এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • অমর মিত্র -এর লেখালেখি

    Somnath
    বইপত্তর | ০৩ নভেম্বর ২০১২ | ১৯৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • .... | 127.194.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০১২ ০০:০৬577489
  • স্যাম্পেলঃ ছোটোগল্প

    মানুষী মাহাতোর জীবন-মরণ
    ==================
    অমর মিত্র

    আমরা জানি, আমরা ছাড়া জানবে কারা, কোথায় মানুষী মাহাতো শুয়ে আছে, লাশ তো আমরা মাটি চাপা দিয়েছিলাম। এই বনকাটির খালপাড়ে তারা আছে। সাত বছর আগে এই দিনে কুসুমডি-সাপধরা থেকে আনা হয়েছিল, গো-গাড়িতে লাশ, তার উপর নীচে খড় বিচলি। এন্তাজ আলি ধীরে বলে যারা সব বুঝি সে খাতায় লিখে রেখেছিল। কী রকম মনে আছে তার! সেদিন ছিল ফাল্গুনের অষ্টমী তিথি, শুক্ল পক্ষ। ধড়ের কোনো খোঁঝ থাকল না, মুন্ডর অধের্কে দগদগে ঘা- এর মতো আগুন, বাকি অর্ধেকে নিকষ কালো মেঘ। বনকাটির লোক, তার ভিতরে দুটো জোয়ান, চারজন আধবুড়ো অন্ধকারে বসে কিছু একটা বলাবলি করছিল। বলছে এন্তাজ আলি, শুনছে আর পাঁচজন। গোপেন, বিজলী, শিবু, গুরুদাস আর সুরদাস, যমজ দুই ভাই, দুই কোদালিয়া। এন্তাজই সাঁঝবেলায় ঘরে ঘরে গিয়ে পাঁচজনকে ডেকে এনেছে অন্ধকার খালপাড়ে। বনকাটির এই খাল বারো মাইল পশ্চিমে কুসুমডি, সাপধরা ফুঁড়ে জঙ্গলে গিয়ে ঢুকেছে। আসলে উল্টো, জঙ্গল থেকে অজগরের মতো ঘুমঘুম ভাব নিয়ে বেরিয়ে এসে এগিয়েছে। শালজঙ্গলের ভিতর ওর জন্ম। মাটির তল থেকে উঠেছে শোনা যায়। এরা কেউ ওর জন্ম দ্যাখেনি। সারাবছর আধা শুখা, আধা জলের ধারা নিয়ে পড়েই থাকে বনকাটির খাল, কুসুমডির খাল, সাপধরার খাল। মৌজায় মৌজায় তার আলাদা আলাদা নাম।
    মাথা খারাপ হলো নাকি এন্তাজের? এসব কথা বলে এখন বলে লাভ কী, সেই লাশের এখন কী পাওয়া যাবে? যা ভুলেই যাচ্ছিল সবাই, তা আবার মনে করা কেন? বিজলী মান্না বলল, থুয়ে রাখো, আমরাই বিপদে পড়ব।
    পড়ি পড়ব, কিন্তু ক’দিন ধরে আমার ঘুম হচ্ছেনি, জানলা দিয়ে দেখি সাপধরা মানুষী মা'তো’ পিছনে তার সোয়ামী বিলাস, তার পিছনে সায়েবালি, তার ডাইনে গণেশ পাল-সব উঠনে দাঁড়ায়ে, সাতটা লাশ আমার উঠনে।
    তুমি দুঃস্বপ্ন দিখেছ। বলল বিজলী মান্না।
    এতদিন তো দেখি নাই।
    তুমার ডর লেগেছ্যে? শিবু সর্দার বলল।
    ইসব কথা তুলা কেনে, যা ইবার হঁই গিঁছে, আমরা তো ভুলে গিছিলাম। গোপেন মন্ডল বলে। এন্তাজ আলি বলল, মানুষী মাহাতোর কথা মনে আছে?
    অস্থির হয়ে ওঠে বিজলী মান্না, আমরা তার কী জানি, সে তো বাইরের লোক বরল্য।
    চুপ করে থাকে এন্তাজ আলি। অন্ধকার খালপাড় থেকে ওপারে তাকায়। হেলঅ বট কি দেখা যায়? আকাশ ভর্তি কত তারা, তাদের কত নাম। মানুষী মাহাতো তারাদের নাম জানতা সে গোরে চলে গেলে সেই সব নাম আর কেউ জানে বলে মনে হয় না। মুছে গেছে ওদের পরিচয়। ইসব কথা কহার জন্য ডাকা করলে? বিজলী মান্না জিজ্ঞেস করে।
    ইসব কথা কি কথা লয়? এন্তাজ বলে, এতদিন ডাকা করত মাতিসার, কেন ডাকত তা ভুলে গেলে?
    ডাক এলেই ধরা হত অপারেশন আছে। মাইতিস্যারের একটা কথা কাউকে মাথা তুলতে দেওয়া হবে না। কে কী করচে তার খবর সে পেয়ে যায়। কে খবর দেয়? না, থানা। জেলার আই, বি। জেলা থেকে খবর মহকুমা থেকে ব্লকে। সেই বিডিও যে কথা শুনছে না, তা জানা যাচ্ছিল, কিন্তু, শুনবে না কেন, সাহস পায় কোথা থেকে? চুনোপুটি বিরোধীরা হিসেব চাওয়ার হিম্মত পেল কোথা থেকে? সেই কুসুমডি থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত মেম্বর মেম্বর মানুষী আর তার স্বামী বিলাস কী করে বিরোধী হয়ে গেল। থানা বলছিল, ওদের দুজনকে নজরে রাখুন, ওরা কিন্তু মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠছে।
    এই খালপাড়ে দুদিন আগে মাইতিস্যার তাদের নিয়ে এসেছিল। আজ শুক্লপক্ষের অষ্টমী, সেদিন ছিল ষষ্টী। খাল পাড়ে মাইতি বলল, কুসুমডি আর সাপধরা আর আমাদের নেই, তবে করে নিয়া হবে, সব ঠান্ডা করে দিয়া হবে।
    নেই কী করে জানা গেল? বিজলী মান্না জিজ্ঞেস করেছিল।
    মাইতস্যার চুপ করে ছিল। এই গোপেন মন্ডল ধমকে উঠেছিল, মাতিস্যার বলছে, মাইতিস্যার যা বলবে তাই-ই সত্যি, জিজ্ঞেস করো কোন মুখে, কথা ভুল হয় স্যারের?
    ডাকা করা হোক। তবু বলেছিল এই বিজলী মান্না। শুনে এন্তাজ আলি বলেছিল, স্যারের কাছে খবর আছে নিশ্চয়। এন্তাজের কি তা মনে আছে? এন্তাজই থামিয়ে দিয়েছিল বিজলি মান্নাকে। গোপেন তখন বলেছিল, ওরা ভিতরে অনেকদূরে গেছে, এখন কী হবে?
    মাইতি বলেছিল, থাক, ভুল করছে, বুঝতে পারলে ঠিক শুধরে নেবে, ওরা বনপার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করছে, জানে না বনপাটি করলে কী হতে পারে।
    ডাকা করে বলত্যে হব্যে তো, এটা ঠিক হচ্ছেনি, জানাতে হব্যে তো। আবার বলেছিল বিজলী মান্না, মানুষী আর বিলাস আসুক, বুঝনি হোক।
    মাইতি আর কথা বলেনি। বিরক্ত হয়েছিল তা টের পেয়েছিল বিজলী মান্না। আর মাইতির কথা সত্য হয়েছিল ক’দিন বাদেই। শোনা যায় মানুষী আর বিলাস মাহাতো বিরোধী দলে ঢুকে পড়েছিল গাঁয়ের আর সবাইকে নিয়ে। গোটা সাপধরা, কুসুমডি বিরোধী পার্টির হয়ে গিয়েছিল। মাইতির কথা ছিল তাই। মাইতি বলেছিল, বনপার্টি দিচ্ছে তাই হচ্ছে। এ দিকে বিরোধী কেন হবে কী কারণে হবে, তোমার নিজের ক্ষোভটা কী তা বলো, পূরণ করে দিচ্ছি,পার্টির কাছে তোমার আশা কী? এখেনে বিরোধী পার্টি বলে থাকবে না, যদি থাকে তারাও মাইতির কথায় চলবে।
    সেই মানুষী আর সাতজনের লাশ এসেছিল দোল পূর্ণিমার সাতদিন আগের রাতে। তাদের কাছে সন্ধেয় খবর এসেছিল বড়ি আসবে, বডি পুতে দিতে হবে। অপারেশন হয়ে গেছে। আশপাশের দশবিশ গাঁয়ে যে লাশ পড়বে, তার গতি করবে তারা। এদিকে করা অনেক সেফ, বলেছিল, মাইতি। নজরে রাখা যাবে। পুলিশও এদিকে আসবে না, ফলে লাশ তুলতে পারবে না কেউ। আস্তে আস্তে মাটির তলায় লাশ মাটি হয়ে যাবে, নিকেশ করে দিতে পারলে আর কেউ মাথা তুলবে না।
    লাশ এসেছিল মধ্যরাতে। তার ভিতরে মানুষী। মানুষীর গায়ে কোনো কাপড় ছিল না। খড়-বিচুলি সরাতেই উদোম নারী। জিভ বেরিয়ে গিয়েছিল, দু'চোখ ভয়ানক আতঙ্ক। আর সব বডিতে গুলির দাগ, একটা নয়, সাতটা আটটা করে। রক্তে মাখামাখি জামাকাপড়। শুধু মানুষীর গায়ে রক্ত ছিল না, চোখ ঠেলে বেরিয়ে এসেছিল। মরা চোখের ভয় জীয়ন্ত মানুষগুলোর ভিতরে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। গাড়োয়ানকে বিজলী জিজ্ঞেস করেছিল, কাপড়ে ঢেকে আনলে না?
    যেমন দিঁইছে, তেমন আনা করা হলো। এক গাড়োয়ান বলেছিল।
    আর একজন চাপা গলায় বলেছিল, গলা টিপে মারা, মারার আগে রেপ হঁইছে কয়েকবার।
    মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল বিজলী। ততক্ষণে খালপাড়ে কোদাল পড়ছিল। মাইতি স্যার এসে ঘুরে গেল, বলল, একশো দিনের কাজের ফান্ড থেকে সব লেবার-চার্জ হয়ে যাবে, বলা আছে বিডিওকে, সমিতিকে।
    এই রাতে কেন করা হলো! কোদালিয়া গুরুদাস বলেছিল, অষ্টুমির চাঁদের তেজ দেখছ্য।
    হঁ, চাঁদের আলোয় এসব করা কঠিন হয়্যে পড়ে, চাঁদ না থাকত্যে লিয়ে এল্যে ঠিক হতো।
    অষ্টমীর চাঁদের আলোয় সব থমথম করছিল। এত আলো যে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। খালেরএপার ওপার, ওপারের ঝাঁটিজঙ্গল, তার পশ্চিমে হেলা বট, বটের ডালপালা, সব।
    খালের এদিকের প্রত্যেকটা মানুষকে দেখা যাচ্ছিল স্পষ্ট। খাল ছেড়ে, তার পাড় ছেড়ে নামাল জমি অনেক দূর অবধি গড়িয়ে উঠতে আরম্ভ করেছিল সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে। এদিকের জমি এমন। উঠতে উঠতে এক সময় তা থেমেছিল। তারপর তা যেন আকাশে মিশে গিয়েছিল। এমনিতে এতটা দেখা যায় না। এন্তাজ আলি দেখতে পেয়েছিল সব। দেখছিল এতটা এসে বলদ চারটের জিভ বেরিয়ে গিয়েছে। ভাগাভাগি সাতটা লাশ বয়ে এনেছে, মরা মানুষের ভার জীয়ন্তর চেয়ে বেশি। তারা তো সব সঙ্গে নিয়ে গোরস্থানের দিকে যায়। বিজলী তাকে বলেছিল, এত জুছনার ভিতরে হব্যে?
    গোপেন বলেছিল, করত্যে তো হব্যে, বডি এস্যে পড়্যেেছ, বড়ি তো রাখা যাবেনি।
    এন্তাজ এত সময়ে কথা বলেছিল, আদ্দেক চাঁদ, তবু তার তেজ দ্যাখো, চাঁদটা যেন ক্ষেপে গিঁইছে, রাতির হিম পুড়াই দিঁইছে গো।
    হঁ, এই গোপেন বলেছিল, এখন গতি না করলে উপায় নাই, কুকুর টের পেয়েও ডাকছেনি, মাতিরে কে না ডরায়, মাতির কথা না শুনল্যে উয়াদেরও রেয়াই নাই।
    তা তুমি এখন কী করতে চাও? জিজ্ঞেস করল সেই গোপেন।
    তারপরেও তো বডি পুতা হঁইছে, এন্তাজ বলল।
    হঁ, হঁইছে, তো কী হলো?
    আমি আর সহ্য করত্যে পারছিনি গুপেন, আমরাও কি দোষ করি নাই?
    মাতি করাল, তাই করা হল্য, মাতি করাইছে। গোপেন বলল।
    বিজলী মান্না বলল, হঁ, মাতির বড় রোষ!
    চুপ করে থাকে এন্তাজ আলি, দম নিয়ে একটু বাদে বলে, দোজখেও আমার জায়গা নাই, গোরস্থানের চারদিক ছোট হয়্যে আসব্যে, চেপ্যে ধঁইরব্যে আমারে।
    তুমি এমন করছ কেনে, সাত বছর হঁই গিইছে মানুষী মা'তোর কেস, কারো মনে নাই।
    উয়ার বাপ মা?
    তখনই উয়ার বুড়া, শুনা যায় পুরুল্যার দিকে চলি গিঁইছে কানতে কানতে, উদিকে বড় মেয়্যা থাকে।
    বিলাসের কেহ নাই?
    উ তো গোপবল্লভপুর থেক্যে আসছিল কামকাজের খোঁজে, ইদিকে উয়ার কেহ নাই।
    এন্তাজ বলল, আমার উপরালা আছে গুপেন, মনে হয় সব বলে দিলে যেন বাঁচি।
    মাতি, মাতি কি ছেড়্যে দিবে তা করল্যে?
    সে তো নাই, পলাইছে, নাই যখন আমাদের উচিত সব পকাশ করে‌্য দিয়া। বলতে বলতে এন্তাজ আলি বিড়ি ধরাতে গিয়ে তার খ্যাঁচাকল লাইটার শুধুই চাপ মেরে যায়। তা দেখে গোপেন দেশলাই জ্বালিয়ে ধরে তার মুখে। বিড়ি ধরিয়ে এন্তাজ আলি ধুঁয়ো ছেড়ে বলল, মাতি যাদের আনা করছিল চাকুল্যে, ধলভূমগড় থেকো, তারা বলে সাতজন মিলে মানসীরে ছিঁড়ে খেয়্যেছিল শেল শকুনের মতো।
    হঁ, গোপেন বলল, মাতি অমনই করত্যে বলেছিল।
    তোরে কে বলল?
    গোপেন বলল, গাড়োয়ান জুড়ান পল্লে, সেই বেঁটে মতোন, কটা চোখ বিড়েলের মতোন।
    তুই তো বলিসনি? এন্তাজ বলল।
    না, কেনে বলব, বলার উপায় ছিল?
    জুড়ান পল্লে তো মরেছ্যে। এতক্ষণে বলল বিজলী মান্না।
    হঁ, উয়ার বড়ি পড়েছিল বনের ভিতর।
    কে মারল? এন্তাজ জিজ্ঞেস করে।
    বনপার্টি হব্যে। গোপেন বলল, ঠিক জানা নাই, আর এক গাড়োয়ানও নাই।
    নাই কেনে? এন্তাজ জিজ্ঞেস করে।
    তাও জানা নাই। গোপেন বলে চুপ করে থাকল।
    কোথা গেল সে?
    গোপেন জবাব দিল না। কিন্তু সবাই যেন জবাব পেয়ে গেল। অন্ধকারে সব নিঃঝুম হয়ে থাকল কিছু সময়। শিবু র্সদার, বিজলী মান্নার মনে পড়তে থাকে সেই অষ্টমীর রাতে কথা তার সাত দিনের মাথায় দোল পূর্ণিমায় জুঝি অত আলো হয়নি। মনে হচ্ছিল বড় বড় আলো জ্বালিয়ে দিয়ে রাতকে দিন করে দিয়েছে মাইতিস্যার। কিন্তু তো দরকার ছিল অন্ধকার। মাইতি কেন তখন অত আলো করে দেবে খাল পাড়। কোদাল পড়ছিল ঝপঝপ। কোদালিয়া তিনজনের একজন সুরদাস বলল, কী, বেপার বাবু, এক্কেরে দিনমানের মতো লাগছ্যে, ঘাম দিছে কী র’ম।
    আর একজন, তার যমজ গুরুদাস বলল, বাপরে জুছনার এত তাপ!
    হঁ, বোশাখখো মাস মনে লয়। সুরদাস বলেছিল।
    বিড়াল- চোখো গাড়োয়ান তখন জিজ্ঞেস করল, বডি মাটিতে নামানো হব্যে কি?
    না, এক্কেরে কবরে ফেলে যাবি।
    কবর দিয়ার কথা তো হয় নাই।
    তবে কী কথা হঁইছে?
    লাশ রেখ্যে হামরা চল্যে যাব, রাতির ভিতরে পৌঁছুতি হবে। বিড়াল- চোখো বলেছিল।
    মেয়্যাছেলেটারে ঢেক্যে আনতি পারিসনি।
    হামরা ঢাকার কে, যেমন দিল, তেমন আনা হলো, তাড়াতাড়ি করো, গিয়ে গাড়ি ধুয়ে হামি বড়শিমালিয়া শালিঘর যাব, ডর লাগছ্যে, মেয়্যাছেলেটারে এমনভাবে মারল, কুকড়ার মতোন গলা ছিঁড়ে দিল বলা যায়।
    সেই বিড়াল- চোখো গাড়োয়ান, জুড়ান পল্লে যে গেল শালিঘর, আর ফিরল না। আর একজনও তই। নিপাত্তা হয়ে গেল। এ খবর গোপেন পেয়েছিল ওই কুসুমডি গিয়ে। কুসুমডি এরপর একেবারে শান্ত। শান্ত কুসুমডি আরো শান্ত হয়ে গেল। পুরুষরা সব উধাও হয়ে গেল। বনের ভিতরে গিয়ে সিধোল। তারা রাতে ফেরে শোনা যায়, দিনমানে পুরুষ শূন্য হয়ে গাঁ ঝিমোয়। পুলিশ তদন্ত করল। তদন্ত শেষও হলেঅ। কিছুই বেরোয়নি। কী ঘটেছিল তাও জানা যায় না। কেউ মুখ খোলেনি। মাইতি গিয়ে বড় জনসভা করে এল। মিছিল হলো। মিছিলে বুড়ি, বুড়ো, বউ আর মেয়েরা, কচি কাঁচারা হাঁটল।
    এন্তাজদের কাছ ছিল লাশ তুলে খানায় ফেলা। তারা চারজন, কোদালিয়া দুজন, গাড়োয়ান দুজন। ছ’জন ছিল সেই আশ্চর্য সেই চাঁদের আলোর ভিতরে। আর ছিল তাদের ছয় ছায়া। ছায়ারা তাদের সঙ্গে ঘেঅরাফেরা করছিল। ছ’টা মানুষ বারোটা হয়ে সেই জল শূন্য খালের পাড়ে নড়ছিল, এদিক ওদিক করছিল।আর সাটা লাশ চুপ করে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। তাদের দেখছিল।
    এন্তাজ বলেছিল, মা’তো বউ এভাবে মরল, কমরেড তো ছিল বটে।
    চুাকুল্যে-ধলভূমগড়ে ওরা ওই করে বেড়ায়, মেয়েছেলে পেলে ছাড়ে না। গোপেন বলেছিল।
    আর এক গাড়োয়ান বলেছিল, তাড়াতাড়ি করো, কী থেকে কী হয়ে যায়, যা হঁইছে আজ আর কোনোদিন কেউ মাথা তুলবেনি, ডর লাগাই দিঁইছে এমুন, ডর লা লাগল্যে উয়ার ফের মাথা তুলব্যে।
    এন্তাজ বলল, মা'তো বউরে মাতি পছন্দ করত, তা মনে আছে?
    হাঁ বলল গোপেন, কে না জানে।
    মা’তো বউরে বলেছিল সদরে আসত্যে, সদরে উয়ারে কাজ দেবে।
    কে বলেছিল এ কথা?
    সে বলেছিল, মা’তো বউ মানুষী। এন্তাজ বলল।
    তোরে বলল কেনে?
    আমার সঙ্গে বড়ভাই পাতাল সেই গোধরা -- গুজরাতের সময়, ফোটা দিল।
    তারপর কী হলো? তারপর তো গোপবল্লভপুরের বিলাস এল, তখন তার গলঅয় মানুষীরে ঝুলায় দিয়ে মাতি তারে নিয়ে থাঁইকবে এমন কথা ছিল, কিন্তু সে বলল, না, বিলাসরে তার পছন্দ হঁইছিল।
    আমরা জানি। বিজলী মান্না বলল, সব জানা আছে।
    মানুষীর অমুন মরণ আমি ভাবি নাই।
    কে ভেবেছিল? গোপেন বলল।
    মাতি জোর করছিল মানুষীরে। এন্তাজ বলল।
    হঁ। বাকি সবাই এক সঙ্গে বলল সেই অন্ধকারে। বিড়বিড় করতে লাগল, মানষী, মানুষী মানুষীর কথা নিয়ে। মনে পড়তে লাগল সেই ছিন্নভিন্ন মানুষীকে। তলপেট থেকে ক্ষত চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল। রক্ত জমে নিম্নাঙ্গ কালিবর্ণ ধারণ করেছিল। ঊরু কুবলে নিয়েছিল যেন বাগের থাবা। সেই চাকুল্যের লোকগুলো এদিকে এসেছিল। মাইতি তাদের রেখেছিল ইস্কুল ঘরে তিনদিন। সেই তিনদিন ইস্কুল বন্ধ করা ছিল। তারা সব ষাঁড়ের মতো এক একজন। দেখেছিল এন্তাজ। মাইতি তাকেই সবচেয়ে বিশ্বাস করত। কেন করাত তা কে জানে? হয়ত তার সঙ্গে মানসীর কথা চলত, তাই। ফোটা দিয়ে বড় ভাই করেছিল তাকে, তা জেনেই। তাকে কি বলেনি মাইতি, মাহাতো বউরে বুঝাতে পারবি, উয়ার অনেক কাজ, ব্লকে এস থাকুক, পার্টি ওর ভার নেবে, বিলাস থাকুক ওদিকের দায়িত্বে। সোয়ামী ছেড়ে আসবে কী করে‌্য?
    তা বটে। বুদ্ধিমান মাইতি আর বলেনি। কিন্তু সে হলো বাঘেরও বাঘ। শিয়ালেরও শিয়াল। সে খবর রাখছিল। মাহাতো বউ বুঝতে পারছিল মাইতি াতকে ছাড়বে না। তখন ওদিকে বিরোধী মত উঠছিল, স্বর শোনা যাচ্ছিল, বনের ভিতর বন-পার্টি বাসা বাঁধছিল। মাহাতো বউ-এর রোষ খুব। মাইতির ডাক ফিরিে য় ফোঁস করেছিল সে, মানুষীর কোনো মান নাই, সে কি তুমার কমরিড হবেনি মাতিস্যার?
    সে একটু একুট করে সরে যাচ্ছিল মাইতির থেকে। মাইতির কথা ছড়া কোনো কাজ হয় না, মাইতি তখন কুসুমডি, সাপধরার টাকা ছাড়ছিল, ওদের ভাতে মারব। কেন মারবে, তার জবাব নেই। মাহাতো বউ এসেছে রিলিফের দরবারে, মাইতির কোনো নির্দেশ নেই। মাহাতো বউ হকের কথা বলতেও সেই কথঅ, মাইতস্যার বলে দেবে কার কী হক, কার কী পাওনা, তবেই তো বিডিও অভিস দেবে, বিপিএল কার্ড মিলবে, বিধবা ভাতা মিলবে, বার্ধক্যভাতা মিলবে। তার কথায় সূর্য ওঠে, চাঁদ ওঠে, পুন্নিমে অমাবস্যা হয়। আকাশে মেঘ হয়, কুয়োর জল শুকোয়, শুকোয় না। সেখেনে মানসী মাহাতো তাকে না করে কী করে? মহাতো বউ খালি হাতে ফিরেছে যখন থেকে, তখন থেকে বিরোধী হয়ে পড়া শুরু। মাইতি বোঝেনি এতটা হতে পারে। তার দেশে তার বিপক্ষে কেউ যেে পারে তা ছিল অসম্ভবের কথা। তা-ই শুরু হয়েছিল। কেন গাঁয়ে লোক না খেয়ে থাকবে, কেন কেউ কিছুই পাবে না। বিলাস আর মানসী মাহাতো একবার সাপধরা কুসুমডির লোক নিয়ে এসে বিডিওকে দাবীপত্র দিয়ে গেল। শ্লোগানে শ্লোগানে চারদিক কাঁপাল। কাঁপালই, কেননা কার বুকের পাটা আছে এদিকে, এদেশে মাইতির কতৃত্ব নিয়ে নাম না করেও কথা বলে। পঞ্চায়েতে প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলেও কার হুকুমে সব বন্ধ থাকে?
    মাইতি ডেকেছিল বিলাস মাহাতো আর দলের অন্য পাঁজনকে। সব মিলে ছয় না সাতজজন এসেছিল। যাকে ডাকেনি সেই মানসী মাহাতোও এসিেছল। কথা যা বলার মানসীই বলেছিল, সাপধরা কুসুমডি কি না খেয়্যা থাকবে? কী জবাব দেবে তারা? মাইতি বলেছিল, বিডিওকে সব বলা আছে।
    বিডিও তাহলে না বলে কেনে?
    অসুবিধে আছে তাই না বলে।
    কী অসুবিধা তা হামরা জানব। মানসী বলেছিল, সরকারের পাঠানো চাল গম ডিলার বিচে দেয় কেনে?
    কে বলল বেচে দেয়?
    হামরা জানি, ডিলারকে ধরা হোক, হামরা ধঁইরব।
    আইন শৃঙ্খলায় হাত দিয়ো না, ফুড ইনসপেক্টারকে বলে দিচ্ছি।
    উ তো মাসগেলে টাকা পায় দঁডপাটি ডিলার থিকে, উ লককে হামরা কি বলি নাই?
    তুমি দেখি সব জেনে বসে আছ মানুষী, যা বলছি তা করো।
    কী বলছ তুমি মাতিসার?
    এখন কোনোকিছুই হবে না, তোমাদের ভাগ অন্য মৌজায় যাচ্ছে, সেখানে দরকার আরো বেশি।
    তাদের ভাগ কী হলো?
    সব কি বলতে হবে?
    এক জায়গার কোটা আর জায়গায় যায় কী করে‌্য, কে তুলে নেয় সে কোটা?
    মাইতি বলেছিল, মানুষী মাহাতো, মাইত আর জবাব দেবে না, তোমরা যাও।
    কেনে যাব, হামাদের পাওনা হামরা চাই।
    তারপর তো তারা আলাদা হয়েই গেল। মানুষীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল এন্তাজ আলির ব্লক অফিসে। মানসী বলেছিল, মাতি সার শোধ নিচ্ছে, তুমি তা বুঝো নি বড় ভাই?
    কিন্তু সে ছাড়া তো উপায় নাই।
    হামরা হকের দাবী ছাড়বনি।
    দাবী তারা করে যাচ্ছিল। মাইতিরও রোষ বাড়ছিল। মাইতি বরত, তার কাছে এসে মাথা নাত করে দাঁড়াক কুসুমডি, সাপধরা, সে সব করে দেবে, কিন্তু দাবী করলে দাবী আদায় করা যাবে না।
    কারোর কোনো হক থাকতে পারে না এটা জানা দরকার, সব তার পার্টির অধীন এটা কি সাপধরা কুসুমডি জানে না?
    হঁ, ঠিক কথা। এন্তাজ বুঝতে পারছিল জটিল হয়ে যাচ্ছে সব। মাইতিস্যারকে বাদ দিয়ে কিছু হয়? এটা কি জানে না মানষী মাহাতো? মাইতিস্যার বলছিল, ওদের সঙ্গে বনপার্টির যোগাযোগ হয়েছে।
    মাইতস্যার বলছিল, বনপার্টি সরকার উৎখাত করতে চায়, এর পিছনে বিদেশী শক্তি।
    এন্তাজ শুনেছে সব। প্রথমে কথা বলেনি, পরে বলতে হয়েছে। না বললে মাইতস্যার খুশি হয় না। আর মানুষী মাহাতোর সঙ্গে দেখা হত না। সে বলেছিল, তাদের হয়ে কথা বলতে, আওয়াজ তুলতে। তার করার ক্ষমতা ছিল না তার। সে কী করে আওয়াজ তুলবে? এন্তাজ বলল, আমি তো দাস হঁই ছিলাম, তাই মানুষীর লাশ আমারে দিয়া কবর দিয়ালো মাতিসার, রায়েটের সময় ও আমারে ফোটা দিল কুসুমডি, নিজির ঘরে ডেকে নিয়ে।
    বিজলী মান্না বলল, আমরাও তো দাস হয়ে ছিলাম মাতির।
    আমরা মাতির কথায় গোর কেট্যেছি, লাশ পুতেছি, মাতি আমাদের গোরকোন করি দিঁইছিল। কোদালিয়া গুদুদাস বলল, গোরকোন তো আমরা দু’ভাই আমি তো কোদাল মেরে মেরে গোর কেট্যে কেট্যে।।। উফ সব ভুলি গিছিলাম তারপরেও তো গোর কেট্যেছি, শিলাবতীর চরে পাঁচাটা বডি এল একসঙ্গে, আর একবার এল হাফ পুড়া কঙ্কাল, ডোমের কাজ ইয়ার চেয়্যা ভাল।
    সবাই চুপ করে আছে। সেই আগুনে জোছনা ফিরে এল বুঝি আবার। মানুষীর বডি খড় দিয়ে ঢেকে দিয়ে নীচে শোয়ান হলো। তারপর পর পর ছ’টা বডি। খড়ে ঢেকেও চাপা দেওয়া যাচ্ছিল না মানুষীকে। চাঁদের আলো সব আরো খুলে দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল জোছনার তেজে খড়ে আগুন ধরে যাবে। মনে হচ্ছিল এও মাতির কারসাজি। এমনই দাপট তার যে চাঁদের আলোও বুঝি রৌদ্রকিরণ হয়ে উঠতে পারে। তারপরে আচমকা এন্তাজের মনে হয়, মানুষীর জন্য হচ্ছে এমন। মরা মানুষীর ছিন্নভিন্ন দেহ থেকে আগুন বেরিয়ে আসছে। মাইতি একদিন বলেছিল, ওর কত তেজ, তেজ ভাঙব এমন করে, মেয়েছেরে আবার মানুষ! ওরা হলো মেয়েমানুষ, মেয়েমানুষের কাপড় খুলে দিলে সে লুকোবে কোথায়?
    এন্তাজ বলল, মরা মানুষীরে কবরে না ঢুকোলে আগুন ধরে যেত সবদিকে।
    বিজলী মান্না কেন আর সবাই শিহরিত হলো এই কথায়। মনে পড়ে গেল বিজলীর। মাইতির ওই কথা তারও তো শোনা। মাইতি যখন রোষ প্রকাশ করত, তখন ধরেই নেওয়া যেত শোধ নেবে মাইতি স্যার। কিন্তু ওই সময় ধরে নিয়েছিল ও হলো কথার কথা। মেয়েমানুষ নিয়ে পুরুষমানুষ অমন কথা বলেহ থাকে । বলে সুখ পায়। কিন্তু লাশগাড়ি যখন পৌঁছল, আর খড়বিচুলির ভিতর থেকে যখন বেরিয়ে এল উদোম মানুষী, ধরা গেল মাইতি যা বলে, তা করতে পারে। সে হিম্মত তার আছে। শীত করেছিল কয়েক মুহূর্তের জন্য। ভয় করেছিল। তারপরই জোছনায় সব পুড়তে আরম্ভ করল। মাটিতে শোয়ান মানুষীর তাপে হিমে ভেজা মাটি কেমন তেতে উঠেছিল। লাশ তুলে খানার ভিতরে ফেলে মাটি চাপা না দেওয়া পর্যন্ত চলল এমন। হ্যাঁ, তাই। বিজলী তখন বোঝেনি, এখন বুঝছে বলল, এন্তাজভাই, কথাটা ঠিক, মাটিতিও পা রাখা যাচ্ছিল নি মনে হয়।আমরা মাতির বাঁধা মজুর ছিলাম, পেটভাতার মুনষ ছিলাম মনে হয়। বিড়বিড় কলল কোদালিয়া গুরুদাস, বলল, খানা কাটত্যা হব্যে, কাটা করলাম, কেন খানা কাটা তা কি বুঝি নাই, কুছু বলার হক ছিলনি।
    বন্ধক দিয়া হঁইছিল আমাদেরকে, মাতি আমাদের খেয়ে ফেলছিল, আমরা পাপ করলাম। বিড়বিড় করল গোপেন, বলল, জানা ছিল কুসুমডি, সাপধরায় অপরিশন হবে, খবরও যদি দিয়া যেত, মানুষী ওরম ভাবে মরত না, কিন্তু মাতি জানত্যে পারত ঠিক, ভয় করল তাই।
    এন্তাজ বলল, মানষের তো একটা আত্মা থাকে, রুহ, রুহ বাঁধা পড়ে গিইছিল মাতির কাছে, না হল্যে মানুষীর লাশ মাটি চাপা দিয়ে রেহাই হলো আমাদের।
    তাই-ই হয়েছিল। লাশগুলো খানায় ফেলে মাটি চাপা দিয়ে তবে বাঁচা। তারপর সারারাত বসে থাকা, শিয়াল কুকুরে টেনে তুলতে পারে। এক এক রাতে এক একজন। এন্তাজ বলল, মাটির তল থেকে আগুন বের হত্য, টের পাও নাই? মানুষীর তেজ মারত্যে পারে মাতি। তেজ মরে নাই মানুষীর। গোরের ভিতরে পড়ে ফুঁসত, টের পাও নাই?
    হঁ, হঁ, বলল কোদালিয়া গুরুদাস, কিন্তু এখন ইসব কহে কী লাভ, দুঃখ হব্যে শুধু। এন্তাজ বলল, মানুষীরে মাটির তল থেকে বের করে আনি যদি?
    এ কহ তুমি এন্তাজ, তাহল্যে কেউ কি ছেড়্যে দিবে, মানুষ ফুঁসছ্যে, আমরা দুষী হঁই যাব।
    এন্তাজ আলি বলল, তুমার কি মনে পড়ে না মানুষীর কথা?
    পড়ে। বিড়বিড় করল বিজলী, জানতাম কুসুমডি, সাপধরায় যাবে চাকুল্যের লোকগুলি, মাতি আমারে কহিছিল, কিন্তু আমি খবর দিতে পারি নাই, আমার ও ডর লাগল।
    শুনতে শুনতে শিবু সর্দার বলল, আমিও বলত দুটা মৌজা বনপার্টি হঁই গেল, উয়ার মতিরে চিনেনি, মাতির রোষ জানেনি, মাতি কী করত্যে পারে জানেনি, বড় অপরিশন হবে জেনেও আমি চুপ করে ছিলাম, ডর লাগল খুব, মাতিরে আমার খুব ভয় লাগে।
    এন্তাজ আলি বলল, আমি জানতাম না, আমারে কহে নাই মাতিসার, কিন্তু সেদিন সাঁঝবেলায় ডেক্যে বলল কাজ আছে, তুমরাও তো ছিলে, খালপাড়ে ডেকে আনল্য, মনে নাই?
    তুমি যদি জানত্যে, খবর দিত্যে কুসুমডি, সাপধরায়? জিজ্ঞেস করল গুরুদাস কোদালিয়া।
    পারতেনি, আমরাও জানতাম কিছু একটা হচ্ছে, আমরা তো তিনদিন ভাত রেঁধেছিলাম ইস্কুল ঘরে চাকুল্যের লোকগুলোর জন্যে, তারা বলাবলি করত, জেনেও কিছু বলত্যে পারি নাই, মাতি বলল, কোনো কথা যেন কেউ না জানে। গুরুদাসের ভাই সুরুদাস বলল।
    হঁ, পারতামনি, মাতিরে খরিস কেউটে মনে হতো।
    সত্যই তুমি জানতেনি? জিজ্ঞেস করল গোপেন।
    আমরা সবাই জানতাম কুসুমডি সাপধরায় অপরিশন, তুমি জানতেনি?
    না, জানলে আমি পলাই যেতম হে।
    সত্য, নাকি জেনেও না জেনে ছিলে, পলানোর সাহস আমাদের ছিল? বলল সুরুদাসের ভাই গুরুদাস।
    মাথা নিচু করল এন্তাজ। বলল, মনে নাই জানতাম কি জানতাম না, কোদাল আনা করো গুরুদাস, সুরুদাস।
    কী হবে?
    গোরস্থান খুঁড়া হবে, মানুষীরে তুলে আনি।
    সবাই চুপ করে থাকল। তারপর আট বছর পরে আজও শুক্লপক্ষের অষ্টমীর চাঁদ উঠে এল। এও সেই ফাল্গুন মাস। আজও ধেয়ে আসছিল নিমফুলের গন্ধ। সেই মলিন জোছনা আজও ভেসে এল দূর আকাশ, মহাকাশ থেকে। জারুল গাছের ডালে বুড়ি পেঁচা বসে আছে ঠায় সেদিনের মতো।
    বিজলী মান্না বলল, হঁ, কোদাল আনা করো গুরুদাস সুরুদাস, মানুষীরে তুলা হোক, না তুললে মাতির শেকল-বাঁধা মুনিষ শিকলে বাঁধা-ই রহি যাবে, কারুর মুক্তি হবেনি।
    হঁ, আনা করো সুরু গুরু। বলল শিবু সর্দার। তারপরে গোপেন। সুরুদাস ওঠে, বলে, মাটি গরম হয়ে উঠছ্যে, টের পাও কেউ?
    হঁ পাই।
    জুছনা বেশি কর‌্যে ফুটতে লেগ্যেছে, টের পাও?
    হঁ পাই।
    তবে ডাকা করো বনকাটি, মনসাবাড়ি, দশহাজারি, আমলাশোল, সাপধরা, কুসুমডির মানুষজনকে ডাকা করো। বলতে বলতে হাঁক পাড়তে পাড়তে কোদালিয়া গুরুদাস চলল কোদাল আনতে। তার যাওয়া আসার ভিতরেই চাঁদের আলো দিনের রোদ হয়ে ঝলসাতে লাগল দশদিক।
  • .... | 127.194.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০১২ ০০:১০577490
  • স্যাম্পেল-২ঃ ছোটোগল্প

    বৃষ্টি বৃষ্টি
    ======
    লেখকঃ অমর মিত্র

    কত দিন জল হয়নি বলো ভাগ্নে, সব পুড়ে শেষ! মসলন্দপুরের হরিনাথ বিশ্বাস বলল।
    শুভশ্রী তার কথাকে সমর্থন করল, নেচার বদলে যাচ্ছে, কী যে হবে!
    মাথা নাড়ল বাসুদেব, বলল, প্রতি বছরই এমনি হয় কম-বেশি, আমরা ভুলে যাই, এ বার যখন শীতটা ভাল করে পড়ল, টানল অনেক দিন, তখন সবাই বলতে আরম্ভ করেছিল আর পারা যাচ্ছে না, এমন শীত বহু দিন পড়েনি, মানুষ সব সময় উত্তেজনা নিয়ে থাকতে চায়।

    সন্ধের পরে কথা হচ্ছিল। হরিনাথ এসেছে মসলন্দপুরের দিক থেকে। এসে রয়ে গিয়েছে বুড়ো হয়ে যাওয়া হরিমামা। সে বাসুদেবের মায়ের আমলের লোক। অনেক দিন বাদে এল। বলল, ঘুরতে ঘুরতে চলে আলাম বউমা, জল-বিস্টি নেই অনেক দিন, ভাবলাম তোমাদের কী অবস্থা দেখে আসি।

    হরিনাথ বিশ্বাসকে দেখলে মনে হবে সত্যিকারের কাঙাল। জীর্ণ দেহটি নিয়ে কোনও রকমে টিকে আছে। এমনি ঘুরতে ঘুরতে আসে, ঘুরতে ঘুরতে যায়। সকালে এসেছে, দুপুরের ট্রেনে ফিরবে ভেবেছিল, কিন্তু তাকে যেতে দেয়নি শুভশ্রী। কী ভয়ানক রোদ্দুর, প্রত্যেক দিন দু’পাঁচ জন করে মরছে। পথে, রেল স্টেশনে, গাছতলায় হুমড়ি খেয়ে। হরিমামা এই রোদে যাবে কোথায়, ভোরে বেরবে কাল।
    হরিনাথ বলল, বললে যখন তা-ই হোক বউমা, যদিও আমি বাজি ধরে এসেছি।
    কীসের বাজি?
    জলের বাজি, পানি বাজি।
    এখন এখানে সাতটা, ইউ কে-তে দুপুর, বিলেতবাসী সম্বিত কথা বলতে এসেছে অনেক দিন বাদে। আজ সে বাড়িতে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে, কেমন একটা শীত শীত ভাব এসেছে আচমকা। বাসুদেব বলল, এ দিকে কোথাও জল নেই আকাশের।
    সম্বিত বলল, আমাদের এখানে তো সারা বছর লেগেই আছে, এই এখন তো হচ্ছে।

    বাসুদেব নেটওয়ার্কে ফেসবুক খুলে বসেছে। তার এই ভুবন বেশ বড়। প্রতিদিনই কেউ না কেউ বন্ধুতার হাত বাড়াচ্ছে। সে গ্রহণ করলেই হল। তার ভিতরে অচেনারা বেশি। প্রতিদিনই বাসুদেব নানা কথা লিখে দেয় তার নিজের ওয়ালে, তা ছড়িয়ে যায় বিশ্বভুবনে। পশ্চিম থেকে পুবে। বাসুদেবের কাছে এক জন এল, পুরুলিয়ার মৃত্তিকা সেন, দাদা কবে নামতে পারে জল?
    সে যেন বৃষ্টির খবর রাখে, লিখল, ভেবে দেখি কবে আসে, আমি বললে হবে?
    একটি হাসিমুখ উপহার দিলেন মৃত্তিকা সেন। গৈরিক মাটির দেশের মেয়ে। স্মাইলি আঁকেন যখন তখন। সেই সময় সম্বিত জিজ্ঞেস করল, এখনও আড্ডা হয় কফি হাউসে?
    কম হয়, আমি যাই।
    কে কে আসে?
    তাদের তুই চিনবি না।
    তোর কলিগ?
    বাসুদেব বলল, না, না, তারা কবি, ব্যবসায়ী, গদ্যকার, সায়েন্টিস্ট।।।।

    সম্বিত চুপ করে থাকে। তখন বাসুদেবকে ডাক দিল হরিনাথ বিশ্বাস, বলল, তোমাদের কী ভাগ্নে, জল হোক না হোক, জলের অভাব নেই, সামনে টালার জল ট্যাঙ্কি।
    বাসুদেব ঘাড় কাত করল নেট থেকে চোখ সরিয়ে। হরিনাথ বলল, ২৪ ঘণ্টা জল।
    হুঁ, তোমাদের ওখানে কী অবস্থা? বাসুদেব জিজ্ঞেস করল বেলপাহাড়ির সায়েব মুর্মুকে।
    বুঝতে পারি না, ভাল আছি না খারাপ আছি, আমি কোনও দিন কলকাতায় যাইনি।
    কেন, অনেক দূর তো নয়।
    আমার বাবা এই মহকুমা ছেড়ে কোনও দিন বেরয়নি।
    কেন, পার্টি যে এত মিটিং-মিছিল করে, আদিবাসীরা কলকাতা অভিযান করে।।।
    সায়েব বলল, আমার ঠাকুদ্দা গাঁ ছেড়েই বেরয়নি কোনও দিন।
    বেঁচে আছেন?
    হ্যাঁ, খুব বুড়ো।

    বাসুদেবের আরও কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছিল। মাওবাদী, পুলিশ, যৌথ বাহিনী, কিন্তু নিজেকে সংবরণ করল। কার পরিচয় কী, তা সে জানে না। এই যে সায়েব মুর্মুর সঙ্গে কথা বলছে, এমন হতেই পারে, বেলপাহাড়ি নয়, এই যুবকটি কথা বলছে কলকাতা থেকে। হয়তো এ যুবক নয়, মধ্যবয়সি কেউ। পুলিশ কিংবা মাওবাদী। খুঁজে দেখছে তার পক্ষে না বিপক্ষে বাসুদেব দত্ত। সম্বিত আবার ফিরল তার কাছে, কত দিন কফি হাউসে যাইনি।
    কলকাতায় আয়, এক দিন দুপুর থেকে হবে।
    কানাই আসবে?
    ও তো বাঁকুড়ায়, ও দিকের ইস্কুলে মাস্টারি করে।
    রাকা?
    বাসুদেব লিখল, কফি হাউসের দিনগুলি আছে, একটু অন্য ভাবে রে, আয় কলকাতায়।
    রাকার কথা বললি না?
    রাকা দাশগুপ্ত, ফেসবুকে খোঁজ, পেয়ে যেতে পারিস।
    সম্বিত আবার চুপ। হয়তো তার ঘরের জানলা দিয়ে বিলেত দেশটির বর্ষা দেখছে একা একা।
    বাসুদেবকে তখন হরিনাথ বলল, আমাদের ও দিকে প্রায় সব মাঠ পুকুর পুড়ে পুড়ে ফেটে গিয়েছে।
    হুঁ, বৃষ্টি এ বার নামতে দেরি হবে, বর্ষার মেঘ দুর্বল।
    কে বলল বল দেখি ভাগ্নে? হরিনাথ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
    হাওয়া অফিস।
    হরিনাথ বিশ্বাস হাসল, মিলবে না ওদের কথা, মেলে না কোনও দিন, কী করে মিলবে, যে বলে সে কি ভোলানাথ বিশ্বাস?
    তার মানে?

    হরিনাথ বলল, আমার ঠাকুদ্দা, ঈশ্বর ভোলানাথ বিশ্বেস বলতি পারত, বাতাসের গন্ধ শুঁকে ধরতে পারত সব, তুমার মা তারে দেখেছিল ওপারে, গাঙে গাঙে ঘুরে সে এই বিদ্যে অর্জন করেছিল।
    বেঁচে আছে? শুভশ্রী জিজ্ঞেস করল।
    জানা নেই, এ পারে এসেও ওপারে ফিরে গিয়েছিল একা, তার পর কত রোদ বিস্টি দেখি আর ভাবি আমার ঠাকুদ্দা ভোলানাথ এ সব আগাম জেনে বসে আছে, আমরা অন্ধ! হাঁসফাঁস করে মরি।
    শুভশ্রী বলল, আর খোঁজ পাওনি মামা?
    নাহ্! মাথা নাড়ল হরিনাথ, তার পর বলল, সে লোক তো গাঙে গাঙে গিইছিল, ইছামতীর জলে এক দিন ভাসল, আর ফিরল না, আমার বাবা গাঙে গাঙে কত ঘুরল, পেল না, ঠাকুদ্দা ওপারে গিয়ে জলের নিদান দেচ্ছে ঠিক।

    শুভশ্রী নড়ে বসে। আসলে এই জন্য তো লোকটাকে রেখে দেওয়া, না যেতে দেওয়া। এর আগে এক ঠাকুদ্দার কথা বলেছিল যে কিনা বানবন্যে আটকাতে পারত। তার নাম কি ভোলানাথ? না, না, শুভশ্রীর মনে পড়ল এই বছর কয়েক আগে পুজোর আগে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে প্রবল বর্ষা চলতেই লাগল, তার ভিতরে হাজির এই হরিনাথ, তারা কেমন আছে তার খোঁজ নিতে এসেছিল, বলেছিল তার ঠাকুদ্দা বানবন্যে কত আটকেছে, তুমার মা থাকলে বলত। এই সব ঝড়-বাদলা তার কাছে নস্যি, বড় গাঙের লাফানি-দাপানি সব থামাতে ওস্তাদ ছিল সে।
    সে বলল, আগে তো শুনিনি এই লোকের কথা।
    বলিনি তাই শোনোনি।
    শুভশ্রী বলল, এক জনের কথা তো বলেছিলে সে বার, সে কোন ঠাকুদ্দা?

    হরিনাথ বলল, ঠাকুদ্দারা ছিল সাত ভাই, তাদের কেউ হবে, এই জন আমার আপন মনে হয়, তিনি বলতে পারত বিস্টি হবে কী হবে না, শীত পড়বে কী পড়বে না, গাঙে তুফান উঠবে কী উঠবে না, ঝড়-বাদলের আগাম খবর।
    হরিনাথ বিশ্বাস যখন কথা বলছে বাসুদেবের ফেসবুক ওয়ালে তখন ভেসে উঠল ফরিদপুরের জামাল, লিখেছে সে আব্বাসউদ্দিনের গান।।। আল্লা মেঘ দে পানি দে, ছায়া দে রে আল্লা।।।।
    সঙ্গে সঙ্গে সিলেটের কবি লিখল, এমনি বরষা ছিল সে দিন।।। শিয়রে প্রদীপ ছিল মলিন।।। তব পাতে ছিল অলস দিন।।। মনে কি পড়ে প্রিয়?

    বনগাঁর শ্রাবন্তী লিখল, মেঘমল্লারে সারা দিনমান বহে ঝরনার গান।।।
    কুয়েতের মরুভূমি থেকে লিপিকা লিখল, আসছে আষাঢ় মাস, মন তাই ভাবছে কী হয় কী হয়!
    মুম্বইয়ের চন্দ্রাণী লিখল, এল বরষা যে সহসা মনে তাই।।। রিমঝিম ঝিম, রিমঝিম ঝিম গান গেয়ে যায়।।।।
    পটুয়াখালির আঁধারমানিক নদীর কুল থেকে মহেশ্বর জলদাস বলল, আয় বৃষ্টি ঝেঁপে ধান দেব মেপে।।। রিমঝিম বরষার গগনে।।। কাটফাটা রোদের আগুনে।।।।

    বৃষ্টির ফোঁটার মতো গানের কলি ভেসে আসতে লাগল। এদের কাউকে বাসুদেব চেনে না। এদের সঙ্গে এখানে পরিচয়। এদের সঙ্গে কখনও কথা হয়, কখনও হয় না। কেউ কেউ পরিচয়ের পর হারিয়ে যায় একেবারে। এই সব নারী-পুরুষরা সবাই যেন অলীক, বাস্তবে এদের কোনও চিহ্ন কোথাও নেই এই নেটওয়ার্কের বাইরে।
    এক জন গন্ধর্ব-কন্যা মলয় পর্বতের সানুদেশ থেকে লিখল, শীতকাল কেটেছে কৃচ্ছ্রতায়, সেই ফাল্গুন থেকে যে কোকিল ডেকে যাচ্ছে, সে ডেকেই যাচ্ছে, বর্ষা তুমি এসো না, কোকিল বধূর কেলিকাকলিতে মধুর হয়ে থাকুক এই পৃথিবী।
    হায় ভগবান, কী কস তুই মুখপুড়ি, সবাই বর্ষা চায়, তুমি কোকিলের ডাক শুনবে বলে, এই দাবদাহ রেখে দিতে চাও! লিখল অলীক এক যক্ষ বিন্ধ্য পর্বত থেকে।

    কত রকম নাম নিয়েছে কত জন এই ভুবনে। এল অন্য আর এক জন, বলল, হে মেঘ তোমার যাত্রাপথে দেখতে পাবে বিদিশা নগর। এর নাম বেত্রবতী, ঠিকানা বিদিশা, এর চেয়ে ভাল পরিচয় কী হয় আর? সে লিখল, হে, আগ্নেয় মেঘ এসো, এসো জীমূত মেঘ, বলাকারা তোমার ছোঁয়ায় গর্ভবতী হোক, আকাশ তাদের অনিঃশেষ ক্রন্দনে ছেয়ে গেল।
    বাসুদেব দেখে যায় সব।
    তখন ফরিদপুরের জামাল লিখল, দাদা, আপনাদের কেরলে নাকি মৌসুমি বায়ু ঢুকেছে?
    তাই তো খবর।

    তা হলে আশা করতে পারি, গরমে লোক মরছে খুব, এমন আগে দেখিনি।
    তখন হরিনাথ উবজিয়ে বলল, হাড়োয়ার ও দিকে শুনেছি পানি বাজার বসে।
    সে আবার কী? শুভশ্রী জিজ্ঞেস করে।
    পানি ফকিরের পুজো আর মেলা।
    পানি ফকির তো বরুণদেব।
    হরিনাথ বিশ্বাস বলল, হবে হয়তো, কিন্তু সন্দ’ সে আমার ঠাউদ্দা ভোলানাথ বিশ্বেস হতি পারে, তিনি ইচ্ছে করলি বিস্টি আনতে পারত।
    রেনমেকার! শুভশ্রী বলল।

    কী সুন্দর হেসে ঘাড় কাত করল হরিনাথ, কথাটা পরিষ্কার বুঝল।
    ঠিক সেই সময়ে আবার সায়েব মুর্মু এল তার বাসুদেবের জানালায়, স্যর বিস্টির খবর জানেন?
    হরিনাথ জানে। লিখে দিল বাসুদেব।
    আমাদের এখেনে যে হরিনাথ ছিল, সে জেলখানায়, তার কথা বলছেন স্যর?
    চুপ করে থাকল বাসুদেব। কথা যেন কথার বাইরে চলে গেল, সে নিরাপদে নিরুপদ্রবে থাকতে চায়। তার পর লিখল, এ দিকেও নেই বৃষ্টি।
    স্যর, আমাদের কানাইশোর পাহাড়ের মাথায় মেঘ দেখা গেল, কিন্তু বিস্টি হল না। সায়েব মুর্মু বলল।

    কানাইশোর পাহাড়ে আষাঢ় মাসের দ্বিতীয় শনিবারে পাহাড় পুজো হয়। সেই পুজোর কথা মনে পড়ল বাসুদেবের। সে বছর কুড়ি আগে গিয়েছিল সেই মেলায়। লন্ডন শহরের সম্বিত বসুও ছিল। সেই কানাইশোর পাহাড়টির কথা বহু দিন বাদে কেউ বলল। ক’দিন আগে দূর পাহাড়ের দিকটা কালো মেঘে ভরে গেল, কিন্তু ওইটুকু, ঠান্ডা বাতাস দিয়ে মেঘ ঢেকে গেল অন্ধকারে। পর দিন আবার গনগনে রোদ। বৃষ্টি হলে বুড়ো ঠাকুদ্দাকে একটু ভেজাত তারা। বুড়োর গা ভরে গেছে চাকা চাকা ঘায়ে। ঘাম পচে অমন হয়। বৃষ্টির জলে ঘা নরম হত। ভিজতে ভিজতে বুড়ো সুস্থ হত। তার জ্ঞান আছে টনটনে, বলছে, পানিহ্ আসুক, আমার রোগ যাবে।
    ঠাকুদ্দার বয়স?
    সত্তর-আশি হবে।
    বসতে পারে?
    শুয়ে থাকে, বুড়ো বন চিনত ভাল।
    তুমি কি বন চেনো না?
    ভুলে গেছি বনের কথা।
    তুমি কি বনের পাশে থাকো না?

    সায়েব মুর্মু অফ লাইন হয়ে গেল। হয়তো বনের ভিতর ঢুকে গেল বর্ষার এই খবর নিয়ে। আর এক হরিনাথের খবর নিয়ে। সেই সময় জানলায় এল ‘আমি ইরাবতী’, বলল, অসম পাহাড়ে জল নামেনি, চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি ফুরিয়েছে জানেন?
    আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা। বলল বাসুদেব।
    মায়ানমার থেকে মেঘ ঢুকবে উত্তর-পুবের পাহাড়ে।
    জানি।
    কোনও খবর আছে?
    হরিনাথের ঠাকুদ্দার কাছ থেকে খবর পেলে দেব। বাসুদেব বলল, কে হরিনাথ আমাদের দেশ সাতক্ষীরার ধুলিহরে বাড়ি, হরিনাথের ঠাকুদ্দা, তার বাবা গাঙে গাঙে ভেসে বেড়াত, কপোতাক্ষ, বেতনা, ভৈরব, রূপসা, মধুমতী।।।।
    পদ্মা, মেঘনা, কীর্তনখোলা?
    তুমি জানো ওই সব নদীর কথা?
    জানি জানি জানি, আমি বিয়ের পর বাঁকুড়া, আমাদের বাড়ি ছিল কর্ণফুলির কুলে, নদীর কথা কি নদী জানবে না? নদীর সঙ্গে নদী মেশে, না হলে সাগরে গিয়ে দেখা হয়, তাই তো, ঠাকমা বলত, গাঙ! আমার শ্বশুরবাড়ির দেশে তো গাঙ নেই, পাথর আর পাথর।

    তখন হরিনাথকে শুভশ্রী বলল, যে দেশে গাঙ নেই, সেখেনে মানুষ কী করে?
    শুকনো ভুঁয়ে জাল পাতে, বউমা এসো জাল ফেলি, বাজি ধরি।
    বেটিং, বাজি, জুয়া।।। নিষিদ্ধ।
    তুমি বলো জল নামবে কি নামবে না?
    বললাম নামবে না, জিতেও গেলাম। শুভশ্রী বলল।
    তুমি কি জিততে চাও? শীর্ণকায় বুড়ো তার দিকে জুলজুলে চোখে তাকিয়ে বলল।
    বাজিতে তো সবাই জিততে চায়। শুভশ্রী বলল।
    চুপ করে গেল হরিনাথ। তার কালো হাড়জিরে দেহটা একটু কেঁপে গেল, বিড়বিড় করল, টালার জল ২৪ ঘণ্টা, ঠান্ডা ঘর, ভাগ্নে তুমার অফিসঘরও কি ঠান্ডা ঘর?
    ঘুরে তাকায় বাসুদেব, তখন তার কাছে আবার সম্বিত ফিরে এসেছিল, বলছিল, রাকা দাশগুপ্ত বাহান্ন জন আছে, রাকা আছে একশোর উপর, কারও ছবি দেখে ধরা গেল না বাসু।

    বাসুদেব বলল, সে কী আর আগের মতো অল্প বয়সে আছে, তুই তোর ওই আল্পসের চুড়ো থেকে মেঘদূত পাঠিয়ে দে সম্বিত, সে রাকার কাছে যাবে তোর বার্তা নিয়ে, তুই হলি নির্বাসিত যক্ষ, তোর দূত আমাদের তৃষিত বুক ঠান্ডা করবে, গোটা দেশ একসঙ্গে ভিজবে।
    সম্বিত একটু সময় নিল, তার পর বলল, দাম লাগবে, মেঘও কি আমদানি করছে ইন্ডিয়া? বৃষ্টি কিনে নিতে হবে, ডলারে পেমেন্ট।
    কর বসিয়ে দাম দেব, অলকাপুরীর পথে যাত্রা করিয়ে দে মেঘ।
    পৃথিবীটা বদলে গেল কত, আমাদেরও বয়স হয়ে গেল বাসু। বিড়বিড় করল সম্বিত।
    ঠেকিয়ে রাখা গেল না। বলে বাসুদেব একটি হাসিমুখ উপহার দিল। তার অর্থ একটু থামতে চায় সে। হরিনাথকে বলল, হ্যাঁ, গাড়ি, অফিসঘর, সব ঠান্ডা, কেন বলো দেখি?
    তাহলি বিস্টির কী দরকার তোমার?

    বাসুদেব ভাবল লোকটাকে জবাব দেয় ভাল করে। দরকার নেই তো। বৃষ্টি কী হবে তার? কলকাতা ডুববে, বেশ তো আছে, তার কোনও মাথা ব্যথা নেই অনাবৃষ্টি নিয়ে। গাড়িটা এসি, অফিস এসি, বেডরুম এসি। বৃষ্টি হলে কী, না হলেই বা কী। কিন্তু বলতে পারে না লোকটাকে, মা পছন্দ করত, বাবার খুব ন্যাওটা ছিল, বাবাকে মামা বলত, মাকে বলত দিদি। সেই থেকে বাসুর মামা। কত বয়স হবে? সত্তর তো কবে পার হয়েছে, আশি হবে কি? কে জানে। এই রকম দড়ি পাকানো চেহারার মানুষের বয়স ধরা যায় না। মুখের বদলও দেখছে না বাসুদেব। সে বলল, আমার কি আকাশের জলের দরকার আছে হরিমামা?
    ধান বুনতিও হবে না ভাগ্নে, কী দরকার জলের?
    বাসুদেব বলল, আছে মামা, ঝমঝমে বর্ষা হলেই তবে ইলিশ, ইলিশের জন্য চাই বর্ষা।
    হরিনাথ বলল, বউমা, আর এক বার ওই শরবত দিবা, নেবু গন্ধডা ভাল।
    হাসিমুখে শুভশ্রী লেমন স্কোয়াস আনতে চলল। হরিমামা সোফা থেকে নেমে মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে বলল, কোথাও নাকি জল নেই, সাতক্ষীরে, খুলনা, বরিশালেও না।
    চমকে উঠল বাসুদেব, বলল, তুমি জানলে কী করে।
    বুঝা যায়, এটুকুন জানতি পারব না!
    তোমারও কি ফেসবুক আছে?
    আছে মনে হয়। হরিনাথ নির্বিকার
    গলায় বলল, ভোলানাথেরও আছে, তার বাবারও আছে।

    বাসুদেবের মনে হল কথাটা হয়তো সত্য। এই যে এত বন্ধু তার, তাদের ভিতরে ভোলানাথ, তস্য পিতা শিবনাথ, তস্য পিতা রমানাথ কি নেই আত্মগোপন করে? তার বন্ধু হয়েছে, সে জানতে পারছে না।
    তখন গন্ধর্ব কন্যা তার ফেসবুকে এসে বলল, যার যেমন রেস্ত আছে সে তেমন পাবে, তাই বলে আমি আমার ফাল্গুন-চৈত্র ছাড়ব কেন, বর্ষা আমি চাই না, আমি রাজপুত্রের জন্য বসে আছি।
    অদ্ভুত! কোন সময় থেকে কে কথা বলছে কিছুই ধরা যাচ্ছে না। ওই গন্ধর্ব কন্যা যদি রূপকথা থেকে বেরিয়ে এসে থাকে মলয় পর্বতের সানুদেশে, ‘আমি ইরাবতী’, তো বলছিল বারাসতের বার্মা কলোনি থেকে, ২০১২-তে।

    ইরাবতী বলল, জীবনে প্রেম হয়নি, এখন যৌবন গেছে, নাম ভাঁড়িয়ে গন্ধর্ব কন্যা হয়েছে, ওর দিকে কেউ ফিরেও তাকাবে না, সেলফিশ! ওদের জন্য বর্ষা বিলম্বিত, এখনই খবর এল, ও দিকে গোয়া আর এ দিকে সিকিমে আটক করে রেখেছে আমাদের মৌসুমি বায়ুকে, কী হবে স্যর, কী আশ্চর্য, কাশ্মীরে হানা দিল পশ্চিমি ঝঞ্ঝা, পুরুল্যা শুখা হয়ে থাকল, মায়ানমারের মেঘ এ দিকে আসছে না।
    উত্তর দিতে যাবে বাসুদেব তো হরিনাথ বলল, বাজি ধরবে ভাগ্নে?
    কী বাজি?
    বউমা ধরল, তুমিও ধরো, জল হবে কি হবে না?
    বাজি ধরলে কী হবে?
    একটা কিছু হবে।
    শুভশ্রী ঢুকল লেমন জুস নিয়ে, বলল, আমি তো ধরলাম, হবে না বৃষ্টি।
    বাসুদেবও বলল, আমিও তাই বলছি, তুমি যে হেরে যাবে মামা।

    হরিনাথ তার ফোকলা গালে হাসল, বলল, আমি তবু বলব হবে, আমি ঈশ্বর ভোলানাথের নাতি, তিনি বিস্টি নামাত, আমি বাজি ধরি তাঁর দিকে চেয়ে!
    বাসুদেব বলল, এ কিন্তু জুয়া।
    হরিনাথ বলল, হোক জুয়া, বিস্টি তো চাই ভাগ্নে।
    তুমি তো হেরে যাচ্ছ মামা।
    ঈশ্বর ভোলানাথ বিশ্বেসের নাতি হারবে কেন, টায়েম দাও ভাগ্নে।
    কত দিন?
    যত দিন না জল নামবে। মিনমিনে গলায় বলল হরিনাথ।
    কত দিন চাই তোমার?
    সামনে তো অমাবস্যে, পরের পুন্নিমে পর্যন্ত টায়েম দাও।
    হেসে ফেলল শুভশ্রী, অত দিন! তা হলে তো এমনিই নামবে, আমরা হেরে যাব।
    ভোলানাথের নাতি বাজিতি হারে না বউমা।

    এই কথোপকথনের ভিতর, সন্ধে থেকে বর্ষা নিয়ে অলীক ভুবনে নানা জনের নানা কথা শুনে শুনে আচমকা কী যে মায়ায় পড়ল যে বাসুদেব! জিততে এসেছে হরিনাথ বিশ্বাস, জিতুক, নির্মেঘ, শুখা আকাশ নিয়েই জিতুক।।। সে আচমকা ঘোষণা করে দিল।
    ‘অবশেষে এলেন তিনি, এই অন্ধকারে আচমকা এসে গেলেন, মেঘমল্লারে শিহরিত হল বিশ্ব ভুবন।।। বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ় এল।।। তিনি এলেন ঘন ঘন বিদ্যুচ্চমকিত হয়ে, মেখলা উড়িয়ে আঁচল উড়িয়ে, এলোকেশী মেঘ হয়ে এলেন তিনি।।।।
    কী আশ্চর্য! তখনই সচকিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল মসলন্দপুরের হরিনাথ বিশ্বাস, ঘন ঘন শ্বাস নিতে নিতে বুড়ো বলল, ‘কী হল ভাগ্নে, বিস্টি এল মনে হচ্ছে, ওখেনে খপর এল নাকি?’ কম্পিউটারের দিকে তর্জনী তোলে হরিনাথ।

    লিখেছিল বাসুদেব এমনি। খেয়ালে সে এমনি কত লেখে। অলীক এই ভুবনের সঙ্গে কি অনাবৃষ্টির পৃথিবীর কোনও মিল আছে? না, এ আলাদা ভুবন, এখানে না গ্রীষ্ম না বর্ষা, না বসন্ত। এখানে ইচ্ছা বর্ষা, ইচ্ছা গ্রীষ্ম। তার কথা পৌঁছে যেতেই এই মহাবিশ্ব।।। ভুবনগ্রাম চঞ্চল হয়ে উঠল।।। তাই! কোথায় বৃষ্টি? ।।।নেমেছে নেমেছে, তা হলে এ দিকেও আসবে মেঘ।।। ঠাকুর আপনাদের সহায় তাই নামল জল।।। মায়ানমারের মেঘ এল, না পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মেঘ, বিন্ধ্যর বজ্রগর্ভ মেঘ।।। আপনি ভাগ্যবান, আপনি পুণ্যবান তাই পেলেন বৃষ্টি।।। বাজি ধরলে জিতে যেতেন।

    কম্পিউটারের মনিটরে চোখ রেখে উল্লাসে চিৎকার করে ওঠে বাসুদেব, হ্যাঁ, নেমেছে মামা, নেমেছে, নেমেছে।
    নেমেছে! আশ্চর্য! শুভশ্রী উঠে দাঁড়ায়, সত্যি নেমেছে, কোথায়?
    কলকাতা, মলয় পর্বত, বিদিশা, বনগাঁ, মসলন্দপুর, ফরিদপুর, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালি, সিলেট, ভুবনজুড়ে বরষা।।।।
    এখানে কই? জানলা দিয়ে অন্ধকারে হাত বাড়াল শুভশ্রী, বাতাস গরম এখনও।

    হরিনাথ বলল, দরকার নেই, তাই টের পাচ্ছ না, ভাগ্নে আমি বাঁচলাম, গন্ধ পাচ্ছি ভিজে মাটির। বলতে বলতে সমঝদারের মতো মাথা দোলাতে লাগল হরিনাথ। যেন ঝড়-বাদলে আন্দোলিত হচ্ছে পিয়াসি তরুকুল। ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খান ধরেছেন মেঘমল্লার। মেঘের মতো ডেকে ডেকে ঘিরে ধরছেন তাকে।
    বাসুদেব হাসল, বলল, ইচ্ছা পূরণ হয়ে গেল নিজের দোষে বাজিতে হেরে গেলাম মামা।
    আমার ঠাকুদ্দা ভোলানাথের ইচ্ছে, তিনি মনে করলেন, তাই তুমি হারলে।
    তখন ফেসবুকে একের পর এক মানুষ ঘিরে ধরেছে বাসুদেবকে, খুব বৃষ্টি, খু-উ-উ-ব?
    বাসুদেব লিখল, বড়ে গুলাম আলি খান একটি হাত আকাশে তুলে, একটি হাত চিবুকে ছুঁইয়ে ধরলেন মেঘমল্লার, নামল তখন।
    তার পর, তার পর?
    গাইতে দাও ঈশ্বরকে, ভোলানাথ বিশ্বাসকে।।। মেঘমল্লারে ডুবে যাক ঈশ্বরের পৃথিবী।

    হরিনাথ সেই সময় শুভশ্রীকে বলল, তিন হাজার ছিল বাজি, তোমাদের দেড়-দেড়, দু’জনেই হারলে, মসলন্দপুরে খুব নামল গো, টায়েম দিল না ঠাকুদ্দা।
    আবার সময় চাও এখন! বাসুদেব গরগর করে ওঠে।

    ‘চাল ছাইতি হবে ভাগ্নে, একেবারে গেছে, কিচ্ছু নেই মাথার উপর, জল নামার আগে না করলি বেপদ, আগের সনে খুব কষ্ট গেছে, এমনি কী আসা, আমার আছেডা কে বলো বউমা, বষার্য় ও ভিটে আর থাকপে না, বাজিডা জিতার দরকার ছেল খুব।’ বলতে বলতে হরিনাথ বিশ্বাস, গ্র্যান্ড সন অব ভোলানাথ বিশ্বাসের ঘাড় বেঁকে গেল। মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল সে। ভিজছে অনিঃশেষ ধারায়।
  • .... | 127.194.***.*** | ০৮ নভেম্বর ২০১২ ১৬:৩৮577491
  • আমি অমর মিত্রের কোনো বই কিনে পড়িনি। প্রকাশকের নাম বিশেষ দিতে পারলাম না। তবু যদি ভবিষ্যতে কোনোদিন কেউ পড়তে চায় -

    ছোটোগল্প সংকলন
    ১) মাঠ ভাঙে কালপুরুষ - ১৯৭৮
    ২) দানপত্র
    ৩) আসনবনি
    ৪) অমর মিত্রের ছোটোগল্প - প্রতিক্ষণ
    ৫) বসন্ত বিলাস
    ৬) পাঁজর
    ৭) স্বদেশ যাত্রা
    ৮) অমর মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প

    ছোটোদের বই
    ১) চাঁদু গায়েনের ডাকাত ধরা

    স্বাক্ষরতা গ্রন্থ
    ১) মঘারামের মেয়ে
    ২) সাঁঝতারা

    ভ্রমণকাহিনী - স্মৃতিচিত্র
    ভাসিয়ে দিয়েছি কপোতাক্ষ জলে (দাদা মনোজ মিত্রের সাথে লেখা) - প্রতিক্ষণ

    উপন্যাস
    ১) আলোকবর্ষ
    ২) সুবর্ণরেখা
    ৩) পাহাড়ের মতো মানুষ
    ৪) হাঁসপাহাড়ি
    ৫) সমাবেশ
    ৬) নিসর্গের শোকগাথা
    ৭) এখন মৃত্যুর ঘ্রাণ
    ৮) কাঁটাতার
    ৯)সমুদ্রের স্বর
    ১০) শ্রাবণ - অগ্রহায়ণ
    ১১) ব্যাদ্গ ও হরিণি
    ১২) ভি আই পি রোড
    ১৩) নদীবসত
    ১৪) জনসমুদ্র
    ১৫) কৃষ্ণগহ্বর
    ১৬) খরাবন্যার ফুল
    ১৭) অশ্বচরিত - করুণা প্রকাশণী -
    ১৮) অরুন্ধতী তারার রাত
    ১৯) ধ্রুবপুত্র - শারদীয়া প্রতিদিন - ১৯৯৯
    ২০) নীলপ্রহর
    ২১) নিরুস্সীষ্টের উপাখ্যান
    ২২) আগুনের গাড়ি
    ২৩) সোনাই ছিল নদীর নাম
    ২৪) কালো মেঘ সাদা মেঘ - অঞ্জলী প্রকাশণী - ২০০৮
    ২৫) লাবণ্য - অঞ্জলী প্রকাশণী - ২০০৮
    ২৬) সবুজ রঙের শহর
    ২৭) গজেন ভুঁইঞার ফেরা - করুণা প্রকাশণী - ২০০৯
    ২৮) প্রান্তরের অন্ধকার
    ২৯) ধুলোগ্রাম
    ৩০) অর্ধেক রাত্রি
    ৩১) অক্ষয় মেঘের উত্তরপুরুষ - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০০২
    ৩২) ধুলো আর কুসুমের নদী - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০০৩
    ৩৩) নিস্তব্ধ নগর - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০০৪
    ৩৪) ধনপতির চর - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০০৫
    ৩৫) দ্বীপের মানুষ - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০০৬
    ৩৬) শাড়িঘর - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০০৭
    ৩৭) ডুব - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০০৮
    ৩৮) শ্যামমিস্ত্রি কেমন ছিলেন - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০০৯
    ৩৯) মালতি মাধবের কাহিনি - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০১২
    ৪০) ডানা নেই উড়ে যায় - শারদীয়া আজকল - ২০০৭
    ৪১) ভুবনডাঙা - শারদীয়া বর্তমান - ২০১২

    ছোটোগল্প
    ১) বাড়ি, গাড়ি, সাধ, স্বপ্ন - শারদীয়া প্রতিদিন - ১৯৯৮
    ২) সাঁকোর দুইপার - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০০০
    ৩) হারানো নদীর কাহিনি - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০০১
    ৪) নীল যমুনার জল - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০১০
    ৫) হাড়কঙ্কলের দেশ - শারদীয়া প্রতিদিন - ২০১১
    ৬) একটা দেশ - শারদীয়া আমার সময় - ২০০৮
    ৭) চাকাবুড়ি - শারদীয়া আমার সময় - ২০০৯
    ৮) মানুষী মাহাতো এবং আরো ছজন
    ৯) নীল লাল রুপালি জীবন - শারদীয় বর্তমান - ২০০৩
    ১০) ভালোবাসিয়াছিল - শারদীয় বর্তমান - ২০১১
    ১১) ঘুমনগর - শারদীয়া আজকাল - ১৯৯৩
    ১২) উট - শারদীয়া আজকাল - ১৯৯৯
    ১৩) অন্ন পরমান্ন - শারদীয়া আজকাল - ২০০০
    ১৪) কনকলতা - তরুলতা - শারদীয়া আজকাল - ২০০১
    ১৫) মহাদেশ থেকে মহাদেশ - শারদীয়া আজকাল - ২০০৬
    ১৬) মাঠের ধারে বাড়ি - শারদীয়া আজকাল - ২০০৯
    ১৭) পুরাতন পতিত - শারদীয়া আজকাল - ২০১০
    ১৮) সমুদ্রপথে - শারদীয়া আজকাল - ২০১১
    ১৯) সৌদামিনী ও সুরদাস - শারদীয়া আজকাল - ২০১২
    ২০) আর্গল - শারদীয়া আলাপপর্ব - ২০১২
    ২১) পায়ের শব্দ - শারদীয়া আগমনী - ২০১২
    ২২) উপমহাদেশ - শারদীয়া তথ্যকেন্দ্র - ২০০০
    ২৩) জলের দেবতা - শারদীয়া তথ্যকেন্দ্র - ২০০৬
    ২৪) কে কোথায় - শারদীয়া তথ্যকেন্দ্র - ২০০৮

    বিশেষ পত্রিকা সংখ্যা
    ১) অমৃতলোক-৯৭ (২০০৩) - কথাসাহিত্য উৎসব উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা
  • সৈকত | 126.203.***.*** | ১২ নভেম্বর ২০১২ ০০:২৬577492
  • নিসর্গের শোকগাথা নামে উপন্যাসটা লোক্জন পড়ে দেখতে পারেন। আমি, অমর মিত্রর লেখা বেশী পড়িনি। এই লেখাটা, হাঁসপাহাড়ী উপন্যাসটা আর অল্প কিছু গল্প পড়েছি। আর এখন পড়ছি, "শূন্যের ঘর, শূন্যের বাড়ি" নামে উপন্যাসটা, যেটা প্রায় ঘোরের মধ্যে পড়ে চলেছি। মনে থাকলে, কোন দিন দু-চার লাইন লিখেও ফেলতে পারি এই উপন্যাসটা নিয়ে। কিন্তু, "নিসর্গের শোকগাথা" উপন্যসটা আমার পছন্দ হয়েছিল। বাস্তব ঘটনা, চরম বাস্তব ঘটনা, যা কিনা ছিল, নব্বইয়ের দশকের লাতুর-এর ভূমিকম্প, তার অসামান্য নভেলাইজেশন, এই লেখাটা। বেশী বড়ও নয়, শ'খানেক পাতাও মনে হয় হবে না, অল্প আয়াসেই শেষ করে ফেলা যায়।
  • h | 213.132.***.*** | ১২ নভেম্বর ২০১২ ১০:২১577493
  • 'নভেলাইজেশন' এই শব্দটা আগে শুনি নি ঃ-) এইটা হেবি দিলে।
  • i | 134.17.***.*** | ১৪ নভেম্বর ২০১২ ১৬:৫৯577494
  • ১৯৭৮এর জুনমাসে অমর মিত্রর প্রথম গল্পগ্রন্থ বেরোয়-মাঠ ভাঙে কালপুরুষ। তারপরে ছিয়াশিতে দানপত্র, তিরানব্বইয়ে আসনবনী।-দুই ছোটো গল্পের সংকলন।
    নব্বইএর গোড়ার দিককার বইমেলায় প্রতিক্ষণ বের করছিল আধুনিক ছোটো গল্পমালা-অমর মিত্রের ছোটোগল্প ছিল এই সিরিজের এগারো নম্বরে। সবুজ আর কালোতে মলাট সাদামাটা। পাতলা চটি বই। তিরিশ টাকা মত দাম ছিল সে সময়ে।
    শুরুতে 'সামান্য কথা'। অমর মিত্র বলেছিলেন নিজের লেখালেখির কথা। বলেছিলেন-'গল্পগ্রন্থ প্রকাশের চেয়ে মধুর কোনো অভিজ্ঞতা আমার জীবনে নেই।'
    লিখেছিলেন-' আমি যে জীবনে আছি সে-ই জীবনের নানা টানাপোড়েন প্রতি মুহূর্তে আমাকে যেন শৃঙ্খলিত করে। জীবনের নানা মুহূর্তের অন্তর্গত বেদনা আমাকে নির্বাক করে, তা থেকে মুক্ত হতেই আমার লেখা। অবিরাম যে শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে যাচ্ছি সেই শৃঙ্খল মোচনের উপায়ই তো আমার লেখা। হয়তো হয়ে ওঠে না ঠিকঠাক। কিন্তু আমাকে তো লিখতে হবে, না লিখলে বেঁচে থাকাই যেন অর্থহীন, জীবন পানসে, বিবর্ণ।
    কেউ কেউ আমাকে বলেন, গ্রামগঞ্জ তোমার জায়গা, ছেড়ো না।
    কেউ লেখেন, চাকরিসূত্রে গ্রাম দেখা, কী করে হয়?
    কেউ বলেন, নগর তুমি চেনই না, কী করে লিখবে?
    ...
    যাঁরা বলেন, তাঁরা সকলেই আমার প্রিয় মানুষ। কারোর কথাই রাখতে পারি না। যে বিষয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করি সেই বিষয়ে লিখি। বিষয় নিয়েও তো লিখি না। লেখার পরে তা হয়তো বিষয় হয়ে যায়। লেখার আগে তা তো থাকে সামান্য বেদনার অনুভূতি। হয়তো কিছুই না। শূন্য থেকে যাত্রা। খরাদীর্ণ মাটিতে অবিরাম কর্ষণ আর আকাশমুখী হওয়া, যদি মেঘ আসে ফসল হবে। আমি সর্বক্ষণ মেঘের আশায় থাকি। শূন্য থেকে বিষয়ে যেতে চাই। অবচেতনায় কী আছে তা তো টের পাই না'।
  • .... | 127.194.***.*** | ১৫ নভেম্বর ২০১২ ০১:৪২577495
  • স্যাম্পেলঃ (অনুগ্রহ করে এইগুলো পড়ে লেখকের সামগ্রিক লেখালেখি সম্বন্ধে ধারণা গড়ে তুলবেন না, বিবলিওগ্রাফি পড়ে দেখবেন)

    আকাশদীপ - বিশ্বায়ন-এর বিশেষ সংখ্যা। এই লেখাগুলো পড়তে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার বা আই-ই ট্যাব ব্যবহার করতে পারেন। ফায়ারফক্স এ ঠিকঠাক না ও আসতে পারে। প্রয়োজনে সাইট থেকে ফন্ট খুঁজে নামাতে হতে পারে।

    প্রবন্ধ - শতবর্ষের তিন লেখক - বইমেলা সংখ্যা -১৪১৩
    http://www.viswayan.com/akash/boimela1413/amar.asp

    গল্প - সংসারধর্ম - নববর্ষ সংখ্যা - ১৪১৩
    http://www.viswayan.com/akash/naba1413/amar.asp

    গল্প - অচেনা প্রেমিক - শরদীয়া ১৪১১
    http://www.viswayan.com/akash/sharod1411/amar.asp
  • update | 69.16.***.*** | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৫:২৬577496
  • ৩) আসনবনি (৩৫) ৮) অমর মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৫০) ২) সুবর্ণরেখা (৪০) ৪) হাঁসপাহাড়ি (৫০) ১৩) নদীবসত (৩৫) ১৪) জনসমুদ্র (৫০) ১৫) কৃষ্ণগহ্বর (৫০) ১৭) অশ্বচরিত (১৬০) - বঙ্কিম পুরস্কার, ১৮) অরুন্ধতী তারার রাত (৭৫) ১৯) ধ্রুবপুত্র (৩০০) - অ্যাকাদেমী পুরস্কার ২২) আগুনের গাড়ি (৫০) ২৭) গজেন ভুঁইঞার ফেরা (৭০) ২৯) ধুলোগ্রাম (৭৫) ৩০) অর্ধেক রাত্রি (৬০) ৩৮) শ্যামমিস্ত্রি কেমন ছিলেন (৭০) ৪০) ডানা নেই উড়ে যায় (৬০)

    এগুলো সব করুণা প্রকাশনী। প্রতিদিনে বেরোনো ধ্রুবপুত্রটা মূল বইয়ের প্রায় ১/৫ অংশ, তাও বাজে ভাবে কেটেকুটে করা।
    করুণা-র আরো দুটো বই (উপন্যাস) বাদ গেছিল -
    ৪২) পূর্বগামিনী (২০০),
    ৪৩) চতুর্থী (১২৫)

    ছোটোগল্পের মধ্যে,
    ৯) সেরা ৫০ টি গল্প - দে'জ পাবলিশিং
    ১০) প্রিয় ৫০ টি গল্প - নির্মল বুক এজেন্সি

    ধ্রুবপুত্র, অশ্বচরিত ছাড়া আরেকটি প্রধান বই ৩৪) ""ধনপতির চর"" - দে'জ পাবলিশিং থেকে
  • update | 69.16.***.*** | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৫:৪৬577497
  • করুনা থেকে অমর মিত্রের "পাঁচটি উপন্যাস" (৩৫০) বই আছে। এতে আছে আগুনের গাড়ি, নদীবসত (এই দুটো করুনারই আলাদা বই হিসেবে আছে), শালমহুয়ার ভুবনচন্দ্র, নদীর ধারের পবনচন্দ্র, নদীর মানুষ (এই তিনটি অন্য প্রকাশনার বই)

    তাছাড়া, আরেকটা সংশোধনঃ ২৭) গজেন ভুঁইঞার ফেরা (৭০) বইয়ের সঠিক নাম হবে ২৭) গজেন ভুঁইঞার ঘরে ফেরা (৭০)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন