এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সোনালি ডানার চিল

    Ishani
    অন্যান্য | ১৮ মে ২০১৩ | ১০৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ishani | 125.242.***.*** | ১৮ মে ২০১৩ ০৭:১১603840
  • সোনালি ডানার চিল
    ................................

    জীবন এখন থমকে আছে লাশকাটা ঘরে .
    রবির আলোয় যখন আমার মুগ্ধ দু'টি চোখ প্রায় ধাঁধিয়ে গিয়ে অন্ধ , তখন আমার নগ্ন নির্জন একাকী কিশোরী হাতে হাত রেখেছিলেন এক মায়াবী পুরুষ. এবং আমি ভেসে গিয়েছিলাম . থাকতাম তিন কামরার আস্তানায় . জানালা দিয়ে দেখা যেত এক চিলতে সবুজ মাঠ , দোলনা, একফালি রোদ্দুর আর বৃষ্টিদিনে ইলেকট্রিকের তারে বসে ডানায় জল মাখা শালিখ পাখি . আমি জানালার গ্রিলে মুখটি চেপে চোখ ছড়িয়ে দিতাম অনেক দূরে, যেখানে হিজলের জানালায় আলো আর বুলবুলি এক সাথে খেলা করে বেড়ায় . মনে আছে, রোজ বায়না করতাম ভাতের চাল আমি ধুয়ে দেব বলে, কারণ কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত .. আমার চাই. শহরে থাকি, কিশোরের চোখে প্রেম দেখতে শিখেছি সদ্য...দেখিনি পায়ে দলা মুথাঘাস . বাজারে ফলের রঙবাহার, আমি খুঁজতাম লাল লাল বটের ফল.. ছুঁয়ে থাকতাম ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা.
    আকাশে তারা উঠত. একটি, দুটি..সাতটি কি ? অগুন্তি. আমার গুনতি থেমে যেত ওই সাতের পর .
    আয়নার সামনে দাঁড়াই . একা, গোপনে. ববচুলে তন্নতন্ন করে খুঁজি বিদিশার নিশা. বোঁচা নাক নিয়ে কী যে হীনমন্যতা আমার.. অনেক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গ্রেস নম্বর দিয়েও শ্রাবস্তীর কারুকাজ দেখতে পাই না. ঘরের আলো নিভিয়ে দিই... নিজেকে দেখি অন্ধকারে. আমার ঘরে পাতা কাজল পরা উচ্ছল কিশোরী চোখ দু'টি এতক্ষণে কি তবে পাখির নীড় হয়ে উঠল ?
    পাখির নীড় ? ক্লান্তির অপনোদনে শেষ ঠিকানা ? আশ্রয় ? এভাবেই কি মানুষ গন্তব্যে পৌঁছয় ?
    সমুদ্রে যাই. ঢেউ গুণি . আর আমার চঞ্চল চোখ খুঁজে বেড়ায় সমুদ্রের পাখি. সিন্ধুসারসকে .
    প্রথম প্রেম. এক নীলচে ধূসর চোখের ছিপছিপে কিশোর. ইংরিজি মাধ্যম . বাংলা কবিতা তার কাছে ল্যাটিন হিব্রু. তাকে ধরে বেঁধে পড়াই কবিতা . বলি, " এমনিভাবে বল..আমি যদি বনহংস হতাম , বনহংসী হতে যদি তুমি ". সে বলে . অবোধ আনন্দে আমি উড়ান দিই ধানসিঁড়ি নদীটির ধারে . অজানা অনামা ঠিকানা . আমার নিজস্ব আস্তানা হয়ে যায়.
    আমার বুকের 'পরে সেই রাতে জমে ওঠে শিশিরের জল. আমি বুঝে যাই কোনো এক মানুষের তরে, যে জিনিস বেঁচে থাকে হৃদয়ের গভীর গহ্বরে .
    আমি কিশোরী থেকে এক লহমায় যৌবনের চৌকাঠে পা রাখি.
    আমার চোখে অন্য রকম আলো. আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল. আমি সন্তর্পণে ধরে রাখি এই জীবনের পদ্মপাতার জল. আমি আলোকিত হয়ে উঠি . অনুভবে বুঝি, তবুও এ জল কোথার থেকে এক নিমেষে এসে ..কোথায় চলে যায় !
    প্রেমিকের চোখে সরাসরি চোখ রেখে উচ্চারণ করি , " বুঝেছি আমি তোমায় ভালোবেসে . রাত ফুরুলে পদ্মের পাতায় ."
    এভাবেই বেশ কিছু দিন . কবিতা রয়ে যায়. প্রেমিক হেঁটে চলে যায় একা একা. অনেক দূরে. আমার প্রথম প্রেম ! আমি ফিসফিসিয়ে বলি, "তবুও তোমাকে ভালোবেসে, মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এসে, বুঝেছি অকূলে জেগে রয়. ঘড়ির সময়ে আর মহাকালে...যেখানেই রাখি এ হৃদয়. "
    অনেক পথ হেঁটেছি আমিও. জীবন এখন লাশকাটা ঘর . বয়সের সর মেখেছে মুখ আর মন. মন দিয়ে সংসার , সন্তান. মাঝে মাঝে বিদ্যুত চমক. আমার প্রেমিকের কিন্তু বয়স থমকে আছে ওই সতেরোয় . আমি তাকে মনের গভীর গোপন অন্ধকারে চুপিচুপি লালন করি. কেটে গেছে অনেক দিন. কুড়ি কুড়ি বছরের পার কি ? মনে মনে আমার পালক আঙুল খেলা করে বেড়ায় তার বাদামী রঙা রেশমী চুলে, গালে, ঠোঁটে, কপালে. হয়ত ধানের ছড়ার পাশে, কার্তিকের মাসে..হাঁসের নীড়ের থেকে খড়, পাখির নীড়ের থেকে খড় উড়ে আসে..লেপটে থাকে আমার একটা দুটো রুপোলী চুলে সাজানো আবছা হয়ে আসা বিদিশার নিশায় . জীবন গিয়েছে চলে কুড়ি কুড়ি বছরের পার . হামাগুড়ি দিয়ে পেঁচা নামে , অশথের জানালার ফাঁকে ভেসে ওঠে ভুলে থাকা ভুলে যাওয়া প্রিয়মুখ. সোনালি সোনালি চিল শিকার করে কবেই তো নিয়ে গেছে তাকে !

    হয়ত প্রভাত শুরু হয়ে গেছে...সভ্যতার
    তবুও রাত্রি ছিল প্রভাতের আগে ...
    অন্ধকারে আমাদের সরলতা বেশি ছিল .

    আমাদের সকলেরই সম্ভাবনা র'য়ে গেছে ... ডান দিকে... বাঁয়ে
    মাথার উপরে মেঘে...পায়ের অনেক নিচে , রসাতলে...
    যখন তরণী ভেসে ডুবে গেছে সমুদ্রের নিচে...

    এখন স্বপ্নে...অদ্ভুত আঁধার এক..

    সহসা তোমার সাথে বহুদিন পরে দেখা হয়ে
    এই সব কথা মনে হয়
    দাঁত মেলে এই সব কথা বলা বিভ্রম . স্বীয় অনুভব.
    মানুষের নখে হাতে রৌদ্রে রাজপথে ঢের ভালো ভাষা বালি হয়ে যায়
    ভোরের গম্ভীর সূর্যে গ্লাসিয়ার
    মাইলের -পর- মাইল স্বত:ই নীরব .
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন