এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আমাদের ছোট ছোট গল্প ঘটনা

    সে
    অন্যান্য | ২৮ মার্চ ২০১৪ | ৭৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 188.83.***.*** | ২৮ মার্চ ২০১৪ ১৬:৩৪635975
  • আসুন এখানে তুলে রাখি আমাদের ছোটো ছোটো গল্প ঘটনা।

    প্রথমেই তুলে দিচ্ছি একটি ব্লগ থেকে, একটি বাঙালী ইঞ্জিনিয়ার মেয়ের ফ্যাক্টরীর কাজের অভিজ্ঞতা -

    "আমি ফ্যাক্টরীর ইঞ্জিনিয়ার মেয়ে"
    http://bangladeshiwomenintech.blogspot.in/2014/03/blog-post_27.html?spref=fb
  • hu | 12.133.***.*** | ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ১৮:১৩635984
  • আমি হিজিবিজি দেখছি
  • | ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ১৮:১৭635985
  • আমি কেবলই ৯ সিটের মহিলা, সব সিটের পাবলিক নই : কর্মজীবি নারীর পাবলিক যানবাহনের অভিজ্ঞতা
    ============================================================


    আমি মিরপুরের পল্লবী থানার অধীন একটি আবাসিক এলাকায় থাকি। সেখান থেকে কাউন্টারের বাস পূবালী পরিবহন করে একটা দীর্ঘ সময় আমাকে কাওরান বাজারে নিজের কর্মক্ষেত্রে আসতে হতো। পুবালী বাসের ডান দিকের ৯টি সংরক্ষিত আসনের পাশে বরাদ্দের কথা “সংরক্ষিত মহিলা/ প্রতিবন্ধী/ বয়স্ক ও শিশু আসন” লেখা হয়ে গেছে। আমার সেদিন ভয়ংকর জ্বর। আর প্রচন্ড রোদে সংরক্ষিত আসনগুলোর বসাই দায়। আমি উঠে বামপাশে রোদ লাগবে না এমন সিটে বসতে যাওয়ার সাথে সাথে আশপাশের কিছু কর্মজীবি পুরুষ মানুষ রৈ রৈ করে উঠলো। একজন জোরে বলেই ফেললো “দেখেন আমরাও তো অফিস যাবো। আপনারা সব সিটই চান কেন? মহিলাদের সিটে বসেন, এই খানে আরেকজন বসতে পারে”। আমি ঠান্ডা স্বরে জিজ্ঞেস করলাম ঐ আরেকজন কে? পুরুষটি উত্তর দিলো “আরে ভাই আমাদের জন্য তো কোন সিট ঠিক থাকে না..আপনাদের জন্য ৯টা সিট আগেই দেয়া আছে, এখানে আমাদের দেন..আপনাদের সিটে বসেন গিয়ে..”। আমি ততোধিক উত্তেজনাহীন কণ্ঠে বললাম কোথাও কি লেখা আছে আমি ঐ ৯ সিট ছাড়া আর কোথাও বসতে পারবো না। আশপাশের মধ্যবিত্ত “সৌম্য” চেহারার পুরুষদের অনেকেই হঠাৎ সেই ভদ্রলোকের সাথে জবান মিলিয়ে বলতে লাগলেন “ভাই মহিলা গো বুঝানো মুশকিল। সাত সকালে মেজাজ টেজাজ খারাপ কইরেন না। বাদ দেন, ছাইড়া দেন। এরা হিন্দি সিরিয়াল দেখে খালি ঝগড়া শিখছে..সবই এদের দরকার”। আমি সিটে বসলাম এবং শুনতে পেলাম সেই “ভদ্রলোক” তারপাশের জনের সাথে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ ওমন উচ্চস্বরে শুরু করে দিয়েছেন যাতে তার প্রতিটা কথা আমার কানে আসে। “ভদ্রলোকের” বক্তব্যের মোদ্দাকথা মহিলাদের মতো বুদ্ধিজ্ঞানহীন এবং পাবলিক বাসে ফ্যাসাদ তৈরীকারী উপাদান আর কেউ হতে পারে না। এদের কাজই ঝামেলা তৈরী করা, মহিলা মানেই সমস্যা। কথা বলতে বলতে এরপর তিনি নারী প্রসঙ্গে ধর্ম কি কি বলছে সেসবের বিস্তারিত আলোচনা শুরু করলেন এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন মহিলা মানে “আওরাতের” কাজ ঘরে থাকা। এদের ঘরের বাইরে আনা মানেই ঝামেলা। তার প্রশ্ন এই মহিলাগুলো বাইরে আসে কেন?

    ঢাকা শহরের আরো অনেক মধ্যবিত্ত কর্মজীবি নারীর মতো আমাকে জীবনের নানান তাগিদে পাবলিক যানবাহন, বিশেষভাবে লোকাল, ডাইরেক্ট এবং কাউন্টারের বাসে চড়তে হয়েছে। এই ঢাকা শহরেই ১১ বছরের বেশী সময় ধরে সেই কলেজ পড়াকালীন সময় থেকে আমি পাবলিক বাসে চলাচল করি। যাতায়াত করতে গিয়ে নারী হিসেবে পাবলিক পরিবহন ব্যবহারের নানান অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। আর এই নানান অভিজ্ঞতা আমাকে বারবারই একটি প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় “আমি নারী কী আসলে কখনো এই শহরে “জনতা” হতে পেরেছি, আমি কী কখনো পাবলিক?”


    সকাল বেলা আর বিকেলে সোজা করে বললে অফিস টাইমে পাবলিক বাসে বাড়ি ফিরবার পথে প্রায় সকল কর্মজীবি নারীর সবচাইতে বেশী শোনা কথার একটা হলো মহিলা সিট নাই..অই অই লেডিস তুলিস না। এটা যেমন কাউন্টার বাসের বেলায় খাটে তেমনি খাটে লোকাল বাসের ক্ষেত্রেও। নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্য ঢাকার অফিসের সময়সূচী একই। কর্মজীবি হিসেবে নারী এবং পুরুষের জন্য অফিসিয়্যাল ডেকোরাম বা সিস্টেমে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা তৈরী করা হয় নাই যেখানে বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মজীবি নারী কর্মস্থলে দেরী করে পৌঁছাতে পারে এবং দেরী করে পৌঁছানোটাই নিয়ম। অফিসিয়াল ব্যবস্থায় প্রশাসনিকভাবে নারীর জন্য অফিস টাইম কেন্দ্রিক এই ধরনের বিশেষ ছাড় দেয়াটা কাজের কিছু হবে বলে আমি রাজনৈতিকভাবে মনেও করি না।
    যদি নারী এবং পুরুষ উভয় কর্মজীবির জন্য অফিসের কাজ এবং কাজের সময় একই মর্যাদা এবং দ্বায়িত্বের বিষয় হয়ে থাকে তাহলে আমার প্রশ্ন পাবলিক চৈতন্যে “নারীর তাড়া” কেন তাড়া হিসেবে “পুরুষের তাড়ার” সমান মর্যাদা বা গুরুত্বের দাবী রাখে না? কেন নারীকে পাবলিক বাসে কেবল এই জন্য উঠতে দেয়া হয় না যে মহিলা সিট নাই? তারমানে কী ধরেই নেয়া হয় কেবল সংরক্ষিত সিট মানেই মহিলা সিট? কিংবা মহিলারা কেবল সংরক্ষিত সিটে বসবে? কিন্তু সংরক্ষিত সিট তো কেবল মহিলার জন্য বরাদ্দকৃত নয়। শিশু, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্যও একইসাথে বরাদ্দকৃত। তাহলে কোন বিশেষ প্রক্রিয়ায় পাবলিক চৈতন্যে সংরক্ষিত সিট মানেই মহিলা সিট হয়ে যায়? সংরক্ষিত সিট মানেই কেবল মহিলা সিট যদি পাবলিকলি এই ভাবনা ধরে নেয়া হয় তাহলে ঐ সংরক্ষিত ৯টি সিট ছাড়া বাদবাকি সিটগুলো কাদের? যদি পাবলিক বাস রাষ্ট্রের জনগণকে পরিবহন সেবা প্রদানের কাজে নিয়োজিত হয়ে থাকে তাহলে সংরক্ষিত ৯টি সিট ছাড়া অন্য সিটগুলো পাবলিকের বা আমজনতার। তারমানে কি এই দাঁড়ায় যে, (মহিলা/ প্রতিবন্ধী/ শিশু/ বয়স্কদের জন্য) সংরক্ষিত ৯টি সিট ছাড়া বাসে অপর যে সিটগুলো থাকে সেগুলো আসলে পাবলিকের নামে কেবল পুরুষেরই সিট? আরো বড়ো পরিসরে বললে মহিলা সিট না থাকলে ভীড়ের বাসে যেহেতু নারীকে উঠানো হয় না তাহলে প্রশ্ন করতে হয় বাসের মধ্যে দাঁড়ানোর জন্য যে জায়গাগুলো পাবলিকলি সবার জন্য আছে সেটা তাহলে কার জন্য বরাদ্দকৃত? সেটা কী কেবল পুরুষের স্পেস? আর কেবল পুরুষের স্পেস বলেই কী নারীকে ভীড়ের বাসে নেয়া হয় না? তারমানে কী “পাবলিক মাত্রই কেবলই পুরুষ”?


    পাবলিক বাসে মহিলা হিসেবে সিট সংরক্ষিত আছে এই অধিকারের কথা বললে, আদায় করতে গেলে ঢাকা শহরের অনেক কর্মজীবি নারীকেই বাসে নানান রকম ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। বেসরকারী মোবাইল কোম্পানীতে কর্মরত তিনা নামে এক নারী বলছিলেন “পাবলিক বাসে বরাদ্দকৃত সিটে যদি কোন পুরুষ বসে থাকে তাহলে সেই সিট থেকে তাকে উঠানো আর ঐটা যে মহিলাদের সিট এই দাবী তোলা প্রায় জীবন বাজির মতো ঘটনা। আমি একবার গুলশান থেকে মোহাম্মদপুরের রুটের রংধনু বাসে উঠেছি। অনেকেই দাঁড়ানো। আমাদের সাথে একজন বয়স্ক মহিলা আছেন। কিছুতেই তিনি দাঁড়াতে পারছেন না। আমি দেখলাম মহিলা সিটগুলোতে একজন শক্তসমর্থ আনুমানিক ত্রিশের লোক বসে আছেন। তাকে আমি বললাম আপনি এই খালাকে বসতে দেন, এটা মহিলা সিট..এই কথা বলার সাথে সাথে লোকটা বলে উঠলো ‘আপনারা উঠেন কেন পাবলিক বাসে? সিএনজিতে যান। সমান অধিকার না চান? তাইলে সমান সমান কাজ করেন..মহিলা হিসেবে প্রতিবন্ধী সাজবার কি আছে? আপনাদের জায়গা আলাদা লাগবে কেন..’ আমি ভদ্রলোকের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম..”

    আরেক বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত ত্রিশোর্ধ্ব নারী জানান “যা হবার তাইই হইছে, মহিলাদের সিটে পুরুষরা বইসা থাকে, সিট ছাড়তে বললে ছাড়ে না উল্টা আক্রমণ করে। আমি একবার মহিলা সিট পুরুষরে ছাড়তে বলছি বইলা ড্রাইভার আমারে শোনায় এই ঝামেলা নামেন। আরেকদিন আরেক পুরুষ যাত্রী শোনায় বেশী স্মার্টনেস দেখাইয়েন না..আমার আম্মু তো একদিন দেখছে যে বাসের হেলপার পুরুষ যাত্রীদের হাতে মাইর খাইছে সিট ছাড়তে বলছে আর..”।

    একই ধারাবাহিকতায় কর্মজীবি নারী গার্মেন্টসের সুপারভাইজার শিমু জানাচ্ছিলেন “অফিস তো কাঁচপুরে। ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাসে করে কল্যাণপুর থেকে যাইতে হয়। একদিন মহিলা সিটে একজন মহিলাকে বসাবার জন্য ঝগড়া করছিলাম, বলছিলাম বসতে দেন। পুরা বাস আমাদের সাথে ঝগড়া লাগায়ে দিলো। কথা উঠতে উঠতে এমন হইলো যে মহিলারা যে কতো খারাপ, আমি যে কতো নীচু..মাগি পর্যন্ত কথাবার্তা চইলা গেলো...আমি ঝগড়া বেশী করছি তাই আমি যে স্টপে নামতাম বাসের ড্রাইভার বাস টান দিয়া সে স্টপেজ ছাড়ায়ে গিয়া সামনের কাউন্টারে আমারে নামতে বাধ্য করলো। আমি প্রায় ২০ মিনিট পথ হাঁইটা অফিসে আসলাম। আর নামবার সময় আমারে হেলপার এমন ভাবে পিঠে- পেছনে হাত দিয়া নামাইলো যে আমি টাল সামলাইতে না পাইরা প্রায় হুড়মুড় করে পড়লাম সামনের সিএনজির সাথে প্রায় ধাক্কা খাওনের মতো হইলো”।

    পাবলিক বাসের সংরক্ষিত আসন নিয়ে শ্রেণীভেদে একাধিক নারীর তিক্ত অভিজ্ঞতা মাঝেমধ্যে এমন প্রবল হয়ে উঠে যে অনেক সময় মধ্যবিত্ত কর্মজীবি নারীদের অনেকে পাবলিক বাস ছেড়ে অটোরিকশায় চড়তে বাধ্য হোন এবং এর মধ্য দিয়ে কর্মজীবি নারীর বেতনের একটা বড়ো অংশ কেবল যানবাহনের খরচেই চলে যায়। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত আফশান জানান “এই জঘন্য তিক্ত ঝগড়াঝাটি, ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাস না পাওয়ার কারণে আমি বাধ্য হয়ে সিএনজিতে চড়ি, দেখা যায় পাবলিক বাসে যাতায়াত করলে আমার যা খরচ হতো সিএনজিতে যাতায়াত করায় তার দ্বিগুণ আড়াইগুণ এমনকি কোন কোন মাসে তিনগুণও খরচ হয়ে যায়”। পাশাপাশি নিম্নবিত্তের কর্মজীবি নারীরা পাবলিক বাস ব্যবহারের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা এড়াতে গিয়ে বাড়তি শারীরিক- মানসিক পরিশ্রম করতে বাধ্য হন এবং আরো নানান নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এই প্রসঙ্গে গার্মেন্টসকর্মী দুয়ারী পাড়ার সীমা জানান “যতো কিছুই বলুক আমারে তো বাসে উঠতেই হইবো..আমার তো টাকা নাই যে আমি ঠাস কইরা রিকশায় গেলাম গা। আমারে প্রতিদিন এইসব কথা শুনতে হয়, এই সব ঘটনা সহ্য করতে হয়। বড়োজোড় মাঝে মধ্যে দেড়ঘন্টা হাইটা অফিসে যাই। হুদাই এই কষ্ট নেওন লাগে। একবার অফিস থেকে আসতেছি মহিলা সিট নাই দেইখা বাস আমারে নিলো না..কাজী পাড়ার ফল পট্টির কাছাকাছি আসতেই ছিনতাই হইয়া আমার সে মাসের টাকা পুরাটা গেলো গা, ঐ পুরা মাস চালাইছি ধারের উপর। সেইটা এখনও শোধ দিতেছি...”।


    পাবলিক পরিবহনে নারীর যৌন হয়রানি এবং নির্যাতনের অভিজ্ঞতা এক্কেবারে খুবই সাধারণ। বাসে উঠা এবং নামবার সময়ে সাহায্যর নামে হেলপারের স্পর্শকাতর স্থানে হাত বুলিয়ে দেয়া, পাশে বসে থাকা পুরুষ যাত্রীদের গা ঘেঁষে বসা, গায়ে হাত দেয়া, ঘুমের ভান করে নারীর শরীরে পড়া, দাঁড়িয়ে থাকলে পেছন সামনে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দেয়া, সিটে বসারত নারীর শরীরে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষের নিজের স্পর্শকাতর অঙ্গ লাগানো, মোবাইলে নারীর অনুমতি ছাড়া গোপনে নারীর এবং তার শরীরের আপত্তিকর স্থানের ছবি তোলা, হেলপার পেছনে হাত দিয়ে বাসে উঠালে চীৎকার করে ধমক দিলে নামবার সময় সেই বিশেষ নারীর জন্য কোন একটা নাজুক পরিস্থিতি তৈরী করা যেমন নামবার সময় হঠাৎ বাস টান দেয়া বা পরের স্টপেজে থামানো, সন্ধ্যার টিকেট বা লোকাল বাসে বাতি নেভানো থাকায় নানান কিসিমের যৌন হয়রানির শিকার হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি এমন নানাবিধ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে পাবলিক পরিবহনে নারীকে যাতায়াত করতে হয়।

    রুচি নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলছিলেন “আমার নিজের বাসে দাঁড়ায়ে যাইতে কোন শরীরি সমস্যা নাই। সমস্যা হচ্ছে পুরুষের আচরণে। তারা যে কোন নারীকেই ধরতে পারবে বলে ভাবে। আমাদের জিনিসপত্র ভাবে। ভাবে বলে আপনি লোকালে উঠেন আর কাউন্টারে দাঁড়ায়ে থাকেন আপনার খালি নিজেকে একটা শরীর ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না”। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্নীর ছাত্রী বলছিলেন “নবীনগর থেকে এসে সাভারে বাস ধরতে হয়। মেডিকেলের কাজ শেষ হইতে হইতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আমার সাথে খুবই খারাপ ঘটনা ঘটছিলো...বাসে এমন ভীড়, উঠছি এসি বাসে। বাসের মধ্যে বাতি নাই। আমরা ৫/৬ জন একসাথে উঠছি। চাপাচাপিতে আমি এক সাইডে দাঁড়াইছি..হঠাৎ একটা হাত আমার শরীরে এমন কাজ করলো আমি পাথর হয়ে গেলাম। আমি ধাক্কা দিছি..ঠাপাশ করে ঐ হাত আমার গালে চড় মাইরা দিছে...এখন অন্ধকারে হাউকাউ শুরু হইছে, যতোই আমারে বন্ধুরা জিগায় কে এইটা করলো আমি তো অন্ধকারে শয়তানটাকে চিনি না..কার কথা বলবো?” বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তামান্না জানান “বাসে উঠছেন, বসছেন। এমনভাবে পাশের লোকগুলো আপনার গায়ে লেগে বসবে আমার বরও আমার সাথে এমনে বসে না। হাত এমনভাবে রাখবে যেন আপনার শরীরে লাগে..একবার ধমক দিতে আমার পাশে বসা ভদ্রলোক খেঁকিয়ে বলে ‘আমার বাসায় আপনার চেয়ে সুন্দরী বউ আছে’..আমি ধমকাবো কি আশপাশের অন্য লোকরা হেসেই খুন!” আরেক মধ্যবয়স্ক সরকারী চাকুরে নারী জানান “আমি প্রতিদিন মিরপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে অফিস করি। হাত দিয়ে ছুঁইতে না পারলে চোখ দিয়ে দেখে। সেটাও না পারলে জবান দিয়ে করে..মহিলারা এতো সাজগোজ করে বাসে উঠে কেন, ভীড় বাসে উঠে কেন, কেন লোকালে উঠে, শরীরের বিভিন্ন নাজুক বিষয় নিয়ে মন্তব্য শুনতেই হয়..যদি বাসে সিট খালি থাকে আর আপনি মহিলা সিটে বসতে না চেয়ে অন্য সিটে বসতে চান তাহলে হেলপার পর্যন্ত আপনার দিকে এমনভাবে তাকাবে যে আপনি অপরাধ করছেন। আমি অনেক লম্বা জার্নি করি, পুরুষের সমান একই ভাড়া দেই। তারপরেও নিজে একটু নিজের মতো করে বসবো সে অপশনও বাসগুলো রাখতে চায় না”।

    এই নানান প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়েও যে নারী কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছেন দেখা যায় বাড়ি ফিরবার সময় বিশেষভাবে বিকেল থেকে সন্ধ্যাবেলা এমনকি রাতেও তাকে নানান অনিরাপদ অভিজ্ঞতার সামনে পড়তে হয়। লোকাল, কাউন্টার বা ডাইরেক্ট বাসগুলো অফিস ভাঙ্গার সময় ভীড়ের পাবলিক বাসে নারীদের নিতে চায় না কারণ মহিলা সিট নাই। সেসময় আমি দেখেছি আশপাশের কোন কোন পুরুষ বলতে থাকেন আমার সাথে চলেন, কিংবা প্রাইভেট কারগুলো থেমে বলে যাবেন নাকি? হয়তো শুধু চালকের আসনে কেউ বসে আছে। এই অভিজ্ঞতাগুলো শ্রেণীভেদে প্রায় সকল পাবলিক পরিবহন ব্যবহারকারী নারীর জন্য সাধারণভাবে ভীতিজনক। অফিসের এ্যাটেন্ডস সীমা বলছিলো “অফিসের সব কাজ শেষ করতে করতে আমার সন্ধ্যা ৭টা বেজে যায়। সেসময় মতিঝিল অফিস পাড়া সুনশানই হয়ে যায়, বাসে উঠতে পারি না নেয় না। এদিকে সেসময় চারপাশে এমন কিছু পুরুষ মানুষ দেখতে পাই যাদের দেখলে খালি ভয় লাগে..খালি মনে হয় পারলে এক্ষুণি কোথাও টান দিয়ে নিয়ে যাবে। আর বাড়ি ফেরার জন্য চিন্তা হইতে থাকে। বাড়িতে গেলেও এতোক্ষণ লাগলো কেন সেটা জিগায়। সব কাজ তো আমারেই গিয়া করতে হয়। কেন এতো দেরী অফিসেও এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় বাড়িতেও। সবাই জানে কেন কি হইসে কিন্তু তারপরেও আমাদেরকেই জবাব দিতে হয়। কিন্তু এজন্য কোন ব্যবস্থা কেউ করে না..”

    পাবলিক বাসে চড়তে গিয়ে মহিলা সিট নিয়ে দাবি দাওয়া তুললে কিংবা নারী যদি তার হয়রানি নিয়ে ধমকাধমকি করে তবে তাকে বিভিন্ন নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। অনেকক্ষেত্রে নারীদের কাছে এই নেতিবাচক অভিজ্ঞতা এক্কেবারে জান হারানোর হুমকি বলে মনে হয়। এই প্রসঙ্গে এক নারী সাংবাদিক জানান “আমি তো ডেইলি শেকড় পরিবহনে যাই। চিড়িয়াখানা রুটের বাসগুলো আমাকে চিনে। আমি ভীড়ে ধাক্কা দিলে চিল্লাপাল্লা করি, মহিলা সিটে বসতে চাই..আমি উঠলে রুটের বাসগুলা বলে “ঝামেলা” উঠছে। মানে হইতেছে আমি আনফিট। এই দেশে অপরাধ যে করে সে খুবই ফিট!” কলেজের শিক্ষিকা নুসরাত বলেন “আপনি যখনই ঝগড়া করবেন দেখবেন বেশিরভাগ ছেলেই এক হয়ে যায়..কিন্তু মেয়েরা হয় না। আমার আগে অনেক রাগ হতো। মনে হয়তো মেয়েরাও খারাপ। খারাপ দেখে আমি যখন মহিলা সিটে বসবার জন্য কোন লোকের সাথে ঝগড়া করি তখন আমার পক্ষে কোন মেয়ে কথা বলে না। আপনি যখনই সিট নিয়ে, ঠিকমতো দাঁড়াইতে বলবেন পাশের পুরুষ যাত্রীকে তখনই আপনার সাথে ঝগড়া লেগে যাবে..আর ঝগড়া লাগলেই আপনাকে দুনিয়ার কথা শুনতে হবে.. আপনি ঝগড়া করছেন, আপনাকে বাস ভরা ছেলেরা নানান মন্তব্য করবে, ড্রাইভার নামবার সময় হঠাৎ টান দিয়ে দিতে পারে. মানে আপনাকে শায়েস্তা করলো। এখন আমি নিজে বুঝি কেন পাবলিক বাসে মেয়েরা অন্য একটা মেয়ে ঝগড়া করলে এগিয়ে আসে না। কে আসবে জানটা হাতে নিয়ে?” প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরীরত ২৬ বছরের মিতু আরও বলছিলেন “আমি পাবলিক রিলেশন অফিসার। কিন্তু এমন একটা দিন নাই যে শংকর থেকে গুলশান যাওয়ার পথে আমার মেজাজ খিচড়ে যায় না এবং আমার কাজে এটার প্রভাব পড়ে না। মহিলা সিট নিয়ে খটরমটর, বসবেন পেছন থেকে আঙুল দিয়ে গুঁতা দিবে..আমার লম্বা চুল ধরে টান দিলো, নামবার সময় হেলপার একটা বিশ্রী রকমের হাত দিলো এই ঘটনা হতেই থাকে। যেদিন না হয় সেদিন খালি ভয়ে থাকি কখন হবে..আমার তো মনে হয় পাবলিক বাসে চলতে চলতে আমি হাইপারটেনশনের রোগী হয়ে যাবো..”।
    পাবলিক পরিবহণে চলাচল করতে গিয়ে কর্মজীবি নারী নানান ধরনের যৌনহয়রানির সম্মুখীন হয় (কেবল কর্মজীবি নারীই যৌন হয়রানির সম্মুখীন হয় সেটা কিন্তু বলছি না)। কখনো সরাসরি শরীরিভাবে, কখনো আচরণে, কখনো ভাষায়, কখনো আশংকায়. অনিরাপত্তাবোধে। এমনকি যখন কোন নারী তার হয়রানির বিরুদ্ধে কথা বলেন বা বলতে চান তখনও তিনি আবার নানান ধরনের হয়রানি, তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। পাবলিক বাসগুলোতে এতো ব্যাপকহারে নারীর যৌন হয়রানির সম্মুখীন হওয়াটা আমাদের সমাজে পাবলিক পরিবেশে নারী যে কেবলই যৌনবস্তু হিসেবে স্বীকৃত (অধিকাংশ প্রেক্ষিতে) এবং যৌনবস্তু হিসেবে নারী যে আসলে ঠিক বস্তুর সমান মর্যাদাবান এই প্রবণতাই প্রকাশ পেতে থাকে। পাবলিক পরিবহন পরিসরে নারী যে সমাজের একজন সদস্য হিসেবে, মানুষ হিসেবে অপর সামাজিক সদস্য পুরুষের সমান মর্যাদা এবং সম্মানের জায়গা অর্জন করে নাই বা করতে পারে নাই সেটা বারবারই এই প্রবণতার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত এবং পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।

    এই নারীবিদ্বেষী অভিজ্ঞতাগুলো দেখলে আমার মাথায় কেবল একটি প্রশ্নই ঘুরতে থাকে। আমার মনে প্রশ্ন জাগে এই যে পাবলিক বাসগুলো ভীড়ভাট্টায় নারীকে মহিলা সিট না থাকলে বাসে নিতে চায় না এর কারণ কী কী হতে পারে? একটা কারণ কি এটা হতে পারে যে ধরেই নেয়া হয় পাবলিক পরিসরে সুযোগ দেখা মাত্রই পুরুষ নারীকে যৌন হয়রানি করবে বা পুরুষ নারীকে যৌন হয়রানি করবার সামর্থ্য রাখে এবং এই প্রবণতা পুরুষের জন্য খুব সহজাতভাবে স্বাভাবিক, আর এটা এড়াতে বাসগুলো নারীকে নিতে চায় না? ফলে যখন পাবলিক বাসগুলো নারীকে সংরক্ষিত আসন খালি না থাকলে বাসে নিতে চায় না তখন কি পুরুষের এই অপরাধপ্রবণতার সামাজিক ভাবনাগুলোই জায়েজ হয়ে যাচ্ছে না?

    এই “আমজনতার” পুরুষালী ধারণা কী নীরব থেকে, নারীকে এড়িয়ে গিয়ে যাত্রী হিসেবে বাসে না উঠিয়ে পুরুষালী স্পেসে নারীর হয়রানির সম্ভাবণাকে পরোক্ষ- প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন জানাচ্ছেন না? বিষয়টা কি এমন নয় যে, যে নারী ভীড়ে পাবলিক বাসে উঠছে সে জানে এটা পুরুষের জায়গা, পুরুষের পাবলিক জায়গা, ফলে সেই নারী যখন নিজে বাসে উঠছেন তখন তাকে পুরুষালী ধাক্কা খেতেই হতে পারে বা সে খাবেই? ফলে কর্মজীবি নারী যখন ভিড়ের বাসে উঠছেন তখন কি তাকে একভাবে যৌন হয়রানির সম্ভাবণা ও আশংকাকে মেনে নিতে বাধ্য হতে হয় না? আর যদি নারী মেনে না নিয়ে নিজের অধিকারের কথা বলে তাহলে কি তিনি “ঝামেলা” হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পাবলিক পরিসরে অনুপযুক্ত হয়ে উঠছেন না? তারমানে কী আমাদের এই পুরুষালী সমাজ “অপরাধ” তথা “পুরুষালী” অপরাধকে মেনে নিয়ে নীরব থাকাকেই নারীর জন্য পাবলিক হয়ে উঠার প্রথম কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরে নেয়? মোদ্দাকথা তাহলে কী সমাজ নারীকে তার উপর আসা অপরাধকে মেনে নিয়ে নীরব থাকতে বাধ্য করছে না?

    যদি বিভিন্ন শ্রেণীর প্রায় সকল কর্মজীবি নারীর জন্য এই যৌন হয়রানির মধ্য দিয়ে যাওয়া এতো সাধারণ, সর্বজনবিদিত ঘটনা হয়ে থাকে আর এই বিষয়- ঘটনাকে যদি কর্মজীবি নারী মেনে নিতে বাধ্যই হয়ে থাকেন তাহলে নারী কী কোন কালেই আসলে এই শহরের জনতা কিংবা পাবলিক হয়ে উঠতে পেরেছেন? কখনো কি এই রাষ্ট্র নারীর পাবলিক কাজের জায়গা এবং সম্পর্কের নিরাপত্তা- নিশ্চয়তা নিশ্চিত করবার জন্য প্রয়োজনীয় মনমানসিকতা, সংস্কৃতি, কাঠামো, পদক্ষেপ এবং ব্যবস্থা প্রস্তুত করতে পেরেছে? যদি না পেরে থাকে তাহলে কি এই নারীবিদ্বেষী পাবলিক পরিসর রাষ্ট্রীয় নারী উন্নয়ন তথা সার্বিক মানব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করবার পেছনে শক্তিশালী কারণ হিসেবে কাজ করছে না?


    ঢাকা শহরের পাবলিক পরিবহন ব্যবহারে নারীর নাজুকতা বিবিধ রকম। সেটা তার শরীর থেকে মানসিক, তার অস্থিরতা থেকে তার টেনশানের, তার নানাবিধ অনিরাপত্তার মধ্যে আমরা সুস্পষ্টই দেখতে পাই এবং এই তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো কেবল নারী বলেই কর্মজীবি নারীকে পোহাতে হয়। আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি হয়তে দেখে থাকতে পারি অনেক পাবলিক বাসগুলো যখন অফিস টাইমে থামে তখন সেগুলো চলতে চলতে থামতে থাকে। আমাদের সমাজে চলন্ত বাস থেকে কর্মজীবি নারীর পক্ষে তার পোশাক আশাক বলেন আর তার মনোশরীরি অনভ্যস্ততার কারণেই বলেন পুরুষের মতো চট করে লাফিয়ে উঠা আদতে অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। আমার এক কর্মজীবি নারী বন্ধু জানাচ্ছিলেন “আমি খুব সহজেই বাস থেকে লাফিয়ে নামতে পারি বা উঠতেও পারি। মজার কথা হলো নামবার বা উঠবার সময়ে আমাকে প্রায় টিটকারী শুনতে হয় এক্কেরে বেটা!”।

    ফলে কাঠামোগতভাবে আমাদের এই সমাজের পাবলিক ক্ষেত্র আসলে পুরুষালী ধারণায় তৈরী হয় এবং পুরুষালী ভাবনাচিন্তা এজেন্ট হিসেবে এই কাঠামোতে পুুরুষের ক্ষমতাকেই জন্মগতভাবে সুনিশ্চিত করতে চায়। সেটা পুরুষালী জ্ঞানে নারী কম বুঝে এমন কথা বলবার মধ্য দিয়েই হোক [বাম পা আগে দেন নাইলে পলটি খাবেন], নারীর সব সিট চাই [সব সিটই আপনাদের জন্য নাকি] এমন লোভাতুর চেহারা বানানোর মাধ্যমেই হোক, নারী পাবলিক বাসের জন্য একটা ঝামেলা বারবার এটা ঘোষণা করেই হোক কিংবা কে আসলে কখন যথার্থ নারী [ঠাসঠুস নাইমা পড়েন দেখি] সেসব বিচারের ভার একমাত্র পুরুষের হাতে দিয়েই হোক বারবারই পুরুষের ক্ষমতাবান চেহারা সুনিশ্চিত হয়। আর এই ক্ষমতাবান পুরুষ পাবলিক পরিসরে যেকোন ভাবে উপযুক্ত যেমন সে চলন্ত বাস থেকে লাফ দিয়ে নামতে পারে, পুরুষের নারীর মতো শরীরি ছোঁয়াচ বাতিক নেই (কিন্তু সামাজিক ভাবনা এটা বেমালুম অদৃশ্য করে ফেলে যে নারীর শরীরের পবিত্রতার ধারণা সামাজিকভাবে তৈরী হয়। নারীকে শরীরিভাবে হয়রানির ক্ষমতা প্রায় সকল ক্ষেত্রে পুরুষের এবং হয়রানির দায়ভারও নারীকে নিতে হয় কারণ তিনি তার শরীরের পবিত্রতা নিজে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন নাই), পুরুষ ভীড়ের বাসে বাড়তি ঝামেলা করে না এবং পুরুষালী ভাবনা মনে করে যিনি পুরুষ তিনি অপেক্ষাকৃত “অগ্রসর অবস্থানে আছেন” এবং তিনিই নারীকে “দুর্বল” জেনে জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন আর নারীই হলেন তিনি যিনি প্রদেয় সম্মানের জায়গাটা রাখছেন না, সব সিটই সুবিধাবাদীর মতো চাইছেন।

    পাবলিক পরিবহনে নারীর জন্য এই বিশেষ আসন বরাদ্দ করা আইনীভাবে একটি ইতিবাচক কর্মকান্ড। বাংলাদশের সংবিধানের ২৮ (৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যেকোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান- প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না”। ফলে কাঠামোগতভাবে সমাজের যে যে গোষ্ঠী নানাবিধ অসমতার সম্মুখীন তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ইতিবাচক পরিবেশ দেয়া রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দ্বায়িত্বের মধ্যে পড়ে। উপরন্ত আন্তর্জাতিক সিডোও কনভেনশান লিঙ্গীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে সমাজের যেকোন রকমের বৈষম্যকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই কনভেনশান আর্থরাজনৈতিক সামাজিক এবং নাগরিক সেবা খাতসহ রাষ্ট্রীয় খাতে নারীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণকে প্রতিরোধ করতে চায় এবং রাষ্ট্রের আইনী ও নীতিগত অবকাঠামোতে নারীর “মানবিক” বিকাশের পথ যাতে সুপ্রশস্ত হয় তার জন্য ইতিবাচক পরিবেশ তৈরীর কথা ঘোষণা দেয়।

    এই আন্তজার্তিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ রাষ্ট্র যখন সিডোও এবং অন্যান্য আন্তজার্তিক কনভেশান যেমন জাতিসং সনদে স্বাক্ষর করছেন এবং সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদের (১) এ যখন বলছেন “...আন্তজার্তিক আইনের ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা- এই সকল নীতি হইবে রাষ্ট্রের আন্তজার্তিক সম্পর্কের ভিত্তি” তখন স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ রাষ্ট্র আসলে সাংবিধানিকাভাবে নারীর জন্য সমাধিকার প্রতিষ্ঠার সকল পদক্ষেপ নিতে বাধ্য। এবং এই পদেক্ষপ নেয়া আর বাস্তবায়নের সাথে বিশেষ কোন সরকারের ক্ষমতায় থাকা বা না থাকা, রাজনৈতিক দল কিংবা আমজনতার সমর্থন থাকা বা না থাকার যৌক্তিক যোগাযোগ থাকতে পারে না। রাষ্ট্র কেবল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেবার ক্ষমতা রাখেন এবং রাষ্ট্রের সকল নাগরিক “নাগরিক” হিসেবে এই আইন মেনে চলতে বাধ্য।

    এখন প্রশ্ন থাকতে পারে রাষ্ট্র কেন মনে করে যে পাবলিক পরিসর নারীর জন্য অনুকূল নয় বা কেন নারীর জন্য বিশেষভাবে বিশেষ সুবিধা দিতে হবে? এর কারণ আমাদের অনেকেরই জানা। আমি মনে করি, পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শের সমাজ হিসেবে আমাদের দেশে জন্মগতভাবে পুরুষ লিঙ্গীয় পরিচয়ের মানুষজন কিছু বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন। সেটা যেমন অনেকেক্ষেত্রে পরিবারের খাবার টেবিলে বড়ো মাছের টুকরো দেওয়া তেমনি শ্রমবিভাজন বলেন কিংবা পাবলিক পরিসরে নারী পুরুষ ভেদে নিরাপত্তা, মবিলিটির ভিন্নতার কথাই ধরি না কেন। এই সামাজিক বাস্তবতায় রাষ্ট্র যখন পাবলিক পরিবহন পরিসরে নারীর জন্য আসন সংরক্ষিত করছে তখন রাষ্ট্র সামাজিকভাবে পুরুষের আজন্ম (শ্রেণীভেদে কম বেশী হতে পারে) প্রাপ্ত সুবিধার সাপেক্ষে নারীকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা দিচ্ছে। যাতে করে সামাজিক বাস্তবতায় লিঙ্গীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নারী ও পুরুষের মাঝে বিদ্যমান অসমতার সীমানাগুলো ন্যুনতম হয়ে উঠার পরিবেশ পায়। কোনভাবেই এই সংরক্ষণ পুরুষের সাপেক্ষে নারীকে বেশী দিয়ে দেয়া নয়।

    এই নারী বিদ্বেষী সামাজিক বাস্তবতায় আমাদের শাসনযন্ত্র স্বয়ং সাংবিধানিকভাবে নারীর “মানবিক” বিকাশের পথ সুপ্রশস্ত করবার লক্ষ্যে এই বিদ্বেষী পরিবেশের বিপরীতে নারীর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিকে আবশ্যক মনে করে। পাবলিক পরিবহনে নারীর সংরক্ষিত সিট রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে নারীর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে গৃহীত একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। রাষ্ট্রের এই প্রাথমিক পদক্ষেপের মানে আবার কখনই এই নয় যে সংরক্ষিত আসন বাদে অন্য সিটগুলোতে পুরুষের সমান অধিকার নারীর নাই কিংবা ক্ষমতাবান পুরুষালী ভাবনাই নারীকে উঁচু প্রদেয় জায়গা থেকে সিট বরাদ্দ দিচ্ছে, নারী অধিকারবলে সংরক্ষিত সিট পায় নাই। বরং মনে রাখা জরুরী যে, রাষ্ট্র সিভিল সোসাইটি হিসেবে সকল নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত করবার বাধ্যবাধকতা থেকেই সামাজিক কাঠামোতে সুবিধাবঞ্চিত নাগরিক নারীর জন্য অধিকার সংরক্ষণের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে পাবলিক পরিবহনে সিট সংরক্ষিত করবে। সোজাকথায় নারীর জন্য পাবলিক বাসের সংরক্ষিত আসন তার নিজের নাগরিক হিসেবে প্রাপ্ত অধিকার।


    আমি মনে করি, পাবলিক বাসে নারীর সংরক্ষিত আসন এবং একে ঘিরে নারীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হয় তার অন্যতম মুল কারণ আমাদের সমাজের পুরুষালী ভাবনা, পুরুষালী চৈতন্য যেখানে নারীর উৎপাদন এবং পুনুরুৎপাদন উভয় শ্রমই পুরুষালী ক্ষমতাবানের অধীনে থাকে। পুরুষালী ভাবনা ধরেই নেয় এই পাবলিক জগত তার, এই পাবলিক জগতের ক্ষমতাবান এজেন্ট হলো পুরুষ। পুরুষের শ্রমেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা সচল থাকে। এবং সামাজিকভাবে পুরুষ মানেই পাবলিক, নাগরিক আর নাগরিক অধিকার মূলত কেবল পুরুষ লিঙ্গের নাগরিকের জন্যই প্রদত্ত। কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমবাজারে নারীরা যে অন্যতম চালিকা শক্তি, বিশেষভাবে আমাদের গার্মেন্টসকর্মীদের যে বিশাল শ্রম বাংলাদেশের আর্থব্যবস্থাকে সচল রাখে তার অধিকাংশই যে নারীর শ্রম পুরুষালী ভাবনা কখনই এই বাস্তবতা চোখে দেখতে চায় না, দেখলেও স্বীকৃতি দিতে চায় না। বরং পুরুষালী ভাবনা নারীকে কাঠামোগতভাবে অনুপযুক্ত চিহ্নিত করে নারীর শ্রমকে অদৃশ্য করতে চায়। আরো বড়ো পরিসরে নারীর শ্রমকে “অযথার্থ” করতে চায়।

    নারীকে অনুপযুক্ত ভাবতে চায় বলে এই পুরুষালী চৈতন্য নারীকে কেবল কিছু নির্দিষ্ট সিট এর মধ্যে বেঁধে রাখতে আগ্রহী হয়। পুরুষালী ভাবনা এটা প্রতিষ্ঠা করতে চায় পুরুষই নারীকে “নাজুক হিসেবে” সিট দিচ্ছে, পুরুষ হচ্ছে প্রদানকারী (হিউম্যান রিসোর্স সেক্টরে কর্মরত এক নারী আমাকে বলছিলেন “আমি এক লোককে মহিলা সিট থেকে উঠে যেতে বলায় কথা কাটাকাটি শুরু হলো। পাশের এক ভদ্রলোক আমাকে বলছিলেন ঝগড়া কেন করেন, সুন্দর করে চাইলেই তো আপনাকে দেয়! আমি বললাম মানে? ভদ্রলোক মিষ্টি করে বললেন “আরে আমরাই তো সিট দিলাম”..এটা হলো আমাদের বাস্তবতা!”)। নারীর জন্য পাবলিক বাস যে অধিকারের বিষয়, সমানে সমানে অধিকারের জায়গা, নারী যে পুরুষের সমান সক্ষম এটা এই পুরুষালী সামাজিক ভাবনা কিছুতেই স্বীকার করতে চায় না। তাই পুরুষালী ভাবনা পাবলিক পরিবহনে তার পুরুষালী হর্তাকর্তা যেমন চালক, হেলপার, পুরুষ যাত্রী ইত্যাদি নানান জনের মাধ্যমে আসলে নারীর জায়গাকে, তার পরিসরকে, তার স্পেসকে এমনকি তার সক্ষমতাকে নির্দিষ্ট গন্ডিতে বদ্ধ করবার জন্য কাজ করে যায়। মোদ্দাকথা হলো পুরুষালী ভাবনা বলপূর্বক নারীকে কেবলই ঐ বিশিষ্ট ৯ আসনে আবদ্ধ করতে চায় যাতে বিনিয়োগ এবং শ্রম বাজারে নারীর শ্রম পুরুষালী শ্রমের সমান মর্যাদা না পায়। নারীর শ্রম যাতে বিশেষ বিবেচনার বিষয় হিসেবে নাজুক হয়ে উঠে এবং পুরুষালী ক্ষমতার আয়ত্তের মধ্যে থাকে সেটাই আসলে এই বাস্তবতা নিশ্চিত করে। প্রতি মুহুর্তে নারী বিদ্বেষী মনোভাব আর সংস্কৃতি তার ভাষায়, কথায়, আচরণে, ব্যবস্থায় এর স্বপক্ষে ইন্ধন জোগাতে থাকে।

    এই রকম প্রতিকূল বাস্তবতায় পাবলিক বাস ছেড়ে নারী বিকল্প পদ্ধতিতে রিকশা নিবে সে ব্যবস্থাও এই রাষ্ট্র রাখেনি। রাখেনি বলে বড়ো বড়ো রাস্তায় ভিআইপি রোডগুলোতে রিকশা বন্ধ করে দিয়েছে। যদি রিকশা বন্ধ বলে নারী হাঁটতে চায় তাহলে তার জন্য কিন্তু নিরাপদ ফুটপাত রাখা হয়নি। ঢাকা শহরের ফুটপাতে হাজারো সদাইয়ের পসরা থাকে, হুটহাট ফুটপাতে হুন্ডার আনাগোনা দেখা যায়, চলতে ফিরতে ইচ্ছাকৃত ধাক্কা, পুরুষালী নানান মন্তব্য, নানান ধরনের যৌন হয়রানির সম্ভাবণা কিংবা প্রতারণার ঝুঁকি ইত্যাদি বিবিধ রকমের নাজুকতা নারীকে ফুটপাত দিয়ে চলতে গেলে সামাল দিতে হয়।

    ঢাকা শহরের অনেক কর্মজীবি নারীর মতো আমার পাবলিক পরিবহনে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা বারবারই আমাকে মনে করিয়ে দেয় পাবলিকলিও আমি, আমরা কেবলই একটা “শরীর”। আমাদের চাকুরী, মর্যাদা, যোগ্যতা, দক্ষতা, আমাদের শ্রম, আমাদের অবদান কোনটাই আসলে পুরুষালি এই জনতার কাতারে সামিল হতে পারে নাই। একারণে আমাদের ঘর থেকে বাহির, আমাদের পরিবার থেকে রাষ্ট্র, আমাদের কর্ম থেকে সম্পর্ক সব স্থানের ব্যবস্থাই আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়, অনুভব করাতে থাকে আমি আসলে মহিলা কেবলই মহিলা, কেবলই ৯ সিটের মহিলা। আমি আসলে সব সিটের পাবলিক নই।
  • hu | 12.133.***.*** | ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ১৯:১১635986
  • আমার মনে হয় সংরক্ষণের সপক্ষে দাবী ও একই সাথে অসংরক্ষিত সিটের অধিকার চাওয়া সেলফ কন্ট্রাডিকটরি। তার চেয়ে শুধুমাত্র শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ চাইলে হয় না?
  • | ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ২০:২৫635987
  • হ্যাঁ আমিও শিশু, বৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে অক্ষম কারো জন্যই সংরক্ষণের দাবী সমর্থন করি।

    কিন্তু যে সব জায়গায় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অপ্রতুল আর প্রচন্ড ভীড়, সর্বোপরি লোকজনের খাবলানোর অভ্যেস মজ্জাগত, সেখানে বোধহয় পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। এই লেখাটার ফোকাস একটু ঘেঁটে গেছে ঐ অসংরক্ষিত সীটে বসতে চাওয়ায়। কিন্তু আমি দিলাম ঐ গার্মেন্ট কর্মী ইত্যাদির বয়ান পড়েই।

    মানে আমার বাস্তবতা আর ঢাকার এক গার্মেন্ট কর্মীর বাস্তবতা বোধহয় একটু আলাদা।
  • সে | 188.83.***.*** | ১৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:৫৭635988
  • আমরা যারা পাবলিক বাসে চলাফেরা করি না, আমাদের পক্ষে এই কষ্ট বোঝা সম্ভব নয়।
  • | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:২৯635989
  • আজ আরেকটা ভাল গল্প পেলাম।
    ঢাকা থেকে এক বন্ধু জানিয়েছেন । অনুমতি নিয়ে তুলে রাখলাম এখানে।

    **********************************************

    বেশ কয়েকদিন হলো আমাকে ফোন করে একটা ছেলে নানা ধরনের আজাইরা কথাবার্তা বলছে। আপনি কই থাকেন, আপনার সাথে কীভাবে দেখা করতে পারবো, আপনি কী আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে অমুক আপুর ফোন নাম্বার দিতে পারবেন, হাবিজাবি নানান কিছু। তাকে বেশ কয়েকবার বলেছি, আমাকে বার বার ফোন না দিতে, আমাদের সাথে কাজ করতে চাইলে ওয়েবসাইটের ফর্ম ফিলআপ করে পাঠায় দিলে হবে, ইত্যাদি। যতটুকু সম্ভব মাথা ঠাণ্ডা রেখে তার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। ফোন না ধরলে অন্য নাম্বার থেকে ফোন দেয়, টেক্সট করে বলে, "আপনারা তো *****। মিডিয়ার পাত্তা পেয়ে গেলে আমাদের আর পাত্তা দেন না। আমাদের উপরই তো খেয়েপড়ে টিকে আছেন। আমিও তো তরুণ, আপনাকে আমার সাথে কথা বলতেই হবে।"

    কয়েক মাস আগে আমার এক বড় ভাই এরকম ফাউ আলাপকারীদের কীভাবে সামলানো যেতে পারে, তা নিয়ে মজা করতে করতে নানা কৌশলের কথা বলছিলেন। মূল মন্ত্র খুব সহজ। কেউ যদি অতিরিক্ত যন্ত্রণা দেয়, তাদের মেজাজ অনুযায়ী পাল্টা যন্ত্রণা দিলে কেমন হয়! ঝাড়ি দিলে মোটেও তাদের স্বভাব বদলাবে না, শুধুমাত্র নাম্বার পাল্টাবে।

    সেই কৌশল ধরে ছেলেটার সবগুলো মোবাইল নাম্বার আ৪ কাগজে প্রিন্ট দিলাম। উপরে একটা কপি লিখে ফটোকপি করলাম। তারপর নীলক্ষেতে গিয়ে ১০০ টাকা খরচ করে প্রিন্টিং-পোস্টারওয়ালাদের এই বিজ্ঞপ্তি ঢাকা শহরের লোকাল বাসের পেছনে আর চিপা-চুপা গলির দেয়ালে সেঁটে দিতে বললাম। বিজ্ঞপ্তিটা এরকমঃ

    "বাসায় গিয়ে ইংরেজি ভাষায় রেওয়াজ করা শিখাই।
    ৮ বছরের কম বয়সী শিশু ও মহিলাদের জন্য বিশেষ মূল্যহ্রাস!
    আজই যোগাযোগ করুনঃ মালেকা - ০১**********, ০১***********"

    বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রথম দিন পর্যন্ত ছেলেটা ফোন দিত। হুট করে ফোন দেওয়া বন্ধ। আমার পরিচিত একজনকে বলেছি ফোন করে জিজ্ঞাসা করতে, বাড্ডায় এসে শিখাবে কিনা? ইংরেজি ভালভাবে না পারলে কী রেওয়াজ করা যাবে?" সে ফোন দিতেই ছেলেটি হুংকার দিয়ে বললো, "কী ফাইজলামি পাইছেন! আমার গলা শুনে কী মনে হয় আমি মালেকা?! আমার নাম্বার কেমনে পাইছেন? আপনারা কারা? সারাদিন ফোন করে কী সব ***** গান করতে চান। আমি কিন্তু পুলিশে খবর দিব! সবাইকে জেলে ভরে রাখবো।"

    শেষ খবর যা শুনেছি, তার সব মোবাইল নাম্বার বন্ধ। আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা ঠিক তার মত ছেলেদের কল রিসিভ করতে করতে সে অতিষ্ট হয়ে নাম্বার পাল্টায়ে ফেলছে। আশা করি মালেকাদের জীবন কীরকম হয়, তা নিয়ে একটা ভাল জ্ঞান হয়েছে।

    মঈন, তুমি যেখানেই থাকো না কেন, ভাল থেকো।
  • :) | 127.194.***.*** | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১৩635976
  • হাই মঈন।
  • potke | 126.202.***.*** | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:২১635977
  • দ, আপনি বলেছিলেন আপনার জীবনের কিছু ঘটনা লিখবেন।
  • | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:৪৬635978
  • অ্যাঁ! কবে? কী জাতীয় ঘটনা?
  • potke | 126.202.***.*** | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:৪৭635979
  • ঐ যে টেকনো নিয়ে।
  • | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:৫৬635980
  • ওহোহো। সে তো বাকরিজীবন। ভা-পা সেঃ পাঃ ।
    লিখব, ঠিক লিখে ফেলবো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন