এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • বিতর্ক-১

    ranjan roy
    বইপত্তর | ৩০ নভেম্বর ২০১৩ | ১১৫৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 132.168.***.*** | ৩০ নভেম্বর ২০১৩ ২১:৩৪626423
  • তর্কবিতর্ক: প্রমাণ ও ভ্রান্তি
    আমাদের প্রজন্ম কিছু আপ্তবাক্য শুনে বড় হয়েছে, যেমন: বিশ্বাসে মিলয়ে কূষ্ণ, তর্কে বহুদূর। অনেক সময় বকুনি খেয়েছে :ছেলেটা বড্ড এঁচোড়ে পাকা, কেবল মুখে মুখে তক্ক করে!ছেলেবেলায় খেলতে গিয়ে ছড়া শুনেছে: কী ব্যাঙ? কোলাব্যাঙ,
    কী কোলা? বৈদ্যকোলা।
    কী বৈদ্য? রাধাবৈদ্য,
    কী রাধা? কেষ্টরাধা।
    কী কেষ্ট? রাধাকেষ্ট,
    কী রাধা? চুপ কর্, বেশি বকবক করবি না!
    সবাই হেসে ওঠে। কিন্তু একটু বড় হতেই জানতে পারি যে এমন বকুনি অনেকেই খেয়েছেন।
    আমাদের দেশে বকুনির ট্র্যাডিশন আছে, সেই উপনিষদের যুগ থেকেই। জনকসভায় ব্রহ্মের স্বরূপ নিয়ে চাপানউতোরের সময় গার্গীর কী ও কেন শুনতে শুনতে একসময় তিতিবিরক্ত যাজ্ঞবল্ক্য বলে ওঠেন: আর অধিক প্রশ্ন কর না গার্গী, তোমার মাথা খসে পড়বে!
    মিশনের স্কুলে পড়তে গিয়ে জানলাম ঠাকুর বলেছেন: আম খেতে এসেছ, আম খা্ও, কী গাছ, কটা পাতা, জেনে কী হবে? উনি ভক্তদেরও বলেছেন বেশি বিচার না করতে।
    কিন্তু মন মানে না যে!প্রশ্ন ওঠে, প্রশ্ন অগণন।অসংখ্য কী ও কেন।তার কত রকমফের।বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। শুধু চাঁদটা কেন বাড়ে কমে, জোয়ার কেন আসে নয়, কুমড়ো নিয়ে ক্রিকেট খেলে কেন রাজার পিসি নয়, আরও এমন সব প্রশ্ন যে মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রেহাই।
    : বাবা, সেক্সি মানে কী?
    : আচ্ছা, বাবা ও মায়ের বুক দেখতে আলাদা কেন?
    : মেথরপট্টির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলতে মানা কেন?
    : বিয়ে হলে মাথায় সিঁদুর দেয় কেন?
    এবার প্রথাগত ভাবে দুই ধমকে চুপ করিয়ে দিই।
    কিন্তু অমর্ত্য সেন যে বলেছেন তর্কপ্রিয় ভারতবংশীয়্, তার কী হবে?
    আমাদের নাকি একটি সমান্তরাল পরম্পরা ছিল তর্কবিতর্ককে উৎসাহিত করার, কোন নিশ্চিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগে পক্ষ ও বিপক্ষের বিতর্কের মধ্য দিয়ে অন্তিম নিষ্কর্ষে পৌঁছানোর। কেমন যেন প্রাচীন গ্রীসের ডিসকোর্স বা ডায়লেকটিসের কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে।
    আর এই ট্র্যাডিশন থেকে গ্রীসের হাত ধরে ইউরোপ পেল এরিসস্ততলীয় তর্কপদ্ধতি বা লজিক। আমরাও পেলাম ভারতীয় তর্কশাস্ত্র যার আদিগ্রন্থ হল গৌতমের ন্যায়সূত্র, যা সম্ভবত: দ্বিতীয় শতাব্দীর।কিন্তু এর জড় আরও প্রাচীন। প্রথম খ্রিষ্টাব্দের আগে সংকলিত চিকিৎসাশাস্ত্রের আদি মহাগ্রন্থ চরকসংহিতা বেশ পষ্ট করে দেখাচ্ছে কীভাবে বাদপ্রতিবাদ বিচারবিতর্কের মাধ্যমে তাত্ত্বিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রগতি হয়।
    জ্ঞান কাকে বলে?
    আমরা হরদম বলি–– বেশি জ্ঞান দেবেন না তো!
    অর্থাৎ জ্ঞানের কমবেশি হয়। শুধু্ তাই নয়, ভারতীয় তর্কশাস্ত্র বলছে সত্যজ্ঞান–মিথ্যাজ্ঞানও হয়। সে কি কথা!
    হ্যাঁ, এই দেখুন না–– রজ্জুতে সর্পভ্রম। প্রথমে জ্ঞান হল এটা সর্প। পরে প্রমাণ হল যে ওতে সাপের লক্ষণ নেই, দড়ির লক্ষণ আছে, তাহলে ওটা দড়ি, সাপ নয়। এবার তাহলে প্রথম জ্ঞানটিকে বলা হবে মিথ্যাজ্ঞান, আর পরেরটি সত্যজ্ঞান।দুটো কে আলাদা করল কে? কেন, ‘প্রমাণ’।
    আমাদের আজকের আলোচনা এই ‘প্রমাণ’ নিয়েই।ভারতের সমস্ত দার্শনিক বিচারধারা এই একটা বিষয়ে সহমত যে প্রমাণ ছাড়া কোন কিছু স্বীকার্য নয়। (‘মানাধীনা মেয়সিদ্ধি:’, অর্থাৎ কোন বস্তুর অস্তিত্ব ‘প্রমাণ’ এর অধীন।)সাংখ্যদর্শন তো বিখ্যাত ‘ঈশ্বরাসিদ্ধে:’ শ্লোকে খোদ ঈশ্বরকেই প্রমাণ দ্বারা সিদ্ধ নয় এই যুক্তিতে বাতিলের দলে ফেলেছে।
    কিন্তু প্রমাণ জিনিসটা কী, খায় না মাথায় দেয় বা ‘প্রমাণ’ কতরকম–– এ নিয়ে সমস্ত দার্শনিক স্কুলগুলো আদৌ ঐক্যমত নয়।চার্বাকপন্থীরা ‘প্রত্যক্ষ’ ছাড়া কোন কিছুকেই ‘প্রমাণ’ বলে মানতে নারাজ। বাকি সবাই ‘অনুমান’(ইংরেজি ইনফারেন্স) কে ‘প্রমাণ’ বলে স্বীকার করেন।তবে ‘অনুমান’ এর প্রকারভেদ নিয়ে বিশাল সাহিত্য রয়েছে। নৈয়ায়িকরা এনিয়ে কয়েকশতাব্দী ধরে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিচারে মগ্ন ছিলেন।(‘পাত্রাধার কি তৈল কিংবা তৈলাধার কি পাত্র’)! আর এর পুরোভাগে বঙ্গের নবদ্বীপ!
    এই স্বল্প পরিসরে এবং স্বল্প সাধ্যে ওসব এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।খালি এইটুকু বলব যে ভারতীয় দর্শনের সমস্ত সূত্রগ্রন্থ শুরুই হয় তাঁদের হিসেবে কোনটা ‘প্রমাণ’ আর কোনটা নয়– এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা দিয়ে।
    আমরা নিজেদের সীমিত রাখব শুধু ‘প্রমাণ’ নিয়ে; না–না, শুধু ভারতীয় তর্কপদ্ধতির ‘প্রমাণ’ এর ন্যায়দর্শন প্রতিপাদিত পঞ্চাবয়ব বা পাঁচলাইনের কাঠামো নিয়ে আলোচনায়।কারণ, নিজেদের মধ্যে তর্ক করতে সবাই মোটামুটি এই কাঠামোটি মেনে চলে।
    প্রমা থেকে প্রমাণ। ‘প্রমা’ হল প্রমাণিত জ্ঞান। আর ‘প্রমাণ’ হল প্রমার মূল ভিত্তি।এ হল প্রমার করণ বা নিমিত্ত কারণ (এফিশিয়েন্ট কজ)। করণ বা নিমিত্ত কারণ মানে এমন বিশিষ্ট সক্রিয় কারণ যার ক্রিয়ার ফলে এক বিশিষ্ট ফলপ্রাপ্তি হয়। যেমন, কুড়ুল দিয়ে কাঠে আঘাত করলে কাঠ লম্বালম্বি চিরে যায়।তেমনি প্রমাণের সক্রিয়তায় প্রমা বা সত্যজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়।
    না:; শাব্দিক কূটকচালি পুরোপুরি এড়ানো যাচ্ছে না।আমরা শুরুতে পাঁচটি প্রমাণ নিয়ে সংক্ষেপে কথা বলে তবে কাঠামো নিয়ে কথা বলতে পারব। এরা হল প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান,শব্দ, ও অর্থাপত্তি।
    ১) প্রত্যক্ষ:
    সব দর্শন এ নিয়ে ঐক্যমত যে জ্ঞানপ্রক্রিয়া শুরুই হয় বস্তুর সঙ্গে পাঁচ জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সম্পর্ক বা ‘প্রত্যক্ষ’ থেকে। আর প্রত্যক্ষলবদ্ধ জ্ঞানের মাঝে কোন মিডলম্যান নেই। যেমন রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে পিঠে কিল পড়লে সেটা বোঝার জন্যে কোন পন্ডিত ডাকতে হয় না।তাই প্রত্যক্ষকে সবাই বলেছেন ‘প্রমাণ–জ্যেষ্ঠ’।
    ২) অনুমান:
    জ্ঞানপ্রণালী নিয়ে কূটকচালি সবচেয়ে বেশি হয়েছে এই ‘অনুমান’কে নিয়ে তা’ আগেই বলেছি।অনু আর মান এই দুই শব্দ নিয়ে তৈরি অনুমানের অর্থ হল পরবর্তী জ্ঞান, অর্থাৎ ইংরেজিতে ‘আ পস্টেরিয়রি নলেজ’।তাহলে এর আগে কোন বিশিষ্ট জ্ঞান রয়েছে যাকে ভিত্তি করে নতুন বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো হচ্ছে।
    জানা থেকে অজানায় যাওয়া।যেমন, পর্বতে ধোঁয়া দেখতে পেয়ে ওখানে আগুনের অস্তিত্বের অনুমান করলাম।এতে তিনটে ‘পদ’(টার্ম) রয়েছে।
    প্রথম পদ– পর্বত, যাকে প্রত্যক্ষ দেখছি। একে বলে ‘পক্ষ’।নির্বিবাদ।
    দ্বিতীয় পদ– আগুন, পর্বতে যার অস্তিত্ব নিয়ে(আছে কি নেই)আমরা বিচার করছি।একে বলে ‘সাধ্য’।এ হল প্রমাণসাধ্য, একেই তো প্রমাণ করতে হবে।
    তূতীয় পদ– ধোঁয়া, এমন চিহ্ন যার থেকে আগুন বা সাধ্যের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হবে। একে বলে ‘লিংগ’ বা ‘হেতু’।কেননা এ হল আগুনের অস্তিত্বের চিহ্ন বা কারণ।
    খেয়াল করুন, এখানে অনুমান করতে হলে সাধ্য ও লিংগের অঙ্গাঙ্গীসম্বন্ধ, অর্থাৎ আগুন–না–থাকলে–ধোঁয়া– বেরোয়–না গোছের পূর্বজ্ঞান থাকা অবশ্য দরকার। ভারতীয় তর্কশাস্ত্রে এর গুরুত্ব নিয়ে পরে আলোচনায় আসছি।
    ৩)উপমান:
    বাংলা ব্যাকরণের সুবাদে আমরা সবাই উপমা–উপমান–উপমেয় শব্দত্রয়ীর সঙ্গে পরিচিত।অধিকাংশ দার্শনিক প্রণালী একে আলাদা কোন প্রমাণ বলে মানতে চায় না। সাংখ্য একে প্রত্যক্ষের অংশ, আর বৈশেষিক একে অনুমানের অঙ্গ মনে করে।মীমাংসা ও ন্যায় দর্শন একে মানে বটে , কিন্তু আলাদা আলাদা অর্থে।
    ৪)শব্দ:
    নৈয়ায়িকরা একে বলেন আপ্তবাক্য, কোন অথরিটির কথা যা নিয়ে কোন কথা হবে না, একেবারে ধ্রুবসত্য। যেমন, বেদে আছে বা গুরুদেব বলেছেন বা মার্ক্স বলেছেন।বৌদ্ধ ও বৈশেষিক একে স্বতন্ত্র কোন প্রমাণ বলে স্বীকার করেন না।কিন্তু মীমাংসা ও ন্যায় দর্শন একে মানে এবং কেন মানা উচিত সে’ নিয়ে আলাদা আলাদা যুক্তি দেয়।
    ন্যায়দর্শনের মতে বেদ ঈশ্বরবাক্য বলে সত্য এবং মান্য। কিন্তু মীমাংসাদর্শনের মতে বেদ কোন ঈশ্বরবাক্য নয়; এতে যা যা বিধান দেওয়া আছে তা’ সত্যি বলেই বেদ অথরিটি।যখন পুত্র্যেষ্টি যজ্ঞ করলে পু্ত্রলাভ হবে বলা আছে, তখন ঠিকমত নিয়ম মেনে মন্ত্রোচ্চারণ করে ওই যজ্ঞটি করলে ছেলে হবেই–– তাই বেদকে মানতে হবে।
    ৫)অর্থাপত্তি:
    এর মানে হল কোন প্রত্যক্ষ তথ্যের ব্যাখ্যা করতে কোন অপ্রত্যক্ষ তথ্যের সাহায্য নেওয়া।
    যেমন, আমরা জানি যে দেবদত্ত শুধু দিনের বেলায় আহার করেন(প্রত্যক্ষ,সাধন); কিন্তু উনি গায়ে–গতরে বেশ আছেন,(প্রত্যক্ষ)। তাহলে?(উপপাদ্য)। একটাই ব্যাখ্যা–– ঢপ দিচ্ছেন, নিঘ্ঘাৎ রাত্তিরে লুকিয়ে লুকিয়ে খান,(অপ্রত্যক্ষ এবং উপপাদক বা পরিণাম)।
    শুধু মীমাংসকরাই অর্থাপত্তিকে স্বতন্ত্র প্রমাণ ভাবেন। অন্যদের মতে এটি অনুমানের অঙ্গ।
    কিন্তু আজকের ভারতে আম জনতা হরদম এই অর্থাপত্তি প্রমাণের ব্যবহার করে থাকে। উদাহরণ, কোন রাজনৈতিক নেতার দুটো ইলেকশনের সময় ঘোষিত আয়ে যখন বিরাট ফারাক দেখা যায় অথচ নির্দিষ্ট ভাতা ছাড়া কোন আয়ের উৎস জানা যায় না, তখন পাবলিক কী ভাবে?সঠিক উত্তরের জন্যে কোন প্রাইজ নেই।
    এবার ধানভানায় আসি, অবশ্যি এতক্ষণ যা হল সবটাই শিবের গীত বলে মানতে মন চাইছে না।কী করে লজিক্যাল ইনফারেন্স বা যুক্তিসংগত অনুমানের ভিত্তিতে পরিণাম বা সত্যজ্ঞানে পৌঁছনো যায়? পর্বতে ধূম দেখে বহ্নির অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার ক্লাক্সিক্যাল উদাহরণটি নিয়েই কথা বলি।
    পাহাড়ের কাছে যেতে যেতে ধোঁয়া উঠতে দেখলাম। জানা আছে যে আগুন আর ধোঁয়া একসাথে থাকে। নিশ্চিত হলাম যে ওই পাহাড় থেকেই ধোঁয়া উঠছে। পরিণামে এই নির্ণয়ে পৌঁছলাম যে পাহাড়টায় আগুন আছে।
    এবার স্টেপগুলো দেখা যাক।
    ১) ‘হেতু’ বা ‘লিংগ’কে ধোঁয়া) প্রত্যক্ষ করলাম। ২) ‘হেতু’ (ধোঁয়া) ও ‘সাধ্য’র (আগুন) সম্পর্কের নিয়মটি মনে পড়ল। একে বলে ‘ব্যাপ্তি’ বা কো–এগজিস্টেন্স।৩)ভাল করে বুঝে নিলাম যে ‘হেতু’(ধোঁয়া) ‘পক্ষ’তে (পর্বতে) বিদ্যমান রয়েছে।৪) এবার অনুমানের ভিত্তিতে জ্ঞান প্রাপ্ত হল যে ‘সাধ্য’(আগুন) পর্বত বা ‘পক্ষ’তে রয়েছে।
    এবারে আসি এই তর্কপ্রক্রিয়ার ‘অবয়ব’ বা লজিক্যাল সিলজিসমে।
    পাশ্চাত্য তর্কশাস্ত্রের এরিস্টটলীয় অবরোহী ন্যায় বা ডিডাক্টিভ লজিকের সিলজিসম বা অবয়বটি ত্রিপদী।
    যেমন, সব মানুষ একদিন মরবে,(পূর্বজ্ঞান)।
    হরিদাসবাবু একজন মানুষ,(প্রত্যক্ষ)।
    কাজেই উনিও একদিন মরবেন,(অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত)।
    কিন্তু ভারতীয় ন্যায়দর্শনের অবয়বটি পঞ্চপদী।
    যেমন, ১) পাহাড়টিতে আগুন আছে,–– একে বলে ‘প্রতিজ্ঞা’ বা আরম্ভবাক্য, অর্থাৎ যা প্রমাণ করতে হবে।
    ২) কারণ, এতে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে,––একে বলে ‘হেতুবাক্য’, যাতে হেতু বা লিঙ্গের উল্লেখ থাকে।
    ৩)যেখানে ধোঁয়া সেখানে আগুন,যেমন রান্নাঘরে;–‘উদাহরণ’,যাতে লিঙ্গ ও সাধ্যের সহঅস্তিত্বের কথা।
    ৪) পাহাড়টিতেও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে,–– একে বলে ‘উপনয়’, ‘পক্ষ’তে ‘চিহ্নে’র উপস্থিতির কথা বলা।
    ৫)অতএব, পাহাড়টিতে আগুন আছে,––‘নিগমন’ বা অন্তিম নির্ণয়।
    এখন তিন নম্বর স্টেপ বা উদাহরণটি খেয়াল করুন। লিঙ্গ ও সাধ্যের অঙ্গাঙ্গীসম্পর্কে কোন ব্যতিক্রম বা এক্সেপশন থাকা চলবে না। নইলে শেষ পদ ‘নিগমন’ খারিজ। কাজেই ভারতীয় পদ্ধতিতে প্রতিপক্ষ যদি পূর্বপক্ষের উদাহরণে বাস্তব জীবন থেকে কোন ব্যতিক্রম দেখাতে পারেন তাহলেই জিতে যাবেন।পূর্বপক্ষের উদাহরণ ‘অব্যাপ্য’ দোষে দুষ্ট হবে।অর্থাৎ, যদি আমি দেখাতে পারি যে আগুন না থাকলেও ধোঁয়া উঠতে পারে –যেমন বরফের চাঙড় থেকে বা শীতকালে লোকের শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে– তাহলে লিঙ্গ ও সাধ্যের সম্বন্ধটি ইউনিভার্সাল হল না। কাজেই, ধোঁয়া দেখলেই যে পাহাড়ে আগুন আছে তা আর নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না।
    এদিকে এরিস্টটলীয় অবরোহী ন্যায়ে যদি প্রথম পদটি(ইনিশিয়াল প্রেমিস)ভুল হয় তাহলে কিন্তু ত্রিপদীয় অবয়বে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেল তার সত্যাসত্য বিচার তক্ষুণি সম্ভব নয়, ভবিষ্যতে বাস্তবে প্রয়োগের পরেই কিছু বলা যাবে।
    কিন্তু ন্যায়দর্শনের অবয়বে ‘ব্যতিক্রম রহিত’ উদাহরণকে এত মর্যাদা দেওয়ায় ভুলটা আগে ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
    ( ঋণস্বীকার: শ্রদ্ধেয় অধ্যাপকত্রয়ী––– সুরেন্দ্র্নাথ দাশগুপ্ত, দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এবং মূণালকান্তি গঙ্গোপাধ্যায়)।
  • siki | 132.177.***.*** | ৩০ নভেম্বর ২০১৩ ২১:৪৪626424
  • বেশ জমেছে। বসলাম।
  • সিকি | ০১ ডিসেম্বর ২০১৩ ১২:৫১626425
  • ছাড়াটা ছোটবেলায় আমরা অন্যভাবে জানতাম।

    - কচু খা
    - কী কচু?
    - মানকচু
    - কী মান?
    - বর্ধমান
    - কী বর্ধ?
    - রাধাবর্ধ
    - কী রাধা?
    - কেষ্টরাধা
    - কী কেষ্ট?
    ধিনিকেষ্ট
    - কী ধিনি?
    - তাক্‌ধিনি
    - কী তাক্‌?
    - চুপ করে থাক্‌।

    তবে মন্দ হচ্ছে না। চলুক।
  • Ranjan Roy | ০১ ডিসেম্বর ২০১৩ ২১:৩১626426
  • সিকি,
    ঃ))))))
  • Shibir | 113.16.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ০১:১১626427
  • রঞ্জন- দারুন বিষয় । অবরোহ যুক্তিতে ফর্মাল ভ্যালিডেশন টা জরুরি । আপনি যে সিলজিসম এর উদাহরনটা দিলে সেটাতো AAA বা যতদুর মনে পরে BARBARA FORM ।
    অবরোহ নিয়ে যখন লিখলেন তখন আরোহ যুক্তি নিয়েও কিছু লিখুন। লজিক এর খুব বিখ্যাত রবীন্দ্রনাথ আর রামছাগলের উদাহরণটা দিতে ভুলবেননা।:-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন