এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • achintyarup | 59.93.***.*** | ১৭ মে ২০১১ ০৫:২০475008
  • চওধবী কা চান্দ হো ইয়া আফতাব হো/ যো ভি হো তুম খুদা কি কসম, লাজওয়াব হো... কোথায় ট্রানজিস্টার চালিয়েছিল কেউ। সন্ধের আগে থেকেই আকাশ অন্ধকার ছিল মেঘে। সন্ধে থেকে ঝেঁপে বৃষ্টি। গর্ডন সাহেবের বাংলোর বারান্দা ভিজে যাচ্ছে জলের ঝাপটায়। গান চলছে রেডিওতে। জুলফেঁ হ্যাঁয় যৈসে কান্ধে পে বাদল ঝুকে হুয়ে/আঁখে হ্যায় যৈসে মায়ে কে পেয়ালে ভরে হুয়ে... নোয়েল গর্ডনের কানেই পৌঁছচ্ছে না সে গান। আরামকেদারায় হেলান দিয়ে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেন সাহেব, পা ভেজা বৃষ্টির ছাঁটে, মনে মনে হেঁটে বেড়াচ্ছেন ১৯৪৬-এর ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জের রাস্তায় রাস্তায়।

    আপন মনে গর্ডন বলে যান পুরোনো দিনের গল্প। বলেন ইট ওয়জ মাই ড্যাড'স গ্যাস্ট্রিক ট্রাবলস দ্যাট ব্রট আস টু দ্য গঞ্জ। কামারহাটি জুট মিলে কাজ করতেন বাবা, আর গ্যাস্ট্রিকের ব্যথায় ভুগতেন। তারপর সেই ছেচল্লিশ সালে একবার আমাদের সকলকে নিয়ে এখানে এলেন -- আমার তখন বোধ হয় কয়েক মাস বয়েস -- আর এক সপ্তাহের মধ্যে বাবার ব্যথা গায়েব। ব্যাস, ঠিক হয়ে গেল এখানে জমি কিনে ফেলা হবে। তারপর কেনা হয়ে গেল জমি -- খুব সস্তা ছিল তখন-- বাড়ি করা হয়ে গেল, আর প্রতি ছুটিতেই চলে আসতাম আমরা। কি সুন্দর সাফ-সুতরো ছিল তখন এ জায়গা, ছিমছাম বাংলো বাড়ি রাস্তার ধারে ধারে, প্রত্যেক বাংলোর সামনে অনেকটা জায়গা নিয়ে বাগান। তবে হ্যাঁ, জানোয়ারের ভয় ছিল। সে সময় ডাক এসে পৌঁছত বিকেলের পরে; চিঠি এসেছে কিনা খোঁজ নিতে লোকে পোস্ট অফিস যেত হাতে বন্দুক নিয়ে।

    খুব বর্দ্ধিষ্ণু জায়গা ছিল ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ তখন, বুঝলেন স্যার, সে আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। বেশ কয়েকটা বড় বড় দোকান ছিল, কসমেটিক্স, সিল্ক, আরও নানা রকম বিলিতি জিনিস পাওয়া যেত সে সব দোকানে। রাঁচি থেকে পর্যন্ত লোকে আসত এখানে দোকান-বাজার করতে। মনে করলে দু:খই বাড়ে কেবল। জুতোর দোকান ছিল এখানে, দুধ, ফল অফুরান... খেয়ে শেষ করা যেত না। কিন্তু সেল্ফ সাফিশিয়েন্ট হল না এ জায়গা। অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানরা তো আর চাষবাস করত না, সে সব ছোট কাজ মনে করত লোকে। ফলে যা হওয়ার তাই হল। আজকে দেখুন গঞ্জের চেহারা। জলে চোখ ভরে ওঠে গর্ডনের।
  • M | 59.93.***.*** | ১৭ মে ২০১১ ১৪:৫৮475019
  • হুম্ম,তাপ্পর----
  • saikat | 180.215.***.*** | ১৭ মে ২০১১ ১৫:০২475029
  • অচিন্ত্যর যেমন কর্ফু, আমার তেমন ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ। শুধু নাম শুনেই। সে জন্য ড্যামচি হতেও রাজী। :-)
  • Manish | 59.9.***.*** | ১৭ মে ২০১১ ১৯:৩৪475030
  • আহা থামলে কেনো নটবর?
  • achintyarup | 59.93.***.*** | ১৮ মে ২০১১ ০৫:৫৩475031
  • ঘড়িতে সাতটা কুড়ি বাজলেই শেষ প্যাসেঞ্জার ট্রেনটা ঝিকি ঝিকি করে লম্বা টিনের শেড দেওয়া প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চলে যায়। ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জও হাই তুলতে তুলতে গা এলিয়ে দেয় বিছানায়। স্টেশনের সামনে ফুটানি চকের ঝুপড়ি দোকানগুলোতে ঝাঁপ পড়ে। আলো নিভে যায়।

    ঠিক সেই সময় বৃষ্টি-ভেজা অন্ধকার রাস্তা ধরে গুটি গুটি বাড়ির দিকে পা বাড়ায় কিটি। মাথায় ফলের ঝাঁকা। কিছু বিক্রি হয়েছে, কিছু পড়ে আছে এখনও। বনজঙ্গলের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে লাল মাটির কাঁচা রাস্তা। খানা-খন্দ, গাড়ির চাকা বসে যাওয়া গর্ত, তাতে জল জমে আছে। একটা টর্চও সঙ্গে থাকে না কিটির। কিন্তু বাড়ি ফিরতেই হবে তাড়াতাড়ি। আজ নিয়ে দু হপ্তা হয়ে গেল সিলভিয়ার জ্বরটা সারছে না। সারাদিন বাড়িতে একা একা মেয়েটা কি করেছে কে জানে। সকালে কাজে বেরোনোর আগে খানিকটা কড়োয়া চাওল রেঁধে রেখে এসেছিল মেয়ের জন্যে। ভগবান জানে খেয়েছে কিনা। স্টেশন মাস্টার বলেছে খালারিতে নিয়ে গিয়ে বড় ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু পয়সা কোথায়?

    কিটির ভাল নাম ক্যাথরিন। ক্যাথরিন টেইক্সিরা। টি ই আই এক্স ই আই আর এ -- বানান করে বলে দেয়, যাতে ভুল না হয়ে যায়। কিটি মেমসাব বলে ডাকে লোকে। ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ স্টেশনে কাজ করে কিটি। কলা বিক্রি করে। এই করেই সংসার চালাতে হয় কোনো রকমে। গেট দিয়ে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে ডানদিকটায় ঝাঁকাটা নিয়ে বসে। ট্রেন এলে কিছু বিক্রিবাটা হয়। কখনো কখনো উঠে পড়ে চলতি রেলগাড়িতে। জীর্ণ শাড়ি-পরা কলাওয়ালির মুখে বিলিতি উচ্চারণের ইংরিজি শুনে অবাক হয়ে তাকায় প্যাসেঞ্জাররা। দু-এক ছড়া কলা বেশি বিক্রি হয়। কিন্তু রোজদিন সেটা পেরে ওঠে না কিটি। শরীরেরই বা দোষ কি? বয়েস হচ্ছে, দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটে না সব সময়। সাহায্য করারও কেউ নেই। সন্ধের অন্ধকারে বাড়ির রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হাঁপ ধরে যায়।
  • Nina | 12.149.***.*** | ১৮ মে ২০১১ ১৯:৫৯475032
  • চিন্টুবাবু
    কেটি যেন নটবরের পাড়ায় না যায় , দেখো!
  • achintyarup | 59.93.***.*** | ১৯ মে ২০১১ ০৫:৩৫475033
  • ফ্লোরেন্স গস-এর বয়েস আঠের। এদিকে চার কুড়ির বেশি বসন্ত পার করে ফেলেছেন, তার মধ্যে দু কুড়ি এই ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জেই। তাও আঠের ছেড়ে নড়বেন না মেম সাহেব। বললেন তার থেকে এক বছরও যদি বাড়িয়েছ আমার বয়েস, আই উইল কিল ইউ। এখনও প্রত্যেক দিন দশ থেকে পনের মাইল হাঁটেন নবযৌবনবতী এই জিহোভা'স উইটনেস। রোজ সকাল সাতটা পঁয়তাল্লিশএর ট্রেন ধরে চলে যান ডাকরা কি বাছরা, সেখানকার গাঁয়ের লোকেদের সঙ্গে দেখা করেন, কথা বলেন। না করে উপায় কি? মানুষকে শিক্ষা দেওয়াই তো কাজ ফ্লোরেন্সের। হাত ধরে পথ চিনিয়ে দিতে হয় যে তাদের।

    সেই ১৯৬৭ সালে এই গঞ্জে এসেছিলেন মেম। তাঁর সাহেব সিইএসসি-র চাকরি থেকে রিটায়ার করার পরেই। কলকাতার ঐ ছোট্ট বাড়িতে অতগুলো কুকুরের জায়গা হত না তো। তাই সাহেব আর মেম একটা বাংলো কিনলেন ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জে। বেশ কয়েক একর জমি শুদ্ধ। কুকুরদের দৌড়োদৌড়ি করার জন্য একটু জায়গার দরকার।

    সাহেব এখন আর নেই। আম-জাম-কাঁঠাল-লিচু গাছে ভরা দেয়ালঘেরা বিশাল মাঠের মাঝখানে বহুদিন মেরামত না-করা রং-চটা নড়বড়ে বাংলোয় একাই থাকেন ফ্লোরেন্স। আর থাকে তাঁর দুই "ডগি'। বলেন এরা ছাড়া তো আমাকে দেখাশোনা করার আর কেউ নেই। আমিও ওদের যত্ন-আত্তি করি।

    এতবড় জায়গার মধ্যে একা একা থাকতে ভয় করে না? ভয় কেন করবে? তুমি যদি কাউকে আঘাত না দাও কেউ কোনোদিন তোমার কিচ্ছুটি করতে পারবে না, জেনে রাখবে। এই ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জেই তো অন্তত তিন বার মাতাল ডাকাতদের হাতে পড়েছেন ফ্লোরেন্স। বাঁ হাতে পাঁচ জায়গায় ছুরির দাগ স্পষ্ট চোখে পড়ে এখনও। পরের পর চাকু চালিয়েছিল ডাকাতটা। সে প্রায় ন বছর আগের ঘটনা। কিন্তু ভয় পাননি মেমসাহেব। ফিরে দাঁড়িয়ে একখানা "গুড স্ল্যাপ' কষাতেই সে দৌড়ে পালাল।

    তবে এ সব হালফিলের কথা। ফ্লোরেন্স যখন প্রথম আসেন, এ জায়গা তখন এরকম ছিল না মোটেই। খুব শান্তির জায়গা ছিল ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ। শুধু সাপখোপের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হত একটু। সন্ধের পর সঙ্গে আলো নিয়ে চলাফেরা করতে হত। কিন্তু সবই কেমন পাল্টে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। নাও, দ্যা গঞ্জ ইজ ফুল অব রং পিপ্‌ল্‌। অ্যাংলো ইণ্ডিয়ানরা চলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। না গিয়ে করবেই বা কি? কমবয়েসী ছেলেমেয়েদের জন্যে কাজ কোথায় এখানে? দিস হ্যাজ বিকাম আ প্লেস টু ডাই। যে কয় ঘর অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান পড়ে রয়েছে তাদের নিজেদের মধ্যেও কোনো ইউনিটি নেই। প্রত্যেকে শুধু নিজেরটাই ভাবে, নিজের জন্যেই বাঁচে। এদের কাছে তাই ভগবানের কথা বলতে যান না ফ্লোরেন্স গস। দে আর সবজান্তাওয়ালাস।

    কেন এমনভাবে মরে যাচ্ছে ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ? মরবে না? অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানরা কোনোদিন চাষবাস করার চেষ্টা করেছে কি? গায়ের চামড়া একটু সাদাটে হলেই লোকে ভাবে তারা অন্য মানুষদের থেকে উঁচু জাতের জীব। তারা কেন কাদামাটি ঘাঁটবে? সে জন্যেই আজকে এই দুর্দশা। বিরক্তি ঝরে পড়ে ফ্লোরেন্সের চোখেমুখে।
  • achintyarup | 59.93.***.*** | ২০ মে ২০১১ ০৫:৩২475034
  • নোয়েল গর্ডন, কিটি, ফ্লোরেন্স গস... আরও কিছু অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান এখনও রয়ে গেছেন ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জে। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, বিরক্ত হন, কিন্তু এ জায়গার চুম্বক-টান ছিঁড়ে বেরিয়ে যেতে পারেন না কিছুতেই। সব দোষ সঙ্কেÄও ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ এখনও স্বর্গ তাঁদের কাছে।

    স্বর্গ ছিল। আর্নেস্ট টিমথি ম্যাকক্লাস্কি রতু মহারাজার কাছ থেকে দশ হাজার একর জমি লিজ নিয়ে যখন এ বসতি বানিয়েছিলেন তার পর বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত স্বর্গের চেয়ে কিছু কম ছিল না ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ। কিন্তু সে প্রায় আশি বছর আগেকার কথা। কলকাতায় জমি-বাড়ির ব্যবসা করতেন ম্যাকক্লাস্কি সাহেব। ছুটিছাটায় যেতেন রাঁচির আশেপাশে গাঁয়েগঞ্জে, বনেজঙ্গলে। শিকার খেলার শখ ছিল সাহেবের। হারহু বলে এক গ্রামে একখানা ঘরও বানিয়েছিলেন। সেখানে এসে থাকতেন। সেইসব মৃগয়ার দিনে ম্যাকক্লাস্কির সঙ্গী হতেন পিপি সাহেব। (ভদ্রলোকের পুরো নামটা খোঁজ খবর করে জোগাড় করতে পারিনি। কেউ যদি জানান খুশী হব।) এই পিপি সাহেব ছিলেন রতু মহারাজার এস্টেটের ম্যানেজার। সেই ম্যাঞ্জারসায়েবই মহারাজাকে বলেকয়ে ম্যাকক্লাস্কিকে জায়গাটা লিজে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

    কথাবার্তা চলল কিছুদিন, দরদামও নিশ্চয়ই হল, তারপর অবশেষে ১৯৩৩ সালে তৈরি করা হল কলোনাইজেশন সোসাইটি অব ইণ্ডিয়া লিমিটেড। সোসাইটির সঙ্গে চুক্তি সই করলেন মহারাজা। ঠিক হল সবশুদ্ধ ন'খানা গ্রামে তাদের ইচ্ছেমত ঘরবাড়ি বানিয়ে থাকতে পারবেন অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানরা। শর্ত শুধু একটা। গাঁয়ের আরিজিনাল রাহিয়ৎ বা খাজনাদাররা যে সব জমি ব্যবহার করে সেই সব জমিতে তাঁরা কিছু করতে পারবেন না। আরও একটা কথা লেখা ছিল চুক্তিতে। ঐ অঞ্চলের নদী এবং পাহাড়গুলির ওপর সোসাইটির কোনো দাবি থাকবে না।
  • achintyarup | 59.93.***.*** | ২১ মে ২০১১ ০৫:৪৫475035
  • হারহু, দুলি, রামডাগ্গা, কোঙ্কা, লাপড়া, হেসালং, মায়াপুর, মহুলিয়া আর বাসেরিয়া। চুক্তিমত এই নয়খানা গাঁয়ের অব্যবহৃত দশ হাজার একর জমির দখল নিল কলোনাইজেশন সোসাইটি। তারপর কোম্পানি হিসেবে রেজিস্ট্রেশন হল সোসাইটির এবং যে সব অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানরা এই নতুন কলোনিতে এসে থাকতে চায় তাদের কাছে শেয়ার বিক্রি শুরু হল।

    বেশ ভালো-ই শুরু হয়েছিল কলোনি তৈরির কাজ। বেশ কয়েক হাজার শেয়ার বিক্রি হয়ে গেল কিছুদিনের মধ্যেই। প্রায় সাড়ে তিনশ পরিবারও চলে এল ঘরদোর বানিয়ে বাস করার জন্যে। অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানরা এখানে একটা শহর তৈরির স্বপ্ন দেখেছিল। নিজেদের জন্যে এক নতুন রাজ্য গড়ে তোলার কথা ভেবেছিল। ব্রিটিশ রাজত্বে বেশির ভাগ সময়েই বিলিতি সাহেবদের সমান মর্যাদা তো পেত না তারা। ভারতীয় ইংরেজ সমাজের কঠিন জাতপাতের হিসেবে তাদের কোনো জায়গা ছিল না। কলোনাইজেশন সোসাইটির কোয়ার্টারলি মুখপত্রের নাম ছিল দ্য কলোনিয়াল অবসার্ভার। ১৯৪০ সালের অক্টোবর মাসে সে পত্রিকায় লেখা হল: ""We see in McCluskiegunge the beginnings of what the Moslems call Pakistan, but what we call Anglo-India. A place in India where we can foregather and mix freely.'' এক প্রান্তিক সমাজের আইডেন্টিটি খুঁজে পাওয়ার স্বপ্ন।

    সোসাইটি তৈরির বছর খানেকের মধ্যেই ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জে গিয়ে গুছিয়ে বসলেন অনেকে। ছোট্ট ছিমছাম একটা বসতি তৈরি করলেন। স্বপ্নের মত। ১৯৩৪ সালে কলোনিয়াল অবসার্ভারে লেখা একটি চিঠির খানিকটা তুলে দিচ্ছি: ""It is like a beautiful dream... no streets and drains for latrines and spittoons, no dirty leaves, waste paper and mud chatties to be served in and to trample on an evening walk, and lo, no... Dewalies,... riots, and any fear of Dacoities and Bomb throwing. It would be just splendid: Farming, Commerce and Industry, Dance Halls and Picture Houses for the money maker...''

    প্রকৃত প্রস্তাবে ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ ছিল এক ইউটোপিয়া, এক কল্পনাপ্রবণ অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানের স্বপ্ন, যা স্বপ্ন হয়েই থেকে গেল শেষ পর্যন্ত।
  • I | 14.99.***.*** | ২১ মে ২০১১ ২৩:২৩475009
  • ম্যাকলাস্কিগঞ্জ নিয়ে গুগল সার্চ মেরেছিলাম। প্রথম যে রেজাল্ট এল, সেটি উইকি'র। ছোট লেখা; শেষে বলা আছে বিস্তারিত জানতে এই লিং-এ ক্লিক করুন।
    লিং-এ ক্লিক করে কোথায় পৌঁছলাম বলুন তো ! বলতে পারলে কোনো প্রাইজ নাই : আমাদের চিন্টুবাবু'র লেখা ম্যাকলাস্কিগঞ্জের উপকথা-টাইমসের ই-পাতায়।
    সত্যি , ভায়া আমাদের রত্নবিশেষ ! যেম্নি ইঞ্জিরি, তেম্নি বাংলা। শুধু গোঁপ আছে , এই যা দু:খু !
  • dri | 117.194.***.*** | ২২ মে ২০১১ ০০:০৩475010
  • 'no streets and drains for latrines and spitoons' ১৯৩৪ সালে কোলকাতায় এই রেসপেক্টে সীনটা কেমন ছিল ভাবার চেষ্টা করছি। পাবলিক রেস্টরুম কি ছিল? ১৯৩৪ এ লন্ডনে নিশ্চয়ই ছিল।

    'no Dewalies' কেন! তখন কি বোম তোম ফাটতো? বোম থ্রোয়িং এর কথাও লেখা আছে।

    সিনেমা হল না লিখে 'পিকচার হাউস'টা খুব মজার। খুবই আনর্থডক্স, ইন্ডিয়ান ইংলিশ।

    ডান্স হল! এইসব আজকাল আর নেই, না? ইন্ডিয়ানদের ডান্স করতে অত হলটল লাগে না। ওসব উডেন ফ্লোরে সাহেবি খটাখট ডান্স।
  • achintyarup | 121.24.***.*** | ২২ মে ২০১১ ০০:২৭475011
  • শান্তিতে দু লাইন টোকারও জো নাই :-(
  • dri | 117.194.***.*** | ২২ মে ২০১১ ০০:৩৬475012
  • শান্তি, শান্তি!

    আমি শুধু রিফলেক্ট করছিলাম। উত্তর চাইনি।

    বায় দা ওয়ে, ফিনিশ হয়ে গেছে, না আরো আছে?
  • achintyarup | 121.24.***.*** | ২২ মে ২০১১ ০০:৪৫475013
  • আছে
  • Nina | 68.84.***.*** | ২২ মে ২০১১ ০৫:২৪475014
  • কই?
  • achintyarup | 59.93.***.*** | ২৪ মে ২০১১ ০৪:৪১475015
  • স্টেশনের সামনের ফুটানি চকে ভোর হয়েছে। ঝুপড়ি দোকানগুলোয় সবে উনুন ধরানো হয়েছে, ধোঁয়া উঠছে পাক খেয়ে। ব্রেকফাস্ট করার মত সেরকম কিছুই পাওয়া যায় না এই গুটি তিনেক দোকানে। হ্যাঁ, চা হবে, মিইয়ে-যাওয়া তেলচিটে গন্ধ-লাগা বিস্কুট হবে, আলু-ঠাসা সামোসা হবে, সস্তার সিগ্রেট হবে। বাঁশ কেটে বানানো বেঞ্চির ওপর বসে চা-সিগ্রেট খাওয়া চলে। কিটির পথ চেয়ে।

    মেঘ ঢাকা সকাল। ডানদিকে স্টেশনটাও ঝিমোচ্ছে। সামনে লাল মাটির রাস্তা এঁকে বেঁকে ঢুকে গেছে বনের মধ্যে। ঐ রাস্তা দিয়ে বেশ খানিকটা গিয়ে টিলার গায়ে কিটির বাড়ি।

    দূরে চোখে পড়ে লাতেহারের পাহাড়। মহালিখারূপ নয়, তবু কেমন যেন মনে হয় ওখানেই কোথাও তার ছোট্ট কুঁড়ের সামনে মোষ চরাচ্ছে রাজু পাঁড়ে, আর আপন মনে গাইছে -- দয়া হোঈ জী...

  • achintyarup | 59.93.***.*** | ২৪ মে ২০১১ ০৫:১৫475016
  • কিটিকে সবাই চেনে। অনেক জায়গায় লেখা হয়েছে তার কথা। মার্কিন দেশের টাইম ম্যাগাজিনেও। কিটি ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জের মুখ। বইয়ে পড়েছি সামনের লালমাটির রাস্তাটা দিয়ে টিলার দিকে এগোলে চড়াইয়ে উঠতে উঠতে এক সময় জঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে যাবে পথ, দুপাশে বড় বড় গাছের ফাঁকে মাঝে মাঝে চোখে পড়বে পরিত্যক্ত বাংলো। মালিকরা সে সব ঘর ছেড়ে কবে চলে গেছে অন্য কোনও হোম-এর খোঁজে। কিটি কিন্তু এখনও গড়গড় করে বলে যেতে পারে -- ঐ বাড়িটা ছিল স্টুয়ার্টদের, ঐটা পামারদের, ঐখানে থাকত ম্যাকিন পরিবার, তাদের পাশের বাংলোটা স্মাইথদের। ওরা কেউ থাকে না এখন। চলে গেছে সবাই। শুধু কিটি রয়ে গেছে জঙ্গলের মধ্যে তার বাংলোয়। তিন মেয়েকে নিয়ে।

    কিটির বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল আমার। কিন্তু লোকাল কণ্ট্যাক্ট ওমিজী বারণ করেন। বলেন বাইরের লোকেদের জন্য খুব একটা সেফ নয় ঐ জায়গা এখন।

    কিটির মা-র নাম ছিল মারজোরি রবার্টস। জন্মেছিলেন শিলং-এ, ১৯১২ সালে। মারজোরির ওয়েল্‌শ ঠাকুরদা ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীতে ছিলেন। ভদ্রলোকের ছেলে বিয়ে করেছিলেন এদেশী মহিলাকে। মারজোরির নামকরণ হয়েছিল গৌহাটির ওয়েল্‌শ প্রেসবাইটেরিয়ান চ্যাপেলে। আসামেই পড়াশোনা করে যুদ্ধের সময় নার্সের কাজ নিয়েছিলেন। পরে বিয়ে করেন এক গোয়ান পর্তুগীজকে। টেক্সেইরা। তাঁদেরই সন্তান ক্যাথরিন। ১৯৫২ সালে জন্ম, এই ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জে।
  • achintyarup | 59.93.***.*** | ২৬ মে ২০১১ ০৪:৩০475017
  • কিটির জন্য অপেক্ষা করি আর গল্প করি ওমির সঙ্গে। আচ্ছা, এ জায়গার নাম ফুটানি চক কেন? ওমি হাসে। বলে এই জায়গার লোকের ঘমণ্ড বহত। স্টেশনে আসার পথে রাস্তার দুধারে পুরোনো বাড়িগুলো দেখেছেন তো? অর্ধেকের মালিক বাঙালী আর মাড়োয়ারি। বাকি অর্ধেক কোনো রকমে টিঁকে আছে। যে কয়েক ঘর অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান এখনো আছে, তাদের অনেকেরই কোনোমতে পেট চলে। তাও বিকেলে এখানে এসে দেখবেন, ডলার-পাউণ্ডের গল্প করছে লোকে। অনেকে জীবনে আস্ত একটা পাউণ্ড চোখে দেখেছে কিনা সন্দেহ। একটা-দুটো বাড়ির কথা মনে আসে। ধ্বংসস্তুপ হয়ে আছে। ছাদ ভেঙ্গে পড়েছে, ঝোপজঙ্গল গজিয়ে আছে চারিদিকে। এক অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছি মনে পড়ে। শুনেছি তারা খুবই গরীব। কায়ক্লেশে দিন চলে। কিন্তু লোকালদের সঙ্গে কিছুতেই মিশবে না। কথাই বলবে না বাইরের লোকেদের সঙ্গে।

    এককালের রমরমা গঞ্জ আজকে ছোট্ট একটা ভূতুড়ে গাঁ। স্বপ্নের ভূত। ১৯৩০-এর দশকে যে ৩৫০ অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান পরিবার এসে বাসা বেঁধেছিল এখানে, তাদের মধ্যে মাত্র কুড়ি-বাইশ ঘর এখনো রয়ে গেছে। কারণ তাদের কোথাও যাওয়ার নেই। ঝাড়খণ্ডের আরওঅ অনেক গাঁয়ের মত মাওবাদীদের রাজত্ব এখানেও। সূর্যাস্তের পর রাস্তাঘাট নিরাপদ নয় মোটেই। বোমা আর গুলির শব্দে অভ্যস্ত হয়ে গেছে মানুষ। পুলিশ কি ফরেস্ট ডিপার্টমেণ্টের লোক এখানকার ত্রিসীমানার মধ্যে ঢুকতে পারে না। চুরি-ডাকাতিও বেড়ে গেছে শুনে আশ্চর্য হই।
  • Tim | 198.82.***.*** | ২৬ মে ২০১১ ০৪:৫৬475018
  • খালি গল্পেই পড়েছি। আবারও পড়ছি। মনখারাপ আর আপশোষ নিয়েই আরো একবার সেলাম ঠুকে গেলাম।
  • achintyarup | 59.93.***.*** | ২৬ মে ২০১১ ০৫:০০475020
  • আগের রাতে খাওয়া-দাওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন অতিবামপন্থী। চুরি-ছ্যাঁচড়ামি বন্ধ করার চেষ্টা কেন করা হচ্ছে না জিগ্যেস করাতে বললেন লোকে ভীষণ গরীব এখানে। কখনো লোভে পড়ে, কখনো পেটের দায়ে কেড়ে খায়। তবে এসব বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করা হয়, শাস্তিও দেওয়া হয়।

    যে সময়ে আমরা ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জে, তার বছরখানেক আগে টালিগঞ্জের এক নামজাদা অভিনেত্রী এবং তাঁর শুটিং-এর দলবলের ওপর আক্রমণ হয়। আক্রমণকারীদের একজনের সঙ্গে আলাপ হল। নাম ভুলে গেছি। ধরা যাক রামশরণ। বৃষ্টিভেজা সকালে ওমি আমাকে নিয়ে বেরিয়েছিল ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ দেখাতে। এখানে বোনার ভবন, এই বাড়িতে গাঙ্গুলীসাহেব হস্টেল খুলেছেন, এটা বুদ্ধদেব গুহর বাংলো, অপর্ণা সেনের কাছ থেকে কিনেছিলেন। গুহ সাহেবরা মাঝেমধ্যে আসেন। এইখানে কবরখানা। এই ফরেস্ট ডিপার্টমেণ্টের অফিস। তালাবন্ধ। কেউ ঢুকতেই পারে না এখন। চার্চ, পরিত্যক্ত ক্লাবঘর ইত্যাদি দেখানো হয়ে গেলে বলল, চলুন, আপনাকে একজন ইণ্টারেস্টিং লোকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। লালমাটির ভেজা রাস্তা ছেড়ে বাঁদিকে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়লাম আমরা। ওমি বলল পায়ের দিকটা নজর রাখবেন একটু, সাপখোপের ভয় আছে।
  • Nina | 68.84.***.*** | ২৬ মে ২০১১ ০৮:২৬475021
  • চিন্টুবাবু, বিষাদ-মধুর এক ছবি আঁকছ--- আস্তে আস্তে ফুটে উঠছে, একে একে পাওয়া না পাওয়ার কত রঙ----তুমি জাতশিল্পী, তোমারে সেলাম !
  • Some | 203.197.***.*** | ২৬ মে ২০১১ ১৯:০৭475022
  • জীবনের জলছবি, ন কি ক্যালাইডোস্কোপ! বার বার বদলে যাওয়া, জীবনের মানে।

    উন্মুখ হয়ে আছি পরের পর্বের আশায়।
  • siki | 122.162.***.*** | ২৬ মে ২০১১ ২১:২৯475023
  • মাঝে মাঝে এই প্রায়-নষ্ট-হয়ে-যাওয়া একটামাত্র জীবনের ওপর খুব রাগ ধরে ...

    আরেকটা জীবন পাওয়া যায় না? আগের জীবনের সমস্ত না-হয়ে ওঠার স্মৃতিসমেত?
  • hu | 12.34.***.*** | ২৭ মে ২০১১ ২৩:০০475024
  • খুব ভালো লাগছে এটা পড়তে। মা-বাবা একবার গেছিল ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। পুরোনো একটা বাংলোতে দিন দুয়েক ছিল। জায়গাটা খুব ভালো লেগেছিল শুনেছি। কিন্তু এত ইতিহাস তো জানতাম না। অনেক ধন্যবাদ।
  • achintyarup | 121.24.***.*** | ২৮ মে ২০১১ ১৮:২৮475025
  • সুখের দিন শেষ হতে শুরু করেছিল চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে। যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে পরেই। ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জে যারা বসত করতে এসেছিল তাদের হাতে ছিল যথেষ্ট কাঁচা পয়সা। তা না হলে কেউ এত হাজার হাজার টাকা দিয়ে নতুন কোম্পানির শেয়ার কিনে বনজঙ্গলের মধ্যে নতুন শহর তৈরি হবে সেই আশায় সেখানে থাকতে আসে? আরও একটা ব্যাপার। সেই পয়সাওয়ালা অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানদের প্রায় সকলেই ছিল যথেষ্ট বয়স্ক। অবসরপ্রাপ্ত বা অবসরের কাছাকাছি চলে এসেছে এরকম। কারণ এ জায়গায় তো চাকরির সুযোগ ছিল না। রোজগারের অন্য উপায়ও বিশেষ ছিল বলে মনে হয় না -- কিছু দোকান-বাজার ছাড়া। কিন্তু ঐ বয়স্ক অর্থবান মানুষদের ঘরে কমবয়সী ছেলেমেয়েও তো ছিল। তাদের বিশেষ কোনো ভবিষ্যৎ ছিল না এখানে।

    কিন্তু এসব চিন্তা কলোনাইজেশন সোসাইটির স্বপ্ন দেখার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কলোনিয়াল অবসার্ভারের আরেকটা লেখার এক টুকরো: ""We realise only too well that the money is in the hands of the elders of the Community…who would not be attracted to the Colony with the object of taking up agriculture for a living. But they have sons and daughters growing or grown children who perhaps have failed to secure much coveted posts and are wasting their time. These children could be trained in agriculture or industry and would come to the Colony full-fledged farmers or industrialists and help make the Scheme a success.''

    সে সব কিছুই হয় নাই, হায়।
  • achintyarup | 59.94.***.*** | ২৯ মে ২০১১ ০৫:১৭475026
  • বর্ষার জল পেয়ে থনথনে হয়ে উঠেছে বুনো ঝোপঝাড়। সরু পায়ে চলা রাস্তা কোথাও চোখে পড়ে, কোথাও পড়ে না। জঙ্গলের ভেতরেই পুরোনো একটা দালান-বাড়ি -- ফেলে যাওয়া সাহেববাড়িই হবে বুঝি -- তার সামনে গিয়ে পৌঁছই। ওমি হাঁক পাড়ে রামু, আরে ও রামু... সাড়া নেই। বলে, চলুন তো দেখি গিয়ে, নদীতে। বাড়িটা পাশে রেখে আরও জংলা পথে পা বাড়াই। বেশ খনিকটা গিয়ে একটু খালি জায়গা, তারপর দেখা যায় ছোট্ট নদী। নদীর খাতের মধ্যে কোদাল চালাচ্ছে রামু। একা হাতে তৈরি করছে চেক ড্যাম। বলে গর্মির সময়টায় বড় অসুবিধা হয় মানুষের। জলের খুব অভাব তো এখানে।

    নদীর জলে হাত ধুয়ে উঠে আসে রামু। সাতাশ-আঠাশ বছরের হাসিখুশি জোয়ান ছেলে। মুখে কথার চেয়ে হাসিই বেশি। চলতে চলতে হঠাৎ বলে দাঁড়ান। তরতর করে উঠে যায় পেয়ারাগাছে, বেশ কয়েকটা ডাঁশা পেয়ারা কোঁচড়ে নিয়ে নেমে আসে। নিজে ডাকাতি করেছে স্বীকার করে না, কিন্তু বলে লোকে কেড়ে নেবে না তো কি? দোকানে বাজারে গিয়ে তোড়া তোড়া নোট বার করতে দেখলে গরীব মানুষের মাথার ঠিক থাকে কখনো? নিন, পেয়ারা খান।

    রামুর সঙ্গে আলাপ করে মনটা ভাল হয়ে যায়।
  • achintyarup | 59.93.***.*** | ৩০ মে ২০১১ ০৪:২১475027
  • শুরু থেকেই গঞ্জের প্রতিষ্ঠাতাদের মাথায় ছিল যে এখানে থাকতে আসবেন কেবল বয়স্ক রিটায়ার্ড মানুষেরা আর মার্জিনালাইজড যুবক-যুবতীরা, যাদের অন্য কোথাও কোনো কাজ জোটেনি। কিন্তু শুধু এইটুকু রিসোর্স নিয়ে কি স্বভূমি গড়া যায়? দেখেশুনে মনে হয় ম্যাকক্লাস্কি সাহেবের চোখে স্বপ্ন যতটা ছিল, বাস্তববোধ হয়ত ততটা ছিল না। তার প্রমাণ পেতে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে হতে দেখা গেল কমবয়সী ছেলেমেয়েদের কোনো কাজ জুটছে না এই ছোটা ইংল্যাণ্ডে। ফলে শুরু হল এক্সোডাস। এক এক করে এই স্বপ্নের দেশ ছেড়ে চলে যেতে থাকল তারা। পেছনে পড়ে রইল যত্নে সাজানো বাংলোবাড়ি, ক্লাবহাউস, ক্রিসমাস বল আর সিনামন কেক। কেউ কেউ বাড়িজমি বেচে দিল কলকাতার বড়লোক বাঙালীদের কাছে, কেউ আবার খদ্দের পেল না, কিম্বা বেচতে মন চাইল না বলে অমনি তালাবন্ধ করে চলে গেল চিরকালের মত। তারপর ফেলে-যাওয়া ঘরবাড়িতে ধীরে ধীরে একদিন ফাটল ধরল, ছাদের টালিতে শ্যাওলা জমল, বুনো ঝোপ আর লতায় ঢেকে গেল যত্নে সাজনো বুগেনভিলিয়া আর প্যানজির বাগান। এই আঘাতের পর আর কোনওদিনই সামলে উঠতে পারেনি ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ।
  • achintyarup | 59.93.***.*** | ৩১ মে ২০১১ ০৩:২৬475028
  • ক্ষয়ের চিহ্ন সর্বত্র। পথে যেতে যেতে দেখা যায় ধ্বসে-পড়া পুরোনো বাড়ি, একটি মাত্র হেলথ সেণ্টারে গিয়ে দেখা যায় ডাক্তার নেই বহুদিন (কেউ আসতেও চায় না এই বিপজ্জনক জায়গায় ডাক্তারি করতে), মাথার ওপর বিদ্যুতের তার আছে, কিন্তু তাতে বিদ্যুৎ নেই, সন্ধের পর খুব টিমটিমে আলো কখনো জ্বলে, কখনো জ্বলে না, বিশাল জলের ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছিল বহুদিন আগে, কথা ছিল ঘরে ঘরে বসবে ট্যাপ-কল, জল পাওয়া যাবে চব্বিশ ঘণ্টা, কিন্তু ট্যাঙ্ক তৈরির পর কাজ আর এগোয় নি। বেশিরভাগ বাড়িতেই এখনো ভরসা কুয়োর জল, অথবা টিউবওয়েল।

    এত সব অন্ধকারের খবরের মধ্যে ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জে একমাত্র আলোর রেখা একটি ইস্কুল। ডন বস্কো অ্যাকাডেমি। মূল স্কুলটি যদ্দুর মনে পড়ছে পাটনায়। ১৯৯৭ সালে আলফ্রেড ডি রোজারিও চালু করেন তার ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জ শাখা। তারপর থেকেই, খুব অল্প হলেও, খানিকটা বদলেছে গঞ্জের চেহারা। বছর দুয়েক আগেও স্কুলের ছাত্রসংখ্যা ছিল ৭০০-র ওপর। আশ্চর্য ব্যাপার হল ছাত্ররা বেশিরভাগই আসে বাইরে থেকে। এবং স্কুলের নিজস্ব তাদের থাকার কোনো হস্টেল নেই বলে তাদের থাকতে হয় বিভিন্ন প্রাইভেট হস্টেলে। এই হস্টেলগুলো-ই এখন ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জের অধিবাসীদের উপার্জনের প্রধান উৎস।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন