এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • প্রথম শ্রাবণ, প্রথম প্রেম

    তৃষা
    বইপত্তর | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ | ৭১৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • তৃষা | 233.239.***.*** | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৫:৪৩598852
  • প্রথম শ্রাবণ , প্রথম প্রেম
    ........................................

    আবার সেই রবিকিরণ . আবার সেই প্রখর আলোয় চোখ ঝলসে যাওয়া. এবং ব্যতিক্রমী গদ্যরচনার দুর্বার তাগিদ . আলাপ হল . বর্ণমালার কনে-দেখা আলোয়. নরম, মায়াবী অন্যরকম , উতল করা . বুদ্ধদেব বসু . আমার নবলব্ধ প্রেমিক .

    "তিথিডোর " উপন্যাসের রচনা সময় ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৯ . তখন বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রয়ী (বিভূতি , মানিক আর তারাশঙ্কর ) মধ্যগগনে. এঁরা বাংলা সাহিত্যের দিবাভাগে অকৃপণ হাতে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন. রাতের আকাশেও আছে কয়েকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র..যেমন প্রেমেন্দ্র মিত্র , অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত আর সতীনাথ ভাদুড়ি .

    সাহিত্যপ্রেমী বাঙালীদের মনন , চিন্তন ,বোধ ,অনুভূতি আচ্ছন্ন এই মনীষার আলোয়. গদ্য রচনা তখন যে ধারাটি আশ্রয় করেছিল, তাতে লেখকের হাত ধরে লেখকের চেনানো পথে পাঠক হাঁটছেন. তার মনোজগতের যা কিছু বিচরণ..তার নিয়ন্ত্রক লেখক নিজে. একের পর এক বন্যার মতো ঘটনাস্রোতে পাঠক ভেসে যাচ্ছেন. তাঁর ফুরসত কই ওই ঠাসবুনট ঘটনা প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিয়ে একটু অন্য পথে হাঁটার, অন্য কথা ভাবার , লেখকের সমান্তরালে নিজের মতো করে ঘটনা স্রোতে সাঁতার কেটে অন্য কোনো নিজস্ব সুখানুভূতির ? তিনি লেখকের হাতের ক্রীড়নক , লেখকের সুতোর টানেই তালে তালে ওঠাবসা , হাসি কান্না. তবু হয়ত সামান্য ব্যতিক্রমী কথাকার ছিলেন সতীনাথ , যিনি পাঠকের নিজস্ব বিচার, বিশ্লেষণ, কল্পনা বা অনুভবে কিঞ্চিত আস্থাশীল ছিলেন . আর সকলেই তাঁদের লেখনীর মোহময় জাদুতে সবাইকে সম্মোহিত করে রেখেছিলেন , পাঠকমনকে শতকরা একশ’ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে.

    বুদ্ধদেব বসু প্রথা ভেঙে তৈরী করলেন এক পরীক্ষামূলক রচনা শৈলী . এতে কিছু বলা হলো, কিছু বলা হলো না. লেখক আর পাঠকের বিনিময়ের ক্ষেত্রটিতে কিয়দংশে আবছা আলোছায়া , দোলাচল... লেখক হাত ধরে পৌঁছে দিচ্ছেন চরিত্রগুলির চিন্তা ভাবনার দোরগোড়ায় কিন্তু পাঠক দরজা ঠেলে ঢুকবেন নিজে. শুধু নিরাপদ নিশ্চিন্ততায় পথ দেখানোর দায় লেখকের. টুকরো বাক্যবন্ধ, ধ্বন্যাত্মক শব্দের ব্যবহার, অন্যরকম যতিচিহ্ন , কালি কলমের আঁচড়ে বাহুল্যবর্জিত চিত্রায়ণ সাহিত্যের নাটমঞ্চে এক অন্য আলোকসম্পাত ঘটাল . চিত্রপটে রং ছড়ানো, কিন্তু কিছু শূন্যস্থানও আছে..ওটি মনের মতো রঙে রাঙিয়ে নেবেন পাঠক. এবং বিভিন্ন পাঠকের প্যালেটে ভিন্ন ভিন্ন রং . এ এক অভিনব অলীক রংমিলান্তি খেলা.

    কিছু বিরূপতা ছিল. আবার স্বাগত সম্বোধনও কিছু কম ছিল না. বুদ্ধদেব বসু অনুরাগী পাঠক পাঠিকার বৃত্ত নিজেই তৈরী করে নিলেন, নিজের মনের মতো করে.

    আমি তখন সবে যৌবনের চৌকাঠে , আনাড়ি পায়ে . টাকাকড়ি জমিয়ে বইপত্তর কিনি . কলেবর বৃহৎ হলে আহ্লাদ বেশি , বেশিক্ষণের রসদ . হাতে এলো "তিথিডোর" . এর আগে বুদ্ধদেবের কবিতার সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে . ", কঙ্কাবতী ,কঙ্কাবতী গো ..." . পড়েছি ছোটগল্প সংগ্রহ "ভাসো আমার ভেলা, ", নাটক.."অনাম্নী অঙ্গনা ও প্রথম পার্থ" , অনুবাদ কবিতা .. শার্ল বদ্যোলেয়ার -এর "ক্লেদজ কুসুম" , অসামান্য বাংলা অনুবাদে কালিদাসের "মেঘদূত". কাজেই নামটি পরিচিত. তবে উপন্যাস এই প্রথম .

    পঞ্চ কন্যার পিতা রাজেন . বিপত্নীক , কিন্তু পত্নীবিরহে কাতর নন. আর অবাক কান্ড, পাঁচ পাঁচটি কন্যা সন্তান(যতই তারা সুন্দরী হোক) নিয়ে ব্যতিব্যস্ত বা কুন্ঠিত নন. কিঞ্চিত শখ আহ্লাদও ছিল. স্ত্রী শিশিরকণা যৌবনকালে কিছু প্রশ্রয়ও দিতেন. ঝরা বকুল নিজের আঁচলে বেঁধে রেখে," সুগন্ধ ভালো, সুগন্ধের উত্স আরও ভালো হ'তে দোষ কী ! " প্রথা ভেঙেছিলেন রাজেনবাবু . তাঁর কন্যাসন্তানে বড় লোভ ছিল . পাঁচটি মেয়ে. শ্বেতা, মহাশ্বেতা , সরস্বতী, শাশ্বতী আর স্বাতী . শাশ্বতী আর স্বাতীর মাঝে আছে বিজন. নামের বাহার নেই, কারণ রাজেনবাবুর মতে, " পুরুষের সাধারণ নামই ভালো. কী হবে না হবে জানি না তো..মিছিমিছি একটা লম্বা চওড়া নাম দিয়ে ..." . এরপর শিশিরকণার রোগশয্যা . শ্বেতার তো বিয়ে হয়ে গেছে সেই কবেই . স্বাতী জন্মানোর আগেই. . তারপর মহাশ্বেতাও চলে গেল বিয়ে হয়ে . এল অরুণ . সরস্বতীর সঙ্গে আলোছায়ায় হৃদয় বিনিময় এবং বিবাহ . স্বাতী এবার শাড়ী ধরল . আর সেই সময়ে শাশ্বতীর জীবনে এল হারীত .

    বিজনের পড়াশুনো গয়ংগচ্ছ. স্বাতী কিন্তু ভর্তি হলো কলেজে . ইংরিজির ক্লাসে এল সত্যেন রায় . তরুণ অধ্যাপক. সুদর্শন, পরিশীলিত . স্বাতীর প্রেম কবে জেগেছিল , তখন জানিনি. তবে আমি মনে মনে ছবিটি এঁকে আকন্ঠ নিমজ্জিত হলাম. স্বাতীকে বিষনজরে দেখি. বুদ্ধদেবের মতলবটা কী ? প্রেম ট্রেম নাকি ? সত্যেনে অনুরাগ, স্বাতীতে বিরাগ আর বুদ্ধদেবে প্রবল রাগ তখন ত্রিধারায় .

    বৃষ্টির পরে ঝিলমিলিয়ে রোদ্দুর . মাঠের গা ঘেঁষে সূর্যাস্তের মুখোমুখি পুরনো একটি দোতলা বাড়ির একতলায় সরু বারান্দায় রেলিঙে হাত রেখে দাঁড়িয়ে সত্যেন দেখে, " বেগনি রঙের শাড়ি পড়া একটি কালো চুলের মেয়ে যেন হলদে আলোর নদীতে নেয়ে উঠে এল." সত্যেন দেখে , আমিও দেখি আর বুঝে যাই , প্রবল প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধে জেতা যায় না. আমি স্বাতীর দিকে সখ্যের হাত বাড়িয়ে দিই .

    স্বাতী ভালোবাসলো .সত্যেনকে . "আকাশে নীল,মেঘ কালো, ছাই রং ছড়ালো, বৃষ্টি ঝমঝম, ঝমঝম . আলো কম, আরও ক'মে আসে , মরে যায়, আর পড়া যায় না, দেখা যায় না, বই খোলা, বই কোলে , ব'সে থাকে, ভাবে, আবছা, একলা, চুপ."

    স্বাতী তখন সতেরো . সত্যেন স্বাতীকে বলে, "রবীন্দ্রনাথকে দেখনি ? কী আশ্চর্য !" স্বাতী এক নতুন জগত পেয়ে যায়. সাহিত্যের জগত. সত্যেন তাকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে সটান দাঁড় করিয়ে দেয় কুবেরের কোষাগারের আধভেজানো সিংহদুয়ারের সামনে. স্বাতী পড়ে বাংলা কবিতা, বিদেশী সাহিত্য, আর ততই বাড়িতে একা হয়ে যায়. দিদিরা দাদা সব ভিনজগতের বাসিন্দা. সত্যেন দেশভ্রমণে . চিঠি লেখে স্বাতীকে, " ফিরতি পথে এসেছি শান্তিনিকেতন. কবির কঠিন পীড়া , দেখা হবার আশা নেই. সোনার তরী ভেসে চলেছে আলোর নদী বেয়ে অন্ধকারের দিকে. কিন্তু সেটাই হয়ত আরও বড় আলোর সমুদ্র ." আমিও যেন চোখের সামনে দেখতে পাই সোনার তরী, আলোর দরিয়ায়. সত্যেনের চোখ দিয়ে, স্বাতীর চোখ দিয়ে, বুদ্ধদেবের চোখ দিয়ে .

    সন্ধেবেলাটা যেন মন কেমন করা . যখন আলো নিভে যায় , আবার অন্ধকারও ফোটে না . সেই ছাই রঙের ছায়া ঝরা সময়টায় কে যেন কাকে ছেড়ে চলে যায় চিরকালের মতো ...একলা থাকলেই কান্না পায় স্বাতীর , ইলেকট্রিকের আলো..আকাশ-ভরা ছায়ার কান্নাকে ঘর থেকে ঝেঁটিয়ে বের করে দেয় আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ.
    স্বাতীর দিন কাটে, রাত কাটে, সংসার চলে অভ্যস্ত নিয়মে. বাড়িতে রাজেনবাবু , বিজন আর স্বাতী. শাশ্বতী আসে যায়, স্বাতীর মনে সত্যেন প্রায় চোরা পায়েই জায়গা করে নেয় . স্বাতীর মন অজানা কারণেই মেঘলা হয়ে ওঠে , "এপ্রিলের রেশমি সন্ধ্যা মখমলের রাত হয় আস্তে আস্তে ". হারীত আর বিজনের এক বন্ধু মজুমদার জোরগলায় বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে তর্ক করে, বিজন স্বাতীর ওপর জুলুম করে , ঝগড়াও..স্বাতী আপনমনে. মজুমদার স্বাতীতে অনুরক্ত হয়. কিন্তু নিষ্ফল .

    আর সত্যেন ? অল্প চেনা ছিপছিপে স্বাতী… কেন চিঠি লেখে ? 'কেউ যেখানে আসেনি, সেখানেই শেষ পর্যন্ত পৌঁছবে নাকি এই মেয়ে ? পার হবে নাকি সীমান্ত ?"

    বাইশে শ্রাবণ. রবীন্দ্রনাথ চলে গেলেন. সত্যেন এলো স্বাতীর কাছে . শুকনো মুখ, উশকো চুল, চাপা ঠোঁট আর না-কামানো গাল . স্বাতীর তখন শরীরে জড়িয়েছিল ঝিরঝিরে দুপুরের আরাম . সত্যেনের কাছে দু:সংবাদ পেয়ে তার মাথাটি নিচু, " যেখানে তখন সুখের সুষমা প্রায় কথা বলছিল..সেই সব রেখায় দু:খ আঁকলো সেখানে, স্তব্ধ আনতি, দু:খের আরও গভীর সুষমা. '’

    তারপরের বিশদ ছবিটি জোড়াসাঁকোর . এ ছবি এত স্বল্প পরিসরে আমি বর্ণনা করি কী করে? তবে প্রতিটি ছত্রে আমিও সেদিন ওই শোকযাত্রায় সামিল হতে পেরেছিলাম. বৃষ্টি থেমে গেছে. সমস্ত রাস্তাটির ওপর কাঁপছে, দুলছে, জ্বলছে বৃষ্টি ধোওয়া হলদেসবুজ বিকেলের স্বচ্ছ, সূক্ষ্ম আভার একটি পর্দা. আর কোনো তারা নেই. "রবীন্দ্ররহিত বাংলাদেশে শোকোচ্ছ্বাসী কলকাতার ওপর এই মুহূর্তে আকাশের বিকারহীন তোরণে নীলিমার নিশান উড়ল ".
    এর মধ্যেই পারিবারিক বিপর্যয়. বিধবা হলো শ্বেতা . নতুন করে মা চলে যাবার পর মৃত্যুকে চিনলো স্বাতী. সে নতুন করে বুঝে ফেলল ইংরিজি কবিতাটা "আমরা সাতজন".

    সত্যেন ভাবে, মানুষকে ভালোবাসতে সাবধান. কবিতা ভালোবাসো, প্রজ্ঞা, আকাশ..কিন্তু কোনো জীবন্ত মানুষকে ...সাবধান ! বাঁকা কুটিল পিছল জল, এখানে চাপ.ওখানে টান .সত্যেন জানত না ? জলের অত কাছে গেলে পড়ে যেতে হতে পারে ?

    সত্যেন চলে যাবে. বিদায় নিতে স্বাতীর বাড়ি. সিঁড়ির ওপর. " এলাম. মানে আসতেই হল . না এসে পারলাম না. তা..আমার বোধ হয় সময় হল এদিকে. ..আচ্ছা....."

    ‘‘স্বাতী বলল, 'না". হাত থেকে কয়েকটা শিউলি তার পায়ের কাছে পড়ল. আবার বলল, "না. যেও না.''. ভিতর থেকে দরজা খুলে গেল.”

    এই ছত্রটি আমায় আচ্ছন্ন করে দেয় আজও ..শুধুই কি বাড়ির দরজা ?

    পরিণয়কথা . বিবাহবাসর. মহাশ্বেতা. "গালের ওপর ছোট একটি নীল শিরা স্পষ্ট..অদ্ভূত ফর্সা, প্রায় হলদে, গায়ের রঙে শাড়ির রঙে মিশে আছে আর কালো ব্লাউজের ওপর দিয়ে ঝলমলিয়ে নেমেছে রুপোর পাতের মতো আঁচল". সরস্বতী ."শাড়িটা নীল.. ময়ূরের গায়ের নীল..কচুরিপানার ফুলের রঙের জামা." স্বাতী. "ঝকঝকে চঞ্চল চুড়িগুলির পাশে সুতো জড়ানো শাঁখাটা. কী সুন্দর, কী শান্ত..সাদা". আর শ্বেতা ? সাদা থানপরা ,” স্বাতীর হাতের চুড়িগুলির পাশে শাঁখাটার মতোই . শান্ত, সুন্দর. “

    আমি এত ছবির মতো বর্ণনা , এত নিখুঁত, এত বিশদ, খুব কম পড়েছি . "মেজ বউ কথা না বলে হাত ওল্টালেন. তাঁর আংটির পাথর থেকে একদানা পোলাও ঝরে পড়ল. "

    রাজেনবাবু এলেন স্বাতীর কাছে. "পায়ের পাতা সোনালী পাড়ে ঢাকা, শুধু সিঁথির সরু রেখাটি যেন নতুন ফুটে আছে. স্বাতী. সোনার তারা জ্বলা লাল শাড়ি উঠে গেছে ঝিলিক তুলে তুলে, আবার নেমেছে সোনালী, কালো চুলের ওপর দিয়ে সাঁকোর মতো , তরুণ ঝিনুকের মতো যে কানদু’টি এইমাত্র পান্নার দুলে ভারী হল, তার পাশ দিয়ে অন্তরঙ্গ পদ্ম-লাল জামার পাশ দিয়ে উজ্জ্বল, পান্না চুনি মেশানো নেকলেসটিকে পাশ কাটানো ,এখনকার মতো স্বাধীন -শক্তিহীন বাহুটির কম-ফর্সা বাইরের দিকটাকে ছুঁয়ে না ছুঁয়ে পড়ন্ত. ?"

    " স্বাতী. তার মুখ . সুখ দু:খের ব্যস্ত সেই রঙ্গমঞ্চ..এতদিন পরে একটু যেন বিরতি পেল. আলো জ্বলে আছে, দৃশ্যপট সাজানো, কিন্তু কুশীলব নেই. ফাঁকা, চুপ. চোখের ওপর ভারী হয়ে নেমেছে একটু ফোলা ফোলা গোলাপী দু’টি পাতা, ভরা ভরা সজল ঠোঁট দুটি বোজা, নাকের একটি বাঁশির চোখে-না-পড়ার মতো ঈষৎ স্পন্দন ছাড়া সমস্ত মুখে আর ভাষা নেই."

    বুদ্ধদেব খুব সূক্ষ্ম তুলির আঁচড়ে বা চিনে কালির কলমের টানে রঙে অথবা সাদা কালোয় ক্যানভাসে একটি মেয়ের পূর্ণাঙ্গ অবয়ব এঁকে চলেন. তার যাপনকথার . তার শরীরের বেড়ে ওঠা..প্রথম শাড়িতে সাজা প্রথম শ্রাবণে, মন আর চেতনাও পরিণতি পায়..তাদের রঙে পান্না হয় সবুজ আর চুনিও ওঠে দিব্যি রাঙা হয়ে. কন্যেটি আলতো লক্ষ্মীমন্ত পায়ে পেরিয়ে যায় সুখ দু:খের আলপনা আঁকা করুণ রঙিন পথ , নিজেকে খুঁজে পায় , চিনে নেয় নিজের চোখ দুটি দিয়ে. অন্যের চোখেও. যবনিকা কম্পমান. যবনিকা নেমে আসে পুরনো অভ্যস্ত জীবনের ওপর. যবনিকা উত্তোলিত হয় নতুন আলোমাখা দিগন্তরেখাটিকে স্পর্শ ক'রে .

    আমি বিহ্বল মুগ্ধতায় দেখি আমিও এই দীর্ঘ পথ স্বাতীর পাশে পাশেই কেমন হেঁটে গেছি , আমিও ওর সঙ্গেই কখনো থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছি সংশয়ে, দ্বিধায় , কখনো চিনে নিয়েছি আমার ভালোবাসাকে. একই সঙ্গে আমিও তো আঁচলে বেঁধেছি কল্পলোকের চাবির গোছা, আমিও দু'হাত দিয়ে ঠেলে সটান প্রবেশ করেছি মনোজগতের অন্ত:পুরে . স্বাতী আর আমি, আমি আর স্বাতী...নিজের ছায়ার সঙ্গে কি যুদ্ধ করা যায় ? সে যে পাশে পাশে থাকে. আলোয় আর অন্ধকারে.

    " হৃদপিণ্ড .স্পন্দনের পিণ্ড . চোখ নেই, চোখ খোলা,খোলা জানালা কালো, বাইরে কালো, কালো আকাশে তারা ; দূরে, পারে, পরপারে; হ'যে যাওয়া, না-হওয়া , হ'তে থাকা, চিরকালের; আকাশ -ভরা স্তব্ধ তারা তাকিয়ে থাকলো ".
  • | 24.97.***.*** | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২০:৫৩598853
  • কলেজে ফার্স্ট ইয়ার, তখন পড়েছিলাম। আমার কেমন যেন আড়ষ্টমত লেগেছিল, আর ফিরে পড়া হয় নি। আপনি লিখলেন দেখে মনে পড়ল।

    পাঠপ্রতিক্রিয়া লেখা চলুক হইহই করে। আজকাল পাঠপ্রতিক্রিয়া ফেসবুকের 'বইপড়ুয়া' গ্রুপ ছাড়া আর খুব একটা দেখি না। আরো লিখুন, একমত হই বা দ্বিমত, পড়ব মন দিয়ে।
  • Suhasini | 125.***.*** | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:০৪598854
  • ভালো লাগছে পড়তে। আমার অন্যতম প্রিয় বই - রচনাবলীর ওই খণ্ড নিয়ে রামপুরহাটের বাড়ির ছাদের সিঁড়িতে কত যে দুপুর কেটেছে...
  • sosen | 125.242.***.*** | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৯:১১598855
  • আমার অন্যতম প্রিয় বই, কথায় আঁকা ছবির জন্য।
  • কৃশানু | 213.147.***.*** | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২০:১৭598856
  • দ দির সাথে হুবহু মাইল গ্যালো। কলেজ, ফার্স্ট ইয়ার। আড়ষ্ট।
    হয়ত আবার পড়া উচিত আমার, অনেকের প্রিয় বই এটা।
  • pharida | 192.68.***.*** | ০২ মার্চ ২০১৩ ০০:৪০598857
  • ইশ। এটা কি করে মিস করে গিয়েছিলাম।

    সেই কতদিন আগে পড়েছিলাম চেয়ে নিয়ে। প্রথম দু একটা পাতা পড়ার পর রেখে দিয়েছিলাম। বেশ কয়েকমাস পরে প্রশ্ন – ফেরত দিলি না?

    কি ফেরৎ দেব – ও হ্যাঁ তিথিডোর। দাঁড়া পড়ে নিয়ে দেব।
    -পড়িসনি? এখনো?

    কী এমন বই রে বাবা। এত আকুল হওয়ার কি আছে এতে। এইসব ভাবতে ভাবতে সেদিন পড়েছিলাম, সেই রাত পড়েছিলাম। ঘোরের মতো লাগছিল। কত কথা তৈরি হচ্ছিল মনে মনে, বলেছিলাম সেইসব ।

    সেদিন নয়, তার পরের দিন ও নয় । আরো পরে, অনেক পরে।

    তিথিডোর বই নয়। অন্য কিছু। তৃষাকে ধন্যবাদ। অজান্তে এক স্বপ্নকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য।

    আরো জাগিয়ে রাখা বিষয়ের আবদার রাখলাম।
  • Paramita | 190.215.***.*** | ০২ মার্চ ২০১৩ ০০:৫৮598858
  • তিথিডোর নিয়ে রুচিরার লেখা একটা টই ছিলো না? সেটা পড়তে ইচ্ছে করছে। আমি আবার অনুসন্ধান ব্যবহার করতে পারি না।
  • Ruchira | 109.67.***.*** | ০২ মার্চ ২০১৩ ০৬:০২598859
  • সেটা টই না, তুমি একটা Yahoo group খুলেছিলে সেখানে কথা হয়েছিল
  • san | 24.98.***.*** | ০২ মার্চ ২০১৩ ২১:০৫598860
  • সামহাউ এই বইটা আমার বিশেষ ভালো লাগেনি। এদ্দিন ভাবতাম আমি একাই এরম ভুলভাল ঃ-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন