এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Trisha Maitra | 127.248.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৬ ১৪:২৮717803
  • হঠাৎ কয়েকদিন আগে অংশু, আমার পাগলা বন্ধু আমাকে ফোন করে বলল খুব জরুরী দরকার। দেখা করলাম সাউথ সিটির সি সি ডি তে। সে অবশেষে একটি নামী বাংলা দৈনিক পত্রিকার অফিসে ট্রেনি সাংবাদিক হিসেবে জয়েন করেছে। আমার মনে আছে ওদের বাড়িতে গেলেই কাকিমা আমাকে বলত ওকে বোঝাতে। অংশু বলত সে আপামর জন সাধারণের একটি মুখ হবে। কাকিমা বলত সাংবাদিকরা ঘ্যাচকলা জন সাধারণের মুখ হয়। ওরা জন সাধারণের মুখোশ পরে থাকে। মুখোশের আড়ালে থাকে খুব চেনা মুখ যাদের নাকি মাঝে মাঝেই বণিক সভার সন্মেলনে দেখা যায় আর তাদের নিজেদের মুখ কোথায় হারিয়ে যায়। কিন্তু সেগুড়ে বালি।
    খুব ভালো খবর। দুজনে একটি করে বার্গার আর কোল্ড কফি নিয়ে অনেক আলোচনা হল। বাজার অর্থনীতি, রঘু রামন রাজনের বেড়িয়ে যাওয়া, রিসেন্ট বাংলাদেশ জঙ্গি হামলা, সলমানের সুলতান, সোফিয়া হায়াতের শিব প্রসব , মোদী , মমতা, সুস্মিতার রিসেন্ট ডিভোর্স, অনিমেষের নতুন প্রেম এবং পাশের টেবিলের মেয়েটির হল্টার নেক ব্লাউজ। শেষে অংশু যেটা বলল, নতুন অফিসে ওকে একটা লেখা লিখতে হবে এই বাংলাদেশ জঙ্গি হামলা নিয়ে। কোন প্রত্যক্ষদর্শীর যদি একটা বাইট পাওয়া যায় খুব ভালো হয়। মুহূর্তে মনে পরে গেল আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের কাসিমের কথা। কাসিম বলছিল ওর কোন এক আত্মীয় নাকি বাংলাদেশ গেছিল আর এই ঘটনায় মারা যায়। আমি একটু হেজিটেট করছিলাম, এত রিসেন্ট শোক। সেখানে তাদের কাছ থেকে বাইট নিতে যাওয়াটা কি ঠিক হবে। তবু ফেরার পথে কাসিমকে ফোন করে দিন ঠিক করে ফেললাম পরের দিন বিকেলে। আর ফেসবুকে আপডেট দিয়ে দিলাম ফিলিং রিল্যাক্সড উইথ অংশুমান অ্যাট সাউথ সিটি।
    জানবাজারের গলির মধ্যে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ি গুলির মধ্যে কোনো একটি বাড়ি ওদের। রমজান চলছে। চারিদিকে সাজোসাজো রব। পাহাড় প্রমাণ সনপাপরি, নানা ফল, পাঁপড়, সবুজ কাপড়ে ঢাকা একটি স্টেজ আলোয় আলো। মাইকে গান বাজছে। একটি মোড়ে এসে ডানদিকে একটি বাড়িতে ঢুকে, সরু একফালি বারান্দা পেরিয়ে দরজার পর্দা সরিয়ে একটা ঘরে ঢুকলাম। একজন বয়স্ক মহিলা বেড়িয়ে এলেন। শাড়ি পরে মাথায় সাদা ওড়না আর মুখের মধ্যে এক অদ্ভুত আভিজাত্য যা হাজার বলিরেখা দিয়েও ঢাকা থাকছেনা। একটি বাচ্চা মেয়ে এসে সরবত দিয়ে গেল আমাদের। ওনাকে কাসিম হয়ত আগে থেকেই কিছু আভাস দিয়ে রেখেছিল আমরা কি কারনে গেছি। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম। ওনাদের পারিবারিক কাপড়ের ব্যবসা। পারিবারিক ব্যবসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ওদের যেতে হয়। ওনাদের আদি বাড়ি বর্ধমান। দেশভাগের সময় ওনারা বর্ধমান ছেড়ে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ চলে যায়। তবে এপার বাংলাতেও আসা যাওয়া আছে। অনেক আত্মীয় স্বজন এপারে থাকে। ওনার শ্বশুর মশাই তার ছোটবেলার ভিটেতে ফিরে যাবেন বলে এপারে এসেছেন বহুকাল। ওনাকে বলা হয়নি বর্ধমানের ভিটে আর নেই। প্রায় নব্বই এর কাছে পৌছনো বৃদ্ধ মানুষটির স্মৃতি থেকে কিছু সময় হারিয়ে গেছে। এখন তিনি কার্যতই শিশু। তাই তাকে অনেক ঘটনাই বলা হয়না। তাকে এই জানবাজারের বাড়ীকেই বর্ধমান বলে ভোলানো হয়। ভদ্রমহিলার স্বামী মারা গেছেন কয়েক বছর হল। ওনারা কয়েক মাস হল এপারে এসেছেন। জানবাজারের বাড়ি বিক্রি করে সব পাট চুকিয়ে ওপারে চলে যাবেন বলে। ভদ্রমহিলার ছোট ছেলে ইয়াসিরের পরীক্ষা শেষ হলেই এপারে চলে আসার কথা ছিল। ইয়াসির ই বাংলাদেশের জঙ্গি হামলায় মারা যান। ওনারা খবর শুনে ওপারে যান । শেষ কৃত্য করে এপারে এসেছেন।
    এই সব কথাবার্তার ফাঁকে মাঝে মাঝেই একটি শীর্ণকায় ঝুঁকে পরা ছায়া পাশের ঘরের পর্দার আড়ালে এসে দাঁড়াচ্ছিল। আর তখন ভদ্রমহিলা চুপ করে যাচ্ছিলেন। ছায়া সরে গেলে উনি আবার সুরু করছিলেন।
    অংশু যে কারনে যায় আমি বুঝি সেরকম রশদ সে পাচ্ছেনা। ভদ্রমহিলা কোন বর্ণনার মধ্যেই যাচ্ছিলেন না। ওনাকে বারে বারে অংশু জিজ্ঞেস করছিল, কিভাবে হল মানে জঙ্গিরা কিভাবে হামলাটা চালাল।
    উনি চুপ করে থাকছিলেন। শেষে খালি হয়ে যাওয়া সরবতের গ্লাসটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন। ঘরে আর কেউ নেই। একটা পাখির খাঁচা। তার মধ্যে একটা ম্যাকাও পাখি বসে। সেও থমথমে। নানারকম ঝাঁঝরী দেওয়া একটি ঝাড়বাতি মাথার ওপরে। হঠাত করে ক্ষিপ্র গতিতে সেই ছায়া পর্দা সরিয়ে আমাদের কাছে এল। কুঁজো হয়ে ঝুঁকে পরা। হাতে লাঠি। কঙ্কালসার দেহ। মাথায় কোন চুল নেই। মুখে কোন দাঁত নেই। সম্পূর্ণ কুচকে যাওয়া চামড়া। ঘোলাটে চোখে আমাদের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে। আমরা প্রথমে উঠে দাঁড়ালাম। তারপর কি করব বুঝতে না পেরে বসে পরলাম। মনে হল ইনিই সেই দাদু। উনি অনেক্ষন আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল। জানতে চাও কিভাবে ঘটেছে? অংশুমান রেকর্ড অন করে উৎসাহী হয়ে এগিয়ে গেল।
    রাতের বেলা আমরা সবাই দরজা বন্ধ করে বসেছিলাম। কারোর চোখে ঘুম নেই। বাইরে থেকে ক্রমাগত দরজা ধাক্কিয়ে যাচ্ছে। একটা সময়ে ওরা দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পরল। ওদের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। শুধু চোখ দুটো বেরিয়ে। আমি থরথর করে কাঁপছি। ভয়ে হাত পা অবশ। বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে ওরা আমার চোখের সামনে ওকে চুলের মুঠি ধরে হিরহির করে টেনে নিয়ে এল। প্রথমে ওরা ওর হাত কাটল, তারপর গলার নলি কেটে ফেলল। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এল। তারপর চোখের সামনে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলল। আমি এগিয়ে ছুটে এগিয়ে গিয়ে বললাম আমাকেও মেরে ফেল। আমাকে ওরা না মেরে চলে গেল। কিছুক্ষণ জানেন চারিদিকে সব চুপ। শুধু পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীর জলের আওয়াজটা কানে আসছিল।
    আমি জিজ্ঞেস করলাম, নদীর নাম কি? গুলশান?
    উনি বললেন, না তো! সবরমতি।
    বাইরে মগরিবের নামাজ সুরু হল।
    ইতিমধ্যে ভদ্রমহিলা চলে আসাতে উনি ঘাবড়ে গিয়ে চলে গেলেন। আমরা ফিরে আসি। কাসিমের কাছে শুনি ইয়াসিরের বাবা সাবির গুজরাট রায়টে মারা যায়। সাবির আর তার বাবা ব্যবসার জন্য গুজরাট গেছিল। রায়ট শুরু হওয়াতে আটকে যায় এবং তারপর।
    নিজের চোখের সামনে ছেলের খুন দেখার পর থেকে সাবিরের বাবা মানসিকভাবে ভারসাম্যহিন হয়ে পরে। অংশু লেখাটা লিখে আমাকে পরতে দিল। সাবিরের মৃত্যুর ঘটনার বর্ণনাও সে লিখল।
    আজ ঈদ। সকালে চা খেয়ে বেরিয়ে কাগজটা কিনে নিয়ে এলাম। এইত্ত অংশুমানের লেখা। ইয়াসিরের মৃত্যুর ঘটনাটার পরিপূর্ণ শেষে শুধু একটা লাইন। ইয়াসিরের বাবা ২০০২ সালে অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়। আমি অবাক।
    লেখাটার নাম ছিল সন্ত্রাস!
  • ranjan roy | 192.68.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৬ ১৪:৩৮717804
  • ঃ((((((((।
    কিছু বলার নেই।
  • pi | 24.139.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৬ ১৭:৫০717805
  • গল্প হলেও সত্যি বোধহয়, সত্যি এরকমই হয়।
  • স্টান্‌ড | 165.136.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৬ ১৭:৫৮717806
  • সে | 198.155.***.*** | ০৭ জুলাই ২০১৬ ১৮:০৫717807
  • এর নাম জার্নালিজম :-(
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন