এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রাণা আলম | 111.218.***.*** | ০৫ জুলাই ২০১৩ ২২:৫৭618649
  • পাঁচ ইয়ারি কথা

    কাইজার বরাবরই দার্শনিক গোছের।এঁচোড়ে পাকার বয়সে আমরা যখন গার্লস কলেজ ফেরতা ললনাদের ভাইটাল স্ট্যাটস এর তুলনামূলক বিচার করতাম রবীন্দ্রসদনের সামনে সমরদার চায়ের দোকানে বসে,কাইজার তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে উড়ন্ত কাক দেখে কান্ট-এর কথা ভাবতো।সকালে ইংরেজি খবরের কাগজে সিনেমার পেজে আমরা হামলে পড়তাম,কাইজার তখন মন দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া’র পরিবর্তনের কারণে ডুবে থাকতো।এহেন কাইজার যখন প্রেমে পড়লো,তখন আমরা সাংঘাতিক অবাক হয়ে গেছিলাম।খোঁজ নিয়ে জানা গেল অনার্সের ক্লাসে শেকসপীয়ারের সনেট পড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় নীল সালোয়ার পরা যে শ্যামাঙ্গী’র সাথে কাইজারের হাল্কা ধাক্কা লেগেছিল,কাইজার গৌতম ঘোষ মার্কা আধো অস্ফূটে ‘সওরি’ বলার পর যে আয়তাক্ষী হাসির রেখা ফুটিয়ে চলে গিয়েছিল,সেই হচ্ছে কাইজারের ‘ডার্ক লেডি’।
    আমাদের চাপে পড়ে কাইজার মেয়েটিকে একটা প্রেমপত্র লিখলো।দুদিন পরে উত্তর এলো,কেস রিফিউজড।কাইজার ক্যান্টিনে বসে স্মিত হেসে বললো “আমি জানতাম এটাই হবে”।
    “জানতিস মানে?”,আমাদের তেরিয়া জিজ্ঞাসা।
    “দ্যাখ,শুধু চোখে চোখে দেখা হলেই তো হবেনা।মনের একটা সংযোগও গড়ে ওঠা দরকার।তার জন্য পরস্পরকে আরও গভীর ভাবে জানতে হবে,বুঝতে হবে।তাতে যে নিবিড় সান্নিধ্য সংযোগ তৈরী হবে,তখন মনের-
    “ব্যাস...বুঝে গেছি।তুই শাল্লা একটা চল্লিশ বছরের পোস্ট ডক্টরেট করা মেয়ে খোঁজ যে তোর ওই নিবিড় টিবিড় বুঝতে পারবে”,তন্ময় ওরফে তনা খেঁকিয়ে উঠলো।
    দিনকয়েক পর,গাছতলায় আড্ডা দিচ্ছি।তনা পকেট থেকে একতা ভাঁজ করা পাতা বের করল।
    “কিরে এটা?”
    “কাইজারের প্রপোজ লেটার।মেয়েটার কাছ থেকে যোগাড় করেছি।পড়ে শোনাচ্ছি”
    আমরা সাগ্রহে গুছিয়ে বসলাম।এখানে সবটা দিচ্ছিনা।কয়েকটা লাইন তুলে দিচ্ছি।
    “প্রিয় ******,
    আমি প্রথমেই বলে দিই তোমার চেহারা দেখে আমি আকর্ষিত হইনি।তোমার চেহারা আমার মন টানেনি,টেনেছে তোমার সুশীতল সৌকর্য।***************আমি তোমাকে পছন্দ করি এর মানে এই নয় যে আমাকেও তুমি পছন্দ করবে।আর করবেই বা কেন?রিক্ত বেদনার্ত হৃদয় ছাড়া আর কিছুই সম্বল নেই আমার********”
    “শাল্লা”,তনা খেঁকিয়ে উঠলো, “এটা প্রপোজ লেটার না ফিলোজফির থার্ড পেপারের অ্যানসার?”
    কাইজার আমতা আমতা করে কিছু একটা সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করলো।আমাদের সম্মিলিত গালাগালে।কাইজার কে যারা চেনেন তারা জানেন কাইজারের পক্ষেই এধরণের কাজ করা সম্ভব।
    এর বছর সাতেক পর,কাইজারের বিয়ে ঠিক হল,আমরা তখন যেচে পরামর্শ দিতে লাগলাম।তাত্বিক অম্লান নিজের খান দুয়েক ব্যর্থ প্লেটোনিক প্রেমের অভিজ্ঞতা থেকে কাইজার কে বললো
    “সব মেয়েই নিজের রূপের প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে।তুই নিজের বউ কে বলবি সেই কোনকালে মাধুরী দীক্ষিতকে দেখেছিলাম,তারপর তুমি,মধ্যিখানে সেরেফ সাহারা”
    অনভিজ্ঞ কাইজার বাধ্য ছাত্রের মত কথা শুনলো।প্রাতিষ্ঠানিক বিয়ের আগে কাইজার আর সেই মেয়েটির কিছুদিন কথাবার্তা হয়েছিল ফোনে এবং সরাসরি।বিয়ের আগে ব্যাচেলর্স পার্টিতে কাইজার অম্লান কে বললো
    “তুই আর তোর থিওরি,দুটোই সমান ব্যাকডেটেড”
    “ক্যানোরে?”,অম্লান জিজ্ঞেস করলো।
    “তোর কথামত ওই মাধুরি দীক্ষিত মার্কা বাটার সেনটেন্স টা একদিন মওকা পেয়ে ঝেড়েদিলাম।ওর চোখের দিকে চেয়ে বললাম সেই কোনকালে মাধুরী দীক্ষিতকে দেখেছিলাম,তারপর তুমি,মধ্যিখানে সেরেফ সাহারা”
    “ক্যানো,কাজ হলনা?”,আমাদের সমবেত জিজ্ঞাসা।
    “নারে,ও বললো,তা সেই সাহারা’তে তুমি ডেভিড লিভিংস্টোন হয়ে কি করছিলে?”

    তন্ময়ের কথা বলছিলাম।তন্ময় ছাত্রনেতা।রণংদেহী।রোগা শরীরে বাঘের তেজ।অন্তত মুখে।তন্ময় প্রায়শঃই প্রেমে পড়তো আর ঘা খাওয়ার পর প্রতিজ্ঞা করতো যে এটাই লাস্ট।এনিওয়ে,মানুষের স্মৃতি খুব দুর্বল।তাই সুন্দরী কন্যা দেখলেই তন্ময় নিজের প্রতিজ্ঞা ভুলে যেত।আমরাও মনে করানোর চেষ্টা করতাম না।তা একটি অতীব সুন্দরীর একতরফা প্রেমে তন্ময় পড়লো।টোটোন হিসেব নিকেশে খুব পাকা।আঙ্গুল গুণে বললো এটার মেয়াদ খুব বেশী হলে দিন সাতেক।তারপর জানা গেল আরেকটি ছেলে যেকিনা আকারে বেশ লম্বা চওড়া,মেয়েটির প্রতি আকর্ষিত হয়েছে এবং আন অফিসিয়াল প্রস্তাবও পাঠিয়েছে।তন্ময় খবর পাওয়া মাত্র ক্ষেপে লাল।উত্তেজিত হয়ে আমার সামনেই একটা রুমাল ছিঁড়ে ফেললো।বললো, “ব্যাটাকে সামনে পেলে দুহাতে ছিঁড়ে ফেলবো”।
    যদিও তন্ময়ের চেহারা দেখে কোনোদিনই মনে হয়নি যে সিলভেস্টার স্ট্যালোন ওর রক্তের সম্পর্কে কেউ হয়।তাও লোকের চেহারা দেখে যে ভিলেন বা হিরো আন্দাজ করতে নেই সে ধারণা তদ্দিনে আমাদের সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমা দেখে হয়ে গেছিল।একদিন রাস্তায় সেই ছেলেটির সাথে দেখা। আমার ইশারাতে টোটোন তন্ময় কে ডাকতে গেল।আমি এমনি কথা বলে ছেলেটিকে আটকে রেখেছিলাম।তন্ময় খানিক পর এলো।আমি আশা করছিলাম ভুমিকম্প,অগ্ন্যুতপাত বা কিছুটা হবে।আর কিছুনা হোক,সুনীল শেট্টি মার্কা একটা সিন হবে।
    তন্ময় এলো।মাসলওয়ালা ছেলেটিকে দেখলো।তারপর একটা দেঁতো হাসি হেসে বললো,
    “ইয়ে দাদা,ভালো আছো তো?”

    কাইজারের বাসরঘরের গল্প দিয়ে শেষ করি।কদিন আগে কাইজারের সাথে দেখা।আমরা তো হামলে পড়লাম বিয়ের রাতের ঘটনা জানতে।কাইজার আমাদের চাপাচাপিতে সলজ্জ হাসি হেসে বললো, “কিছু ঘটেনিরে...একদম নিরামিষ”
    তন্ময় চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো “নিরামিষ মানে?????শাল্লা আঠাশ বছরের উপোসী লোক সাজানো খাবারের প্লেট পেলে ছেড়ে দেয় নাকি?”
    আমি বললাম “কিচ্ছু হয়নি???মানে নিদেন পক্ষে একটা নিরীহ চুমুও না?”
    কাইজার মাথা নেড়ে বললো “নারে ভাই।সেরকম কিচ্ছু ঘটেনি”
    অম্লান জিজ্ঞেস করলো “এই যে তুই কিছুই করিস নি,তাতে মেয়েটা তোকে নর্মাল ভাববে তো?”
    টোটোন জিজ্ঞেস করলো “আচ্ছা,কিছুই কি মুখে বলোনি?”
    কাইজার উত্তর দিল , “না,বেশ রাত হয়ে গেছিল তো শুতে।আমি বললাম আমার রাত জাগলে সকালে পেট পরিষ্কারে অসুবিধে হয়।আমি শুয়ে পড়লাম।তোমার ইচ্ছে হলে শুয়ে পড়তে পারো বা ইচ্ছে হলে জেগে থাকতে পারো”।
    শেষখবর,কাইজার হানিমুনে দীঘা বেড়াতে গেছে।কিন্তু সেখানে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে গেছে এমনটা কোনো খবর নেই।

    (সায়ন্তিকা’র মন খারাপ।লেখাটা ওর জন্যই থাকলো)
  • siki | 132.177.***.*** | ০৬ জুলাই ২০১৩ ০০:২৪618650
  • :)
  • ranjan roy | 24.99.***.*** | ০৬ জুলাই ২০১৩ ১৪:৪৮618651
  • একেবারে ডার্বি!!!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন