এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ঈশ্বরের বাসভূমি

    Ishani
    অন্যান্য | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ | ১৪৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ishani | 69.92.***.*** | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৭:৪৯667042
  • ঈশ্বরের বাসভূমি
    .......................
    আমাদের সংসার এখন খানিক অন্য সুরে বাজে | আকাশ-নীল অনাবাসী | আমি সুযোগ পেলেই তিলোত্তমার আঁচল -আড়াল খুঁজি | ফলে কল্লোল এতদিনে বেশ ব্যাচেলর স্ট্যাটাস ফিরে পেয়েছে | আজ আট বছর হল আমরা চার জন একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাই না | ইচ্ছে প্রবল , কিন্তু অবস্থাগতিকে হয়ে ওঠে না | এক একজন এক এক সময়ে ছুটিতে | এবার আকাশ -নীল দুজনেই একই সময়ে আসছে | তাহলে তো যাওয়াই যায় | কোথায় ? ঈশ্বরের বাসভূমি | ওয়েনাড | কেরালা | ক'দিন ? তিন-চারটে দিন তো চাইই চাই | কিসে করে যাব ? এ এক এমন জায়গা যে এদিক ওদিক যেতে গেলে নিজেদের বাহন থাকলে সুবিধে | তাই গাড়ি নিয়েই | আমার রোড সেন্স শূন্য ছেড়ে নেগেটিভে | গাড়ি চালাতে পারি না | ( এরা বলে, ঠিকঠাক রাস্তা পেরোতেই নাকি পারি না | এটা কিন্তু একটু বাড়িয়ে বলে ...নিন্দুক স্বভাব ওদের তিনজনেরই ) | ওরা সকলেই পারে | নীল একটু টলমল করে | বাকি দুজনের স্টিয়ারিং ধরলেই আনন্দ | আমার মতে আকাশ বেটার | তবে সে তো চিরকালই আমার শাশুড়ি -মায়ের ছেলের থেকে আমার ছেলে বেটার ! আগে থেকে বুকিং চাই | আমাদের বুকিং সানরাইজ ভ্যালিতে | শনিবার ২৭ তারিখ ভোরে বেরিয়ে মঙ্গলবার ৩০ তারিখ রাতে ফেরা |
    শনিবার | ভোরবেলা | বাকি তিনজন মোটামুটি লাটসাহেবের নাতি | তারা রেডিমেড চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে হালকা ব্রেকফাস্ট করে সাজুগুজু করবে | ততক্ষণে আমি বাসন ধোব , বিছানা তুলব , পুষ্যি মাছদের খাবার দেব , গাছে জল দেব ( মাছদের হলিডে ফুড আর ক্যাকটাই ...তাই জল দিয়ে গেলে টিকে থাকবে ) , গাড়িতে নিয়ে যেতে হবে..তাই খাবার জলের বোতলে জল ভরব , জানলা বন্ধ আছে কিনা চেক করব ..ইত্যাদি | তারপর যেই রেডি হতে যাব, অমনি গালমন্দ শুনব..আমি নাকি সবচেয়ে লেটলতিফ !
    ভেবেছিলাম ৭ টায় বেরোনো যাবে | বেরোতে ৮ টা | সামনে দুই ড্রাইভার (বদলাবদলি করে চালাবে ), পেছনে আমি আর নীল | দুগ্গা দুগ্গা বলে রওনা হওয়া গেল | ও , তাও তো বলিনি ! সঙ্গে তিনটে ল্যাপটপ (আমি ছাড়া | আমি নিইনি | ও আপদ ঘরেই রেখে যাওয়া ভালো ! ) |
    রাস্তায় গাড়ির মেলা | দুনিয়ার লোক বেরিয়ে পড়েছে | আমাদের যেতে হবে মাইসোর হয়ে | তাই এত গাড়ি চোখে পড়ছে | মাইসোর , উটি , কুর্গ , ওয়েনাড ...সব ওই খানিকটা রুট কমন | মানে মাইসোর সিটি পর্যন্ত | যাওয়ার পথে একটা খাবার জায়গা আছে...কামাথ হোটেল | সত্যি ! গত ২২ বছর যতবার এই রাস্তা ধরে গেছি, এখানে ব্রেকফাস্ট ! আর সব সময়েই গাড়ির মেলা | এখানেই প্রথম cylindrical ইডলি খেয়েছিলাম | কলাপাতায় স্টীম করা | কী করে যে মোড়ক করে কে জানে ..যে batter ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকে..বেরিয়ে যায় না ! এবারে হল না | এত্ত ভীড় যে বুফে ব্রেকফাস্ট | ১৩০ টাকায় মসলা দোসা , ইডলি , বড়া , উপমা , কেসরি ভাত , চাউ চাউ ভাত , জিলিপি , ফ্রুট জুস , চা , কফি , কাটা ফল ...যত চাও তত | আকন্ঠ খাচ্ছে সকলে | যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন | নাথিং টু কমপ্লেন অ্যাবাউট | বেরিয়ে আকাশ-নীল-আমি | কল্লোল ছবি তুলল | আহা , ঠিক যেন বীরাপ্পান , ফুলন দেবী আর নির্ভয় সিং গুজ্জর |
    মাইসোর পেরিয়ে আমরা বাঁক নিলাম | ওয়েনাডের দিকে | চালক বদল হল | এবং ঝামেলা বাড়ল | এতক্ষণ কল্লোল চালাচ্ছিল | পাশে বসেছিল আকাশ | চুপচাপ | এবার যেই পাশের সীটে কল্লোল, অমনি শুরু হয়ে গেল , " বাঁ দিকে চাপ , লরিটা যেতে দে | তোর কিসের এত তাড়া ! " আকাশ অত্যন্ত সাবধানী , পাকা হাত | কিন্তু কে শোনে কার কথা ! আমার আবার গাড়িতে উঠলেই রাজ্যের ঘুম ! পথ ৩০০ কিলোমিটার | তবে এবার ঘুম আসছে বটে, কিন্তু ছেঁড়া ছেঁড়া | অন্যান্যবার অনেক গানের সি ডি বেছেবুছে নেওয়া হয় | এবার তাড়াহুড়োতে নতুনগুলো সব ফেলে আসা হয়েছে | ফলে ক'টা ইংরিজি গান আর মনোময়ের একটা নতুন সি ডি সম্বল | বার ছয়েক মনোময় রিপীট হবার পর সে এক খ্যাপা খ্যাপা অবস্থা !
    কর্ণাটক পেরোতে হবে অনেকক্ষণ ধরে | এই জায়গাটা পশ্চিমঘাট পর্বতমালার কোল ঘেঁষে | বলতে গেলে কর্ণাটক -কেরালা বর্ডার | অনেকটা জঙ্গল পেরোতে হয় | দু'পাশে বন | বন্দিপুর | এ সব জায়গায় গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলা , পিকনিক ..সব নিষিদ্ধ | টাইগার রিজার্ভ | আমাদের চোখে অবশ্য গুটি কয়েক চিমড়ে বাঁদর ছাড়া আর তেমন কিছু চোখে পড়ল না | একটা আবার দেখি খুব মন দিয়ে কলার খোসা ছাড়াচ্ছে | আকাশকে বললাম, "দ্যাখ , নিজে ছাড়ায় | মাকে হুকুম করে না |"
    দুপাশ ঘন সবুজ | অনেক গাছ তো ! নাম জানি না কত যে ফুলের | পুটুশ ঝোপ আলো হয়ে আছে | রোদ্দুরে ভেসে যাচ্ছে ভুবন | গাছেদের সবুজ চোখে আমন্ত্রণ | কাছে আসার | ভালোবাসার | কোথাও কি থামা হবে দুপুরের খাবার খেতে ? থাক ! খাওয়া তো আছেই, থাকেও | আজ না হয় অন্যরকম হোক | আর এই প্রথম সঙ্গে কিচ্ছু শুকনো খাবারও আনিনি আমরা | কর্ণাটক সীমানা পেরোতে দুপুর ফুরোল |
    সবুজেরও রকমফের হয় | কেরালার সবুজে মোলায়েম ভাব কেমন বেশি ঠেকে আমার চোখে | নাকি আকাশ বেশি নীল , পাহাড়ের ছায়া ঘনায় আর মাঝে মাঝেই বৃষ্টির নূপুরপরা পা দুটিতে নিক্বণ ওঠে ঝুমঝুমিয়ে ...তাই ? যত এগোই , পথ সর্পিল হয় , ঘড়ির কাঁটা চলে কাঠবিড়ালির মতো লাফিয়ে লাফিয়ে | দু পাশে নিখুঁত করে ছাঁটাকাটা চা -বাগান , দূরে গম্ভীর চোখে পাহাড়ের পাহারাদারি , খানিক পরপর কফি গাছগুলো কেমন সুখী গিন্নির চেহারায় ...আঁচল ভরা ভাঁড়ার নিয়ে | সবুজ, হালকা মেরুন , ঘন মেরুন থোকা থোকা ফল | অজস্র ফুল গাছ | কিছু চিনি , কিছু চিনি না | সটান উঠে গেছে দেখি এক জাতের গাছ | একেবারে মাথায় চাপ চাপ আগুন রঙা ফুল | জানি, এ ফুল আকাশমণি নয় | আমি কিন্তু মনে মনে নাম দিয়ে দিই আকাশমণি |
    সানরাইজ ভ্যালিতে পৌঁছনোর পথ শেষ ৩ কিলোমিটার খুব এবড়োখেবড়ো | সরু | শেষের দিকের কিছুটা আবার আকাশের ভাষায় "ফ্রি ফল " | হুশ করে গাড়ি গড়িয়ে যায় নীচে |
    গেটের ভেতরে ঢুকে মনটা খুশি হয়ে গেল | বিকেল প্রায় ৪ টে বাজে | ওরা তখনও ডাইনিং রুম বন্ধ করেনি | আমরা আসব বলে | মিঠে আঙুরের রস আর কটেজের চাবি | একসঙ্গে | বিকেল ৪ টে বাজে যদিও, আমাদের জন্য খাবারও তৈরী | বা :, কোনো কটেজ বুলবুল, কোনটা রাজহাঁস , কোনটা টিয়াপাখি | আমাদের দুটো ..পেঙ্গুইন আর কবুতর | পাশাপাশি | তিন ধাপ লাল রঙের সিঁড়ি | উঠেই একটা ঢাকা বারান্দা | দরজা খুললে বড় শোবার ঘর | পরিপাটি | সাজানো গোছানো প্রশস্ত স্নানঘর | আর....পর্দা টেনে সরালে, ভারী কাচের পাল্লা সরিয়ে দিলে...চৌকোণা ঝুলবারান্দা | তাতে বেতের একজোড়া চেয়ার , একটা টেবিল | দূরে পাহাড়, দুধরং ঝর্ণা ...ঝমঝম আওয়াজ , ঘন সবুজ বন | ঝুঁকলে পায়ে চলা পথ | চলেছে নীচের দিকে | আরও নীচে খাদের ইশারা | সামনেই বড় গাছের গুঁড়িতে ভর করে বেড়ে ওঠা গোলমরিচ গাছে থোকা থোকা সবুজ দানা | ওই বুঝি একটা ধূসর সাদা পাখি উড়ে গেল | আরে, সাহেব বুলবুলি আর ফিঙে নাকি ? গাছ চিনতে আসিনি | যদি চিনে যাই, উপরি পাওনা | ফুল , পাখি কিচ্ছুটি না চিনলেও চলবে | সবুজ আর নীল রং মাখতে এসেছি | কালো গ্রিলের ফাঁকে মোহনবাঁশি ডাক দিয়ে যায়..."ওগো সুদূর বিপুল সুদূর , তুমি যে বাজাও ব্যাকুল বাঁশরি ..." .....কী যে সর্বনেশে ধুন বেজে যায় মস্তিষ্কের কোষে কোষে ... অনেক নীচে তাকালে সামান্য দুলে ওঠে মাথা ...সবুজ অন্ধকার হাত বাড়িয়ে হাত ধরতে চায় | আমার |
    দূরে কুয়াশা ঘন হয় | এখানে বাতি জ্বলে | টিমটিম করে বাতিরা জ্বলে না...ওই পাহাড়ে | ওখানে বসতি নেই | কী ভাগ্যিস ! মনে মনে আমি পাহাড় আর ঝর্ণার নি:শর্ত মালিকানা উপভোগ করি |
    এই বারান্দায় বসি | এই বাইরে এসে লাল সিমেন্টের ধাপিতে | পাশে তিরতিরে জলে বড় বড় লাল কালো মাছ | মালয়েশিয়ান কার্প | হাঁসের ঘরে একটা হলুদ বাতির ওম শরীরে মেখে কমলা ঠোঁট পাখায় গুঁজে একটা রাজহাঁস ডিমে তা দেয় | অন্যগুলো এখনো শিশিরভেজা ঘাসে কেমন গুলতানি করে | সকালে দেখতে আসব | রঙবেরঙের টিয়াপাখি মেলা বসিয়েছে ওধারের খাঁচায় | একদিকে সুন্দর গুহা বানিয়ে ছোট্ট ছোট্ট বাতি জ্বেলে বড়দিনের গল্প | খাবার ঘরের পাশে দুটো এমু পাখি | তেজী একরোখা | আমাকে দেখে এগিয়ে এসে ঠোকর মারে জালের গায়ে | ওধারে আড়মোড়া ভাঙে একটা হিংসুটে মুখের বেড়াল | সাদা-কালো | মোটাসোটা |
    আজকের সন্ধে আজকের রাত ….শুষে নেবার | সবুজ সুখকে | এখানে ঘরে আন্তর্জালের মরণ- ফাঁদ নেই | দূরদর্শনে মালয়ালাম ভাষার কলকাকলি | এক শুধু ক্রিকেট | সে চলুক | আমি কান না পাতলেই হল | বৈদ্যুতিন বার্তা নেই , মুখবই নেই , টুইটারের কিচিরমিচির নেই | শুধু কী ভীষণ নৈ:শব্দ্যের বাঙ্ময়তা আছে |
    রাত ফুরিয়ে যায় | ভোরের আলো ছুঁয়ে যায় বারান্দার চৌখুপি মেঝে | চা ঢালি পেয়ালায় | পাতার আড়ালে পাখি খুঁজতে গিয়ে পিরিচে চলকে যায় খানিকটা চা | আকাশ নীল বেরোতে চায় না | আমরা বেরোই | কাছেই একটা ছোট শহর | কাছেই মানে পাহাড়ি রাস্তায় ৩১ কিলোমিটার | টুকিটাকি কেনাকাটা | অপ্রয়োজনেই বেশি | সোজা চেনা পথে যাই | ফিরি অচেনা অন্য পথ ধরে | এই ফেরার পথটা খারাপ | কিন্তু রোমাঞ্চ বেশি | জানি না তো ! আদৌ কোথায় নিয়ে যাবে !
    দুপুর গড়িয়ে যায় ধীর লয়ে | পাখি দেখি | গাছ দেখি | পেকে ওঠা কফির ফল দাঁতে কাটি | মিষ্টি শাঁস | খুব পাতলা অবশ্য | ভেতরের বীজ শুকিয়ে পিষে কফি তৈরী হবে | এগুলো রোবাসটা কফি |
    এলোমেলো হাওয়া বয় | খুব হালকা শীত শীত করে | বিকেল ফুরোয় | আমার আর বারান্দা -আলস্য ফুরোয় না | কিন্তু মনের খুব ভেতরে তিরতির করে দু:খনদী বয়ে যায় | বৃষ্টি হবে না ? একটুও ?
    বোধ করি আমার দু:খ ঘোচাতেই রাতের অন্ধকারে ঘরে বসে শুনি রুমঝুম শব্দ | হাতের বই ফেলে দরজা খুলি হরিণ- পায়ে | বাইরে গাছের পাতায় নূপুর বাজে , অগভীর পাথরে জলের কুচি ছিটকে যায় | পায়ে চলা পথের দুপাশে সাজিয়ে রাখা আলোর কেয়ারিতে জলের ঝালর | হাঁসগুলো একটু আধটু ডানা ঝাড়ে | ওদের পালকে জল লেগে থাকে না | টিমটিমে আলোয় গুহার ওপরের কৃত্রিম আকাশ থেকে চিকচিকে হাসিমাখা চোখে আমাকে লক্ষ্য করে যায় বেথলেহেমের রুপোলি তারা |
    বৃষ্টি আচমকা আসে | আচমকাই থেমে যায় | শুধু চলে যাবার আগে ধুয়ে দিয়ে যায় মালিন্যের ধুলোবালি যত |
    পরের দিন পরিকল্পনা বাণাসুর বাঁধ | এখানে পাহাড়ের নাম বাণাসুর | হ্রদে স্পিডবোট নিয়ে জলবিহার করা যায় | কিন্তু পথ অনেকটা | ভৈত্রি পেরিয়ে যেতে হয় | যেতেই লাগল প্রায় পৌনে দু'ঘন্টা | গিয়ে শুনি বোটিং করতে গেলে হন্টন ১.৭ কিলোমিটার | খাড়াই পথ | অসম্ভব গরম | ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুর | খানিকটা গিয়েই ত্রাহি মধুসূদন | বোটিং করে কাজ নেই | সে জন্য আরও অনেকটা পদব্রজে যেতে হবে | সবাই অরাজি | এখানেই জলের পাশে বসা ভালো | গভীর জল | বিস্তীর্ণ জল | জলের ওপর রোদ্দুর মসলিনের চাদর বিছিয়ে রেখেছে | চিকচিকে | রেশম রেশম |
    ফেরার পথে অন্য রাস্তা নেওয়া হবে | কারণ সে পথে নাকি একটা ঝর্ণা আছে | সে এক অদ্ভূত পথ | সুঁড়িপথের মতো | একটাই গাড়ি যেতে পারে | কোনক্রমে | তাতে অসুবিধা নেই | কারণ এই ভর দুপুরে চড়া রোদ্দুরে আমরা ছাড়া আর আছেই বা কে | শান্তশিষ্ট লক্ষ্মী মেয়ে ঝর্ণা | ওপরে একটা নড়বড়ে দড়ির পুল | গুটিকয় শ্বেতাঙ্গ মানুষ দিব্যি দুলতে দুলতে ওপারে গিয়ে জঙ্গলে হারিয়ে গেল | ওরা কিসে এসেছে কে জানে ! আর কোনো গাড়ি , বাস তো দেখলাম না | আমাকে ফেলে বাকি তিনজন কোথায় যে হাওয়া হয়ে গেল | আমি পায়ে পায়ে নেমে গিয়ে জলের পাশে দাঁড়িয়ে | সাদা শাঁখের মতো ফেনা কাটছে জল | চারদিক শুনশান | পাখির ডাক নেই , পাতার ঝিরঝিরানি নেই | এত চুপচাপ যে উল্টোদিকে বাতাস বইলে সে ফিসফিসানি শোনা যাবে নিশ্চিত |
    কী জানি কতক্ষণ পরে ওরা তিনজন ফিরল | ওই ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে খানিক গেলে এই ঝর্ণার লুকিয়ে থাকা মস্ত বড় অংশটা দেখা যায় | অনেক নীচে | দুরন্ত | অস্থির |
    আবার সেই চড়াই উতরাই পেরিয়ে ফেরা | সেই ঝুলবারান্দায় | সন্ধের মাধুরী উপভোগ করতে |
    এই সব গল্পের মাঝে প্রাতরাশ ছিল, মধ্যাহ্নভোজ , সায়মাশও | কিন্তু সে বর্ণনা খুব কি প্রয়োজন ? সব প্রদেশের কিছু নিজস্ব আহার্য আর রন্ধনশৈলী থাকে | কেরালা তার ব্যতিক্রম নয় | উপরি পাওনা এখানকার মানুষজনের সস্মিত আতিথেয়তা | আর ... যখন বেরিয়েছি ..তিনটি দিনই দেখেছি পথে অসংখ্য শিশু, বালক বালিকা, কিশোর কিশোরী | স্কুলের পথে বা ফিরতি পথে | এই প্রদেশে সাক্ষরতা শতকরা একশ'ভাগ | নিজের অজান্তে কেরালার কথা ভেবে যেমন গর্বিত হয়েছি , আমার দেশের অন্য প্রদেশের কথা চিন্তা করে ব্যথিত | শিক্ষার আলো মানুষকে সত্যকারের সম্পদ যোগায় | কুবেরের বিষয় আশয় তার কাছে নেহাতই তুচ্ছ |
    তিন রাত | চার দিন | মেয়াদ ফুরোয় ছুটির | সেই একপথে ফিরব ? না | কে যেন কল্লোলকে হদিস দিয়েছে মাইসোর বাইপাস করার | নতুন রাস্তা | অচেনা রাস্তা | দু ধারে এখন ধানের খেত | কাশবন | জলা জমি | অজস্র বক | আবার কোথাও বা এত সরু রাস্তা যে মনে হয় লোকের বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েছি | গাড়ি নিয়ে টিকিয়া উড়ান | উঠোনে বিছানো শুকনো লঙ্কার কার্পেট মাড়িয়ে , মুরগি আর তার ছানাপোনাদের বিরক্তি জাগিয়ে , ছাগল ভেড়াদের ভয় দেখিয়ে | এগোই এগোই ..পাশে পাশে চলে কাবেরী নদী | জলের রেখা বরাবর আমরা | গাড়ি নিয়ে একটু পাশ কাটিয়ে নেমে গেলেই জলের একেবারে ধারে পৌঁছে যাওয়া যায় | কিন্তু চাইলেই সব পাওয়া যায় না | পেতেও নেই | তাতে না-পাওয়ার চিনচিনে কষ্টের সুখ অধরা থেকে যায় |
    সন্ধে পেরোয় | রাত্তির ঘন হয় | শহুরে গন্ধ মেশে বাতাসে |

    চেনা যানজট , চেনা শহরতলী , চেনা নিয়ন সঙ্কেত , চেনা শ্রান্তি , চেনা দিনপঞ্জি |
    রাত ফুরোলেই |
  • kiki | 125.124.***.*** | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ২০:৫০667044
  • ঃ)
  • 4z | 208.23.***.*** | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ২১:১৫667045
  • যারা মুখবই তে নেই, তারা ছবি দেখতে পাবে না?
  • Ishani | 69.92.***.*** | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ২১:৫৭667046
  • দেখছি , কীভাবে ছবি দেওয়া যায় |
  • Arpan | 125.118.***.*** | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ২২:২০667047
  • ঈশানী, সুলতান ব্যাটারি গিয়েছিলেন?
  • Ishani | 69.92.***.*** | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ২৩:০৫667048
  • সুলতান বাথেরি আর কাল্পাত্তা ...দুটো টাউনেই গেছি | মানে যাবার সময় তো প্রথমটার ওপর দিয়েই | কাল্পাত্তা তে আর একদিন শুধু ঘুরে দেখব বলেই গিয়েছিলাম | তবে ওই আর কী , সব লোকালয়তেই তো শহুরে গন্ধ | আমি বরং নির্জনতা খুঁজব...এই ভেবে শহর থেকে চম্পট দিয়েছিলাম | :))
  • ranjan roy | 24.99.***.*** | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২৮667049
  • "তাতে না-পাওয়ার চিনচিনে কষ্টের সুখ অধরা থেকে যায় ়"
    -- এই লাইনটা আমাকে দৃশ্যময় বর্ণনা ছাড়িয়ে অন্য কোথাও নিয়ে গেল।
    আরো লিখুন ঈশানী।
    হ্যাঁ, আপনার" জার্মিনাল"এর বাংলা অনুবাদ বইমেলায় কিনে পড়ব, প্রত্যাশায় আছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন