এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ফের তেলেনাপোতায় (ভ্রমণনির্ভর একটি ধারাবাহিক লেখা শুরু করলাম । ভাল লাগলে কন্টিনিউ করিবো)

    শুভদীপ
    অন্যান্য | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৬৮৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শুভদীপ | 212.142.***.*** | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৯:৫৪657055
  • ফের তেলেনাপোতায়... [প্রথম পর্ব]

    “আরও দূরে চলো যাই, দূরে কোথাও ঘুরে আসি”

    রাত তখন প্রায় দুটো, সদ্য ঘুমের দেশে ঢোকার ভিসা পেয়েছি, অমনি কানের পাশে বেজে উঠলো—‘আমার সোনার বাংলা’ । দেখি চার ডিজিটের একটা অদ্ভুত নাম্বার থেকে ফোন আসছে । আগে এরকম নাম্বার হলে বুঝতাম ঋতায়নদার ফোন, এখন বুঝি রোমান্টিক লেখক শ্রীশ্রী অবিন দত্তগুপ্ত সুদূর বিলেত থেকে আমায় ইঁয়াদ করেছেন ।
    ঘুমজড়ানো গলায় “হ্যালো ! এত রাতে কি ব্যাপার ?”
    “চেন্নাই থেকে জিষ্ণু কনফারেন্সে আছে”
    “কি এত আর্জেন্ট ব্যাপার ? তোমার ছক টা উঠেছে না কি?”
    “ওসব ফালতু কথা রাখ, ঘুরতে যাওয়ার কি হলো ?”
    গতবার ফেরার পর থেকেই ‘আসছে বছর আবার হবে’ রব উঠেছিল । অবিনদা এবছর আরও সহযাত্রী যোগাড় করার জন্য একটা গ্রুপ চ্যাট ও খুলেছিল, তবে সেখানে খিল্লি-খোরাকিই বেশী চলছে, কাজেই এবার সরাসরি আন্তর্জাতিক ট্রাঙ্ককল ।
    “কোথায় যাবে বলো ? অযোধ্যা পাহাড় যাওয়া যায়, সমুদ্র চাইলে চাঁদিপুর বা গোপালপুর”
    “না না ওসব আলবাল ছোলার ডাল জায়গায় যাবো না । এগারো বছর ধরে আমি ডুয়ার্স ঘুরতে যাচ্ছি, এবারও ডুয়ার্স যাবো” [দুষ্টু মিষ্টি স্মাইলি]
    “ঝালং যাওয়া যেতে পারে । অবশ্য সেখানে এক দুদিনের বেশী পোষাবে না”
    “ঝালং খুব ভাল জায়গা। ঝালং ই যাবো। ওখানে দুদিন, তুই আরেকদিনের জন্য কাছাকাছি একটা স্পট দেখ।”
    “কিন্তু খরচাপাতি কেমন...” চেন্নাই থেকে জিষ্ণুর ক্ষীণ কন্ঠ ভেসে এলো ইথারে ।
    “ওসবে চাপ নিচ্ছিস কেন? FDI আছে তো ! শান্তনুদাকে চ্যাটে ধরি দাঁড়া ।”
    শান্তনুদা এত রাতে ফোন করায় যেভাবে গালিগালাজ করে ফোন রেখে দিলো, তাতে করে আমরা শান্তনুদাকে লিস্টি থেকে ছেঁটে ফেললাম । রইল বাকি তিন ।
    তিনে ত্র্যহস্পর্শ । আরেকজন লাগবেই । “উদিত কে বলি?”
    “বলে দেখ”
    উদিত তিনপায়ে খাড়া । শিলিগুড়ির ছেলে । ওকেই ঝালং এর ঘর বুক করার দায়িত্ব দেওয়া হলো । ও আবার বাড় খেয়ে ঝালং, কালিম্পং দুজায়গাতেই গেস্ট হাউস বুক করে ফেললো । তবে সেই বুক করাতে আমাকে কি পরিমাণ ঘ্যানঘ্যান করতে হয়েছে সেসব নাহয় নাই বললাম । প্রথমে ছাব্বিশ তারিখের টিকিট কাটা হলো । সাতাশ তারিখে উদিতের কি একটা পরীক্ষা পরে যাওয়ায় সেটা একদিন পিছিয়ে গেল (যদিও আমি জানতাম অত সকালে উঠে উদিত পরীক্ষা দিতে যাবে না, যায়ও নি) । রাধিকাপুর এক্সপ্রেসে মালদা অবধি যাওয়া, সেখান থেকে দার্জিলিং মেলের জেনারেলে করে NJP । কি করা যাবে, এখন তো দেড়মাস আগে টিকিট না কাটলে ওসব দিকের ট্রেনের টিকিট দূরের কথা, টিকিরও সন্ধান মেলে না ।
    আমি ৭.১৫ নাগাদ হেলেদুলে স্টেশনে পৌঁছলাম । বাকি তিন মক্কেল অনেক আগেই হাজির । “রাতের খাওয়ার নিয়েছো?”—সন্দেহপ্রবণ গলায় জিজ্ঞেস করলাম ।
    একগাল হাসি সমেত উত্তর এলো- “খাওয়ার নিয়েছি, এক পাঁইট জ্বালানিও তুলে নিয়েছি”
    ট্রেন ছেড়েছে । আমি ঘর থেকে পোহা বানিয়ে এনেছিলাম, সেটা দিয়েই মুখচালনা শুরু হলো, বৃদ্ধ সন্ন্যাসীও কোনোক্রমে দুটো কোল্ডড্রিঙ্কসের বোতলে চলে গেছেন ।
    “আস্তে আস্তে মেরে দে”
    গোটা কম্পার্টমেন্টে চেনা লোকে ভর্তি । বলতে গেলে গোটা ট্রেনেই । যা থাকে কপালে বলে গেটের পাশে গিয়ে অমৃতসেবা করলাম, এদিক ওদিক থেকে গার্ড দেওয়ার লোকও কম ছিল না ।
    এরকম মুহুর্তে অবিনদা বরাবরই সঙ্গী জুটিয়ে ফেলে । এক হেপ-দেখন-প্রয়াসী ভদ্রলোক, তিনিও না কি এক পাত্র হুইস্কি নিয়ে উঠেছেন, তার সাথে খেজুরে আলাপ শুরু হলো ।
    “আমি মিউজিশিয়ান”
    “অবিনদাও মিউজিক নিয়েই কাজ করে, ও মিউজিকাল প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জ করে”
    এটুকু শুনে আমি সীটে চলে গেছি, এমনিতেই পেটে একটু পড়লে আমার হাসি থামানো মুশকিল হয়ে যায় । তার ওপর আমার বোতলটাও খালি হয়ে গেছে।
    একটু পরে খেয়ে নিতে হলো, কারণ লোকজন ঘুমগাড়ীতে চড়া শুরু করে দিয়েছে । লাইট অফ না করলে খিস্তি মারবে । খাওয়ার পরে আমি আর উদিত নিজের নিজের বার্থে বডি ফেলছি । বাকি দুজন তখনও নীচে ঘুরঘুর করছে । সেই মিউজিশিয়ান ভদ্রলোক না কি হুইস্কি টা পাইল করে ফেলেছেন, এবং ৯০ ml করে বৃদ্ধ সন্ন্যাসীতে না কি দুই ক্যালকেসিয়ানের শরীরও গরম হয়নি । কিছুক্ষণ পরেই দুজনের ফিরে এসে শুয়ে পড়া আর লোকটাকে খিস্তি করা দেখে বুঝলাম, ওনার গীটার বওয়া ঘাড় বেশ শক্ত, ভাঙতে পারেনি ।
    ভোররাতে অনেকক্ষণ ধরে ঘটাং ঘটাং আওয়াজ শুনে বুঝলাম ফারাক্কা পার করছি । এবার চোখ খুলে ফেলা ভাল । উঠে লোকজনকে ডেকে, ব্যাগ গুছিয়ে
    নিতে নিতেই হুস করে ট্রেন মালদা ঢুকে গেল ।
  • শুভদীপ | 212.142.***.*** | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১১:২৩657062
  • "ইটইয়ের নামটাকে আদর্শ করবেন না "

    বুইলাম না @Abhyu
  • Abhyu | 85.137.***.*** | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৯:১৪657063
  • আমার মনে হয় টইয়ের নাম ছোটো হলেই ভালো। ফের তেলেনাপোতায় - ঠিক ছিল। ব্র্যাকেটের মধ্যের জিনিসগুলো নামেতে থাকার দরকার বোধ হয় নেই।
  • শুভদীপ | 212.142.***.*** | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১১:৫৪657064
  • ওহো আচ্ছা
  • R | 131.24.***.*** | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৬:০৪657065
  • নাম-টাম ছেড়ে এবারে লেখাটাতে ঢুকুন দেখি। ঝুলে আছি তো।
  • ranjan roy | 24.99.***.*** | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৬:৩২657066
  • হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঝুলে আছি। তাড়াতাড়ি।
  • শুভদীপ | 212.142.***.*** | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:৫৮657068
  • দ্বিতীয় পর্বঃঃ

    “গোলমাল হ্যায় ভাই সব গোলমাল হ্যায়”

    মালদা তে ঢুকছি, দেখি উল্টোদিকের প্ল্যাটফর্মে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে আছে । কাঞ্চনকন্যা সাধারণত রাধিকাপুর ঢোকার মিনিট পনেরো আগেই ছেড়ে যায়, এই ট্রেনখানা ধরতে পারলে অনেক সুবিধে, সিধে নিউ মাল-এ নামবো, ঝালং অনেক কাছে হবে । আমরা তো ট্রেন থামতে না থামতেই কোনোরকমে নেমে দৌড় দিলাম । ওভারব্রিজ ক্রস করে হাঁফাতে হাঁফাতে কাঞ্চনকন্যার জেনারেলে এসে উঠলাম ।
    কোথাও জায়গা নেই, তবে আস্তে আস্তে জায়গা হয়ে যাবে—আমি আশ্বাস দিলাম । উদিত RMS বগিতে তনা’দার খোঁজে গেল (এই তনা’দা বারবার গল্পে ফিরে আসবেন), যদি জায়গা ম্যানেজ হয়, তবে বৃথা আশা, তনা’দা সেদিন অন্য ট্রেনের দায়িত্বে । ট্রেন ছাড়বো ছাড়বো করছে ।
    উদিত প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে, আমার মাথায় হঠাৎ খেয়াল হলো, এটা বাই চান্স উলটো দিকের ট্রেন নয়তো !! উদিতের মাথাতেও মনে হয় চিন্তাটা একই সময় এলো, কারণ প্ল্যাটফর্মের এক হকারকে সেই কথা জিজ্ঞেস করলো । উত্তরে যা শুনলাম, তাতে আমাদের মাথা ভোঁ করে চক্কর খেয়ে গেল, পরি কি মরি করে মালপত্র নিয়ে ট্রেন থেকে নামলাম, জিষ্ণু প্রথমটা বুঝতে পারেনি, ও যখন নামছে, ততক্ষণে ট্রেন নড়ে উঠেছে ।
    “শুয়োরের বাচ্চা, এই তুই নর্থ বেঙ্গলের ট্রেনের সব হাল হকিকত জানিস !!”
    “বাহ রে, আমার কি দোষ ? আমি কি করে জানবো শেয়ালদা যাওয়ার ট্রেন দুঘন্টা লেট করে এখন এসেছে ? এখন তো আলিপুর যাওয়ার ট্রেনেরই সময়”
    “কাল সকালে উঠে দেখতাম শেয়ালদা পৌঁছে গেছি”
    “না না, ফারাক্কা এলেই তো বুঝে যেতাম”—আমি সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম ।
    “বোকচোদ”
    প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে আসছি, দার্জিলিং মেইল আধঘন্টা পরে । টিকিট কাটতে হবে, এট্টু চা বা কফি পান করতে হবে, সাদাকাঠি জ্বালাতে হবে ।
    দার্জিলিং মেল এলো, সেটার স্লিপার ক্লাসে উঠতে গিয়ে অবিনদা টিটির কাছে ঝাড় খেলো, শেষে আমরা কোনোরকমে উঠে বসলাম একটা জেনারেল কম্পার্টমেন্টে । বসলাম বলা ভুল হলো, বসার জায়গা পেলাম না । ওপরের বাঙ্কগুলো দখল করে লোকজন বেমালুম ঘুমোচ্ছে, তার একটায় সামান্য জায়গায় আমি গুটিশুটি মেরে বসলাম, আমার দেখাদেখি অবিনদাও একজনের পদতলের শরণ নিয়েছে । বাকি দুজনের সে সুযোগও হয়নি, ওরা গেটের পাশের প্যাসেজে কোনোরকমে বসার চেষ্টা করলো, ঠান্ডার চোটে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই প্ল্যানও কাটিয়ে দিতে হলো ।
    আমার বাঙ্কের দখলদার ভদ্রলোক বেশ ভাল । সাড়ে পাঁচটার আগেই উঠে গিয়ে আমায় পুরো বাঙ্কটা ছেড়ে দিলেন । শুয়ে তো পড়লাম, কিন্তু ঘুম আসে কই ? ওদিকে বাকি তিনজন দূরে- একজন উচ্চাসনে বসে আর দুজন নীচে দন্ডায়মান, খিল্লিখাল্লা করছে, জানি আমার এলাকাদখল-পটুত্বে হিংসে করে, করুক গে ।
    চোখ টা মনে হয় একটু লেগে এসেছিল, বেশ জোরে জোরে গলার আওয়াজ পেয়ে ঘুম চটকে গেল । পাশের কামরায় পুরোদস্তুর আলোচনা চলছে, এরকম হাড়কাঁপানো শীতেও সেই আলোচনার তাপমাত্রা ওপরের দিকেই । বিষয় হোককলরব-গীতশ্রী থেকে বিজেপি অনেক কিছুই । এই সব ইস্যুতে অবিনদা কি কি বলে থাকে সেটা সম্পর্কে ফেসবুকের কল্যাণে অনেকেরই ধারণা আছে, আমি আর পুনরাবৃত্তি করছি না । আমার তখন চিন্তা ট্রেন লেট নিয়ে ।
    অবশেষে বেশ তিনঘন্টা লেট করে দার্জিলিং মেইল এসে পৌঁছুল NJP । সারা রাস্তা কুয়াশা পেয়েছি, এখানে এসে দেখি ঝকঝকে রোদ্দুর । প্রথমেই গেলাম উদিতদের বাড়ী । ওর বাবা মা গুজরাতের উন্নয়ন দেখতে গেছেন, ফাঁকা বিশাল বাড়ী দেখে জিষ্ণু তো বলেই উঠলো – “নাহ আর কোথাও গিয়ে কাজ নেই, এটাই দিব্যি একটা ট্যুরিস্ট স্পট” ।
    আমি যেমনটা করে থাকি, সব্বাইকে তাড়া দেওয়ার কাজটা করে গেলাম। যাই হোক, স্নান করে মুখে একটু কিছু গুঁজে বেরোতে হবে তো !
    প্রথম যে প্রশ্ন উঠলো, যে কোথায় যাওয়া হবে, কালিম্পং আর ঝালং দুদিকেরই বুকিং আছে । কালিম্পং গেলে যাওয়া সহজ, কাছেও হবে ।
    “কালিম্পং এর IC কে একটা ফোন করে দেবো, সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে” ছুঁড়ে দিল উদিত । (কালিম্পং এর IC ও বারংবার এই গল্পে ফিরে আসবেন)
    জিষ্ণুও কালিম্পং এর দিকেই ভোট দিলো, কিন্তু শেষে জিতলো ঝালং ই । সাড়ে বারোটার সময় পানিট্যাঙ্কি মোড় থেকে বাস ছাড়ে ঝালং এর । সেটা ধরতে পারা যাবে না আন্দাজ করেই উদিত ফোন করে একটা গাড়ী বলে রাখলো । সেই গাড়ীটা আমাদের রিসিভ করবে পানিট্যাঙ্কি মোড় থেকেই ।
    গাড়ীর চালক বুড়োদা । হ্যাঁ এই বুড়োদার ট্রেলার তো ফেসবুকবাসীরা দেখেইছেন । গাড়ী থেকে নেমে কোনও কথা না বলেই ব্যাগ গুলো নিয়ে গাড়ীতে ভরে দিলেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন—“তোমরাই ঝালং এর পার্টি তো ?” । গাড়ী চলতে শুরু করেছে, বুড়োদা বললেন “ভাই, রাস্তায় চেকিং হলে কিন্তু বলবে না ভাড়ার গাড়ী, বলবে তোমরা আমার মাসতুতো পিসতুতো ভাই, তোমাদের ঘোরাতে নিয়ে এসেছি । তোমার নাম রাম, তোমার নাম রাজু, তোমার নাম রহিম, আর এঁকে দেখে তো মাড়ওয়ারি মনে হয়, তোমার নাম আগরওয়ালা”
    সোডার মতো ভসভস করে বেরিয়ে আসা হাসি চাপার উপায় না কি ভয়ঙ্কর কিছু চিন্তা করা, অন্তত পরশুরাম তাই বলে গেছেন । আমিও চিন্তা করতে লাগলাম - আমায় ঝালং এ বাঘ তাড়া করেছে, আমি জলঢাকার জলে পড়ে গেছি । কিন্তু জিষ্ণুর মুখের দিকে চোখ পড়ার পড় এসব টোটকাতেও কোনও কাজ দিল না । ভাগ্যে পেছনের সীটে বসেছি ।
    যাই হোক সেরকম কোনও চেকিং হয়নি, আমাদেরও নাম ভাঁড়াতে হয়নি, গাড়ী চলছে ফুলফোর্সে । একটু বাদেই করোনেশন ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ী ঢুকে পড়লো ডুয়ার্সে ।
    ________________________________________________________________________________
  • শুভদীপ | 212.142.***.*** | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:৫৮657067
  • দ্বিতীয় পর্বঃঃ

    “গোলমাল হ্যায় ভাই সব গোলমাল হ্যায়”

    মালদা তে ঢুকছি, দেখি উল্টোদিকের প্ল্যাটফর্মে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে আছে । কাঞ্চনকন্যা সাধারণত রাধিকাপুর ঢোকার মিনিট পনেরো আগেই ছেড়ে যায়, এই ট্রেনখানা ধরতে পারলে অনেক সুবিধে, সিধে নিউ মাল-এ নামবো, ঝালং অনেক কাছে হবে । আমরা তো ট্রেন থামতে না থামতেই কোনোরকমে নেমে দৌড় দিলাম । ওভারব্রিজ ক্রস করে হাঁফাতে হাঁফাতে কাঞ্চনকন্যার জেনারেলে এসে উঠলাম ।
    কোথাও জায়গা নেই, তবে আস্তে আস্তে জায়গা হয়ে যাবে—আমি আশ্বাস দিলাম । উদিত RMS বগিতে তনা’দার খোঁজে গেল (এই তনা’দা বারবার গল্পে ফিরে আসবেন), যদি জায়গা ম্যানেজ হয়, তবে বৃথা আশা, তনা’দা সেদিন অন্য ট্রেনের দায়িত্বে । ট্রেন ছাড়বো ছাড়বো করছে ।
    উদিত প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে, আমার মাথায় হঠাৎ খেয়াল হলো, এটা বাই চান্স উলটো দিকের ট্রেন নয়তো !! উদিতের মাথাতেও মনে হয় চিন্তাটা একই সময় এলো, কারণ প্ল্যাটফর্মের এক হকারকে সেই কথা জিজ্ঞেস করলো । উত্তরে যা শুনলাম, তাতে আমাদের মাথা ভোঁ করে চক্কর খেয়ে গেল, পরি কি মরি করে মালপত্র নিয়ে ট্রেন থেকে নামলাম, জিষ্ণু প্রথমটা বুঝতে পারেনি, ও যখন নামছে, ততক্ষণে ট্রেন নড়ে উঠেছে ।
    “শুয়োরের বাচ্চা, এই তুই নর্থ বেঙ্গলের ট্রেনের সব হাল হকিকত জানিস !!”
    “বাহ রে, আমার কি দোষ ? আমি কি করে জানবো শেয়ালদা যাওয়ার ট্রেন দুঘন্টা লেট করে এখন এসেছে ? এখন তো আলিপুর যাওয়ার ট্রেনেরই সময়”
    “কাল সকালে উঠে দেখতাম শেয়ালদা পৌঁছে গেছি”
    “না না, ফারাক্কা এলেই তো বুঝে যেতাম”—আমি সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম ।
    “বোকচোদ”
    প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে আসছি, দার্জিলিং মেইল আধঘন্টা পরে । টিকিট কাটতে হবে, এট্টু চা বা কফি পান করতে হবে, সাদাকাঠি জ্বালাতে হবে ।
    দার্জিলিং মেল এলো, সেটার স্লিপার ক্লাসে উঠতে গিয়ে অবিনদা টিটির কাছে ঝাড় খেলো, শেষে আমরা কোনোরকমে উঠে বসলাম একটা জেনারেল কম্পার্টমেন্টে । বসলাম বলা ভুল হলো, বসার জায়গা পেলাম না । ওপরের বাঙ্কগুলো দখল করে লোকজন বেমালুম ঘুমোচ্ছে, তার একটায় সামান্য জায়গায় আমি গুটিশুটি মেরে বসলাম, আমার দেখাদেখি অবিনদাও একজনের পদতলের শরণ নিয়েছে । বাকি দুজনের সে সুযোগও হয়নি, ওরা গেটের পাশের প্যাসেজে কোনোরকমে বসার চেষ্টা করলো, ঠান্ডার চোটে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই প্ল্যানও কাটিয়ে দিতে হলো ।
    আমার বাঙ্কের দখলদার ভদ্রলোক বেশ ভাল । সাড়ে পাঁচটার আগেই উঠে গিয়ে আমায় পুরো বাঙ্কটা ছেড়ে দিলেন । শুয়ে তো পড়লাম, কিন্তু ঘুম আসে কই ? ওদিকে বাকি তিনজন দূরে- একজন উচ্চাসনে বসে আর দুজন নীচে দন্ডায়মান, খিল্লিখাল্লা করছে, জানি আমার এলাকাদখল-পটুত্বে হিংসে করে, করুক গে ।
    চোখ টা মনে হয় একটু লেগে এসেছিল, বেশ জোরে জোরে গলার আওয়াজ পেয়ে ঘুম চটকে গেল । পাশের কামরায় পুরোদস্তুর আলোচনা চলছে, এরকম হাড়কাঁপানো শীতেও সেই আলোচনার তাপমাত্রা ওপরের দিকেই । বিষয় হোককলরব-গীতশ্রী থেকে বিজেপি অনেক কিছুই । এই সব ইস্যুতে অবিনদা কি কি বলে থাকে সেটা সম্পর্কে ফেসবুকের কল্যাণে অনেকেরই ধারণা আছে, আমি আর পুনরাবৃত্তি করছি না । আমার তখন চিন্তা ট্রেন লেট নিয়ে ।
    অবশেষে বেশ তিনঘন্টা লেট করে দার্জিলিং মেইল এসে পৌঁছুল NJP । সারা রাস্তা কুয়াশা পেয়েছি, এখানে এসে দেখি ঝকঝকে রোদ্দুর । প্রথমেই গেলাম উদিতদের বাড়ী । ওর বাবা মা গুজরাতের উন্নয়ন দেখতে গেছেন, ফাঁকা বিশাল বাড়ী দেখে জিষ্ণু তো বলেই উঠলো – “নাহ আর কোথাও গিয়ে কাজ নেই, এটাই দিব্যি একটা ট্যুরিস্ট স্পট” ।
    আমি যেমনটা করে থাকি, সব্বাইকে তাড়া দেওয়ার কাজটা করে গেলাম। যাই হোক, স্নান করে মুখে একটু কিছু গুঁজে বেরোতে হবে তো !
    প্রথম যে প্রশ্ন উঠলো, যে কোথায় যাওয়া হবে, কালিম্পং আর ঝালং দুদিকেরই বুকিং আছে । কালিম্পং গেলে যাওয়া সহজ, কাছেও হবে ।
    “কালিম্পং এর IC কে একটা ফোন করে দেবো, সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে” ছুঁড়ে দিল উদিত । (কালিম্পং এর IC ও বারংবার এই গল্পে ফিরে আসবেন)
    জিষ্ণুও কালিম্পং এর দিকেই ভোট দিলো, কিন্তু শেষে জিতলো ঝালং ই । সাড়ে বারোটার সময় পানিট্যাঙ্কি মোড় থেকে বাস ছাড়ে ঝালং এর । সেটা ধরতে পারা যাবে না আন্দাজ করেই উদিত ফোন করে একটা গাড়ী বলে রাখলো । সেই গাড়ীটা আমাদের রিসিভ করবে পানিট্যাঙ্কি মোড় থেকেই ।
    গাড়ীর চালক বুড়োদা । হ্যাঁ এই বুড়োদার ট্রেলার তো ফেসবুকবাসীরা দেখেইছেন । গাড়ী থেকে নেমে কোনও কথা না বলেই ব্যাগ গুলো নিয়ে গাড়ীতে ভরে দিলেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন—“তোমরাই ঝালং এর পার্টি তো ?” । গাড়ী চলতে শুরু করেছে, বুড়োদা বললেন “ভাই, রাস্তায় চেকিং হলে কিন্তু বলবে না ভাড়ার গাড়ী, বলবে তোমরা আমার মাসতুতো পিসতুতো ভাই, তোমাদের ঘোরাতে নিয়ে এসেছি । তোমার নাম রাম, তোমার নাম রাজু, তোমার নাম রহিম, আর এঁকে দেখে তো মাড়ওয়ারি মনে হয়, তোমার নাম আগরওয়ালা”
    সোডার মতো ভসভস করে বেরিয়ে আসা হাসি চাপার উপায় না কি ভয়ঙ্কর কিছু চিন্তা করা, অন্তত পরশুরাম তাই বলে গেছেন । আমিও চিন্তা করতে লাগলাম - আমায় ঝালং এ বাঘ তাড়া করেছে, আমি জলঢাকার জলে পড়ে গেছি । কিন্তু জিষ্ণুর মুখের দিকে চোখ পড়ার পড় এসব টোটকাতেও কোনও কাজ দিল না । ভাগ্যে পেছনের সীটে বসেছি ।
    যাই হোক সেরকম কোনও চেকিং হয়নি, আমাদেরও নাম ভাঁড়াতে হয়নি, গাড়ী চলছে ফুলফোর্সে । একটু বাদেই করোনেশন ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ী ঢুকে পড়লো ডুয়ার্সে ।
    ________________________________________________________________________________
  • R | 131.24.***.*** | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:০১657056
  • শুভদীপ বোধ হয় এক এক কিস্তি লেখে, তার পরে আবার লটবহর নিয়ে ঘুরতে যায়। আর ফিরে এসে আবার লেখে।
  • sumit | 102.96.***.*** | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৮657057
  • লেখাটা বেশ খারাপ হচ্ছে, তা লেখক চাইলে চলুক। তবে ঘুরলেই লিখতে হবে এমন মাথার দিব্বি তো কেউ দেয় নি।
  • ... | 177.124.***.*** | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪১657058
  • লিখলেই পড়তে হবে এমন মাথার দিব্বিও কেউ দেয় নি।
  • শ্রী সদা | 113.19.***.*** | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৬:৩১657059
  • বেশ হচ্ছে। চলুক।
    দুম করে প্ল্যান বানিয়ে ফেলে বন্ধুবান্ধব জুটিয়ে এই ট্রিপগুলো এখন খুব মিস করি ঃ(
  • de | 69.185.***.*** | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৬:৫৭657060
  • ভালো লাগছে পড়তে - চলুক! সত্যি, এই দিনগুলো মিস করি খুব!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন