১৯:৫৩727995
  • অনেক ধন্যবাদ. :D
  • | ০১ এপ্রিল ২০১৭ ০৮:৪৭727996
  • এই লেখাটা বড় ভাল। মানুষ ছুঁয়ে ছুঁয়ে না গেলে কোনও জায়গা দেখার বর্ননাই আমায় সেভাবে টানে না। স্বাতী জনপদের সাথে ছুঁয়ে যাচ্ছেন তার মানুষগুলিকে, তাদের লোকশিল্প ---- বড় সুন্দর।
    লিখুন স্বাতী।
  • swati | 127.194.***.*** | ০১ এপ্রিল ২০১৭ ২২:৩৩727997
  • অনেক অনেক ধন্যবাদ দ কে।
  • সিকি | ০১ এপ্রিল ২০১৭ ২৩:১৪727998
  • অত্যন্ত সুন্দর হচ্ছে। মন দিয়ে পড়ছি।
  • swati | 127.194.***.*** | ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩২727999
  • #গুজরাট ( ডিসেম্বর ২০১৬ - ৫ম দিন)

    পর্ব ১।।

    রাত গভীর। চারিদিক শুনসান। দুর্গের প্রাকারে এতক্ষণ প্রহরীরা টহল দিচ্ছিল। এবার তারাও যে যার মত বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। চিন্তার কিছু নেই। সোলাঙ্কি রাজবংশ বয়সে নবীন হলে কি হয়, জবরদস্ত রাজা হিসাবে তাদের নামডাক ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। মূলারাজার শক্ত শাসনে দিকে দিকে শান্তি ফিরে এসেছে। পাটানের দূর্গ তাদের রাজধানী - তবে রাজত্বের সীমারেখা ছড়ান আরো অনেক দূরের দূরের জায়গা জুড়ে। রাজ্যের সীমা বাড়ানর পর বর্তমান রাজা ভীম দেব এবার মন দিয়েছেন প্রজা মনোরঞ্জনে। ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের জন্য তৈরী করতে শুরু করেছেন সূর্যদেবতার মন্দির। মোধেরাতে। দেশবিদেশ থেকে স্থপতি, ভাস্কর এনে বালিপাথরে বুনছেন স্বপ্ন। স্নানকুন্ড দিয়ে প্রবেশ করে সভা মন্ডপ আর তারপরে মূল মন্দির -সব অপূর্ব মুর্তি দিয়ে সাজান। তিল তিল করে গড়ে উঠছে সে স্বপ্নদেউল।

    কিন্তু রাজার মনে শান্তি নেই। কিছু দিন ধরে মন্দিরের কাজে তিনি রাজপুরী থেকে মোধেরাতে গিয়ে ছিলেন। সেখানেই কানা ঘুষোয় শুনছেন যে রাজঅবরোধে এক কেলেঙ্কারী ঘটছে। তারই তদন্ত করতে তার আচমকা রাজপুরীতে অলক্ষিতে ফিরে আসা। যদি সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে দোষীকে দিতে হবে চরমদন্ড। কিন্তু সে দন্ড কি রাজার নিজের মাথায়ই নেমে আসবে না? রানী উদয়মতি যে তার প্রাণ অপেক্ষাও প্রিয়।

    রানী উদয়মতি। সাত সাগরছেঁচা ধন। ভীমদেব প্রতিনিয়ত সূর্যদেবের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান এই অমূল্যরতনকে তার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। পাটনের রেশমী শাড়ির নাম দিকে দিকে। এক অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় রেশমী সুতোর উপর গিঁট বেঁধে বেঁধে তার উপর ভেষজ রং চড়িয়ে তৈরী হয় সুতো। কোচিনীল ( cochineal ) পোকার থেকে লাল, বেদানার খোসা থেকে হলুদ, নীলগাছ থেকে নীল রং ...আরো কত তার রংরেজি সুলুক সন্ধান যা শুধু হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারই জানে। শুধু তো রং তৈরীই নয়, টানা আর পোরেনের সুতো রং এ ছোবান হলে তবে কাপড় বোনার শুরু। এক একটি কাপড় তৈরী হতে লাগে ছয় সাত মাস। এ কাপড়ের কদর সারা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া জুড়ে। তারই টানে বঙালমুলুকের সওদাগররা ভিড় জমায় পাটানে। এখান থেকে সংগ্রহ করে তারা সে বস্ত্র নিয়ে পাড়ি জমাবে বালি, জাভা, সুমাত্রাতে। বাণিজ্যের সুত্রেই বঙাল রাজা মহীপালের সঙ্গে পরিচয়। পরিচয় গাঢ়তর হতে বিবাহপ্রস্তাব আসে। বিবাহযোগ্য কন্যার উপযুক্ত পাত্র। বণিকদেরও স্বার্থ ছিল বৈকি। দুয়ে মিলে সম্বন্ধ পাকা হতে দেরী হয় না। তারপর একদিন সপ্তডিঙা এসে ভেড়ে গুজরাটের উপকূলে। দীর্ঘ প্রায়-মরু পথ পাড়ি দিয়ে রাজকন্যা পা ফেলেন পাটানের দরজায়। রূপসী কন্যার থিরবিজুরী সৌন্দর্যে রাজা বিবাহবাসরেই মন হারান। ভিন দেশী বিষ্ণুভক্ত কন্যার ভিন্ন রীতির আচার ব্যবহার রাজার মনে নেশা ধরায়। রাজা উদয়মতির প্রেমে পাগল হন।

    কিন্তু এত প্রেম সবার প্রাণে সয় না। অনেকের চোখ টাটায়। তারাই রাজার কানে তোলে যে রাজার অনুপস্থিতিতে প্রতি রাতে রানী শুধু তার এক সখীকে সঙ্গে করে দুর্গের বাইরে যান। নিশ্চয় কোন সৎ কাজ নয়। তাহলে এত লুকোচুরির প্রয়োজন হত না। রাজা যদি এর বিহিত না করেন তবে তিনি কিসের রাজা। সেই বিহিত করতেই আজ রাজা এসেছেন। অপেক্ষা করে আছেন রাণী কি করতে বাইরে যান তা নিজের চোখে দেখার জন্য।

    নিষুতি রাত। প্রাকারের প্রহরী কক্ষের প্রদীপের মৃদুশিখা দূরের অন্ধকারকে গাঢ়তর করেছে। এমন সময়ে স্তম্ভের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রাজার কানে এল মৃদু শাড়ীর খসখস। রাজা সজাগ হলেন। দরজার প্রহরী সসম্ভ্রমে দরজা খুলে দিল। দুটি ছায়া মূর্তি দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। রাজা পিছু নিলেন। প্রহরী রাজাকে দেখে প্রথমে চেঁচিয়ে উঠতে যাচ্ছিল। কিন্তু তখনই চিনতে পেরে আভূমি নত হয়ে প্রণাম করল। রাজা দূর্গের বাইরে এলেন। খোলা আকাশের নীচে তারার আলোয় দেখলেন, ছায়া দুটি এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে তো বিশেষ একটা বসতি নেই। আছে শুধু সরস্বতী নদী। রাজার বিস্ময় ক্রমশঃই বাড়ছে।

    অবশেষে রাণী এলেন নদীর ধারে। পারে বসে আঁজলা আঁজলা জল তুলে দিলেন মুখে, মাথায়। তারপর ধীর পায়ে নেমে গেলেন বর্ষাস্নাত নদীতে। মরালীর মত এপার ওপার করতে থাকলেন। রাজা মুগ্ধের মত নিজ স্ত্রীর নিভৃত জলকেলির সাক্ষী হয়ে রইলেন। মূহুর্তরা যেন স্তব্ধ হয়ে রইল। বহু বহু সময়ের পর রানী উঠে এলেন জল থেকে। সিক্তবসনে পাড়ে দাঁড়িয়ে সখীর দিকে হাত বাড়ালেন শুষ্ক বস্ত্রের আশায়। তখনই যেন রাণীর রূপ নিরীক্ষণের জন্য আকাশের চন্দ্র বেরিয়ে এলেন মেঘের আড়াল থেকে। হঠাৎ ঝলমলিয়ে উঠল চরাচর। কার বিভায় তা অবশ্য বলা মুশকিল। আর সেই সময় রাজা বেরিয়ে এলেন বাবুল গাছের আড়াল থেকে। ডাক দিলেন, রাণী! সমস্ত উদ্বেগ, যন্ত্রণা, অপেক্ষা সব একসঙ্গে ঝরে পরল সেই একটি ডাকে। প্রোষিতভর্তৃকা চমকিত হলেন প্রথমে। তারপর রাজাকে দেখে দ্রুত এসে ঝাঁপিয়ে পরলেন রাজার বর্মবেষ্টিত উদার বুকে। সিক্ত বসনে, চোখের জলে রাজার বর্ম গেল ধুয়ে। সেই আত্মসমর্পণের ভঙ্গীতে রাজার সব বোঝা হয়ে গেল। অনেক অনেক সময় পরে রাজা একটি একটি করে সব কথা শুনলেন। নদী ভরা দেশের মেয়ে মরুপ্রায় দেশে জলের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছিলেন। কাউকে বোঝান যায় না সে কষ্ট। অবশেষে সন্ধান পান এই নদীর। দিনের বেলায় মহারানী নদীতে স্নান করছেন এ অভাবনীয়। তাই নিশা অভিযান। ভালবাসা মানুষকে সব বোঝায়। তাই মরুরাজও বুঝলেন গঙ্গার দেশের মেয়ের কষ্ট।

    পরের প্রভাত। রাজার দরবার। সভার কাজকর্ম শেষ হল প্রায়। সভা ভঙ্গের আগে রাজা এক নতুন ঘোষণা করলেন। দূর্গের প্রাচীরের বাইরে নদীর পাশে তৈরী হবে এক ভাব ( স্টেপ ওয়েল)। ময়দানবের মন্ত্রে প্রায় রাতারাতি তৈরী হল এক পাথরে গাঁথা মহাকাব্য। বিষ্ণু উপাসক রাণীর পছন্দ অনুসারে চারিদিকে বিষ্ণুর মূর্তি খচিত অপূর্ব এক জাদুকুয়ো।

    রানী কি ভাব। পাটানের রানী উদয়মতির তৈরী। ভালবাসার ভাব।

    (শুধু রাজা রানীর নামটুকু ছাড়া বাকী সবটাই কাল্পনিক. তবে এমনটা হলে মন্দ হত না ! )

    পর্ব ২।।
    আজকের যাত্রা জোগদ থেকে মেহসানা হয়ে মোধেরা। মেহসানার কাছে বহুচরী মন্দিরে প্রথম থামা। এ মন্দির হল গুজরাটের তিন শক্তিপীঠের মধ্যে একটি। অনেকটা জায়গার উপর ছোটখাট মন্দির। গুজরাটের পরিচ্ছন্নতা এই কদিনে দেখে দেখে চোখে সয়ে গেছে। তাই আজ আর নতুন করে অবাক হলাম না। শুনলাম এই দেবী নাকি মুরগীর উপর আসীন। তাই অনেকক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম দেবী মূর্তি! আমার অবশ্য মুরগীর চাইতে বাহনটিকে ময়ুর বলেই মনে হচ্ছিল। তবু সবাই জোর দিয়েই বললেন ওটি নাকি মুরগীই। গত কয়েকদিনের বাধ্যতামূলক নিরামিষ ভোজনের পরে মুরগীর নামেই সবার যে পরিমাণ চোখ চকচক করে উঠল, তাতে আর ওই মন্দিরে বেশীক্ষণ থাকা সমীচীন বোধ হল না। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরলাম। কোন লোকে বলে এই দেবী নাকি হিন্দু-পূর্ব সময়ের। আবার কেউ কেউ বলেন ইনি যশোদা কন্যা মায়া। তবে দেবীর অরিজিন নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। বরং অন্য একটা তথ্য মনে ধরল। শুনলাম এই মন্দিরে নাকি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সম্মেলন হয়। শুনে ভারীা অবাক লাগল। আজকে একুশ শতকে আমরা আইন আদালতের আশ্রয় নিয়ে যাদের এক কথায় নেই করে দিচ্ছি, আমাদেরই বহুকাল আগের পূর্বপুরুষেরা কিন্তু তাদের এক তির্যক উপায়ে মান্যতা দিয়েছিলেন। আগেই জানতাম দক্ষিণ ভারতের কেরালাতে, তামিলনাড়ুতে এই ধরণের সম্মেলনের কথা। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে এমন কোন ধারা আছে বলে শুনি নি অবশ্য। কেউ জানালে খুশি হব।

    পরের গন্তব্য মোধেরার সূর্য মন্দির। এই মন্দিরের সৌন্দর্য আর আমার বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রশস্ত কুণ্ড পেরিয়ে সভামণ্ডপ, তারপরে মূল মন্দির। ভিতরে বাইরে অসম্ভব সুন্দর অলঙ্করণ। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। চালুক্য রীতিতে তৈরি এই মন্দির এমন অঙ্ক কষে বানানো যে equinox এর দিনে সূর্যের প্রথম রশ্মি নাকি সভামণ্ডপের ভিতর দিয়ে এসে গর্ভগৃহের সূর্য মূর্তি স্পর্শ করে। উত্তরায়ণের দিন ঠিক দুপুরে সূর্য থাকে মাথার উপর। তাই ভাবি সেই ১০২৬-২৭ সালেও আমাদের দেশে কি পরিমাণ জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শিতা ছিল।

    সেখান থেকে এলাম পাটান। রাণি কি ভাব দেখতে। রাজা সূর্য মন্দির তৈরি করাচ্ছেন আর রানীর তৈরি ভাবের চারপাশ ঘিরে রয়েছে বিষ্ণুমূর্তি। মোধেরার সূর্য মন্দির আলাউদ্দিন খাঁর হাতে পরে নষ্ট হয়েছে। কিন্তু কিভাবে যেন পাটানের ভাব ঢাকা পড়ে গিয়েছিল মাটির তলায়। মাটির তলায় থাকার দরুণ এটি পুরোপুরি অক্ষত-ই আছে।

    পাটানের আরেক গন্তব্য পাটোলা হাউজ। পুরো একতলাটা জুড়ে বিশাল প্রদর্শনী - কিভাবে বোনা হয় পাটোলা শাড়ী। আর ভারী আকর্ষণীয় বিষয়টি হল ছবিতে কথায় সাজান সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কেমন ইক্কতের ব্যবহার হয়। খুব ভাল লাগলো। ফিলিপিন্স, নরওয়ে, ইন্দোনেশিয়া কোথায় নেই এই শিল্প! এই সব দেখলেই বোঝা যায় যে আমরা বাইরে যতই আলাদা হয়ই না কেন, আমাদের ভাষা, আচার ব্যবহার সব কত ভিন্ন ধরণের , তবু আসলে হৃদয়ের মাঝখানটিতে আমরা সবাই কেমন এক। শুনলাম ডবল ইক্কত পাটোলা শাড়ী কিনতে গেলে আপনাকে খাতায় নাম লিখিয়ে বসে থাকতে হবে। বছর তিনেকের আগে পাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। শাড়ী কেনার বাসনার ওখানেই ইতি। কিন্তু আসল চমক তখনো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। কি যেন মনে করে আমাদের ইস্পেসাল খাতির করে একটা স্পেশাল চেম্বারে নিয়ে গেল। সেখানে বিভিন্ন পেপার কাটিং সাজানো। তার মধ্যে একটি নন্দলাল বসুর লেখা শংসাপত্র। উনি ও এই শিল্প দেখে মুগ্ধ হয়েছে, আর দেশের অর্থবান সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ করেছেন এই শিল্পের প্রতি মনোযোগী হতে যাতে শিল্পটি বেঁচে থাকে। ভাবতেই ভালো লাগল আমি আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, অনেক অনেক বছর আগে নন্দলাল বসুও সেখানে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।

    রাতের আমেদাবাদে এসে ঢোকার আগে শেষ স্টপ গান্ধিনগরের অক্ষরধাম মন্দির। বন্ধুরা বলেছিলেন, গির তো যাবিই না, অন্তত অক্ষরধামের লেজার শো দেখিস। তাই প্রচুর ছোটাছুটি করে শেষ মুহূর্তে এসে পৌঁছালাম লেজার শো দেখতে। কিন্তু বাপরে বাপ! কি ভয়ানক ভিড়! আমাদের দুরগাপুজোর ভিড়ের সমান। তার মধ্যে ছেলের পা থেকে চটি খুলে যাচ্ছে, চটি কুড়োতে গিয়ে প্রায় stampede হওয়ার জোগাড়। যাই হোক অনেক মারামারি করে, ছেলে-মেয়ে-জামা জুতো-ব্যাগ সব সামলে সুমলে সেই বিপুল জন সমুদ্র ঠেলে ভিতরে গিয়ে ঢুকলাম। কিন্তু শো টি আমাকে সম্পূর্ণ হতাশ করল। শো টি ছিল নচিকেতাকে নিয়ে। লেসারের ব্যবহার খুবই ভালো। কিন্তু আমার তার্কিক বাঙ্গালীর প্রাণে ওই "গুরু হি ধ্রুবসত্যং" এর বাণী শুনে গোড়ায় গলদ মনে হল। এরপর পুরো নাট্যদৃশ্যটি জমল না। বড্ড যাত্রাদলের পালা মনে হল। হতাশা নিয়ে আমেদাবাদে এসে ঢুকলাম।



    ( এই পর্বের আরও কিছু ছবি কয়েকদিনের মধ্যে দিয়ে দেব। )
  • swati | 127.194.***.*** | ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ২২:২৫728000
  • #গুজরাট ( ডিসেম্বর ২০১৬ - ষষ্ঠ দিন)

    গতকাল রাতে এসে পৌঁছেছি আহমেদাবাদ। লোকের মুখে যার পরিচয় 'আমদাবাদ'। শুরুতেই বিভ্রাট। একটি হোটেলে আমাদের বুকিং করা ছিল, গান্ধী আশ্রমের কাছেই। অন্তরজালের মাধ্যমে করা। রাত দশটায় পৌঁছে ভাবছি কতক্ষণে বিছানায় গা এলাব। তখন সেই হোটেল কর্তৃপক্ষ দৈববাণী করলেন তারা নাকি বুকিং পান নি। ওঁদের নাকি সম্প্রতি কর্ণধার বদল হয়েছে, সে বাবদে কিছু সমস্যা হচ্ছে। অন্য একটি হোটেলে এক রাতের ব্যবস্থা করে দিলেন। পরের দিন থেকে আবার এই হোটেলে চলে আসতে হবে। যে হোটেলে এক রাতের ব্যবস্থা, সেখানেও আবার নাকি একটি ঘর ভোর ছটার সময় ছেড়ে দিতে হবে। এই বারে আমি ফুট ডাউন করলাম। থাকবই না এই হোটেলে। আবার আমাদের মধুসূদনদাদা, বিজয়সিংজী, আমাদের পরিত্রাণ করলেন। নিয়ে গেলেন একটি সুন্দর হোটেলে। হোটেল রুদ্র রিজেঞ্চি। বেড়াতে গিয়ে রাতে থাকার জায়গা জুটবেই। আর কিছু না হোক, আমদাবাদে বন্ধুর কমতি নেই। যে কারোর বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেই হল। তাই বিশেষ চিন্তা ছিল না। কিন্তু ব্যবসা-প্রাণ গুজরাটেও এমন বাণিজ্য-সমস্যা হয় এটাই বড় স্বস্তি দিল। আমার কেমন ধারণা ছিল যে বাণিজ্য বাবদে গুজরাতিরা একদম পারফেকট , প্রায় ভগবান-তুল্য। সে ধারনাটা একটু টোল খেল।

    সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই খাই খাই। কাছেই অসওয়ালের ফারসান হাউস। সকাল সাতটাতেই তারা দোকানের ঝাঁপ খুলে তৈরি। সেখানে ঢুকে একের পর এক অর্ডার শুরু হল। মোটামুটি ঘণ্টা খানেক পরে যখন বেরোন হল, ষষ্টিচরণের খাদ্যতালিকার সঙ্গে প্রায় সমান পরিমাণের খাবার আমাদের পেটে ঢুকে গেছে। পাতরা, ধোকলা, ফাফড়া, মেথি পাকোড়া আর সব শেষে অমৃতসমান জিলিপি। সারা দিনের মোকাবিলা করার আমরা তৈরি।

    এদিনের গন্তব্য বরোদা। আমেদাবাদ থেকে ঘণ্টা আড়াই-এর পথ। অসম্ভব সুন্দর পথ। যাওয়ার কষ্ট গায়েই লাগে না। পথ গিয়েছে আনন্দের উপর দিয়ে। শুনেছিলাম আনন্দে একটি কুরিয়েনকে নিয়ে সংগ্রহশালা আছে। সেটি দেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু যাদের জিজ্ঞেস করলাম তাঁরা কেউ সন্ধান দিতে পারলেন না। অগত্যা দেখার ইচ্ছেটা মনেই থেকে গেল।

    বরোদা শহরের নাম প্রথম শুনেছি ইতিহাসের বইতে। বাবু অরবিন্দ ঘোষ ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসে এই শহরে বসত করেছিলেন। কিন্তু সে শুধু নামই শোনা। অরবিন্দ এই শহরের জন্য কি করেছিলেন বা আজকের বরোদা এডমিনিস্ট্রেটর মিঃ ঘোষকে মনে রেখেছে কিনা তা জানি না। তবে বরোদাকে আমি তারিয়ে তারিয়ে চিনেছি আরেক বাঙ্গালির হাত ধরে। সদ্য কৈশোরে প্রাক-টেলিভিসন জমানায় তাঁরই হাত ধরে ইউরোপ চিনেছি, কায়রো চিনেছি আর চিনেছি ঘরের পাশের কাবুল। তিনি সৈয়দ মুজতবা আলি। বরোদা আসার পরিকল্পনা করাও শুধু সেই সিতারাসেহেবের চোখে দেখা বরোদাকে আবার করে নিজের চোখে দেখার জন্যে। তবে শহরে ঢোকার পথেই উড়ালপুলের ভুলভুলাইয়া দেখে বুঝলাম এ শহর খোলনলচে বদলে আধুনিকা হয়ে উঠেছে। গানের বরোদা, ছবির বরোদা যদি থাকেও, এই তিন ঘণ্টার ঝটিকাসফরে আমি আর তাকে খুঁজে পাব না। এই মন খারাপ নিয়ে ঢুকলাম লক্ষীবিলাস প্যালেস দেখতে।

    ১৮৯০ সালে তৃতীয় সয়াজিরাও গায়কোয়াড়ের তৈরি এই প্যালেস আরকিটেকচার–গত ভাবে এক অপূর্ব সৃষ্টি। দেখতে ভারী সুন্দর। সাইজে নাকি বাকিংহাম প্যালেসের চারগুণ এই প্যালেস। তবে সব চাইতে সুবিধা যেটা, প্যালেসের ভিতরে যে ফতে সিং মিউজিয়াম , সেখানে অডিও-ট্যুর-গাইড পাওয়া যায়। তাই নিজের সুবিধামত ঘুরে ফিরে দেখতে কোন বাধা নেই। এদের আর্টিলারি সংগ্রহ বেশ সুন্দর। কিন্তু আসল বিস্ময় লুকিয়ে ছিল এখানকার আর্ট গ্যালারীতে। একটি বিশাল ঘরের দেওয়াল জুড়ে লাইফসাইজ স্কেলে আঁকা রবি বর্মার আসল ছবির সম্ভার। সীতার পাতালপ্রবেশ, কংসের দৈববানী শ্রবণ, বীণাবাদিনী সরস্বতী আরও কত ছবি – প্রাণটা ভরে গেল। ১৮৮১ সালে রবি বর্মা মাধবরাও এর আমন্ত্রণে বরোদা আসেন। রাজার ছবি আঁকার দায়িত্ব নিয়ে। রাজার ছবি আঁকার সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্যালেসের জন্যে প্রায় ২৪টি ছবি আঁকেন। সেই সংগ্রহেরই কিছু রাখা আছে এই ঘরে। একটাও ছবি তুলতে দিল না। সে না দিক গে, কোন দুঃখ নেই. চোখ ভরে দেখে তো নিলাম। মন ভরা ভালো লাগা নিয়ে প্রাসাদ ছেড়ে বেরলাম।

    আর কি করা যায় ভাবতে ভাবতে এলাম সয়াজীবাগে। বিরাট এলাকা জুড়ে সুন্দর সাজানো বাগান। বছরের শেষ দিনটিতে সেখানে লোকের ভিড়। পার্কের ভিতর একটি চিড়িয়াখানা, টয়ট্রেন রয়েছে। বাচ্চাদের স্বর্গরাজ্য। খুব বেশি সময়ও নেই হাতে। পার্কের ভিতরেই বরোদা মিউজিয়াম ও পিকচার গ্যালারী। অসম্ভব, অসম্ভব ভালো সংগ্রহ। কি নেই তাতে! বিভিন্ন যুগের ভাস্কর্য, আর্টিফ্যাক্ট, আর্কিটেকচারাল এলিমেন্ট, ফসিলস, পোশাক-আশাক বিবিধ সামগ্রী থরে থরে সাজান। আর শুধু কি ভারতের? নেপাল, বর্মা, তিব্বত, জাপান বিবিধ দেশের জিনিষ সাজান। তবে মোটের উপর গোটা সংগ্রহটিই একটু অগোছাল- সরকারী উদাসীন্যের ছাপ গায়ে মেখে বসে আছে। তবু শুধু এই সংগ্রহশালার জন্যেই শুধু বরোদার নাম ভারতের must-see র তালিকায় ওঠা উচিত। নীল তিমির কঙ্কাল দেখে শেষ মুহূর্তে ঢুকলাম পিকচার গ্যালারীতে।তখনো জানি না কি বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্যে।

    একটি প্রায়-অন্ধকার বিশাল ঘর। ঢোকার মুখে মই, ন্যাতা, দড়ি স্তুপ করে রাখা। লোকজন প্রায় নেই। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে একটু ভয়ে ভয়েই ঢুকলাম। ঢুকে দেখি ছোট বড় বিবিধ সাইজের অয়েল- পেন্টিং। দুর্ধর্ষ সে সব ছবি! অরিজিন্যাল টিশিয়ান, রাফায়েল, রেমব্রান্ডট, টার্নার, কন্সটেবল ....ব্রিটিশ স্কুল, ভেনেশিয়ান স্কুল, ফ্রেঞ্চ স্কুল, ডাচ স্কুল .. কোন দিকে যে তাকাই! ভাবতেই পারি না যে এই সব অমুল্য ছবি এমন অবহেলা করে ফেলে রাখা যায়! ছবি নিয়ে কি ই বা আর বলি! ওসব ছবি আমার বলার অপেক্ষা রাখে না! তবে বড্ড কম আলো এদের পিকচার গ্যালারিতে, ভাল করে ছবি দেখা দুষ্কর। তার মধ্যে যে হাতে গোনা তিন-চার জন দর্শক, তারা নির্বিবাদে ফ্ল্যাশ দিয়ে ছবি তুলছে। বড় কষ্ট হল। কতদিন আর এই সব ছবি দেখতে পাওয়া যাবে জানি না। এই সব ছবি সয়াজীরাও এর ইউরোপ ভ্রমণকালের সংগ্রহ। ওঁর দৌলতে আমার জীবন ধন্য হয়ে গেল। বরোদা শুধু তার ছবির সংগ্রহ দিয়ে আমার মন ছিনিয়ে নিল।

    তবে একটা দুঃখ থেকে গেল। আজকের বরোদাতে একসময়ের ক্ল্যাসিকাল মিউজিকের সাধনাস্থলের বিশেষ একটা ছাপ নেই। যদিও এদের শীতকালীন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর আজো বসে, তবু এই যে দুটি মিউজিয়াম দেখলাম সেখানে তার সোনালি সঙ্গীত-ইতিহাসের কোন ছবি, কোন স্মৃতি নেই।

    আমরা যখন মিউজিয়াম দেখতে মগ্ন, পুত্রকে নিয়ে তার বাবা গিয়েছিলেন চিড়িয়াখানা দেখতে। তারা চিড়িয়াখানাটি দেখেও ভারি খুশি। কোনটি বেশি ভাল- চিড়িয়াখানা নাকি মিউজিয়াম এই নিয়ে দুদলে ঝগড়া করতে করতে আমরা ফেরার পথ ধরলাম।

    এবার আবার আহমেদাবাদে ফেরার পালা। পথে ম্যাকডোনালডের দোকানে ঢোকা হল। এই কদিনের নিরামিষ ভোজনের পরে ম্যাকের চিকেন বার্গারও অমৃতসমান লাগল! সবই রিলেটিভিটির খেলা!

    সঙ্গের ছবিটি লক্ষীবিলাস প্যালেসের.
  • swati | 127.194.***.*** | ১৬ এপ্রিল ২০১৭ ১৮:৫৭728001
  • #গুজরাট ( ডিসেম্বর ২০১৬ - সপ্তম ও অষ্টম দিন - শেষ পর্ব)

    এই লেখাটা কেউ আর পড়ছেন বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু ছোটবেলায় শিখিয়েছে কোন কাজ শুরু করলে শেষ না করে ছাড়বে না। সেটা এখনো ভুলতে পারি নি। তাই আবারও লিখতে বসলাম। তবে ভয় নেই, যদি কেউ ভুলেও পড়তে আসেন, তার ধৈর্যের উপর আর অত্যাচার করব না। শেষ দুদিন এক সাথে জুড়ে, এটা শেষ পর্ব। )



    শেষ দুদিন ধরে চরকি নাচের মত আহমেদাবাদের এদিক ওদিক চরে বেড়াচ্ছি। বছরের প্রথম দিন শুরু হল নালসরোবরের জলে ভেসে পাখি দেখে দেখে ... আগে দেখি নি এমনও কিছু চিড়িয়ার দেখা মিলল- পার্পল হেরন, পার্পল সোয়াম্পহেন, গর্গনি ডাক ইত্যাদি। তবে পাখির থেকেও বেশি মজা হল মাত্র চারফুট জলের মধ্যে মাথা তুলে থাকা ঘাসের মধ্যে দিয়ে লগি ঠেলা নৌকা নিয়ে ভেসে বেড়াতে। পাখিদের খাওয়ানর জন্য ইয়াব্বড় এক প্যাকেট গাঠিয়া কেনা হয়েছিল। পাখিরাও খাচ্ছে, আমরাও ভাগ বসাচ্ছি ওদের খাবারে- কোন তাড়া নেই , কোথাও পৌঁছানর তাগিদ নেই - এই রকমই যদি রোজকার জীবন হত! অবশ্য চার চৌরস সুখ সকলের ভাগ্যে সয় না। একটু পরেই শুরু হল বছরকার দিনের পিকনিক পার্টির ভিড়। চেঁচামেচি, মিউজিক সিস্টেমের গান, পাশাপাশি নৌকাতে দলগত অন্ত্যাক্ষরী - দলগত আমোদের সব ব্যবস্থাই হাজির। ব্যস পাখির দল নিমেষে হাওয়া। সেই সঙ্গে আমরাও।

    সকাল পাঁচটায় বেরিয়েছি হোটেল থেকে। নাল সরোবরে পৌঁছে নৌকা নিয়ে ভেসে পড়েছি - ঘণ্টা চারেক ঘোরার পরে যখন পারে এসে নামলাম, মনে হল অনেকখানি অতিরিক্ত অক্সিজেন জমা হল জীবনে। আবার চরৈবেতি। কিন্তু ভোর রাতে জলের উপরে যে মাফলার, জ্যাকেট নিতান্তই অপ্রতুল মনে হয়েছে, এখন সে সব গায়ে চিরবিরানি ধরাচ্ছে।

    প্রথমে লোথাল। সিন্ধু সভ্যতার সময় এখানে ছিল সমুদ্র বন্দর। তবে ধোলাভিরাতে বোধহয় অনেক বেশি খনন হয়েছে। অনেক বড় অঞ্চল জুড়ে সেটি। এখানে তার তুলনায় অনেক ছোট এলাকা। সেখান থেকে সারখেজ রোজা। অনেক নাম শুনেছি এই জায়গার। একে আরকিটেকচারের দিক দিয়ে acropolis of India বলে। দুপুর রোদে যখন গিয়ে পৌঁছালাম, তখনো লোকের ছড়াছড়ি। এখনো এটি একটি ধর্মীয় আচারের কেন্দ্র। আদতে শেখ আহমেদ খাটটু গঞ্জ বক্স ছিলেন এক সুফি গুরু। আজকের আহমেদাবাদের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ শাহ এঁর অনুগামী ছিলেন। গুরুর বাসস্থানের কাছে বলে নাকি আহমেদাবাদকে উনি রাজধানী হিসেবে পছন্দ করেন। 1445 সালে গুরুর মৃত্যুর পরে তখনকার নবাব এখানে তাঁর স্মৃতিতে একটি মাজার আর একটি মসজিদ বানান। অপূর্ব সুন্দর জালির কাজ আর তেমনই রাজকীয় স্থাপত্য। কিন্তু ভাল মত রসগ্রহণ করতে পারলাম না - চতুর্দিকে আদেশ জারী করা, এখানে মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ। ওখানে মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ। কি জ্বালা!



    বেড়াতে এসে শপিং করব না, এ মোটেই হয় না। সরকারী দোকানে গেলাম। কিন্তু এতোই অল্প তার সংগ্রহ যে পাঁচ মিনিতে বেরিয়ে চলে এলাম। আবার সেই ড্রাইভার সাহেব ভরসা। নিয়ে গেলেন এক শাড়ীর দোকানে। মেয়ে বাঁধনির শাড়ী কিনবে। দোকানদার প্রায় সারা দোকান উজাড় করে নামিয়ে আনলেন। না কিনলে কি হয়েছে, দেখুন না। আমরা নিজ পছন্দমত গিয়েই বলেছি হাল্কা রং এর শাড়ী দেখাতে। দোকানে বসে ছিলেন আরেক বয়স্ক দম্পতি, তারাও শাড়ী কিনছেন। ভদ্রলোকের ভারী আপত্তি, এতোটুকু মেয়ে কেন হালকা রং পড়বে। নিজেই বার করে দিচ্ছেন উজ্জ্বল রঙের শাড়ী, মেয়েকে বলছেন তোমাকে সুন্দর মানাবে এই রং -এ। আমাকে বকছেন, তুমি মেয়েকে বারণ করো। এখন-ই যদি ঝকমকে রং না পড়বে তো কবে আর পড়বে? ... সওদা শেষ করে যখন দোকান থেকে বেরলাম, তখন খেয়াল করলাম, আমি যে হিন্দি বলতে পারি না, বুঝতে পারি না তাতে তো এই পুরো এপিসোড-টাতে বিশেষ অসুবিধা হল না। বেশ তো সুন্দর বুঝে গেলাম ওঁদের কথা, বুঝিয়েও দিলাম। সেই কনফিডেন্সে ল-কলেজে গিয়ে রাস্তার ধারের ঝোপড়িতে পুরো গড়িয়াহাট স্টাইলে শপিং করে কত কিছু-মিছু কিনে ফেললাম। যদিও কেনার থেকে দেখা বেশি আকর্ষণীয় ছিল। রং এর রায়ট এরকম দেখেছি আগে রাজস্থানে।



    সবরমতী আশ্রম ...একদম ইতিহাস বই র ছেঁড়া পাতা। তবে একটা সত্যি কথা বলব? আমার না একদম ভালো লাগে নি। বড্ড সাজানো- গোছানো লাগলো। গান্ধীজীর সহজ জীবনের ছোঁয়া যেন কোথায় হারিয়ে গেছে।

    আর আজ তো এক দারুণ অভিজ্ঞতা. সক্কাল সক্কাল শুরু করলাম হাঁটা. এখানকার মিউনিসিপ্যালিটি একটা আড়াই ঘন্টার হেরিজেট ওয়াক করায়. সেটায় অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য হল। কালীপুরায় স্বামী নারায়ণ মন্দির থেকে শুরু হল হাঁটা। শেষ মানেকা চকের শেষে জামা মসজিদে। যে কোন পুরনো শহরের মতোই পুরনো আহমেদাবাদের অন্যতম শক্তি পাশাপাশি ঘেঁষাঘেঁষি করে বহু শতাব্দী ধরে বাস করা বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন জীবিকার পাড়াগুলি। প্রায় অনেকটা আজকের গেটেড কম্যুনিটির মত, পাঁচিল ঘেরা - দরজা বন্ধ করে দিলেই ব্যস বাইরের দুনিয়া আর নেই। ওঁরা বলেন পোল। সেখানে জৈন পোলের পাশে থাকে রামের মন্দির। আর শুধু কি মানুষ, মানুষের পাশাপাশি পাখির জন্য চবুতরা - সেও আছে পোলের মধ্যে। একই পাড়ার মধ্যে পাশাপাশি বাড়িতে দেশীয় মারাঠা স্থাপত্য, পারসিয়ান শিল্প আর কলোনিয়াল স্টাইলে তৈরি বাড়ি। দেখে নিই যে কদিন আছে। কার আবার কবে ইচ্ছে হবে দিই ধ্বংস করে, দিলেই হল। কে আর ঠেকাতে পারবে! আর বাড়ির সৌন্দর্য ব্যাপারটা শিখতে হয় গুজরাটিদের কাছে। রোজকার বসবাসের হাভেলিগুলিও কি অসাধারণ। কি অনবদ্য কারুকারজময়। প্রতিটির কথা আলাদা ভাবে বলতে গেলে বই হয়ে যাবে। তবে একটা কথা না বললে আহমেদ শাহ, আহমেদাবাদের যিনি প্রতিষ্ঠাতা, তার প্রতি অবিচার করা হবে. এই রকম অনবদ্য হিন্দু জৈন আর মুসলিম মোটিফের মিলন আমার খুব কমই চোখে পড়েছে. একটি দুটি মোটিফ হলেও কথা ছিল, কিন্তু পদ্মফুল, কারুকার্যময় ভিতরের ডোমওয়ালা জামা মসজিদ খেয়াল করেছি বলে মনে নেই. আহমেদ শাহর ধর্ম সহিষ্ণুতার বিপরীতে চোখে পড়ে নালসরোবরে জাল দিয়ে জলের মধ্যে ভাগ করা - হিন্দু এলাকা , মুসলমান এলাকা সব আলাদা আলাদা তখন দুঃখ হয়। কি ভাগ্যিস এই হাঁটাটাতে অংশ নিয়েছিলাম। আহমেদাবাদের অন্তঃপুরের এত অন্তরঙ্গ ছবি না হলে দেখতে পেতাম না। চেতন ভগতের থ্রী মিসটেকস পড়ার পর থেকেই পুরোনো আহমেদাবাদ দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। এতদিনে সে শখ মিটল। আহমেদাবাদের চারদিকে নাকি গোটা নয়েক দরজা আছে শহরে ঢোকার জন্যে। আগে রাতের বেলায় ঢাক- ঢোল বাজিয়ে এই দরজা বন্ধ করা হত। এখন আর দরজা বন্ধ হয় না বটে, কিন্তু সেই বাদ্য আজও বাজে। এবং আশ্চর্য এই যে গত ৬০০ বছর ধরে একটি পরিবার এই বাজনা বাজিয়ে চলেছেন। বেসরকারী উদ্যোগে house of MG থেকে একটি night walk করান হয়। টাতে যারা অংশ নেন তারা এই বাজনা শুনতে পান। আমাদের আর সে সৌভাগ্য হল না।



    হল না আরও একটি মিউজিউয়াম দেখা। গুজরাট ছিল ভারতের ম্যানচেস্টার। যবে থেকে প্রথম শাড়ী ধরেছি, এগার বছরের মেয়ে কি ভাবে কি শাড়ী পড়বে ভেবে না পেয়ে মা হাতে তুলে দিয়েছিলেন একটি ক্যালিকোর সিন্থেটিক শাড়ী। তুলোর মতন হালকা, প্যাস্টেল শেডের শাড়ী। তার পরে সেই শাড়ী ছিল আমার অনেক দিনের সাথী - ছুটির দিনে ইস্কুলে যেতে হলেই তিনি উঠতেন অঙ্গে। সেই আমার কিশোরীবেলার সঙ্গে পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা ক্যালিকো কোম্পানির মিউজিয়াম দেখার খুব সাধ ছিল। কিন্তু তাদের আগামী দেড়মাস সব ভিজিতিং স্লট ভর্তি। শুধু ক্যালিকো ডোম দেখেই মন ভরালাম। তারপর আদলাজের step well, হাথি সিং জৈন মন্দির, রানী সিপ্রির কবর, ভদ্রকালী মন্দির দেখে টেখে শেষ হল আমাদের আহমেদাবাদ ভ্রমণ।

    কোন ভ্রমণই সম্পূর্ণ হয় না স্থানীয় খানাপিনা ছাড়া. শুরুর থেকেই তাক করে আছি কিভাবে ভাল মন্দ খাওয়া যায়. কিছু কিছু গল্প আগেই বলেছি। অমৃত, অমৃততুল্য খাদ্য সব ! সব খাবারই মিষ্টি স্বাদের আর খাবারের আগে হালুয়া শেষ হবে গুড় দিয়ে , তাই আমাদের সবার ভারি মজা. তবে এর মাঝে একদিন কাথিয়াওয়াড়ি থালি খেকে গিয়ে ঝালের চোটে বেশ নাজেহাল দশা. .. শেষ দিনের লাঞ্চে লাল দরওয়াজার কাছে হাউজ অফ এম জির রেস্টুরেন্টে খেলাম পানকি, পাতরা, হান্দওয়া, দুধি নো মুঠিয়া - কাকে ছেড়ে কাকে খাই! রাত্রিবেলা মনে হল মানেকা চকের নাইট মার্কেটে স্ট্রিট ফুড খাওয়া নাও যদি হল, অন্তত ভাটটিয়ার গলিতেও না খেয়ে গেলে চিত্রগুপ্তকে কি হিসাব দেব? সেই মত বিজয় সিংজীকে লুকিয়ে রাতের বেলা অভিযান চলল। রাস্তার ধারে বিরাট বিরাট তাওয়ায় রান্না চলছে, আর শিকের থেকে যা ঝুলছে দেখলেই জিভে জল। চারপাশ দেখলে মোটেই ভক্তি হবে না, সারভিস কোয়ালিটি কথাটা কোনদিন শুনেছেন এটা মনে রাখলে চলবে না, এমন কি একটুও স্বাস্থ্য-সচেতন যারা, তারা হয়ত না খেয়েই বেরিয়ে আসবেন। তবে সেটা আপনারই লস। ভেজা ফ্রাই আর লিভার কারী দিয়ে গরম গরম তন্দুরী রুটি - এ স্বাদের ভাগ হবে না। মানেকা চক থেকে সংগ্রহ করা বাক্স বাক্স হালওয়া, আর ভুজিওলার দোকানের হরেক রকমের নোনতা খাবার তখন সুটকেসের মধ্যে অপেক্ষা করছে কখন রাত ভোর হবে আর বিজয় সিংজী তাদের তুলে দিয়ে আসবেন উড়োজাহাজে। আট দিনের চরকি নাচের শেষে এবার তাঁর একটু হাঁপ ছাড়ার সময়। বৌ এসেছে রাজস্থানের থেকে
    বাচ্চাদের নিয়ে শীতের ছুটি কাটাতে। এ কদিন তারা তো বাবাকে প্রায় দেখতেই পায় নি। আজ তাদের নিয়ে বেড়াতে যেতে হবে।



    ।। শেষ।।
  • de | 192.57.***.*** | ১৬ এপ্রিল ২০১৭ ২০:৩৬728003
  • ভারী ভালো লেখা হয়েছে স্বাতী! এই লেখাটা জমিয়ে রাখবো - গুজরাতে গেলে সব খুঁজে খুঁজে দেখতে কাজে লাগবে। আপনিও প্রচুর পড়াশুনো করে গেছিলেন! ছবিগুলো সব আসছে না - তবে আপনার ছবির মতোই লেখা। আটদিনে এতো ঘুরলেন কি করে?
  • amit | 149.218.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ০৬:৩২728004
  • স্বাতী,
    খুব ভালো লাগলো পড়ে। লেখা আর ছবি গুলো এতো ভালো, পুরো মনে হলো ভার্চুয়াল ট্যুর হয়ে গেলো আমাদের। কোনো দিন ওখানে বেড়াতে গেলে আপনার লেখাটার রেফারেন্স অনেক কাজে লাগবে। অনেক ধন্যবাদ। আরো লিখতে থাকুন অন্য কোথাও গেলে।
  • সিকি | ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ০৭:৪৩728005
  • ই কী রে ভাই - পড়ছি কিন্তু। মন দিয়ে পড়ছি।
  • | ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ১২:৩০728006
  • ইকি! শেষ হয়ে গেল!! মন দিয়ে পড়ছিলাম তো। ৫ম পর্বের পরে আরো ছবি আসবার কথা ছিল আসে নি, দেখেছি। ভাবলাম আসবে ধীরে সুস্থে।

    দারুণ লেখা। খুব চমৎকার।
  • kumu | 69.178.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ১৭:৫২728007
  • অসম্ভব ভালো লেখা,খুব যত্ন করে দেখা ও লেখা।স্বাতীর সঙ্গে গুজরাট ভ্রমণ হয়ে গেল।

    স্বাতী,কেউ মন্তব্য করচে না মানে এই নয় যে কেউ পড়চে না,সবাই পড়চে।এরা সব অত্যন্ত আলসে।
  • swati | 113.197.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ২১:৪৮728008
  • @দ ঠিক ধরেছেন - ছবি দেওয়া বাকী ছিল মোধেরা- পাটানের। আজ সেগুলো দিলাম। প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি ছবিগুলো কিন্তু আমার তোলা নয়। তুলেছেন এবং শেয়ার করতে দিয়ে বাধিত করেছেন আমার কর্তামশাই, সুদীপকল্যাণ দে।



    মন্দিরে ঢুকতেই যে সূর্য কুণ্ড তার চারধারে এমন অজস্র অলিন্দ ঃ



    পাটানের রানি কি ভাব - অবশ্য গোটা জায়গার যে ম্যাজেসটিক রূপ, ছবিতে তার এক শতাংশও আসে নি।
  • swati | 113.197.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ২২:০৪728009
  • @de, amit, দ, সিকি, কুমুদি ... ভালো লেগেছে জেনে আমারও যে কি ভাল লাগছে।

    আট দিন না, আসলে নয় দিন ছিল সর্বমোট - লেখার মধ্যে এখন দেখছি আইনস্টাইন কে নস্যাৎ করে দিয়ে পঞ্চম দিনে একসঙ্গে দু জায়গায় থাকে হয়ে গেছে। আসলে কিন্তু অমন টা ঘটে নি :D এই কদিনে ঘুরেছি মোট ২৭০০ কিমি। তবে গুজরাট সরকারকে একটা কৃতিত্ব দেব যে রাস্তা-ঘাট এত ভাল যে ঘোরার কষ্ট গায়ে লাগে না।
  • swati | 113.197.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ২২:০৫728010
  • আর ইয়ে একটা ব্যক্তিগত কথা বলি কি বলি না করছিলাম, শেষে মনে হল বলেই ফেলি, অন্য রা কেউ দোষ নেবেন না প্লীজ - কুমুদির লেখার আমি বড্ড ভক্ত, সেই ২০১৪ সালে গান্ধারীর আবেদন পড়ার পর থেকে, সেই কুমুদি আমার টই তে পা রেখেছেন, - আমার আজকের দিনটা ইস্পেসাল হয়ে গেল!
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন