এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • এলোমেলো আমি http://hindolbhattacharjee.blogspot.in/2012/09/blog-post_1311.html

    Hindol
    অন্যান্য | ০৯ নভেম্বর ২০১২ | ২০০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৩:২৬577267
  • এলোমেলো আমি

    কিছু বিষয় আছে যেগুলির স্মৃতি মনের ভিতরে এত টাটকা থাকে যে মনে হয় সেগুলি এই কিছুক্ষণ আগে ঘটল. আবার এমন সব অভিজ্ঞতাও জীবনে ঘটে যেগুলি কেন ঘটল তার কোনো উত্তর পাওয়া যায় না. আমার বিশেষ ভাবে মনে হয় পুরো জীবনটাই একটা ভীষণ দুর্ঘটনা. জন্মের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নানা রকমের ঘটনা আমাদের জীবনে ঘটে চলে, আমরা সেগুলির কার্যকারণ সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করি. কিন্তু জীবনের কোনকিছু ঘটার কোনো কার্যকারণ আদৌ আছে কি? ভ্রূণ জন্মের আগে কোন স্পার্ম এবং ওভাম মিলেমিশে আমাকে তৈরী করবে তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত থাকে. সেই বিশেষ স্পার্ম এবং ওভাম যদি না মিলিত হত তাহলে আমি না অন্য কেউ জন্ম নিত. সে হত আমার চেয়ে একদম আলাদা. তাহলে জন্ম থেকেই আমি অনিশ্চিত. জন্ম থেকেই কোনো না কোনো প্রবাবিলিটি ফ্যাক্টর আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে বা বলা ভালো আমাদের জীবনে ঘটে চলেছে. গতকাল একজনের সঙ্গে তর্ক হচ্ছিল আত্মা নিয়ে. তার দৃঢ় বিশ্বাস আত্মা আছে. আমার মনে হয় লীন হে গেলে তারা তখন তো মৃত, মৃতের এ পৃথিবীতে ফেরে না কখনো. এই লেখাতে যেহেতু কোনো ধারাবাহিকতা বজায় রাখবার যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই, তাই একদম আমার মন যেভাবে ভ্রমন করছে আমি সেভাবেই লিখছি. আমি এই লেখাটি সেভাবেই লিখে যাব. কারণ আমার মনে হয় কথাও আমার মনের ভাবনাগুলিকে লিখে রাখা জরুরি. এই মুহুর্তে আমারে মন চলে গেল বাবার মৃত্যুর দিনে. বাবা সকালবেলা খুব সুস্থ দেহে বেরিয়েছিলেন. সন্ধেবেলা এসে আমাকে পড়ানোর কথা ছিল. আমার সামনেই ছিল মাধ্যমিক. সন্ধেবেলায় সহসা একটি ট্যাক্সি এসে থামল আমার বাড়ির সামনে. অনেক লোক. সবাই-ই পাড়ার. আমি দৌড়ে নীচে নেমে গেলাম. দেখলাম বাবা হাঁপাচ্ছে. আমাকে দেখতে পেয়ে আমার হাতটা ধরলেন এবং এলিয়ে পড়লেন ট্যাক্সির মধ্যেই. নিমতলা ঘাটে যখন বাবার শরীর নিয়ে আমরা পৌঁছলাম তখন লাইন. অদ্ভুত একটা ব্যাপার দেখলাম. বাবার আগে ছিল একটি ৬ বছরের বাচ্চা আর বাবার পরে ছিল একটি অত্যন্ত জীর্ণ বৃদ্ধ. মনটা অদ্ভুত শান্ত হয়ে গেল. তার পর বাবার শরীর যখন পুড়ছে তখন আমি চুপচাপ বসে ছিলাম জানুয়ারী মাসের রাতে গঙ্গার ধারে. কালো জল বয়ে যাচ্ছিল. আর আমার মনের ভিতরে কোনো শক নয়, জন্ম নিছিল অদ্ভুত প্রেমের অনুভূতি. বাবাকে আমি খুব ভালবাসতাম. আমার জীবনের প্রথম বন্ধু বাবা. সেই বন্ধু নেই. আর কোনদিন ফিরেও আসবেন না. অথচ আমার মনের ভিতরে কেন এক অদ্ভুত শান্তি আসছিল? কেন আমার মনে হচ্ছিল এবার বাবা আমার সঙ্গে চিরকাল থাকবেন? প্রতি মুহুর্তে থাকবেন? সেই আমার জীবনের প্রথম কবিতা লেখা. আমার মনে পড়ছে সেই কবিতাটি আমি দেশ পত্রিকায় পাঠিয়েছিলাম আর তা ছাপাও হযেছিল. কবিতাটির নাম ছিল বৃক্ষ. একটি সনেট. তার পর থেকে আমার জীবনে শান্তভাবে প্ল্যান করে যুক্তিসঙ্গত ভাবে কিছু করার গঠনটাই উড়ে গেল. আমি নিজেকে ছেড়ে দিলাম. আমার সঙ্গী ছিল কিছু বই আর আমার নিজের খাতা. আমার কলম. কলম বদলে এখন কি বোর্ড হলেও বিষয়টি একই আছে. আর ঠিক এই বিষয়টি আমি কাউকে বোঝাতে পারিনা. আমি যতক্ষণ আমার নিজের মধ্যে থাকি, ততক্ষণ আমি যথেষ্ট সুস্থ একজন ব্যাক্তি. কিন্তু মানুষের কাছাকাছি গেলেই আমার ভিতরে নানারকম সত্তার আবির্ভাব হয়. এতে কষ্ট পায় আমার সঙ্গে যারা বন্ধুতা করেন তারা. আমাকে যারা ভালবাসেন আমি তাদের ভালবাসার সঠিক মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পারি না. কারণ কথাও আমি একা বাঁচি. একা মরি.
    হয়ত আমি খুব স্বার্থপর. হয়ত আমি ভালবাসা বুঝি না. হয়ত আমি কিছুই লিখতে পারব না. আসলে মানুষ কি আদৌ কিছু লেখে? লেখা অপেক্ষা করে থাকে এই প্রকৃতিতে. আধার পেলে তার মাধ্যমে লিখিত হয়. এই যে সুমন লিখলেন অসংখ্য অসামান্য গান, সে কি উনি নিজে লিখলেন? উনি নিজের আধারটাকে এমন ভাবে তৈরী করেছেন যে গান, সুর নিজে থেকে তাঁর কাছে এসে ধরা দিয়েছে. রবীন্দ্রনাথকেও তো বলতে হযেছিল 'আমি কান পেতে রই....মাঝে মাঝে তার বারতা আমার ভাষায় পায় যে কথা'... কত বড় মাপের কথা... মাঝেমাঝে তার বার্তা আমার ভাষায় কথা পাছে. এই সে টি কে? ঈশ্বর? সময়? প্রকৃতি? জানি না. ইশ্বর করুন যেন কোনদিন না জানতে পারি. এই বার্তা পাওয়াটাই মনে হয় বিপন্ন বিস্ময়. বোধ. ব্যক্তিত্ব. জীবনানন্দ, শক্তি, বিনয় মাথার মধ্যে হানা দিয়ে গেল. আমি যখন অফিসে যাই, তখন আমার সামনে থাকে সকল নটার সকাল. যখন বাড়ি ফিরি, তখন পাশে থাকে রাত দশটার আলো অন্ধকার. আমি অপেক্ষা করে থাকি. সে কখন আসবে.. কখন আসবে... কি লিখব আমি? আমার আধারটা কি তবে তার জন্য উপযুক্ত নয়? আমার লেখা কি তবে শেষ হয়ে গেল? আমি তো আর অন্য কোনো ভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারি না. এও কি একধরনের মৃত্যু?
    লিখে যাব. এমন উল্টোপাল্টা ভাবেই না হয় এখন লিখে যাব. আমার ভালবাসা আমাকে ভুল বুঝেছিল. আমি প্রেমিক হিসেবে, মানুষ হিসেবে, জীবনসঙ্গী হিসেবে, বন্ধু হিসেবে, সন্তান হিসেবে হয়ত অনেক খাটো. হয়ত ব্যর্থ. হয়ত আমার গোটা জীবনটাই ব্যর্থ.
    কিন্তু আমি তো আদৌ সফল হতে চাইও নি! ( ক্রমশ)
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৩:২৭577278
  • এলোমেলো আমি-২

    আজ সকাল থেকে মনটা খারাপ হয়ে আছে. আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি একটা অন্ধকার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি আর একটি ট্রাক এসে আমার সামনে দাঁড়ালো. ট্রাক থেকে নেমে এলেন কিছু লোক. তাঁদের আমি চিনি না. আমার সামনে এসে বললেন, সময় হয়ে গেছে, তুমি কলিং বেল বাজিয়ে দিয়েছ. আমরা এসে গেছি. আমি জিজ্ঞেস করলাম - আপনারা কে? আমাকে জবাব দিল না. তাঁরা আমাকে জোর করতে লাগলেন. আমার হাত পা বেঁধে দিলেন. তার পর ট্রাক'এ ছুঁড়ে ফেললেন. ট্রাক চলতে শুরু করলো. আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল. আমি মাঝেমাঝেই এরকম অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন দেখি. তবে বাবা যেদিন মারা গিয়েছিলেন, সেদিন কেন যে এমন স্বপ্ন দেখেছিলাম জানিনা. দুপুরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম. অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা সেই তখন থেকেই আমার অভ্যেস. তো, দুপুরে ঘুমিয়ে দেখেছিলাম বাবা একটি সাদা কাপড় পরে নদীর জলে তর্পণ করছে. মাথা ন্যাড়া. আমার বাবা ছিলেন এসবের বিরোধী. যে কারণে, বাবা মারা যাওয়ার পরে আমিও শ্রাদ্ধ করিনি. সে কারণে সমালোচিত-ও হয়েছি অনেক. কিন্তু আমার কাছে মনের শ্রদ্ধাটাই আসল. সেই কবে বাবা আমাকে বলেছিলেন মন যেটা চাইবে সেইটা করবি, মন যা চাইবে না তা করবি না. কিন্তু মুশকিল হলো এই যে, মন যা চায় তা কখনো কখনো হয়, কখনো কখনো হয় না. আবার মন যা চায়, তাকে অনুসরণ করতে গেলে আমাকে এমন সব দ্বন্দের মুখোমুখি হতে হয়, যেখানে মানুষ মানুষ কে ছেড়েও চলে যায়.

    মনে পড়ছে গোমুখ থেকে কালিন্দী পাস হয়ে বদ্রিনাথ আসার কথা. সামনে শিবলিং, অসংখ্য শৃঙ্গ, তারই মাঝখান দিয়ে আমরা চলেছি. চতুরন্গী গ্লেসিয়ার পার হয়ে হাঁটার কথা. এক চন্দ্রালোকিত রাতে, আমরা যখন ঢালু রক্তবরণ গ্লেসিয়ার-এ রাতে তাঁবু খাটিয়ে শুয়ে আছি, সে সময়ে হঠাত করে আমার ইচ্ছে করে বাইরে যাব. এই চন্দ্রালোকিত রাতে ঝকমক করে ওঠা পাহাড়গুলো দেখব. বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়েছি. এমন সময়ে প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দ. দেখি একটা পাহাড়ের মাথা থেকে ঝরনার জন্ম হয়েছে. দুধ গলা জল নেমে আসছে. আমি তাকে আরও ভালোভাবে দেখার আগ্রহে এগিয়ে গেলাম. কিন্তু কে জানত এমন বিপদে পড়ব! আসলে ওটা ছিল অভালাঁশ. এই রাতে চাঁদের এল আছে ভেবে আমি তো পাহাড়ের পাড়া বেড়াতে বেরোলাম. কিন্তু কে জানত আলো থাকলেই অন্ধকার থাকবেই সেরকমই. আমি অন্ধকারে গেলাম হারিয়ে. সে মনে আছে. একটা জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছি. কোথায় পা ফেলবো তো বুঝতে পারছি না. কাউকে ডাকলেও সে সাড়া দিছে না. স্বাভাবিক. সারাদিনের পরিশ্রমের পর ঘুমিয়ে পড়েছে. কিন্তু ধৈর্যই আসল. আমি তো দাঁড়িয়েই রইলাম. আর চাঁদ তো আর দাঁড়িয়ে রইলো না. সে তো এগোচ্ছে. এগোতে এগোতে আলো ফেলছে অন্ধকারে. এমন ভাবেই আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেও এল এলো. আর আমি দেখলাম, আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তার কিছু হাত দূরেই ঢালু খাদ. কত নীচে যে নেমে গ্যাছে তা জানি না. অর্থাত সেদিন ধৈর্য না ধরলে মৃত্যু ছিল অবশ্যম্ভাবী.

    এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে দুজন মানুষের কথা. যাঁরা আমাকে বারবার বলতেন ধৈর্য ধরার কথা. নিশ্চেষ্ট হবার কথা. তাঁরা কবি ভাস্কর চক্রবর্তী এবং গদ্যকার অরূপরতন বসু. এই দুজনের কাছেই আমি মাঝেমাঝে যেতাম. ভাস্করদা তো আমাকে হাতে ধরে কবিতা কীভাবে এডিট করতে হয়, তা শিখিয়েছেন. আর অরুপদার বাড়ি যেহেতু ছিল আমার বাড়ির কাছেই, বাঙ্গুর-এ, তাই সকল দশটা হলেই আমি চলে যেতাম তাঁর কাছে. তখন আমি চুটিয়ে টিউশানি করি. অরুপ্দাই আমাকে বলতেন, ধৈর্য ধর. লেখাকে জন্মাতে দাও. লেখাকে আদর কারো, নির্মম ভাবে লেখাকে কেটেও ফেল. কিন্তু কিভাবে কাটব ? কীভাবে লেখাকে নির্মেদ করব? এ শিখ্যা আমাকে দিয়েছিলেন ভাস্করদা. মনে আছে আমার একটু এক পাতার লেখাকে নির্মম ভাবে ছেঁটে ফেলে উনি ৫ লাইনের করে দিয়েছিলেন. তুমি, অরক্ষিত কাব্যগ্রন্থের অনেক কবিতাতেই যাঁদের অপারেশন আছে, তাঁরা ভাস্করদা, অরুপদা, জয়দা এবং সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়.

    এই সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় এবং অরুপদা যে আমাকে কত বই পড়িয়েছেন! আমার প্রিয় দুই বন্ধুর কথাও লিখব কবিতা জগতের. অনির্বান বন্দোপাধ্যায় এবং সার্থক রায় চৌধুরী. সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় আমাকে একবার বলেছিলেন কবিতা হলো বুকে হেঁটে পাহাড়ে চড়ার মত সময়সাপেক্ষ. দরকার ধৈর্য. দরকার জার্নি, দরকার নিজের সঙ্গে কথা বলা. অরূপ দার সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে আমরা চলে যেতাম কতইনা জায়গায়. সবাই চলে গেছে. অনির্বান আর সার্থক নিজের জগত নিয়ে আছে. আর তেমন আড্ডাও হয় না. আর খুব মনে পড়ে গার্গী কে.

    সে এক অন্য গল্প.
    এখন অফিস যাবার সময় হলো. থামতেই হচ্ছে. অনেক কথা জমে আছে. সেগুলো বলব. কারণ কে জানে, হয়ত আমার সময় হয়ে এসেছে. আমি বুঝতে পারি.
    কিন্তু জীবনের এমন কোনো সীমারেখা নেই, যেখানে এসে নিজেকে বলা যায় আর ভালোবেসো না কাউকে. কী করব! আমি কবিতা লিখি,সামান্য হলেও. আর তাই আমি প্রেমিক. আবার প্রেমিক বলেও লিখি. হয়ত প্রেমের কবিতা অত আসেনা আমার. কিন্তু কোনটা প্রেমের কবিতা আর কোনটা প্রেমের কবিতা নয়, তা কে ঠিক করবে?
    (ক্রমশ)
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৩:২৮577286
  • এলোমেলো আমি -৩

    যখনি মন খারাপ হয় আমি রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র খুলে বসি. ছিন্নপত্রের মধ্যে যে এমন মন ভালো করে দেওয়া, মনটাকে অন্য কোনো জগতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আছে তা আবিষ্কার করি কিন্তু অদ্ভুত ভাবে. এ প্রসঙ্গে হঠাত এ মুহুর্তে মনে পড়ে গেল রিলকের কথা. আর ভেসে উঠলো বুড়োদার চায়ের দোকানের কথা. আমাদের কলেজ স্ট্রিট-এ বহু প্রাচীন সেই চায়ের দোকানটার কথা. যেখানে প্রথম দেখা হযেছিল অচ্যুত্দার সঙ্গে. আমার সঙ্গে যখন অচ্যুত্দার আলাপ হয় তখন আমি সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে নকশালপন্থী রাজনীতি করি, কবিতা লিখি আর পড়াই. প্রচুর বইপত্র পড়া, সিনেমা দেখা, থিয়েটার দেখা আর কফি হাউস এ আড্ডা দেওয়া ছাড়া আমার আর তখন করার কিছুই ছিল না. প্রেম তো ছিলই না. কবিতা লেখার সূত্রে অচ্যুত্দার সঙ্গে আলাপ. ভীষণ ভাবে অহংকারী মনে হয়েছিল অচ্যুত্দাকে. প্রথমেই সব কিছুকে নস্যাত করে দেওয়ার প্রবৃত্তি. তর্করত্ন বলা যায়. অচ্যুতদার সে ক্ষমতাও ছিল. অসামান্য কবিতা লেখার পাশাপাশি অচ্যুত্দার অন্যতম একটা গুন ছিল কবিতা বা সাহিত্যের কোন কোন বিষয়গুলিকে ধরে আমরা কথা বলতে পারি, সে সম্বন্ধে স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার. অচ্যুত্দার পরামর্শে বা বলা ভালো গালাগালিতেই আমি প্রথম জেমস জয়েস পড়ি. বালজাক পড়ি, দস্তয়ভস্কি পড়ি. অচ্যুত্দাই আমাকে প্রথম পড়ায় কমলকুমার মজুমদার আর অমিয়ভূষণ মজুমদার. ব্যাস. আমার হয়ে যায়. শৈশবে আমার বাবা তো আমাকে বিদেশী সাহিত্যের বইপত্র এনে দিতেনই. অচ্যুত্দার সংস্পর্শে এসে আমি বুঝতে পারলাম আমার আরো বেশি পড়া দরকার.
    অচ্যুতদা হয়ত প্রথমে সবাইকে নস্যাত করে দিত বলে অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিল, কিন্তু এ কথাও ঠিক, যে এখনো পর্যন্ত আমি অন্তত অচ্যুত্দার কোনো বিকল্প খুঁজে পাইনি. মনে আছে একদিন জলের বোতলে ভদকা ঢেলে আমি সার্থক আর অচ্যুতদা হেঁটে ছিলাম অনেক রাস্তা. অচ্যুত্দাই আমাকে বলেছিল, পার্টির ডেমোক্রাটিক সেন্ত্রালিসিম নিয়ে প্রশ্ন করলে ক্ষমতা তোকেও শত্রু ভাববে. সে যে ক্ষমতায় হোক না কেন. পরবর্তীকালে দেখেছি কথাটি কত সত্য. আমাদের পার্টির রাজ্য সম্মেলনে কলকাতার প্রতিনিধিত্ব করার সময়ে বর্ধমান'এ আমি কিছু প্রশ্ন করি. জানাই, যে, এই কলকাতার লোক হয়ে এলিট কলেজ এ রাজনীতি করে আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব না গ্রাম বাংলার চরিত্র. এ হেন কথা বলার পর সেই বিশেষ সংগঠন থেকে আমাকে অপসারণ করা হয়. আবার সিঙ্গুর- নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে যখন আমি দেখি আন্দোলনের ক্ষীর খেয়ে নিজেদের ক্ষমতার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করছে আরও একটি প্রতিক্রিয়াশীল পার্টি, তখন আমি সরে আসি. সে সময়ে আমার নামে যেখানে যা খুশি বলা হয় এবং লেখার জগতেও ব্রাত্য করা হয়. তাতে আমার কিছু এসে যায় না যদিও.

    ক্ষমতা এমন এক বিষয়, যেখানে ব্যাক্তির কোনো অস্তিত্ব নেই. অর্থাত ব্যাক্তি সেখানে নিজের কথা বললে, কোনো পক্ষ যদি সে না নেয়, তাহলে তার পক্ষে টিকে থাকা কঠিন. তাহলে ব্যাক্তি কি করবে?
    আমার মনে পড়ে যাচ্ছে একদিন ট্রেন'এ করে যাচ্ছি নৈহাটি. একজন ব্যাক্তি গান গাইছিলেন. গান গাইতে গাইতে হঠাত থেমে গিয়ে বলে উঠলেন, দাদা, বারাকপুর পর্যন্ত আমি গায়ক, তার পর থেকে আমি ভিখিরি. আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন? বিকট হেসে আমাকে বললেন- বুঝলেন না, বারাকপুর পর্যন্ত আমার পরিচয় এই. তার পর এই পরিচয় অন্য কোনো একজনের. এখন যে ভিখিরি, সে তার পর থেকে কোনো এক দেশী মদের ঠেকের দালাল. কথাটা কতটা সত্যি আমি জানি না, কারণ খতিয়ে দেখতে জানি আমি, কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, আমরা প্রায় সকলেই এমনি.
    ফিরে আসি ছিন্নপত্রে. আমি মনে করি, প্রতিটি বইকে আসলে আবিষ্কার করতে হয়. একদিন বিকট বিষন্ন হয়ে আমি বাড়িতে বসে দুপুরে রবীন্দ্র রচনাবলী উল্টোচ্ছিলাম. ছিন্নপত্রের চিঠিগুলিতে এসে আটকে গেলাম. পড়ে যেতেই থাকলাম একটার পর একটা চিঠি. সেই অনুভূতির বিস্তার আবার পরে লিখব.
    এখন অফিস'এ.
    বাইরে দুপুর. নাগ কেশর গাছটা অদ্ভুত নর্তকী হয়ে আছে. অনেক নতুন পাতা গজিয়েছে. অথছ শীত আসছে. কিন্তু গরম কম না! ( ক্রমশ)
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৩:২৯577287
  • এলোমেলো আমি-৪

    মাঝেমাঝে পুরনো দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে. নব্বই দশকের শুরুর সেই দিনগুলি. অয়ন, সৌরভ, অনির্বান, মণি, জয়দীপ, সার্থক, রাজর্ষি, শুভাশীষ, সুদীপ্ত, মুকুট....কী দারুন সব আড্ডা হত. সেই সময়ে বেরোত গান্ধার পত্রিকা আর বিজল্প পত্রিকা. এই দুটো পত্রিকায় বলতে গেলে নব্বই দশক কে ধরে রেখেছিল. ভোলা যাবে না গান্ধারের শেষ পাতায় অয়ন-এর লেখাগুলো. বইমেলাতে সকলের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গান্ধার নিয়ে আমরা বসতাম মাটিতে. অয়ন-এর ছিল অসাধারণ রসবোধ. তেমনি ছিল অনির্বান. এরা সকলেই আছে, কিন্তু গান্ধার পত্রিকাটি বহুদিন হলো বন্ধ. সেই সময়ের কথা মনে হলে ভালো লাগে. আর কিছু না হোক, বুকের পাটা ছিল সকলের মধ্যে. আর ছিল বন্ধুত্ব. ঠিক কবিবন্ধুতা নয় এটা. বলা ভালো বন্ধুতা. এখনো অনির্বাণ-এর সঙ্গে আড্ডা হলে বা অয়ন-এর সঙ্গে হঠাত দেখা হলে সেই বন্ধুতা টের পাই আমি. শুভাশীষ এখনো কফি হাউস এ যায়. জানি আবার গেলে দারুন আড্ডা হবে. কিন্তু সেই সময়টা কি ফিরে আসবে? মণি এখন নিউজিল্যান্ড-এ. হয়ত ওর বইটা বেরোবে এ বছর বেরোবেই পুজোর আগেই. কিন্তু সেই সব দুর্দান্ত আড্ডাগুলো ফিরে আসবে কি না জানি না. ভালো হোক, খারাপ হোক, নিখাদ এক বন্ধুতা ছিল আমাদের মধ্যে. সেই বন্ধুতা এখনো আছে জানি. তথাকথিত কবিতা জগতের মত নয় সেই বন্ধুতা. কবিতা জগতের লোকেদের সঙ্গে দেখা হলে, বা একসঙ্গে কোথাও কবিতা পাঠ ইত্যাদি হলে আমার খুব অস্বস্তি হয়. কী কৃত্রিম সব ব্যাপার স্যাপার! সবাই যেন কিছু না কিছু প্রমান করার জন্য মুখিয়ে আছে. এ যেন একটা বাজার , যেখানে পারফরমেন্স-ই আসল. আমি কীরকম কার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারলাম, কী কথা বললাম, আগামী কোনো প্রজেক্ট এর জন্য একটু নিজেকে বুক করিয়ে রাখলাম....এটাই আসল. নিখাদ হাসাহাসি, ঠাট্টা, মজা এই সব বিষয়গুলো উবে গেছে. চরম এক পেশাদারী মনোভাব. হাসিও মেপে মেপে. প্রশংসাও মেপে মেপে. কথাগুলো সব ফাঁপা. কেউ কারো সঙ্গে আসলে কথায় বলছে না., সম্পর্ক রাখছে শুধু.
    এই প্লান প্রোগ্রাম করে কি লেখক কবি হওয়া যায়? গান্ধার পত্রিকা যারা করত তাদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব ছিল. অয়ন শুনলেই খাঁক খাঁক করে হেসে উঠবে জানি. কিন্তু এ কথা ঠিক, একটা সাহস ছিল. অস্বীকার করার এবং অনুসরণ না করার. কিছু এসে যেত না কোনো বড় কাগজে লেখা ছাপা না হলে. এমন কী, বড় কাগজে লেখা ছাপানোর জন্য কোনো বড় লেখক কে তৈল প্রদান করার কোনো কারণ ছিল না. কারণ গান্ধার পত্রিকা এবং আমাদের বন্ধুবান্ধব জানে, তাদের ক্ষমতা. ফলে নব্বই দশকের প্রথমের সেই অসম্ভব ক্ষমতা সম্পন্ন কবিরা পরবর্তীকালে বড় কাগজের বিখ্যাত কবি-সম্পাদকের কাছ থেকে সেই স্বীকৃতি পেলেন না যে স্বীকৃতি তাদের পাওয়া উচিত ছিল. কারণ তাঁরা অনুসরণ করেন নি কাউকে. অন্ধ ভক্ত হননি কারোর. তাঁদের ব্যাক্তিত্ব ছিল, আছেও.
    প্রসূন-এর কথাও মনে পড়ে. ভৌমিক. বুয়া ও বাবুই কাব্যগ্রন্থ যার হাত দিয়ে, জীবন দিয়ে বেরোয়. অসম্ভব ভালো বন্ধু. মানুষ হিসেবেও খুব ভালো. চিরদিন সকলের উপকার করে গেছে. নিজের ব্যাক্তি জীবন যখন সংকটাপন্ন, তখনও, মাঠে নেমে পড়েছে আন্দোলনের জন্য. পরে তার সঙ্গে আমার রাজনৈতিক মতবিরোধ হলেও এ কথা তো ঠিক,যে প্রসূন নিজের জন্য কিছু গোছানোর কথা কখনো ভাবেনি.
    নব্বই দশকের এই যে প্রথমার্ধ, তা আমার কাছে বাংলা কবিতার এক স্বর্ণযুগ. নিজের মত করে নিজের ভাষা তৈরির সাহস ছিল তাদের মধ্যে. এখন হয়ত আমরা একে অপরের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করি. পেশাগত কারণে. কিন্তু এ কথাও ঠিক, যে সেই চরিত্র এখনো সকলের মধ্যে রয়েছে. কারণ এরা যদি নিজেদের গোছাতে চাইতো, তাহলে অনেকেই উঠতে পারত না.
    কিন্তু একজন কবির মূল বৈশিষ্ট তার আত্মসম্মান. কোনো কিছুরই সামনে মাথা নত না করা.
    সেই আড্ডাগুলো ছিল সর্বগ্রাসী. ছিল অনেক মধুর. অনেক নির্মল. অনেক কবিতার মত. কবিতা লেখাটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য. কবি হওয়া নয়. আর ঠিক উল্টো ব্যাপারটাই পরবর্তীকালে দেখা যায়. কবিতা লেখার চেয়ে প্রধান হয়ে ওঠে যখন কবি হিসেবে পরিচিত খ্যাতিমান হবার আকাঙ্খা.
    আমার ব্যাক্তিগত ভাবে মনে হয়, কবিতা লেখার চেয়ে কবি হব কীভাবে সেটা যদি ভাবনার মধ্যে একবার হানা দায়, তাহলে সেই কবি শেষ.
    কত ভালো ভালো কাগজ বেরোত সেই সময়ে. অর্হন, বিজল্প, গান্ধার. লুত্ফর রহমান বলে আমাদেরই একজন বন্ধু অসামান্য গদ্য লিখত. কিন্তু সে যে কোথায় গেল জানিও না.
    সার্থক যেমন! সেই ২০০০ সালে ওর একটি কবিতার বই বেরিয়েছে. অন্ধকারের অনুবাদ. অসামান্য কাব্যগ্রন্থ. কিন্তু তার পর ১২ বছর কেটে গেল, আর কোনো কবিতার বই নেই. অথচ জানি ও লিখছে. সৌরভ পান্ডে. এখনো লিখছে. ওর একটা অদ্ভুত পাগলামি আছে. ও মনে করে ও সব লেখা নিয়ে একটাই কবিতার বই প্রকাশ করবে, আর সেটা হবে ওর কাব্যসমগ্র.
    কিছুদিন আগে সৌরভ এর সঙ্গে ফোনে কথা হলো. কিন্তু তার পর আমার শারীরিক অসুস্থতা এবং ফোন হারিয়ে ফেলার দরুন ওর সঙ্গে আবার যোগাযোগের উপায় নেই বললেই চলে. কবে যে আমাকে আবার ও ফোনে করবে কে জানে!
    এই সব বন্ধুদের সান্নিধ্য আমি মিস করি. আমার নিজের মধ্যেই অনেক গন্ডগোল আছে আমি জানি. কবি বিভাস রায়চৌধুরী আমাকে একবার বলেছিল, আমি কবি হিসেবে ভালো কিন্তু বন্ধু হিসেবে ভালো নই.
    কথাটি আমাকে ভাবায়. সমস্যাটির সূত্রপাত কোথায় আমি জানি না. আমি নিজে অন্তত কোনো বন্ধুকে আহত করি নি. আর যদি করেও থাকি, তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি.
    নিজের সম্পর্কে আমি ভাববনা ভেবেও ভেবে ফেলি মাঝেমাঝে. সত্যি তো আমি কবিতার জন্য কোনো ধান্দাবাজি করিনি. শ্রদ্ধা করলেও আমি কোনো বড় কবির বাড়িতে নিয়ত যাইনি. আমার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক লেখার মাধ্যমেই. যাঁদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়েছে, তা আপনা থেকেই হয়েছে. সেখানেও আমি খুব অনিয়মিত. যেমন কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত আমাকে খুব স্নেহ করেন. শঙ্খবাবু আমাকে স্নেহ করেন. তবু তাঁদের সঙ্গে নিয়ত যোগাযোগ রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না. কবীর সুমন আমাকে অসম্ভব ভালবাসেন. কিন্তু তিনি নিজেকে নিয়ে থাকেন. বিশেষ করে এই সময়ে আমি তাঁর সহযোদ্ধা হয়ে তাঁর পাশে আছি.
    এই কবীর সুমন যে আমার জীবনে কী ভূমিকা নিয়ে আছেন, সে সম্পর্কে লিখতে গেলে এই পর্যায়টি কখনো শেষই হবে না. মানসিক ভাবে যখন ভেঙ্গে পড়ে আছি, সে সময়ে সুমনদার তোমাকে চাই এসেছিল আমার কাছে. তার পর একে একে অসামান্য সব গান. শুধু গান নয়, কবীর সুমন একটা মনোভাবের নাম. যিনি নির্ভয়ে প্রশ্ন করার, একাকী সৃজনের মধ্যে থেকে সৃষ্টি করে যাওয়ার এক দৃষ্টান্ত. অনেক কথা হয়েছে তাঁর সঙ্গে. অনেক কথা হয়. কিন্তু তাঁর জীবন থেকে একটি জিনিস আমি নি:শব্দে গ্রহন করেছি. আর তা হলো কোনো ছাঁচের মধ্যে নিজেকে না বেঁধে ফেলা. সুমনদাকে নিয়ে আরেকদিন লিখব.
    আমার মন চলে যাচ্ছে নানা স্মৃতির মধ্যে. ভাস্করদার সঙ্গে একদিন দেখা হয়েছিল সিঁথির মোড়ে. আমার যাবার কথা ছিল. অসম্ভব সুন্দর একটি শার্ট পরে ভাস্করদা হাঁটতে বেড়িয়েছিলেন. আমার সঙ্গে দেখা হতেই বললেন চল ফুচকা খাব. তার পর আমরা ফুচকা খেয়ে হাঁটা দিলাম দমদম স্টেশন-এর দিকে. যেতে যেতে কত কথা. মনে পড়ছে অভীককে, সুমন্ত কে. কৌশিক কে. অভীক দের বাড়িটা আশ্চর্য ভালো. চারিদিকে শান্ত পরিবেশ. সত্যি বাড়ির কাছে একটি করাতকল আছে. কতদিন বরানগরের ওই বাড়িতে আড্ডা দিয়েছি. কবিতা নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি সারা দুপুর.
    সুমন্ত কি নীল অপেরা বন্ধই করে দিল?
    এই সুত্রে মনে পড়ে গেল রানাদা কে.
    রানা রায়চৌধুরী.
    অসম্ভব ভালো কবি. কিন্তু তিনিও প্রাপ্য সম্মান পেলেন না.
    কিন্তু করা দেবে প্রাপ্য সম্মান? কবিতা কি কোনো প্রতিষ্ঠানের দয়ায় সম্মানিত হবার অপেক্ষায় থাকে? কোনো বড় কাগজের সুচিপত্র কি বাংলা কবিতার ইতিহাস ঠিক করে দেয়?
    না কি সাম্প্রতিক কাগজগুলি ঠিক করে কারা কবি এবং কারা কবি নয়?
    প্রতিষ্ঠান হোক, বা প্রতিষ্ঠান বিরোধী, কোনো কাগজ, কোনো কবি, কোনো শক্তি, কোনো কমিটি ইতিহাস তৈরী করতে পারে না.
    সাহিত্য ভীষণ নির্মম. সময় সত্যি নিরপেক্ষ. যার লেখা থাকার তার লেখা থাকবেই. আর যার থাকার না তার থাকবে না.
    নব্বই দশকের শুরুতে এই বিশ্বাসের জায়গা থেকেই তো ছিল আমাদের সেই সাহস. প্রয়োজনের থেকে আয়োজনের আধিক্যে আমরা বিশ্বাসী ছিলাম না কখনো. জীবনানন্দের কবিতার কথায় আছে কবির আত্মবিশ্বস্ত থাকার কথা. Poetics-এ আছে কবি সমস্ত ক্ষমতার বাইরে থাকা এক ব্যাক্তি.
    শিল্পীর স্পর্ধা যদি না থাকে তবে সেই শিল্পী তো আত্মবিক্রয় করে আছে!
    আমরা কি পড়িনি রিলকের কবিতা নিয়ে বুদ্ধদেব বসুর অসামান্য ভূমিকাটি?
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৩:৩০577289
  • এলোমেলো আমি-৭
    এই শহর আমাকে ক্লান্ত করে. আবার এই শহরটাকে আমার ভালো যে লাগেনা তা নয়. নিজেকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি ঠিক কেন এই দ্বন্দ্বের মধ্যে আমি থাকি এই শহরটাকে নিয়ে. এই শহরের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে আছে আমার নানান স্মৃতি. সেগুলি একই সঙ্গে যেমন আমার চরম বিষাদের কারণ তেমনি ওই স্মৃতিগুলো না থাকলে আমার কাছ থেকে অনেক আপনজনের মত সম্পদ চলে যাবে, যেগুলিকে আমি কিছুতেই হারাতে চাই না. অনেক বন্ধুর মত আমার আরেক বন্ধু ছিল অপর্ণা. ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বকে যেমন আমি মিস করি. নানা জায়গায় অপর্ণা আর আমার ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতি ছড়িয়ে আছে. তখন অপর্ণার ছেলে সবে হয়েছে. ওর ছেলে ঋষি আমার প্রায় কলে পিঠে চড়ে বড় হয়েছে বলা যায়. ওর গায়ে যে গন্ধটা ছিল তা আমি টের পেতাম এক মাঠ সবুজের কাছে গেলে. এই গন্ধ বিষয়টি আমাকে পাগল করে রাখে. বিভিন্ন মানুষের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন গন্ধ আছে. সেই সব গন্ধ আমাদের স্মৃতির ভিতরে যে কতকাল ধরে বাসা বেঁধে থাকে কে জানে! কিন্তু সেই সব গন্ধগুলো প্রানের গন্ধ. যেমন গার্গীর শরীরেও যে গন্ধটা ছিল তা অতি পবিত্র. আমি সারাদিন পর যখন গার্গীর সঙ্গে দেখা হত, তখন ওর শরীরে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে থাকতাম. কেমন এক আশ্রয় ছিল আমার জীবনে গার্গী.
    মনে আছে গার্গীর আমার দিকে চোখ তুলে তাকানোর কথা. মনে আছে একসঙ্গে শুয়ে যখন আমি ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়তাম, তখন ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত. ওদের বাড়ির একটা বিশেষ জানলা ছিল. জানালাটিকে আমরা আদর করে দাঁড় বলে ডাকতাম. কারণ সবাই শুয়ে পড়লে আমরা দুজন সেই দাঁড়ে বসে কত কথায় না বলতাম. সিগারেট খেতাম. আর কথা বলতাম. কত কত বিষয়ে যে আমাদের কথাবার্তা ঘুরে বেড়াত বলার না!
    শুধু কথাবার্তায় না, আমার প্রতিটি বিষাদের মুহুর্তে গার্গী আমার সঙ্গে থাকত. এমন কোনো কথা ছিল না যা আমি ওকে বলতাম না. আর ও আমাকে অসম্ভব বিশ্বাস করত. আমার মনে পরে দিদুনের কথা, যাঁকে মৃত্যুর কয়েকদিন আগে দেখতে গিয়েছিলাম আমি. উত্তরপাড়া স্টেট জেনেরাল হাসপাতালে. তার সেই চোখ আমি ভুলব না. সেই ঘর আমি ভুলব না. তাঁর শেষ কয়েকদিন আমার সঙ্গে রোজ দেখা হয়েছে. একজন নির্বাক, মৃত্যুপথযাত্রী, সংজ্ঞাহীন মানুষ, আমার দিকে একদিনই তাকিয়ে ছিলেন. যেদিন উনি মারা গেলেন, সেদিন আমরা সকলে তাঁর শেষ মুহূর্ত এমনকি ঘট ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার মুহূর্ত পর্যন্ত ছিলাম তাঁর সঙ্গে. গার্গীর আত্মীয়স্বজনদের কথাও মনে পড়ছে. গার্গীর আমার উপর বিশ্বাস ছিল যেরকম, আমি তার মর্যাদা দিতে পারিনি. এখন বুঝি কী হারিয়েছি আমি! কারণ যার সঙ্গেই আলাপ হোক না কেন, যার সঙ্গে যেরকমই সম্পর্ক হোক না কেন, আমার মনে পড়ে গার্গীর কথা. মায়ের পরে এই একটি মানুষ আমাকে নি:স্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছেন. এই একটি মানুষের সঙ্গে আমার কিছু না কথা বললেও অনেক কথা বলা হয়ে যেত. আমাদের বইয়ের দিন মনে পড়ছে. মনে পড়ছে সেই দুপুরগুলো. আমাদের এক সঙ্গে শান্তিনিকেতন যাওয়া. আমাদের বিয়ে হয়েছিল ১ মে. আমরা কোথাও না যেতে পারলেও তার পর থেকে প্রতি বছর ওই দিন কোথাও না কোথাও যেতাম. বেশিরভাগটাই মন্দারমণি, দীঘা, বকখালি. শান্কার্পুরের সেই সৈকত. আমাদের শেষ ভ্রমন দীঘা.
    ওকে ছাড়া আমি আর কোনদিনই কোনো সমুদ্রতীরে যেতে পারব না.
    কোনদিন শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরিতে যেতে পারব না.
    কোনো দিন হস্তশিল্প মেলাতে যেতে পারব না.

    কিন্তু আমি কি পাগল হয়ে গেছিলাম? আমাকে ওর ছেড়ে চলে যাবার পিছনে আমি-ই দায়ী. এ কথা আর কোথায়-ই বা স্বীকার করব!
    আমি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছি.
    আর সেই সব কষ্ট আমার প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত্রির ভিতরে ফিরে আসে.
    আমাকে যন্ত্রনা দেয়.
    যখন খুব শ্বাসকষ্ট হয়, তখন ওকে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে হয়.

    সুযোগ পেলাম না আমি.

    কবিতায় কি আমার উপর প্রতিশোধ নিল? গার্গী আমাকে বারবার বলত কিছু চাইনা, অল্প নিই থাকা সম্ভব. কিন্তু আমাকে লিখতে হবে.

    তাই কি আমি আর লিখতে পারছি না?

    আমার কি এভাবেই মৃত্যু হবে?

    হয়ত তাই.

    (ক্রমশ)
  • HIndol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৩:৩০577288
  • এলোমেলো আমি-৬

    গতকাল-ই কল্পর্ষিকে গালাগাল দিলাম কবিতা না লেখার জন্য. ওদিকে মণির পান্ডুলিপি তৈরী থাকলেও বইটা বেরোচ্ছে না. কেন যে জানি না! আমার নিজের জীবনেও ঝড় চলছে বলা যায়. আমার একটা অসুবিধের দিক হচ্ছে আমি আমাকে যে ভালবাসে, আমি তাকেও সময় দিতে পারি না. আমার কোনো সম্পর্কই টিকে থাকে না. এর কারণ কি? আমি কি খুব খারাপ মানুষ? এই বয়েসে এসে পিছনে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছি এমন অনেক কিছু জীবনে ঘটিয়েছি, যেগুলি আমার নিজের জীবনেই বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে. অথচ আমি নিজে জানি আমার সেই সব কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো ব্যাক্তিগত স্বার্থ কাজ করে নি. সমস্যাটি হলো আমি চালিত হই আমার মন যেভাবে চায়, সে ভাবেই. আর তার প্রভাব পড়ে স্বাভাবিক ভাবেই আমার জীবনে. তার প্রভাব পড়ে অন্যান্য মানুষের মধ্যেও. এই যে গতকাল আমি ঘোরের কথা বলছিলাম, তার জন্য দরকার হয় আমার নিজের সঙ্গে নিজের থাকার. আমার জীবন কখনই মসৃন পথ ধরে এগোয়নি. এই যে বয়সে এসে পড়েছি আমি, মাঝেমধ্যে নিজেরই আশ্চর্য লাগে কীভাবে! কীভাবে কেটে গেল বেশ কয়েকটা বছর! আমি ভেবে দেখলাম, এই কয়েক বছরে আমি সত্যি সত্যি কিছু কবিতা লেখা আর কিছু গদ্য লেখা ছাড়া আর কিছুই করিনি, যে করে আমি নিজে শান্তি পেয়েছি, আমার ভালো লেগেছে.
    কিন্তু কবিতা-লেখা নিয়ে থাকতে চাওয়া মানুষের জীবন কী এভাবেই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যায়? আমি যখন শুধু পড়াতাম, তখন একজনের সঙ্গে আমার আলাপ হয়, এবং আমাদের মধ্যে একটি প্রেমের সম্পর্ক-ও তৈরী হয়. তার নাম এখানে নিচ্ছি না. তো, সেই মেয়েটি আমাকে বেশ চিঠি লিখত. নানা কথা হত. আমার জীবনে আসতে চেয়েছিল মেয়েটি. তখন মেয়েটির অবস্থা ছিল পাগলের মত. আমিও তাকে খুব ভালবাসতাম. তার যার পর নাই জেদের বশবর্তী হয়েই একদিন আমরা স্পেসাল ম্যারেজ এক্ট-এ বিয়ে করি., মেয়েটি চলে যায় বাড়িতে. তার কিছু কাল পরে আমি রেডিয়েন্ট-এ কপি রাইটার-এর কাজ পাই. সেই আমার প্রথম চাকরি করা শুরু. সময়টা ২০০৪. কিন্তু তার কিছু কালের মধ্যেই মেয়েটির বাবা-মা আমাকে বলেন এই বিয়ে তাঁরা মানেন না. আমি প্রথমে ভেঙ্গে পরলেও যেদিন সয়ং সেই মেয়েটির মুখ থেকে শুনি সে আমার সঙ্গে থাকতে চায় না, তখন আর যুদ্ধ করা শোভন মনে করিনি. আমাদের বিয়ে অবৈধ হয়ে যায়.
    ভেঙ্গে পড়লেও উঠে দাঁড়ায় কবিতার জোরে. আমাকে ভাস্করদা বলেছিলেন আমাকে লিখতে হবে.
    যে জায়গায় আমি চাকরি করতাম, সেখানে ক্রিয়েটিভ কাজ বলতে কিছুই ছিল না. খুব কম মাইনেও পেতাম. কিন্তু পরিশ্রম ছিল. লেখা চালু ছিল. সেখানে চাকরি করতে করতেই আমি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রচুর লিখতাম. সেখানে আমার চাকরি যায় আমার রাজনীতির জন্য. যখন সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনে আমি তত্কালীন সরকারের বিরুদ্ধে নানা জায়গায় লিখছি. মিছিল সংগঠন করছি. এই প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ে গেল একদিনের ঘটনার কথা. জি ডি বিরলা সভাঘরে আমার স্রীজাতর, পারমিতা এবং সুবোধ দার কবিতা পাঠ ছিল. সেদিন তা ছিল ১৪ মার্চ এর পরের দিন.
    আমি কবিতা পড়তে যাবার সময়ে, কবিতা পড়ার আগে বলি পশ্চিম এশিয়ার শান্তি নিয়ে কথা বলার আগে বলা উচিত পশ্চিমবঙ্গের কথাও. এতে সেখানে উপস্থিত রবিন দেব সহ সিপিএম এর নেতারা আমাকে ঘিরে ধরেন. প্রায় মারেন আর কী! কিন্তু সেখানে ছিল আমার বন্ধু প্রসুন. প্রসুন না থাকলে সেখান থেকে বেঁচে ফিরে আসতাম কিনা সন্দেহ. সুমন ভট্টাচার্য-ও ছিল.
    তো যাই হোক, চাকরি যায়. সে সময়ে ইন্দ্রজিতদার সুত্রে আমার আলাপ হয় গার্গীর সঙ্গে. গার্গী অদ্ভুত ভালো মানুষ. আমাকে খুব ভালো বেশে ফেলে গার্গী. আমিও গার্গীকে খুব ভালোবেসে ফেলি. গার্গীর বাবা-মা থাকেন হাওড়াতে. কিন্তু গার্গী থাকত ইন্দ্রজিত দা, বর্নালিদির সঙ্গে. বলতে গেলে গার্গীর বাবা-মা তাঁরাই. তাঁরা না থাকলে গার্গী এক অন্ধকূপ থেকে বেরোতে পারত না. সেই গার্গী অনেক সংকটের সময়ে আমাকে জড়িয়ে রেখেছিল. কিন্তু আমি পারতাম না আমার নিজস্ব একাকিত্বের বৃত্ত ছেড়ে মিশে যেতে! কিন্তু অদ্ভুত ভাবে দেখেছিলাম আমার সঙ্গে গার্গীর মিল. আমার প্রতি মুহুর্তের মনোভাব গার্গী বুঝতে পারত. অসম্ভব ভালো কবিতা লেখে গার্গী. ইংলিশ -এ. নিজে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট. এখনো কোনো কলেজ এ চাকরি পায়নি হয়ত.
    ছোটবেলা থেকে আমার একটা বদ স্বভাব হচ্ছে নানা বিষয়ে অকারণ মিথ্যে বলার.
    সেই স্বভাবের বলি কেউ হবেন এটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল.
    কিন্তু সেই মিথ্যের বলি হলো গার্গী.
    আমার যে জগতগৌরী কাব্য বীরেন্দ্র পুরস্কার পায়, সেই বইটি বেরোত না যদি না বর্নালিদি নিজে এগিয়ে এসে চাইতেন সেই বইটি বেরোক. বইটির পাতায় আছে গার্গী, বর্নালিদি, ইন্দ্রাজিত্দার স্নেহস্পর্শ. আছে গোপিদার অসম্ভব ভালো কাজ.
    খুব ভালো ছিলাম আমরা. আমার যেকোনো শরীর খারাপের সময়ে গার্গী আমাকে বুকে জড়িয়ে রাখত. কিন্তু আমি তার সঙ্গে মিথ্যাচরণ করলাম.
    অনেক চেষ্টা করেছিলাম. অনুরোধ করেছিলাম গার্গীকে আমাকে ক্ষমা করে দিতে. কিন্তু গার্গী আমাকে ক্ষমা করে দেয়নি. আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়.
    আজ যখন একলা বাড়ি ফিরি, আমি বুঝতে পারিনা আমি কার জন্য ফিরছি! নিজেকে নিজে মিথ্যে বলেছি সে সময়ে. কিন্তু এ কথা তো ঠিক, আমাকে যদি সত্যি কেউ প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে থাকে, কেউ যদি চেয়ে থাকে আমি লিখি, তো সে গার্গী.
    সেই গার্গী এখন আমাকে ঘৃণা করে, যেমন তুমুল ভালবাসত একটা সময়ে তেমনি তুমুল ঘৃণা করে, কিন্তু তার সঙ্গে আমার নাড়ির সম্পর্ক. আমি জানি এ সম্পর্ক কখনই বার হয়ে যাবে না. কখনই আমরা ভুলতে পারব না একে অপরকে, আমার শুধু একটি-ই কথা রাখতে পারত গার্গী, আমাকে আর একবার সুযোগ দিতে পারত.
    কি করেছিলাম তা আবার পরে লিখব. কিন্তু এটাও ঠিক আমার থেকেও অনেক গর্হিত কাজ করে মানুষ ভালো আছে. আমি কিন্তু তুলনামূলক ভাবে যা করেছি, তা অনেকের অপরাধের থেকে কম. আমি কিন্তু তেমন মানুষ নই. আমি এখন রোজ মরছি.
    এমনকি আমি এখন লিখতেও পারছি না.

    জীবনে যারা এসেছে তারা সকলেই আমাকে প্রথমে বলেছিল তুমি লিখবে, শুধু লিখবে, আর অন্য কিছু করবে না. সত্যি আমি অন্য কিছু করতে চাইও না. কিন্তু কী এক জীবন কাটাচ্ছি!
    সকলেই আমাকে ছেড়ে চলে যায়! কী করব! কি করব? আমি যে সত্যি লিখতে চাই. স্বার্থপরের মত বলছি আমি সত্যি লিখতে চাই.
    যেমন ভাবে আমি বেঁচে আছি এখন, তাতে আমার না বেঁচে থাকলেও চলে.
    (ক্রমশ)

    Posted by Hindol Bhattacharjee at 4:19 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৩:৩১577290
  • Friday, October 5, 2012

    এলোমেলো-৮

    এলোমেলো-৮

    শীতের ভিতরে মাথা জমে থাকলে যেমন অবস্থা হয়, আমার এখন তেমনি অবস্থা. বাইরে অদ্ভুত একটা দুপুর. লোকজনের ব্যস্ততা. সকলেই খুব ব্যস্ত. আমিও নিয়মমাফিক কাজ করে চলেছি অফিসে বসে. কিন্তু কি করছি কে জানে! মাঝেমধ্যে মন চলে যায় অনেক দূরে. এই অবস্থা কোনো পেশাদারী জায়গায় বোঝানো অসম্ভব. আমার মনে পড়ে সেই সব মন্থর দুপুর গুলোর কথা যখন আমি শুধু একটি খাতা পেন নিয়ে বুকে বালিশ নিয়ে অপেক্ষা করতাম. ভাবনাগুলিকে লিখে রাখতাম. আর কানে ভেসে আস্ত দুপুরের শব্দ. আমাদের বাড়িতে একটি কাক থাকে. থাকেই বলা ভালো. রাতে বারান্দার দাঁড়ে বসে থাকে. তার দানা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পাই. সকালে মা কাকেদের খাওয়ায়. আমিও তাদের বন্ধিত করি না. সেই কাকটি দুপুরবেলাতে অদ্ভুত সুরে কথা বলে চলে দাঁড়ে বসে. এখনো ছুটির দিনে আমি যখন বুকে বালিশ নিয়ে মন্থর ভাবে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকি, তখন সেই সব পাখি আমার জানলে উড়ে এসে বসে. কিছু চড়াই আছে. একটা চেনা শালিখ আছে. আর আছে আমার ছোট ঘরটা.
    জীবন থেকে মন্থরতা হারিয়ে গেলে জীবনের অনেক ক্ষতি হয়. আগে মনে হত আমার একটা দিন মানে অনেক দিন. এখন বুঝতে পারি না আমার দিনগুলো কত ছোট সময়ের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে. এখন আমার এক সপ্তাহ মনে হয় একটি দিন. আবার এই এক সপ্তাহ এক বছর. একই সঙ্গে যেমন অত্যন্ত দ্রুত ভাবে জীবনটা কাটছে, তেমনি অত্যন্ত দ্রুত ভাবে জীবনটা শেষ হয়ে আসছে. খুব আধুনিকতার অন্যতম একটা সমস্যা এইটা. মন্থরতা জীবন থেকে চলে যাওয়া.
    অথচ এমন ভাবেই তো অনেকেরই জীবনটা কেটে যাচ্ছে. তারা আপাত সফল হচ্ছে. কেউ খুব ভালো কপি লেখক হচ্ছে, কেউ খুব খ্যাতিমান কবি, কেউ অধ্যাপক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ ফিল্ম মেকার. কিন্তু মন্থরতা তাদের আর নেই. এই মন্থরতা আমাদের বাঙালিদের জীবনের একটি স্বভাব. বা বলা ভালো বৈশিষ্ট. আমরা নদীর দেশের লোক. নদী যেমন মৃদুমন্দ বয়ে যায়, তেমন. আমরা ধানক্ষেতের দেশের লোক. তাড়া নেই কোথাও যেখানে. পাহাড়ে এই মন্থরতা খুব কাজে দেয়. সেখানে তাড়াহুড়ো করলে শেষ. মজাটাই টের পাওয়া যাবে না. প্রকৃতি আমাদের কাছে যে কথাগুলো শুনিয়ে যায়, সেই কথাগুলিকে অনুসরণ করে বোঝার জন্য প্রয়োজন হয় একাকী থাকার. প্রয়োজন হয় একা হেঁটে যাওয়ার. প্রয়োজন হয় মন্থরতার. বেশি কথা খরচ না করে
    চুপচাপ থাকার.
    কিন্তু আমাকে চুপচাপ থাকতে দিছে কে! আমি চুপ করে থাকতে চাইলেও থাকতে পারব না. এই অফিসের সামনে গাছটার দিকে একটু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে. পারব না. একটু বাদেই আবার মিটিং.
    আমার পুরনো দিনগুলোর কথাও মনে পড়ে. মোহগ্রস্তের মত যে আমার ভাবনার মত নয়, তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে এবং তার সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য কি না করেছি এক সময়ে. তার পর দেখেছি, সবই আমার মনের মায়া. আর সেই মায়ার জালে আমি হারিয়ে ফেললাম যে আমাকে সবথেকে বেশি ভালবাসত তাকে.
    এখন কারোর সঙ্গেই আমার সম্পর্ক নেই. আমি সবার কাছ থেকেই নিজেকে বিযুক্ত করে নিয়েছি. আবার বাধ্যতামূলক ভাবে আমাকে সকলের মধ্যে থাকতে হয়. সকাল সকাল শুনতে হয় এই বোনাস হলো না, এই মাইনে বাড়ল না. এই টাকা কেটে নিয়েছে. আবার কেউ কেউ সব বোঝেন. কবিতা তো সকলেই সহজে বুঝে যায় (!!!!) এই একটি বিষয়ে মন্তব্য করার অধিকার মনে হয় সবার আছে!! বিজ্ঞাপনের লোক কবিতা নিয়ে মহত জ্ঞান দেবেন, সেটা শুনতে হবে; আধ্যাত্মিকতা নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা করবেন, তাল মেলাতে হবে; অত্যন্ত কদর্য কিছু রসিকতা করবেন, সেগুলিতে না হাসলে রসবোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে!
    ভাবা যায় না. আমরাই সম্ভবত একমাত্র জাতি যারা শিল্পী মানেই খ্যাতিকে সম্মান করি. শিল্পকে না. খ্যাতি প্রাপ্ত শিল্পী না হলে তিনি সঠিক কথা বললেও তার কথার দাম থাকে না. এক বড়বাজারের মধ্যে আমাদের যাবতীয় শিল্প বিক্রি হয়. শিল্পী বিক্রয় হন. তাদের মাথায় শিরোপা বসিয়ে দিয়ে যান রাজনৈতিক পদবিধারীরা.
    মহা মুশকিল হলো. কী লিখতে শুরু করেছিলাম আর কোথায় এসে পড়লাম!
    না. আমি আএত গতিশীল হয়ে থাকতে পারছি না. আমি আরেকটু মন্থর হয়ে যাই. বাইরে আপাত গতিশিলের ভূমিকাটুকু রেখে যে কীভাবে নিজের ভিতরে মন্থর হয়ে যেতে হয়, তা প্রাকটিস করতে হবে.
    অথবা তা এমনি আসবে!
    শুধু অপেক্ষা করতে হবে. যদি এই অপেক্ষা মৃত্যু পর্যন্ত চলে!
    এই তাই যা ভয়!
    (ক্রমশ)

    Posted by Hindol Bhattacharjee at 2:36 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৩:৩২577291
  • এলোমেলো-৮

    শীতের ভিতরে মাথা জমে থাকলে যেমন অবস্থা হয়, আমার এখন তেমনি অবস্থা. বাইরে অদ্ভুত একটা দুপুর. লোকজনের ব্যস্ততা. সকলেই খুব ব্যস্ত. আমিও নিয়মমাফিক কাজ করে চলেছি অফিসে বসে. কিন্তু কি করছি কে জানে! মাঝেমধ্যে মন চলে যায় অনেক দূরে. এই অবস্থা কোনো পেশাদারী জায়গায় বোঝানো অসম্ভব. আমার মনে পড়ে সেই সব মন্থর দুপুর গুলোর কথা যখন আমি শুধু একটি খাতা পেন নিয়ে বুকে বালিশ নিয়ে অপেক্ষা করতাম. ভাবনাগুলিকে লিখে রাখতাম. আর কানে ভেসে আস্ত দুপুরের শব্দ. আমাদের বাড়িতে একটি কাক থাকে. থাকেই বলা ভালো. রাতে বারান্দার দাঁড়ে বসে থাকে. তার দানা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পাই. সকালে মা কাকেদের খাওয়ায়. আমিও তাদের বন্ধিত করি না. সেই কাকটি দুপুরবেলাতে অদ্ভুত সুরে কথা বলে চলে দাঁড়ে বসে. এখনো ছুটির দিনে আমি যখন বুকে বালিশ নিয়ে মন্থর ভাবে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকি, তখন সেই সব পাখি আমার জানলে উড়ে এসে বসে. কিছু চড়াই আছে. একটা চেনা শালিখ আছে. আর আছে আমার ছোট ঘরটা.
    জীবন থেকে মন্থরতা হারিয়ে গেলে জীবনের অনেক ক্ষতি হয়. আগে মনে হত আমার একটা দিন মানে অনেক দিন. এখন বুঝতে পারি না আমার দিনগুলো কত ছোট সময়ের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে. এখন আমার এক সপ্তাহ মনে হয় একটি দিন. আবার এই এক সপ্তাহ এক বছর. একই সঙ্গে যেমন অত্যন্ত দ্রুত ভাবে জীবনটা কাটছে, তেমনি অত্যন্ত দ্রুত ভাবে জীবনটা শেষ হয়ে আসছে. খুব আধুনিকতার অন্যতম একটা সমস্যা এইটা. মন্থরতা জীবন থেকে চলে যাওয়া.
    অথচ এমন ভাবেই তো অনেকেরই জীবনটা কেটে যাচ্ছে. তারা আপাত সফল হচ্ছে. কেউ খুব ভালো কপি লেখক হচ্ছে, কেউ খুব খ্যাতিমান কবি, কেউ অধ্যাপক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ ফিল্ম মেকার. কিন্তু মন্থরতা তাদের আর নেই. এই মন্থরতা আমাদের বাঙালিদের জীবনের একটি স্বভাব. বা বলা ভালো বৈশিষ্ট. আমরা নদীর দেশের লোক. নদী যেমন মৃদুমন্দ বয়ে যায়, তেমন. আমরা ধানক্ষেতের দেশের লোক. তাড়া নেই কোথাও যেখানে. পাহাড়ে এই মন্থরতা খুব কাজে দেয়. সেখানে তাড়াহুড়ো করলে শেষ. মজাটাই টের পাওয়া যাবে না. প্রকৃতি আমাদের কাছে যে কথাগুলো শুনিয়ে যায়, সেই কথাগুলিকে অনুসরণ করে বোঝার জন্য প্রয়োজন হয় একাকী থাকার. প্রয়োজন হয় একা হেঁটে যাওয়ার. প্রয়োজন হয় মন্থরতার. বেশি কথা খরচ না করে
    চুপচাপ থাকার.
    কিন্তু আমাকে চুপচাপ থাকতে দিছে কে! আমি চুপ করে থাকতে চাইলেও থাকতে পারব না. এই অফিসের সামনে গাছটার দিকে একটু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে. পারব না. একটু বাদেই আবার মিটিং.
    আমার পুরনো দিনগুলোর কথাও মনে পড়ে. মোহগ্রস্তের মত যে আমার ভাবনার মত নয়, তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে এবং তার সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য কি না করেছি এক সময়ে. তার পর দেখেছি, সবই আমার মনের মায়া. আর সেই মায়ার জালে আমি হারিয়ে ফেললাম যে আমাকে সবথেকে বেশি ভালবাসত তাকে.
    এখন কারোর সঙ্গেই আমার সম্পর্ক নেই. আমি সবার কাছ থেকেই নিজেকে বিযুক্ত করে নিয়েছি. আবার বাধ্যতামূলক ভাবে আমাকে সকলের মধ্যে থাকতে হয়. সকাল সকাল শুনতে হয় এই বোনাস হলো না, এই মাইনে বাড়ল না. এই টাকা কেটে নিয়েছে. আবার কেউ কেউ সব বোঝেন. কবিতা তো সকলেই সহজে বুঝে যায় (!!!!) এই একটি বিষয়ে মন্তব্য করার অধিকার মনে হয় সবার আছে!! বিজ্ঞাপনের লোক কবিতা নিয়ে মহত জ্ঞান দেবেন, সেটা শুনতে হবে; আধ্যাত্মিকতা নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা করবেন, তাল মেলাতে হবে; অত্যন্ত কদর্য কিছু রসিকতা করবেন, সেগুলিতে না হাসলে রসবোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে!
    ভাবা যায় না. আমরাই সম্ভবত একমাত্র জাতি যারা শিল্পী মানেই খ্যাতিকে সম্মান করি. শিল্পকে না. খ্যাতি প্রাপ্ত শিল্পী না হলে তিনি সঠিক কথা বললেও তার কথার দাম থাকে না. এক বড়বাজারের মধ্যে আমাদের যাবতীয় শিল্প বিক্রি হয়. শিল্পী বিক্রয় হন. তাদের মাথায় শিরোপা বসিয়ে দিয়ে যান রাজনৈতিক পদবিধারীরা.
    মহা মুশকিল হলো. কী লিখতে শুরু করেছিলাম আর কোথায় এসে পড়লাম!
    না. আমি আএত গতিশীল হয়ে থাকতে পারছি না. আমি আরেকটু মন্থর হয়ে যাই. বাইরে আপাত গতিশিলের ভূমিকাটুকু রেখে যে কীভাবে নিজের ভিতরে মন্থর হয়ে যেতে হয়, তা প্রাকটিস করতে হবে.
    অথবা তা এমনি আসবে!
    শুধু অপেক্ষা করতে হবে. যদি এই অপেক্ষা মৃত্যু পর্যন্ত চলে!
    এইটাই যা ভয়!
    (ক্রমশ)
    Posted by Hindol Bhattacharjee at 3:13 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৩:৩৩577292
  • এলোমেলো আমি-৯

    এই একটু আগে আমাকে ফোন করলেন প্রশান্ত মাঝি. বহুদিন পর তাঁর সঙ্গে কথা হলো. মনে আছে ভাস্করদার চিলেকোঠায় সকলে মিলে আড্ডা দেবার কথা. কী সুন্দর ছিল সেই সব দিন. ভাস্করদার মৃত্যুর দিনটি হঠাত মনে পড়ল. সেদিন ছিল এক শনিবার. আমাকে সার্থক ফোনে জানালো ভাস্করদা আর কবিতা লিখবেন না. শুনে আমি ভেঙ্গে পড়লাম. জানতাম এই দিনটা একদিন আসবেই. কারণ কান্সারে ভুগছিলেন ভাস্করদা. খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন. তাঁর পা দুটো কেমন সরু হয়ে গেছিল. আমি ছুটলাম. গিয়ে পৌছলাম যখন বরানগর তখন ভাস্করদাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কাছেই কুটিঘাট-এ. ভাস্করদার বাড়িতে বাসবিদি তখন কথা বলার মত অবস্থায় ছিলেন না. শুনলাম শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে. একটা রিক্সা করে ছুটলাম. গিয়ে দেখলাম তখন শঙ্খবাবুও এসে গেছেন. সন্দীপন এসে গেছে. ভাস্করদার প্রচুর বন্ধু এসে গেছেন. অভীককে কোথাও দেখতে পেলাম না. বুঝলাম এই দৃশ্য সহ্য করা অভীক-এর পক্ষে কঠিন. আরেক অভীক দা চলে এসেছেন. আমি ঢুকে দেখলাম ভাস্করদা শুয়ে. মুখে সেই প্রশান্ত মধুর হাসি. সুমন্ত সব কাজ করছে. কৌশিক হাজির. আমি আর বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারলাম না. আমিও চুল্লির সামনে থেকে বেরিয়ে কুটিঘাট-এ যে বটগাছ আছে সেটি পেরিয়ে চলে গেলাম গঙ্গার ঘাটে. এ দিকে আমার পিছনেই কাঠের আগুনে শেষ হয়ে যাচ্ছেন আরেক জন. তার আঁচ এসে লাগছে আমার গায়ে. আমি চুপ করে বসে রইলাম. একবার শঙ্খবাবুর কাছে গেলাম. তখন শিবাজিদাও চলে এসেছেন. ভুমেন্দ্র গুহ এসেছেন. আমি আর সার্থক বসে রইলাম আবার ঘাটে. মাঝখানে একবার চুল্লির কাছে এসে দেখি মৃদুলদা এক প্যাকেট গোল্ড ফ্লেক পুরে দিলেন ভাস্করদার পকেটে.
    মনে পড়ল ভাস্করদার অমোঘ লাইন - যখনি মৃত্যুর কথা মনে পরে সিগারেট ধরাই.
    একটু একটু করে বৃষ্টি শুরু হলো.
    ভেসে গেলাম.
    আবার ফিরেও পেলাম.
    কিরকম আছ মানুষেরা, জিরাফের ভাষা আমাকে নিয়ে গেল আবার অন্য কোনো জায়গায়.
    আমি এখনো সেই জায়গা থেকে বেরোতে পারিনি.
    যাই হোক, আজ অনেক দিন বাদে সৌম্যদার সঙ্গে কথা হলো ফোনে. সৌম্য দাশগুপ্ত. অসামান্য কবি. আমাকে নানা সময়ে নানা ভাবে উপকার করেছেন. এমনকী প্রয়োজনের সময়ে অর্থসাহায্য-ও করেছেন.
    অগ্রবীজ বলে একটি অসামান্য কাগজ করেন তাঁরা দেশের বাইরে থেকেই. বাংলাদেশ, ভারত, এবং প্রবাসী বাঙালিরা মিলে এই কাগজ করেন. একটু অনিয়মিত. কিন্তু অত্যন্ত মননশীল কাগজ.
    আমি আজকেই বলছিলাম সৌম্যদা কে. আমি কখনই কাউকে বলতে পারি না বা কোনো কিছুকে নস্যাত করে দিতে পারি না. আমার অস্বস্তি হয় তাদের সঙ্গে কথা বলতে বা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে যারা খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তে চলে আসে. একে খারাপ, ওকে ভালো ইত্যাদি বলে দেয়. আমি কে বিচার করার? আমি বড়জোর বলতে পারি আমার ভালো লাগছে কি না এই সময়ে দাঁড়িয়ে.
    তবে একটা বিষয়, গড় কবিতা এবং সত্যিকারের কবিতার মধ্যে ফারাক তো আছেই.
    গড় কবিতা বলতে আমি কি বললাম?
    বেশিরভাগ কবির ক্ষেত্রে যেটা হয়, তা হলো, একবার লেখা কি তা জেনে গেলে, তার পর সেই লেখার কৌশল কে অস্ত্র করে লেখার পর লেখা তাঁরা লিখে যান. এ ক্ষেত্রে যেটা থাকে না তা হলো সেই লেখকের ব্যাক্তিত্ব -এর প্রকাশ.
    বুঝতে পারিনা তাঁরা কেন লিখছেন.
    কেন আমাকে লিখতে হবে সেটা খুব গুরুত্বপুর্ণ বিষয়.
    আমি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছি, এই যে আমার অনেক দিন ধরে কিছু লেখা হচ্ছে না, আমার মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এতে. কিন্তু আমি নিজের মধ্যে সেই মৃত্যুর মত অনুভূতি পাছিনা কেন.
    যদি লেখা না আসে তবে আসবে না এরকম মনে হচ্ছে কেন.
    তবে কী আমি লেখার সেই নাছোরবান্দা ভগবানের কাছ থেকে সরে এসেছি?
    একবার আমার যাওয়ার কথা ছিল বর্ধমান.
    আমি একটা স্টেশন-এ এসে নেমে পড়েছিলাম
    আমার আর কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে হয়নি.
    আমি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ কাজ ফেলে সেই স্টেশন-এর চারদিক দেখলাম. বিভিন্ন জায়গায় ঘুরলাম. কাছাকাছি একটা ভাতের হোটেলে ভাত খেলাম.
    আর সম্পূর্ণ ভুলে গেলাম বর্ধমানের কাজটির কথা.
    কোথায় যাওয়ার কথা ছিল আর কীভাবে দিনটা শেষ হলো.
    জীবনতাও কী এরকম ভাবে চলছে?
    আমি খুব মাঝপথে নেমে গেছি অমিতাভ, এখানে এখন রাত, এখানে এখন খুব রাত.
    লিখেছিলেন কবি বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়.
    অসামান্য কবি একজন.
    তাঁর পাইকপাড়ার বাড়িতে অনেক গভীর আড্ডা হত.
    অনেকদিন জানা তাঁর কাছে.
    তাঁর বাড়ির সামনে একটা অসামান্য গাছ আছে. আর বারান্দাটা এমন ভাবে, যে গাছের পাতাগুলো তাঁর বারান্দায় এসে পড়ে.
    কিছু ভেবে জীবনটা কাটেনি আমার
    কিছু ভেবে পরিকল্পনা করে বাঁচিনি আমি.
    আর এই কিছু না ভেবে ভেবে আমার জীবনে কিছু করতেও পারিনি আমি.
    কিন্তু কী-ই বা করা যেত!
    সত্যি যদি ভালো কিছু লিখতে না পারলাম, তো বেঁচে থেকে লাভ কি?
    এই কথাটা আমি আমার কাছের লোকেদের বোঝাতে পারিনি.
    আমার বাবার কথা মত সফল ভাবে ব্যর্থ হওয়ার চেয়ে ব্যর্থ ভাবে সফল হওয়া ভালো.
    কিন্তু তাও যদি না হই ক্ষতি কী?
    এই যে আমি জন্মেছি, এই পৃথিবীটাকে দেখতে পাচ্ছি, এটাই তো অনেক. একদিন এই পৃথিবীটাকে আমি দেখতে পাব না. তখন কোথায় বিজ্ঞাপন, কোথায় লেখা, কোথায় খ্যাতি ! কোথায় অপমান, কোথায় হিংসা, কোথায় ভালবাসা!
    আমার লেখা কি তখন পৃথিবীটাকে দেখবে?
    দুম করে মনে পড়ে গেল রবীন্দ্রনাথ এর ওই গান : দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে/ আমার সুরগুলি পায় চরণ আমি পাই নে তোমারে.
    এই তুমি কী সময়?
    সময় যখন কবিতাকে পড়ে, কবিতাও কি সময় কে পড়ে?
    (ক্রমশ)

    Posted by Hindol Bhattacharjee at 2:09 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৩:৩৪577268
  • এলোমেলো আমি-১০

    আমার এই রবিবারগুলো মনে পড়ে অনেক কিছুই. যখন চাকরি করতাম না, বেরিয়ে পড়তাম. যেকোনো একটা ট্রেন এ চেপে চলে যেতাম অনেক দূর. বিভিন্ন কবি-সম্পাদকের সঙ্গে আড্ডা চলত. তারা লেখা চাইতেন. অনেক লিখতাম. মনে আছে নিলাদ্রী ভৌমিক এর কথা. অভিষেক পত্রিকার কথা. ৯০ এর প্রথম এবং শেষের দিকেও অনেক লিখেছি ওই পত্রিকায়. সে সময়ে নিয়মিত আড্ডা দিতাম জয়দেব দার সঙ্গে. নন্দন এ, কফি হাউস তো ছিলই. আর কোনো কোনো রবিবারের সকালে চলে যেতাম অনির্বান ধরিত্রিপুত্রের বাড়ি. সেখানেই আমার আলাপ হয় গৌতম বসুর সঙ্গে. অনির্বান্দা এবং গৌতম বসু দুজনেই অত্যন্ত বড় মাপের কবি. গৌতম বসুর অন্নপূর্ণা ও শুভকাল পড়ে আমি তখন মোহিত. অনেক কম লেখেন গৌতম দা. কিন্তু যা লেখেন তা খাঁটি. জয়দেব দা আমাকে একদিন বলেছিল তদের নব্বই এর সমস্যা হলো তদের মধ্যে ইউনিটি নেই. কেউ কারোর জন্য কিছু করিস না. জয়দেব দার ভ্রমন কাহিনী, মেঘদূত, অসম্ভব বড় মাপের কবিতা. জয়দেব দা আমাকে প্রথম ফরহাদ মজহার পড়ান. আল মাহমুদ পড়ান. জয়দেব দা সিপিএম এর সক্রিয় সদস্য হলেও কখনই ধর্মান্ধ ছিল না. এটা ছিল জয়দেব দার অন্যতম গুন. ২০০০ সালে প্রথম কবিতা উত্সব যখন হয়, ৯০ থেকে যে সাত জন কবিকে নিয়ে আলাদা কবিতা পাঠ-এর ব্যবস্থা হয়েছিল তাতে আমি ছিলাম. সেই সময়ে আরও একটি ঘটনা ঘটে. সেটা ছিল সাহিত্য একাডেমিতে ৯০ এর পনেরোজন এর কবিতা পাঠ এবং আলোচনা. সঞ্চালক ছিলেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়. সেই পনেরজনের কবিতা নিয়ে এবং আলোচনা নিয়ে একটি বই-ও বেরোয়. কবিতা চর্যা. সে কি আর এখন পাওয়া যায়? জানি না. এই সবই হয় তুমি, অরক্ষিত কাব্যগ্রন্থ বেরোনোর আগে.
    মনে আছে তখন ব্রাত্যদা নবীন বনাম প্রবীন বলে একটা অনুষ্ঠান করত খুব সম্ভবত ইটিভিতে. আমার এবং সৌরভ এর বিপরীতে ছিলেন সুবোধ দা এবং কৃষ্ণা বসু. মনে আছে আমরা কিছু কথা বলেছিলাম যেগুলো তাঁদের পছন্দ হয়নি. হাহাহাহা! এখন মনে পড়লে হাসি পায়. এ সব তর্ক বিতর্কের কি মানে! আরও একজন কে মনে পড়ে তিনি হলেন সত্য ভাদুড়ী. স্যাস বলে অসাধারণ একটা নাত্যপত্র বেরোত সে সময়ে. আমি ছিলাম সেই পত্রিকার সহ সম্পাদক. আমাদের অফিস তা ছিল তখন বৌবাজারে. প্রতি বৃহস্পতিবার আমরা সন্ধেবেলা বসতাম সেখানে. নাট্যকার, পরিচালক, লেখক সবাই আসতেন. খুব ভালো আড্ডা হত. লেখা নির্বাচন হত. কতবার ব্রাত্যদা আর আমি একসঙ্গে গেছি. সত্যদার পিছনে লেগেছি. সেই সব পিছনে লাগাগুলো ছিল খুব মধুর. খুনসুটি-ই বলা চলে. তো সে সময়ে আমি জন অসবর্ণ এর একটি নাটক লুক ব্যাক ইন আঙ্গার এর বঙ্গীয় করণ করি. নাম হয় অগ্নীবর্ষী. সেই নাটক তা বেশ জনপ্রিয় হয়. এমন কী বর্তমানে সংসৃতি নাট্যদলের প্রধান দেবেশ চট্টোপাধ্যায় আমার এই নাটক তা অভিনয় করার কথাও বলেন. শুরু হয় নাটকটা নিয়ে অভিনয়. আমার খুব উত্তেজনা লাগত যে আমার নাটক নিয়ে এত লোক ব্যস্ত! তার পর যেদিন প্রথম অভিনয় হয়, আমার খুব ভালো লাগে. আমার নিজের লেখা সংলাপগুলো কেউ মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিনয় করছে, এটা দেখতে পাচ্ছি, এটা ভাবলেই রোমাঞ্চিত লাগে এখনো.
    সুনেছিলাম বেশ কয়েকটা শো হয়েছিল নাটকটার.
    তার পর দেবেশ দা আমাকে অনেক বার নাটক লিখতে বলেছে. আমার একটি কাব্যনাটক বেরিয়েও ছিল স্যাস পত্রিকায়.প্রচুর অনুবাদ করেছি আমি ওই পত্রিকার জন্য. সম্পাদনা করেছি. আমার খুব ভালো লাগত. তার পর চাকরিতে ঢুকে আর আমি যেতে পারতাম না. অনেক প্রবন্ধ-ও লিখেছি স্যাস পত্রিকাতে. সেই সব পত্রিকাগুলো, লেখাগুলো যে কোথায় গেল! এমনকী আমার লেখা নাটকটার কপিও নেই. খারাপ লাগে. আমি যদি আরেকটু গোছানো হতাম!
    সেই সত্য ভাদুড়ী, বামপন্থী সত্য ভাদুড়ী, এখন বর্তমান সরকারের অধীনে কোন এক বড় পোস্ট এ আছে. যেহেতু আমি এই সরকারের বিরুদ্ধে, তাই তিনি আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেন না. কী অদ্ভুত লাগে! আমি যেহেতু স্যাস পত্রিকাতেই আমার নাত্যবিষয়ক অনেক লেখা লিখতাম, আমার লেখা আর উনি চান না, এমনকী আমার লেখা ছাপতে উনি অস্বীকারই করেছেন!
    আমার কতগুলো বিষয় বেশ অদ্ভুত লাগে! যাঁরা আমার লেখা কে ভালো বলতেন, চেয়ে চেয়ে লেখা ছাপতেন, তাঁদের কী সত্যি আমার লেখা ভালো লাগত? আমি যোগাযোগ রাখতাম বলে কি তাঁরা যোগাযোগ রাখতেন? না কি আমার রাজনৈতিক ভূমিকাটাই বড় হয়ে গেল, যেখানে সব কাগজগুলি আমাকে ত্যাগ করেছে? অথবা এমন হতে পারে, আমার লেখার আদৌ কোনো ছাপ নেই. কোনো ভাবনা নেই. মানুষ খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যায়. ব্রাত্যদার একটি নাটকের সংলাপ জাকাত সত্য তা আমি আমার জীবন দিই টের পাই-- পক্ষ নাও, না হলে তোমার অবস্থা হবে রিপ ভান উইন্কিল এর মত.
    বা হয়ত আমার নিজেকে সেত সিরিয়াসলি নেবার কিছু নেই. বা হয়ত আমার ব্যাক্তিগত জীবনের ছায়া অনেক বড় আমার কাজের চেয়ে!
    মনে আছে আমি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রচুর বই এর সমালোচনা করেছিলাম. সেগুলি একটাও খারাপ ছিল না. রামকুমার বাবুর বই, রবিশংকর বল এর বই, রমেন্দ্র কুমার আচার্য চৌধুরীর বই. তুষার চৌধুরীর বই. আরো অনেক. কোনো লেখাকেই কেউ খারাপ বলেন নি কখনো. বরং আমি অনেক পজিটিভ ফিডব্যাক পেয়েছি. কিন্তু গার্গীর সঙ্গে যেদিন উকিল এর কাছে গেলাম, ইন্দ্রজিত দা বললেন তোমার লেখা অনেক বেশি করে ছাপা হত আনন্দবাজার এ এই সম্পর্কের জন্য! আমি ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তাহলে কি লেখাগুলো ভালো ছিল না? আপনি পক্ষপাতিত্ব করতেন? কিন্তু গার্গীর সঙ্গে সম্পর্কের অনেক আগে থেকেই তো আমি লিখি আনন্দবাজার এ.
    হলো কী, উনি আমাকে গার্গীর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদ হবার পর থেকে আর বই পাঠানি না.
    তাহলে কি সব ব্যাক্তিগত সম্পর্কের উপর নির্ভর করে? লেখা, পাঠকের ফিডব্যাক, এগুলোর কি কোনো দাম নেই পত্র পত্রিকাগুলোর কাছে?
    আমি জানি এই লেখা লিখে আমি আরও শত্রু তৈরী করছি. কিন্তু এটাও তো ঠিক,যে আমি লেখা ছাড়া আর জীবনে কিছু করতেও চাইনি. অনেকে আমাকে ধান্দাবাজ বলে. আমার জগতগৌরী কাব্য নিয়ে অলোকরঞ্জন যখন লিখলেন তখন অনেকে আমাকে বলল আমি সম্পর্ক কে অবলম্বন করেছি. আনন্দবাজার পত্রিকায় হাফ পেজ সমালোচনা বেরিয়েছিল.
    কিন্তু আমি তো কিছুই জানতাম না.
    আমি তো কাউকেই কিছু করতে বলিনি আমার জন্য.
    আর যদি নিজেকে প্রজেক্ট কতে চাইতাম, তাহলে কি অনেকের থেকে বেশি পারতাম না?
    কিন্তু আমি তো তাও কিছু করি নি.
    আমি সাহিত্য আকাদেমি তে গিয়ে বসে থাকিনি.
    বড় মাপের সাহিত্যিকের আড্ডাতে যাইনি. সম্পাদকদের সঙ্গে পি আর ও করে যাইনি. বরং আমার এই সম্পর্ক নিয়ে যখন লোকজন কে নানা কিছু বলা হয়েছে তা জানতে পেরেছি অনেক পর.
    আমি আমার নিজের লেখাটা লিখে গেছি বলতে গেলে. গার্গীর সঙ্গে ইন্দ্রজিতদাদের সম্পর্কের কোনো নাম নেই. গার্গী তাঁদের বাড়িতে থাকে. খুব ভালবাসেন তাঁরা গার্গীকে. গার্গী তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ.
    আমিও তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ.
    কিন্তু আমিও তো গার্গী কে ভালবাসতাম. আমার একটু বিচ্যুতি হয়েছিল. আমি তার জন্য আর কতবার ক্ষমা চাইব!
    কিন্তু লেখা ছাপানোর জন্য ভিক্ষা করতে পারব না.
    রবিশংকর বল এর বই দোজখনামা নিয়ে যখন বড় একটা লেখা লিখলাম তখন রবিদার খুব ভালো লাগলো. কিন্তু তার পর উনি আমার কাছ থেকে লেখা চেয়েও ছাপলেন না.
    স্বাভাবিক.
    আমি এতে দোষের কিছু দেখি না.
    কিন্তু একই মানুষগুলির ভিন্ন রূপ দেখতে দেখতে আমি এখন কাউকেই একদম চিনতে পারি না.
    আমার মনে হয় আমি এমন একটা সময়ে বসবাস করছি যেখানে লেখা নয়, লেখক কীরকম, কী ভাবেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ.
    এতে আমার যেটা হয়েছে গত কয়েক মাসে, যে আমি আর কোনো মানুষ কে সম্মান করতে পারছি না.
    আমার যে চাকরি সেখানে আমাকে ফেস মেন্টেন করতে চলতে হয়.
    সুগতদার সামনে সেটা করতে হয় না. এই একজন মানুষ যিনি আমার দু:সময়েও পাশে ছিলেন. আছেন.
    কিন্তু আমি আমার জীবনের এই সোনার সময়গুলো এভাবে পেরিয়ে গেলে আর কবে লিখব?
    আর কবে হিমালয়ে যাব?
    আর কবে ঘুরে বেড়াব?
    আমার কবিতা নাকি সকলের ভালো লাগে! কিন্তু কি কেউ তো আর আমাকে জানায় না কিছু!
    এখানকার মানুষ জন এত নির্মোহ যে মনে হয় সকলে জেন প্রাপ্ত!
    আমি যদি সত্যি চাইতাম অন্য উপায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে তবে তা সহজেই পারতাম. কিন্তু আমি তা আমার লেখার জন্য অবলম্বন করলে যা হবে তা হলো আমার লেখাকে অবমাননা করা হবে. প্রমাণিত হবে আমি আত্মবিশ্বস্ত নই. এই আত্মবিশ্ব্বস্ত থাকাটাই যে শিল্পীর জীবন ধর্ম!
    আমি তো একই রকম ভাবে লিখে যাব না কখনো. যা লোকেদের ভালো লেগেছে আমি যদি সেই ফাঁদে একবার পড়ে যাই, তাহলে কি আমার পক্ষে সম্ভব হবে নতুন কিছু লেখার? আমাকে কি ভুলতে হবে না নিজেকে? নিজের অতীতকে?
    নিজের দু:ক্ষগুলো প্রকৃত সম্পদ. সুখ ক্ষনিকের আমি তা জানি.
    কিন্তু দু:ক্ষগুলো পাহাড়ের মত হয়ে গেলে তখন সেই ভারে তো নিজেকে সিসিফাসের মত মনে হয়.
    এই যে এত সবকিছু লিখলাম, তার অন্যতম কারণ আমার বন্ধুরা আর তো কেউ নেই, যাদেরকে বলতে পারব. কেউ নেই যাদের সঙ্গে আমার কথোপকথন চলবে. সুগতদা আমার দাদার মতই হলেও সুগত দা অনেক ব্যস্ত থাকেন. আর তাঁকে আমার সব কথা বলাটাও সম্ভব না. আমি গার্গীর সঙ্গে একজন সাইকোলজিস্ট এর কাছে গিয়েছিলাম. তার প্রশ্ন ও কথাগুলো এত সাধারণ ছিল যে আমার নিজেরই হাসি পেয়ে যাচ্ছিল. এমন কোনো সাইকোলজিস্ট আছেন কি জনকে আমার এই বিরাট ভার সম্পর্কে বলতে পারি?
    হয়ত নেই.
    হয়ত আমাকে আমার নিজেরই সাইকোলজিস্ট হতে হবে.
    আর তার জন্য আমার চিকিত্সক এই লেখাই.
    আচ্ছা আমি ভালো বিষয়গুলো মনে করার পাশাপাশি বারবার কেন দু:ক্ষজনক স্মৃতিগুলো হানা দেয়?
    আমিও তো চাই সকাল বেলাতে উঠে লিখে ফেলতে একটি নতুন কবিতা. কিন্তু সেই সূত্রটি খুঁজে পাচ্ছি না যাতে আগের মত একটি লেখার সঙ্গে আরও একটি লেখা আপনা থেকে চলে আসবে. আমাকে ভাবতে হচ্ছে কালকের অফিসের কথা. আমাকে ভাবতে হচ্ছে নানা মানুষের নানা চাহিদার কথা. আমাকে ভাবতে হচ্ছে আমার অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের কথা!
    শূন্য দশকের কেউ আমার কবিতা পড়ে বলে মনে হয় না.
    পরের দশকের কেউই যদি না পড়ে, তাহলে আমি কীকরে আর আশা করব আমার লেখা এর পরের দশকের কবিরা পড়বেন? কী করে আশা করব অন্তত জীবদ্দশায় না হোক, মৃত্যুর পরেও কবিতা লিখে পাঠিয়ে দেবার মত কেউ কেউ থাকবেন?
    জীবন কে কি আমি খুব সিরিয়াসলি নিচ্ছি?
    যাক. পরে আবার ফিরে এসব.
    মনটা খুব ভারী লাগছে.
    বিনয়্দার একটা কবিতার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে খুব--- নিস্পেষণে ক্রমে ক্রমে অঙ্গারের মতন সংযমে/ হীরকের জন্ম হয়, দ্যুতিময়, আত্মসমাহিত.
    আমি এমন একটা অসুধ চাই, যেখানে আমি আমার স্মৃতিগুলো থেকে বেরিয়ে পড়তে পারি.
    আমি এমন একটা অসুধ চাই, যেখানে আমি ঘুমিয়ে থাকতে পারি অনেক দিন.
    অথবা হয়ত এ সব কিছুই চাই না.
    সবাই কি আমাকে ভুলে গেল?
    তা যাক. আমার লেখাগুলোকেও ভুলে গেল?
    সত্যি কথা, অনেক প্রশ্নের উত্তর যদি পাওয়া যেত...

    যদি আমি বাংলাদেশে চলে যেতে পারতাম! আমার আগের বইগুলো রিপ্রিন্ট করতে পারতাম! যদি একটা কবিতা সংগ্রহ বের করতে পারতাম! যদি আমার প্রবন্ধগুলো সবাইকে পরাতে পারতাম!
    এই হালকা ফুলকা লেখার জগতে আমি বেমানান. এক্কেবারে বেমানান.
    সবই কি তাহলে ইমেজ তৈরী করার বিষয়? লেখার সাধনা না? আশা করি শূন্য দশকের কবিরা এমনটা ভাবেন না. কিন্তু তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয় কি?
    কেউ বোধয় আমাকে পছন্দ করেন না.
    সে ক্ষেত্রেই বা আমি কি করতে পারি?
    আমি কোনো কমিটির মেম্বার নই. আমার কোনো ক্ষমতা নেই. আর আমার মাথা নত করে কিছু লোকের কথা মেনে চলতে ভয়ংকর আপত্তি.
    কে জানে কী হবে!
    অন্তত আমি যদি কিছু লিখে যেতে পারি তাহলেই হবে!
    আমার কোনো বই আর আমার কাছে নেই. আমার সত্তা সেটা. আমার আত্মা সেটা. আমার দুর্ভাগ্য আমাকে যারা ভালোবেসেছিলেন, ভালবাসেন, তারা বোঝেন না আমার ভালবাসা, আমার আত্মা হারিয়ে গেলে আমি মৃত্যুর অনেক আগেই মরে যাব.
    হয়ত এখনি গেছি.
    এই সব লেখা সেই আত্মার কান্না হয়ত.
    বা হয়ত সবই উল্টোপাল্টা!
    মেডুসার চোখ বইটা কি কিনছেন মানুষ? ভালো লাগছে বলছেন অনেকে. কিন্তু সত্যি কি তাঁদের ভালো লাগছে?
    আমার যেমন রিপন আর্য, শ্রীদর্শিনি, রাকা, সুমন, অরিত্র, দেবব্রত দের কবিতা ভালো লাগে. এরা খুব ভালো কবি. সংঘমিত্রা, অনিমিখ খুব ভালো কবি. শূন্য দশকের কবিতা খুবই ভালো.
    একটা সময় ছিল. চলে গেছে.
    সেই সময়ের উপর এখন পিরামিড
    কিন্তু কারুবাসনা যে আমাকেও নষ্ট করে দিয়েছে ব্রাদার.
    তাপসদা, অচ্যুত্দার আত্মহত্যা, জয়দেব দার মৃত্যু আমাকে ভাবায়.
    কত স্মৃতি, কত ঘটনা. জীবনটাই খুব এলোমেলো. অমসৃন. নীয়তিদুষ্ট.
    সকাল বেলা উঠে হাসিমুখে দিনটা শুরু করতে পারিনি সুগতদা.
    (ক্রমশ)

    Posted by Hindol Bhattacharjee at 11:46 PM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:২১577269
  • Sunday, October 7, 2012

    এলোমেলো আমি-১১

    এলোমেলো আমি-১১

    একজনের মন্তব্য পড়লাম তিনি লিখেছেন এত কিছু পড়ে আমার জন্য তাঁর মনটা ভার হয়ে যাচ্ছে. এই লেখাগুলোতে অনেক বানান ভুল থাকছে. এই ফন্ট এ লেখা বেশ চাপের. কপি করে পেস্ট করার সময়ে নানা ভুল হয়ে যায়. যাঁরা পড়ছেন তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইছি. অনেক বানান ভুল থাকছে. আমি অন্য যে ফন্ট এ লিখি, সেই ফন্ট এ আমি সরাসরি পোস্ট করতে পারব না. এটা একটা সমস্যা.
    সে যাই হোক, যেটা বলার তা হলো আমি সহানুভূতি পাবার জন্য লিখছি না. কাউকে দোষারোপ করছি না. আমার প্রতিদিন সকালে উঠে যা মনে হচ্ছে তা লিখে রাখছি. আমার নিজেরই যেমন মনে হচ্ছিল আমি পরস্পর বিরোধী কথা বলছি হয়ত. অনেকে ভাববেন আমি নিজের এই দশা নিয়ে খুব অবসাদে পড়ে আছি. তা ঠিক না. আসলে মানুষের মন নানা ভাবে ভ্রমন করে তো. আমার মন যেভাবে ভ্রমন করছে আমি সেভাবেই লিখছি. কিছু প্রশ্ন করছি, যে প্রশ্নগুলো আমার মন করে.
    কলেজ স্ট্রিট এর ভবানী দত্ত লেন থেকে একটি এগিয়ে গেলে মর্গ এর একটু পাশে একটা অসাধারণ দোকান আছে. গরুর কাবাব আর পরোটা. লেবুর রস ছড়িয়ে দেয় ওরা. কী যে অসাধারণ খেতে লাগে যে বলার না.
    একবার মনে আছে আমি অলিপাব থেকে বেরিয়ে সোজা এসেছিলাম আমার বন্ধুদের সঙ্গে এই দোকানটায়. অনেক রাত হয়ে গেছিল.
    আচ্ছা শরত আর হেমন্তর মধ্যে বিকেল বেলাটাতে মিল আছে. ঝুপ করে শেষ হয়ে যাওয়ার মিল.
    আমি এ সময়ে অন্য একটা গন্ধ পাই.
    পুজোর সময়ে কোনো কালে আমি কলকাতাতে থাকতাম না.
    পাহাড়ে বেড়িয়ে পরতাম.
    সেই সব বেড়ানো গুলো টানছে আমায়.
    আমি আজ সকাল থেকে কোনো কথা বলিনি. এই না কথা বলাগুলোকে আমি বেশ ভালবাসি.
    আমার সঙ্গে আমি নিজে কতদিন কথা বলিনা!
    আগে একবার হয়েছিল কি, আমি নিজের মনে কথা বলছিলাম. আমার কবিতা লেখার আগে কবিতাটা আমার মাথায় তৈরী হয়. আমি নিজের মনে এডিট করি, লিখি. নিজের ঘোরের মধ্যে থাকি. তো আমাকে ঘরের বাইরে থেকে আমার অজান্তে লক্ষ্য করছিলেন আমার মা. কিছুক্ষণ পর আমার মা আমার কাছে এসে বললেন তুই কি পাগল হয়ে যাচ্ছিস নাকি?
    সাইকোলজিস্ট-ও আমাকে বলেছিলেন আমার মধ্যে স্প্লিট পার্সোনালিটি আছে. আমার আরেকটা সত্তা আছে, যাকে মারতে হবে!
    আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম. তাকে মারতে হবে কি রে! সে আছে বলেই তো আমি লিখতে পারি.
    কিন্তু কে শুনবে তার কথা!
    এমন একটা ওষুধ দিলেন যে তার পড়ে আমার সে সত্তা দূরে থাক, আমার এই সত্তায় বিপন্ন হয়ে পড়ল.
    আমি টানা তিনদিন বিছানা থেকে উঠতে পারিনি.
    তবে তার লাভ হয়েছিল.
    আমি লিখে ফেলেছিলাম আবার হেমন্তকাল কাব্যগ্রন্থের সব কোটি কবিতা.
    চার বছর পর. চার বছর কিছু লিখিনি.
    শুনেছিলাম আমি নাকি ঘোরের মধ্যে ভুল ভাল বলতাম আর আমার পাশে রাখা খাতে লিখতাম. আমি যে কখন লিখেছি মনে করতেও পারি না. পড়ে কবিতা গুলো দেখে আবার এডিট করি.
    কিন্তু একটি কাব্যগ্রন্থ আমি কিছু এডিট করিনি.
    ভয়ংকর জন্ডিস হয়েছিল. তার উপর প্রচন্ড জ্বর.
    এবং সে কদিন আমার বাড়িতেও কেউ ছিল না.
    আমি টানা তিনদিন জল ছাড়া কিছু খাইনি.
    লিখে গেছি.
    টানা ৭০টি কবিতা.
    মায়েরা বেড়াতে গিয়েছিল.
    কেউ ছিল না.
    অফিস থেকেও ছুটি নিয়েছিলাম.
    প্রায় ৪ ডিগ্রির উপর জ্বর ছিল. নেতিয়ে পড়ে ছিলাম. আর লিখে গেছিলাম. সেই কবিতাগুলো নিই তৈরী হয় একটি পান্ডুলিপি. আর তার নাম তারামনির হার.
    আমি একটা বিষয় লক্ষকরেছি যে আমার গদ্যগুলো আমাকে সাহায্য করে নিজেকে মুক্ত করতে.
    এবং নিজের ভাবনাগুলোকে গেঁথে ফেলতে.
    কিন্তু এলোমেলো ভাবে এই সব লেখার মধ্যে কি আছে কোনো ভাবনার রসদ না কি কেবলি কাঁদুনি?
    দয়া করে কেউ ভাববেন না আমি কাঁদুনি গাইছি.
    আমি আসলে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করছি.
    একবার মন্দারমণিতে দুটো দৃশ্য দেখেছিলাম একই সঙ্গে. দুজন লোক ভয়ংকর জোয়ার-এ ভেসে যাচ্ছিল.
    যে লোকটা দূরে ছিল সে ফিরে এলো.
    যে কাছে ছিল সে কোথায় ভেসে চলে গেল.
    কে জানে আমি ফিরছি,না ভেসে যাচ্ছি কি না!
    সমুদ্র জানে. সময় জানে.
    আমার এই এত আক্ষেপ কেন যে!
    যেন গল্পে ছিল জেন প্রাপ্তির আগে একটি লোক কাঠ কাটছিল এবং জেন প্রাপ্তির পরেও সে লোকটা কাঠ-ই কাটছিল.
    প্রথমবারের কাঠ কতটা হলো প্রত্যাশা সহ.
    দ্বিতীয় বারের কাঠ কতটা হলো নিশ্চেষ্টতার সঙ্গে.
    কর্ম তখন অ-কর্ম.
    মৃত্যুও তো এক ধরনের জন্ম ? তাই না?
    (ক্রমশ)
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:২১577270
  • এলোমেলো আমি-১২

    সাহিত্য আকাদেমির কবিতা চর্যা অনুষ্ঠানে আমার প্রথম কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তর সঙ্গে আলাপ. আমার মনে আছে আমার শিকার কবিতাটির খুব প্রশংসা করেছিলেন. কবিতা নিয়ে নানা আলোচনা-ও হয়েছিল. আমার পান্ডুলিপি তাঁকে দিয়েছিলাম. তুমি, অরক্ষিত-এর পান্ডুলিপি পড়ে উনি আমাকে পরে ফোন-ও করেছিলেন. কিন্তু তার পর আবার অনেক দিন আমাদের যোগাযোগ ছিল না. ছোটবেলা থেকে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত-এর নানা কবিতা আমার প্রেরণায় বলা যায়. যৌবন বাউল, নিষিদ্ধ কোজাগরী ছাড়াও তাঁর অনবদ্য গদ্যভন্গিমা আমাকে মুগ্ধ করে রাখে. কিন্তু ব্যাক্তি অলোকরঞ্জন এর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয় অনেক পরে. সে সময়ে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন চলছে পুরোদমে. বিজল্প থেকে অলোকরঞ্জন এর কবিতার বই গোলাপ এখন রাজনৈতিক প্রাক্ষের প্রাক্কালে আমার সঙ্গে অলোকরঞ্জন-এর আলাপ জমে ওঠে. আমি আমার তারামনির হার, আবার হেমন্তকাল, এবং সেই সময়ে প্রকাশিত ১৪.৩.২০০৭ তাঁকে দি. এবং তাঁর সঙ্গে কবিতার আলোচনা ছাড়াও জমে ওঠে নানা বিষয়. আমি তাঁকে বলি যে ভাবে এই আন্দোলন এগোচ্ছে তাতে সিপিএম সরকার হয়ত যাবে, কিন্তু যে সরকার আসবে, তাও ফ্যাসিবাদী ভূমিকায় নিয়ে আসবে. ক্রমে ক্রমে আমি সকলের থেকে বিছিন্ন হতে শুরু করি বিভিন্ন মানুষের রাজনৈতিক নিরভিসন্ধিতে.
    কিন্তু কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত-এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক অটুট থেকে যায়. এরই মাঝে আমি জার্মান ভাষাটাও শিখতে শুরু করি. সে নিয়েও অলক্রন্জনের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হত. উনি জার্মানি থেকে আমাকে প্রায়শই ফোন করতেন. আমিও ফোন করতাম আমার ইচ্ছে হলেই. নানা বিষয়ে, আমার সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা হত. প্রচুর চিঠি পাঠিয়েছি তাঁকে.
    উনিও আমাকে কম চিঠি পাঠান নি!
    অলোকরঞ্জন কীরকম মানুষ তা এক কথায় বলে বোঝানো সম্ভব না. এক কথায় বলতে গেলে অলোকরঞ্জন তেমনি একজন মানুষ যিনি আমাকে বাঁচার নতুন নতুন প্রেরণা দিয়ে গেছেন. মনে পড়ে চন্দনদা কে. চন্দনদা মারা গেলেন. চন্দনদা অলোকদার ভাই. অলোকদার উপর এখনো নির্ভর করে থাকেন এখানকার অনেকে. অর্থনৈতিক কারনেও. আর উনি এখানে এলে তো নানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বা নানা সাহিত্য-পত্রিকা থেকে নানা কর্মকান্ডে তাঁকে জড়িয়ে ফেলাই হয়. অলোকদা কাউকে কোনো বিষয়ে না বলতে পারেন না. যে বিষয়টি অলোকদার বৈশিষ্ট তা হলো উনি সম্পূর্ণত কবি একজন. এই আরেকজন মানুষ যিনি আত্মবিস্বাস্ত, অগাধ পান্ডিত্য এবং কাউকে তোয়াক্কা করেন না. একবার মনে আছে জয়দা আর আমি গেছিলাম অলোকদার বাড়ি. উনি একটি ছোট পুস্তিকা থেকে মধ্যযুগের পোলিশ মরমিয়া কবিতা শুনিয়েছিলেন. সেই সব কবিতার খোঁজ আমরা রাখিনা. আমি তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম এই পোলিশ মরমিয়া কবিতা-এর অনুবাদ করতে. জানি না উনি কবে করবেন.
    তাঁর স্ত্রী ত্রুতবার্তা দাশগুপ্তর মৃত্যুর পর এবং তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর অলোকদা ভিতরে ভিতরে খুব একা হয়ে গেছেন. প্রভাব পড়েছে তাঁর শরীরে. এক বিচিত্র অসুখ আছে তাঁর এখন. সেই অসুখের চিকিত্সাও সম্ভব বিদেশেই. এক বার দেখিয়েছিলেন আমাকে তিনি. পায়ের গোড়ার দিকটা কালো হয়ে আছে. অথচ ওই শরীর খারাপ নিয়েও উনি যখন এখানে আসেন, তখন বিশ্রামের সুযোগ পান না.
    আমি যখন খুব ভেঙ্গে পড়ে আছি, তখন উনি আমাকে বারবার ফোন করে প্রাণিত করেন.
    আমার খবর এমন একজন বড় কবি নেন, এটা আমার কাছে একটা পুরস্কার অবশ্যই.
    জগতগৌরী কাব্যের সমালোচনা যখন উনি করেন, আমি জানতাম না. বেরোনোর পর আমি কেঁদে ফেলেছিলাম. কারণ সেই সময়ে আমি সব জায়গা থেকেই নির্বাসিত.
    সেই নির্বাসন এখনো চলছে.
    উনি আমাকে বলেছিলেন তুমি গদ্য লেখ. তুমি অন্যরকম. তোমাকে লিখতে হবেই.
    কিন্তু কোথায় লিখব অলোকদা?
    কে আমার লেখা সাদরে প্রকাশ করবে? সবাই তো কোনো না কোনো পক্ষ নিয়ে আছেন.
    আর আমার তো কোনো পক্ষ নেই.
    উনি আমাকে বলেছিলেন এই একা থাকাটাই তোমার শক্তি.
    আজ হঠাত লিখতে লিখতে তাঁর কথা মনে পড়ছে. এই সঙ্গে মনে পড়ছে আমি একদিন জানতে পারি বিনয় মজুমদার আমার সম্পর্কে খুব প্রশংসা করেছেন. শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই. সেই কবে তাঁকে আমার তুমি, অরক্ষিত আর আবার হেমন্তকাল পাঠিয়েছিলাম. তিনি পড়েছেন এবং গ্রন্থী পত্রিকার একটি সাক্ষাত্কারে আমার সম্পর্কে উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন. এটাও ছিল আমার কাছে এক পুরস্কার.
    আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি বিনয় মজুমদার এবং অলোকদার মত কবি আমাকে নিয়ে উচ্ছসিত.
    কিন্তু সত্যি বলতে কি আমি নিজে কাউকে গুরু বলে মনে করি না.
    অলোকদার সুরদাসের ধুন গুলি অনুবাদ করা একটি বই আমার কাছে এসেছিল.
    একটি বিশেষ প্রকাশনা চাইছিল সেই বইটি সটিক প্রকাশ করতে.
    অলোকদা আমার উপরেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেই বইয়ের সটিক প্রকাশনার.
    কিন্তু আমার প্রচুর পরিশ্রম করে সেই পান্ডুলিপি তৈরী করার পরেও বইটি আজ প্রকাশ পায় নি.
    এই খেদ আমার যাবে না.
    জার্মান কবিতা আমি যা অনুবাদ করেছি, তা অলোকদার সাহচর্য ছাড়া হত না.
    হঠাত খুব মন খারাপ লাগছে অলোকদার জন্য.
    কতদিন কথা হয়নি!
    এই একটু আগে একটা ফোন এলো রাজীব সিংহর কাছ থেকে যে তাঁরা তাঁদের পত্রিকায় এলোমেলো আমি-এর কিছু পর্যায় প্রকাশ করতে চান.
    এই অংশ-ও যদি প্রকাশ করেন তা হলে ভালই হবে.
    আমি ভাবতে পারিনি কেউ এই লেখাগুলো পড়বে. কারণ লেখাগুলো তো কেবল নিজের সঙ্গে কথোপকথন.
    নিজের মনের শান্তির জন্য!
    আর আমি তো লিখেই যাব.
    এটাই তো আমার কাজ. আমার সত্তা.
    তার কাছে যে ফিরতে চাইছি আমি!
    (ক্রমশ)
    Posted by Hindol Bhattacharjee at 12:43 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:২২577271
  • এলোমেলো আমি-১৩

    এই কদিন অফিসে যা চাপ যাচ্ছে, যে আমি একবিন্দুও লিখতে পারিনি. হাজার রকম লেখা হাজার রকম কথা. অসংখ্য বিষয়. সব মিলিয়ে এক যাচ্ছেতাই ব্যাপার. হাঁ, কথা হচ্ছিল অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত কে নিয়ে. তার পর যেন কোথায় কোথায় চলে গেছিলাম. আজ যখন বাড়ি ফিরছি তখন উবুশ্রান্ত বৃষ্টি পড়ছে. চারিদিকে জল. এই জলের দিকে তাকালেই আমার মনে পরে যায় ছোটবেলার কথা. আমি হিন্দু স্কুল-এ পড়তাম. মর্নিং-এ যখন পড়তাম, সেই দিন গুলো ছিল দারুন. বাবার সঙ্গে এল থ্রী সি তে করে সক্কাল সাড়ে পাঁচটার সময়ে বেরোতাম, আর পৌছতাম সকাল ছটার মধ্যে. একটু দেরী হলেই কেস. আমাকে খুব ভালবাসতেন ঝর্নাদি, অন্জলিদী, শিববাবু. অঙ্কে আর বাংলায় খুব ভালো ছিলাম বলে আমাকে সবাই খুব ভালবাসতেন. আমরা সবাই মিলে একটা দেয়াল পত্রিকা করতাম. মনে আছে আমি একবার দেয়াল পত্রিকায় সদ্য পড়া ( কী পাকাই না ছিলাম) আরণ্যক নিয়ে আমার গুরুগম্ভীর রচনা লিখে খুব বকুনি খেয়েছিলাম. কারণ ওই সময়ে ৮ বছরের আমার চোখে আরণ্যক ছিল একটা রূপকথা. লিখেছিলাম এমন সুন্দর রূপকথা আমি পড়িনি আগে. হাহাহাহা. পরে বুঝেছি বকুনি খাবার কারণ. তবে আরণ্যক কি রূপের কথায় নয়? এক অনির্বচনীয় রূপের কথায় তো বটে. বিভূতিভূষণ নিয়ে যত পরেছি তত আশ্চর্য হয়েছি বারবার. আচ্ছা বিভূতিভূষণ কে যদি বাংলার অন্যতম একজন আধুনিক কবি বলি তাতে কি কেউ আপত্তি করবেন? জল জমার কথা হচ্ছিল. তো কলেজ স্ট্রিট-এ তো খুব জল জমে. একবার মনে আছে প্রচুর জল আর বাবা আমাকে কাঁধে করে স্কুল-এ পৌছে দিছে. আমার এখনো সেই ছবিটা ভাসে. একবার স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে গেছি. তখন সদ্য আমার ঠাকুমা মারা গেছেন. মা-বাবা বেরিয়েছিল কথাও. আমার তো তা জানার কথা না. আমি আর আমার বন্ধু ওঙ্কার রাধার সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি. এমন সময় হুঙ্কার. দেখি বাবা আর মা টাক্সি থেকে ডাকছে. ব্যাস হয়ে গেল. বাবা আমাকে কিছু বলেনি. মা প্রচুর ঝেড়েছিল. আর বাবা মারা যাবার কয়েকদিন আগে টেস্ট পরীক্ষার রেযুল্ত বেরোনোর দিন সে তো এক দারুন ব্যাপার. আমি তো কফি হাউস এর তিনতলার বারান্দাতে দাঁড়িয়ে মনের সুখে সিগারেট খাচ্ছি. থার্ড হয়েছিলাম. এমন সময়ে একজন ইশারায় আমাকে জানালো নিচ থেকে কেউ আমাকে নাকি ডাকছে. ও মা, চেয়ে দেখি বাবা বসে. নীচে গেলাম. বাবা বলল কি খাবি বল. খেলাম. কফিও খেলাম. তার পর বাবা বাবার পকেট থেকে সিগারেট বের করে নিজে ধরালো. আমার দিকে এগিয়ে দিল. আমি তো বললাম খায়না. বাবা বলল না খেলে মারব আর খেলে মারব না. অগত্যা ধরাতে হলো. সেই থেকে বাবার সামনেই সিগারেট খেতাম আর মা চিত্কার করত. এই সুখের দিন বেশিদিন স্থায়ী হলো না. বাবা চলে গেল.
    সে গল্প তো আগেই লিখেছি. তার পর ঘাসের জঙ্গলে পড়ে আছে আমার ব্যাক্তিগত বসন্ত দিনের চটি. কী অসামান্য কবিতা এটা. যেবার প্রথম পড়িএই কবিতাটা, আমি কিছু বুঝিনি, শুধু কিছু একটা মন্ত্রের মত হেঁটে বেড়াচ্ছিল আমার শরীরে. তার পর ধীরে ধীরে কবিতাটিকে আবিষ্কার করি. উত্পল কুমার বসু. বাংলা সাহিত্যের আরেক অসামান্য কবি. কবিতার ভাষাটাকেই পুরো পাল্টে দিলেন,যেমন পাল্টে দিয়েছিলেন শক্তি-প্রনবেন্দু- বিনয়-শঙ্খ- অলোকরঞ্জন. পরের দিকে ভাস্কর, তুষার রায়, তুষার চৌধুরী, মৃদুলদা, রমেন্দ্রকুমার, দেবদাস দা, পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল, গৌতম বসু, রনজিত দাশ, পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল. আমাদের নব্বইয়ের কবিতার প্রথম দিকে অসম্ভব প্রভাব ছিল উত্পল কুমার বসু, বিনয় মজুমদার আর মৃদুলদার. তার পর ধীরে ধীরে নেশার মত ভাস্করদা. সত্যি কথা বলতে কি জয়দার প্রথম ছটি কাব্যগ্রন্থের পর বাকি গুলো তেমন ভাবে টানত না. মনে হত ছন্দ আর সেন্টিমেন্ট এর মিশেল. এখনো অবশ্য তাই-ই মনে হয়. জয়দা নিজেকে একদম পাল্টে ফেললেন সূর্য পড়া ছাই এসে. তার পর থেকে আবার নতুন একটা জার্নি.
    জয়দা অসম্ভব বড় মাপের কবি. বাংলা ভাষাকেও অনেক বদলে দিয়েছেন বলতে গেলে. কিন্তু.... না থাক. আমি কে বলার! সময় অনেক কিছু বলবে. সেটা জয়দার কবিসত্তা নিয়ে না, সম্পাদক সত্তা নিয়ে!
    আমি ভুল হতে পারি.
    কিন্তু জয়দা খুব ভালো মানুষ. অনেকের কাছ থেকে যন্ত্রণা পেয়েছেন. সেই যন্ত্রণা উনি নিজেই ডেকে এনেছেন. সে গল্প পরে হবে! আমার শুধু একটি ঘটনা মনে পড়ে. তখন সূর্য পড়া ছাই বেরিয়ে গেছে. আর পাগলি তোমার সঙ্গে এর জন্য উনি সাহিত্য আকাদেমি পেয়েছেন. আমার সঙ্গে ফোন এ কথা প্রসঙ্গে আমি অভিনন্দন জানানোর বদলে বললাম এত ভালো ভালো বই থাকতে পাগলি তোমার সঙ্গে??? এটা তো আপনার অন্যতম দুর্বল কাব্যগ্রন্থ. শুনেই উনি রেগে গেলেন. রেগে যাবারই কথা. একজন কবিকে ধারাবাহিক ভাবে পড়ে যেতে হয়. কে জানে আমি-ই হয়ত ভুল বলেছিলাম! তবে আমার কাছে উনি আলেয়াহ্রদের কবি, ভুতুম ভগবানের কবি, উন্মাদের পাঠক্রম এর কবি. কী অসাধারণ সব কবিতা! কী কল্পনা শক্তি! কবিতাগুলি যেন অবচেতনা-দুখ্য-যন্ত্রনা সবকিছুকে দুই হাতে ধরে রাখে!
    সেইদিন দুজন কবি তাঁদের বই আমাকে পড়তে দিলেন. দেবাযুধ আর অনুপম. অনুপম অনেক দিন লিখছেন. তাঁর কবিতার আমি অনুরাগী পাঠক. দেবাযুধ এর কবিতা পড়ে আমি মুগ্ধ. আর একজনের কবিতা পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম.তিনি শ্রীদর্শিনি.
    মাসুদ খান বা ব্রাত্য রাইসুর কবিতা আমাকে পড়িয়েছিলেন মৃদুলদা. এই দুজন বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি বলে আমার মনে হয়. রণজিত্দার বাড়িতে একদিন আলাপ হয়েছিল সাজ্জাদ শরিফ এর সঙ্গে. তাঁর কবিতার আমি ভক্ত পাঠক. তবে তিনি বেশি লেখেন না. অবশ্য বেশি লিখলে কি বা হয়! জেমস জয়েস তো জীবনে পনেরটি ছোট গল্প, তিনটি উপন্যাস আর একটি ছোট কবিতার বই লিখলেন! তাতে তাঁর লেখা কি সময়ের কাছে নেই?
    আমি যাঁর গদ্য পাগলের মত পড়েছি. তিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস.
    এই রকম একজন গদ্যকার বাংলা ভাষাতে এসেছে ভাবতেই রোমাঞ্চ লাগে!
    সত্যি কথা বলতে কী, এই বাংলার সাম্প্রতিক গদ্যসাহিত্য পড়া যায়না জাস্ট. কোথায় ছিলেন তিন বন্দোপাধ্যায়, কোথায় সমরেশ বসু,সুবোধ ঘোষ, শরদিন্দু, কমলকুমার, অমিয়ভূষণ, সন্দীপন চাটুজ্যে, অরূপ রতন বসু, আর কোথায় এখন কার লেখা! বিশ্বসাহিত্য যখন ন্যারেটিভ থেকে বেরিয়ে গেছে, তখন এখানে বৌদি আর কলেজ যাত্রীদের মুগ্ধবোধ কে মাথায় রেখে লেখা হচ্ছে সিরিয়াল সুলভ উপন্যাস.
    একমাত্র বিভাস দা ছাড়া কারোর উপন্যাস প্রায় যায় না!
    হর্ষ দত্ত অনেক শক্তিশালী গদ্যকার. কিন্তু এখন তাঁর সম্পাদক সত্তা তাঁকে মেরে এনেছে প্রায়.
    শীর্ষেন্দু এখনো জীবিত লেখক.
    সুনীল গাঙ্গুলি যথেষ্ট বড় মাপের লেখক.
    কিন্তু এঁদের পর কাউকে দেখতে পাচ্ছেন?
    বাংলাদেশে কিন্তু লেখা হচ্ছে.
    ওহ বলতেই ভুলে গেলাম সেদিন অফিস থেকে বেরিয়ে হঠাত দেখা রাহুলদার সঙ্গে.
    অসম্ভব ভালো কবি.
    আমার বীরেন্দ্র পুরস্কার পাবার দিনটার কথা মনে পড়ছে.
    কী সব যে বলেছিলাম!
    আমি আজি কাকে যেন বলছিলাম বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের কথা ভাবলে শঙ্খ ঘোষ, বুদ্ধদেব বসু, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, শিবাজি বন্দোপাধ্যায়, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ছাড়া আর কারোর কথা তো মনে পড়ছে না.
    এই জায়গা থেকে ভাবলে আমাদের সাম্প্রতিক কবিতা কিন্তু অনেক বেশি আন্তর্জাতিক. কিন্তু গদ্য সাহিত্য না. কেউ পড়েন না মনে হয়. 5০ দশকেও বাংলা সাহিত্য অনেক বেশি গ্লোবাল ছিল. কিন্তু এখন?
    অবশ্য আমি বলার কে?
    সময় বলুক.
    হঠাত খুব মন খারাপ করছে. কেন এসব লিখলাম! এগুলো তো একদমই আমার ব্যাক্তিগত পছন্দ. আমার মনে হওয়াটাই ঠিক এমন তো না. ভিজে একটা হাওয়া দিছে. আর আমার মন শরীর সব একলা হয়ে যাচ্ছে.
    চোখের সামনে দিয়ে চকিতে ভেসে যাচ্ছে কয়েকটি দৃশ্য. গার্গী. বাবা. বাবার সেতার বাজানো. মন্দারমনিতে আমার আর গার্গীর বসে থাকা. কালো সমুদ্রের গর্জন. হাওয়া.
    গলায় টিউমার ধরা পড়ার পর থেকেই কেমন মনে হয় বেশিদিন আর নেই হয়ত আমার জীবন. যদিও ডাক্তাররা বলেছেন বেঁচে যাচ্ছি. কিন্তু একটা ওষুধের গন্ধ আমাকে ঘিরে থাকে.
    ফিনফিনে একটা চাঁদের আলোতে দুপাশে ঘন জঙ্গল. আর আমি সেখানে একটা চায়ের দোকানে বসে অপেক্ষা করছি. কার জন্য কে জানে!
    মনে আছে পাহাড়ের আদিম গন্ধ মেখে চির্বাসাতে চটিতে রাত কাটানোর কথা. মনে আছে ভোরবেলাতে এক সাধুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল. তিনি আমাকে বলেছিলেন মন শুধু শরীরে থাকে না. মন থাকে শরীরের বাইরেও. আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এই যে এখানে বসে থাকেন কি পান?
    আমাকে উনি উত্তর দিয়েছিলেন - মন.
    তার পর বলেছিলেন শুধু মানুষের মনের ভিতরেই মন নেই. আছে মানুষের বাইরেও. মানুষ সেখানে আছে. সেই বড় মনের ভিতরে লুকিয়ে আছে মানুষের অনাদি কালের কথা. সেদিন একজন কে কথা প্রসঙ্গে বলছিলাম যদি মানুষের পরম জ্ঞান এসে থাকে, তবে আমরা সেই কথাকে নানা ভাবে ব্যাখ্যা করে যাচ্ছি মাত্র. আমরা কি কোনো নতুন কথা বলছি?
    হয়ত নতুন কথা বলার কিছু নেই. কথা গুলোকে খুঁজে পাওয়ার আছে.
    এর জন্য দরকার স্তব্ধতা.
    কিন্তু কথা কথা কথা কথা কথায় আমাদের খোঁজ বা অনুসন্ধানটাই আর থাকছে না.
    জীবনানন্দ কথিত নিরভিসন্ধি কে এই খোঁজ?
    লেখা যদি ধ্যান হয়, তাহলে কি লেখা চিন্তাশূন্য হতে পারে?
    ধ্যান কি চিন্তাশূন্য আদৌ হয়?
    এই শহরের মধ্যে কি আছে আরো অন্য কোনো শহর?
    সেই তিনটি গ্রাম?
    সেই নদীর দেশ?
    সেই মন্থরতা?
    মাদুর পেতে দুপুর?
    (ক্রমশ)
    Posted by Hindol Bhattacharjee at 11:24 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:২৩577272
  • এলোমেলো আমি-১৪

    আবার বৃষ্টি পড়ছে বাইরে. বেশ ভালো রকম বৃষ্টি. আবার জল জমবে. শরতে বর্ষা. কত চেষ্টা করছি বেশিরভাগ সময় চুপ করে থাকতে, কিন্তু কিছুতেই পারছি না. অনেক কাজের চাপের পর যখন সামান্য সময়ে মাথাকে চিন্তাশূন্য করে ফেলতে ইচ্ছে হয়, ঠিক তখনি আসে প্রবল বিষাদ. অলোকরঞ্জন আমাকে মজা করে বিষাদ কবি বলে ডেকেছিলেন. হাহাহা! বিষাদের নানা ভাষা. আর কোনো ভাষায় কিন্তু ফেলে দেবার মত না. আমার মা আমাকে বলেন মন খারাপ লাগলে রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে. কি জ্বালা! রবীন্দ্রনাথের গান শুনলে তো আমার বিষাদ বাড়ে বই কমে না. আর বিষাদের কমার কারনটাই বা কোথায়? জীবনানন্দ যেমন বলেছিলেন আশাবাদ কি দশকর্মা ভান্ডারে পাওয়া যায়?
    পাহাড়ের প্রসঙ্গে মনে পড়ছে যে একবার গঙ্গোত্রী থেকে গোমুখ যাবার পথে আমার সঙ্গী হয়েছিলেন একজন সাধু. সে এক অদ্ভুত চরিত্র! বয়স আসি পেরিয়ে গেছে. কিন্তু পাহাড়ের চড়াই ওঠেন একদম পাখির মত. অনেক দিন নাকি হিমালয়-এই কাটিয়ে দিয়েছেন. জাতে বাঙালি. ভাষাতেও. আমাদের প্লান ছিল গঙ্গোত্রী থেকে গোমুখ হয়ে তপোবন ক্রস করে গঙ্গোত্রী গ্লাসিয়ার ধরে কালিন্দী খাল ক্রস করে সাতপন্থ গ্লেসিয়ার এর রাস্তা ধরে বসুধারা পেরিয়ে নামব বদ্রিনাথ এ. তো মাঝখানে থাকার কথা ভুজবাসাতে. ভুজ্বাসায় আছে লাল বাবার আশ্রম. আমি তো টানা ১৪ কিলোমিটার হেঁটে পৌছলাম যখন তখন সন্ধে হয় হয়. আশ্রমের ভিতরে গিয়ে দেখি সেই সাধু. আমি জিজ্ঞেস করলাম কি থাকবেন ভিতরে? বললেন না আমি থাকব বাইরে. দেখি একটা ছোট তাঁবুও আছে সঙ্গে. আমার খুব লোভ হলো তাঁর সঙ্গে তাঁবুতে থাকার. বললাম আমি থাকতে পারি? আমাকে উনি বললেন নয় কেন?
    সারারাত উনি রবীন্দ্রনাথের গান গাইলেন. আমার এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি. আমার সঙ্গীরা সবাই ছিল লাল্বাবার আশ্রমে. কিন্তু আমি সেই চন্দ্রালোকিত রাতে সেই সাধুর সঙ্গে তাঁবুতে থাকতে থাকতে যা পেয়েছিলাম তা কখনো হারাবার নয়.
    ভাবতে পারছেন? চারিদিকে মাত্রই শিখর, ভগীরথ শিখর, ভ্রিগুপন্থ, নাম না জানা শৃঙ্গ. চাঁদের আলোয় সমস্ত পাহাড় থেকে যেন দুধ নেমে আসছে, আর রাতে প্রার্থনার মত করে সেই সাধু উচ্চ কন্ঠে গাইছেন রবীন্দ্রনাথের গান. পূজা পর্যায়ের গান, প্রেম পর্যায়ের গান. আমি জিজ্ঞেস করলাম- আপনি কোনো পূজা করলেন না তো? আমাকে বললেন - রবীন্দ্রনাথের গান-ই তো আমার মন্ত্র.
    রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আলোচনা হলো অনেক.
    অদ্ভুত প্রেমিক সেই সাধু.
    অদ্ভুত জ্ঞানী.
    আমাকে বলেছিলেন তোমার যখন মন খারাপ হবে তখন রবীন্দ্রনাথ একদম শুনো না. সেই সময়ে বরং রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়া ভালো.
    কথাটি আমাকে এখনো ভাবায়.
    আমি দেখেছি মনের যখন কোনো অবসাদ নেই, তখন রবীন্দ্রনাথের গান শুনলে নিজেকে অনেক গভীরে নিয়ে যাওয়া যায়.
    রবীন্দ্রনাথের গান শুনলে আবিষ্কার করা যায় এমন সব অনুভূতির নিজেকে, যেখানে দাঁড়িয়ে মন অবসাদ না, বিষাদে চলে যায়.
    অবসাদ আর বিষাদের মধ্যে পার্থক্য তো থাকেই.
    ভার্জিনিয়া উলফ এর আত্মহত্যা এক বিষাদের থেকে. কিন্তু সিলভিয়া প্লাথ এর আত্মহত্যা অবসাদ থেকে.
    জীবনানন্দের বোধ কবিতায় যে আত্মবিনাশী অস্তিত্বের কথা আছে, যা বিপন্ন বিস্ময়ের বোধে আক্রান্ত হয়ে সব কিছু থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে ফেলে, সেই বিযুক্ত করার পিছনে আছে বোধের বিষাদ.
    বোধের বিষাদ আমার কাছে খুব প্রিয়. কারণ কবিতা লেখায় হোক, বা নিজের ভাবনা চিন্তাগুলিকে নিয়ে নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা, সেই বোধের বিষাদ নিজের মধ্যে এক বর্মের কাজ করে.
    তখন সহজেই অন্য সকলের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে পালানো যায়. তারা ছুটি দিতে না চাইলেও.
    কি অদ্ভুত সুন্দর এই পৃথিবী. চারিদিকে মন ছড়ানো আছে. গাছের পাতায় মন. পুরনো গলির গন্ধে মন. চেনা অচেনা রাস্তায় মন. সব থেকে বড় কথা আকাশের মন. চারিদিকে কত সঙ্গীত. এই সঙ্গীত কি শোনা যায় একলা না হলে?
    এই যে আমি অফিসে বসে লিখে যাচ্ছি, এই সব লেখা হয়ত আবোলতাবোল, কিন্তু মাঝে মাঝে হানা দিছে নানা কথা. নানা ভাবনা. আমি আমার ঘোরের মধ্যে ডুব দিতে পারছি. কারোর প্রতি আর আমার কোনো রাগ হচ্ছে না. কোনো স্মৃতির জন্য আর আমার আক্ষেপ হচ্ছে না.
    জীবনে আক্ষেপ নিয়ে বেঁচে থাকা এবং মরে যাবার কোনো মানেই হয় না.
    কারণ যে যাই বলুক আমি নিশ্চিত নই আমি আবার এই পৃথিবীতে ফিরে এসব কিনা. জীবনটা বড় মূল্যবান. কারণ দেখাটা মূল্যবান.
    আমার মনে হয় লেখার মাধ্যমেও আসলে আমরা দেখি. কি দেখি? আমার অনুভূতি জগতের মধ্যে মিশে থাকা বোধ কে দেখি শব্দে. লেখায়. লেখা তো এক ধরনের ছবি কে দেখা. প্রতিটি অক্ষর তো আসলে ছবি. সেই ছবিগুলো পাশাপাশি মিশে রচনা করে এক বোধের সাম্রাজ্য.
    এক বোধের গন্ধ.
    সঙ্গমের পর শরীর থেকে যে সোঁদা গন্ধটি বেরয়. প্রথম বৃষ্টির পর যে সোঁদা গন্ধটি বরয়.
    প্রতিটি নতুন লেখার মধ্যে যদি এই সদ্য বৃষ্টিস্নাত গন্ধ পাওয়া যায়, তবে প্রাণ সেই বোধ কে আশ্রয় করে বেঁচে উঠতে পারে.
    কবরখানায় গেলে একটা গন্ধ পাওয়া যায় তার মত. সেই গন্ধ হলো অপূর্ণ ইচ্ছের গন্ধ.
    শিশুর গায়ে যে গন্ধটা পাওয়া যায় তা হলো কৌতুহলের গন্ধ. অচেনাকে চেনার গন্ধ.
    আসলে শিশুর গায়ের গন্ধ হচ্ছে সবচেয়ে পবিত্র. কারণ মানুষ তখন সবচেয়ে পবিত্র কাজটাই করে.
    যা দেখিনি, যে ভাষা আমার চারপাশে চলছে, যে রং গুলো আমার চোখের সামনে আসছে, আমি সব গুলিকে চিনছি. এ তো অত্যন্ত পবিত্র কাজ. এ কাজ কেই আমি পূজা বলতে পারি. ধর্ম বলতে পারি. কারণ এই ধর্মের মানে হচ্ছে প্রকৃতিকে চেনার সুবাস.
    কি হিন্দু, কি মুসলমান, কি ক্রিশ্চান, আসলে এসব ধর্ম তো ইতিহাস. এক একটা সময় কে নানা রূপকে বলে আছে.
    কিন্তু ধর্ম যদি বলি চেনা-জানার অভিযাত্রাকে, তাহলে বলতেই হবে একটি শিশুর ধর্ম যদি মানুষ সারাজীবন তার চোখের মধ্যে, তার মনের মধ্যে নিয়ে রাখতে পারে, তাহলে সে বাঁচবে নিজের মত, মরবেও নিজের মত. মাঝখানে দেখবে চিরশিশুর মত.
    এই চিরশিশুর মত দেখা শুধু প্রকৃতিকে নয়. প্রতিটি সম্পর্ককেও. প্রতিটি অনুভূতিকেও. প্রতিটি মুহুর্তকেও.
    আমি যদি বলি আমার ধর্ম শিশু, তাহলে তা ব্যাকরণ গত ভাবে খুব ভুল হবে, কিন্তু তা একটা প্রকাশ হবে.
    এই প্রকাশ বিষয়টি গুরুত্বের.
    খুব বৃষ্টি পড়ছে বাইরে.
    বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে আমার মন ভিজে যাচ্ছে.
    আমার খুব দেখা করতে ইচ্ছে করছে তোমার সঙ্গে. মনে আছে. মনে পড়ছে.
    আমার জন্ম শ্রাবনে. মৃত্যুও কি কোনো শ্রাবনে হলেই ভালো না?
    (ক্রমশ)

    Posted by Hindol Bhattacharjee at 6:42 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:২৪577273
  • এলোমেলো আমি-১৫

    গতকাল একটি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেল. দেখলাম গার্গী খুব কাঁদছে আর আমি কিছুতেই তাকে শান্ত করতে পারছি না. আমি তার সামনে আছি এটাই গার্গী বুঝতে পারছে না. ঘুম ভেঙ্গে গেল. আমি এমন সব স্বপ্ন দেখি যেগুলো পরে আমার নিজের কাছেই অদ্ভুত লাগে. কেন দেখলাম? মন কি কোনো বার্তা পৌছতে চাইছে আমার কাছে? যেমন পরশু রাতে আমি প্রায় অনেক সময় ধরে এমন একটি স্বপ্ন দেখেছি যে আমি নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেছি. আমার খুব ইচ্ছে করে সেই সব স্বপ্নগুলো লিখে রাখতে. আমার বিছানায় একটা খেরোর খাতা আছে. আমার সদ্য লেখা কবিতা আমার স্বপ্নগুলো সেই সব খাতায় লেখা থাকে. তেমনি একটি স্বপ্নের কথা বলি. আমি দেখলাম আমি চেয়ার থেকে উঠতে পারছি না. আমার সামনের টেবিলে এক গ্লাস রঙিন জল. আমি স্বপ্নের মধ্যেই গন্ধ পাচ্ছিলাম. আমার প্রিয় হুইস্কি আর সি. আর পাশে প্রচুর ঘুমের অসুধ. আমি দেখলাম একলা একটা হাওয়াময় ঘরে আমি বসে আছি. আমার হাতটা কুঞ্চিত. আমার চারপাশে কেউ নেই. হাতটা কাপছে. আমি উঠে দাঁড়ালাম. আয়নার সামনে গেলাম আর দেখলাম আমি বেশ বয়স্ক হয়ে গেছি. আমাকে দেখতে একদম পাল্টে গেছে. আমি সেই ওষুধ গুলো এক সঙ্গে ঢাললাম সেই গ্লাস-এ. তার পর আমি বসে পরলাম আমার চেয়ারে. এমন সময়ে কলিং বেল. কোনক্রমে আমি উঠে দরজা খুলতেই দেখি আমি স্বয়ং. আমার দিকে তাকিয়ে সে বেজায় তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো. আমি বললাম-এস. সে ঢুকলো. বলল- আমাকে চিনতে পারছ কি? আমি ছিলাম তোমার ২৫ বছরের তুমি. মনে পড়ছে কিছু? সে আমার দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ. আমি তার কাছে ক্ষমা চাইলাম. আমাকে বলল - ক্ষমা চাইছ আমার জীবনটাকে নষ্ট করে দিয়ে? তোমার কোন অধিকার আছে ক্ষমা চাওয়ার? সেই সময়ে আমার আয়না থেকে বেরিয়ে এলো এই সময়ের আমি. তার হাতে একটি খোলা ভোজালি. আমাকে বলল তুমি আত্মহত্যা করতে চাইছ কোন আক্কেলে? তোমাকে তো হত্যা করা উচিত. মনে পরে সেই সব দিনগুলো যখন তুমি ক্রমাগত ঠকিয়ে গেছ তোমাকে যে সব থেকে বেশি ভালবাসত তাকে. সে কত কষ্ট পেতে পারে তা নিয়ে তোমার কোনো মাথাব্যথা ছিল না. তোমাকে হত্যা করা উচিত. তোমার আত্মহত্যার অধিকার নেই. সেই সময়ে পিছনে টুক করে আওয়াজ শুনে তাকালাম. দেখলাম আমি আরেকটু বড়. আমার মুখ চোখ একদম কালো হয়ে গেছে. সে আমাকে বলছে- নিজেই নিজের কবর খুঁড়ে এখন পালাতে চাইছ? আমাকে হত্যা করেছ তুমি-ই. আমি লিখতাম. আমার সব লেখা তুমি ছিঁড়ে ফেলেছ. লেখাকে আসতে দাও নি. তুমি আমাকে হত্যা করেছিলে. তুমি তোমার সন্তান এর হত্যার জন্য দায়ী. তুমি তোমার সত্তার হত্যার জন্য দায়ী. এখন নিজে পালাতে পারবে না. তোমাকে আমরা এভাবে মরতে দেব না. তোমাকে আমরা মারব. আমি দেখলাম আমার দিকে সবাই এগিয়ে আসছে. সবাই আমি. আর আমি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে হাতে তুলে নিছি গ্লাস. আমি গিলে নিতে চাইছি আমার বিষ. কিন্তু পারছি না. খুব যন্ত্রণার মধ্যে আমাকে কে যেন আঁকড়ে ধরেছে. আর তখনি আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল.
    এমন স্বপ্ন যে আমি মনে রেখে দিয়েছি. ভুলতে চেয়েও ভুলতে পারিনি. জীবনে যা কিছু ঘটে সবই কি শুধু পর্যায়ক্রমে ঘটে যাওয়া বাস্তবিক ঘটনার কোলাজ? না কি আমাদের স্বপ্নের মধ্যেও এমন কিছু ঘটনা ঘটে চলেছে যেগুলির সঙ্গে আমাদের বাস্তব জীবনের ক্ষীন হলেও কোনো না কোনো যোগসূত্র আছে. হয়ত স্বপ্নের মধ্যে এমন আরেক জার্নি আছে যা সরলরৈখিক সময় দিয়ে ধরা যায় না. না হলে কী ভাবে কেউ তাঁদের মৃত্যু দৃশ্য দেখেন আগে থেকেই? কী ভাবে কোনো এক অপরিচিত জায়গায় গেলে মনে হয় এমন জায়গায় আমি আগেও এসেছি? এমন কী ওই বাঁকটা ঘুরলে কী দেখতে পাব, তার একটা হদিস পাওয়া যায়. লোকজনকে এমন সব বলে আমি চমকেও দিয়েছি. কারণ অনেক জায়গায় গিয়ে আমার মনে হয়েছে আমার এই জায়গা খুব চেনা. আমি এই জায়গার খুঁটিনাটি চিনি. এবং দেখা গেছে চিনিও. সত্যি চিনি. আবার এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেগুলির সময় মনে হয়েছে এই ঘটনাটি আমার জীবনে আগেও ঘটেছে. সেই সময় চারিদিক খুব পাল্টে যাচ্ছে বলে মনে হয় আমার. এটা ঠিক এমন যে সব সময় হয় তা নয়. কিন্তু হয়.
    অর্থাত বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া ন্যারেটিভ-ই আসল ন্যারেটিভ নয়. জীবনটাও কি একটা গল্প? একটা উপন্যাস? যার কোনো কোনো পরিচ্ছেদ আগে অন্য কথাও লেখা হয়, তার পর জীবন আবার তার কাছে ফিরে আসে? আমি ভেবে দেখেছি রিয়ালিজম বলতে যা আমরা বুঝি তা আসলে নিজেই একটা ভ্রম. রিয়ালিজম এর ভূত আমাদের ঘাড়ের উপর চেপে বসে থাকে. সেখান থেকে আমরা বেরোতে পারি না. লেখার সময়েও তাই ন্যারেটিভ থেকে না বেরোনো লেখা যদি পড়তে হয় তাহলে আমরা মুশকিলে পড়ি. এর অন্যতম কারণ রিয়ালিজম আমাদের যে সরলরৈখিক বাস্তবতাকে বিশ্বাস করে শেখায়, তা এক আপাত শান্তির জগত. কার্যকারণ সূত্রের জগত. কিন্তু জীবন এর অনেক কিছুই কার্যকারণের ধার ধারে না.
    কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের অনিশ্চয়তা সুত্র যে আমাদের জীবনেও ভয়ংকর ভাবে বিদ্যমান, তা যদি আমরা অনুভব করি তাহলে মহা মুশকিল. কারণ আপাত বাস্তবতার কার্যকারণ সূত্রের এলাকা আমাদের এক নিরাপদ গন্ডির মধ্যে রাখে. আমাদের জীবন প্রকৃত প্রস্তাবে যেটা চায় তা হলো এক ধরনের সিকিউরিটি. বাস্তবিক হোক বা তা আধ্যাত্মিক হোক. কিন্তু জীবনের শূন্যতাকে অনুভব করা যায় তখনি যখন আমরা পারি এই কার্যকারণ নির্ভর জীবনের গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে পড়তে. মজাটা এখানেই যে যাকে আমরা গোলকধাঁধা ভাবি তা আসলে গোলকধাঁধা নয়, বরং যা আমরা সরলরেখা ভেবে স্বস্তিতে থাকতে পারি, তা এক চরম অনিশ্চয়তা. এবং চরম গোলকধাঁধা.
    আমার বাইরে একটা জীবন চলছে যা আমার বয়স, আমার কাজ ইত্যাদি নিয়ে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে আর আমার ভিতরে আরেক বাস্তবতা চলছে যা কোনো সময় সারণীর ধার ধরছে না. যা খুব এলোমেলো. অথচ ঘটছে. যা খুব অনিশ্চিত, অথচ মন কে উন্মুক্ত করে দিতে সক্ষম. এই চলন্তিকা সুলভ জীবনের বাইরে নিয়ে গিয়ে যা আমাদের ভাবতে করছে যে যে জীবনটা তুমি কাটাছ ভাই, তা খুব অকিঞ্চিত. এই শূন্যতাবোধ না এলে লিখব কী bhaabe ! কারণ শূন্যতার বোধি তো মানুষকে কবিতার কাছে, ধ্যানের কাছে নিয়ে যায়.
    আর লেখকের কাছে ধ্যান মানে তো লেখাই.
    অনেক প্রশ্ন. মনের মধ্যে.
    (ক্রমশ)
    Posted by Hindol Bhattacharjee at 1:50 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:২৫577274
  • এলোমেলো আমি-১৬

    আজ ঘুম থেকে উঠেই মন বড় ভারী হয়ে আছে. এই এমন সুন্দর পৃথিবী, এই বিশাল জগত, কত বড়, একে ছেড়ে যাওয়াটা খুব কষ্টকর. আমাদের জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা, ভালো থাকা,খারাপ থাকা, এগুলো খুব বড় কোনো বিষয় নয়. আমি হঠাত করে আমি হয়ে জন্মেছি, পৃথিবীতে আছি, আমি ভাবতে পারছি, কবিতার মত একটি বিষয় আমার সঙ্গী হয়ে ছিল এতদিন, আছে, অথচ আমার নিজস্ব সমস্ত পরিচয়ই কি সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে? বিজ্ঞাপন জগতে কাজ করছি, আমার পরিচয় কি বিজ্ঞাপন জগতের মধ্যে? আমি কে? কিছুই না. নাথিং. ঘুম থেকে উঠেই মনে হলো অনেক হলো বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে প্রমান করার যুদ্ধ. আর না. কোথাও না কোথাও থামতে হয়. এই থামাটাই আসল. যাওয়াটা যেমন প্রধান, থামাটাও প্রধান. দেখতে তো পাচ্ছি, পৃথিবী আপন নিয়মে আমার কবিতাগুলিকে প্রকাশ হবার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে দিয়েছে. সকলেই আমাকে ভুলে গেছে.এর ভালো দিকটা হলো আমিও তাদের ভুলতে পারব. আর আমার নিজের জন্য বাজে বকতে আর পারছি না. সেদিন সৌরিশ এসেছিল আমাদের অফিসে. একসঙ্গে ফেরার পথে জানালো প্রচ্ছদের কাজ করতে গিয়েও কত লোকে কত নতুন মানুষের কাছ থেকে তাকে শুনতে হয়েছে শত্রু- এই বিশেষণ. তবু অর কাজ তো প্রকাশ পেয়ে চলেছে. ওকে লোকে ডাকছে. তাহলে কী আমার মধ্যে আমাকে নিয়ে এমন কোনো সমস্যা আছে চারিদিকে, যে লোকে আমার কবিতাকে আর শ্রদ্ধাই করছে না. ভুলে যাচ্ছে? এই যে এক রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছি, আমার মনে হয়, স্বাভাবিক মৃত্যুগুলিকে মেনে নেওয়া ভালো. মেনে নেওয়া ভালো তুমি এই সময়ে শেষ হয়ে গেছ. যা লিখেছ, লিখেছ, যা পাবার পেয়েছ, এবার তোমার বিদায় নেবার পালা. এটা জগত চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে. এটাও দেখিয়ে দিচ্ছে, তোমার লেখার আসলে কোনো প্রভাব নেই. তুমি জোর করে তো আর লোকজন কে তোমার ভাবনা পড়াতে পার না. নিজে লিখতেও পারছ না এ জন্য. তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? বাইরে থেকে রিজেকশন এবং ভিতর থেকেও রিজেকশন. যে বিষয় তোমার বাইরে ও ভিতর থেকে বেরিয়ে যায়, সে বিষয় আর নেই. তাকে তুমি জাতি আত্মা ইত্যাদি বলে থাক না কেন! আসল কথা হলো তুমি এখন শেষ. তোমার অনুপস্থিতি কারোর কাছে অনুপস্থিতি-ই নয়.
    তাহলে তোমার করার কী আছে? যে কাজের জন্য পৃথিবীতে এসেছিলে,পৃথিবী জানিয়ে দিচ্ছে যে তোমাকে আর দরকার নেই. তুমি ফোটো! তুমি বিদায় নাও. এর পর তোমার বাকি থাকলো কি? তোমার স্মৃতি. তোমার দু:খ, তোমার নেশা, তোমার নি:শ্বাস, তোমার ইন্দ্রিয়, তোমার মৃত্যু.
    আমি ভেবে দেখলাম আমার জীবনে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই অপেক্ষা করে নেই.
    আমিও তার জন্য অপেক্ষা করে আছি.
    কী বললে তুমি ভালবাসতে পারছ না? সে তো জানা কথা. তোমার পক্ষে ভালবাসা সম্ভব নয়.
    কী বললে তুমি ঘুরে বেড়াতে পারছ না? সেও তো জানা কথা. এবার পচে মর.
    কী বললে তুমি ক্লান্ত. তুমি রোজ মুখোশ পরে থাকতে পারছ না? আর কদিন আছে ভাই?
    কী বললে তুমি লিখতেও পারছ না? লিখ না. কে বলেছে তোমাকে লিখতে হবে? কেউ তোমার লেখার জন্য অপেক্ষা করে নেই.
    কী বললে তুমি চাও সবার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাও? তো দূরেই আছ. তুমি কবে কাছাকাছি গেছ?
    কী বললে জীবনটাকে নিয়ে কী করবে বুঝে উঠতে পারছ না? আরে বাবা মৃত্যু শুধু আছে এখন. তোমার জীবনে একমাত্র নতুন ঘটনা হচ্ছে মৃত্যু. তোমার স্বীকৃতি হচ্ছে মৃত্যু. সে কি সহজে আসে? তার জন্য সময় দিতে হয়. ওই তোমার লেখার মত.
    তাহলে কী করবে? নিজের জীবনটাকে এভাবে ব্লগ এ লিখছ কেন? তা আবার লোকজন কে পড়াচ্ছ কেন? নিজের সঙ্গে কথা তো বল. অন্য কথা বল. নিজের সম্পর্কে ভাবা ছেড়ে দাও. আরে দেখেছিলে তো জীবনে কি কাউকে তুমি ধরে রাখতে পার?
    যে যাবার সে যাবেই.
    সংযুক্ত থাকলে বিযুক্ত হতে হবেই.
    আর সেই ছিঁড়ে যাবার বেদনাটাও সত্যি করে পেতে হবে.
    মন মানতে চাইবেনা.
    কিন্তু মন একদিন সয়ে নেবে.
    তুমি একা এসেছ. একা চলে যাবে.
    কী দরকার কি তোমার ফেসবুক করার? এই এত লোক, এদের সঙ্গে কথা বলার? তাদেরকে লেখা পড়ানোর?
    দেখতেই তো পছ, পত্রপত্রিকাগুলি তোমার লেখা চায়না আর.
    তুমিও লিখতে পারছ না.
    সে সবের জন্য অন্য ধরনের লোক হতে হয়. তাদের একটা সমাজ আছে. সেই সমাজের অংশ হতে হয়.
    তুমি কিছুই কর নি.
    কিছুই করবে না.
    তোমার জন্য যদি কারোর অপেক্ষা না থাকে জানবে তুমি সেখানে অনাগত অতিথি.
    লেখালেখির জগতে তুমি অনাগত অতিথি.
    এবার নিজেকে ভুলে যাও.
    আউটসাইডার পড় নি?
    তুমি কাজের জগতে আউটসাইডার, লেখালেখির জগতে আউটসাইডার, ভালবাসায় আউটসাইডার, পরিবারে আউটসাইডার, এই শহরে আউটসাইডার, নিজের কাছে আউটসাইডার, তো এখন তুমি কি করবে বল.
    তুমি বরং ভুলতে শেখ.
    এইসব ফেসবুক ইত্যাদি থেকে নিজেকে সরিয়ে নাও.
    মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় এমনিতেই তুমি অনেকের থেকে বিছিন্ন. এখন দেখো মোবাইল থাকলেও তোমাকে কারোর প্রয়োজন নেই.
    মানে তোমার রিজেক্ট করার আগে প্রকৃতি তোমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে.
    কি? বমি পাচ্ছে তোমার?
    সে তো পাবেই.এখনো ঘোর কাটেনি. এক সঙ্গে পাঁচটা স্ট্রং ঘুমের ওষুধ খেলে এমন হয়.
    বাজে বকছো.
    সময় এসে গেছে নিজেকে রিজেক্ট করার.
    কী ভাবে করবে?
    গোল্লায় যাও.
    যদি না মরতেই পার , তবে কি করবে?
    তোমার বাবা যা করেছিলেন.
    সব কিছু থেকে সরিয়ে নাও নিজেকে. হাসিও পায়. সরিয়ে তো দিয়েছেই তোমাকে সব কিছু থেকে. এই সব বই, নতুন বই ইত্যাদি করে লাভ কি? বোকা....একটা কেউ পড়ে না. যারা বলে পড়েছি তারা আদতে মিথ্যে বলে.
    কেন পড়বে তোমার লেখা?
    বলছি তো তুমি বিলুপ্ত. মানুষের মন থেকেই বিলুপ্ত. কী বলছ নতুন করে লিখছ! কিন্তু পাঠাতে পারবে না নিজের থেকে? কেন তুমি কে বাল?
    যার ছটা বই করেও কোনো প্রভাব নেই, অন্তত বিভিন্ন কাগজের সম্পাদকেরা যাকে তার পরেও পছন্দ করে না, তার আরও লিখে বই বের করার মানে কি?
    কাকে দেবে তোমার এখন কার লেখা?
    সেই সব সম্পাদকেরা তো পড়বেই না.
    সাহিত্যের আড্ডা গুলিতেও তোমার কিছু করার নেই.. ডাক নেই. মোট কথা তোমার কোনো সমাজ নেই, পক্ষ নেই, প্রতিপক্ষ নেই, বন্ধু নেই, কিছুই নেই. সুতরাং তুমি তো রাজা!
    বই তি বের করতে যেও না, ওসব এখন কেউ পড়ে না.
    তোমার কোনো গসিপ থাকলে লোকে আলোচনা করবে.ঘটনা ঘটিয়ে যেতে পারলে তোমাকে লোকে পাত্তা দেবে! হাহাহাহাহাহা! বাংলা সাহিত্য সমাজ!
    আর কি করবে? আচ্ছা তোমার মাথায় একটা সময় চুল ছিল. এখন নেই. বাবা ছিলেন, এখন নেই. ভালবাসা ছিল. নেই.
    নিজের মনের মধ্যে ঢোক.
    তার পর নিজেকে ভুলে যাও. অপেক্ষা করে থাক মৃত্যুর জন্য. আর দেখো. সকল দেখো, বিকেল দেখো, মানুষগুলোর হাসির ভিতরে বিষাদ, বিষাদের ভিতরে হাসি দেখো.
    বাজার-এ যাও. ভিড়ের মধ্যে ঘুরে বেড়াও.
    মৃত্যু আসছে. একটু সময় দাও তাকে. অনেক রাস্তা পেরিয়ে তাকে আসতে হবে. জানলা দরজাগুলো খোলা রাখো. তোমার বইগুলো আর অপ্রকাশিত লেখাগুলো গুছিয়ে রাখো. ওগুলোকে ব্যান্ক এর লকারে পুরে রাখো.
    মৃত্যু আসছে. তাকে বারবার ডেকে বিরক্ত কোর না. তাহলে কিন্তু সেও আসবে না. তোমাকে বাঁচতে হবে এভাবেই. আর যদি কিছু ভালো না লাগে তবে পেটের জন্য যা করছ তা ভালোভাবে করে যাও. সকলের থেকে দূরে সরে যাও. লেখার কথা ভেবো না. যা হয়েছে তার ফল তো তুমি দেখতেই পাচ্ছ. লেখা দিতে বললেও লেখা দিতে পারছ না. লিখতেও পারছ না. আর কেউ তোমাকে দিতেও বলছে না. তোমার বন্ধুবান্ধব রাও সরে গেছে.
    তুমি আছ আবার একই সঙ্গে নেই.
    তুমি বেঁচে আছ আবার একই সঙ্গে মরছ.
    আকাশের দিকে তাকাও.
    সব দূরে সরে যাচ্ছে.
    তুমি কে ভাই?
    (ক্রমশ)

    Posted by Hindol Bhattacharjee at 9:21 PM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:২৭577275
  • এলোমেলো আমি-১৭

    আমার আগের এলোমেলো লেখাটা নিয়ে আমি ভাবছিলাম. কী আজেবাজে সব লিখেছি. কোনো মানে নেই. সত্যি কোনো মানে নেই. প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি আমি. আমার এসব ভাবা উচিত না. কে কোথায় লেখা ছাপলো বা ছাপলো না তাতে আর এতে এ বয়সে এসে আর কি এসে যায়! সত্যি তো আমার এতগুলো বই. লোকে যদি পরে তবে সময়ের কাছে থাকবে. আর সময়ের কাছে যদি না থাকার হয়, তো থাকবে না. এতদিন কবিতা লিখে তো আর আমার নতুন করে কিছু প্রমান করার নেই. আর আমি কোনো জায়গাতেই ঠিক সামাজিক নই. হয়ত কোনদিন হতেও পারব না. এই সামাজিক না হবার বৈশিষ্ট আমার সেই ছোটবেলা থেকে. কোনো বিয়ে বাড়িতে বা অনুষ্ঠানে আমি যেতাম না. ভিড়ের মধ্যে আমার খুব মানসিক কষ্ট হত. ছোটবেলাতে আমায় কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলে সে আলাদা কথা. আর আমি তো কোনদিনই সমমনস্ক মানুষদের সঙ্গে ছাড়া কথা বলতেই পারি না. আমার বইয়ের পরেও এনিয়ে অশান্তি কম হয়নি. এবং সেই অনুষ্ঠানে না যাবার অজুহাতে আমি অনেক মিথ্যেও বলেছি. কিছুই করিনি হয়ত. তখন হয়ত বারিস্তায় বসে কফি খেয়ে সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছি.বলেছি প্রচুর চাপে ছিলাম. আমার এসব মিথ্যে গুলোর জন্য আরো গার্গী আমাকে ছেড়ে চলে যায়.
    ভাবনার এলোমেলো এই ঘুরে বেরানোতে কার কি মনে হচ্ছে জানি না. আমি হঠাত আজ মৃত্যু নিয়ে একটু বেশি ভাবছিলাম. দুপুরে. এই যে আমি এখন লিখছি আমার মনে পড়ছে অনেক কিছুই, অনেক অপমান , অনেক যন্ত্রনা, অনেক একা একা বৃষ্টির মধ্তে কেঁদে ওঠাগুলো. কিন্তু আমি আসলে কি নিয়ে ভাবছি! সেই তো আগেরটাতে আমি কবি হবার কথায় লিখলাম. কিন্তু কবিতা লেখার কোনো কথা তো বললাম না. আমি এখন লিখতে পারছি না. এটা আমার কাছে ভয়ানক বাস্তব. কিন্তু এর সঙ্গে কারোর আমাকে অপছন্দ করার কোনো কারণ নেই. আমি এতটা ইম্পর্টান্ট নই. হবার কথাও না. আমার লেখা পড়ে কারোর আমার প্রতি সহানুভূতি আসুক তা তো আমি চাইছি না. আমি চাইছি আমার মনে আসা কথাগুলো যত নগ্ন হোক না কেন তা আমার ভাবনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলে যাওয়ার.
    আসলে এই জীবনটা সত্যি বার্গম্যান এর সেভেন্থ সিল এর মত. মৃত্যুর সঙ্গে দাবা খেলছি আমরা. পিঠে চাবুক পড়ছে অপমানের. দু:খের. কিন্তু এই দাবার চাল দেওয়াতে কোনো বাধা নেই. কারণ এই চাল দেওয়াটা তো আমার মননের মধ্যে ঘটছে. আমি আজ দুপুরবেলাতে একটা অসাধারণ ডকুমেন্টারি দেখলাম. কচ্ছপদের নিয়ে. একটি কচ্ছপ কত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে বেঁচে শেষ পর্যন্ত হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে যায় এমন এক জায়গায় যাতে সে শান্তিতে ডিম পাড়তে পারে! তার পর ডিম পেরে সে আবার চলে যায় অনির্দিষ্ট জায়গায়. এই যে কয়েকহাজার মাইল অতিক্রম করে সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে জন্মের পর থেকেই এতেই তার জীবনের সার্থূকতা. কত সহজেই না মেনে নিয়েছে কচ্ছপের যে অভিযাত্রাটাই জীবন. কয়েক লক্ষ্ বছর ধরে তার জিনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রাস্তাটা তার কাছে চেনা. তার অবচেতন মনের মধ্যে আছে এই অভিযাত্রার রাস্তা. যেহেতু প্রকৃতির মধ্যেই সে রয়েছে আমার মনে হয় এ কারণে প্রকৃতি তাকে তার অবচেতনের সঙ্গে সচেতন মনের এক প্রত্যক্ষ যোগাযোগ করে দিয়েছে এমন ভাবে যে সে জানে কখন কোথায় তাকে কি করতে হবে!
    মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির যোগাযোগ সম্ভবত অনেক ক্ষীন হয়ে আসছে. যত ক্ষীন হয়ে আসছে, তত মানুষের তার অবচেতনের সঙ্গে সচেতন মনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে আসছে. অনেক চেষ্টা করে সেই অবচেতনের জার্নির কাছে পৌছতে হয়, অথচ তাকে ধরে রাখাও যায় না. এই খানে এসেই আমার মনে হয় আবহমান অবচেতনা একটি পাখির মত হলেও অনেকটা ফিনিক্স এর মতন বটে.
    কিন্তু এই ফিনিক্স এর উঠে পরাটা অনেক পর্দার আড়ালে চলে গেছে এখন. তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমাদের মন্থরতাহীনতা. যুক্ত হয়েছে এক অদ্ভুত শহর. এক অশ্লীল নাগরিকতা. এই কলকাতা শহরটাকে দেখতে দেখতে আমার মনে হয় এই শহরটা পুরোটাই এখন বেশ্যা হয়ে গেছে. সন্ধ্যে হলেই এই শহর নানা রং মেখে আলো মেখে দাঁড়িয়ে পড়ে. সারাদিন তার প্রস্তুতি চলে. সে যেন পরখ করে নেই, সে যেন তখন ভোগ করে. আর লালসার গন্ধ ঘিরে থাকে এই শহরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত. শহরের সঙ্গে সঙ্গে শহর বাসীরাও হয়ে গেছে যন্ত্রমানবের মত. এই শহরটা কে যদি রিফর্মাট করা যেত!
    আমার ভিতরে আরও একটু অভাব বোধ আছে! তা হলো আমার নিজের প্রাণ এর. কি আশ্চর্য বলুন তো আমি মানুষের সঙ্গে সহজ ভাবে মিশতে পারছি না! শুধু তাই নয় আমার মনে হচ্ছে আমি এই শহরের এক্কেবারে বাইরের লোক. অথচ এই শহর জানে আমার প্রথম সব কিছু!
    লক্ষ্য লক্ষ্য আলোক বছর দূরের সব নক্ষত্র গুলো আমাকে ভাবে. এই অন্ধকারের মধ্যে কতদূর! এমন একটা বিন্দু আছে যেখানে এখনো পর্যন্ত বিগ ব্যাং এর বিস্ফোরণ গিয়ে পৌছোয়নি! তো সেই জায়গাটি আমার কাছে কি? আমার অতীত না আমার ভবিষ্যত? সেই বিন্দুটার কাছে আমি অতীত. কারণ বিগ ব্যাং সেখানে ঘটেইনি. আবার আমি প্রসারিত হতে হতে, আমার মহাবিশ্ব প্রসারিত হতে হতে সেই বিন্দুটির দিকেই চলেছে যেখানে আজ বিগ ব্যাং এর বিস্ফোরণ গয়ে পৌছোয়নি! তার মানে সেইবিন্দুটি আমার কাছে ভবিষ্যত বটে. তাহলে কি হলো? আমার অতীত এবং ভবিষ্যত সেখানে এক!!!
    অর্থাত বর্তমানে দাঁড়িয়ে আমি ভাবতেই পাড়ি, আমার অতীত ভবিষ্যতে আছে আবার আমার ভবিষ্যত আমার অতীতেও ঘটে গেছে. আমি যেখানে আছি তা একটি বর্তমান মাত্র, আমার রিয়ালিজম যার কোনো মানে নেই. মৃত্যুর পর আমাদের চেতনা কোথায় যায় তা কি কেউ জানে! একটা কথা চেতনা বলে আদৌ কিছু আছে কি না কি আমরা নিরাপদ অনুভব করার জন্য চেতনার কথা ভাবছি মাত্র!
    যদি সত্যি থাকে আর যদি আমার নতুন করে কিছু আবিষ্কার করার না থাকেম, তাহলে আমার অতীত, ভবিষ্যত, আমার বর্তমান সবই আমার সঙ্গে এই মুহুর্তে বিরাজ করছে. আমার অক্ষমতা যে আমি সেগুলিকে দেখতে পাচ্ছি না. আর দেখতে পাবই বা কিভাবে! দুটো একসঙ্গে ঘটছে এটা যেমন ঠিক তেমনি এই সময়গুলি একে অপরকে তৈরিকরছে, ধংস করছে!
    তারা একই সঙ্গে দেখা দিতে পারে না. কিন্তু তারা একই সঙ্গে রয়েছে! সত্যি কি মজার জগত তাই না!
    আচ্ছা মেডুসার চোখ কাব্যগ্রন্থটি কি পড়ছেন কেউ?
    হঠাত এ কথা মনে হলো কেন?
    আমার এমন হঠাত হঠাত সব মনে হয়. যেমন দরজাটা আধ খোলা ছিল., আমি ভাবছিলাম দরজাটাকে বন্ধ করে দিলে কেমন হয়! তার পর ভাবলাম সব দরজা কি এমন আধ খোলায় থাকে? অদ্ভুত কিছু বিষয় আমার মনকে এলোমেলো করে দেয়. বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা কেউ. বিকেলের গাছেদের মাথায় কলকাকলি করা পাখিদের ব্যস্ততা, নি:শব্দে বসে থাকা বুড়ো, সন্ধেবেলার অন্ধ গলি, এবড়োখেবড়ো ছুটে আসা শব্দ, এরকম নানা কিছু. মাঝেমাঝে আমার কানে সাইলেন্সার লেগে যায়, আমি ভিড়ের মধ্যে মানুষের মুখ নাড়া দেখি. অসংখ্য মানুষ মুখ নেড়ে চলে, তাদের বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি...আমাকে কেমন বিষন্ন করে দেয়. আমি যে সময়টায় বসবাস করছি, এই সময়ে মানুষের কোনকিছুতেই আর মধুর রস নেই. সব কিছুতেই আছে তীব্র এক তির্যক রস.
    আমার আজ এখন মনটা একটু ভালো. সকালে কী অদ্ভুত ভাবে লেখা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগছিলাম! ভাবছিলাম আমি সকলের কাছ থেকে মুছে যাব, এটাই নীতি. হয়ত এটাই আমার নীতি. কিন্তু আজ আমি দুটো নতুন কবিতা লিখেছি অনেক দিন পর. এটা যে কী আনন্দের তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়.
    আর এই বলে না বোঝাতে পারা অনুভূতিগুলোই আমাকে নিয়ে যায় নতুন কোনো এক অঞ্চলে. আমার অনুভুতিপ্রদেশে. আমি যখন ভেবেই নিয়েছিলাম আমি আর বাঁচব না, তখন থেকে আমার ভিতরে যে নির্বিকার মন জন্ম নিয়েছে, তা যেন হঠাত হারিয়ে গিয়েছিল. কী বা হবে যদি কবিতা না ছাপা হয় কোথাও! আর ছাপা তাপ নিয়ে ভাববার বয়স পেরিয়ে গেছে!
    এমন কিছু লিখতে হবে যাতে পাঠক বুঝতে পারেন জগত কে এভাবেও দেখা যায়!
    আমার মনে হয় জীবনানন্দ এই জায়গাতেই ছাপিয়ে গেছেন সকলকে, যে উনি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখালেন দক্ষ এভাবেও দেখা যায়!
    সকলে যেমন বাঁচে তেমন ভাবে আমি বাঁচার জন্য আসিনি.
    নিজেকে রিজেক্ট করার আগে আমি কিছু জিনিস জানতে চাই.
    আমার ইন্দ্রিয় কে জানতে চাই.
    আমার মনের ভিতরে থাকা অনুভুতিজগতকে আরেকবার পরখ করে দেখতে চাই, যে সে আগের মত বেজে উঠছে কি না!
    আমার খুব আনন্দ হচ্ছে!
    হঠাত মন খুব ভালো হয়ে গেছে!
    অন্তত আমি তো স্বাধীন ভাবে ভাবতে পারছি! আমার ভাবনাকে তো কেউ কিনে নিতে পারেনি. আমি তো বাধ্য হয়ে কোনো এক ভাবে ভাবতে পারছি না. আমি তো পারছি নানারকম ভাবে ভাবতে. যেদিন এটাও বন্ধ হয়ে যাবে সেদিন আর আমার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই.
    আমার আগের পোস্ট এ যদি কেউ আহত হয়ে থাকেন তবে আমি ক্ষমা চাইছি.
    কারণ আপনারা অনেক কিছু বোঝেন. আপনাদের অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়. স্বাভাবিক.
    আমার সে দায় নেই.
    আমি থোরাই কেয়ার করি!
    আমার কাছে আমার আকাশ আছে, আমার কাছে আমার মৃত্যু আছে, আমার কাছে আমার নিজের সঙ্গে কথা বলা আছে, আমার সঙ্গে আমার ভাবনা জগত আছে.
    যারা বা যা যা ছেড়ে গেছে, তা সম্ভবত যাবার কথাই ছিল.
    খুব ভালোবাসলেও নিজের অক্ষমতাগুলোকে, নিজের ব্যার্থতাগুলোকে তো ভুলে থাকা উচিত নয়.
    আর কে বলতে পারে, ব্যার্থভাবে সফল্ততার দিকে আমি যাচ্ছি কিনা!
    কাল সকাল থেকে আমার পারফরমার হবার পরীক্ষা আবার.
    কিন্তু ভিতরে তো সে রয়েছে, সে দেখতে জানে.
    শুধু তার চোখদুটো আরো খুলে যাক.
    দৃশ্যের মধ্যে দৃশ্যকে, ভাবনার মধ্যে ভাবনাকে, ভাষার মধ্যে ভাষাকে, কথার মধ্যে কথাকে সে দেখুক. আরও ভালো ভাবে গন্ধ পাক সে.
    গন্ধগুলোকে নিয়ে সে নীরবতায় কথার মধ্যে ডুবে যাক.
    যা এতদিনেও আমি রপ্ত করতে পারিনি, অর্থাত নিজের মধ্যে নিজেকে দেখে তার সঙ্গে কথা বলা, তা সে করুক.
    আমার কেন জানি না খুব পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল-er katha মনে পড়ছে, আমার পার্থদার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে.
    দেখি.
    (ক্রমশ)

    Posted by Hindol Bhattacharjee at 10:49 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:২৮577276
  • এলোমেলো আমি -১৮

    পর্যবেক্ষণ. দেখা. মন্থরতা. মনে পড়ছে কমলকুমারের গদ্য. ক্রমে আলো আসিতেছে. ক্রমে যা যা ঘটছে, তা চুপচাপ দেখে যাওয়া প্রয়োজন. এমন এক ধরনের মানসিক শারীরিক অবস্থা প্রয়োজন যখন চারপাশের ক্রমে ক্রমে ঘটে চলাগুলোকে প্রত্যক্ষ করা যেতে পারে. জীবনে এই মন্থরতা খুব গুরুত্বপূর্ণ.
    কিন্তু এই সময় নিয়ে সমস্যার অন্ত নেই. এই সময় চায় না আমরা মন্থর ভাবে পর্যবেক্ষণ করি. চায় আমরা দৌড়াতে থাকি. চায় আমাদের মগজের মধ্যে নিস্তব্ধ ভাবে মন্থরতাকে পর্যবেক্ষণ করার আমাদের ভিতরে থাকুক. সব সময় কে যেন হুইসিল মুখে নিয়ে বাজিই চলেছে. আর আমরা অনেকটা দুরে এসে আবার একটু হাঁফ ছাড়তে না ছাড়তেই আবার দেখছি ছুটে যাবার নির্দেশ. থামলেই মুশকিল. সাম্প্রতিক আধুনিকতার এ এক সমস্যা. এই যুগ, এই তড়িত গতিতে ছুটে চলার সঙ্গে নিজেকে সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলতে না পারলেই তুমি পিছিয়ে পর্বে আর পিছিয়ে পড়লেই সমস্যা. তুমি তখন স্রেফ মিলিয়ে যাবে. তোমাকে কেউ মনেও রাখবে না. কিন্তু এই অবস্থার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাই নিতে নিতে এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষ আর পর্যবেক্ষণের মন্থরতার সঙ্গে তাল মেলাতেই পারবে না. তাল মেলাতে যদি হয়ই, তাহলে কেন এমন কোনো বিষয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে হবে, যা ক্রমশ মানুষকে মননহীন করে তোলে? মাথার ভিতরে তখন কেবলি এক মেশিনদেবতা. অভিযোজনের বিজ্ঞান যদি মনে রাখি, তাহলে, আমাদের মস্তিস্ক হয়ত কেবলি গতির সঙ্গে তাল মেলাতে মেলাতে ভুলে যাবে মন্থর ভাবে পর্যবেক্ষণের বিষয়টি. অভিযোজনের সুত্র ধরেই বলা যায়, যা আছে, তারই নানা প্রযুক্তিগত রূপ আবিষ্কার , যা বলা হয়েছে, তারই বিভিন্ন রূপান্তর লিখতে, ভাবতে এবং প্রয়োগ করতে করতে আমরা ভুলে যাব নতুন কিছু খুঁজে পাবার জন্য প্রয়োজন আমাদের স্থিরতা, আমাদের শান্ত রস, আমাদের ধৈর্য, আমাদের পর্যবেক্ষণ.
    জীবনকে আসতে ভেসে যেতে দেওয়ার মধ্যে আছে জীবনের আনন্দ. কারণ এই আসতে ভেসে যেতে দিতে পারলে তবেই অনুভব করা যায় প্রকৃতির মধ্যে এমন কোনো সুত্র আছে, যা এখনো আমার অজানা, কিন্তু যাকে আমি ছুঁয়ে ফেলতে পারব. জানতে পারব. যদি জানতে পারি, তবেই না তাকে লেখা যায়. তবেই না তার মধ্যে থেকে প্রকৃতির মধ্যে থাকা নতুন কোনো বীজ কে খুঁজে পাওয়া যায়! কিন্তু আমার সময় তো আমাকে বলছে তুমি পর্যবেক্ষণের মধ্যে যেও না. তোমাকে এক্ষুনি একটা সমাধান বের করতে হবে. সমাধান কারো. যে যত বেশি সমাধান করতে পারবে, সে তত বেশি এই সময়ের সঙ্গে মিশে যেতে পারবে, তাকে তত এই সময় সমাদর করবে, তা সে যে পেশাতেই থাকুক না কেন, যে কাজ-ই করুক না কেন!
    আর এখানেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি. আমাদের আগের সময় আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে. আমাদের বিদ্রুপ করছে. আমাদের চোখের উপর bheshe বেরিয়ে যাচ্ছে নানা কিছু কিন্তু আমরা কোনো কিছুই ধরতে পারছি না. এরকম একটি সময় আসতে চলেছে.
    না আসলেই ভালো.
    নিজের মনকে সংহত করার জন্য মন্থরতা প্রয়োজন. মন্থরতা কিন্তু স্থবির হয়ে যাওয়া না. মন্থরতা হলো গাছের পাতার মত. তার ভিতরে রান্না হচ্ছে. অথচ বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না. কচি পাতা সবুজ হচ্ছে. মাঝখানের জার্নিটা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না. কিন্তু হচ্ছে. এই হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ. 'হওয়া এবং না হওয়া '- পারস্পরিক এবং আপেক্ষিক.
    আমি যখন কিছু করছি না তখন আমি অনেক কিছু করে যাচ্ছি. মুশকিল হচ্ছে এই অনেক কিছু করে যাওয়াটা সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ছে না. দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না. নিজের মনের ভিতরে যে রান্নাঘর তার মধ্যে ঢুকে পড়ছে শহর, গ্রাম, মাঠ, ঘর-গৃহস্থালি, আকাশ, নানা রকম শব্দ, গন্ধ সব. আর এ সব মনের মধ্যে ঢুকে পড়ে জন্ম দিছে বোধের. সে বোধ কখনো সুর, কখনো কাব্য, কখনো নাট্য, কখনো দৃশ্যের জন্ম দিছে. ' আমরা জানি মরে আজ, তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়'. সে কি এমনি এমনি?
    এই বার মনে হচ্ছে আমি ভাবনার ভিতরে ঢুকতে পারছি.
    অথবা পারছি না.
    চেষ্টা করছি.
    যেকোনো দৃশ্যের দিকে এক নিমেষে তাকিয়ে থাকলে অনেক কিছু টের পাওয়া যায়. সূক্ষতা গুলোকে জানতে পারা যায়. সে চোখের দিকে তাকিয়ে থাকাটা অনেক দিন হয় না আমার. আমি আগে যেকোনো মানুষের চোখ দেখতাম.
    মনে আছে এরকম একজনের চোখ দেখে মনে হচ্ছিল আমি নিজেকে দেখছি.
    লেখা হয়েছিল একটি কবিতা. সে এক খুব মন্থর কবিতা.
    কবিতাটির নাম আলেখ্য.

    তোমার সহজ মুখ বৃষ্টিপতনের শব্দে ভেজা
    বহুযুগ ধরে যেন তাকিয়ে রয়েছে
    ফুলের নিদ্রিত স্বপ্ন যেমন ফুলের থেকে দূরে মিশে যায়
    পরাগরেণুর মর্মে, আমি তার বেদনায় বিঁধে
    তোমার চোখের মত, আমারই মূর্তির দিকে
    তাকিয়ে রয়েছি.

    এই কবিতাটি আমার কাছে আসেনি. এর জন্য আমাকে বহ্হুদিন ধরে অনুভব করতে হয়েছে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে সে কি দেখে, কীভাবে দেখছে, এবং তার দেখার মধ্যে আমি কীভাবে আমাকেই দেখছি সেটি অনুভব করা. লেখাটা উতরেছে কিনা আমার জানা নেই. হয়ত সময়ের নিয়মে হারিয়ে যাবে. কিন্তু আমার কাছে এই লেখাটি লেখার সময়ে যে শারীরিক ও মানসিক অনুভূতি জগত জেগে উঠেছিল, সেই সময়ের অভিজ্ঞতাটি গুরুত্বপূর্ণ. কারণ লেখাটি লেখার পর আমি মানুষ হিসেবে পাল্টে গিয়েছিলাম.
    আমার মনে হয় কবিতা বা লেখা বা যে কোনো শিল্প মাধ্যম মানুষকে এভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতে শেখায়.

    কবিতা লিখে যদি আমার নিজের শরীর-মন'এ কিছুই না হয়, আমার যদি তার পরের মুহুর্তগুলো অন্য ভাবে না কাটে, যদি না অন্য চোখে আমি জীবনটাকে দেখতে পারি, তাহলে কবিতা লিখে আমার হলটা কী!

    একটা জায়গায় যেমন আমি কবিতাকে লিখছি, তখন কবিতাও আমাকে লিখছে. আমার পরবর্তী আমি-দের লিখছে. একটা বই মানে কবি- বা লেখকের মৃত্যু ও পুনর্জন্ম.
    এই পুনর্জন্ম যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে মৃত্যুর কোনো মানে নেই আবার মৃত্যু যদি পুনর্জন্ম না এনে দিতে পারে, তাহলে লেখার মানে নেই. অর্থাত একটা কবিতা বা লেখা বা আঁকা আমাদের মোচন করে বাস্তব থেকে আরো গভীর মনের বাস্তবে. সেখানে আমরা আমাদের মনের মধ্যে থাকা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি. সহাবস্থান করতে পারি. কথোপকথন করতে পারি.

    উন্মাদের পাঠক্রম তৈরী হয় জীবনে.

    কিন্তু এই উন্মাদের পাঠক্রম শীতল পাথরের থেকে ভালো. এই ভালোটুকুকে আরও ভালো ভাবে জানতে গেলে দরকার পর্যবেক্ষণ.
    দরকার সমস্ত ছাঁচ থেকে নিজেকে বের করে আনা.
    ছাঁচে আমরা নিরাপদ থাকি. কিন্তু কবিতা লেখা অন্তত আমার কাছে সরু কার্নিশের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া. নিজেকে খাদের কাছে নিয়ে না গেলে কী করে পারব পর্যবেক্ষণ করতে?
    আমার সময়ের সঙ্গে আমাকে যদি নিয়ত মানিয়েই নিতে হয়, তাহলে জীবন-লেখা-শিল্প- সবই সার্থক পথে আমাকে নিয়ে যাবে. ব্যর্থতার পথে নিয়ে যাবে না যার জন্য আমি বার বার পর্যবেক্ষণ করব আমি যা দেখছি তাকে!
    তার মানে কোথাও আমাকে নিজের থেকে এবং নিজের সময়ের থেকেও বেরোতে হচ্ছে. নিজের ছাঁচ থেকে বেরোতে হচ্ছে.
    আর তা নিরাপদ নয়
    নিরাপদ থেকে বেঁচে লাভ কি আছে?
    মহাবিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি মুহুর্তে কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দিচ্ছি নিয়ত.
    দেখব না?
    (ক্রমশ)

    Posted by Hindol Bhattacharjee at 3:29 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:২৯577279
  • এলোমেলো আমি-২০

    সকাল থেকে মন যে কেন অজয় নদী অজয় নদী করছে কে জানে! এই সময় শান্তিনিকেতন ঠিক কেমন? সেখনে হয়ত হেমন্ত এসে গেছে. পুজোর মন্ত্রের সঙ্গে বেরিয়ে পরার এক অদ্ভুত টান আমি অনুভব করি. সেই বেড়িয়ে পড়া কিন্তু এই কলকাতার মধ্যে নয়. বেড়িয়ে পর হাওয়ায় , হাওয়া বাইরে থেকে ডাকছে. শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এই কবিতাটা মনে পড়ল. মনে পড়ল চাকার বাতাসে ঝরা পাতা উড়ে যায়. চারিদিকে বেশ উত্সব উত্সব ভাব. মানুষ শত কষ্টের মধ্যে থাকলেও হয়ত এই সময়গুলিতে সব ভুলে যায়. আমি যে ভুলতে পারি না. মনে আছে একজনের বাড়ি. তাদের বাড়ি থেকে একটা সরু গলি দেখা যেত. আমি সকাল বেলা জানলা দিয়ে তাকিয়ে থাকতাম বাইরের দিকে. এই সপ্তমীর দিন দেখেছিলাম কলাবৌ নিয়ে স্নানে যাওয়ার দৃশ্য. আমার খুব ইচ্ছে ছিল পরের বছর কেমন ভাবে কলাবৌ স্নান হয় তা দেখার. কিন্তু পরের বছর আর পেলাম কি?
    এই যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, এই সব অনুষ্ঠান আমাদের জাতীয় মননে কতদিন ধরে যে রয়েছে. কোনো একটা বিশেষ কারণ থেকে এই সব আনুষ্ঠানিক বিষয় তৈরী হয়. তার পর সেগুলির পিছনে কোনো না কোনো দৈব কারণ জুড়ে দেয় আমাদের পুরোহিত তন্ত্র. তার পর সেই পুরোহিত তন্ত্র্রকেই অনুসরণ করতে থাকে আমাদের সংস্কৃতি দিনের পর দিন. বিষয়টি মজার. আমার কাছে এ জন্য সব ধর্মই ইতিহাস. সব ধর্মের আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে ইতিহাস নানা ভাবে লুকিয়ে রয়েছে. আমরা অভ্যেসের বসে কেবল আনুষ্ঠানিক চর্চা করে যাচ্ছি. কিন্তু সেই প্রতীকের মর্মে প্রবেশ করতে পারছিনা.
    কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি এমন হতো যে ধর্মের নানা বিষয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতীকের ইতিহাস ধরে ধরে অতীতে যাওয়ার পাঠক্রম রাখত., তাহলে বেশ হত. তাহলে অন্তত সব ধর্মের মানুষ বুঝতে পারতেন যে ধর্মগ্রন্থগুলি ইতিহাসের শিলালিপি ছাড়া আর কিছুই নয়. আমি এই ইতিহাসের শিলালিপি কথাটি যে ব্যবহার করলাম, এই শিলালিপি কিন্তু আমাদের মনের মধ্যেই আছে দীর্ঘকাল ধরে.
    এই যে খবর কাগজ গুলো বন্ধ হলো, কী যে ভালো হলো!
    আমি মাঝেমাঝে কিছু অদ্ভুত বিষয় ভাবি., যেমন সব কাগজ যদি বন্ধ হয়ে যায়! ধরা যাক মানুষের জীবনে কোনো কাগজ নেই. কোনো সংবাদপত্র নেই. তাহলে কি হবে? মানুষের জীবন থেকে সব খবর যদি মুছে যায় তাহলে কী হবে? মানুষের সব সকাল গুলোতে এক ভয়ংকর সংকট তৈরী হবে. আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এমন একটা পৃথিবীতে পৌছে যেতে চাই, যেখানে কোনো খবর কাগজ নেই. আমি কি খুব বেশি মাত্রায় মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি? হাহাহাহা!
    গত পরশু ট্যাক্সিতে আসতে আসতে একটা দৃশ্য দেখলাম. মনটা অন্যরকম হয়ে গেল. ওই বিডন স্ট্রিটের ওখানে দেখেছিলাম ঠাকুর আসছে. আর তার পিছন পিছন একটা শববহনকারী গাড়ি যাচ্ছে! ঠিক পিছনে পিছনে. কী আশ্চর্য! সামনে উল্লাস এবং পিছনেও উল্লাস. প্রচন্ড আনন্দ হয়েছে এমন ভাবে তারা হরি বল হরি বল করছে. এই শব নিয়ে যাওয়া চিত্কার আমি একদম সহ্য করতে পারি না. শব নিয়ে যাওয়া উচিত নীরবতায়. কিন্তু মানুষ কেন যে আএত চিত্কার করে! শোক ঢাকার জন্য. তারা খই ছড়িয়ে দিছে আর ঠাকুর নিয়ে আসা লোকজন ছড়িয়ে দিচ্ছে ফুল. হয়্তবিসর্জনেও এইরকম কোনো দৃশ্য দেখব.
    সবাইকেই চলে যেতে হয়. সবাই যায়. চলে যায়. কেউ কেউ ফেরে কেউ ফিরতে পারে না. এটি যেন কোন একটা কবিতায় লিখেছিলাম! আমার ছোটবেলা তো কেটেছে রামতনু বোস লেনে. আমার মা তখন এম এ পড়ছে. আমি বড় হয়েছি আমার মামার বাড়িতে. আমার দিদিমা এবং মাসির কাছে. আমার মনে আছে উত্তর কলকাতার গলিগুলোর গন্ধ. ওখানে তো সদর দরজা খোলায় থাকে. আমার মনে আছে আমি বেড়িয়ে পড়তাম. এ গলি সে গলি. কোথাও রাস্তা থেকে বেরোনো গঙ্গা জল এ স্নান করছে মানুষ, কোথাও প্রচন্ড ঝগড়া. কোথাও টিং টিং করে রিক্সা ঢুকছে. আর আমি ভালবাসি ট্রাম. ওই যে মন্থরতার কথা বলছিলাম, উত্তর কলকাতার মধ্যে এই মন্থরতার বিষয়টি রয়েছে. সুন্দর খুব. আমার দক্ষিন কলকাতা কেন জানি না ভালো লাগে না. এই গাদা গাছের শপিং মল তো নয়ই. আমার ভালো লাগে হাতিবাগান বাজার. ভালো লাগে হকার. ভালো লাগে তাদের ডাক. তাদের সঙ্গে দরাদরি. আর টুক করে কোনো রেস্তোরায় ঢুকে চপ কাটলেট. রাস্তার দোকানে ভাঁড়ে চা. হেদুয়ার দিকে যেতে গিয়ে নকুরের গলিটার উল্টোদিকের গলির মুখে একটা অসাধারণ চায়ের দোকান আছে. হিন্দু স্কুল থেকে প্রায়শই আমি হেঁটে ফিরতাম আর ওই দোকানে চা খেতাম. আবার আমাদের বন্ধুরা মিলে এখন বন্ধ রংমহলের উল্টোদিকে অসামান্য একটা চপের দোকান আছে. সেখানেও খেতাম. ওদিকে একটা খুব ভালো বইয়ের দোকান আছে. অনেক পুরনো বই আমি কিনেছি ওই বইয়ের দোকান থেকে. মনে আছে সত্যেন বোস এর বাড়ির সামনে যে সরু গলি, যেটা মনে হয় কলকাতার সবচেয়ে সরু এবং দীর্ঘতম গলি সেটাতে ঢুকে কী আনন্দ হয়েছিল! আরেকটা সুন্দর সরু গলি আছে ফরেপুকুরে.
    উত্তর কলকাতার মধ্যে প্রাণ আছে. যেটা এই আমাদের কালিন্দী-লেকটাউন- সল্ট লেক, দক্ষিন কলকাতায় নেই.
    বা, হয়ত এটি আমার মনের ভ্রম হতে পারে.
    উত্তর কলকাতা নিয়ে আমি অনেক কবিতা লিখেছি.আমার তুমি,অরক্ষিত কাব্যগ্রন্থে পাতায় পাতায় রয়েছে উত্তর কলকাতা. তবে একজন কবির উত্তর কলকাতার কবিতা পড়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম. তিনি কবি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়. এই একজন বড় মাপেরকবি ও চিন্তক. এ সব সম্ভবত আমাদের বাংলা ভাষাতেই সম্ভব যে যাঁরা নীরব ভাবে লিখে যান শুধু, তাঁদের কবিতার কথা বেশির ভাগ পাঠক জানতে পারেন না. বেশির ভাগ পাঠক হচ্ছেন প্রচার মুগ্ধ. প্রচার মাধ্যম যাদের কথা ফলাও করে বলে, তাদের একটি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা আছে. তাঁরা পড়েও দেখেন না অন্যেরা কী লিখেছেন! পাঠক বিচার করতে পারেন না করা সত্যিকারের কবি. পাঠক পার্সোনালিটি-র কাছে যান না. পাঠক যান বিজ্ঞাপিত বস্তুর কাছে. প্রচার মাধ্যমের কাজী হলো প্রোডাক্ট বেচা. এটি দোষের না, কিন্তু প্রচার মাধ্যম তাঁদের যাবতীয় জ্ঞান সহ বুঝতে পারেন না এবং তাদের সেই সার্ভেও নেই, যে কাদের কবিতা সময়ের কাছে থাকার মত এবং কাদের কবিতা নয়. গৌতম বসু, পার্থ প্রতিম কাঞ্জিলাল, রমেন্দ্র কুমার আচার্য চৌধুরী, গৌতম চৌধুরী , দেবদাস আচার্য -- এঁদের কবিতা কজন পড়েন? অথচ নিশ্চিত ভাবেই তাঁদের কবিতায় আছে আগামীর কবিতার কথা, বীজ. হয়ত তাঁদের কবিতা সময় রাখবে. কারণ সময় বোকা নয়. সময়ের কোনো স্বার্থ নেই.
    সে যাই হোক, কোথা থেকে কোথায় এসে পড়েছি. আমাকে ডাকছে সব ছোট ছোট নদীগুলো. ছোট ছোট নদীর মন্থর বয়ে যাবার ভিতরে কী শান্তি আছে তাই না? আমি কালকে লিখেছিলাম একটি ভীষণ চমক বাজির পৃথিবী তৈরী হয়েছে. তা শুধু যে আমাদের চারপাশের জীবন যাত্রায় তাই নয়, তৈরী হয়েছে
    আমাদের মনে. আমরা খুব তাড়াতাড়ি ভোগ করার রাস্তায় পৌছতে চাই. সে ভোগ নানা রকমের. কক্ষনো সেই ভোগ পড়ার, কখনো সেই ভোগ নিজেকে বেচার, নিজেকে বিজ্ঞাপিত করার, কখনো সেই ভোগ ভালবাসার. নিজের লেখা, নিজের ভালবাসা, নিজের পড়া --এগুলিকে জারিয়ে নেওয়ার জন্য যে কিছু কিছু অনুভূতির সঙ্গে আমার মন্থর সহবাস প্রয়োজন তা মানুষ ভুলে গেছে. তাই এখন পড়া থেকে অভিজ্ঞতা, ভালো লাগা, ভালবাসা সবই ক্ষনস্থায়ী. আর ক্ষনস্থায়িত্ব কখনই কোনো বড় মাপের কিছুর কাছে আমাদের নিয়ে যায় না.
    প্রয়োজনের চেয়ে আয়োজন বেশি যে জীবনযাত্রায়, তা তো যন্ত্রনাময় হতে বাধ্য. আর সেই যন্ত্রনা ভোলার জন্য আমরা আবার কোনো ক্ষনস্থায়ী বিষয়ের মধ্যে নিজেকে নিযোগ করে রাখি. তখন আমাদের সময় কোথায় কোনো মন্থরতার সঙ্গে সহবাস করার?
    একজন কবি বা একজন শিল্পী যদি এই ক্ষনস্থায়ী বিষয়কে পরিবেশনের দিকে জোর দেন, তাহলে তা মারাত্মক বিপদের কারণ. কিন্তু এখন সেটাই হচ্ছে. প্রকাশ কারো অথবা নিজেকে মুছে ফেল. এই হচ্ছে এই সময়ের বৈশিষ্ট. কিন্তু এতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে যাবেই যাবে. যারা সৃষ্টি করছেন তারাও হবেন, এবং যারা ভোগ করছেন তারাও হবেন.
    নদীর কথা বলছিলাম. আমি স্বপ্নে দেখি এমন কোনো নদীর ধরে আমার ছোট কুটির, আমার কোনো চাপ নেই, কোনো দৌড়ে যাওয়া নেই. আমার কোনো টেনশন নেই. আমার কোনো প্রমান করার নেই. আমি খুব আনন্দে আছি. এমন স্বপ্ন দেখি. স্বপ্ন দেখি আমি সেখানে একটু একটু করে লিখছি আমার ভাবনাগুলিকে. আমার কবিতাকে. আর কবিতাও আমাকে একটু একটু করে লিখছে. কারোর কোনো তাড়া নেই.
    হারমান হেসের সিদ্ধার্থ উপন্যাসটা আবার পড়তে ইচ্ছে করছে.
    আজ সপ্তমী. আজ বাড়িতে আছি. হয়ত আবার লিখব.
    (ক্রমশ)

    Posted by Hindol Bhattacharjee at 12:01 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:২৯577277
  • এলোমেলো আমি-১৯
    চারিদিকে পুজোর বাজনা. প্যান্ডেল, ঠাকুর. আলো, প্রতিমা. ফুচকা. জ্যাম. আজ ষষ্ঠী. ভাবনাগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে মাথার ভিতরে. কয়েকদিন চুপ করে ছিলাম. কারণ নিজেই আমার লেখাগুলো পড়ে মনে হচ্ছিল আমি কোথাও হয়ত বা আমার কাছ থেকে সরে যাচ্ছি. নিজের কাছে ফিরে আসাটাই মনে হয় আমার বোধন. কোনদিনই খুব একটা ধার্মিক ছিলাম না. আমার কাছে ঈশ্বর মানে এই মহাজগত. সময়. কি বিশাল এই আকাশ! কী বিস্ময় এই জীবন! কী নির্মোহ এই মৃত্যু! সত্যি কারোর জন্য কোথাও কোনো কিছু আটকে থাকে না. কেউ বিস্মৃত-ও হয় না. কেউ খুব একটা চিরস্থায়িও হয় না. আমার লেখাগুলো পড়ে যারা আমাকে বলেছেন আমি নিরাশাবাদী, আমি কিন্তু তা নই. আসলে আমাদের সম্পূর্ণ অস্তিত্ব এবং যাপনের মধ্যে নিজেদেরই চোখ ঠার দিয়ে বেঁচে থাকার একটা প্রবণতা আছে. আমি সেই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে যেতে চাই. কিন্তু কীভাবে বেরোব? এ ক্ষেত্রে আমাকে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করে জেন ভাবনা এবং বৌদ্ধ ধর্ম. এই ভদ্রলোকের ভাবনা আমাকে আমার জীবনে নির্বিকার থাকতে শেখায়. এবং কোথাও না কোথাও আমরা আমাদের জীবনে এই নীরবতার কাছে যেতে চাই. কিন্তু এই নীরবতার কাছে গেলে ভয়ানক সমস্যা. কারণ মানুষ ভাবতে ভালবাসে না যে জীবনে শূন্যতাই প্রকৃত. যদি তা-ই হয়, তবে কেন আমাদের ভুয়ো জীবনচর্যার মধ্যে কাটাতে হবে?
    আমার স্মৃতি আমার কাছে খুব ভালবাসার. কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমার স্মৃতির মধ্যে ডুবে গিয়ে আমি সর্বদাই আমার পিছনে ফিরে যাই. কারণ আমার ফেলে আসা সময়গুলি নিয়ে আমার আক্ষেপ আছে, কিন্তু এর জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়, আমি নিজেই দায়ী. ও hayn, এই kodine আমি বেশ কিছু কবিতা লিখেছি. আমি আবার লিখতে পারছি ইটা আমার কাছে বেশ জেগে ওঠার মত ব্যাপার.
    সেদিন নিজের সঙ্গে দেখা হলো আমার পুরনো এক দিনলিপির খাতায়. সেখানে একটা অপ্রকাশিত উপন্যাসের খসড়াও করা আছে দেখলাম. মজার ব্যাপার. এর মানে আমার তিনটি উপন্যাস. এ বার ওটাকে লিখে ফেলব. আমি দেখছি আমাকে নিজের মধ্যে ফিরতে হলে কিছুকাল সমস্ত সামাজিকতা থেকে বাইরে যেতে হবে. এই যে নিজের মধ্যে একটা দোকান খুলে বসেছি সেটা ঠিক নয়.
    কবিতা লেখা হচ্ছে কি হচ্ছে না সেটা বিষয় নয়. বিষয় হলো আমি কবিতা লেখার মনের কাছে আছি কিনা. আমি বেশ ভাবলাম. এই একটু আগে ভাবছিলাম. অদ্ভুত ব্যাপার. আমাদের অফিসের সামনে একটা নিম গাছ আছে. গাছটা বেশ দীর্ঘ. একটা গাছ, যার প্রাণ আছে, তার কি মন নেই? মন কি শুধুমাত্রই ব্রেন-এ থাকে? গাছের কাছে এই জগত ঠিক কীরকম?
    আমার পক্ষে হয়ত কোনদিনই তা বোঝা সম্ভব হবে না. গাছ উত্তাপ অনুভব করতে পারে. ঝড় বৃষ্টি অনুভব করতে পারে. হাওয়া অনুভব করে. গাছের মন নেই? গাছের দু:খের কথা নেই? নদীর স্রোত, তার ভাষা নেই? তার মন নেই? এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথর? এসবের মন নেই? এই যে বাড়ি ফিরি একটা রাস্তা দিয়ে, এই রাস্তা আমি আমার মত দেখি, আবার অন্যেরা তাদের মত দেখে. অর্থাত একটি রাস্তাকে সেই রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া অসংখ্য মানুষ তাদের মত করে দেখছে. এই প্রতিটি দেখার মধ্যে আছে তাদের বেড়ে ওঠা, তাদের জীবন, তাদের মন, তাদের অনুভূতিমালা. সেই সমস্ত অনুভূতিমাল এবং অভিজ্ঞতায় তো সত্য.
    অর্থাত আমার দেখার মধ্যে যদি তাদের দেখাগুলোকেও চিনে নিতে না পারি, তাহলে আমার ভাবনায় গলদ রয়েছে. আমার অনুভূতিমালা হওয়া উচিত গাছের শাখা প্রশাখার মত. চাঁদের, সূর্যের আলোর মত, বা ঝম ঝম বৃষ্টির মত. যা সকলের মনের মধ্যে, শরীরের মধ্যে, ইন্দ্রিয়ের মধ্যে ঢুকে যায়. তাহলে
    এখান থেকে এই ভাবে ভাবা যায় যে, নিজেকে আবিষ্কার করাটাই ঈশ্বরকে আবিষ্কার করা. এত বেশ মজার. আমি আসলে আমার লেখার মধ্যে দিয়ে অন্য কাউকে না, কেবল নিজেকেই আবিষ্কার করছি. শুধু সেই আবিষ্কার যদি না ছড়িয়ে থাকে, যদি এককেন্দ্রিক হয়, তবে আমি আমাকেও আবিষ্কার করতে পারব না. এখান থেকে যাওয়া যেতে পারে আরো একটি ভাবনায়, আর তা হলো অভিজ্ঞতার ক্ষনস্থায়িত্ত্ব, জীবনে নানা তৈরী করে দেওয়া ভাবনাকে অস্বীকার করতে পারার শিক্ষা এবং প্রশ্ন করতে পারার নির্মোহ অস্তিত্ব. প্রশ্ন করব কিন্তু তর্কের জন্য নয়. প্রশ্ন করব জানার জন্য-ও নয়. প্রশ্ন করব আমার অনুভূতির ক্যানভাসে কিছু ছবি আঁকব বলে.
    অ-সত্য যেমন সত্যের বিপরীত নয়, তেমনি অ-স্বীকার স্বীকারের বিপরীত নয়.
    আমরা কিছু প্রান্তবিন্দু স্থির করি, কিন্তু সেগুলি আসলে আমাদের ভুল দেখাগুলোকেই চিন্হিত করে বারবার. যেমন এই মহাজগতের কোনো কেন্দ্র নেই, তাই সমস্ত বিন্দুকেই কেন্দ্র ভাবা যায়, তেমনি কোনো ভাবনার কোন কেন্দ্র থাকতে পারে না, কোনো প্রান্তবিন্দু থাকতে পারে না. যা থাকতে পারে তা হলো সম্ভাব্যতা.
    এই লাঞ্চ করার জন্য উঠতে হবে. আমি ভাবছিলাম এই লেখাটিকে কীভাবে সেভ করি! যদি লোডশেডিং হয়ে যায়? তার পর মনে হলো কী বা হবে? আমার এই লিখে রাখাটা যে হচ্ছে, তা তো ভাবনাগুলো আমার মাথাতেই আছে তাই. আমি তো এই সব ভাবনাগুলো লিখে রেখে নিজের ভাবনাগুলোকে নিয়েই একটু নড়াচড়া করতে চাইছি. এর বেশি তো কিছু না. এগুলো কিছু লেখায় না.
    এই যেমন চারিদিকে খুব আনন্দ. আমাদের গোটা অফিস বেরিয়ে গেল পুজো পরিক্রমায়. ব্যাপারটা দারুন. কিন্তু আমার ভালো লাগছে আমার নিজের মনের মধ্যে একা থাকতে. আমি ঠিক দলবেঁধে আনন্দ করতে পারছি না. এ কি কোনো দু:খের কারণে? একদমই না. বাইরের দুপুরের রোদ্দুরের মধ্যে কোনো একটা শব্দ আছে. চারদিকের এই প্রচুর শব্দের মধ্যে কোনো একটা জায়গায় নিস্তব্ধতা আছে. আর সেই নিস্তব্ধতার মধ্যে প্রকৃতি কথা বলছে. সময় কথা বলছে. কিন্তু কি বলছে?
    ভিড়ের হৃদয় জানাটা যেমন খুব দরকার তেমনি দরকার নিজের মধ্যে থাকা চতুর্দিক কে জানার এবং চতুর্দিকের মধ্যে থাকা নিজেকে জানার.
    খুব ওপর ওপর কথা বলছি কি?
    কেন এমন আমার হয় কে জানে, যত এই উত্সবের দিন আসে, তত আমার মন বিষাদে আক্রান্ত হয়ে যায়.
    চারিদিকে এক চমক বাজির পৃথিবী. এমন কী এখন কবিতাগুলিতেও শুধু চমক. আমাদের কথা আর ভাবনা কী ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে? আমাদের কি সত্যি পিন ফুটিয়ে চমকাতে হবে? পাঠক কি নীরবতার ভাষাতে বন্ধুর মত ছুয়ে থাকবেন না কবিতাগুলিকে?
    এই কয়েকদিন আগে মারা গেলেন কবি শৈলেশ্বর ঘোষ. কী অসাধারণ কবি!
    কবির কি মৃত্যু হয়?
    তারা কি সত্যি ভাস্করদার কথা মত কবিতা লিখে পাঠিয়ে দেয় পৃথিবীতে?
    কে আমার কবিতা লেখে আমি জানি না. শুধু খুব বিশ্বাস হয় যে কবিতা লেখে আমার হয়ে সে কিছুতেই আমি নয়. সে অন্য কেউ. সে মাঝেমাঝে আসে. তার মাঝে মাঝে আসাটাই ভালো, অথবা সম্পূর্ণ ঝাঁপিয়ে পড়া ভালো. বিনয় দা যেমন. তাঁকে কবিতা অধিকার করেছিল. তিনি বলেছিলেন কবিতা লেখ. পুঁতে দাও মাটিতে. সেখান থেকে গাছ হলে জানবে কবিতাগুলি হয়েছে!
    সত্যি বিনয় দা. অভিজ্ঞতাগুলি ক্রমে সিক্ত গিরিখাতের মতন.
    (ক্রমশ)

    Posted by Hindol Bhattacharjee at 1:21 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:৩২577281
  • এলোমেলো আমি-২২

    আজ এই মহা-অষ্টমীর দিন দুপুরে আমার খুব আনন্দ হলো. আমার তার সঙ্গে কথা হলো. বেশ কয়েকদিন পর. আমার ভিতরে জমে থাকা কত কথাই যে বললাম! কি হয়ে পড়েছিলাম তাই না? আমার জীবনের একটা বিশেষ পর্যায়, যখন আমার নানা কাজ করার সময়, তখন আমি তাকে কতই যে ছোট করেছি. আবার এখন প্রত্যেক মুহুর্তে বুঝতে পারছি যে সেই ছয়টা মাস আমি কীভাবে নিজের কবর নিজেই নিজেই সাজিয়েছি. আর এখন, যখন আমি বেরিয়ে এসেছি আমার সমস্ত খারাপ পর্যায়গুলি থেকে, তখন আমার পাশে সে নেই. কিন্তু সে কি নেই? আছে তো. সেও তো কষ্টে আছে. সে আগেই কষ্টে ছিল. আমাকে খুব ভালবেসেছিল. কিন্তু তার প্রতিদানে আমি তাকে কী ফিরিয়ে দিয়েছি? কষ্ট ছাড়া? তাকে ছোট করেছি. নিজেকে ছোট করেছি. সৎ থাকিনি. আর সেই না সৎ থাকা তাকেও কষ্ট দিয়েছে. আমাকে যে সে খুব ভালবাসত. বড় দেখা করতে ইচ্ছে করছে তোমার সঙ্গে. আমাকে যদি সে বন্ধু হিসেবেও আরেকটু সময় দেয়, তাহলেও আমি অনেক ভালো থাকব. কি জানি আমার জীবনে কি অপেক্ষা করছে! সে যেন আমার মৃত্যুর সময়ে আমার পাশে থাকে. ঈশ্বরের কাছে এটাই আমার প্রার্থনা. না হলে যে মরতেও পারব না আমি.
    কোনো কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বললে মনে হয় গির্জার কনফেসন রুমে বসে আছি. সেখানে সব কথা বলে ফেলা যায়. সে আমার এমনি বন্ধু. তার চোখের দিকে তাকালে এখনো নিজেকে দেখতে পাই আমি. সে আমার কাছ থেকে যায়নি. কোথাও যেতে পারে না. আমি জানি সে যাবেও না. কিন্তু আমি তাকে এভাবে যে ভালবাসি তা আমি আগে কেন বুঝিনি? আগে কেন তুচ্ছ কিছু বিষয়, সামান্য কিছু বিষয় আমাকে তারা করে বেরিয়েছে, যেগুলি থেকে আমি কিছু পাওনি. বেশ ভালো ছিলাম এক সময়ে. জীবনে সরলতা ছিল. ভালবাসা ছিল. জীবনে আশ্রয় ছিল. কিন্তু কোনো মানুষ যদি আত্মহত্যাকামি হয়, তাহলে সে কি কোথাও ফিরতে পারে? সে তো ক্রমশ নিজেকে মারে. অন্য কাউকে কষ্ট দেওয়া মানে তো আসলে নিজেকেই হত্যা করা. এতে কি হয়-- নিজের মধ্যে এক শয়তান জন্ম নেই. শয়তানেরা খুব খারাপ. শয়তান কারো বন্ধু হতে পারে না কখনো. শয়তান যা করে তা হলো জীবন কে ধ্বংশ করে জীবন থেকে হাত সরিয়ে নেই. প্রফেসনাল কিলারের মত. তাকে কে সুপারি দেয় কে জানে!
    একবার ভিআইপি রোডে দেখেছিলাম এক অশীতিপর বৃদ্ধ্হের হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছেন এক অশীতিপর বৃদ্ধা. আমার কাছে কামের থাকলে আমি সেটাকে তুলে রাখতাম. এই সময় এরা এদের জীবনের মাঝি এবং এদের শেষ পারানিও. যারা একে অপরের মাঝি এবং পারানি হয়ে সারাজীবন থেকে যায়, তারাই আসলে একে অপরকে ভালবাসে.
    আমার সমস্যা হলো আমি যে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম তখন তা কেউ বুঝতে চায় না. আমাকে যদি আর একবার সুযোগ দেওয়া হত, তাহলে হয়ত আমার জীবন অন্য রকম হত.
    কী ভাবে লিখতে পারলেন বিনয়দা ফিরে এস চাকার মত কাব্যগ্রন্থ? কী চরম ভালবাসা ও বোধ থাকলে এরকম কবিতা লেখা সম্ভব! পৃথিবীতে এরকম কাব্যগ্রন্থ খুব কম আছে. আমার কাছে গীতাঞ্জলির থেকে ফিরে এস চাকার আবেদন কোনো অংশে কম নয়. ভালবাসা যে ধর্ম হতে পারে, তাকে আধুনিক দেখার চোখে কী ভাবে আবিষ্কার করতে হয়, তা বিনয়দা হাতে ধরে শেখালেন. তাঁর প্রতিটি কবিতার মধ্যে রয়েছে সেই ঈশ্বরী. ঈশ্বরী প্রসঙ্গে মনে পড়ল আমাকে একবার অরুপদা বলেছিলেন ঈশ্বর নেই, ঈশ্বরী আছে. আমি বলেছিলাম যদি এমন কোনো শক্তি থাকে তবে তার লিঙ্গ থাকতে পারে কি? অরূপ দা আমাকে বলেছিলেন- দেখো, ঈশ্বরী আছেন তার কারণ মহাজগত আছে. ঈশ্বরী আছেন তার প্রমান ভালবাসা আছে. ঈশ্বরী আছেন তার প্রমান সময় আছে, সৃষ্টি আছে, প্রলয় আছে, মৃত্যু আছে. তার পর আমাদের কথাবার্তা চলেছিল যৌনতা ও মৃত্যু নিয়ে. যৌনতার মধ্যে যেমন থাকে মৃত্যুবোধ তেমন মৃত্য এক ধরনের যৌনতা. সময়ের সঙ্গে বিলীন হয়ে যাবার যৌনতা. মানুষের তো জীবনে দুবার মৃত্যু হয়. একটা আপাত সময়ের কাছে আসার সময়ে যখন মায়ের জরায়ু থেকে কোনো শিশু জন্ম নেয়, তখন , সে প্রাণ বা শ্বাস নিতে শুরু করে. কিন্তু সেই বাতাস তো তাকে ছাড়তে হবে. সেই প্রথম বাতাস. মৃত্যুর দীর্ঘশ্বাস এক ধরনের সেই বাতাস ত্যাগ করা. জন্ম হচ্ছে এক যৌনতায়, মৃত্যু হচ্ছে আরো এক যৌনতায়.
    প্রতিটি যৌনতা কি এই মৃত্যু কে অনুভব করার সুন্দর রূপ? যেখানে বিলীন হয়ে যাওয়া আছে. যেখানে আত্মবিলুপ্তি ঘটে. ভালবাসার মধ্যেও তো এই আত্মবিলুপ্তি ঘটে. তাই ভালবাসার সঙ্গে প্রতারণা করা আসলে মৃত্যুর সঙ্গে প্রতারণা করা. মৃত্যু কে আমি কোনো নেগেটিভ অর্থে বলছিনা. মৃত্যু এক অত্যন্ত পজিটিভ বিষয়. আমরা মরতে ভয় পাই, তার কারণ আমরা কেউ এটা অনুভব করতে চাই না যে আসলে 'আমি' বলে কেউ নেই. 'আমি' বলে কেউ ছিলনা কখনো. 'আমি' বলে কেউ থাকবেও না. এই যে কবিতালিখি. একটিও সঠিক কবিতা কি আমার লেখা? প্রতিটি কবিতা, প্রতিটি গান তো চারিদিকে ঘুরছে. প্রকৃতি তৈরী করছে সেই সব অনুভূতিমালা. তাকে তো লিখিত হতে হবে. আমার কাজ হচ্ছে নিজেকে উপযুক্ত ধারক করে তোলা. উপযুক্ত কলম করে তোলা. এই এক একটি লেখাও প্রকৃত অর্থে যৌনতা. সময়ের সঙ্গে যৌনতা. 'সময়ের সঙ্গে এক বাজি ধরে পরাস্ত হয়েছি'- লিখেছিলেন বিনয়দা.
    এই বার রাস্তায় পা বাড়ালেই আমার প্রতিটি পদক্ষেপে আসবে সে. আমার প্রতিটি সময়ে আসছে সে. আমার প্রতিটি মুহুর্তে আসছে সে. তার কাছেই সাজানো আছে আমার সমস্ত নিবেদন. কে 'আমি'? কি 'আমার' ? আমি যদি কোনো লেখা লিখি যা সময়ের কাছে থাকার মত, তবে সেই সময় নামক ঈশ্বরী লিখবেন. আর সেই লেখা লিখিত হবে অদৃশ্য এক শিলালিপি হয়ে সময়ের গহ্বরে.
    কী আছে এই জীবনে?
    আলোকবর্ষের পর আলোকবর্ষ ছুটে চলেছে সময়. এই মহাজগতের শেষ নেই., শুরুও নেই. কেন্দ্র-ও নেই. সে আছে.
    কেউ যদি বলেন তুমি আদ্যন্ত মার্ক্সিস্ট ভাবনায় বিশ্বাসী হয়ে এই সব কথা বলছ কী ভাবে! তাহলে তাকে আমি বলব আমি বলছি না. সময় বলছে. আমার কোনো কোনো অনুভূতি যদি ঈশ্বরী চেতনা হয়ে ওঠে তাতে আমার তো কিছু করার নেই. আমি কোনো ধর্ম পালন করছি না. আমি বলছি না এমন কেউ আছেন যিনি আমার মুশকিল আসন. যিনি আমার দেবতা. যিনি আমার দেবী. আমি এসব কিছুই বলছি না.
    আমি সঙ্গমের কথা বলছি. আকাশের সঙ্গে আমার সঙ্গম হয় না? বৃষ্টির ভিতরে আমি কেঁদে উঠি না? মাটির উপর বৃষ্টির সোঁদা গন্ধে আমার মন খারাপ হয়ে যায় না? আমার ইন্দ্রিয়গুলো চনমনে হয়ে যায়না? কোনো মৃত মুখ আমি দেখিনি শান্তি ছাড়া. তেমন কোনো সঙ্গমেই আছে শান্তি. তেমন ভালবাসতেই আছে ঈশ্বরীর সঙ্গলাভ.
    আমার স্বপ্নে দেখে সেই দেবীর মত. যে আমাকে নি:শ্বেষিত করে দেবে. যে আমাকে টেনে নিয়ে যাবে শান্ত ভাবে কোনো এক নদী পেরিয়ে যাবার দেশে., আর তাকে যদি পেয়ে যাই কখনো তখন সেই তো কবিতা.
    আমি বুঝতে পারছি আমি ক্রমশ স্নান করছি. আমি বুঝতে পারছি আমি এবার হয়ত অন্য কোনো লেখা লিখতে পারব. শুধু আমার হাত ছেড়োনা কখনো. মৃত্যু, আমাকে সঙ্গে নাও. আমার কাছ থেকে চলে যেও না. তোমার সঙ্গে হেঁটে হেঁটে আমি তোমার মধ্যে বিলীন হব. আমাকে অনুভব করতে দাও তোমাকে. আমাকে তোমার মধ্যে মুখ ডুবিয়ে দিতে দাও. আমাকে গ্রহণ করো. গ্রহন করো. গ্রহন করো.
    (ক্রমশ)

    Posted by Hindol Bhattacharjee at 5:27 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:৩২577280
  • এলোমেলো আমি-২১
    এই কিছুক্ষণ আগে আমার কথা হচ্ছিল গৌতম ঘোষ দস্তিদার এর সঙ্গে. উনি একজন অত্যন্ত ভালো কবি, লেখক এবং রক্তমাংস বলে অত্যন্ত ভালো একটি পত্রিকার সম্পাদক.নব্বই দশকের শুরু থেকে এটা আরো একটি পত্রিকা যা কবিদের কবিতা প্রকাশের ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে. শুধু তাই নয়, এই পত্রিকার কোনো মেরুকরণ নেই. এবিষয়টি আমার বেশ ভালো লাগে. সেই কবে ছোটবেলাতে আলাপ! কত লিখেছি ওই কাগজে. গৌতম দার উচিত রক্তমাংসের প্রতিটি সংখ্যা নিয়ে একটি সমগ্র প্রকাশ করা.
    গতকাল সন্ধেবেলা আমি দেখছিলাম সত্যজিত রায় এর প্রতিদ্বন্দ্বী. অসাধারণ একটি ছবি. আমি অনেক দিন পর আবার দেখলাম, তাই অনেক কিছু যা প্রথম বার বুঝতে পারিনি, সেগুলি মনের মধ্যে ছাপ ফেলে গেল. এখনো তো একই অবস্থা. বরং আরো খারাপ অবস্থা. সত্যজিত তাঁর সমসময়ে সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে ছবি করেছেন. তুলে ধরেছেন সময়কে. সময়ের সংকটকে. যা তাঁর প্রতিটি ছবিতেইও করেছেন আরেক অসামান্য চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক.
    এবার তাকান এখনকার ছবিগুলির দিকে. ভালো পরিচালকরাও যা ছবি করছেন সেগুলিতে সমসময়ের সংকট কোথায়? ভাবনা এবং বিষয়ের সংকট গ্রাস করেছে আমাদের এই বাংলার চলচ্চিত্র পরিচালকদের. সেই এক সম্পর্ক- এবং সম্পর্ক. যেন যৌন সংকট ছাড়া আর কোনো সংকট নেই আমাদের! আর রাজনীতি নিয়ে কোনো ছবি তো এ রাজ্যের কোনো পরিচালক করবেনই না. রাজনীতি আসবেইনা তাঁদের ছবিতে. সযত্নে পরিহারকরবেন তাঁরা. কারণ স্পষ্ট. কাউকে চটানো যাবে না এখন.
    ষাট- সত্তর দশকেও এই বাংলার মানুষের বুকের পাতা ছিল.
    গত দশ বছরে সব গেছে!
    মাঝেমাঝে দুরে কথাও চলে যেতে ইচ্ছে করে. আমার খুব ইচ্ছে হয় বাংলাদেশে চলে যাওয়ার. ঢাকাতে. কোনো চাকরি কি সেখানে পেতে পারি? আমি জানি না. এই বাংলা কে আর সত্যি নেওয়া যাচ্ছে না.
    মানে, ব্যাপারটা হচ্ছে কি আমার বিবমিষা জাগছে. আমার ভালো লাগছে না. এর প্রভাব পড়ছে শরীরে মনে. পড়ছে দৈনন্দিনতায়., পড়ছে মনের বৈকল্যে.
    যাক গে সকাল বেলায় এ বিষয়গুলি মাথায় না আনাই ভালো.
    আমি আরো দুটো কবিতা লিখেছি.
    আমার এক প্রিয় বন্ধু এখন বাংলাদেশ বেড়াতে গেছে. আমাকে বলে গেছে আমি যেন মদ না খাই. খেলে আমাদের একসঙ্গে আর আড্ডা হবে না! হাহাহা! আমি কবে ছেড়ে দিয়েছি মদ খাওয়া.
    সিগেরেটটা ছাড়তে পারছি না. অথচ বুঝতে পারছি, আমাকে এই অভ্যেস থেকে বেরোতে হবে. না হলে জাস্ট বাঁচব না.
    আর গলায় টিউমার নিয়ে....

    যাক গে কাঁদুনি গাওয়া ঠিক না. আমার চেয়ে অনেক লোক অনেক কষ্টে আছে.
    আজ অষ্টমী. চারিদিকে উত্সবের আমেজ. আমি আজ ছুটিতে.
    গলাটাও বেশ ঝামেলা করছে. তার উপর জ্বর.
    বুকের নিছে বালিশ নিয়ে খাতাটা নিয়ে বসব আজ. অনেকদিন বাদে লিখব. নানা কিছু মাথায় আসছে. আজ ঠিক করেছি দুপুরটা দেখব ভালোভাবে. চুপ করে দুপুরের শব্দ শুনব.
    এই সময়ে যে পালিয়ে গিয়ে কোনো শান্ত জায়গায় যাওয়া যাবে তার জো-টি নেই. কীভাবে যাব?
    আমার সব বন্ধুরাও পালিয়ে গেছে. বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে চলে গেছে.
    যা মনে হচ্ছে তাতে সেই একাদশীতে অফিস করতে হবে.

    আমি অনেক চেষ্টা করছি আমার মাথাটা বেশ শান্ত করে ফেলতে. নির্বিঘ্নে ভাবতে. কিন্তু পারছিনা. প্রতি রাতে দু:স্বপ্ন দেখলে কি হয় নাকি?
    আমি গতকাল এক ভুতুরে স্বপ্ন দেখলাম.
    দেখলাম আমাদের দাদুর বাড়ি গেছি. আমাদের দাদুর বাড়ি একটি গ্রামে . শুনেছি আগে সেখানকার জমিদার ছিলেন তাঁরা. মায়ের তরফে. আর বাবার তরফে আমাদের দেশের বাড়ি ছিল ভাটপাড়াতে. তাঁরা শিবনাথ শাস্ত্রীর বংশধর. আর আমার মায়ের তরফে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের বংশধর. শুনলেই ভয় হয়.
    তো যা বলছিলাম. দেখলাম সেই বিশাল বাড়িতে আমি একা বেড়াতে গেছি. ওখানে একটা ঘর আছে. সুন্দর. আমি সেই ঘরে রাতে বসে শুনছি গাছের ভিতর দিয়ে হাওয়া যাওয়ার শব্দ. এই সময়ে দরজায় খট খট. এত রাতে কে? দরজা টা খুলে কাউকে দেখতে পেলাম না. আমি বারান্দায় বেরিয়ে আসতেই দেখলাম আমার ঘরের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল. আমি বারবার দরজায় ধাক্কা দিয়েও দরজাটাকে খুলতে পারছি না তখন.
    এই সময়ে পায়ের আওয়াজ শুনে আমি তো নিচের দিকে তাকালাম. দেখলাম অপূর্ব এক সুন্দরী মহিলা দাঁড়িয়ে.
    আমি দেখেই নিচে নামতে থাকলাম.
    সেই মহিলাটি তখন দাঁড়িয়ে.
    তার প্রায় চার হাতের কাছে এসে পরেছি এই সময়ে সেই মহিলাটি আমার দিকে তাকালেন. এই সময়ে তাঁকে ভালো করে দেখলাম, তাঁর পরণে অসম্ভব ঝকঝকে একটি শাড়ি. সারা গায়ে অলংকার. আমাকে উনি হাতছানি দিয়ে ডাকলেন. আমি তাঁর সঙ্গে এগিতে গেলাম. আমাদের দাদুর বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো হয় প্রতিবছর. তো সেই জগধ্হাত্রী একটি বিশেষ ঠাকুর ঘরে থাকেন. দেখলাম সেই মহিলাটি সে দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন. আমিও এগিয়ে গেলাম. তিনি দরজাটা খুললেন এবং আমি দেখতে পেলাম একটি নদী.
    আমি আর সেই মহিলাটি তখন সেই নদীর ধরে চলে গেলাম.
    দেখলাম সেই নদীটি একটি খরস্রোতা নদী.
    কোথায় এলাম রে বাবা!
    পিছন ফিরে তাকাতে দেখলাম একটা শ্মশান. প্রচুর মরা পুড়ছে.
    স্বপ্নের মধ্যে আমি তখন খুব শীতে আক্রান্ত.
    আরেক কনে দেখলাম অনেক গুলো বাড়ি.
    সেখানে একটি বাড়ি থেকে আমার মা আমাকে টাটা করছেন. আমার বোন্ যাচ্ছেন বেরিয়ে. আমি টাটা করলাম. আর পাশে দুইর একটি বারান্দা থেকে গার্গী চেয়ে আছে. আমি তাকেও টাটা করলাম.
    দেখলাম আমার যে বন্ধুটি বাংলাদেশ গেছেন তিনি একটি রাফটিং এর নৌকা নিয়ে হাজির, আমাকে বারবার ডাকছেন. আমার হাত ধরলেন সেই মহিলা. আঃ! সে কী স্পর্শ!
    ততক্ষণে আমি ভাবতে শুরু করে দিয়েছি আমি কী দেবী দর্শন করছি?
    কিন্তু আমি তো ঘোরতর নাস্তিক. আমি তো বিশ্বাসী করি না কোনো ধর্ম. জীবনে সে সব পালন করিনি.
    হঠাত দেখলাম আমাকে জোর করে চেপে ধরে দেবী চুম্বন করছেন আমায়. আর সে কী চুম্বন!
    নি:শ্বাস রুদ্ধ করা চুম্বন.
    আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম. তার বুকে মুখ গুঁজে দিলাম.
    একটা কালো পাথরের উপর শুরু হলো আমাদের আদর.
    আর যতো আদরের তীব্রতা বাড়ল, তত আমার নিজের মধ্যে একটা পরিবর্তন তের পাচ্ছিলাম.
    সম্পূর্ণ নগ্ন এক দেবীর সামনে আমিও সম্পূর্ণ নগ্ন.
    আমার সমস্ত চামড়া খসে পড়ছে তখন. আমার সমস্ত দেহ মুক্ত হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে. মনে হচ্ছে শিকর ছিড়ছে কোথাও.
    দুজনে মিলে ঠান্ডা জলে পা রাখতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল.
    রাতে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গলো. প্রচন্ড শীতে. কিন্তু আমার নাকে ভেসে আসছিল এক অদ্ভুত সুগন্ধ.

    কী যে সব দেখি মাঝে মাঝে! এমন স্বপ্ন আমি কেন যে দেখলাম!
    কেউ কি বলতে পারবেন?
    (ক্রমশ)

    Posted by Hindol Bhattacharjee at 9:48 PM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:৩৪577282
  • এলোমেলো আমি-২৩

    সুনীলদা চলে গেলেন. ঘুম থেকে উঠেই খবরটা পেয়ে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না. খুব কষ্ট হচ্ছিল. এ কথা ঠিক যে আমার তাঁর সঙ্গে তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না. মাঝেমাঝে কথা হত ফোনে. তিন-চারবার তাঁর বাড়িতে গেছি আমার বই দিতে. উনি আমাকে কৃত্তিবাসের জন্য লেখা দিতে বলেছেন. পাঠিয়ে দিয়েছি. দু-একবার ফোনে আমার কবিতার বই এবং আমার কবিতা সম্পকে তাঁর প্রশংসাও শুনেছি. তবে কবিতা বা সাহিত্য নিয়ে খুব একটা আলোচনা হত না আমার তাঁর সঙ্গে. আমি দুর্ভাগায় বলা যায়. কিন্তু এটাও ঠিক একধরনের অভিভাবকহীন মনে হচ্ছে এখন. আমার কাছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কোনো মৃত ব্যাক্তি নন. আমার কাছে তিনি জীবিত. কারণ আমার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ কবিতায়, উপন্যাস পাঠে. তাঁর কিছু অনবদ্য ছোট গল্প আমাকে মুগ্ধ করে রাখে. কিন্তু যা আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে রাখে তা হলো তাঁর কবিতা. আমি যতবারই তাঁর কবিতা পরেছি, ততবারই চুম্বকের মত ভেসে গেছি. কোথাও কোথাও মনে হয়েছে এই কথাগুলো তো আমার! ভাস্করদার কবিতা কিন্তু আকাশ থেকে নেমে আসেনি. ভাস্করদা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন সুনীলদার কবিতার দ্বারা. এমনটাই আমার বিশ্বাস. অন্তত ভাস্করদার প্রথম কাব্যগ্রন্থের বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাই সুনীলদার কবিতার ছায়া. অবশ্য প্রকৃত বড় কবির মত ভাস্কর দাও নিজের ভাষাকে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন কবিতার অন্তর্গত বিপন্ন জগতে. ঠিক সে রকমই সুনীলদার কবিতার মধ্যেও আছে ভালবাসা আর বিপন্নতার এক নাগরিক বিস্ময়বোধ. আত্মকথার মত সেই সব কবিতাগুলি আমাদের ভালবাসতে শেখায়. বাঁচতে শেখায়. আবার নিজেকে তাচ্ছিল্য করে যেমন তেমন খুশি বাঁচতেও শেখায়. আসক্তির মধ্যে দিয়ে নিরাসক্তির দিকে যাওয়ার এক অসামান্য কাব্যপ্রতিভা ছিল এই কবির. আমার বিশ্বাস এই কবির কবিতা নিয়ে আমরা আরও কথা বলতে পারব এবং আরও খনন করতে পারব. তাঁর কবিতায় আছে সেই ব্যাক্তিত্ব, যার খোঁজে কবি সারাজীবন মাথা খুঁড়ে মরেন. মানুষ হিসেবেও এমন প্রশান্ত মানুষ আমি দেখিনি. তিনি একজনকে বলেছিলেন- রাগ কোরনা এত. রাগ করলে লিখবে কি করে! পর্বত যেমন থাকে নীরব অথচ বাঙ্ময়, তেমনি ছিলেন সুনীলদা আমাদের কাছে. তাঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে. একটি কবিতা পাঠের আসরে. সে ছবি আমার ব্লগ এ আছে. সেদিন সুনীলদাকে খুব অসুস্থ লাগছিল. কোথাও একটা যাবার তাড়া ছিল. তিনি সেদিন পড়েছিলেন আমার ভালবাসার কোনো জন্ম হয়না মৃত্যু হয় না. সুনীলদার উদ্দেশ্যে আমারও একই কথা বলার.
    দুর্ভাগ্যবশত তাঁর শেষ যাত্রায় আমি যেতে পারলাম না. আসলে আমি খুব অসুস্থ থাকে বিছানা থেকেই তিন-চার দিন উঠলে কষ্ট হচ্ছে. কাজের কারণে আমাকে মাঝেমাঝে এই কম্পিউটার নামক যন্ত্রের সামনে বসতে হচ্ছে. এভাবেই তাঁর মৃত্যুর দিন লিখে ফেলেছিলাম আমার শ্রধ্যার্ঘ্য. রক্তপাত বলা চলে তাকে.
    আসলে মনের মধ্যে সেই সেদিন থেকে ক্রমাগত রক্তপাত-ই হয়ে চলেছে.
    আজ অসংখ্য কাগজে নানা বৃত্তান্ত পড়লাম. শঙ্খবাবুর অসামান্য লেখা আনন্দবাজার'এ এবং এই সময়ে. একই সঙ্গে পড়লাম কবীরদার লেখা. তাঁর সুনীলদাকে নিয়ে লেখা গান. মনটা ভারী হয়ে আছে. পাশাপাশি তসলিমা নাসরিন নামক লেখিকার কান্ডজ্ঞানহীন লেখাটি পড়ে অত্যন্ত বিরক্ত লাগলো. কেন যে কাগজের সম্পাদকেরা এই লেখিকাকে গুরুত্ব দেন কে জানে!
    সহিষ্ণুতা আমাদের বাঙালিদের মধ্যে খুব কমে যাচ্ছে. সুনীলদার মধ্যে ছিল সেই সহিষ্ণুতার জগত.
    আর কত মৃত্যু দেখব আমরা? ভয় লাগে. কষ্ট হয়. আবার একই সঙ্গে মনে হয় এই তো প্রকৃতির নিয়ম. সুধু একটা আফসোস লাগে সুনীলদা. আপনি যদি শুধু কবিতা লিখতেন, তাহলে হয়ত কিছু ক্লাসিক উপন্যাস আমরা পেতাম না. কিন্তু আমি নিশ্চিত, আমরা পেতাম আরও বেশি অসামান্য কবিতা. ব্যাক্তিগত ভাবে কবি সুনীল গাঙ্গুলী আমার কাছে অনেক বেশি বন্ধু. তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায় অনেক.
    তাঁর কবিতার সঙ্গে কথা বলা যায় অনেক.
    তাঁর কবিতার মধ্যে মুখ ডুবিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করে. এই প্রেম, এই কবিতা, এই আবেগ এবং অনুভূতিজগতের বিস্ফোরণ আমি অন্য কোথাও খুব কম পাই.
    তাঁর মধ্যে যে হারিয়ে যাওয়ার কিশোর ছিল, সে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে রয়েছে. আসলে সেই নীল লোহিত-ইতো আমাদের কবি. আমাদের সেই কবি যে দিকশুন্যপুরে হারিয়ে যেতে চায়. তার কি মৃত্যু হতে পারে? আর কে না জানে, এবারই কবি সুনীল গাঙ্গুলী জীবিত হয়ে উঠবেন আমাদের কাছে. সময়ের কাছে.
    ভাস্করদা লিখেছিলেন- চলে যেতে হয় বলে চলে যাচ্ছি, নাহলে তো আরেকটু থাকতাম.
    কবি হলেন এক প্রদীপের মত. যে নিজে শুন্য হতে হতে আলো দিয়ে যায়. আর সেই আলো মরে না কখনো. সময়ের কাছে চিরকাল সে ঘুরতে থাকে. আলোকেবর্ষ পেরিয়ে যায় তার সেই আলো. কবির মৃত্যু হয় নাকি আদৌ?
    (ক্রমশ)
    Posted by Hindol Bhattacharjee at 12:36 AM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:৩৫577284
  • এলোমেলো আমি-২৫

    আজ সকালে একা মোর গানের তরী শুনতে শুনতে মনটা কোথায় হারিয়ে গেল। এ এক অদ্ভুত গান। গানটি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। তাতে একজন বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে আমাকে বলেছেন এ ধরনের গান আর পোস্ট না করতে। এটা শোনার পর থেকেই আমি গানটা নিয়ে ভেবেই চলেছি। কি আছে এই গানটিতে যে একজন গানটি থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন? আমি আবার আজ গানটা শুনলাম। আর আশ্চর্যের ব্যাপার, গানটা শোনার পর আমার কোনো অবসাদ এলোনা। বরং আমি হারিয়ে গেলাম গানের ভিতরের জগতে। একা গানের তরী ভাসিয়ে একজন নদীর ধরে হঠাত একজন এলেন, যিনি গানের সেই নৌকাকে নিয়ে ভেসে পড়লেন। আর যাতে ভেসে পড়তে পারেন সে কারণেই আমি গানের তরীকে ভাসিয়েছিলাম নয়নজলে। আমাদের চোখের জলের যে নদী, সেই নদীর বুকে নৌকা নিয়ে ভেসে পড়তে কে অপেক্ষা করে থাকেন ? কে আসেন সহসা? আর কার জন্যই বা আমাদের যাবতীয় শিল্প নিয়ে আমদের তরী অপেক্ষা করে থাকে? সে কি মৃত্যু? সে কি সময়? আজ সকল থেকে আমি প্রায় কিছুই করে উঠতে পারিনি। রক্ত মাংসের জন্য একটি গদ্য লিখছি সুনীলদার উপর। কিন্তু সেই গদ্যটাও লিখে উঠতে পারছি না। সকল বেলাতে উঠেছিলাম সেই লেখাটা লিখব বলে। পারলাম না। এই একটা গান আমাকে থামিয়ে দিল। মনে হলো আমাদের এই সব শব্দ, সব লেখা , অনর্থক কথা বলে যাওয়া। এগুলো থেকে মুক্তি নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাই। যেখানে কথা বলার নেই। যেখানে চুপ করে থাকার আছে কিছুক্ষণ। যেখানে নিজের ভাবনার সঙ্গে বসবাস করার আছে।
    গতকাল তন্ময় বসুর সঙ্গে মেজাজ নিয়ে কথা হচ্ছিল। একটি টিভি কমার্শিয়াল নিয়ে মিটিং-এ এসেছিলেন তান্ময়দা, অভীক দা। আলোচনা হচ্ছিল ঋত্বিক ঘটক কে নিয়ে। সেই সূত্রেই আলোচনা চলে এলো উত্তর কলকাতায় এলো মন্থরতা বিষয়ে। তান্ময়দা একটা কথা বললেন যেতো ভাবার মত। এই সময়ে প্রায় করর মধ্যে সেই সময়টা নেই যে সময়ে তারা রাগ সঙ্গীতের ক্ষেত্র নিয়ে ভাবতে পারে। মানে রাগ সঙ্গীত কে বুঝতে গেলে আমাকে তার আলাপ , ঝালা সব কিছুই জানতে হয়। কিন্তু মানুষ এখন চটজলদি সব কিছু চায়। আর আরো একটা ব্যাপার হলো সব মানুষের মধ্যেই একটি বিষয় চলে এসেছে যে তাদের সব বিষয়েই মন্তব্য করতে হবে। কোনো বিষয়কে না জেনেও মন্তব্য করতে হবে। এই সোসাল নেট ওয়ার্কিং সাইট গুলিতে চটজলদি মন্তব্য বা পছন্দ ছুঁড়ে দিলেই তার কাজ শেষ। রাজনীতি থেকে সামাজিক সমস্ত বিষয়ে, শিল্প থেকে বিজ্ঞানে, লাইক এবং মন্তব্যের পরেই তারা আর ভাবতে উত্সাহী নয়। ইটা একদমই এই প্রজন্মের বিষয়, কিন্তু এই প্রজন্মের এই অভ্যাসের মধ্যে যে অসংখ্য মধ্যবিত্ত মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ এতদিন ধরে নিজেদের তাত্ক্ষনিক অভিপ্রায়্গুলিকে প্রকাশ করতে পারছিলেন না, তারা পেয়ে গেছেন তাদের আত্মপ্রকাশের রাস্তা। আপাত দৃষ্টিতে এটা ভালো। কিন্তু যখনি বিষয়টি নিয়ে ভাবার প্রসঙ্গ চলে আসবে, তখন বলতেই হয়, এর মত ক্ষতিকারক দিক আর কিছু নেই। আগে একটি কবিতা লেখার পর কবিকে বাধ্যতামূলক ভাবেই লেখাটি নিয়ে বসে থাকতে হত হয়ত বিভিন্ন কাগজগুলি থেকে লেখাটি ফিরত চলে আস্ত। আমরা তো পরেছি যে আগে বুদ্ধদেব বসু এক একটা কবিতা পরে তাঁর মতাৎ চিঠি লিখে পাঠাতেন কবিকে বা লেখক কে। সেই কবি বা লেখকের সঙ্গে কবিতা বা লেখাকে পরিমার্জনা করার বিষয়ে আলোচনা চলত। চিঠিতে। তার পর সেই কবি বা লেখক লেখাকে পরিমার্জনা করার পরে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ লেখা তৈরী হত। তার পর সেই লেখা প্রকাশিত হত। কিন্তু এখন লোকে লিখে ফেলেই ফেসবুকে তুলে দিছে। ২৫০ লাইকপড়লেই তারা ভাবছেন কি না কি হয়েছে লেখাটির। এবং তাদের মধ্যে লেখাকে শুকোতে দেবার কোনো মানসিকতা কাজ করছে না। লেখাকে শুকোতে দিলে লেখা থেকে অনেক অনাবশ্যক মেদ ঝরে পরে যায়। আমার নিজের ক্ষেত্রেই বলতে পারি, জিজ্ঞাসা পত্রিকায় তখন সম্পাদক ছিলেন শিবনারায়ন রায়। আমি কবিতা পাঠিয়েছিলাম কিছ্হুদিন বাদে একটি চিঠি এলো। তিনি দেখলাম একটি দীর্ঘ চিঠি লিখেছেন আমাকে। তাতে আমার পাঠানো কবিতাগুলির মধ্যে কোন পাঁচটা কবিতা ছাপা হবে এবং কেন হবে, তার সঙ্গে , কোন কোন কবিতা কথাও ছাপা হবার যোগ্য না এবং কেন না, এবং কোন কোন কবিতায় কিরকম পরিবর্তনের কথা ভাবলে কবিতাগুলো প্রকাশের যোগ্য হে উঠতে পারে তার একটি বিনীত প্রস্তাবনা। এমন ভাবে লিখেছেন যে তাঁকে বন্ধুই মনে হবে, কোনো সম্পাদক না। এমন উনি কিন্তু একজন প্রকৃত সম্পাদকের কাজটাই করলেন।
    এই সময়ে দাঁড়িয়ে এই ধরনের লোক আর খুঁজে পায়না। চারিদিকে এত পত্রিকা, যে কোনো একটা পত্রিকা কবিতা না ছাপলে সঙ্গে সঙ্গে অন্য কোনো পত্রিকায় চাপানো যাচ্ছে। এটা খুবই ভালো একটা দিক যে পত্রিকা এবং ওয়েব পত্রিকার সংখ্যা বৃদ্ধিতে কত কবি মরে গেল চুপি চুপি একা একা-এর সম্ভাবনা আর নেই। আবার একই সঙ্গে তারা কবিতা ভালো করে লেখার আগেই কবি হয়ে উঠছে এটাই ভাবনার। আমি নিজেকে নিয়েও এই সময়ে ভাবছি। আমি ঠিক কি করতে চাইছি? আমাকে তো লিখতে হবে। আমি জানি সেখানেই আমার মুক্তি। এবং তার জন্য অযথা শব্দের অপচয় বন্ধ হওয়া দরকার। তার জন্য আবার নিভৃতে চলে যাওয়া দরকার। আমি ভাবছিলাম আমি হয়ত অনেকের থেকে দুরে বসে আছি কিন্তু আমি নিজের মধ্যেও ঢুকতে পারছি না হয়ত এই সব সামাজিক প্লাটফর্ম এর কারণেই।
    কিন্তু এই সব কথা এলো কেন? একা মোর গানের তরী থেকে। একা শব্দটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ওই নদীর ধরে বসে থাকাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
    যারা আত্মজীবনী লেখার জন্য ছটফট করতে থাকে, তাদের কাছ থেকে মন্থরতা চলে যায়। আমরা যদি ভুলে যাই যে আমাদের রক্তের মধ্যে আছে নদীর জলের স্রোত, সেখানে ছলাৎ ছল শব্দ হচ্ছে আর তার সঙ্গে হয়ত সূর্য আস্ত যাচ্ছে, যেখানেই থাকি না কেন, আসলে একটা স্রোতের ধরে চুপ করে বসে আছি আমরা, তাহলে আমরা সমকালীন সময়ের দাস ছাড়া আর কিছুই হব না। আর আমার তাতেই আপত্তি এবং তাতে আমার মনে হয় জীবনের ক্ষয় হয় অনেক বেশি। জীবনের ক্ষয় করতে যাব কেন আমি? আমি তো অবসাদগ্রস্ত হতে চাইছি না। আমি ছিছি বিষাদের মধ্যে যে বড় দু:খের কথা আছে তাকে আমার সম সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করতে। সে আছে। সে মাঝে মাঝে আসে। তার জন্য ওই অপেক্ষা করে বসে থাকতে হয়। না হলে সে তো পালিয়েই যাবে।
    আমি বোধহয় এতদিনে বুঝতে পারছি ভাস্করদার, অরুপদার, সন্দীপন দার জীবনটাকে। বুঝতে পারছি আমি কেন অনেক দিন কিছু লিখতে পারছি না। দেখি। আমার নিজেকে খোলনলচে পাল্টানো দরকার। মানে, আমার ফিরে যাওয়া দরকার আবার প্রথমে। যেন বা আমি এতদিনে কিছুই লিখিনি। জীবনের প্রথম কবিতাটা লেখা হয়নি এখনো। আমাকে ভুলতে হবে আর চোখ কান সমষ্টি ইন্দ্রিয় খুলে রাখতে হবে। আমাকে অপেক্ষা করতে হবে চুপ করে। বড্ড বেশি কথা বলছি আমি। আমাকে চুপ করে যেতে হবে।
    আর তা না হলে এমনি যেমন আছি, তেমন ভাবে না ঘরকা, না ঘাটকা হয়ে কাটিয়ে দিতে হবে একটা গত জীবন। আমি বুঝতে পারছি আমি বিচ্যুত হয়েছিলাম। আশা করি আমি ফিরে আসতে পারব।
    নিজের ভিতরের এই ছটফটানি কিসের জন্য?
    শান্ত অবস্থায় অস্থির হাত কি যায় না?
    গাছের পাতার মত? যখন সে রান্নাঘর, তখন সে শান্ত। সে তো মৃত্যুর আগেই শুকিয়ে গিয়ে ছটফট করতে থাকে। এই মৃত্যু তো আমি চাইনি। চাই না।
    (ক্রমশ)
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:৩৫577283
  • এলোমেলো আমি-২৪

    আবার হেমন্তকাল. শীত আসছে. অদ্বুত একটা আলো দেখা যায় মাঝেমাঝে এ সময়ে বিকেলবেলাতে. সেই আলো খুব মন কেমন করা আলো. মা-বোন বেড়াতে গেছে. বাড়িতে একা কয়েকদিন জ্বর এর সঙ্গে যুঝলাম আর দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামল. দেখলাম. মাঝেমাঝে জানলা থেকে মুখটা বার করে দেখার চেষ্টা করলাম নীল আকাশ. সাদা সাদা মেঘ. মনে পড়ে গেল শরত তো বিদায় নিয়েছে. এসে গেছে হেমন্ত. আর কয়েকদিন পরেই শীত আসবে. এই সময় আলো যখন ঝুপ করে নিভে যায়, তখন খুব মন খারাপ হয়. এর আগে আমি যখন কিছুই করতাম না, তখন মাঝেমাঝে গঙ্গার ধরে গিয়ে বসে দেখতাম হেমন্তের বিকেল. পা ডুবিয়ে রাখতাম জলে. আমার পায়ের পাতায় কে যেন ডাক পাঠাত. কে যে সে! এই সময়ে পুরনো বাড়ির রং আর দেয়াল গুলি থেকে বেরোনো গাছগুলির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে খুব বুড়ো হয়ে যাই বলে মনে হয়. এই মনে হওয়া এখনকার না. সেই কোন কৈশোর থেকে এই মনে হওয়া. কৈশোর থেকেই আমার এই সময়ে কেমন যেন জ্বর জ্বর ভাব আসে. যদিও অনেক সময়েই এবারের মত জ্বরে আক্রান্ত হই না. পাহাড়ে আবার এই সময়টা দারুন. পাহাড়ে গেলে এই সময়ে মন খারাপ হয় না. আমি একবার চোপ্তার পাহাড়ি ঢালে দেখেছিলাম কীভাবে সূর্য আস্ত যাচ্ছে. ওহ! সে অসংখ্য সূর্য! অসংখ্য মৃত সূর্য. একটি একটি করে উপত্যকা পেরিয়ে সে নামছে আর তার লাল কমলালেবুর মত শরীরে দেখতে পাচ্ছি পাহাড়ের ছায়া. কোন সে পাহাড় কে জানে! এ সময়ে পাহাড়ের একটা অন্য সৌন্দর্য আছে. উপরে বরফ পড়া শুরু হয়ে যায়. পাহাড়ের মাথাগুলো বরফে ঢাকা থাকে. আর একটা সুন্দর হাওয়া বইতে থাকে চারিদিকে. সেখানে কেন যে মন খারাপ হয় না জানি না. কিন্তু এই হেমন্তকাল আমার কবিতা লেখার প্রিয় সময়. আমার জীবনের অধিকাংশ কবিতা আমি লিখেছি এই সময়ে. এই সময়ে কলকাতা আর মফস্বলের রাস্তাঘাটের চেহারায় বদলে যায়. একটা অসামান্য গন্ধ বইতে থাকে চারিদিকে. সেই গন্ধের ভিতরে থাকে অনেকটা মৃত্যুর মত স্নেহ. আমার মনে পড়ে সকলকে. জীবনানন্দ দাশ যেমন লিখেছিলেন কোনো কোনো অঘ্রানের অন্ধকারে হেঁটে যাওয়া শান্ত মানুষের / হৃদয়ের পথে ছাড়া মৃতের কোথাও নেই মনে হয়. আচ্ছা মৃতের সত্যি কোথাও নেই? লীন হয়ে গেলে তারা সত্যি লীন হয়ে যায়? যেহেতু নাস্তিক আমি, তাই অন্য কিছু কল্পনাও করি না. তবে কাল শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম যে এই নাস্তিকতাও একটা ধর্মের মত. নাস্তিকতাও এক ধরনের আস্তিকতা. ধর্ম যেমন জীবন, চেতনা, বিশ্বাসের মধ্যে এক ধরনের অনুশাসন তৈরী করে তেমন নাস্তিকতাও করে. নাস্তিকতা কল্পনা করতে দেয় না. এর মানে এ নয় যে আমাকে পরম ভক্ত হতে হবে. আবার এর মানে এও নয় আমার কল্পনার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে হবে. আমি তো স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না. মানে আমি আমার অবচেতন কেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা. তাহলে আমার সচেতন অস্তিত্বে ভাবনার ভিতরে নিষেধাজ্ঞা চাপাব কেন? আমি কি আসলে কিছুই জানি? জানি না তো.
    এই যে অকারণে মনটা খারাপ হয়ে আছে আমার তার কারণ কি? সেই কারণটা কি খোঁজার খুব একটা দরকার আছে? এই যে মন খারাপ লাগছে আর আমি এক নিমেষে রোদ্দুরের দিকে চেয়ে ছিলাম. সকাল্বেলাতে কী উজ্জল লাগছে চারিদিক! আমার ত্বক খুব শুকিয়ে গেছে. কিছু লাইন মাথার ভিতরে মনের ভিতরে গুনগুন করে উঠলো. আমি খাতাটা তুলে নিয়ে লিখতে শুরু করলাম. লিখলাম. লেখাটা হলো কি হলো না জানি না. হয়ত হলো. আগের মত তো আর জানার ইচ্ছে করে না কে কি বলল. শুধু এক চরম উত্তেজনা কাজ করে লেখার পরেই. মনে হয় বেঁচে থাকাটা সার্থক হলো. কিছু কথা বলতে পারলাম. আরো কিছু কথা.
    আমার একটা সমস্যা আছে. আমার সঙ্গে যারা মৌখিক কথা বলে তাদের সঙ্গে আমি যে কী বলি.. তারা যথারীতি ভুল বোঝে. আমি কিন্তু তাদের কোনো ক্ষতি করতে চাইনা. অপমান করতে না, দু:খ দিতে না. আমি শুধু এটুকু বুঝতে পারি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমি কথাটা ঠিক বলতে পারি না. কাজের জগতে কথা বলার একটা বিশেষ ধরন আছে, বিষয় আছে. ফলে আমার অসুবিধা হয় না. কিন্তু যখনি মনের কথা বলতে গেছি, তখনি আমি ব্যর্থ. এর কারণ হিসেবে আমি দেখেছি আমি সবসময়ই আমার মনের সঙ্গে কথা বলতে বিশেষ সাচ্ছন্দ বোধ করি. এবং আমি যদি কোথাও আমার কথা বলতে পারি তবে তা আমার লেখায়. কী আশ্চর্য আমি মানুষের মত না তাহলে! এ কারণে অনেকের সঙ্গেই আমার ভুল বোঝাবুঝি হয়. হয়ত আমার এই ধারাবাহিক ভাবে একা থাকাই এর কারণ.
    তাহলে কি আমার ভিড়ের মধ্যে মিশে যাওয়া উচিত? উচিত কেন তবু এমন একাকী না বলে একা থাকার গল্পটাকেই জীবন থেকে দূর করে দেওয়া?
    আমার এক বন্ধু বলেছেন এই এলোমেলো আমি লেখা আমার বন্ধ করে দেওয়া উচিত, এতে নাকি আমার ক্ষতি হতে পারে. তা হোক গে যাক. কী আর ক্ষতি হবে! আমি তো কোনো সময়েই মেপে মেপে কোনো কাজ করিনি. এখনো করছি না. আমার মনে যা আসছে আমি লিখে রাখছি.
    যাই হোক.
    অনেক মদ খেলে যেরকম মাথাটা থাকে আমার মাথাটা তেমন এখন. কী একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছি. এই ঘোর আমার পরিচিত অনেকেই ঠিক পছন্দ করতে পারেন না. তাতে আমার কিছু করার নেই. এই যে আমি এখন কোথাও যাই না. শুধু নিজের মধ্যে থাকি.. মাঝেমাঝে শুধু মনে হয় দুরে কোথাও বেরিয়ে পড়ি. তাও একা একা. আসলে একা ঘোরার মধ্যে একটা সুন্দর ব্যাপার আছে. যে জায়গায় যাই, সেখানকার সঙ্গে আমার আত্মা কথা বলে. সেখানকার রাস্তার বাঁক, গাছ, মানুষের মুখ, বিমর্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ি, তার ভিতর থেকে ঠিকরে আসা মানুষের গল্প, টুকরো টাকরা কথাবার্তা, আলোর আভাষ, অন্ধকার- আলোর লুকোচুরি, গন্ধ, - সব কিছুর সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক তৈরী হয়. এই সম্পর্কটা আমাকে ঋদ্ধ করে.
    গতকাল অনেকদিন পর অলোকদার সঙ্গে কথা হলো. কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত.
    কিন্তু যার টেলিফোন আসার কথা তার টেলিফোন আসেনি.
    হয়ত আসবেও না কখনো. আমার মনের মধ্যে এখন একটা সোঁদা মাটির রাস্তা ছুটে চলেছে.
    তুমি কি আসছো?
    (ক্রমশ)
    Posted by Hindol Bhattacharjee at 10:59 PM
  • Hindol | 123.2.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০১২ ১৯:৩৭577285
  • এলোমেলো আমি -২৬

    জীবনটা খুব বিরক্তিকর ভাবে কাটছে। হেমন্তকাল তার সর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বছরটা বুড়ো হয়ে পড়েছে খুব। এই সময়ে মাথার ভিতরটা খুব জমে ওঠে। বিশেষ করে রাত মানেই খুব বিরক্তিকর। সন্ধে হওয়া মানেই এক অবসাদ এসে আঁকড়ে ধরে আমাকে। আমি এই অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করি না। এখানেই মজাটা। আমি কি তবে ভীষন মাত্রায় দু:খবিলাসী? কিন্তু তা তো নয়। আমি যখনি খুব আনন্দে থাকি, তখন আমি বুঝতে পারি খুব ক্ষনিকের এই আনন্দ। বিষাদ আর অবসাদের মধ্যে জায়গায় আসতে আসতেই কি তবে আমার হেমন্তকাল ঘনিয়ে আসবে এরকম?
    আজ সন্ধেবেলা মনে হচ্ছে আমার আর বিশেষ কিছু হবার নেই। জানি এই মনে হওয়াটা খুব নেগেটিভ। কিন্তু কি করব? আমার যে সেরকমই মনে হচ্ছে। আর কি বা হবার আছে, থাকতে পারে? এই দিনগুলো আমার মনে হয় ভাবনাহীন ভাবে কাটিয়ে দেয়ায় ভালো। কারণ সত্যই আমার মনে হয় না আর কিছু লিখতে বা ভাবতে পারব! সত্যি কি ভয়ংকর একটা জীবন কাটাচ্ছি তাই না?সারাদিন আমি যা চাই না তাই করে বেড়াচ্ছি। সারাদিন ধরে আমার শরীরে এক যন্ত্র ঘুমিয়ে থাকে। তাকে যখন ধাক্কা দেওয়া হয়, তখন সে জেগে ওঠে। সময়ের নিয়ম অনুসারে, চাহিদা অনুসারে তাকে চলতে হয়। চলাটা তার ইচ্ছেমত না হলেও সে তো তখন মডার্ন টাইমস -এর মত। অভ্যেস এবং ইনার্শিয়াতে চলছে, যার সঙ্গে তার মনের কোনো সম্পর্ক নেই।
    আমি ভেবে দেখেছি, আমার ভিতরের মানুষের সঙ্গে বাইরের পৃথিবীর কোনো সম্পর্ক নেই। ইটা একটা ঘটনা যে সমসময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে সেই ব্যাক্তি ক্রমশই সমসময় থেকে অনেক দুরে সরে যায় এবং তার হয়ত মৃত্যুও হয় সকলের অজ্ঞাতসারে। মৃত্যু কি সকলের অজ্ঞাতসারেই হওয়া ঠিক নয়? এই প্রসঙ্গে মনে পড়ল আবার একটি স্বপ্নের কথা। আমি কয়েকদিন আগে স্বপ্নে দেখছিলাম আমার বাড়ির যে একটা সুন্দর চন্দ্রমল্লিকা গাছ আছে, সে মারা যাচ্ছে আমি স্বপ্নে দেখলাম সেই গাছটি আমার মাথার আমার কপালের উপর নুয়ে পড়েছে। আমার মাথার ভিতরে সে তার স্পর্শ রাখার চেষ্টা করছে। কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। আর একটা হাত, কার হাত তা আমার জানা নেই, সে গাছটাকে ধরে মাটি থেকে তুলে আমার বুকের উপর দিল মৃত সেই গাছটার দিকে তাকাতে তাকাতে আমি চিত্কার করে উত্ছি কিন্তু কেউ কোনো কথা শুনছে না। হঠাত আমি আবিষ্কার করলাম যে আমার হাত আর পা মাটির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। আমার আঙ্গুলগুলো থেকে তৈরী হচ্ছে শিকর। আমার পা থেকে বেরিয়ে পড়েছে শিকর। আমার মুখ হাত সব কিছুর রং কচি সবুজের মত। তার পর আর কিছুই জানি না।মানুষ তো এক রকমের গাছ। লিখেছিলেন কোনো এক কবি। মনে পরে গেল।
    না ঠিক এভাবে জীবনটাকে কাটাতে চিনি আমি। সে এখন কি করছে? খুব রোগা হয়ে গেছে কি?
    এখনো কি তার আমার কথা মনে পড়ছে?
    সেদিন দেখলাম আমার কথা মনে রেখে আমার এক বন্ধু বাংলাদেশ গিয়ে বরিশালের মঠ -এর ছবি আমাকে পাঠিয়েছে। কী ঘনিষ্ঠ ভাবে মঠ গুলি একে অপরের গায়ে গা লাগিয়ে শুএ আছে। যারা হয়ত কখনো কাছাকাছি আসার সুযোগ পায়নি তারা পাশাপাশি শুয়ে আছে। চারিদিকে গাছ। ঝরা পাতা এসে পড়েছে। আমার জানার খুব ইচ্ছে হয় ঠিক কেমন গন্ধ ওই জায়গাতে! কিন্তু সেখানে না গেলে গন্ধটা না। যেরকমই হোক আমার বিশ্বাস, গন্ধটা খুব মন কেমন করা। গন্ধটা খুব সুন্দর। খুব গন্ধ। আমার জীবনে এই গন্ধ ঘুরে বেড়ে। আমি বিশেষ করে এই হেমন্তকালে সেই একাকী গন্ধটা পাই। আমি দেখেছি আমার জীবনে, যে হেমন্তকালের সঙ্গে আমার লেখালেখির একটা আশ্চর্য সুন্দর সম্পর্ক আছে। আমি এ সময়ে প্রবল বিষাদে থাকি। আমি জানি আমাকে অনেক মানুষ আমি তার বা তাদের সময় দি। এই চাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমি যে চরম এক অস্বাভাবিক প্রাণী। ক্রমশ এবং ক্রমশ সম্পর্ক থেকে আমি হয়ত দূরে সরে যাব। এখন মাঝেমাঝেই আমার সমস্ত সরির আর কোনো কাজ করে না। ইচ্ছে হয় এই যে লিখছি এভাবেই লিখতে লিখতে সব কিছু ভুলে যাওয়ার একটা জগতে পৌছে যেতে। ইচ্ছে করে এমন এক বেদনার মধ্যে মরে যেতে যাতে আর কোনো কথায় আমার মনে না থাকে। কিন্তু আমার মনে হয় জীবন মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি নিষ্ঠুর।
    অবশ্যই জীবন মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি নিষ্ঠুর। মৃত্যু আসে আর কলিং বেল না বাজিয়েই তার ইচ্ছেটা পূর্ণ করে চলে যায়। জীবন ধীরে ভরে যে মানুষ সব হারিয়ে ফেলেছে, তাকে আরও বেশি রিক্ত করে মেরে থাকে। একজন মানুষ যখন নিজে থেকেই বুঝে গেছে তার বেঁচে থাকা মানে আর সুধু বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে থাকা, তখন জীবন তাকে খুরর কল দেখায় তাকে বোঝায় -- আশাবাদী হয়ে ওঠো। তোমার অনেক কিছু করার আছে। তোমার অনেক কিছু পাওয়ার আছে, দেবার আছে। এসবি ভুল। কিন্তু মানুষ বিশ্বাস করতে চায় যে যাবতীয় বিষাদ সত্তেও আসলে তার অনেক কিছু করার আছে। এই যে অনর্থক বাক্যব্যয়, এই যে অনর্থক বেঁচে থাকার নিরন্তর চেষ্টা করে যাওয়া, এর মধ্যে যুদ্ধ করে তাকে বাঁচতে হবে। সে যে জীবনটা পেলে সত্যি কিছু করতে পারত, তা সে না পেলেও তাকে কষ্ট করে যেতে হবে সেই জীবনটা পাবার জন্য।
    আমি জানি এই যে বেঁচে আছি এটাই অনেক বেশি পুরস্কার কিন্তু এই বেঁচে থাকাটা পুরস্কার তাদের ক্ষেত্রেই যাদের আছে বেঁচে থাকার অন্য কোনো কারণ। সম্পূর্ণ বিষাক্ত একটা জীবন নিয়ে বেঁচে থাকাটা দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত হয়ে বেঁচে থাকারই মতন। কিন্তু এই বেঁচে থাকার কোনো মানে আছে কি?
    আমি সকলের মুখ দেখি। আমার কালো সিনেমার মত লাগে। সকলের মুখে কি আশ্চর্য প্রাণশক্তি! তোমাদের প্রনাম জানায়। তোমরা পর বিষাদকে আড়াল করে বা ভুলে গিয়ে কিছু কিছু উদ্দেশ্য কে মাথায় রেখে বেঁচে থাকতে। কিন্তু যার সেই সব উদ্দেশ্য নেই সে কি করবে ?
    আগামীকাল আর রবিবার আমার ছুটি।
    আমি কি কোনো তীব্র ঘুমের ওষুধ খেয়ে
    ঘুমিয়ে থাকব ?
    (ক্রমশ)
    Posted by Hindol Bhattacharjee at 4:16 AM
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন