এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আইলো নক্‌শা পিঠাতে চড়িয়া

    সামরান
    অন্যান্য | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ | ১০৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সামরান | 127.194.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৯:৫৪598982
  • আইলো নকশা পিঠাতে চড়িয়া
    ---------------------------------

    -এক-
    ঢাক বাজে ঢোল বাজে আর বাজে সানাই।
    নাইচ গান হয় কত জুড়িয়া আঙ্গিনায়।।
    জয়াদি জুকার গীত হয় ঘরে ঘরে।
    বাড়ি ভরিয়া পাছে লোক আথারে পাথারে।।
    চারি ভইরা ময়রা মিঠাই বানায়।
    হাজারে, বিজারে গোয়াল দই জমায়।।
    সাজাইল পুরীখানি ঝলমল করে।
    এবে দেখ্যা চান্দ যেমন লুকায় অন্ধকারে।।
    ইষ্টকুটুম্ব আইল তার সীমা নাই।
    রাইয়ত বিলাত কত গণাবাছা নাই।।
    গুরু পুরুইত পন্ডিত আইল সকলে।
    নায়রীর বাজার যেমন অন্দরমহলে।।
    (কমলা- মৈমনসিংহ গীতিকা/ দ্বিজ ঈশান)

    ছোটফুপুর বিয়ের তারিখ ঠিক হবে খবর পেয়ে আমরা সব হাজির দেশের বাড়িতে। বিয়ের তারিখ হওয়া মানেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু। কারণ খুব বেশিদিন সময় তো থাকে না হাতে, বড়জোর মাসখানেক, তাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। হয়ত তারিখের পনের দিন পরেই বিয়ে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আত্বীয়-স্বজনদের দাওয়াৎ করা, তাঁরা এলে কে কোথায় থাকবেন সেই থাকার ব্যবস্থা করা। বাজার থেকে কেনা কাঠ বেশির ভাগ সময়েই ভিজে থাকে আর ভেজা কাঠে রান্না করলে ধোঁয়া হয়, রান্নায় ধোঁয়ার গন্ধ হয়ে যায় তাই বিয়েবাড়ির রান্নার জন্যে কাঠ চাই নিজের হাতে করা। এগুলো আমার দাদির ফরমান। বাড়ির গাছ কাটা যাবে না, গাঁয়ে খোঁজ করে গাছ কিনে কাটিয়ে বাড়ি নিয়ে এসে চিরে রান্নার কাঠের বন্দোবস্ত করা, গোটা উঠোনময় সেই কাঠ ছড়িয়ে রেখে শুকানো, মশলা কোটানো, ঘর-বাড়ি ঝাঁড়-পোছ, রান্নাঘর উঠোন লেপা, গোয়ালের দেওয়ালে নতুন মাটি-গোবর লাগিয়ে লেপা-পোছা। সে এক হুলুস্থুল কান্ড। সাথেই চলে হাটবারে হাটে গিয়ে ছাগল আর ডজন ডজন মুরগি কিনে আনা। কাজ কম নাকি? সেই মুরগিরা বাড়ি এলে তাদের পলোর তলায় আটকে রাখা, বারে বারে তাদের খাবার দিয়ে আরেকটু স্বাস্থ্যবান করে তোলা।

    পলো জিনিসটা, বাঁশ থেকে তোলা বেতের তৈরি ঝাঁঝরি ঝাঁঝরি বিশাল গোলাকার একটা স্ট্রাকচার, নিচের দিকটা যার গোল ছড়ানো আর যত উপরের দিকে ওঠে আস্তে আস্তে বেড়ে কম হতে থাকে, আর মুখটা ঠিক একটা বড়সড় কলসির মুখের মতো, ঠিক কলসির মুখের মতই খোলা। নিচে থেকে পলো বোনার কাজ শুরু হয় আর সব বেত মুখের কাছে এসে শেষ হয়, আর সেই বেতের মাথাগুলো মুড়ে মুড়ে একটা ডিজাইন তৈরি হয়। পলো শিল্পিরা এক একজন এক এক রকমের কাজ করেন এই মুখটায়। সেই মুখের ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে আটকে রাখা হাঁস-মুরগি ধরা হয়। পোষ মানানোর জন্যেও এই পলো ছাড়া গতি নেই। দিন কয়েক পলোর ভেতরেই থাকে তারা আর তারপর গেরস্থ যখন মনে করেন এবার তারা বাড়ি চিনে যাবে, পালাবে না তখন ছেড়ে দেওয়া হয়। এই পলোর আবার মাল্টিপারপাস ইউজ আছে। ছোট ছোট ছেলে-পুলেরা মাছ ধরার জন্যেও পলো নিয়ে পালায় বাড়ি থেকে। খাল-বিল বা বর্ষার জলে বা নিদেনপক্ষে পুকুরে একটু কম জলে দাঁড়িয়ে পলো ঝপাস করে জলে ফেলে দেয় তারা, তারপর পলোর মুখ দিয়ে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে মাছ ধরে। খুব ছোট মাছ, যেমন মৌরলা-পুঁটি বা এই ধরনের মাছ ছাড়া একটু বড় মাছ হলেই পলোর ভেতর আটকে যায়। গাছ থেকে টাটকা ডালা-পাতা ভেঙে এনে ছাগলদের খাওয়ানো, উদ্দেশ্য সেই একটাই, তারাও যেন আরও খানিকটা স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠে। তাছাড়া বিয়ের তখনও হয়ত দেরি আছে পনের-কুড়ি দিন, তাদেরও তো খাইয়ে দাইয়ে রাখতে হবে। বাড়ির ছোটরা খেলা টেলা সব ভুলে গিয়ে ছাগলদের নিয়ে মেতে ওঠে, কাঁঠাল গাছের ডাল-পাতা ভেঙে এনে বেঁধে রাখা ছাগলদের খাওয়ায়, কেউ বোধহয় কোনদিন বলেছিল কাঁঠালের পাতা ছাগলদের খুব প্রিয় খাদ্য! ব্যস। এই সুবাদে বেচারা কাঁঠাল গাছের নিচের দিককার সমস্ত ছোট ডাল আর পাতা যায় উড়ে।

    বিয়ের কথা-বার্তা চলাকালীনই চালের যোগাড় রাখা এক বিরাট দায়িত্ব। পিঠার চাল, কুটুমেরা যে আসবেন সেই গায়ে হলুদের আগের দিন থেকে আর থাকবেন সেই বিয়ের পরদিন বা তারও পরদিন পর্যন্ত, তাদের দু’বেলা ভাত আর সকালের নাশতায় পিঠার চাল, বরযাত্রীকে খাওয়ানোর জন্যে স্পেশাল কালোজিরা চাল। আর সব বাঙালদের মতো আমিও পিঠেকে পিঠাই বলি এখনও। আমার দাদি সারাদিন ব্যস্ত শুধু যে এতদিন আলাদা আলাদা করে গোলায়, বস্তায় ধান তুলে রেখেছেন সেই ধান ভাঙিয়ে চালের ব্যবস্থা করায়। এক এক রকম পিঠার জন্যে এক এক রকম চাল চাই, মড়মইড়া পিঠার জন্যে ধবধবে সাদা আলোচাল, পাক্কনের জন্যে ওই একই চাল কিন্তু তার সাথে আবার সোনামুগ চাই। পোয়া পিঠা অবশ্য একটু লালচে রঙের চাল হলেও চলবে, এমনিতেও তো গুড় দিয়ে বানানো হবে কাজেই চালের রঙ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। সকালের নাশতার চিতই, ছিটেরুটির জন্যেও সাদা চাল হলেই ভাল হয় নইলে মাংসের সঙ্গতে পাতে ঠিক রঙ খোলে না।

    বিয়েবাড়িতে সকালে চালের রুটি আর মাংস হবে না সে তো হয় না, লোকেই বা বলবে কী! আর এই চালের রুটির জন্যে ধপধপে সাদা চাল ছাড়া তো চলবেই না। সেই রুটি সেঁকাও হবে তেমনি ভাবেই, একটুও যেন পোড়া দাগ রুটির গায়ে না পড়ে আবার সেঁকার সময় সেই রুটিকে ফোলাতেও হবে লুচির মতন করে। মোটা, ভারি লোহার তাওয়া চুলোয় বসিয়ে কাঠের জ্বাল একটু কমিয়ে রেখে লম্বা লোহার খুন্তি দিয়ে চেপে চেপে সেঁকা হয় রুটি। তাওয়ায় দিয়ে স্রেফ দুই বার ওল্টানো হয় রুটি, গরম তাওয়ার আঁচ পেয়ে যেই রুটির গায়ে ছোট্ট ছোট্ট ফুটকি দেখা যায়, সঙ্গে সঙ্গে অপর পাশে উল্টে দিলে এবার দেখা যায় ফুটকি গুলো ছোট্ট ছোট্ট বলের মত ফুলে ফুলে উঠছে। সঙ্গে সঙ্গে আবার পাল্টানো। তখন চুলার কাঠ হাতে করে টেনে আগুন আরও কমিয়ে দিতে হয়। খুন্তি দিয়ে রুটি আলতো চেপে দিলেই ফুলে ওঠে, ঠিক একটা বলের মত। একটাও দাগ না লাগা রুটি নামিয়ে নিয়ে বিছিয়ে দিতে হয় কুলো-ডালায়। একটার উপর আরেকটা রুটি রাখলে গরম ভাপে রুটি ভিজে যাবে তাই ছড়িয়ে রাখা। গরম ভাপটা বেরিয়ে গেলে তারপর একটার উপর আরেকটা রেখে থালায় করে খেতে দেওয়া। এই চালের রুটি সেঁকার কাজ বরাবর আমার বড় চাচির। তাঁর মতন এমন দু’পিঠ সাদা আর ফোলানো রুটি আর কেউ সেঁকতে পারে না!

    ফুলপিঠা, পাক্কনপিঠা ছাড়া কোনো বিয়ে-শাদী, সুন্নত দেওয়া, কুটুমবাড়ি যাওয়া ইত্যাদি ভাবাই যেত না। বিয়ের পরে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় গুড়-মুড়ি-চিড়ে, পান-সুপুরির সাথে আর যা পাঠানো হতো সে বিশাল বিশাল ডালাভর্তি এক ভাজার ফুলপিঠা। এমনিতেই তো এই পিঠা দু’বার ভাজতে হয়, তায় বানানো হয় বেশ কয়েকদিন আগে। কোথাও পাঠাতে হলে এক ভাজার পিঠাই দেওয়া হয়। কুরুশে বোনা নানা রঙের ঢাকনা দিয়ে ঢাকা হালকা বাদামি রঙের পিঠা। যা খাওয়ার আগে আরেকবার ডুবোতেলে ভেজে নিয়ে গরম গরম চিনির সিরায় ডুবিয়ে নিয়ে তবে খাওয়া বা পরিবেশন। বিয়ে বা সুন্নতের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনেরা নাইওরি যারা আসতেন তারাও নিয়ে আসতেন বড় বড় সব হাঁড়িভর্তি পিঠা। দেখা যেত যে একটা ঘর শুধু ফুলপিঠারই হাঁড়িতে ভর্তি হয়ে গেছে। প্রথমবার ভেজে নিয়েই সিরায় ডোবানো হয় বলে পাক্কন খুব বেশিদিন থাকে না তাই কুটুমবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ফুলপিঠাই বরাবর প্রথম পছন্দ গাঁও-গেরামের লোকজনদের। আর এই ফুলপিঠার একটা খুব সুন্দর নাম আছে আমাদের অঞ্চলে। খাওয়ার সময় কড়মড়ে একটা শব্দ হয় বলে দেশ-গ্রামের লোকেরা ভালবেসে ডাকেন মড়মইড়া পিঠা। আমাদের বাড়িতে, আমরাও বলি ‘মড়মইড়া পিঠা খামু।‘
  • সামরান | 127.194.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৯:৫৬598993
  • চলবে কি?

    যদি চলে তবে বাকিটা পোস্ট করব।
  • sosen | 125.24.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১০:০৩599002
  • আরে কি মুশকিল খিদে পেয়ে গেল- শিগগির
  • ঐশিক | 132.18.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১০:৫৬599003
  • সামরানদি, আমাদের বাড়িতেও ঠাকুমার মুখে মড়মইড়া পিঠা র গল্প শুনেছি, কিছু ছবি থাকলে পোস্ট করুন, দেখে বাঙাল জন্ম সার্থক করি
  • | 202.15.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১১:০৩599004
  • চাকুম চুকুম চকাসঃP==
  • pithaashilpi | 123.2.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১১:০৬599005
  • এগুলি খাওনের জন্যি না। আর্ট।
  • ব্যাং | 132.167.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১১:২৬599006
  • সামরান, বাকিটার জন্য হাপিত্যেস করে বসে আছি তো!
  • | 127.194.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১২:০৩599007
  • ছবি ক্যাম্নে পোস্টায়??
  • সামরান | 127.194.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১২:১৫599008
  • <
  • s | 127.194.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১২:১৬598983
  • ইয়ে লিংককা ক্যায়া হুয়া? ক্যায়সে হুয়া? কিউ হুয়া??? ঃ-(((((
  • ছবি টেস্টিং | 127.194.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১২:১৯598984
  • <
  • 5-19 | 131.24.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১২:২১598986
  • নেহি হুয়া | 127.194.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১২:২১598985
  • নেহি হুয়া অ অ অ অ অ নেহি হুয়া আ আ আ আ আ আ আ আ আঃ-(((((((((((((((((((((((((((((((((((((((
  • হো গয়া?? | 127.194.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১২:২৩598988
  • ক্যায়সে হুয়া???
  • সামরান | 127.194.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১২:২৫598989
  • এই যে 5-19 ,
    এলবামখানি পাবলিক করে দিয়েছি, বাকিগুলো ধরে ধরে এট্টু পোস্টিয়ে দেবে/দেবেন?
  • 5-19 | 131.24.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১২:৩৭598990












  • ক্ষিদে পেয়ে গেলোঃ-(
  • siki | 132.177.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৩:৩৪598991
  • মনে হচ্ছে অনেকদিন উপোস করে আছি। ...
  • Tripti | 138.2.***.*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২১:৩২598992
  • যেমন সুন্দর লেখা, তেমনি সুস্বাদু পিঠা।
  • শঙ্খ | 169.53.***.*** | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৪:৫৯598994
  • সাংঘাতিক ভালো বিবরণ। লেখাতেই ছবি আঁকা হয়ে গেল, পলো, মড়মইড়া পিঠে, চালের রুটি সব দেখতে পেলুম।

    সামরানদি, থেমো না, লিখতে থাকো।
  • kk | 78.47.***.*** | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৫:০৯598995
  • কি স্বচ্ছ লেখা ! কি শৈল্পিক পিঠে !!
  • nina | 79.14.***.*** | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৫:১৭598996
  • সামরু
    চালের রুটি র চালের গুঁড়ো মাখে কি করে ?? ওটা কি আগে জলেতে নুন দিয়ে , জল ফুটলে আস্তে আস্তে চালের গুঁড়ো মেশাতে থাকে আর নাড়ে? আমাকে প্লিজ একটু জানাস তো।
    উফ! কতদিন তোর হাতে খাই নি ঃ-((
  • সামরান | 127.194.***.*** | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৮:২২598997
  • -দুই-

    আইলো নকশা নাচিয়া
    খাওলো নকশা বাছিয়া
    হন্ধ্যাব্যালা বিয়া দিমু
    কন্যা যাইও নিয়ারে
    কন্য যাইও নিয়া।।

    আইলো নকশা পাল্কীত চইড়া
    পাল্কীত থাইকা গ্যালো পইড়া
    হায়রে নকশার ভাইঙ্গলো ঠ্যাং
    আইলো এক ঠ্যাং দিয়া রে
    কন্য যাইও নিয়া।।
    (মেয়েলী গীত/ সিরাজগঞ্জ)

    কাজের বাড়িতে প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা দায়িত্ব থাকবে এতো জানা কথাই। মড়মইড়া পিঠার দায়িত্ব আমার পিঠাশিল্পি মেজফুপুর। উত্তরহাটি নামের এক দ্বীপের মত গ্রামে আমার মেঝফুপুর বাড়ি। বছরে ছ’মাস সেখানে যেতে নৌকা ছাড়া কোনো গতি নেই। বাদবাকি সময় বাড়ি থেকে বেশ অনেকটা দূরে গাড়ি বা রিকশা থেকে নেমে সরু পায়ে চলা পথ দিয়ে মিনিট দশ হাঁটলে তবে পুরনো এক খয়েরি হয়ে আসা দেওয়াল দেখা যায়, এক সদর দরজা দেখা যায়, যাতে কোনো এককালে কাঠের দরজা ছিল, এখন শুধু দু’পাশে দেওয়াল আর মাথার উপর এক বিশাল বড় আর্চ যার দু’পাশে দুখানি ভাঙাচোরা সিংহকে বসে থাকতে দেখা যায়। গোটা বাড়িটা এই ক্ষয়ে আসা দেড় মানুষ সমান উঁচু মোটা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। সদর দিয়ে বাড়িতে ঢুকলেই আবার বাড়ির অন্য চেহারা। বড় বড় সব দেওয়ালের উপর ঢেউটিনের চালের আটচালা, চৌচালা বাড়ি। পাঁচখানা বাড়ি, আমার ফুপুর আর তাঁর দেওর-ভাশুরদের। প্রত্যেকের নিজস্ব উঠোন, গাছপালা, ঘরের লাগোয়া রান্নাঘর, গোয়াল। ডানে বায়ে সবকটা বাড়ি পেরিয়ে গেলে তারপরে ছবির মত আমার ফুপুর বাড়ি।

    ফুপুর বাড়িতে মেহমান এলে বারোমাসই প্রথম আপ্যায়ন ঘরের কোণের গাছের গন্ধরাজ লেবুর শরবত দিয়ে। জাম্বুরার সিজনে ফলে থাকা অজস্র জাম্বুরার ভারে নুয়ে পড়া গাছ থেকে জাম্বুরা পেড়ে নিয়ে কোয়া ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে সেঁকে নেওয়া শুকনো লংকা গুড়ো আর নুন ছড়ানো জাম্বুরার ভর্তা। নাবিস্কো বিস্কুটের বড় টিনের কৌটো থেকে মড়মইড়া পিঠা বের করে চটজলদি ভেজে নিয়ে সিরা দেওয়া আর সেগুলো বড় কাঁচের থালা বের করে সাজিয়ে দেওয়া হত। আমার ফুপুর বাড়িতে কাওকে কখনো চা-বিস্কুট দেওয়া হয় না। এখনও। ফুপুর বাড়িতে তাঁর দেওর-ভাশুর সকলেরই মত ফুপুরও আছে হাঁস-মুরগির ঘর। হাঁসেদের অবশ্য দিনের বেলায় দেখতে পাওয়া যায় না, সারাদিন হয় পুকুরে নয় পুকুর ছাড়িয়ে উত্তরের ফসলের জমিতে চরতে চলে যায় তারা। মুরগিগুলো বাড়িতেই থাকে, বিশাল বড় বড় রাতা মোরগেরা রাজার মতো ঘুরে বেড়ায় ঊঠোনে, বাড়িরে আনাচে-কানাচে আর বারবাড়ির উঠোনে। মুরগিগুলো অবশ্য বাড়ি ছেড়ে বড় একটা বেরোয় না, গেরস্থবাড়ির মেয়ে-বউদের মতো তারাও বাড়ির ভেতরেই ঘোরা ফেরা করে ডজনখানে করে ছানা সঙ্গে নিয়ে। ছানাদের চিঁ চিঁ আর মুরগি মায়ের কোঁ কোঁ তে মুখর থাকে ওই বাড়ির ঘর আঙিনা।

    পাশাপাশি দুই ভিটেতে বড় বড় দু’খানি ঘর, পাশে খড়ের চালের রান্নাঘর, রান্নাঘরের পাশে আরেক টুকরো ছোট্ট উঠোন, ছোট্ট একখানি গোয়াল আর দেওয়াল ঘেষে বিশাল এক বাতাবী লেবুর গাছ। আমরা যাকে বলি জাম্বুরা গাছ। সেই গাছের আদ্ধেক আবার ছায়া দিচ্ছে দেওয়াল ছাড়িয়ে পাশের বাড়ির উঠোনে। এই জাম্বুরা গাছ আমার ফুপুর এক গর্বের জিনিস। এত বড় বাড়িটায় আর একটিও জাম্বুরা গাছ নেই তবে সে এমন কিছু ব্যপার নয়, মোটা গাছের গুড়ি ধরে ডাল বেয়ে উঠে দেওয়ালের উপর একটু চড়ে বসলেই কাছে-দূরে বেশ কিছু জাম্বুরা গাছ দেখা যায়। কিন্তু ওই গাছগুলো যাদের তারাও এসে ফলের সময় আমার ফুপুর থেকে দু-চারটে জাম্বুরা চেয়ে নিয়ে যায়। ভীষণ হালকা গোলাপী রঙের সুক্ষ কোয়ার এই জাম্বুরা এত মিষ্টি এত মিষ্টি, সে যে না খেয়েছে ভাবতেও পারবে না। আমার ফুপুর ভারী গর্ব সেই গাছের ফল নিয়ে! গোটা উঠোন জুড়ে বাতাসে ভেসে বেড়ায় লেবু পাতার সুবাস। বাড়ি থেকে পালিয়ে ফুপুর বাড়িতে গিয়ে গাছ বেয়ে ওই দেওয়ালের উপর উঠে বসে ছোট্ট কিন্তু ধারালো কাস্তে দিয়ে জাম্বুরা ছাড়িয়ে, গোটা জাম্বুরা একলা খেয়ে নেওয়ার সেইসব ছবি আমি চোখ খুলে আজও দেখতে পাই।

    ফুপুর ঘরের পেছন দিকটায় সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুপুরি আর আমগাছ। এই গাছগুলো ফুপুর নিজের। বড় বড় আমগাছগুলো বারোমাস ছায়া দেয় ফুপুর ঘরগুলোতে। টুপটাপ পাতা ঝরে যখন তখন। দু’বেলাই নারকোল কাঠির ঝাড়ু দিয়ে নিজের হাতে বাড়ির আঙিনা-উঠোন ঝাঁট দেয় ফুপু। শুকনো পাতাদের ঝেঁটিয়ে নিয়ে গিয়ে জড়ো করে জাম্বুরা গাছের তলায়, দেওয়ালের ধার ধরে। যখন বেশ অনেকটা জমে যায়, তখন একদিন বিকেলের রান্না বাইরের ধান সেদ্ধ করার চুলোয় চাপিয়ে দেয়, ব্যস। সব পাতা সাফ! এই বাড়িটার এক অদ্ভুত চরিত্র আছে। শরিকি বাড়ির প্রত্যেকেরই আছে নিজস্ব উঠোন, গাছ-পালা। কিন্তু কারোরই বাড়ির সীমানা দেওয়াল বা বেড়া দিয়ে ঘেরা নেই, আছে গাছ দিয়ে। যে যার বাড়ির সীমানায় লাগিয়ে রেখেছে নানা রকম গাছ। ফলের গাছ, ফুলের গাছ বা সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেহদি গাছের বেড়া দেখিয়ে যেন দেয়, এই পথ গেছে গোসলখানায়, এই পথ গেছে বড় শরিকের বাড়িতে আর ওই যে পথটা, ওটা গেছে বারবাড়ির দিকে, সবই সার সার গাছ কিন্তু আলাদা আলাদা!

    বাড়ির মাঝামাঝি একটা পায়ে চলা পথ গেছে পুকুরঘাটের দিকে। এখানেও আছে দেওয়ালের গায়ে এক গেট। ফুপুর পরদাদাশ্বশুরে আমলে এই গেটেও ছিল কাঠের দরজা কিন্তু তার আর অস্তিত্ব নেই বহুকাল শুধু রয়ে গেছে দেওয়ালের গায়ে লোহার আংটা, যাতে বসানো ছিল দরজা। সেই গেট পেরিয়ে গেলেই গিয়ে পড়তে হয় ভরদুপুরেও ছায়াচ্ছন্ন গা ছমছমে এক বাগানে। ফলের বাগানে। কী নেই সেখানে! আম, জাম, কাঠাল, সফেদা, আতা, শরিফা আর এক লিচুগাছ। বহু পুরনো এই বাগানের যত্ন কেউ নেয় না শরিকি বাড়ি বলে। ফল যখন পেকে আসে তখন শুধু ফুপুর ছোট দেওর সঙ্গে লোক নিয়ে ফল পেড়ে ভাগ করে যার যার ভাগ ঘরে পৌঁছে দেয়। গাছের গোড়ায় গোড়ায় ঘন আগাছার জঙ্গল, সাপ-খোপের বাসা। গাছে গাছে পাখ-পাখালির ডেরা। ইট বিছানো এক পথ চলে গেছে বিঘে আড়াইয়ের এই বাগানের মাঝ দিয়ে, পুকুরের দিকে। পুকুর। সেই তিনপুরুষ আগের শান বাঁধানো ঘাট, সিড়িগুলো চলে গেছে সবুজ শ্যাওলায় ঢাকা জলের ভেতর। শ্যাওলার পুরু আস্তরণ সব কটা সিড়ি জুড়ে। সাবধানে পা না ফেললে পা হড়কে পড়ে গিয়ে হাত-পা ভাঙার সমূহ সম্ভাবনা।

    পুকুরের পশ্চিম পাড়ে এই বাড়ির নিজস্ব কবরস্থান, ঘন বাঁশের ঝাড়ে সেখানেও অন্ধকার দিনে দুপুরে। পুকুরের বাঁদিকে পার ধরে একটু পায়ে চলা পথ নেমে এসেছে পুকুরে, আশে-পাশের লোকজন আসে কেউ স্নান করতে, কেউ বা জল নিতে। পশ্চিমে কবরস্থান, পূবদিকে বাড়ির ঘাট দক্ষিণ পারে এই বাড়ির শরিকি আমগাছ সারি দিয়ে লাগানো আর উত্তরে পুকুরের পার নেমে গেছে এই বাড়িরই ফসলের জমিতে। ঝিঁঝির একটানা ডাক, পাখিদের নানা রকম ডাকের শব্দ যেন এই ফলের বাগান, কবরস্থানের বাশঝাড়েরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ছায়া ছায়া আলো-আঁধারিতে বাড়ির কাজের লোকেরা গিয়ে স্নানের জল তুলে আনে কলসিতে করে, শ্যাওলা পড়া পিচ্ছিল ভাঙাচোরা সিড়িতে বসে কাপড় কাচে, বেলা পড়ে এলে নিজেদের সব কাজ শেষ হয়ে গেলে এসে স্নান করে পুকুরের ঠান্ডা জলে।

    মড়মইড়া পিঠা বানাতে যা যন্ত্রপাতি লাগে সেগুলো বরাবরই তৈরি করা থাকে ফুপুর কাছে। খেজুরের কাঁটা, বড় সুঁই আর ব্লেড। যেখানেই পিঠা কাটার দাওয়াৎ থাকে, ফুপু নিজের যন্ত্র সঙ্গে করেই নিয়ে যায়। এমনিতে গ্রামে আত্বীয়-স্বজনদের বা পাড়া- প্রতিবেশীদের কারও বাড়িতে বিয়ে-সুন্নত বা দাওয়াৎ থাকলে তারা ফুপুকে পিঠা কাটার দাওয়াৎ দেয়। পিঠা কাটার দাওয়াৎ মানে এই নয় যে ফুপুকে সেখানে গিয়ে পিঠা কেটে দিয়ে আসতে হবে। যাদের বাড়িতে পিঠা হবে তারা চালের গুড়ো করে সেটা সেদ্ধ করে পিঠার কাই তৈরি করে কয়েকটা গোলা ফুপুর বাড়িতেই পৌঁছে দিয়ে যায় পিঠা কেটে দেওয়ার জন্যে। নিজের বাড়িতে বসেই পিঠা কেটে দেওয়া। এটাই দাওয়াৎ! ফুপু অবশ্য অন্যের হাতে তৈরি করা গোলায় পিঠা কাটা পছন্দ করে না, কে কেমন করে চালগুড়ো সেদ্ধ করেছে, কতটা সময় ধরে ভাপিয়েছে, তৈরি করা গোলায় গুড়ো জমাট বেঁধে ছোট ছোট গুটলি পাকিয়ে আছে কিনা, পিঠা খাস্তা হবে কিনা এই সবের জন্যে। কিন্তু যারা গোলা দিয়ে যায় তারা ফুপুকে কনভিন্স করে যে অনেকটা সময় ধরে চালের গুড়ো ভাপানো হয়েছে, তাকে খুব ভাল করে মালিশও দেওয়া হয়েছে আর কোথাও কোনো গুটলিও পাকিয়ে নেই। পিঠা কাটার ব্যপারে ফুপু মুখের কথায় কাউকে বিশ্বাস করবে এমনটা হতেই পারে না। রেডি করা মাখানো গোলা থেকে খানিকটা তুলে নিয়ে দেখে, এরই মধ্যে গোলার গা ফাটতে শুরু করেছে কিনা, বেশি নরম বা বেশি শক্ত নয়ত? আমাদের বাড়িতে পিঠা হলে এই কাজটা ফুপু নিজের হাতে করে।
  • | 127.194.***.*** | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১১:০১598998
  • অ নীনাদি, এই লেখাতেই তুমি চালগুড়ো ভাপানোর প্রণা৯ পেয়ে যাবে। একটু অপেক্ষা করো...

    যাঁরা পড়েছেন, মতামত দিয়েছেন, এবং দেন নাই সবাইকে ধন্যবাদ।
  • kiki | 69.93.***.*** | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২২:৫৪598999
  • গুরুর টেকি লোকগুলো টেকি কথাবার্তা নিয়ে না কচকচিয়ে , ফটো থেকে কি করে সত্যি খাবার টা বের করে আনা যায়, তা নিয়ে ভাবলেও তো পারে। আর গন্ডা গন্ডা বিজ্ঞানী গুলো যে এখেনে থাকে তারাও তো একটু হেল্পালে পারে। আমার এখন কি মড়মইড়া পিঠে খিদে পেয়েছে।ঃ(((
  • nina | 79.14.***.*** | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২২:৪৬599000
  • কই গেলি রে সামরু-----
    হে হে ক্ষিক্ষি তুই ততক্ষণ পোস্ত-ঝোল দিয়ে চাড্ডী ভাত খেয়ে নে ঃ-)
  • | 127.194.***.*** | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২৩:৩৬599001
  • এই যে নীনাদি...

    -তিন-

    উত্তম সাইলের চাউলে পিঠালি বাটিয়া।
    বন্দনা করিল আগে তিন আবা দিয়ে।।
    চিমটিয়া তুলে সবে দুয়ারের মাটি।
    সোহাগের দ্রব্য আনি দেয় কুটি কুটি।
    হলদি চাকি চাকি আর তৈল সিন্দুরে।
    এরে দিয়া সোহাগ ভালা সাজায় সুবিস্তারে।।
    পাছে পাছে গীত গায় পাড়ার যত নারী।
    সোহাগ মাগিয়া যায় ফিরে নিল বাড়ী।।
    (মলুয়া- মৈমনসিংহ গীতিকা)

    সে ছিল আমার ছোটফুপুর বিয়ের কথা। সে যেন শুধু পিঠারই কথা। রোজই বানানো হয় একেক রকম পিঠা। কোন দিন হয়ত পাঁপড়, কেবল পাঁপড়। পাক্কন বা ফুলপিঠা বা পোয়া সবই হয় চালের গুড়ো দিয়ে। পাঁপড়ও তাই। রাতে শোয়ার সময় আতপ চাল ধুয়ে নিয়ে জলে ভিজিয়ে রেখে দিয়ে ভোর ভোর উঠে সেই চাল বাঁশ বা বেতের ঝাঁঝরিতে ঢেলে ততক্ষণ রেখে দিতে হয় যতক্ষণ না সবটুকু জল ঝরে যায়। কম করে দু’জন লোক লাগে চালটাকে গুড়ো করতে। ভিজে চাল ঢেঁকিতে দিলে ছিটকে বাইরে পড়বে অর্ধেক আর তাতে ধুলো-মাটি মিশবে তাই পিঠের চাল গাইলেই গুড়ো করে আমাদের সবাই। অনেক সময় বাড়ির মুনিষেরা গাইলে পাড় দিয়ে দিয়ে চাল গুড়ো করে দেয়। মোটামুটি দুই হাতের বেড়ে আসে এতখানি মোটা আর দু থেকে আড়াই ফুট লম্বা এক গাছের গুড়ি নিয়ে সেটাকে হাতুড়ি-বাটাল দিয়ে ঠুকে ঠুকে ভেতরটা একদিক থেকে কেটে নেওয়া হয়। মাঝামাঝি অব্দি গেলে তারপর আস্তে আস্তে নিচের দিকটা সরু হতে থাকে আর তার আরও খানিকটা নিচে নেমে গেলে তারপর আর কাটা হয় না। চেঁচে চেঁচে সমান করা হয় ভেতরটা। একটা শেপ দেওয়া হয় বাইরে থেকেও, আস্তে আস্তে বাটাল ঠুকে ঠুকে ডুগডুগির মত করে দেওয়া হয়। যার একদিকে এক বিশাল গর্ত আর অন্যদিকটা বন্ধ। এমনিতে বাজারেই কিনতে পাওয়া যায় এই গাইল, কিন্তু বাড়িতে ভালো কাঠের কোনো গাছ কাটা হলে সকলেই মোটামুটি গুড়িটা রেখে দেয় এই গাইল বানাবে বলে। গাছের গুড়িটাকে পুকুরে বেশ কিছুদিন ফেলে রেখে জল খাইয়ে তারপর হাত দেওয়া হয় গাইল বানানোর কাজে।

    এই গাইলও আবার বিভিন্ন রকমের, বিভিন্ন আকারের হয়। এক একটা কাজের জন্যে এক এক রকম গাইল। ভেজানো চাল গুড়ো করতে যে গাইল লাগে তার ভেতরটা খুব বেশি ডিপ হয় না, গাইলের উচ্চতার মাঝামাঝি অব্দি থাকে তার গর্ত আর নিচেটাও মোটামুটি সমান করে কাটা থাকে। ধান ভানার গাইল দেখতেও হয় খুব বড় আর তার গর্তও হয় অনেকটা গভীর। প্রায় তিন ভাগ জায়গা নিয়ে সেই গর্ত আর নিচের দিকটাও হতে থাকে সরু, আরও সরু। ডাল কোটার গাইল আকারে হয় খুব ছোট, আর ভেতরটাও খুব গভীর। গাছের গুড়ির প্রায় নিচ অব্দি চলে যায় সেই গর্ত। গাইলে কোটা মুগ, মুশুর, কলাইয়ের ডাল ভাঙে না একদমই, গোটা গোটা আস্ত ডাল বেরোয় কোটার পর। যাঁতায় ভাঙা ডাল যেমন দুই ভাগে ভাঙে, গাইলে তা হয় না। পালা-পার্বণ বা বিয়েবাড়িতে যে গাইলে মশলা কুটিয়ে গুড়ো করা হয় সে ওই ডাল ভাঙানোর গাইল। শুকনো মশলা তো বটেই এমনকি আদা-রশুন-পেঁয়াজও গাইলে দিয়ে কুটে নেওয়া হয়। শিল-নোড়ায় বেশি পরিমানে মশলা বাটতে যত সময় আর পরিশ্রম যায় এতে তার সিকিভাগও লাগে না। গাইলের সাথে ধান-চাল কোটার জন্যে লাগে একদিকে বেশ চওড়া লোহার পাত বসানো এক মানুষ সমান লম্বা আর ইঞ্চি তিনেক মত মোটা গোল কাঠের দন্ড, নাম যার ‘সিয়া’। একদম সোজা সেই সিয়া খুব ভাল করে চেঁচে নিয়ে শিরিষ কাগজ ঘষে ঘষে যতটা সম্ভব মসৃণ করে দেওয়া হয় যাতে কোথাও এতটুকুও অসমান না থাকে, ধান-চাল কোটার সময় হাতে না বেঁধে। কামারের দোকান থেকে বানিয়ে আনা হয় ইঞ্চি তিন-চার চওড়া আর গোল লোহার পাত, গাইলের উদুর মাপমতো বানানো হয় যাতে খাপে খাপে বসে যাবে সিয়ার এক প্রান্তে। ওই গোল লোহার চাকতির অর্ধেক বসানো থাকে কাঠের উপর আর অর্ধেকটা বেরিয়ে থাকে সিয়ার বাইরে।

    গাইলের মধ্যে ভেজানো চাল দিয়ে দু’পাশে দু’জন দু’খানি সিয়া নিয়ে দাঁড়িয়ে চাল কোটে। একটা ছন্দে দুই হাতে সেই সিয়ার ঠিক মাঝখানটিতে ধরে দু’পাশ থেকে সমানে ওঠে নামে, ভোঁতা একটা শব্দ হয়, থপ থপ থপ। সাধারণত উঠোনের মাঝখানে বা মাটির মেঝের রান্নাঘরে চলে এই চালকোটা পর্ব। পরিষ্কার করে ধোওয়া চটের বস্তা পেতে দেয় গাইলের নিচে, ছিটকে পড়া চাল, চালের গুড়ো যাতে মাটিতে না পড়ে। একজন বসে থাকে বড় গামলা আর চালুনি নিয়ে। বিকেলের দিকে যদি চাল কোটা হয় তবে সেই একজন বেশিরভাগ সময়েই আমার বড়চাচি থাকে। চাল যারা কোটে তারা অনেক সময় গাইলের পাশ ধরে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে চাল কুটতে কুটতেই। মুখে একটা শব্দ করে, হুহুম না হুহুম না। কোমরে শক্ত করে গোজা শাড়ির আঁচল, গোল হয়ে ঘুরতে থাকা দু’জন নারী, চালের উপর অবিরাম পড়তে থাকা সিয়ার থপ থপ আওয়াজ আর চাল কুটুনিদের মুখের হুহুম না রে হুহুম না বাড়ি ছাড়িয়ে, উঠোন ছাড়িয়ে চলে যায় দূরে, অনেক দূরে। আমরা বুঝে যাই, পিঠা হচ্ছে!

    গাইলের ভেতর থেকে যখন পাউডারের মত চালগুড়ো ছিটতে থাকে তখন বিশ্রাম কুটুনিদের। কোমরে গোঁজা শাড়ির আঁচল খুলে মুখের-গলার ঘাম মুছতে মুছতে হাতের সিয়া উল্টো করে পাশের দেওয়ালে ঠেস দিয়ে রেখে বসে চা-পানি খাওয়া, পান খাওয়া, খানিক জিরোনো। নিজেদের মধ্যে খানিক গল্প করা। পাশে বসে থাকা আমার চাচি তখন দুই হাতের আঁজলা ভরে ভরে কোটা চাল নিয়ে চালুনিতে চালে। মিহি পাউডার গামলায় রেখে মোটা গুড়ো রাখে পাশেই রাখা আরেকটা ছোট গামলায়। কুটুনিদের ততক্ষণে চা-পানি-পান খাওয়া হয়ে যায়, তারা আবার ভেজানো চাল ঢালে গাইলে। এভাবেই চলতে থাকে যতক্ষণ না সমস্ত চাল কোটা শেষ হয়। এরপর আবার সেই ছোট গামলায় রাখা মোটা গুড়ো গাইলে দিয়ে সেটাকে মিহি করার পালা। ধপধপে সাদা মিহি চালের গুড়োতে ভরে ওঠা গামলা সরিয়ে রাখে চাচি, এরপরের কাজ আমার মেজফুপুর।

    বিশাল বড় এক হাঁড়িতে জল দিয়ে উনুনে বসিয়ে দেয়। জল গরম হতে থাকে আর এদিকে গামলায় রাখা চালগুড়োকে ফুপু দুই হাতের আঁজলায় নিয়ে গুড়ো ঠেসে ঠেসে বল বানায়। একের পর এক বল তৈরি হতে থাকে আর জমতে থাকে অন্য গামলায়, খুব স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে ভেঙে যায় সেই বল। ফুপু আরও বেশি করে সেটাকে ঠাসে, যতক্ষণ না পোক্ত এক বল হচ্ছে। হাত লাগায় আমার চাচিও। জল ফুটতে শুরু করলে বিসমিল্লাহ বলে সেই বল ফুটন্ত জলে ছাড়ে, খুব সাবধানে ছাড়তে থাকে একের পর এক বল। বল বানানোতে আমিও বরাবরই হাত লাগাতাম কিন্তু একটা গোটা আর আস্ত বল কখনই বানাতে পারতাম না। হাতে হয়ত বলের আকার দেখা গেল, গামলায় রাখতে গেলেই ঝুরঝুরে বালির মতন ঝরে পড়ে ভেঙে যায় বল! ফুপু তখন নিজের হাতে করে সেই ভাঙা বল নিয়ে চালগুড়ো ঠেসে সেটাকে হাতের মধ্যে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়, বলে ‘এমনে কইরা বানা, বানাইতে বানাইতে ঠিক শিখ্যা যাইবি!’

    ফুটন্ত জলে চালগুড়োর বল তখন ফুটছে, আলগা গুড়ো জলে মিশে জল ভারি হয়ে গিয়ে ফোটার শব্দও হয়ে আসে ভোঁতা। সবকটা বল জলে ছাড়া হয়ে গেলে বড় মাটির সরা দিয়ে হাঁড়ি ঢেকে দিয়ে চাচিকে বলে, ‘ও ভাবি, চা কই? জলদি চা দ্যাও, ডেগ নামান লাগব।‘ চটজলদি চা খেয়ে নিয়ে লোহার খুন্তির সরু ডাঁটি দিয়ে একটু খোঁচা দেয় ফুটতে থাকা একটা বলকে। জল ততক্ষণে আরো ঘন আর থকথকে। ওই খোঁচা দিয়ে ফুপু বুঝতে পারে, ভাপ খেয়ে খেয়ে সেদ্ধ হয়ে গেছে চালের গুড়োর বল, বলে ‘ভাবি, এইবার নামাও।‘ ঢাকা খুলে হাড়ি নামিয়ে বড় হাতায় করে একটা একটা করে বল নামিয়ে গামলায় রাখে। ততক্ষণে আবার গাইল-সিয়া নিয়ে রেডি সাহায্যকারিরা। হাতায় করে বলগুলো দেওয়া হয় গাইলে, খুব অল্প করে দেয় ঘন স্যুপের মত জল যাতে বলগুলোকে ভাপানো হয়েছে এতক্ষণ ধরে। রান্নাঘরে ভিড় জমানো আমরা সব কচি-কাঁচাদের কারো গায়ে গরম জল ছিটকে না পড়ে সে জন্যে খুব আস্তে আস্তে গাইলে পাড় পড়ে, ভোঁতা থপথপে আওয়াজ ওঠে গাইল থেকে। আস্তে আস্তে করে একটু একটু করে হাড়ির জল দেয় ফুপু আর গাইলে পাড় দিয়ে দিয়ে পিঠার গোলার জন্যে তৈরি হতে থাকে সেদ্ধ চালগুড়ো। একটা সময় আসে যখন সিয়া আর সেই গোলার মধ্যে ঢোকে না, শুধু উপরেই পাড় পড়ে, তার মানে নামিয়ে নেওয়ার পালা। গামলায় নিয়ে তাকে মালিশ দেওয়ার সময় হয়ে গেছে এবার।

    পিঠা কাটার জন্যে গোলা রেডি হয়ে গেলে গামলা ভর্তি লেচির মত দেখতে বড় বড় সব গোলা চলে যায় সামনের বড় বারান্দায়, ধুয়ে-মুছে সেখানে আগে থেকেই বসার পিড়ি, রুটি বেলার পিড়ি-বেলনা, সদ্য কেটে আনা ধোওয়া-মোছা কলাপাতা বিছানো কয়েকটা কুলো আর ছোট ছোট বাটিতে সাদা তেল সাজিয়ে রাখা। দাদির হাঁক-ডাক, বারান্দা ভর্তি আমরা সব চাচাতো-ফুপাতো ভাই-বোনেরা, আম্মা, চাচি আর ফুপু। মালিশ দেওয়া গোলা থেকে লেচি কেটে কেটে তেলে ডুবিয়ে ডুবিয়ে আমাদের সব দেয় ফুপু, আমরা রুটি বেলে দিই, ছোট্ট ছোট্ট গোল গোল রুটি, বড়জোর একটা পিরিচের সাইজ, আধ ইঞ্চি পুরু তেল চপচপে রুটি একের পর এক জমা হয় ফুপুর সামনের কলাপাতা বিছানো জলচৌকিতে।

    খেজুরের কাঁটার গোড়ার দিকটা ব্লেড দিয়ে কেটে নেয় ফুপু, পিঠউঁচু তেকোণা শেপের কাঁটার পিঠের দিক থেকে তেরছা করে কাটা, যার ফলে চিরুনির মত দুটো দাঁত বেরোয় কাঁটার, যাকে ফুপু বলে আঁকনী। সেই আঁকনী দিয়ে নকশা আঁকে ফুপু। ইচ্ছেমতন তেল মাখিয়ে নেয় আঁকার আগে, যাতে করে খেজুর কাঁটার আঁকনী চালের মোটা রুটির উপর চলে মসৃণ আর দ্রুত গতিতে। একের পর এক নকশা ফুটে উঠতে থাকে রুটির গায়ে, তিন বা পাঁচ পাঁপড়ির শাপলা, পাখা, কুলো, বিভিন্ন রকমের জ্যামিতিক নকশা, ঘর, ফুল, পাখি, মাছ আর আরও কত কী। বড় বড় রুটি কেটে নকশা আঁকে ফুপু ‘চাইর খাইন্যা’ পিঠার। আঁকা হয়ে গেলে কাঁটা দিয়েই কেটে চার ভাগ করে তুলে রাখে পাশে, নকশায় কাজ করার জন্যে। এভাবেই বিভিন্ন সাইজের রুটি বেলে তাতে আঁকে তিন খাইন্যা, দুই খাইন্যা। আমাদের বায়না থাকে, নাম লেখা পিঠার। যার যার নামের পিঠা সে খাবে! তা সে বায়না ফুপু হাসিমুখেই রাখে মাঝে মাঝে যদিও বলে, নিজেই ল্যাখ না! তা আমরাও লিখি, কিন্তু পিঠার গায়ে নিজের নাম লিখতে গিয়ে অক্ষর সব হয় ট্যারা বাঁকা। নাম লেখা পিঠা তো হয়, হয় বর-কনের নাম লেখা বিশাল আকারের এক গোল একখাইন্যা পিঠা। সেই নামের আশে পাশে নকশার কী বাহার। ফুল লতা পাতা পাখি প্রজাপতি পালকি ঘোড়া কী নেই সেখানে! নকশা আঁকি আমরাও। আম্মা, চাচি আর ছোটরা। পিঠায় নাম লেখা হয় কনের হবু শ্বশুর, শাশুড়ি এমনকি ননদ, দেওর আর জায়েদের।

    পিঠায় নকশা আঁকতে আঁকতে ফুপু গান ধরে। প্রথমে গুনগুন করে তারপরে আস্তে আস্তে একটু গলা তুলে। গান নয় আসলে, গীত। আমার সেজফুপু, আমরা বাড়ির সক্কল ছেলে-মেয়েরা যাকে পিসিমা বলে ডাকি। বিয়েবাড়ির যে সব কাজ আমার দাদি করে সেই সব কাজে দাদির সঙ্গে সঙ্গে থাকে পিসিমা, মানে সব দেখা-শোনা, লোকজনদের উপর হম্বি তম্বি করার কাজ। তো মেজফুপুর গানের আওয়াজ শোনামাত্রই সেসব ছেড়ে পিসিমাও এসে বসে যায় পিঠা কাটতে, আসলে গীত গাইতে।
    সোনার কন্যা কর “হ্যান”
    ওলদি মেন্দি মাহায়া
    সাজো আসমান তারা।
    আইসে সইরা হেলিয়া
    বেড়ায় সইরা খেলিয়া
    আলা চাইলের গুড়া কোটে
    ঢেঁহীতন দিয়া পাড়া।
    (বিয়ার গীত)
    যতক্ষণ এই পিঠা কাটা চলবে পিসিমার গীতও চলবে ততক্ষণ। অফুরন্ত তাঁর গীতের ভান্ডার। একে একে আরো অনেকে জুটে যায় গীতে, বাড়িতে যারা কাজ করে ফাঁকে ফাঁকে তারাও বসে খানিক গলা মেলায়। দাদির পানের বাটা থেকে হাতে হাতে বিলি হয় বড়ফুপুর সেজে রাখা পান। চাচি চায়ের যোগান দেয় ঘন্টায় ঘন্টায়। বলে রাখি আমার পিসিমাও পিঠায় অসাধারণ নকশা করে, কাটে। বাপের বাড়িতে নাইওর আসার সময় পিসিমাও নিয়ে এসেছে কয়েক হাঁড়ি ফুলপিঠা আর পাক্কন। মেজফুপুর হাত এত তাড়াতাড়ি চলে পিঠার উপর যে পলক ফেলতে ফেলতেই নকশা আঁকা পিঠা চলে যায় কুলোয় বিছানো কলাপাতার উপর।

    এ তো হলো শুধু পিঠার নকশা। এবার সেই নকশায় কাজ করার পালা, ফুটিয়ে তোলার পালা রুটির উপর আঁকা শাপলা, পদ্ম আর মাছ পাখি ডালা কুলোদের। কেউ হাতে নেয় সুঁই তো কেউ সেই আঁকনী উল্টো করে কাঁটার দিকটা ধরে কাজ করে পিঠাতে। আঁকা নকশাকে ধরে ধরে কাঁটা বা সুঁই ফুটিয়ে এক বিনুনির মত দেখতে নকশা। দুই আঙুলে ধরা কাঁটাকে আঙুলের আলতো চাপে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বিনুনি বোনা। কোথাও বা আবার আঁকনী দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট খোঁচায় ডবল লাইনে খাঁজ কেটে দেওয়া। প্রতিটা পিঠাই এমনভাবে আঁকা হয় যাতে গোটা পিঠা থেকেই সরু সরু চিলতে চিলতে টুকরো সুঁই বা কাঁটা দিয়ে বের করে নেওয়া যায়। একদমই যদি না কাটা হয় তবে সেই পিঠা ভাজার সময় বেঁকে যায়, ভেঙে যায়। পিঠায় কাজ শেষ হয় যখন রুটির ধারগুলো সুঁই দিয়ে চেপে চেপে একটা সুক্ষ ঢেঊয়ের মত নকশা তোলা হয়। কেটে বের করা টুকরোগুলো আবার চলে যায় গোলার গামলায়, আবার সেগুলোয় মালিশ দিয়ে রুটি করে নাকশা আঁকা, পিঠা কাটা। সকাল থেকে নিয়ে সারাদিন ধরে চলে আর তারপর শেষ হতে হতে সন্ধে গড়িয়ে যায়।

    একটার উপর আরেকটা করে তিন-চারটে করে পিঠার সারিতে যখন কুলো ভরে ওঠে তখন আম্মা বা চাচি চলে যায় পিঠা ভাজতে। বড় লোহার কড়াই ভর্তি সাদা তেলে একটা একটা করে পিঠা ছেড়ে লোহার খুন্তিকে উল্টো করে ধরে ডাঁটি দিয়ে পিঠা ভাজা। যেখান থেকে পিঠার টুকরো কেটে বের করা হয় সেখানটায় খুন্তির ডাঁটি ঢুকিয়ে পিঠা উল্টে দেওয়া আর হাল্কা সোনালী করে ভেজে নামানো। না। এই পিঠা এখনো খাওয়ার জন্যে তৈরি হয়নি। সবে তো একবার ভাজা হলো! আমরা অবশ্য একখান করে এই এক ভাজার পিঠার জন্যেই লাইন দিতাম। যতই বলা হোক যে, কাল সকালেই আবার ভেজে নিয়ে সিরা দিয়ে খেতে দেওয়া হবে কিন্তু কে শোনে সে কথা! নতুন কেনা মাটির বড় বড় হাড়িতে একটার পর একটা পিঠা সাজিয়ে তুলে রাখা হয়, বিয়ের পরে ছোটফুপুর সঙ্গে যাবে ওগুলো। বড় বড় সব থালার মতন আকারের গোল গোল নাম লেখা সব পিঠাগুলো থাকে হাঁড়ির মুখে, সমস্ত পিঠার উপরে। অন্য সব খাবার-দাবার, মিষ্টি-দই-গুড়-চিড়া আর পান-সুপুরির সাথে। মাটির হাড়িগুলো সব ভরে গেলে তবে বাড়িতে খাওয়া বা নাইওরিদের খাওয়ানোর জন্যে অন্য হাঁড়িতে-গামলায় স্থান পায় ফুলপিঠা। একদিনে কাটা পিঠাতে বিয়েবাড়ির কাজ মেটে না। আরও পিঠা কাটতেই হবে তাই রাতে আবার চাল ভেজানো, ভোর ভোর কুটিয়ে নিয়ে আবার সারাদিনের জন্যে বসা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন