এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • রাগ দরবারীঃ শ্রীলাল শুক্লা

    ranjan roy
    বইপত্তর | ২৪ অক্টোবর ২০১২ | ৭৯১২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 24.99.***.*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৬:৩৮574691
  • এই ঘটনায় বাস্তবে ওই বিদ্বানদের অযোগ্যতার বদলে আমাদের দেশের বিশেষ যোগ্যতাই প্রমাণিত হল।
    আজকাল আমাদের দেশ ধনবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, রাজনীতি বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ইত্যাদির জগতে তুড়ি মেরে এমন সব কঠিন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে যে আমেরিকায় দামী কাগজে ছাপা অমূল্য সব থিওরি এর সামনে নাকখৎ দেয়। তারপর এগুলোর সমাধান খুঁজতে বড় বড় ভারতীয় বিদ্বানের দল ঘাবড়ে গিয়ে আবার আমেরিকা দৌড়য়। এই ছেলেটার কেস-হিস্ট্রি নিয়েও এমন ঝড় বয়ে গেল যে একজন নামজাদা বিজ্ঞান তো প্রতিজ্ঞাই করে বসলেন যে ওনার আগামী আমেরিকা যাত্রাতে উনি এই সমস্যার ওষুধ খুঁজে বের করবেন।
    ছেলেটা শিবপালগঞ্জের ইতিহাসের আকাশপটে হঠাৎ দু-তিন বছরের জন্যে উদিত হয়ে চমক সৃষ্টি করল। তারপর পুলিসের গুঁতো, উকিলের তর্ক আর ম্যাজিস্ট্রেটের শাস্তিকে নির্বিকার ভাবে হজম করতে করতে কিশোর অপরাধীদের কারাগারের এক অভিন্ন অংগ হয়ে গেল। সেখানেই জানা গেল যে ছেলেটার ব্যক্তিগত চরিত্র দেশের স্কলারদের জন্যে বিশেষ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ওর সমাধান খুঁজতে ভারত ও আমেরিকার মৈত্রীর সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। এই গল্পটা শিবপালগঞ্জ অবধি পৌঁছতে পৌঁছতে মিথ হয়ে গেল। তারপর থেকে এখানে ছেলেটার লীলাপ্রসংগ বড় গর্বের সঙ্গে করা হয়।
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৭:৩৫574692
  • ডিঃ শেষ লাইনটা হবেঃ
    তখন থেকে বৈদ্যজীর বৈঠকে ছেলেটার 'লীলাপ্রসংগ' নিয়ে বড় গর্বের সংগে আলোচনা করা হয়।
  • ranjan roy | 24.99.***.*** | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০১:০৫574693
  • রঙ্গনাথ জেনে গেল যে ওই ছেলেটা দশবছর বয়সেই এমন জোরে দৌড়তো যে পনের বছরের ছেলেরাও দৌড়ে ওকে ধরতে পারত না।এগার বছর বয়স পুরো হওয়ার আগেই ও টিকিট চেকারকে কাঁচকলা দেখিয়ে বিন্‌টিকিটে ট্রেনে চলাফেরা করতে ওস্তাদ হয়ে উঠ্লো।তার একবছর পরে ও যাত্রীদের মাল চোখের পলকে এমন ভাবে গায়েব করতে লাগল যেন বড় সার্জন লোক্যাল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়েই অপারেশন করছেন আর টেবিলে শোয়া রোগী টের পাচ্ছে না যে ওর শরীরের কোন অংগ বাদ চলে গেছে।
    এই ধরণের চুরিচামারিতে ওর বিশেষ নাম হল কারণ ও একবারও ধরা পড়ল না।পরে, বছর চোদ্দয় পড়লে ও যখন প্রথম ধরা পড়ল,তখন জানা গেল যে ও ওপরের কাঁচ ভেঙে ভেতরের ছিটকিনি খোলার কাজে হাত পাকিয়ে ফেলেছে।
    বড় বড় বাংলোতে চুরি করে কিন্তু স্কাইলাইট দিয়ে নয় , সদর দরজা দিয়েই ও কায়দা করে ভালমানুষের মত ঢোকে,
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০১:৪২574694
  • এই ছোঁড়াটার প্রশংসা করতে করতে কেউ বহরাম চোট্টার প্রসংগ এনে ফেলল। কোন এক যুগে ওকে এই এলাকায় ইতিহাসের প্রবাদপুরুষ বলা হত। কিন্তু ওই নাম শোনামাত্র একটা ছোকরা খুব চেঁচামেচি করে বাধা দিতে লাগল আর ও বিধানসভার স্পীচের আদলে কোন যুক্তি ছাড়া শুধু গলাবাজি করে প্রমাণ করার চেষ্টা করতে লাগল যে বহরাম চোট্টাও কোন চোর? আরে রামস্বরূপ বারো বছর বয়সে যা করে নিয়েছে তা বহরাম সারা জনম ধরে নাড়ালেও নড়বে না।
    এইসব কথাবার্তা রঙ্গনাথের চোখে দুই প্রজন্মের লড়াই বই নয়। ও শনিচরকে জিগ্যেস করলঃ' আজকালের চোট্টারা কি সত্যিই একেকটা রঘু ডাকাত? আগেও তো একের পর এক ধুরন্ধর সব চোট্টা ছিল।'
  • ranjan roy | 24.99.***.*** | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০০:৩৯574695
  • শনিচরের বয়েসটা এমন যে ওকে নবীনেরা ভাবে প্রবীণের দলে, আর প্রবীণেরা নবীনের। ওর বয়েস নিয়ে দুই প্রজন্মের মধ্যে কোন বৈজ্ঞানিক মতভেদ নেই। কাজেই ওর কারো মতে সায় দেবার কোন দায় নেই। সাহিত্য-শিল্প বিষয়ে গন্ডা গন্ডা আধপাকা- পুরোপাকা সমালোচকের দল যেমন নিজের কোন স্প্ষ্ট মতামত দেয়া এড়িয়ে যান, তেমনি ও বলল,' ভাইয়া রঙ্গনাথ, পুরনো লোকেদের কথা আর বোলো না। ছিলেন এক ঠাকুর দূরবীন সিং, আমি নিজে দেখেছি। তবে আজকালকার ছেলে-ছোকরার দলও কম নয়, কোন কথা হবে না।

    ' আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগের কথা, যখন আজকালের ছোকরা জন্মায় নি, আর যদি জন্মেও ছিল তোঃ
    যশস্বী রহেঁ হে প্রভো! হে মুরারে!
    চিরঞ্জীব রানী ও রাজা হমারে!
    অথবা
    'হে ঈশ্বর, জর্জ পঞ্জুমের রক্ষা কর, রক্ষা কর' কোরাস গাইবে বলে।
    শিবপালগঞ্জের সবচেয়ে প্রমুখ 'গঞ্জহা' ব্যক্তিটির নাম ঠাকুর দূরবীন সিং। বাপ-মা ছেলের নামের সঙ্গে' দূরবীন' শব্দটি জুড়ে দিয়ে হয়ত আশা করত যে ছেলেটি সব কাজ বৈজ্ঞানিক ঢংয়ে করবে। বড় হয়ে উনি তাই করতে লাগলেন। যে ব্যাপারে ওনার রুচি হয় তাকে একেবারে গোড়ার থেকে সাপটে ধরেন।উনি ইংরেজি আইন একেবারে পছন্দ করতেন না। তাই যখন মহাত্মা গান্ধী মাত্র লবণ অ্যাক্ট ভাঙতে দান্ডী যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন দূরবীন সিং ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের সমস্ত ধারাগুলো এক এক করে ভাঙার জন্যে বুনিয়াদী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন।
  • ranjan roy | 24.99.***.*** | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০০:৩৪574696
  • উনি একটু পরোপকারী স্বভাবের। এখন পরোপকার হল একটি ব্যক্তিবাদী ধর্ম যার ব্যাখ্যা প্রত্যেকে নিজের হিসেবে করে থাকে।
    কেউ পিঁপড়েদের আটা খাওয়ায়, কেউ অবিবাহিত প্রৌঢ়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজের গলায় ' সর্বদা প্রেম করিতে প্রস্তুত' গোছের তক্তি ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়,কেউ হয়ত অন্য কাউকে সোজাসুজি ঘুষ নেয়ার বিড়ম্বনা থেকে বাঁচাতে ঘুষ দেনেওলা পার্টির সঙ্গে সিধে সম্পর্ক বানিয়ে দিনরাত এক করে দৌড়োদৌড়ি করে বেড়ায়। এগুলো আসলে 'পরোপকার' সম্বন্ধে বিভিন্ন ব্যক্তিগত ধারণার ফল।তেমনি দূরবীন সিংয়েরও পরোপকার কি জিনিস তা নিয়ে ব্যক্তিগত ধারণা ছিল।
  • ranjan roy | 24.99.***.*** | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০১:২৯574697
  • উনি ছিলেন দুর্বলেরে -রক্ষা-কর আদর্শে কিছু করার জন্যে সর্বদা ব্যাকুল। তাই কোথাও মারপিট শুরু হলে বিনা নিমন্ত্রণে উনি হাজির হয়ে দুর্বলের পক্ষ নিয়ে লাঠি চালিয়ে দিতেন। সেইসব শান্তিপূর্ণ দিনগুলিতে সবকিছুরই রেট বাঁধা থাকত। গোটা এলাকা জানত যে শহরে যেমন বাবু জয়রামপ্রসাদ উকিল মারপিটের মামলায় দাঁড়াবার জন্যে প্রত্যেক হাজিরিতে পঞ্চাশ টাকা করে নেয়, তেমনি মামলার হওয়ার আগের মারপিটের জন্যে দূরবীন সিংয়েরও রেট ওই পঞ্চাশ টাকা।
    বড় ঝামেলায় , অর্থাৎ যেগুলোতে লোক জমা করতে হয়, রেট প্রতি আদমী বাড়ে, কিন্তু তারও সীমা আছে আর তাতে ধোঁকা চলে না। ওনার লোকজনকে মাংস-মদ খাওয়াতে হবে। কিন্তু নিজে ওই সময় মাংস-মদ্য কিছুই ছোঁবেন না। এতে ওনার পেট হালকা মগজ সাফ থাকে যা যুদ্ধস্থলে বড় দরকার। আর মদ-মাংস সামনে দেখেও যিনি না বলতে পারেন তাঁকে এই সমাজে 'সদাচারী' বলা হয়। সে অর্থে দূরবীন সিং ও সদাচারী বটেন!
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০০:০৩574698
  • দূরবীন সিংয়ের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল উনি কখনো সিঁদ কাটতেন না, সোজা দেয়াল টপকাতেন। উনি যে কোন স্তরের প্রতিযোগিতায় পোল ভল্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্য ছিলেন। গোড়ার দিকে উনি দেয়াল টপকাতেন টাকাপয়সায় টান পড়লে, পরের দিকে শুধু নতুন চ্যালাদের ট্রেনিং দিতে হলে।
    সে যুগে চোর চোরই হত, আর ডাকাত শুধু ডাকাত। চোর ঘরে ঢুকত শুধু চুরি করতে, আর পাঁচ বছরের ছোট বাচ্চাটাও পা দাপালে ও যে সিঁদ দিয়ে ঢুকেছিল সেটা দিয়েই ভদ্রভাবে বেরিয়ে যেত। আর ডাকাতেরা মাল লুঠের চেয়ে মারপিট করতেই বেশি তৎপর ছিল।
    এই পরিপ্রেক্ষিতে দূরবীন সিং চোর আর ডাকাতের মোডাস অপারেন্ডিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনলেন। চুরি সময় গেরস্ত জেগে উঠলে তাকে ঠ্যাঙানোর পরম্পরা উনিই প্রথম শুরু করলেন। এই পদ্ধতি ওনার সমসাময়িক চোরেদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হল। এইভাবে চোর ও ডাকাতের তফাৎ খানিকটা ঘুচল।
    কিন্তু কালের ফের! ( শিবপালগঞ্জে স্রোতের বিপরীত কোন ঘটনা ঘটলে সেটা কালের-ফেরের আওতায় চলে যায়) অমন যে দাপুটে দূরবীন সিং, তিনিও বুড়োবয়সে ওনার নেশাড়ু ভাইপোর হাতের চড় খেয়ে কুয়োর পাড় থেকে মাটিতে ছিটকে পড়ে পাঁজরের হাড় ভাঙলেন। কিছুদিন শয্যাশায়ী অবস্থায় ঘরের কোনে রাখা লাঠিগাছার দিকে তাকিয়ে মনে মনে সেটা ভাইপোর গলায় ঠুঁসে দেয়ার প্ল্যান করতে লাগলেন। শেষে ভাইপোর গলা এবং লাঠি দুটোকেই পূর্ববৎ রেখে উনি শিবপালগঞ্জের মাটিকে বীর-বিহীন করে বীরগতি প্রাপ্ত হলেন, অর্থাৎ 'টেঁ' হয়ে গেলেন।
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০০:২৭574699
  • শনিচর দূরবীন সিংয়ের সম্বন্ধে নিজের পুরনো অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছিলঃ
    ' ভাইয়া রঙ্গনাথ, সেদিন ছিল অমাবস্যা। আমি ভোলুপুরের তিওয়ারিদের বাগিচার মধ্যে দিয়ে হেঁটে আসছিলাম। তখন আমারও বয়েস কম, বাঘ আর ছাগলকে সমদৃষ্টিতে দেখতাম।
    তখন আমার এমন তেজ ছিল যে হাওয়ায় ডান্ডা ঘোরাতে ঘোরাতে পথ চলতাম আর কোথাও একটু পাতা নড়লেই ছিটকে উঠে মা তুলে গাল দিতাম। তো, অমাবস্যার রাত আর আমি হাতে লাঠি সটাসট হেঁটে ফিরছিলাম। তখনি গাছের আড়াল থেকে কেউ বলে উঠল," খবর্দার!"

    ' আমি ভাবলাম কোন ভূত-প্রেত হবে ,ওদের সাথে পালা পড়লে তো লাঠি-ডান্ডা সব বেকার! আমি প্রাণপণে লাল-ল্যাঙটওয়ালার ধ্যান করতে লাগলাম। কিন্তু ভাইয়া, লাল ল্যাঙোটওয়ালা কখন কাজে আসবে? যদি কোন ভূত-প্রেত-কন্ধ্কাটা সামনে আসে তবেই না? এখানে তো গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল একটা মিশকালো সা-জোয়ান, এসে আমাকে বলল," চুপচাপ যা আছে দিয়ে দাও, ধুতি-কুর্তাও ছেড়ে ফ্যালো।"
    ' আমি মারব বলে লাঠি তুলতেই দেখি আরো কটা অমনি মুশকো জোয়ান আমাকে ঘিরে ধরেছে। সবার হাতে বড় বড় লাঠি আর বল্লম। আমি মনে মনে বল্লাম," নে ব্যাটা শনিচর! আজ থেকে তোর সব জারিজুরি শেষ''। লাঠি হাতে ধরাই রইল, চালাতে আর সাহস হল না।
    ' এক ব্যাটা বলল," লাঠি ধরে আছিস কেন? চালা! আসল বাপের ব্যাটা হলে চালা ডান্ডা!"
    ' ভাইয়া, বড্ড রাগ হল। কিন্তু রেগেমেগে কিছু বলতে গেলাম, তো গলা দিয়ে কান্না বেরল। বললাম," জান বাঁচাও, মাল নিয়ে যাও"।
    অন্য এক ব্যাটা বলল," শালার তো পুঁটিমাছের জান, তার জন্যেও শেয়ালের মত হুয়া-হুয়া করছে। এতসব মাল ছেড়ে দিচ্ছে। ভাল কথা। নে সব মাল!"
  • Abhyu | 107.89.***.*** | ২০ এপ্রিল ২০১৩ ২৩:০১574590
  • তারপর?
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ২০ এপ্রিল ২০১৩ ২৩:০৭574591
  • সেকি! তুমিই না অনুবাদটি করতে বারণ করলে?
    তাই তো আমি----।
  • Abhyu | 107.89.***.*** | ২০ এপ্রিল ২০১৩ ২৩:১২574592
  • কেন সে তো আপনি জানেন। তবে পড়তে ভালো লাগছিল সেটাও ঠিক :)
  • Abhyu | 34.18.***.*** | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১১:২৩574593
  • তবে পড়তে ভালো লাগছিল সেটাও ঠিক!
  • ranjan roy | 24.99.***.*** | ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৭574594
  • অধ্যায় --১১
    =======
    ছাতের চিলেকোঠার সামনে একটি টিনের চালা মত; সেই টিনের নীচে রঙ্গনাথ আর রঙ্গনাথের নীচে একটি চারপাই। এখন শুনুন আবহাওয়ার খবর।
    কাল রাতের ঘন মেঘ এখন সরে গেছে। ঠান্ডা হাওয়া বইছে-- শনশন।গত কয়েকদিন বজ্রপাতের সঙ্গে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, সেসব তামাশা শেষ হতেই পৌষের শীত জাঁকিয়ে বসছে। বাজারের নব্বই প্রতিশত মেঠাই যেমন খেতে নয় দেখতে ভাল, তেমনি এই দেখনদারি শীত। রোদ্দূর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন শুধু সামনের নিমগাছের ডালেই ওর বাসা। রঙ্গনাথ নিমগাছের উপর চড়ে বসা রোদ্দূরকে মন দিয়ে দেখছিল। নিমগাছ শহরেও আছে, আর রোদ্দূরও। কিন্তু গাঁয়ে এসেই ও প্রথম রোদ্দূরকে খেয়াল করে দেখল। এমন অনেকের হয়।আসলে রঙ্গনাথের অব্স্থা ওইসব টুরিষ্টের মত যাদের রাস্তাঘাট, আলোবাতাস,বাড়িঘর, জল, রোদ্দূর, দেশপ্রেম, গাছাপালা,হাড়বজ্জাতি, মালখাওয়া, মেয়েছেলে আর ইউনিভার্সিটি নিজের দেশে চোখে পড়ে না, কিন্তু বিদেশে গেলেই--- কী আর বলব!
    সারকথা হল রঙ্গনাথের চোখ রোদ্দূর দেখছিল বটে, কিন্তু মন ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি মধ্যে পথ হারিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ওখানে অনেক কিছু আগে থেকেই সেঁধিয়ে আছে, লুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু গবেষকদের চেষ্টাতেই তার খোঁজ পাওয়া যায়।

    রঙ্গনাথ নিজের গবেষণার জন্যে এমনই এক বিষয় বেছে নিয়েছে। ভারতবাসীরা ইংরেজদের সাহায্যে নিজেদের পুরনো সেই দিনের কথা নিয়ে নতুন একটা বিষয় ফেঁদেছে--তার গালভরা নাম ইন্ডোলজি। এর গবেষকদের গোড়ায় ইন্ডোলজির কারা গবেষক--সে নিয়ে রিসার্চ করতে হয় আর রঙ্গনাথ তাই করছিল। দুদিন আগে শহরে গিয়ে ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি থেকে অনেকগুলো বই নিয়ে এসেছিল। এখন নিমগাছ থেকে চুঁইয়ে পড়া রোদ্দুরের আলোয় সেগুলো পড়ছিল-- ডানদিকে মার্শাল আর বাঁয়ে কানিংহাম; আর উইন্টারনিজ ঠিক নাকের নীচে।কীথ পেছনের দিকে পায়জামার সাথে লেপটে , স্মিথ ঠেলা খেয়ে পায়ের নীচে, আর উল্টে পাল্টে গড়াগড়ি খাচ্ছেন রাইস ডেভিস। পার্সি ব্রাউন বালিশের নীচে মুখ লুকিয়েছেন। এত ভিড়ের মধ্যে কাশীপ্রসাদ জয়সওয়ালকে দেখা যাচ্ছে-- বিছানার এককোণে মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন। আর চাদরের আড়াল থেকে ভয়ে ভয়ে উঁকি দিচ্ছেন ভান্ডারকর। এইভাবে রিসার্চের গৌরচন্দ্রিকা শুরু হল।
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ১৩:৪০574595
  • { সরি! মাঝখানের দুটো অধ্যায় উড়ে গেছে। এখান থেকে পড়ুন, ধরতাই দিচ্ছি]।

    09 Feb 2013 -- 12:27 AM

    শনিচর দূরবীন সিংয়ের সম্বন্ধে নিজের পুরনো অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছিলঃ
    ' ভাইয়া রঙ্গনাথ, সেদিন ছিল অমাবস্যা। আমি ভোলুপুরের তিওয়ারিদের বাগিচার মধ্যে দিয়ে হেঁটে আসছিলাম। তখন আমারও বয়েস কম, বাঘ আর ছাগলকে সমদৃষ্টিতে দেখতাম।
    তখন আমার এমন তেজ ছিল যে হাওয়ায় ডান্ডা ঘোরাতে ঘোরাতে পথ চলতাম আর কোথাও একটু পাতা নড়লেই ছিটকে উঠে মা তুলে গাল দিতাম। তো, অমাবস্যার রাত আর আমি হাতে লাঠি সটাসট হেঁটে ফিরছিলাম। তখনি গাছের আড়াল থেকে কেউ বলে উঠল," খবর্দার!"

    ' আমি ভাবলাম কোন ভূত-প্রেত হবে ,ওদের সাথে পালা পড়লে তো লাঠি-ডান্ডা সব বেকার! আমি প্রাণপণে লাল-ল্যাঙটওয়ালার ধ্যান করতে লাগলাম। কিন্তু ভাইয়া, লাল ল্যাঙোটওয়ালা কখন কাজে আসবে? যদি কোন ভূত-প্রেত-কন্ধ্কাটা সামনে আসে তবেই না? এখানে তো গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল একটা মিশকালো সা-জোয়ান, এসে আমাকে বলল," চুপচাপ যা আছে দিয়ে দাও, ধুতি-কুর্তাও ছেড়ে ফ্যালো।"
    ' আমি মারব বলে লাঠি তুলতেই দেখি আরো কটা অমনি মুশকো জোয়ান আমাকে ঘিরে ধরেছে। সবার হাতে বড় বড় লাঠি আর বল্লম। আমি মনে মনে বল্লাম," নে ব্যাটা শনিচর! আজ থেকে তোর সব জারিজুরি শেষ''। লাঠি হাতে ধরাই রইল, চালাতে আর সাহস হল না।
    ' এক ব্যাটা বলল," লাঠি ধরে আছিস কেন? চালা! আসল বাপের ব্যাটা হলে চালা ডান্ডা!"
    ' ভাইয়া, বড্ড রাগ হল। কিন্তু রেগেমেগে কিছু বলতে গেলাম, তো গলা দিয়ে কান্না বেরল। বললাম," জান বাঁচাও, মাল নিয়ে যাও"।
    অন্য এক ব্যাটা বলল," শালার তো পুঁটিমাছের জান, তার জন্যেও শেয়ালের মত হুয়া-হুয়া করছে। এতসব মাল ছেড়ে দিচ্ছে। ভাল কথা। নে সব মাল!"
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১৯574596
  • "কী বলব ভাই! একটা ঝোলার মধ্যে ছিল ছাতু, আর একটা চমত্কার দেখতে মোরাদাবাদী লোটা।মামার বাড়ি থেকে পাওয়া--ফাসকিলাস সূতোর কাজ। লোটা কি বালতি বোঝা দায়। কুয়োর থেকে দুই সের জল উঠে আসত।কিছু পুরি ছিল, আসল ঘিয়ে ভাজা; তখন শালার এই বনস্পতি দালদা কোথায় ছিল? সব ওরা গুনে গুনে কব্জা করল। তারপর ধুতি খুলতে বলল। কোমরের গেঁজেতে ছিল একটি টাকা--সেটাও গেল। এবার যেই কুর্তা আর লেঙটি পরে উঠে দাঁড়ালাম এক ব্যাটা বলল-- মুখে কুলুপ এঁটে সোজা নিজের ঘরে ফিরে যাও। একটা উহ্‌ আহ্‌ শুনেছি কি এখানেই পুঁতে ফেলব।
    " যেই চলা শুরু করেছি আর এক ব্যাটা বলে উঠল-- ঘর কোথায়?
    বললাম-- আমি 'গঁজহা' ( শিবপালগঞ্জের নিবাসী)।
    " তারপর যা হল সে আর কহতব্য নয়। সব কটা লুঠেরা এ ওর মুখ দেখছে, যেন কাঠপুতুল! একজন আমাকে বলল--শিবপালগঞ্জের মুখিয়ার নাম বল দিকি! আর এক ব্যাটা বলে-- জমির লম্বরদারের নাম? তিননম্বর শুধোয়--দূরবীন সিং কে চেন?
    " আমি বললাম--দূরবীন সিংয়ের দলের হয়ে লাঠি চালিয়েছি একবার।সেই যেবার রঙ্গপুরে বড় বাওয়াল হয়েছিল। যদি সমঝোতা না হত তো হাজার লোক ওখানেই শুয়ে পড়ত। এমনিতে দূরবীন সিংকে গাঁয়ের সম্পর্কে কাকা বলে ডাকি।
    ' ব্যস্‌, রাম-রাম-সীতারাম! যেন কালো মানুষের ভিড়ে কোন গোরা সাহেব ঢুকে পড়েছে! হুটোপাটি হুটোপাটি! কেউ আমার ধুতি ফেরত নিয়ে এল, তো কেউ পিরান, একজন জুতো দিয়ে গেল তো আরেকজন কাঁধে ঝোলা টাঙিয়ে দিল।একজন আমার সামনে হাত জোড় করে বলল--তোমার দুটো পুরি খেয়ে ফেলেছি--দাম নিয়ে নাও। কিন্তু দূরবীন সিংকে বল না যে আমরা তোমাকে রাস্তা আটকে ঘেরাবন্দী করেছিলাম, বরং আর কিছু পয়সাকড়ি নিয়ে নাও। নাহলে বল পেট চিরে পুরি দুটো বের করে দিচ্ছি। আমরা কি জানতাম যে তুমি একাজন 'গঁজহা'?
    " তারপর সবাই মিলে আমাকে গাঁয়ের সীমানার পুকুরপাড় অবধি এগিয়ে দিল। অনেক কান্নাকাটি করছিল, তো আমিও ওদের বুঝিয়ে সুজিয়ে চোখ মুছিয়ে দিলাম।বললাম--আরে তোমরা তো দেখছি আমাদেরই জ্ঞাতিগুষ্ঠি। খিদের মুখে দুটো পুরি খেয়ে নিয়েছ তো কি হয়েছে? খাও আরও দু-একটা।
    " ও ব্যাটা চোঁ-চাঁ দৌড় দিল। বলে গেল-- বাপ! ঢের হয়েছে।আমরা কি করে জানব যে তুমি একজন "গঁজহা"? ব্যস, দূরবীন সিংয়ের কানে যেন না ওঠে, দোহাই তোমার।
    "বললাম, --আরে আমার ঘরে চল। জল-টল খাবে। খিদে পেয়েছে তো বল-- খেয়েদেয়ে যাবে।
    কিন্তু ও বলল-- দাদাভাই, এবার আমাদের যেতে দাও। তুমিও ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। কাল সকালে সব ভুলে যেও; দোহাই, কাউকে বল না।
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৯574597
  • " তো ভাইয়া, আমি ঘরে ফিরে গড়িয়ে নিলাম আর সক্কাল হতেই দূরবীন সিংয়ের কাছে গিয়ে পা ছুঁয়ে বললাম--কাকা, তোমার নামে যেন লাল ল্যাংগোটওয়ালার (হনুমানজীর) শক্তি ভর করেছে।কাল তোমার নাম জপেই প্রাণ বাঁচিয়েছি।
    " উনি পা টেনে নিলেন।বললেন-- যা শনিচর্রা! কোন চিন্তা নেই।আমি যতদিন আছ, দিনরাত্তির যখন যেখানে ইচ্ছে ঘুরে বেড়া। ভয়ের কিচ্ছু নেই। সাপ-বিচ্ছু তুইই দেখে নিস, বাকি সব আমাকে সামলাতে দে।"
    এবার শনীচর শ্বাস টেনে চুপ হয়ে গেল।রঙ্গনাথ বুঝে গেল যে ব্যাটা ঝুল ঝাল গল্পলেখকদের মত আসল ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছনোর আগে পরিবেশ তৈরি করছে।ও বলল-"তবে তো যদ্দিন দূরবীন সিং ছিলেন গঞ্জহা লোকজনের পোয়াবারো , কি বল?"
    মুখ খুললেন রূপ্পনবাবু। রঙ্গনাথ এই প্রথম রূপ্পনকে কোন সাহিত্যিক বাক্য বলতে শুনল। শ্বাস টেনে বললঃ
    কি পুরুষ বলী নহী হোত হ্যায়, কি সময় হোত বলবান।
    কি ভিল্লন লুটী গোপিকা, কি ওহি অরজুন, ওহি বাণ।।

    [আসল শক্তিধর কাল, পুরুষ শুধুই অহংকারী।
    সেই তো অর্জুন, সেই গান্ডীব, তবু দস্যু লুটে নেয় নারী।]
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৯574598
  • রঙ্গনাথ জিগ্যেস করল, ' হল কী রূপ্পনবাবু? শিবপালগঞ্জে তোমার গোপিকা কেউ কেড়ে নিল নাকি?'
    রূপ্পনবাবু বললেন-- শনিচর, বাকি গপ্পোটাও শুনিয়ে দাও।
    শনীচর দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করল।
    -- দেখুন ভাই, লাঠিয়ালের কাজ কোন বিধানসভার অধিবেশন তো নয়। অ্যাসেমব্লিতে তুমি যতই বুড়িয়ে যাও, বুদ্ধির ধার ভোঁতা হয়ে যায়--ততই তোমার প্রসিদ্ধি, ততই উন্নতি। হরনাম সিংকেই দেখুন। উঠে দাঁড়ালে মনে হয় এই বুঝি মুখ থুবড়ে পড়ল, খাবি খেল।কিন্তু ওখানে তো দিনে দিনে ওঁর নাম ছড়িয়ে পড়ছে।এদিকে লাঠিবাজিতে কলজের জোর হল আসল। যতদিন চলল, চলে গেল।যখন চলল না, তখন খতম।
    ' এই পাঁচ ছয় বছর আগের কথা। আমি কাত্তিক পুন্নিমায় গঙ্গাচান করব বলে বেরিয়েছিলাম। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গিসল।সেই ভোলুপুরের কাছেই রাত হল, চমৎকার ফুটফুটে জ্যোৎস্না।বাগানের মধ্যে ফুর্তির মেজাজে গান গাইতে গাইতে ঢুকেছি কি পেছন থেকে কেউ পিঠের ডানদিকে কষে লাঠির এক ঘা ! ভাবুন, না রাম-রাম, না নমস্কার-চমৎকার,--সোজা লাঠির বাড়ি!
    আর ভাই, গানের সুর গেল কেটে, ঝোলা গেল ছিটকে বিশ হাত দূরে। আমার হাতের ডান্ডা যে কোনদিকে ছিটকে পড়ল! ভাবলাম চেঁচাই, অমনি তিন-চারজন চড়াও হল। একজন মুখ চেপে ধরে বলল-- চুপ বে সালে, ঘাড় মুচড়ে দেব।
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:১০574599
  • "চাইলাম ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়তে, কিন্তু ভাই, হঠাৎ পেছন থেকে লাঠি খেলে গামা পালোয়ানও মুখ থুবড়ে পড়বে তো আমি! খানিকক্ষণ মুখ বুজে পড়ে রইলাম, তারপর হাতে পায়ে ধরলাম, ইশারায় বোঝালাম যে মুখ খুলব না। একজন মুখে ঠুসে রাখা কাপড়টা খুলে দিল। আরেকজন বলল-- মালকড়ি কোথায় রেখেছিস?
    "-- যা আছে বাপু, এই ঝোলাতেই, দেখে নাও।
    ঝোলা থেকে দেড় টাকার খুচরো বেরোল। এক ব্যাটা সেগুলো হাতে বাজিয়ে বলল-- ল্যাঙট খুলে দেখা!
    "--- বাপু, ল্যাঙট খুলিও না। ওর নীচে কিছু নেই, ন্যাংটো হয়ে যাব যে!
    " ব্যস্‌ ,সব গড়বড় হয়ে গেল। ভাবল ফাজলেমি করছি।। এবার ওরা সব খুলে নিয়ে এমন তল্লাশি করল যে গাঁজা-ভাঙের খোঁজে পুলিশও অমন করে না। যখন কিছুই পাওয়া গেল না তখন এক ব্যাটা পেছন থেকে এক লাথ মেরে বলল--চুপচাপ মুখ বুজে নাক বরাবর চলে যাও, নিজের ঘরে ঢুকে তবে থামবে।
    " এতক্ষণে আমার সাহস ফিরে এল। বললাম-- বাপু হে, তোমরা আমায় প্রাণে মার নি, সে ঠিক আছে।মাল নিয়েছ তো কোঈ বাত নহীঁ। কিন্তু আমিও এবার বলে দিচ্ছি তোমরা কিন্তু নুনের থেকে নুন খাচ্ছ। তোমরা যদি সরকারের লোক, তো আমিও দরবারের, ভেবে দেখ।
    "এবার ওরা আমার গা ঘেঁষে এল। বলল-- তুমি কে বট? কোথায় থাক? কার স্যাঙাৎ?
    "বললাম--আমি হলাম 'গঁজহা'; ঠাকুর দূরবীণ সিংয়ের সাথী।
    " আর জিগ্যেস কর না রঙ্গনাথ ভাই। সব ব্যাটা ঠা ঠা করে হাসতে লাগল আর একজন আমার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে কিছু বোঝার আগেই ল্যাং মেরে ফেলে দিল।
    '" আমি ধূলোবালি ঝেড়ে দাঁড়ালাম। তখন কমবয়সী এক জোয়ান ডাকু আমায় বলল-- এই দূরবীন সিং কিস চিড়িয়া কা নাম হ্যায়?
    ফের সবাই ঠা -ঠা করে হাসে।
    " বললাম--দূরবীণ সিংকে চেন না? এখানে নতুন এসেছ বুঝি?এদিকে দশ কোশের ভেতর কেউ 'গঁজহা' লোকজনএর রাস্তা আটকায় না। দূরবীন সিংয়ের গাঁয়ের মানুষদের সবাই সমঝে চলে। ঠিকাছে, তুমি যখন জান না, তখন আমার ঝোলাটা নিয়ে যাও, কোঈ বাত নহীঁ।
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪০574601
  • " লুঠেরার দল ফের সেই ঠা-ঠা শুরু করল। একজন বলল-- আমি জানি। এখন দূরবীন সিংয়ের জমানা খতম। পুরনো লোকগুলো একটু আধটু লাঠি ঘুরিয়ে নিজেদের বড় তিসমার খাঁ( তিরিশমারী বীর) ভাবত। এনার সেই দূরবীন সিং লাঠি ঘুরিয়ে দুটো চারটে দেয়াল টপকে ভারী বাহাদুর হয়ে গেছল। আজকাল তো বাঁশ লাগিয়ে দেওয়াল টপকানো স্কুলে ছেলেদের শেখানো হয়।
    "একজন বলল-- ওখানে লাঠিখেলাও শেখানো হয়। আমি তো লাঠি চালাতে স্কুলেই শিখে নিয়েছি।
    " প্রথম নওজোয়ান বলল--তো এই দূরবীন সিং বড় তালেবর হয়ে গেছল। হুঁঃ, ব্যাটার কাছে একটা পিস্তলও নেই, গেছে তালুকদারি ঝাড়তে!
    " অন্য এক ডাকুর হাতে ছিল চোরবত্তি (টর্চ)। সে পকেট থেকে একটা তমঞ্চা (পিস্তল) বের করে বলল-- দেখে নে ব্যাটা, ছ-ঘরা অস্তর। দেশি গুলির নয়, আসল বিলাতিগুলিওলা। কথা বলতে বলতে আমার বুকে নল ঠেকিয়ে বলল-- যা , গিয়ে তোর বাপকে বলে দিস-- অন্ধের মাঝে কানারাজা সাজার দিন শেষ। এখন ওর খাটিয়ায় শুয়ে শুয়ে ফোঁপানোর দিন। যদি দিনে-রাতে কখনও সামনে পড়ে যায় তো মাথার ঘিলু বের করে দেব। বুঝেছ হে বেটা ফকিরেদাস!
    " তারপর ভাই, আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। দেহে- মনে এমন জোশ এল যে ডান্ডা ফেলে দিয়ে হরিণের বেগে দৌড়ুলাম। পেছনে ওদের সেই বিকট অট্টহাসি। একজন চেঁচিয়ে উঠল--মার শালে দূরবীন সিং কে! দাঁড়া ,বলছি! এক্ষুণি মারতে মারতে দূরবীণ বানিয়ে দেব!
    " কিন্তু ভাইয়া, ছুটে পালাতে আমার জুড়ি নেই। আজকাল স্কুল-কলেজের ছোকরাদের সিটি বাজিয়ে বাজিয়ে দৌড়তে শেখায়। আমি সিটি ছাড়াই এমন দৌড়ুতে পারি কি খরগোসও হায় হায় করে উঠবে। তো ভাই, ওরা খুব গালি-গালাজ করল, কিন্তু ধরতে পারল না। কোনরকমে ঘরে পৌঁছে গেলাম।দূরবীণ সিংয়ের দিন সত্যিই ঢলে পড়েছিল। পুলিশও ভেতরে ভেতরে হাত সরিয়ে নিয়েছিল। পরদিন খুব ইচ্ছে করলেও এই ঘটনাটা আর ওনাকে বলি নি। যদি বলতাম তো দূরবীণ কাকা সেই গ্লানিতেই টেঁসে যেতেন।"
    রূপ্পনবাবু ওর দুঃখী চেহারাটি ভারি ঝোলার মত ঝুলিয়ে বসে ছিলেন। এবার একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন-- "ভালই হত; সেদিন টেঁসে গেলে পরে ভাইপোর হতে মরতে হত না।"
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ১৯:৪৯574602
  • অধ্যায়--৮
    =======
    শিবপালগঞ্জ গ্রাম হলেও বসেছে বড় শহরের কাছে এবং একটি প্রধান সড়কের ধারে । ফলে বড় বড় নেতা ও অফিসারদের এখানে আসতে কোন নীতিগত আপত্তি ছিল না। এখানে শুধু কুয়ো নয়, গোটাকয়েক হ্যান্ডপাম্পও চালু অব্স্থায় ছিল। তাই বাইরের লোকজন তেষ্টা পেলে নিজের জীবন বিপন্ন না করেও এখানকার জল খেয়ে নিত। খাওয়া-দাওয়ার সুবিধেও ছিল। ওখানকার ছোটখাটো আমলাদের মধ্যে কেউ একজন হত যার ঠাটবাট দেখে স্থানীয় লোকজন বুঝে যেত যে ব্যাটা প্রথম শ্রেণীর বেইমান। কিন্তু বাইরের লোকজন ওকে দেখে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করত-- দেখেছ, কেমন সভ্যভব্য! শুনেছ, ও চিকোসাহেবের মেয়েকে বিয়ে করেছে। তাই খিদে পেলে ব্যক্তিগত সততার ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে ওরা ওই বাড়িতে খাবার খেয়ে নিত। কারণ যাই হোক, সেবার শিবপালগঞ্জে জননায়ক আর জনসেবকদের আনাগোনা বড্ড বেশি হচ্ছিল। ওদের সবার শিবপালগঞ্জের উন্নয়নের চিন্তায় ঘুম হচ্ছিল না। ফলে সবাই এসে লেকচার ঝাড়ত।
    এইসব লেকচার আমুদে 'গঞ্জহা'দের জন্যে অতি প্রিয়। কারণ এর শুরুই হয় বক্তা ও শ্রোতা , একে অন্যকে গন্ডমূর্খ ধরে নিয়ে। আর এটাই 'গঞ্জহা'দের আলাপচারিতার জন্যে আদর্শ পরিবেশ
    তবু লেকচার এত বেশি হতে লাগল যে লোকজনের বদহজম হয়ে গেল। লেকচার তখনই ভালো হয় যখন শ্রোতারা বুঝতে পারে যে ব্যাটা ফালতু বকবক করছে আর বক্তাও জানে যে ও ফালতু বকছে। কিন্তু কিছু লোক এমন গম্ভীর হয়ে লেকচার ঝাড়ে যে কখনও কখনও মনে হয় যে লোকটা বোধহয় যা বিশ্বাস করে তাই বলছে। এমনটি মনে হতেই লেকচার ঘন বা পাতলা হতে থাকে আর শ্রোতাদের হয় পেটখারাপ।
    এইসব দেখেশুনে গঞ্জহা'র দলও নিজের নিজের স্বাস্থ্য ও রুচির হিসেবে লেকচারের ডোজ নেওয়ার সময় ঠিক করে ফেলল-- কেউ সকালে নাস্তা করার আগে, তো কেউ দুপুরে খেয়েদেয়ে। অধিকাংশ লোক লেকচারের বড় ডোজ নেওয়ার সময় বেছে নিল -- দিনের তৃতীয় প্রহরে ঝিমুনো আর সন্ধ্যে বেলা জেগে ওঠার মাঝখানে।
    সেসব দিনে গ্রামে গ্রামে লেকচারের মুখ্য বিষয় ছিল চাষবাস। এর মানে এও নয় যে আগে অন্য কোন বিষয় নিয়ে বলার রেওয়াজ ছিল। আসলে স্বাধীনতার পরবর্তী কয়বছরে গাঁয়ের লোকজনকে ধরে বেঁধে বোঝানো হচ্ছিল যে আমাদের ভারতবর্ষ হল কৃষিপ্রধান দেশ। গাঁয়ের লোকজনের এ নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু প্রত্যেক বক্তাই ধরে নিতেন যে গ্রামবাসীরা এটা মেনে নেবে না, প্রতিবাদ করবে। তাই ওঁরা একের পর এক যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চেষ্টা করতেন যে ভারতবর্ষ এক কৃষিপ্রধান দেশ। এর পরের বক্তব্য হত কৃষির উন্নতিতেই দেশের উন্নতি। এর চেয়ে বেশি বলার আগেই হরদম দুপুরের খাওয়ার সময় হয় যেত। আর ওই সভ্যভব্য যুবক-- যে সম্পন্ন পরিবারের ছেলে আর চিকোসাহেবের জামাই-- বক্তার পিঠের চাদরের খুঁট টেনে ফিসফিস করে বলত--চাচাজি, চলুন। ভাত বেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবু কেউ কেউ কখনও কখনো পরবর্তী বক্তব্য অবধি টেনে দিতেন। তখন বোঝা যেত যে ওঁদের আগে-পরে আলাদা কিছু নয়। সব মিলিয়ে কথা একটাই-- ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ, তুমি হলে কৃষক, ভাল করে চাষ কর আর খাদ্য উৎপাদন বাড়াও। প্রত্যেক বক্তার মনে এই সন্দেহটি দানা বেঁধে রয়েছে যে কোন কৃষক খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে চায় না।
  • ranjan roy | 24.99.***.*** | ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৬:৩৩574603
  • লেকচারের স্বল্পতা বিজ্ঞাপনে পুষিয়ে দেওয়া হয়; আর এটা বলা যায় যে শিবপালগঞ্জের দেওয়ালে সাঁটা বা লিখে দেওয়া বিজ্ঞাপনগুলো স্থানীয় সমস্যা আর তার সমাধানের সঠিক ছবি তুলে ধরছে।
    যেমন, সমস্যা হল ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ আর চাষীর দল স্রেফ বদমাইশি করে খাদ্য উৎপাদন বাড়াচ্ছে না। এর সমাধান হল চাষীদের জড়ো করে খুব লেকচার দেওয়া আর ওদের ভালো ভালো ছবি দেখানো যাতে বাণী থাকবে-- তুমি নিজের জন্যে না হলেও দেশের জন্যে কিছু কর; খাদ্য উৎপাদন বাড়াও। এই জন্যেই নানান জায়গা সরকারি পোস্টারে ভরে গেছে যাতে সমস্ত চাষী দেশের জন্যে বেশি বেশি করে ধান ফলাবে।
    এতসব লেকচার আর পোস্টারের প্রভাব চাষীদের উপর বেশ ভালো রকম পড়ে। সবচেয়ে বোদা চাষীও ভাবতে থাকে যে নিশ্চয় এসবের পেছনে কোন ফন্দী আঁটা হয়েছে।
    তখন শিবপালগঞ্জে একটা পোস্টার খুব বিখ্যাত হয়েছিল যাতে এক স্বাস্থ্যবান চাষী-- মাথায় গামছা,গায়ে ফতুয়া আর কানে দুল --- কাস্তে দিয়ে বুকসমান উঁচু গমের শীষ কাটছে।ওর পেছনে দাঁড়িয়ে এক খুশিতে মশগুল মহিলা কৃষিবিভাগের অফিসারমার্কা হাসি হাসছে। নীচে আর উপরে হিন্দি ও ইংরেজিতে গোটা গোটা অক্ষরে ছাপা--" অধিক ফসল ফলাও"।
    ফতুয়া পরা চাষীদের মধ্যে যে বা যাহারা ইংরেজিতে পন্ডিত তাদের ইংরেজিতে আর হিন্দি বিশারদদের হিন্দিতে চিৎ করে ফেলার কথা ভেবেই এইসব করা আর কি! আর যারা দুটোর একটাও জানে না তারা অন্ততঃ পুরুষ ও মহিলার তফাৎটা তো বোঝে! ভরসা করা যায় যে হাসিমুখ মহিলাকে দেখামাত্র সব চাষী ওর দিকে পেছন ফিরে পাগলের মত বেশি বেশি করে প্ফসল ফলাতে লেগে যাবে।
    এই পোস্টারটি আজকাল শিবপালগঞ্জে মুখরোচক চর্চার কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, লোকজনের চোখে পোস্টারের পুরুষটির চেহারা অনেকটা বদ্রী পালোয়ানের মত। নারীটির মুখের আদল গাঁয়ের কোন মেয়েটির সঙ্গে মেলে তা নিয়ে অনেক মত; কোন সর্বমান্য সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় নি।
    তবে সবচেয়ে চড়া গলার বিজ্ঞাপনের বিষয় কিন্তু চাষবাস নয়, ম্যালেরিয়া। দেওয়ালে দেওয়ালে রঙ দিয়ে লেখা --" ম্যালেরিয়া খতম করতে আমাদের সাহায্য করুন; মশককুল কে ধ্বংস করতে দিন"। অর্থাৎ, এটাও মেনে নেওয়া হয়েছে যে চাষীরা গরুমোষের মত মশা পালতেও উৎসুক। তাই ওদের মারার আগে চাষীদের হৃদয়-পরিবর্তন করা দরকার। আর হৃদয়-পরিবর্তন করতে গেলে ধমাকানো দরকার, আর ধমকাতে হলে ইংরেজি দরকার--- এই ভারতীয় যুক্তি-পরম্পরায় মশা মারার ও ম্যালেরিয়া নির্মূল করার সব অ্যাপীলই ইংরেজিতে লেখা। তাই বেশিরভাগ মানুষ এই অ্যাপীলগুলোকে কবিতার মত না পড়ে চিত্রকলার চোখে দেখছিল। আর গেরুয়া রঙে দেওয়ালে শ্লোগান -লেখকদের ইচ্ছেমত ইংরেজি লেখার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
    ফলে দেওয়াল ইংরেজি শ্লোগানে ভরে উঠতে লাগল; মশা মরতে লাগল আর লোকজন যে যার পথে চলতে লাগল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন