এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বিষয় - রম্য - বালতি

    Goutam Dutt লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ২১৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Goutam Dutt | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২২:২১718504
  • বালতি—
    গৌতম দত্ত

    আবার মনে পড়ল সেই রমণী’দার কথা !

    যদিও গপ্পোটা রমণী’দার মুখ থেকে শোনা কিন্তু গপ্পের নায়ক রমণী’দার বড় দাদা। সময় টা ছিল ১৯৭৫ বা ১৯৭৬ এর আশেপাশে।

    হাওড়ার যৌথ সংসারের বড় দাদা ছিলেন খুবই পণ্ডিত মানুষ। সারা কলকাতার লোক যাঁরা একটু পূজো-আচ্চা বা জ্যোতিষবিদ্যা নিয়ে চর্চা করেন তারা সবাই চিনতেন এই বড় দাদাটিকে। আর হাওড়ার প্রাচীন পরিবার হওয়ার কারণে সবাই বেশ সমীহ ও করে চলতো এই রাশভারী মানুষটিকে।

    তা, সেই বড় দাদা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ির চৌহদ্দি’র দেয়াল রং করিয়েছেন। রাস্তার ওপর বেশ বড় দেয়ালটা ছিল আমাদের বিভিন্ন পার্টির মুখপত্রের মতো। তাই রঙ করানো হয়ে গেলে বড় দাদা রোজ খেয়াল রাখছেন ওই নতুন চূনকামিত দেয়ালে। কেউ এসে কিছু লিখে দিয়ে গেলেই তো বারোটা বেজে যাবে দেয়ালখানার ! অনেক খরচা আর পরিশ্রম করে করা এই দেওয়াল এখন বড়দাদার নয়নমনি।

    একদিন রাতে খেতে বসে হঠাত বড়দা’র মনে হল যে পাশেই যেন দুচার ছোঁড়ার গলা শোনা যাচ্ছে। খাওয়া রইল মাথায়। দ্রুত সদর দরজা খুলে বাইরের রাস্তায় এসে দেখেন যে তিনটি ছেলে সবে রেডি হচ্ছে কাগজের পোষ্টার এই নতুন দেয়ালে লাগাবে বলে। মইটা হেলান দিয়ে রাখা আছে দেওয়ালে।

    এই দেখেই চিল চিৎকার। ‘এই ভজাআআআ---’ । বাকি দুটো ছুটে পালালেও ভজা নামের ছেলেটি দৌড়তে পারেনি আঠার বালতি হাতে। খপাং করে ভজা’র হাতের বালতি’র হ্যান্ডেলখানা ধরে এক টান দিলেন বড়দা। আর মুখে চলছে প্রবল গালাগাল। ‘তোদের বারণ করেছি না যে আমার এই নতুন দেয়ালে কিছু লিখবি না, কিছু মারবি না’। ভজা তখন পালাতে পারলে বাঁচে। সে তখন এক বাম-পার্টির পোষ্টার বয়। কি আর করে বেচারী...। কোনক্রমে বালতির হ্যান্ডেল বড়দা’র হাতে ছেড়ে দিয়েই দে দৌড় !

    বড়দা আঠার বালতি হাতে গজ্‌গজ্‌ করতে করতে বাড়ির ভেতর ঢুকে সদর বন্ধ করলেন। আঠার বালতিখানা সামনের উঠোনটায় রেখে দিলেন। তারপর বাকি খাওয়া শেষ করে আবার একবার সদর খুলে বাইরে এসে উঁকি মেরে দেখেন যে এবারে মইটাও হাওয়া। উফফ্‌, কি শয়তান সব, বলতে বলতে আবার সদর বন্ধ করে নিজের ঘরে চলে গেলেন।

    পরের দিন সকালে বৈঠকখানা ঘরে এসে বসেছেন। হাতে খবরের কাগজ। এমন সময় বাইরে থেকে একটি ছেলের গলা শোনা গেল। ‘ও বড়দা, ও বড়দাআআ’ বলতে বলতে জগা’র প্রবেশ বড়দার বৈঠকখানায়।

    — কি ব্যাপার রে জগা ? সাত সকালে তুই ?
    —বড়দা, তুমি নাকি কাল ভজার হাত থেকে আঠার বালতি নিয়ে রেখে দিয়েছো ?
    —রেখেছি তো ! শালা আমার নতুন রং করা দেয়ালে পোষ্টার মারতে এসেছিল। পইপই করে বারণ করেছি তোদের সবাইকেই। তবু শুনিস্‌ না তোরা। কি ভাবিস তোরা ? আমার পয়সা কি সস্তা ?
    —সে ঠিক আছে বড়দা। এবার ওই আঠার বালতিটা আমায় দিয়ে দাও তুমি।
    —মানে ? তুই তো গরু-বাছুরের চ্যালা ! তুই ওদের ওই আঠার বালতি নিয়ে কি করবি ? ও ভজাকেই আসতে বলিস। উত্তম মধ্যম দিয়ে তার পরে ওকে ফেরৎ দেব কি না দেব তা ভেবে দেখব।
    —উফফ, বড়দা ! তুমিও পারো। বয়স হচ্ছে তো না কি ! এই মাথা গরম করলে চলে ?
    বলো ? দাও, তুমি আমায় ওই বালতিটা ফেরৎ দাও !
    —লালেদের বালতি তোকে ফেরৎ দেবো কেন রে ?
    —আঃ বড়দা। আঠার বালতিটা কমন গো ! ওটা সবারই, যার যখন লাগে গো।

    ৩০শে আগস্ট, ২০১৬
    কলকাতা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন