এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • মালবিকা ও মল্লিনাথ

    Shibanshu
    অন্যান্য | ১৯ নভেম্বর ২০১১ | ১৯১৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Shibanshu | 117.195.***.*** | ১৯ নভেম্বর ২০১১ ০০:৪৫503035
  • মালবিকা ও মল্লিনাথ

    দূরে বহুদূরে
    স্বপ্নলোকে উজ্জয়িনীপুরে
    খুঁজিতে গেছিনু কবে শিপ্রানদীপারে
    মোর পূর্বজনমের প্রথমা প্রিয়ারে।
    মুখে তার লোধ্ররেণু, লীলাপদ্ম হাতে,
    কর্ণমূলে কুন্দকলি, কুরুবক মাথে,
    তনুদেহে রক্তাম্বর নীবীবন্ধ বাঁধা, চরণে নূপুরখানি বাজে আধা-আধা ।
    বসন্তের দিনে
    ফিরেছিনু বহুদূরে পথ চিনে চিনে ।।

    এই কবিতাটি সেই প্রথম কৈশোর থেকে মজিয়ে রেখেছিলো। তবে শম্ভু মিত্রের কণ্ঠে। তাঁর অননুকরণীয় স্বরে, একটু টেনে, তিনি যখন শুরু করতেন,' দূরে, বহুদূরে.... এক লহমায় মনটা চলে যেতো সেই কালিদাসের উজ্জয়িনীতে, শিপ্রা নদীর তীরে মহাকাল মন্দিরের চাতালের ঘাটে।

    . প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে কয়েকটা বিবাহ সারা দেশের ভবিষ্যত বদলে দিয়েছিলো। তার মধ্যে একটা মধ্য ও উত্তর বঙ্গদেশবাসী কুষান বংশীয় শ্রীগুপ্তের পৌত্র প্রথম চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে লিচ্ছবি রাজকন্যা কুমারদেবীর বিবাহ। এটি আনুমানিক চতুর্থ শতকের প্রথম দশকের ঘটনা। এই বিবাহের উপঢৌকন হিসেবে চন্দ্রগুপ্ত-প্রথম মগধ রাজ্যের অধিকার লাভ করেন, যার রাজধানী ছিলো পাটলিপুত্র। তাঁর জীবৎকালে রাজ্য সম্প্রসারিত হয় মগধের সীমা পেরিয়ে প্রয়াগ ( এলাহাবাদ), সেখান থেকে সাকেত (অযোধ্যা) পর্যন্ত। তাঁর পুত্র সমুদ্রগুপ্তকে ভিনসেন্ট স্মিথ বলেছিলেন ভারতের নেপোলিয়ান। সমুদ্রগুপ্ত অহিছত্র, পদ্মাবতী, মালব,যৌধেয়, মদুর, আভীর ইত্যাদি কুড়িটি উপজাতিদের রাজ্য অশ্বমেধ যাত্রা করে অধিকার করেন। রাজধানী নিয়ে আসেন মালব বা অবন্তী রাজ্যের উজ্জয়িনী নগরে। তাঁর পুত্র চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের কাহিনী তো এদেশের সোনালি অতীত। ৩৮০ সাল থেকে ৪১৩ সাল পর্যন্ত প্রায় সমগ্র উত্তরাপথের সম্রাট। তাঁর ছত্রছায়ায় কালিদাস ও আরো অনেকে। অবন্তিকা আর মালবিকারা দখল করে নেয় সব সৃষ্টিশীলতার অন্দরমহল তার পর হাজার বছর। নিজেকে দিয়ে যদি বুঝতে চাই, তবে মনে হয় সেই ট্র্যাডিশন আজও চলেছে। মহাকালেশ্বরের জ্যোতির্লিঙ্গ সাক্ষী হয়ে আছে সেই সুদূর অতীতের মায়াময় সভ্যতার। বাঙালি কবি ধরে রাখেন সেই স্বপ্নময় মদির সৌরভ আর বাঙালি নট আবিষ্ট হয়ে বলে যান,

    রজনীর অন্ধকার
    উজ্জয়িনী করি দিল লুপ্ত একাকার।
    দীপ দ্বারপাশে
    কখন নিবিয়া গেল দুরন্ত বাতাসে।
    শিপ্রানদীতীরে
    আরতি থামিয়া গেল শিবের মন্দিরে ।।

    . পথে পথে ধুলো মেখে বেড়ানোর নেশা আমার অনেক কালের। ভারতবর্ষ নামক যে বিস্ময়কে আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছি, তার সামান্য কয়েকটি প্রান্ত ছাড়া প্রায় সব মাটির ধুলো এই শরীরমনকে ধন্য করে গেছে। মালবিকাদের দেখতে যাবার ইচ্ছে তো বহুকালের, কিন্তু সুযোগ হয়নি। হঠাৎ আদেশ এলো দিল্লি হয়ে ইন্দোর যেতে হবে একটা সরকারি কাজে। সুযোগ একটা হয়েই গেলো। দিন দুয়েক দিল্লিতে, ঠিক দিল্লি নয় গুড়গাওঁ, সরকারি কাজকম্মো, দূরভাষে শমীকের সঙ্গে আড্ডা ইত্যাদি সেরে আকাশে ওড়া। দিল্লি তিন নম্বর টার্মিনাল সত্যিই শাইনিংইন্ডিয়া, হায়দরাবাদকেও হার মানায় আর দিল্লির সন্ধের আকাশ থেকে পৃথিবী একটা অসম্ভব রূপকল্পের ছবি।

    ছমছমে আকাশের অন্ধকার থেকে ছোট্টো রাজা ভোজ বন্দর। কোচি, দেহরাদুন আর ম্যাঙ্গালোরের মতো জাহাজ থেকে নেমে হেঁটেই লাউঞ্জে ঢুকে পড়া। বাইরে অপেক্ষমান গাড়িতে যেতে যেতে ইন্দোর শহরের ঝাঁকিদর্শন। মাঝারি শহর, মধ্যপ্রদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। সন্ধেটা ছিলো ধনতেরসের। গাড়িকে পুরোনো বাজারগুলির ভিতর দিয়ে যেতে বললুম। চালক হয়তো একটু অনিচ্ছুক, কিন্তু গেলো শেষপর্যন্ত। নতুন কোনও দৃশ্যের জন্ম হোলোনা। সেই মণিকান্ত জহুরির ছোট্টো দোকানের পাশে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়া মস্তো প্যান্টালুন জাতীয় দোকান। এদেশে বাজারের দরজা একেবারে হাট করে খোলা হচ্ছে। রাশি রাশি ফিটফাট খেলোয়াড়। বয়স্ক ট্র্যাডিশনাল ব্যবসাগুলি মাথায় কলপ লাগিয়ে মাঠে নামার চেষ্টায় ব্যস্ত। শেষপর্যন্ত গোলপোস্টের দখল কে পাবে সেটাই দেখার।

    ভোপাল রোডে 'অরণ্য' নামে একটা নতুন গড়ে ওঠা পাড়ায় আমাদের অতিথিশালা। সেখানেই থাকা এবং একই আঙিনায় কর্মক্ষেত্র, তাই অকারণ সময়ের অপব্যয় নেই। হেড আপিসের বড়োবাবু হয়ে যাবার পাপ হচ্ছে প্রচুর লোকের নজরবন্দি হয়ে থাকা এবং যত্ন আত্তির ঘনঘটা বড্ডো বেশি। যেকারণে যাওয়া, সেই দারোগাগিরি করে ফেলা গেলো একদিনেই। একটা দিন হাতে রেখেছিলুম চিরাচরিত ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়ার জন্য।

    স্থানীয় বন্ধুরা প্রশ্ন করলেন, কোথায় যাবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে শতকরা নিরানব্বইজন বলেন, উজ্জয়িনী, মহাকালের মন্দিরে পুজো দিতে তো যেতেই হবে। উজ্জয়িনী নিয়ে আমার মনে যে রম্যকল্পনা আছে, আমি জানি আজকের উজ্জয়িন সে রকম জায়গা নয়। আর 'পুজো দেওয়া', এজন্মে তো হলোনা কখনও। তবে কেন দেবতাকে অকারণ কষ্ট দিতে যাওয়া?

    আমি বললুম, মান্ডু যাবো। আমার মতো স্বভাবের লোকজনের মন্দিরমসজিদ যদি কোথাও থাকে, তবে ঐদিকেই কোথাও তার ইশারা পাওয়া যেতে পারে। আমার 'মালবিকা' রূপমতীর মতই কেউ হবে হয়তো, কালিদাস যাকে দেখেননি কখনও। আর দাদুর 'স্বপ্নে'ও সে অধরাই রয়ে গেছে। এই আমি খ্যাপা মল্লিনাথ চললুম তাকে খুঁজতে।

    মজা হলো, যখন জিগ্যেস করলুম গাড়িতে কতোক্ষণ লাগবে? বিচক্ষণ লোকজনের অনুমানের পরিধি বিচরণ করতে লাগলো দেড় ঘন্টা থেকে চার ঘন্টার মধ্যে। অর্থাৎ পথের দেবতার পুজোর মন্ত্র কতোক্ষণ পড়তে হবে, কেউ নিশ্চিত নয়।

    যাকগে, সকাল সাতটা নাগাদ বেরিয়ে পড়া গেলো। আমার চালক জানালো দেড়ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে দিতে পারবে। তার সঙ্গে গপ্পো করি। তার পৃথিবী বলতে পশ্চিমে বম্বে, উত্তরে গোয়ালিয়র, পূর্বে রায়পুর আর দক্ষিণে ঔরঙ্গাবাদ। গাড়ি চালাতে চালাতে সে জানাতে থাকে এতো খারাপ রাস্তাঘাট, যা গত বিশ বছরে ভালোভাবে সারানো হয়নি। ঐসময় কংগ্রেসি রাজত্ব ছিলো। শুক্লাভ্রাতারা, দফায় দফায় দুজন 'রাজপুত্র' অর্জুন সিং, দিগ্বিজয় সিং, 'উপজাতিক' অজিত যোগি সবাই মিলে কীভাবে 'সোনার মধ্যপ্রদেশ'কে লুটেপুটে খেয়েছে। গত চার বছরে বিজেপি কিছু করার চেষ্টা হয়তো করেছে, কিন্তু সর্ষের মধ্যে ভূত। রাজ্য বিজেপির নেতারা কেউই কংগ্রেসি দানবদের থেকে কম নয়। ইন্দোরের বিধায়ক সর্বজানিত মাফিয়া নেতা। তার পুণ্যের লিস্টিতে নিজের দলের মুখ্যমন্ত্রীকেও খুন করার হুমকি রয়েছে। ঐ মুখ্যমন্ত্রীটি হিন্দিতে পদ্য লেখেন। পুরোনোদিনের আর এস এস ধরনের 'আদর্শবাদী'। ব্যক্তিগতস্তরে হয়তো পাপ করতে চাননা, কিন্তু ধনুর্ধর সাঙ্গোপাঙ্গোদের জ্বালায় নিজের ঘরেই প্রায় নির্বাসিত।

    আমি দেশে যেখানেই যাইনা কেন স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে দেশদুনিয়ার হালচাল নিয়ে গপ্পো করি। প্রথমে হয়তো লোকে একটু আড়ষ্ট থাকে। কিন্তু এইসব নেতাজাতীয় জন্তুদের প্রতি রোষ, ক্ষোভ, ঘৃণা, একটু আঁচড়ালেই বেরিয়ে আসে লাভার মতো। আমার চালক যখন অসম্ভব ঘৃণা বিজড়িত উচ্চারণে জানাচ্ছিলো 'ডিগ্গিরাজা'র প্রাসাদ আর ধনসম্পদের কথা, আমার মনের চোখে আমি দেখছিলাম সেই সাদা খাদির বর্মে আবৃত লোকটি কতো পরমান্নময় বাকচাতুর্যে আন্না হাজারে নামক এক ব্যক্তি ও তার সহচরদের 'দুর্নীতি' নিয়ে চব্বিশঘন্টা দেশবাসীদের অবহিত করে চলেছে। এই বিপুল দেশের অসংখ্য প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছি। মানুষের মধ্যে এই মাত্রার আক্ষেপ, ক্রোধ সতত চোখে পড়ে। হে অন্তরীক্ষের বিধাতা, একদিন তো এই মানুষগুলিকে পরিত্রাণ দাও। নয়তো শুধুই ফাঁকা প্রতিশ্রুতি, ' অভ্যুথ্‌থানম অধর্মস্য....'ইত্যাদি অনৃতবচন হয়েই থেকে যাবে। তুমিও তো শেষ পর্যন্ত রয়ে যাবে 'নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি'।

    ধারের অসম্ভব ভাঙাচোরা রাস্তা এড়াতে গিয়ে গাড়ি পূর্বদিকে মাউকে রেখে তিন নম্বর জাতীয় সড়কের বাইপাস ধরে মানপুরের দিকে চললো। এই বাইপাসের কুড়ি বাইশ কিমি রাস্তা চলাচলের উপযোগী। বাকি রাস্তার নামে পরিহাস। মানপুরের পর গুজরি থেকে ইউমোড় নিয়ে ধার যাবার পাহাড়ি সড়কটি বেছে নেওয়া গেলো। কিন্তু পথ তো তথৈবচ। মালোয়ার গ্রামের ভিতর দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু পথ। চক্রবাল জোড়া প্রায় শুকনো খেত খামার। মাঝে মাঝে সবুজের সমারোহ, আবার ইয়েলো অকার মাটি। কেটে ফেলা আখ আর ভুট্টার খেত। ক্রমাগত ওঠানামা করে চলা পাহাড়ি ভাঙা পথঘাট। তিনঘন্টা চলার পরেও পঁচানব্বই কিমি ফুরায় না। হঠাৎ চুলের কাঁটার বাঁকা মোড়ে টোলগেট, একটি তোরণ, তার উপর লেখা রূপমতী-বাজবাহাদুরের শহরে স্বাগতম। আর বারো কিমি বাকি।

    . মান্ডু, গোয়ালিয়র আর গোলকোন্ডার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাসে এইসব ছোটো ছোটো রাজন্যবর্গের গপ্পোগাছা অনেকটা একরকম। রূপকথার রাজাগজা সব। নিজের রাজ্যের পরিধির মধ্যে 'জগদীশ্বরোবা', কিন্তু দিল্লি আগ্রার মহপরাক্রমীদের থেকে সতত সন্ত্রস্ত, সাবধানী, 'তফাত যাও' ঋষিবাক্যে বিশ্বাসী। একটু উচ্চাভিলাষী হলেই পতন এবং পতন ও অভ্যুদয় বন্ধুর পন্থার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে নানা উপকথা, শিল্পচর্চা, মানুষী ভালোবাসাকে প্রায় দৈবীমাত্রায় তুলে নিয়ে গিয়ে চিরকালীন প্রেমের উপাখ্যান। কিছুটা হয়তো সত্যি, বাকিটা কল্পনা। তবু মানুষ বিশ্বাস করে, মনে রাখে। এই সব গপ্পের বসন্তবাতাস ঊষর জীবনে কোথাও হয়তো কোকিলকে ডেকে আনে। নিয়ে আসে সোনাঝুরির তীব্র হলুদ রং আর মদির গন্ধ। তা সে রূপমতী-বাজবাহাদুর বা তানসেন-মৃগনয়নী অথবা মহম্মদ কুলি কুতুব শাহ আর নর্তকী ভাগমতী। ভাগমতীর ভালোবাসার নাম হায়দরমহল আর তার নামে শহরটার নাম হয়ে যায় হায়দরাবাদ।

    . ধারাপুরীর উল্লেখ আমাদের বিভিন্ন পুরোনো শাস্ত্রে বা মহাকাব্যে পাওয়া যায়। মালব রাজ্যের দক্ষিণে গড়ে ওঠা এই বর্ধিষ্ণু জনপদ নানাভাবে আমাদের ইতিহাসে, লোককথায় ঘুরেফিরে এসেছে। সেকালের ধারাপুরী, অর্থাৎ আজকের ধার শহরের কাছে ছিলো 'মন্ডপদুর্গ' নামের রাজপুরী। এখানে পালনপুরে ৫৫৫ সালের ( বিক্রম সম্বৎ- ৬১২)একটি আদিনাথের জৈন মূর্তি পাওয়া গেছে। ফিরিস্তা নামের একজন ঐতিহাসিক লিখেছিলেন, পরভেজ খুসরোর সময় এখানে আনন্দ দেও নামে একজন রাজপুত শাসক রাজত্ব করতেন। পাহাড়ের উপর তারাপুর গ্রামে ছিলো এই পার্বত্য দুর্গ, নাম 'মান্ডপিকা' বা ' মন্ডপদুর্গ'। ষষ্ঠ শতকে মন্ডপের অপভ্রংশ মান্ডবের উল্লেখ বিভিন্ন পারসিক ইতিহাসে পাওয়া যায়। তার পর এই দুর্গটি ছিলো কনৌজের গুর্জর প্রতিহার সাম্রাজ্যের দক্ষিণ সীমা, যার রাজধানী ছিলো উজ্জয়িনীতে।

    দশম শতকের শেষে পরমার বংশীয় ক্ষত্রিয়রা ছিলো মালব বা মালোয়া রাজ্যের শাসক। তারা ছিলো প্রবল পরাক্রমী আর তাদের সময়ই রাজধানী উজ্জয়িনী থেকে ধার নগরে নিয়ে আসা হয়। তখন থেকেই মান্ডপিকা বা মান্ডু হয়ে ওঠে মালোয়া রাজ্যের কেন্দ্র। এই বংশের প্রবাদপ্রতিম রাজারা হচ্ছেন রাজা মুঞ্জ আর রাজা ভোজ। রাজা ভোজ ছিলেন একমাত্র ভারতীয় রাজা যাকে সুলতান মাহমুদ ঘজনি রেয়াৎ করে চলতেন। রাজা ভোজের নামে যতো জনশ্রুতি রয়েছে তার একমাত্র সমান্তরাল আমরা পাই রাজা চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের নামে। অর্থাৎ সমগ্র উত্তরাপথে হর্ষবর্ধন, পৃথ্বীরাজ চৌহান, রাণা প্রতাপ প্রমুখের খ্যাতি ম্লান করে এই দুজন মালবের রাজা মানুষের কল্পলোকে স্থায়ী স্থান করে নিয়ে ছিলেন। একটা কারণ আমি পেলাম। ভাবা যায়, রাজা ভোজের আরাধ্যা ছিলেন দেবী সরস্বতী। মধ্যযুগের ক্ষত্রিয় বংশীয় পরম পরাক্রান্ত নৃপতি ভজনা করতেন বাগদেবীকে। মান্ডু দুর্গে তাঁর আরাধ্যা সরস্বতী মূর্তির সঙ্গে একটি প্রাকৃত মন্ত্র পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত রাজা ভোজের রচনা।

    ১২৫৩ সাল পর্যন্ত মান্ডু দুর্গে শাসন করেছেন নানা হিন্দু রাজা। তার পর দিল্লির সুল্‌তান জলালুদ্দিন খলজি চৌহান রাজা জৈত্রসিংহের সময় মান্ডুদুর্গ লুণ্ঠন করেন। ১৩০৫ সালে আসে চূড়ান্ত আঘাত, জলালুদ্দিনের ছেলে অলাউদ্দিন খলজির সেনাপতি আইনুল মুল্ক পরাক্রান্ত সেনানায়ক কোকাদেবকে পরাজিত করে মান্ডু দুর্গ দিল্লি সল্‌তনতের অধিকারে নিয়ে আসেন। তার সঙ্গেই ধ্বংস করে দেন কাফেরদের দীর্ঘ প্রায় এক হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা হিন্দু পরম্পরার শিল্পকীর্তি, গর্বিত উত্তরাধিকার।

    . সুলতানি আমলে ধার-মান্ডুর শাসক ছিলেন ঘুরি বংশের দিলাওয়র খান। ইনি ছিলেন মহম্মদ বিন তুঘলকের একজন সেনাপতি। ১৪০১ সালে দিলাওয়ার খান স্বাধীন সুলতান হয়ে যান এবং তাঁর রাজধানী ধার-এ থাকলেও আজকের মান্ডু দুর্গের নির্মান শুরু করেন। ১৪০৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র অল্প খান সিংহাসন অধিকার করেন। অল্প খান স্থায়ীভাবে রাজধানী মান্ডুতে নিয়ে আসেন এবং রাজকীয় নাম গ্রহণ করেন, হোসাঙ্গ শাহ। হ্যাঁ, তিনিই মধ্যযুগের সেই বিখ্যাত নরপতি। সাতাশ বছরের রাজত্বে উত্তরে কাল্পি থেকে দক্ষিণে খেরলা পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। তাঁর সময়ের অতুলনীয় স্থাপত্য, যা এখন মান্ডুতে দেখা যায়, জামি মসজিদ, দিল্লি গেট এবং তাঁর নিজের মর্মর সমাধি মন্দির। মধ্যযুগের ঐতিহাসিকরা তাঁর সামরিক শক্তি ও পরাক্রমের গপ্পো নিয়ে উচ্ছসিত হয়েছিলেন। ১৪৩৫ সালে হোসাঙ্গ শাহের মৃত্যুর পর পুত্র ঘজনি খান সিংহাসন আরোহন করে নাম নেন মাহমুদ শাহ। এই মাহমুদ মাত্র এক বছর রাজত্ব করার পরই প্রাসাদ চক্রান্তের শিকার হন। বিষপ্রয়োগে তাঁকে হত্যা করে ঘনিষ্ঠ সহযোগী মাহমুদ খান মান্ডুর শাসনভার গ্রহণ করেন। মালোয়ায় ঘুরি বংশের দিন শেষ হয়।

    খলজি বংশজ মাহমুদ খান ছিলেন যোদ্ধা সুলতান। তেত্রিশ বছর ধরে সর্বদা লড়াই করে বেড়াতেন গুজরাট, ডেকান, জৌনপুর, বিশেষত মেওয়ার রাজ্যের সঙ্গে। এই শাসকটি এতো যুদ্ধবাজ হলেও তাঁর জ্ঞানপিপাসা ছিলো অসীম এবং প্রজারা তাঁকে শ্রদ্ধা করতো মানবিক চেতনার জন্য। তাঁর সময়ের আশরফি মহল, বিজয় স্তম্ভ ও জামি মসজিদের কিছু নির্মান এখনও মান্ডুতে দেখা যায়।

    মাহমুদ খানের পুত্র ঘিয়াসুদ্দিন ১৪৬৯ সালে রাজা হন। যুদ্ধবিগ্রহ বিশেষ না করে শান্তিতে একত্রিশ বছর রাজত্ব করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ, উদার, ন্যায়শীল ও বদান্য শাসক। কখনও মদিরা স্পর্শ করেননি আর মান্ডুর বিখ্যাত জাহাজ মহল তাঁরই কীর্তি। তবে তাঁর পৌরুষের গপ্পো হচ্ছে আল্টিমেট ফ্যান্টাসি। তাঁর হারেম ভরিয়ে রেখেছিলো ছিলো মাত্র পনেরো হাজার রূপসী নারী। এ ছাড়া সশস্ত্র পাঁচশো অতি সুন্দরী তুর্কি ও হাবসি নারী ছিলো হারেমের রক্ষক। তারা রাজাকে সর্বদা চারদিকে ঘিরে থাকতো। গদ্দাফি বোধ হয় এই রাজারই মন্ত্র শিষ্য ছিলো কোনও এক জন্মে।

    (নিজের কানে কানে বলি 'ধর্মপ্রাণ' হবার এরকম সুযোগ পাবার জন্য 'খলজি' হয়ে জন্মাতে হতো। ভেতো বাঙালির ছেলে হয়ে একটা জন্ম একেবারে বৃথা গেলো। 'ধর্মপ্রাণ' আর হওয়া হলোনা।)

    ঘিয়াসুদ্দিনের মৃত্যু হয় পুত্র নসিরুদ্দিনের দেওয়া বিষে। তা নসিরুদ্দিনও বেশিদিন টেকেন না। তাঁর পুত্র মাহমুদ শাহ -২ রাজপুত সেনাপতি মেদিনি রায়ের দৌলতে কিছুদিন রাজত্ব করেন। কিন্তু মেদিনি রায়ের পরাক্রম তাঁকে সন্দিগ্‌ধ করে তোলে। ষড়যন্ত্র করে মেদিনী রায়ের থেকে নিস্তার তো পান কিন্তু মঞ্চ দখল করে নেন গুজরাটের সুলতান মুজফ্‌ফর শাহ-২ য়ের পুত্র বহাদুর শাহ। এই বহাদুর শাহ ১৫২৬ সালে মাহমুদ শাহ-২ কে গ্রেফতার করে মান্ডুর দখল নিয়ে নেন। তার পর শোভাযাত্রা করে মান্ডুর নতুন নতুন দখলদারেরা আসতে থাকে। প্রথমে স্বয়ং হুমায়ুঁ, তার পর শের শা, শের শার সেনাপতি শুজাত খান এবং শেষে শুজাত খানের পুত্র মালিক বায়জিদ।

    মালিক বায়জিদ ১৫৫৬ সালে মান্ডুর শাসনভার হাতে নিয়ে নাম নেন 'বাজবহাদুর'। প্রথম প্রথম তিনি যুদ্ধবিগ্রহে বেশ আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু চন্দেল বংশীয় রানী দুর্গাবতীর হাতে পরাজয় তাঁকে নিরুৎসাহ করে দেয়। তিনি আশ্রয় নেন সুরসঙ্গীতের। এই সময়ই রূপমতী নাম্নী সেই স্বপ্নের রমণী তাঁর অনুগতা হয়ে পড়েন। তাঁদের নিয়ে নতুন কিম্বদন্তী আর লোককথার পরম্পরা গড়ে ওঠে। এই সময় দিল্লির সিংহাসনে স্বয়ং মির্জা জলালুদ্দিন শাহ আকবর। মুঘল সেনাপতি আধম খান মান্ডু অবরোধ করেন, বাজবহাদুর নিখোঁজ হয়ে যান আর রূপমতী বন্দী হয়ে আত্মঘাতী হন।

    এই ভাবে একদা গৌরবশালী মালোয়া রাজ্য তার গরিমা হারিয়ে মুঘল অধিকৃত একটি পরগনা মাত্র হয়ে পড়ে। তবে এই জায়গাটির সৌন্দর্য জীবনবিলাসী মুঘল সম্রাটদের, বিশেষত জাহাঙ্গির ও শাহজেহানকে আকৃষ্ট করতো। তাঁরা মাঝে মাঝেই মান্ডু আসতেন, জাহাজ মহলে থাকতেন আর মান্ডুর গুণগান করতেন। তাজমহল নির্মাণের আগে মুখ্য স্থপতি উস্তাদ হামিদকে শাহজেহান মান্ডু পাঠিয়েছিলেন হোসাঙ্গশাহের সমাধিসৌধের থেকে প্রেরণা নিতে।

    বস্তুত বাজবহাদুরের পতন থেকেই মান্ডুর নিজস্ব গরিমা শেষ হয়ে যায়। মুঘল যুগের শেষদিকে মরাঠা মল্‌হার রাও হোলকার ১৭৩২ সালে তৎকালীন মুঘল শাসক দিয়াবহাদুরকে তির্লার যুদ্ধে পরাজিত করে মান্ডুকে ধারের মরাঠা রাজত্বের মধ্যে নিয়ে চলে আসেন।

    ইতিহাসের গপ্পো অনেকের ভালো লাগেনা। তা সেতো অনেক মানুষ আছেন যাঁদের আমীর খানের মারোয়া আর রবিশংকরের নটভৈরবও ভালো লাগেনা। ইতিহাসের নিজস্ব রাগ-তাল-স্বরলিপি রয়েছে। বুঝ লোক যে জানো সন্ধান। আমি যখন ইতিহাস বিজড়িত এই সব প্রাসাদ-প্রাকার-মন্দির-মসজিদ-গির্জায় বিমুগ্‌ধ পায়ে হেঁটে বেড়াই, সেই সমস্ত বাদশা, আমীর, উমরাহ, মুনশি, খানসামা, হুক্কাবর্দার, চোপদার থেকে অন্তপুরিকার দল অশরীরী স্পর্শ নিয়ে আমার চারপাশে ঘিরে থাকে। জীবনানন্দ বারবার মনে পড়ে যায়। 'হাজার বছর পথ হাঁটিতেছি আমি'। বৈঠকখানার আরামকেদারায় নাকে চশমা এঁটে পড়া শুকনো প্যাপিরাস পাতা দমকা হাওয়ায় কোথায় উড়ে চলে যায়, রক্তমাংসের প্রবল জীবন্ত মানুষগুলি এসে হাত ধরে। এই রোমাঞ্চের কাছে অনেক সময়ই ম্লান হয়ে যায় প্রিয় মদিরার মধুস্বাদ, প্রিয় নারীর ঊষ্ণ স্পর্শসুখ। নিজেকে এইভাবে খুঁজে নেওয়া, এই ভাবে তার থেকে বিলীন হর্ষবোধ, দুনিয়ায় আর কী পাওয়া বাকি থাকে? এই যে 'আমি' তো তাদেরই উত্তরাধিকার। এই 'আমি'ও তো একদিন ইতিহাস হয়ে যাবো। আরও হাজার বছর হেঁটে যাওয়া পৃথিবীর পথে।

    কবিদের এইজন্যই ঋষি বলা হয়। তাঁরা সমগ্রকে দেখতে পান।

    . রূপমতী ছিলেন এক গুর্জর রাজপুত পশুচারণ বৃত্তিধারিনী কন্যা। বিরল রূপ, কণ্ঠস্বর ও সঙ্গীত দক্ষতার অধিকারিনী ছিলেন তিনি। আসলে মালোয়া অঞ্চলের সাঙ্গীতিক প্রসিদ্ধি অনন্য। আমাদের হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ধাত্রীগৃহ গোয়ালিয়র, ঝাঁসি, উজ্জয়িন, দেওয়াস, ইন্দোর। স্বামী হরিদাস, মিঁয়া তানসেন , বৈজু, মানসিং তোমর থেকে বাজবহাদুর, রূপমতী, মৃগনয়নী, মালোয়ার সন্তান। লোককথা বলে, বাজবহাদুর যখন যুদ্ধে হেরে গিয়ে নিরুৎসাহ, সান্ত্বনা খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন অপরিচয়ের ঘেরাটোপে রাজ্যের প্রত্যন্ত প্রান্তে, তখন এক মেষপালকদের দলে তিনি রূপমতীর গান শোনেন। তাঁর অবসন্ন মন সুরের শূশ্রূষা পায়। তার পর যা ঘটে তাতো এক কিম্বদন্তী। নৃশংস তুর্কি খলজি যুদ্ধব্যবসায়ী বাজবহাদুর সুরের কাছে আশ্রয় খুঁজতে থাকেন। প্রবল বাধা আসে রাজপুরুষদের কাছ থেকে, যখন তিনি রূপমতীকে বিবাহ করতে চান। কিন্তু ইসলামি ও রাজপুত মতে বিবাহ হয় তাঁর রূপমতীর সঙ্গে। সেই পথতো দিল্লীশ্বরোবা আকবর দেখিয়ে দিয়েছিলেন আরও বেশ কিছুদিন আগে। কিন্তু স্বজনেরা বাজবহাদুরকে ত্যাগ করে। রূপমতী আর বাজবহাদুর নিজেদের জগতে প্রায় নির্বাসিত হয়ে পড়েন। তবে সুরের পাগলের কী আর লাগে? সুরের জোগান ছাড়া আর কিছুতে কি আর রসের ভিয়েন জমে?

    ১৫৯৯ সালে আহমদ-উল-ঊমরি তুর্কোমন, শরফুদ্দিন মির্জার দেওয়ান ছিলেন তিনি, ফার্সিতে রূপমতীর গপ্পো লেখেন। তিনি রূপমতী রচিত ২৬টি কবিতার সংকলন সংগ্রহ করেন। নানা হাত ঘুরে সেই পান্ডুলিপিটি ১৯২৬ সালে এল এম ক্রাম্প
    সাহেব ইংরিজিতে অনুবাদ করে একটি বই লেখেন, The Lady of the Lotus: Rupmati, Queen of Mandu: A Strange Tale of Faithfulness

    আকবর বাদশা, মুঘল সেনাপতি আধম খানকে পাঠিয়েছিলেন মালোয়া দখল করতে। প্রবল পরাক্রমী আধম খান চুনোপুঁটি মান্ডু দুর্গের দখল নেওয়ার চাইতে অনেক বেশি আগ্রহী ছিলেন বাজবহাদুরের স্ত্রীরত্নটিকে অধিকার করতে। মান্ডুর অশক্ত সৈন্যবাহিনী যখন মুঘল সেনাপ্লাবনে শেষ হয়ে গেলো, বাজবহাদুর যাত্রা করলেন চিত্তোর। মেওয়ারের রাণা ছাড়া মুঘলদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর হিম্মত তখন আসমুদ্র হিমাচলে কারুর ছিলোনা। কিন্তু রূপমতীকে রক্ষা করতে তিনি পারেননি। আধম খান রূপমতীকে অধিকার করতে চাইলেন, প্রত্যুত্তরে রূপমতী ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়ালেন, বিষপান করে আত্মঘাতিনী হলেন।

    . মালোয়া প্লেটো তৈরি হয়েছিলো বিন্ধ্য রেঞ্জের দক্ষিণপ্রান্তে আগ্নেয় লাভার ভূমিতে। এখানে পর্বতশিখরে একেবারে সমতল সবুজ তৃণভূমি বা পাথুরে ডাঙা প্রায়ই চোখে পড়ে। আমার চালক এনে দাঁড় করায় এরকম একটি দীর্ঘ সমতল উপত্যকার সামনে। তাকে ঘিরে আছে গভীর গিরিখাত। ক্যানিয়নের মতো গাম্ভীর্য তার। একটি পাথরের ফলকে অশ্বক্ষুর ছাপ দেখিয়ে বলে এটি আল্‌হার ঘোড়ার পায়ের থেকে এসেছে। আচ্ছা, আল্‌হা আর উদল, প্রায় পুরাণযুগ থেকে বুন্দেলখন্ডের দুজন হীনযানী আইকনের নাম এখানে আর কতোজন জানেন? তাঁদের নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ইতিহাস, নৃতঙ্কÄ, সমাজতঙ্কÄ নানা বিষয় চলে আসবে। আজ থাক সে প্রসঙ্গ।

    আমি ভাবি এই পায়ের ছাপের বীরপূজা বোধ হয় মানুষের মজ্জাগত। গয়ায় বিষ্ণু পাদপদ্ম, অযোধ্যায় রাম, বোধগয়ায় বুদ্ধ, আরো কতো সব। এই সেদিন দেখলাম প্রয়াত ভূপেনদার মৃতপদছাপ নিয়ে মানুষ ক্যামেরার সামনে প্রদর্শন করছে। হায়, অন্তর্যামী....

    চড়াইয়ের পথে গাড়ি মান্ডু পৌঁছোতে থাকে। প্রথমে দেখি দিল্লি দরোয়াজা, তার পর ভাঙ্গি দরোয়াজা, আলমগির দরওয়াজা, গাড়ি দরওয়াজা, কমানি দরওয়াজা ..... এককালের দুর্ভেদ্য দ্বারপথ সব।

    এর পর গাড়ি এসে দাঁড়ায় গদা শাহ কে হাবেলিতে। খন্ডহর সে পতা চলে, ক্যা আলিশান থি মহল কভি। গদা শাহ মানে ভিক্ষুকদের রাজা। কিন্তু এই হাবেলি এবং তৎসংলগ্ন গদা শাহ কে দুকান ইঙ্গিত দেয় কোনও এক অতি শক্তিশালী রাজপুরুষের সম্পত্তি এটি। এখানকার কিছু প্রত্নচিণ্‌হ থেকে অনুমান করা হয় এই প্রাসাদময় নির্মাণটি ছিলো ঘুরি সুলতান মাহমুদ শাহ -২ য়ের পরাক্রান্ত রাজপুত সেনানায়ক মেদিনি রায়ের আবাস। এখানে রয়েছে বিখ্যাত হিন্দোল মহল, যা ছিলো বস্তুত গৃহস্বামীর দিওয়ান এ খাস আর গদা শাহ কে দুকান ছিলো দিওয়ান এ আম। একটা কথা, আমি স্থাপত্যের বর্ণনা ভারে বিড়ম্বিত করবো না, পাঠক ইচ্ছে হলে ছবি দেখে নেবেন।

    পায়ে পায়ে এসে পড়ি সুলতান হোসাঙ্গ শাহের নির্মিত জামি মসজিদ। যার নির্মান সম্পূর্ণ হয়েছিলো ১৪৫৪ সালে মাহমুদ খলজির হাতে। এটি দামাস্কাসের বিখ্যাত মসজিদের অনুসরনে পরিকল্পিত হয়েছিলো। তিরিশটি সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে একশো মিটার বর্গাকারে নির্মিত রাজকীয় গরিমার স্থাপত্য। এর বারান্দা, অলিন্দ, আঙ্গিনা, প্রদক্ষিন পথ, ছত্রি, ছজ্জা, সব মিলিয়ে এককথায় অনন্য। মসজিদটির ভিতর দিয়েই চলে যায় হোসঙ্গ শাহের সমাধি সৌধের পথ। এই মর্মর প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিলো প্রায় একই সময়ে , অর্থাৎ পনেরো শতকের প্রথমদিকে। সত্যি কথা বলতে কি একমাত্র তাজ ছাড়া এই গোত্রের মর্মরসৌধ আমি সারা দেশে আর দেখিনি। মুঘল কীর্তি ব্যতিরেকে এই স্কেলের স্থাপত্য বোধ হয় আর কোনও দেশীয় রাজা কখনও ভাবতে পারেননি। শাহজেহান ১৬৫৯ সালে এখানে নিজে এসে মুগ্‌ধতা জানিয়েছিলেন। তাজের মুখ্য স্থপতি উস্তাদ হামিদ রাজাদেশে এই নির্মানটি দেখতে এসেছিলেন, সেকথা আগেই লিখেছি। এর স্থাপত্যের মধ্যে রয়েছে হিন্দু ও পারসিক ধারার সঙ্গম। সৌধটির একপাশে টানা চলে গেছে সম্পূর্ণ হিন্দু স্থাপত্যধারায় নির্মিত ধরমশালা।

    জামি মসজিদের ঠিক সামনেই আছে আশরফি মহল বা মদ্রাসা। এটি মাহমুদ শাহের নির্দেশে তৈরি হয়েছিলো। এর চত্বরেই আছে বিজয়স্তম্ভের অবশেষ আর তাঁর সমাধি। এর গ্র্যাঞ্জারও দেখার মতো।

    এখান থেকে সোজা দক্ষিণদিকে যেতে পথের ডানদিকে সরায় কোঠরি, তার পর দরিয়াখানের মসজিদ ও সমাধি। দরিয়া খান মাহমুদ শাহের একজন প্রভাবশালী রাজপুরুষ ছিলেন। এখানে মসজিদ ও সমাধিসৌধ ছাড়া রয়েছে সোমবতী কুন্ড নামে একটি জলাশয় এবং লাল সরাই নামে একটি বিশাল সরাইখানা। এই দুর্গে সরাইখানার প্রাধান্য দেখলে বোঝা যায় এককালে বাণিজ্যে এই এলাকা কতো অগ্রসর ছিলো।

    . পথ গিয়ে পৌঁছোয় প্রথমে বাজবহাদুরের মহল এবং তার উল্টোদিকে রেওয়াকুন্ড জলাশয়ে। তার পর পথ উঠে যায় চড়াইতে রূপমতী মহলের দিকে। রেওয়া কুন্ড বেশ প্রাচীন জলাশয়। স্থানীয় ইতিহাস বলে তার জলের পবিত্রতার স্বীকৃতি আছে। রূপমতী মহল দু থেকে তিন তলা উঁচু নির্মান। একাধিক শৈলির মিশেল দেখা যায় এখানে। তাই মনে হয় বেশ কয়েকপর্বে তৈরি হয়েছিলো এই বিশাল প্রাসাদটি। রূপমতী বসবাস শুরু করার অন্তত একদেড়শো বছর আগেই এই নির্মানটি সম্পূর্ণ হয়ে গেছিলো। এই বিশাল প্রাসাদটির ছাতে দুটি ছত্রি আছে। সেখান থেকে আদিগন্ত মালোয়ার ভূপ্রকৃতি দেখা যায়। রূপমতী এখান থেকে সুদূর নর্মদা নদীর ধারার উদ্দেশে প্রণাম জানাতেন, এই রকম কিম্বদন্তী আছে। অন্যদিকে চড়াইয়ের নিচের দিকে বাজবহাদুরের প্রাসাদের ছত্রি নজরে পড়ে।

    উৎরাইয়ের পথে ডানদিকে শেষে বাজবহাদুরের মহল। এই প্রাসাদটির স্থাপত্য বেশ রম্য। খুব বড়ো নয়, কিন্তু রুচির ছাপ আছে। একটা কথা আমার মনে হয় মান্ডু কেল্লা আর গোলকোন্ডা কেল্লা, দুটো ই মুঘল সৈন্যদের হাতে নষ্ট হয়েছিলো, কিন্তু মান্ডু কেল্লা অপেক্ষাকৃত অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে। হয়তো আমাদের পুরাতঙ্কÄ বিভাগ এখানে অধিক সক্রিয় বলতে হবে।

    . মান্ডুর শেষ দর্শনীয় নিদর্শনটি অবশ্যই বিখ্যাত জাহাজমহল।

    পথে পড়লো ছড়ানো ছেটানো নানা পুরাকীর্তির নিদর্শন। লাল মহল, চিশতি খান মহল, ছপ্পন মহল, নীলকণ্ঠ মহল। ছপ্পন মহলটি ষোড়শ শতকের নির্মান। একটু অন্য ধরনের, হিন্দু ধারার অলংকরণের মাত্রা বেশি চোখে পড়ে। নীলকণ্ঠ মহলটি বস্তুত একটি শিব মন্দির। একটি শিব লিঙ্গের পূজা হয় এখানে । এর বিশেষত্ব হচ্ছে সমগ্র প্রাসাদটি পাহাড়ের ঢাল কেটে তৈরি করা হয়েছে। একষট্টিটি সিঁড়ির ধাপ নেমে মন্দিরের আঙিনায় ঢোকা যায়। আমি সারা দেশে নানা সময়ের নানা শৈলির শিবমন্দিরের স্থাপত্য দেখেছি। কিন্তু এই মন্দিরটি একেবারে ভিন্ন রূপের নির্মান। সামনে দাঁড়ালে এটিকে একটি মসজিদের প্রার্থনা মন্ডপ ছাড়া কিছু মনে হয়না। সম্পূর্ন তুর্কো-ইরানিয় স্থাপত্যে তৈরি গর্ভগৃহ ও নাট মন্ডপ। সামনের চত্বরে ইসলামি রীতিতে স্থাপিত একটি ফোয়ারা। এই মন্দিরটির ভিতরদিকের দেওয়ালে আকবরের সময়ের দুটি ফার্সি শ্যের খোদিত আছে। একটু অক্ষম অনুবাদে লিখি,

    'আর কতোদিন তোমার প্রাসাদ
    তোমার অহংকার
    তোমায় স্বর্গের স্বাদ দেবে
    তোমার বিফল জীবন শূন্য হৃদয়
    ব্যঙ্গ করবে
    শেষ যাত্রার পথ

    সময় আছে, সতর্ক হও
    অন্যের ইতিহাস দেখে শেখো
    নয়তো স্বর্গ তোমায়
    ইতিহাস শেখাবে একদিন....'

    দ্বিতীয়টা এই রকম,

    'ভোরবেলা দেখলাম
    শরোয়ান শাহের অলিন্দে
    একটি প্যাঁচা ডাকছে
    সে জানাচ্ছে একটি সতর্কবার্তা
    কোথায় গেলো তোমার সেই আড়ম্বর
    আর মদগর্বের ইতিহাস ?'

    আকবর নাকি তাঁর একজন সেনাধ্যক্ষকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এই মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষন করার জন্য।

    ১০. জাহাজমহল সত্যি শিহরণ জাগায়। এই বিপুল প্রাসাদটি তার নিজের সময় কতোটা সাড়ম্বর সঙ্ঘারাম ছিলো এখনও সে কথা ভাবলে রোমাঞ্চ হয়। একদিকে মুঞ্জ তালাও অন্যদিকে কপুর তালাও, মাঝখানের একফালি স্থলভূমিতে ১২২ মিটার দৈর্ঘ, ১৫ মিটার প্রস্থের এই প্রাসাদটি জলের মাঝখানে জাহাজের মতো দাঁড়িয়ে আছে। পাশের তাভেলি মহলের ছাত থেকে কোনও জ্যোৎস্না রাতে এই সম্পূর্ণ প্রাসাদ চত্বরটি অভিরাম ছবি হয়ে ওঠে। নিজের কথা নয়, একটু জাহাঙ্গিরনামা থেকে উল্লেখ করি। তিনি যখনই মান্ডু আসতেন সম্রাজ্ঞী নূর জাহানকে নিয়ে এই প্রাসাদেই অবস্থান করতেন। এই সময়ে তাঁর জন্য নানা জাঁকজমক পূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। এরকম একটি অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে তাঁর নিজের ভাষায় বর্ণনা, ' এ এক অপূর্ব আয়োজন। সন্ধে হতেই শত শত আলোর লন্ঠন আর দীপমালা দিয়ে সমগ্র প্রাসাদ আর জলাশয় দুটি সাজিয়ে তোলা হলো। এরকম সৌন্দর্য আর শোভা আমি কোথাও দেখিনি এ পর্যন্ত। ঐ সরোবরের জলে সব লন্ঠন আর দীপমালার প্রতিচ্ছায়া দেখে মনে হচ্ছিলো যেন জলের উপর আগুন ভাসছে। বিপুল মাপের বিনোদনের আয়োজন ছিলো সেখানে আর মদ্যপরা নিজেদের ডুবিয়ে দিয়েছিলো পানীয়ের স্রোতে।'

    মুঞ্জ তালাও ঘিরে রয়েছে প্রাচীন রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। জাহাজমহলের দোতলার অলিন্দ থেকে ঐ জলের পরিধিময় সারি সারি ভগ্ন স্থাপত্যদেখলে তুর্কো-ইরানিদের রোমান্টিক ভাবনার জগতের কিছুটা ছোঁয়া পাওয়া যায়। জনান্তিকে বলি, মনে মনে নিজেকে ঘিয়াসুদ্দিন রাজা বলে ভাবতে তো কোনও বাধা নেই। ভাবা যাক, আমি তাকিয়ে রয়েছি ঐ দীর্ঘ হর্ম্যসারির দিকে, যেখানে আমার আশ্রিত পনেরো হাজার রূপসী নারীর দল অপ্সরাদের মতো জলকেলি করছে। পাঁচশো শ্রেষ্ঠ তুর্কি সুন্দরী আমার দেহরক্ষক হয়ে আমায় ঘিরে রয়েছে। আমি দিনে পাঁচের জায়গায় দশ বার নমাজ অদা করছি আর বাকি সময় ভালোবাসার মাহাত্ম্য প্রচার করছি। আমার একটা ফার্সি স্লোগান পরবর্তী কালে ফিরিঙ্গি হিপিরা চুরি করে ইংরিজিতে চেঁচাবে, 'Make love, not war'। আমি পশ্চিমের ছত্রি থেকে একটু ঝুঁকে দেখি আমার পেয়ারের বেগমরা দোতলার হম্মামে সান্ধ্য স্নান সারছে আর নিচের হম্মামেও বেশ ভিড়। সব সুন্দরীরা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়াসে মত্ত। আমি এইসব দেখতে দেখতে সূর্যাস্ত নিয়ে একটা পদ্য নামানোর চেষ্টা করছি ( ওফ, অরিন্দম, মন্দচিন্তা দেবীর থেকে নিয়ে পদ্যটার একটা নাম দিয়ে দাওতো)।

    সিঁড়িটা সামনে দিকে। নামতেই কপুর তালাও। খুব সাজানো গোছানো। পুকুরের পাড় ধরে দুচারটে অলঙ্কৃত বেঞ্চি। তাজের সামনে যে হানিমুন বেঞ্চ আছে তার অনুকরনে এখানে যেসব লোকজনের মনে প্রবল ব্যথা, তারা পরস্পর হাত ধরাধরি করে ছবি তোলে ( মনে আছে, আমাদের ব্রতীনবাবুও কিছুদিন আগে সস্মিত ধর্মপত্নীর পাশে বসে অত্যন্ত ব্যাজারমুখে ছবি তুলে বাজারে ছেড়েছিলো)। আমার এবার সেরকম কোনও জোগাড় ছিলোনা।

    মান্ডুতে পর্যটকেরা আসে সাধারণত শেষ বর্ষায়। দিগন্তে মেঘ আর মাটিতে মালবিকা, এই কম্বিটা দুরন্ত। তবু বলি যেকোনও সময় সুযোগ মতো জাহাজমহলে একটা রাত্রিবাস করলে হরিপদ কেরানি হয়ে জন্মানোর অভিশাপ থেকে একদিনের অব্যাহতি পাওয়া যাবে, যাবেই। তারপর হয়তো বিবাহের নিষ্ঠুরতা হয়ে উঠবে আরও প্রবল, নিম যাতনাময়, তবু.... একটাই তো জন্ম পাওয়া গেছে.......

    ফেরার পথ আবার পতন অভ্যুদয় বন্ধুর পন্থা। এবার ধার-এর পথ ধরতে গিয়ে আমার চালক একটি মোড় মিস করলো এবং তার বিনিময়ে আমরা পুরো একশো কিমি গভীর গহন গ্রামের পথ ধরে, মালোয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম্য ভূগোল পার হয়ে ইন্দোরের দিকে যেতে লাগলাম। যেদেশে 'রাজপথ'ই চাঁদের অপর পিঠ, সেখানে সেই সব প্রত্যন্ত গ্রামের শুধু ধূলিরেখা সম্বল পথের অছিলা, গাড়িতে বসে উপভোগ করার যে শান্তি তা শুধু ভুক্তভোগীই বোঝে। এহ বাহ্য, আমি তো তখন ঘিয়াসুদ্দিন রাজা। চোখ বুজে একজন একজন প্রাসাদসুন্দরী মালবিকার রূপসুধা স্মরণ করতে করতে এসে গেলো রাজা ভোজ বন্দর।

    এবার উড়ে যাওয়া মান্ডু কেল্লা থেকে গোলকোন্ডা কেল্লার আশ্রয়ে।

    ছবির লিং: https://picasaweb.google.com/103279716929236287567/Mandu#
    https://picasaweb.google.com/103279716929236287567/Mandu2#
  • ranjan roy | 14.97.***.*** | ১৯ নভেম্বর ২০১১ ০৩:০১503038
  • শিবাংশু,
    একেবারে "" আমি মুগ্‌ধ, উড়ে গেছ ফিরে এসো চাকা''।
    একটা কথা,মধ্যপ্রদেশের মালব-রাজস্থান বলয়ে ""আলহা'' নামে যে ব্যালাড্‌ ধর্মী লোকগীতির প্রচলন আছে , যাতে
    রাজা-বীরপুরুষদের গৌরবগাথা গাওয়া হয় তাকি এই প্রাচীন দুই ভাই আলহা-উদলের থেকে এসেছে?
    আমি লেখা এবং অন্য চারুকলার ক্ষেত্রে অধিকারী ভেদ, জাতিভেদ মানি। আসল রসিক না হলে--।
    এমনি লেখা আমার হাত দিয়ে চেষ্টা করলেও বেরোবে না।:))))

  • kiki | 59.93.***.*** | ১৯ নভেম্বর ২০১১ ১৮:০২503039
  • :P
  • pi | 72.83.***.*** | ২০ নভেম্বর ২০১১ ১১:০২503040
  • আমার হারিয়ে যাওয়া ক্যাসেটের বড় পছন্দের রাগপত্তর আবার শুনতে পেলাম :)


  • Shibanshu | 117.195.***.*** | ২০ নভেম্বর ২০১১ ১৪:১৬503041
  • পাইদিদিকে অনেক ধন্যবাদ লিং-টির জন্য। মালোয়ার এক শ্রেষ্ঠ সন্তানের প্রথম বয়েসের এই রচনাগুলো অনেক শুনেছি, কিন্তু সুন্দর কখনও পুরাতন হয়না। বিশেষত সহজে রাগগুলির সুর ও রাগরূপ
    যাঁরা ধরতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য এই রূপায়ণগুলি একেবারে আদর্শ নিদর্শন।

    আর মান্ডুর ছবির প্রথম অ্যালবামটি যাঁরা দেখতে পাননি আমার ক্যাবলামির জন্য, তাঁদের সময় নষ্ট করার জন্য আমি মার্জনাপ্রার্থী। যদি নষ্ট করার মতো সময় আবার পান, তবে আরেকবার গেলে মনে হয় দেখা যাবে। সুন্দরের স্মৃতি সবার সঙ্গে যতো ভাগ করে নেওয়া হয়, ততো বেশি উপভোগের আনন্দ পাওয়া যায়। মনে হয় ছবিগুলি সবাইকে সেই সৌন্দর্যের স্পর্শ সামান্য হলেও দিতে পারবে, যা আমাকে মুগ্‌ধ করেছিলো।
  • jhumjhumi | 117.194.***.*** | ২১ নভেম্বর ২০১১ ১৫:২৭503042
  • খুব ভালো লাগলো।এতো সুন্দর লেখা, মনে হচ্ছিল যেন সেই সময়ে পৌঁছে গিয়েছি,চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। আপনার শান্তিনিকেতন-পৌষমেলার লেখাটাও বেশ ভালো লেগেছিল,ভেবেছিলাম আরো খানিকটা লিখবেন। কিন্তু আর দেখতে পাইনি।
  • siki | 123.242.***.*** | ২১ নভেম্বর ২০১১ ১৫:৪৪503043
  • শিবাংশুদা কে একঘর অভিনন্দন। প্রাণ মন ভরে গেল।

    লেখাটা বেরনো মাত্রই পড়েছি, তবে মোবাইল থেকে, ফলে তখনই মন্তব্য লিখতে পারি নি, তারপরে আর খেয়াল ছিল না।

    কী হবে কমেন্ট ট্যাগিং লাইক আনলাইক লুক ফীল এসবের পেছনে সময় খরচা করে? গুরুর আসল সৌন্দর্য হচ্ছে এইসব লেখা। গুরুর চরিত্র। এর চেয়ে ভালো অলঙ্করণ গুরুর গায়ে মানায় না।

    এই সমস্ত লেখার জন্য আমি গুরু পড়ি।
  • pi | 72.83.***.*** | ২১ নভেম্বর ২০১১ ১৬:০২503044
  • গুরুর লুক, ফীল, এসবের পিছনে সময় খচ্চা করা হচ্ছে বুঝি ? :)
    এসব লেখাই যাতে আরো লোকে পড়তে পারেন, যাঁরা পড়তে চান, কিন্তু নানা অসুবিধার কারণে পড়তে পারেন না, পড়লেও মতামত দিতে চেয়ে দিতে পারেন না, পরে পড়তে গিয়ে খুঁজে পান না ... , সেই অসুবিধা গুলো কমানোর চেষ্টাই তো করা হচ্ছিলো :)

    এই টইতে লেখার জন্য সরি। আসলে এই কাজগুলোর সাথে গুরুর চরিত্রহননের ভয় নিয়ে এত পোস্ট দেখে, শেষে সিকির থেকেও, না লিখে পারলুম না :(

    শিবাংশুদা, ঐ সহজ করে বুঝিয়ে দেবার জন্য ঠিক নয়, ঐ ক্যাসেটের ঐ প্রথম কামোদ আর শেষের ঠুমরীটার জন্য পাগল ছিলাম। আপনার লেখা ওদেরকে মনে পড়িয়ে দিল। ওগুলো শুনে্‌ল যেমন লাগতো, সেইরকম কিছু। থ্যাংকু টা তাই আপনার প্রাপ্য :)
    ( এখানে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে, তাও বলি, কেন কোন রাগ বেশি টানে, কেন কোনোঅটা নয়। একটা দুটো স্বরবিনুআসের পার্থক্যে মুড কি ভালোলাগা খারাপলগার কী প্রচণ্ড তফাত হয়ে যায়, এ নিয়ে আমার অনেকদিনের কৌতূহল। পরে অন্যত্র বিশদে লিখবো। তবে এই ক্যাসেটের লিং টা তার প্রকৃষ্ট উদা:। রাগেশ্বরী রাগটা যেমন একেবারেই নিতে পারিনা )।
  • Manish | 59.9.***.*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০১১ ১৮:৩৯503045
  • নীবীবন্ধ,নীপবিথী, নির্ঝর

    কথাগুলো বাংলা মানে কি।
  • ranjan roy | 14.97.***.*** | ০৮ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:০৮503036
  • আমার বেহালার পর্ণশ্রীর ভাইয়ের নাম নির্ঝর= ঝরণা,
    ওর মেয়ের নাম নীপমঞ্জরী, নীপ কোন ফুল জানিনা। নীপবীথি মানে সেই ফুলের কুঞ্জ বোধ হয়।
    নীবিবন্ধ বোধহয় মেয়েদের কোমরবন্ধ, আন্দাজ:))))
    ইদানীং জেনেছি ক্রন্দসী= আকাশ, ( আগে ভাবতাম কাঁদুনে মেয়ে!)
    ইন্দ্রলুপ্ত= টাক। কলম্ব=তির।
  • jhumjhumi | 14.99.***.*** | ০৮ ডিসেম্বর ২০১১ ২১:২০503037
  • নীপ মানে কদমগাছ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন