এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • উত্তরাধুনিক লেখালেখির সহজ কৌশল, ÷

    Kulada Roy
    অন্যান্য | ২১ মে ২০১১ | ১৪১৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kulada Roy | 74.72.***.*** | ২১ মে ২০১১ ২০:৪৩474643
  • আমাদের দেশে কিছু ফিচেল গ্রুপ আছে। তারা কিন্তু ভূততাড়িতও বটে। সেটা পাকিপন্থী ভূত। সম্প্রতি তাদের পালের গোদাকে গুরুতেও গুঁতোগুতি করতে দেখা যাচ্ছে। যাবে না কেন? যাবেই তো। কারণ ভূতেরা ভূত বলেই সর্বত্রগামী। এবং নেশাকামী।

    এক ভৈদেশী মার্কা বহি নিয়া আলোচোনা দেখলাম। কাল আমার এক খালাতো ভউন জানালেন--লোকটি ঐ লোকটির মাত্র একটা বহিইতো পইড়াছেন। আর কিছুই পড়েন নাই বইলা শেষ লাইনে জানান দিতাছেন। অথচ লেখক সম্পর্কে বিশাল এক বিশ্লেষণ ফেঁদেছেন স্বল্প পরিপরে। এবং লেখাটির কোনো বাক্যই সঠিক নয়। মানে অর্থহীন। পূর্ণবাক্য লেখার খ্যামতা নাই।
    ভইন অবাক হইবেন না। ইহাই ভুতসাহিত্য। সো কলড ভূত্তরাধুনিক লিটারেচার। যিনি লিখছেন তাইনে স্কুলের গণ্ডিও পার করিতে পারেন নাই। কিন্তু তিনি মহাত্মা (ৎ) লেখক। বটে। মহাত্মা শব্দটি ভূতেদের বেলায় প্রেতাত্মা বলেই মান্য।
    তো এই ভুত্তরাধুনিক সাহিত্য কি করিয়া উহারা লিখিতেছেন বা কি করিয়া লেখন যায়--উহার একটা ম্যানুআল আমাদের এক স্বল্পাত্ম লেখক লিখেছেন। উহা অনুসরণ করিলেই--অবাক হওয়ার কারণ ঘুচিবে।
    জোরসে তালিয়া। আসেন, তাইলে পড়ন যাক--

    উত্তরাধুনিক লেখালেখির সহজ কৌশল, বা, উত্তরাধুনিক লেখা এতৈ সহজ!
    লিখেছেন মহাস্থবির জাতক
    ---------------------------------------

    ডিসক্লেইমার: এই লেখাটি কোন সম্প্রদায় বা বিশেষ কোন গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে রচিত নয়। কেউ আহত হলে নিজগুণে ক্ষমা করবেন, এই আকুল আবেদন।
    বলতে কি, লেখালেখি নিয়ে কেন লোকেরা এত মাথা ঘামায়, সেটা আমার মাথায় ঢোকে না। কী হয়েছে বলুন তো লিখে? কেউ কি কবিতা লিখে পরীক্ষায় পাশ করেছে, ছোটগল্প লিখে পেয়েছে চাকরি, অথবা, প্রবন্ধ লিখে ভালো বর বা কনে?
    তারপরও, এত লেখার হিড়িক, লেখার মাধ্যমে এত আত্মপ্রকাশের হাহাকার দেখে ভাবছি একটা লেখার পাঠশালা খুলবো। শেখানো হবে ওখানটায় কিভাবে লিখতে হয় জনপ্রিয় প্রবন্ধ, কবিতা, ব্লগাব্লগি বা অন্য কিছু। আফট্রল, বাজারটা খারাপ না বোধহয়।

    নি:সন্দেহে আমি জনপ্রিয় কিছুই লিখতে পারি না, সেটাই আমার শেখানোর সব-সেরা যোগ্যতা। মুজতবা আলী তো বলেই গেছেন, খারাপ ছেলেরাই সবচাইতে ভালো শিক্ষক হয়। সুতরাং, গুরুর নামে করি শুরু।
    সতর্কতাবাণী: এটা বেটা ভার্সন। টাকা ছাড়াই শেখানো হচ্ছে। ছাত্রদের সাড়া পেলে ভবিষ্যতে যথোপযুক্ত বিনিময়মূল্য (আকা, হাদিয়া) নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বো এনশাল্লাহ। আর, এই পাঠশালা আমার নিজস্ব টেন্টে পেটেন্ট করা, সুতরাং পরবর্তীকালে কেউ একই কাজ করার দু:সাহস বা পাইরেটেড সংস্করণ বের করার চেষ্টা তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে লিখে তার প্রচুর পরিমাণে চরিত্রহনন করা হবে। তাই, আইডিয়া-চন্দ্ররেণুরা, হুঁশিয়ার।

    আজ আমরা শিখবো কিভাবে উত্তরাধুনিক লেখা, এক্ষেত্রে প্রবন্ধ, লিখতে হয়। ভাবছেন বুঝি এত তাড়াতাড়ি অনেক উঁচু ক্লাসের পড়া কেন শেখাচ্ছি?
    ভয় পাবেন না।
    বিশ্বাস করুন, নি:সন্দেহে উত্তরাধুনিক প্রবন্ধ লেখা যথেষ্ট সহজ।

    যাঁরা লিখতে চান, কিন্তু, বুঝে উঠছেন না কী নিয়ে লিখবেন; অথবা, যাঁরা হালকা ধাঁচের লেখালেখি করেন, কিন্তু, কিছু উত্তরাধুনিক লেখা লিখে বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে খ্যাতি পেতে চান, তাঁরা অনায়াসে এই লেখা পড়ার বা এই কোর্স শেষ হওয়ার পর প্রাণখুলে উত্তরাধুনিক লেখায় হাত মকশো করে প্রভূত খ্যাতি এবং তারও বেশি পরিচিতি লাভ করবেন।
    অনেক আজেবাজে কথা হলো। এবার ক্লাসের ঘণ্টা পড়লো।

    ১) উত্তরাধুনিক লেখা লিখতে গেলে সর্বপ্রথম আপনাকে নিতে হবে একটা কলমি নাম। নাম কিন্তু লেখালেখির জগতে মোটেও নামমাত্র নয়। এখানে শেক্সপিয়রের পিরগিরি-মার্কা প্রবচন, গোলাপকে যে নামেই ডাকো... ইত্যাদি খাটবে না। নামের গুণেই আপনার ভক্তকুল আকৃষ্ট বা বিকৃষ্ট হবে, অন্তত প্রথমত, প্রথামত।
    আপনার নামটি হবে শুধু দু'অক্ষরের।

    প্রথম অক্ষরে থাকবে চমকদার বা কোমল একটা ত্‌ৎসম শব্দ। যেমন: শৃঙ্গার, অশ্মন, নিতম্ব ইত্যাদি। সাধারণত, আর্যদের প্রতি বিদ্রোহসূচক জাতিবাচক শব্দ আসতে পারে, যেমন: ব্রাত্য, দ্রাবিড়, অনার্য, শূদ্র ইত্যাদি। তবে এসব ব্যবহৃত হয়ে যাওয়ায় অন্য কিছু রাখতে পারেন। কিন্তু, দেশীয় কোন আদিম জাতিগোষ্ঠীর নাম চলবে না। যেমন: সাঁওতাল, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, মুরং ইত্যাদি শুরুতে আসবে না। সমাসবদ্ধ পদ না আসাই ভালো।

    নামের দ্বিতীয় অংশে আপনার পিতৃপ্রদত্ত নামের কোন অংশ রাখতে পারেন। যেমন: ইসলাম, রহমান, চৌধুরী, অথবা, আপনার প্রকৃত নামের আদিপদ বা তার অংশবিশেষও চলবে। যেমন: নজরুল হলে নজরু, মোজাম্মেল হলে মজম ইত্যাদি। পুরোটাও চলবে। আজকাল এই ত্‌ৎসম-আরবি/ফারসি মিশ্রণ বেশ উত্তরাধুনিক গন্ধ আনে। ভাবুন তো: ব্যলীক সোলায়মান কিংবা, দারুক য়ামিন। হ্যাঁ, নামের ভিন্ন বানানও গ্রহণযোগ্য। যেমন: আসলামের বদলে য়াছলাম, কিংবা, ফরিদ না লিখে ফহ্রিদ, অথবা, ইয়াকুবের পরিবর্তে য়্যাকুব কি ইরশাদ না হয়ে ইর্শাদ। অভিভাবকীয় নাম উল্টো করেও লিখতে পারেন, যেমন: নাজিম উদ্দিন-এর জায়গায় উদ্দিন নাজিম (হুমায়ুনের অমর সৃষ্টি উজবেক কবি নদ্দিউ নতিম-এর কথা মনে পড়ে গেলো)।
    এসব দ্বিতীয় আকিকার আরেকটি সুবিধেজনক ব্যাপার হলো এসব কবি হতে চাইলেও ব্যবহার করতে পারবেন।
    ইশ, ভাবতেই তো একেবারে দাঁড়িয়ে যায়, প্রায় পড়েই যায়!! (ভিন্ন মানসিকতার পাঠকদের জন্যে বলছি, যথাক্রমে গায়ের লোম এবং চোখের জলের কথা বলা হয়েছে)।

    ২) এরপর আসে কী নিয়ে লিখবেন, সে-সিদ্ধান্তটি। আপনার লেখার বিষয় হতে পারে মূলত চারটি: রাজনৈতিক, শিল্পসাহিত্যসম্বন্ধীয়, সমাজবৈজ্ঞানিক (নারী, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, অভিবাসী জনগোষ্ঠী) এবং সমসাময়িক নানা ঘটনা।
    এছাড়া, হাত মকশো হয়ে এলে যে-কোন কিছু নিয়ে লেখারই উত্তরাধুনিক রূপ দিতে পারেন আপনি। কিন্তু, আপাতত এসবের মধ্যেই লেখা সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।

    প্রথম দুটি বিষয় নিয়েই লিখুন, এটা আমার প্রাথমিক পরামর্শ। কারণ, এসবে কথা খেলানো যায় অনেক বেশি আর এসব লোকজন বেশ খায়ও বটে। রাজনৈতিক বিষবলি নিয়ে লিখতে গেলে আপনাকে অবশ্যই আনতে হবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট। মুসলিমদের ওপর বৈশ্বিক নির্যাতন, আমেরিকার একচোখো মনোভাব, সাম্রাজ্যবাদী চেতনা, প্রতিবাদ বা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অবস্থান ইত্যাদি দিকগুলো সুযোগমতো ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন যত্রতত্র। বলতে কি, সুযোগ না পেলেও ঢুকিয়ে দেবেন। আর, সবসময় খেয়াল রাখবেন ভিন্নতর কোন উপসংহার টানার।
    যেমন: সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করার। এতে খরচ হবে প্র্রচুর বা অবকাঠামো নির্মাণে সময় ও অর্থ যাবে অনেক বা আদৌ এতে কতটুকু বিদ্যুৎ আসবে এবং লাভ হবে বাংলাদেশের, এসব মামুলি কথা। আপনি লিখবেন ভারতের স্বার্থের কুটিল চক্রান্তের ফাঁদ উন্মোচনের কথা, বোঝাবেন এতদঞ্চলের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর এবং নিজের দেশের মুসলিমদের ওপর অত্যাচার এবং নিয়ে আসবেন তালপট্টি, বেরুবাড়ির কথা, বিএসএফের আগ্রাসী মনোভাবটিও তুলে ধরবেন এবং শক্তির আন্তর্জাতিক রাজনীতিও ঢুকিয়ে দেবেন সাথে। পাশাপাশি পরিবেশবাদের ডাকও দিয়ে যাবেন।
    সাহিত্য সংক্রান্ত লেখালেখিগুলো আরো সহজ। তবে, ঐ যে বললাম, সব মিলিয়ে একটা নিরুদ্দেশ ধোঁয়াশা তৈরি করে ফেলতে পারলেই আপনার লেখাটি অনেকাংশে সার্থক।
    প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হবে, তবে বেশি নয়।
    সবসময় এই লোকজ ছড়াটি মনে রাখবেন, এটাই মূলমন্ত্র ধরবেন:

    এখান থেকে মারলাম ছুরি
    লাগলো কলাগাছে
    হাঁটু ছুঁলে রক্ত পড়ে
    চোখ গেল রে বাবা।
    এই যে টেক্সটে বিভিন্নমুখি সাবাল্টার্ন ডিসকোর্সের উদ্ভব আর বায়বীয় ত্রাসের ছায়াময়তার পাশাপাশি পৈত্রিক যাত্রামুখে আমাদের সত্তার সরণ এবং তাকে স্মরণ, এরই মধ্যে বন করা হয়েছে দেহতঙ্কেÄর ব্যাপারে জ্ঞানকাণ্ডের একটি ভিন্ন তরিকা।
    ওপরের লাইনগুলূ লক্ষ্য করুন। আশা করি, এখন বেশ ভালো একটা ধারণা পেয়েছেন আপনার লেখালেখির অভিমুখের ক্ষেত্রে।

    ৩) শব্দপ্রয়োগের ব্যাপারটা খেয়াল রাখতেই হবে। বলতে কি, এর ওপরেই আপনার লেখা উত্তরাধুনিক হলো কি-না, সেটার শতকরা ৬০-৭০ ভাগ নির্ভর করবে।

    এপ্রসঙ্গে শর্ৎচন্দ্রের শ্রী অনিলা দেবী ছদ্মনামে ফাল্গুন, ১৩১৯ সালে 'যমুনা' পত্রিকায় লেখা 'নারীর লেখা' প্রবন্ধের দিকে আপনাদের একটু দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
    সেখানে একটি জায়গায় তিনি বলছেন:
    আমি পূর্বেই বলিয়াছি, রবিবাবুর সত্য অনুকরণ যত কঠিনই হউক, বিকৃত করা খুব সহজ। ও আর কিছু নয়-আমার নিম্নলিখিত এই তালিকাটি মুখস্থ করিলেই হইবে। যদি মুখস্থ না হয়, বড় বড় অক্ষরে লিখিয়া টেবিলের সম্মুখে টাঙাইয়া দিয়া নিজের রচনার মধ্যে এক একটা প্রবেশ করাইয়া দিলেই কাজ হইবে। মুখস্থ করুন-পরিণতি, বিশ্ব, মানব, দেহান্বয়, ভূমিষ্ঠ, গরিষ্ঠ, মুখর, চাই-ই, বনস্পতি, প্রয়োজন হইয়াছে, ফাঁকি, দৈন্য, পুষ্ট-সাধন, দেবতা, অমৃত, শ্রেয়, ভূমা, আশীর্বাদ, অর্ঘ্য, আবহমানকাল, শ্রেষ্ঠ, বাণী, খাঁটি, ভারতবর্ষ, নিষ্ঠা, জাগ্রত, জন্মস্বত্ব, দিন আসিয়াছে, তপশ্চর্যা, বৈরাগ্য, শ্রদ্ধা, যো-নাই, খাটো, পাৎলা, ডাক পড়িয়া গিয়াছে, মুক্তির আনন্দ ও ত্যাগের আনন্দ। বাস, এই কয়টিই যথেষ্ট। একটা রচনার মধ্যে সব ক'টা ব্যবহার করিতে উত্তম, না পার ভূমা, অর্ঘ্য, দেবতা, বৈরাগ্য ও ভারতবর্ষ এই পাঁচটি চাই-ই। অন্যথা রচনাই নয়।
    তিনি সম্ভবত কিছুটা ব্যঙ্গ করেই কথাটা বলেছেন। কিন্তু, আমরা এখানে ঠাট্টা করতে আসি নি। রীতিমত উত্তরাধুনিক রীতিতে সাহিত্যচর্চা শিখছি। আর, তাছাড়া তিনি খাপছাড়াভাবে কথাটা বলেছেন। আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই ব্যাপারটা শিখবো।

    আপনার লেখায় নিম্নলিখিত শব্দগুলো থাকতেই হবে উত্তরাধুনিক লেখা লিখতে গেলে। শব্দগুলো তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগের শব্দগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এগুলোর অন্তত ৮০-৯০ শতাংশ থাকতেই হবে আপনার লেখায়। দ্বিতীয় ভাগ একটু কম দরকারি। তৃতীয় ভাগটায় ব্যবহার্য ক্রিয়াপদগুলো বা ক্রিয়াবিশেষ্যগুলোর কিছু উদাহরণ দেখানো হয়েছে। যেহেতু, ক্রিয়াপদগুলো শুধু একটি কাল ও পুরুষেই ব্যবহৃত হয়েছে, তাই ধরে নিতে হবে এগুলো অন্য কাল বা পুরুষেও যথারীতি ব্যবহৃত হবে। এগুলোরও অন্তত ৫০-৬০ শতাংশ ব্যবহৃত হলে রচনা সর্বাঙ্গসুন্দর ও প্রকৃত অর্থেই উত্তরাধুনিক হয়ে উঠবে।
    ওহ, আরেকটি কথা। এখন উত্তরাধুনিক লেখা কিন্তু মূলত সংকর ভাষায় লিখতে পারলে ভালো। কারণ, উত্তরাধুনিকতা সব কিছুই ধারণ করে। আপনি মেশাবেন ত্‌ৎসম নামপদ আর আঞ্চলিক উপভাষার ক্রিয়াপদ বা অব্যয়। যেমন: 'ধারণা থেকে', না বলে বললেন, 'ধারণা থিকা'; বা, 'সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে' না লিখে লিখলেন 'সাম্প্রদায়িকতার লগে', কিংবা, 'অন্য কাজ করেছি' ব্যবহার না করে চালালেন 'অন্য কাম করসি'।
    একটিই বাগধারা মনে জানবেন, জগাখিচুড়ি।
    আমি জানি আপনি এর উৎপত্তির পেছনের গল্পটা শুনতে ইচ্ছুক, কিন্তু, আজ ওসব লঘু বিষয়ে মন বা সময় দেওয়াটা আমাদের জন্যে কিঞ্চিৎ হেজিমনিক হয়ে যাবে।
    এখন ঠেলা সামলান...ইয়ে...শব্দগুলো বুঝে নিন।

    প্রথম ভাগ:
    টেক্সট (কক্ষনো লেখালেখি/লেখা শব্দটা ব্যবহার করবেন না), ডিসকোর্স ('আলোচনা'/'আলোচ্য বিষয়'-এর প্রতিশব্দ বা অন্য ক্ষেত্রেও বসতে পারে, যেমন: "ষাটের দশকে যে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ শেষপর্যন্ত 'বীর-বাঙালি অস্ত্র ধরো' পর্যায়ে নিয়ে যায়, তার কোনো ডিসকোর্স আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায়, লেখনীতে হাজির আছে কি?", এখানে আর " বাঙালি জাতীয়তাবাদ-এর ডিসকোর্স স্বাধীন সার্বভৌম গ্রেটার বেঙ্গল (ভারত-পাকিস্তানের বাঙলাখণ্ড) মুভমেন্টের ব্যাপারে নীরব কেন?" এখানে ব্যবহৃত শব্দদুটোর অর্থ একই নয়), দেরিদা/জাক দেরিদা/দেরিদার ডিকন্সট্রাকশন তঙ্কÄ, ফুকো/মিশেল ফুকো/ফুকোর ক্ষমতাসংক্রান্ত তঙ্কÄ, চমস্কি/নোয়াম চমস্কি, অরুন্ধতী রায়, সাইদ/এডওয়ার্ড সাইদ, ওরিয়েন্টালিজম, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সাবাল্টার্ন, প্রাকৃতজন, জনগণের ইতিহাস, মৌখিক/বাচিক/লৌকিক ইতিহাস, অল্টারনেটিভ মিডিয়া/প্রতিমিডিয়া/বিকল্প মিডিয়া, নির্যাতন, প্ররোচিত, ইরাকি জনগণ, আফগানিস্তান, জায়নবাদী ষড়যন্ত্র, তঙ্কÄ, জ্ঞানকাণ্ড, দর্শন, চিন্তা, ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, উত্তরাধুনিক/উত্তরাধুনিকতা/পোস্টমডার্নিজম, প্রগতিশীল, প্রতিক্রিয়াশীল, ভাষাচিন্তা, জেন্ডার, পুরুষতান্ত্রিক, নারীর ক্ষমতায়ন, চেতনা, অবচেতন, যৌনতা/যৌনতার রাজনীতি, সাংস্কৃতিক/রাজনৈতিক/সামাজিক উত্তরাধিকার, ভোগবাদী/ভোগবাদের সভ্যতা, মুক্তবাজার/মুক্তবাজার অর্থনীতি, বিবদমান, সেকুলার/ধর্মনিরপেক্ষ, সেকুলারিজম/ধর্মনিরপেক্ষতা, অপর/আদার, তরিকা, বন, বিজ্ঞানের/বৈজ্ঞানিক দর্শন, এনলাইটেনমেন্ট/আলোকপ্রাপ্তি, একাডেমিক, ডায়ালেকটিকস/দ্বান্দ্বিকতা, হেজিমনি(-ক)/এন্টি-হেজিমনি(-ক), ফ্যাসিবাদ, দূরন্বয়, বুদ্ধিবৃত্তিক/ইন্টেলেকচুয়াল, দেহবাদী কাঠামো, আত্মাবাদী কাঠামো, প্রত্যয়/প্রত্যয়গুলো, মেটাফিজিক্স/অধিবিদ্যা, অধিবিদ্যক, ভাববাদ, ভাববাদী, প্রপঞ্চ, জাতীয়তাবাদ, স্বভূমিদর্শন, একরৈখিক, বহুরৈখিক, ফিউডালিজম/সামন্তবাদ।

    দ্বিতীয় ভাগ: নিরালম্ব, এয়ালিগরি, আবহমান, উত্তরভাগ, সভ্যতা, বিবর্তন, পাঠ/পঠনপ্রক্রিয়া, ভিন্নখাতে প্রবাহিত, মনস্তাঙ্কিÄক বিশ্লেষণ, ধর্মীয় মৌলবাদ, ফিউডাল রেমনেন্ট, সহনশীল/সহনশীলতা, ডিসকার্সিভ, মধ্যখণ্ডন, ফিউশন।
    তৃতীয় ভাগ: প্রত্যয় হইতেসে, প্ররোচিত হইতেসি, অংশীদার হই/হইলাম, ভাইবা দেখলে কিন্তু, প্রতীয়মান হয়/হইতেসে, সৃষ্টি হইলেও হইতে পারে, বন করতাসি, দর্শন করলে, চেতনার আন্দোলন থিকা, আমল করা, ইমান আনা।
    উদাহরণ আরো দেওয়া যায়, কিন্তু প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু একটু সাহস। আপনি ওটা নিয়ে কি-বোর্ডের সামনে বা খাতার সামনে বসে পড়ুন। একটু চোখ বোলান ওপরের শব্দ তালিকার ওপর। কিছুদিন পর দেখবেন আর চোখ বোলানোরও দরকার হচ্ছে না। আপনি স্বনির্ভর। তখন রাখবেন এই দাসকে মনে।

    ৪) অবশ্যই চেষ্টা করবেন ভিনদেশি পণ্ডিতদের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দেওয়ার। তবে, সর্বোচ্চ তিনটি, এর বেশি নয়। অন্যদের লেখা থেকেই যদি তুলে ধরবেন, নিজে লিখবেন কী! পণ্ডিতদের নাম অচেনা হলেই ভালো হয়, চেনা হলেও সমস্যা নেই। নিজের মতামত লিখে তাঁরা বলেছেন বলেও চালিয়ে দেওয়া যাবে। উত্তরাধুনিকতা সব কিছুই ধারণ করে।
    যাক, অনেক বকবক করলাম। এবার আপনাদের লেখা শুরুর পালা। কেমন লিখলেন, কেমন মন্তব্য পেলেন, এসব জানাবেন আমায়। শর্ৎচন্দ্রের উপর্যুক্ত লেখা থেকে একটা অনুচ্ছেদ তুলে ধরেই শেষ করি। যদি আপনার লেখায় এরকম মন্তব্য পান, বুঝবেন আপনার লেখা সার্থক।
    কিন্তু তাঁর ভাষা যে অতি সুন্দর, অতি মধুর, তাহা অকপটে স্বীকার করি। প্রতি ছত্র গভীর পাণ্ডিত্যে পরিপূর্ণ। বহুমূল্য ঘড়ির সুগঠিত কলকবজার ন্যায় তাঁহার প্রত্যেক শব্দবিন্যাসটির আশ্চর্য কৌশল দেখিয়া মুগ্‌ধ হইয়াছি। ঘড়িটি দামী এবং চলিতেছেও বটে, কিন্তু কাঁটা দুটি না থাকায় কবি পোপের মত সময়টা ঠিক ঠাহর করিতে অক্ষম হইয়াছি।

    পু: এক বিখ্যাত ঔপন্যাসিক একটা মেয়েদের স্কুলে গেছেন। তো এক শ্রেণীর এক বালিকা তাঁকে প্রশ্ন করলো, "আচ্ছা, স্যার, আপনার লেখার ধরনটা একটু বলবেন? কিভাবে উপন্যাস লিখতে হয়?"
    ঔপন্যাসিক উদার হেসে বললেন, "খুব সোজা। প্রথমে অভিজাত সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা, এরপর একটু ধর্মসংক্রান্ত কথাবার্তা, তারপর কিছু সামাজিক বিষয় আলোচনা, এরপর একটু রহস্য রেখে শেষ করলেই উপন্যাস দাঁড় করিয়ে ফেলা যায়।"
    কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটা বললো, "আমি একটা উপন্যাস লিখে ফেলেছি।"
    সবাই অবাক।
    লেখক বললেন, "পড়ো তো শুনি, কী লিখলে।"
    মেয়েটা গড়গড় করে পড়ে গেলো। "বিরাট শিল্পপতি জনাব হাসান চৌধুরীর সুন্দরী স্ত্রী মিসেস চৌধুরী বললেন [অভিজাত সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা], "ও খোদা [ধর্মসংক্রান্ত কথা]! আমার একটা বাচ্চা হবে [সামাজিক বিষয়].কিন্তু, এর বাবা কে তা তো জানি না [রহস্য!]!!!!"

    http://www.sachalayatan.com/guest_writer/32158
  • I | 14.99.***.*** | ২১ মে ২০১১ ২২:১২474650
  • :-)))
    সোকাল মনে পড়াচ্ছে।
  • achintyarup | 59.93.***.*** | ২২ মে ২০১১ ০৪:১৪474651
  • খুবই উন্নতমানের প্রবন্ধ। আমি আজ থিকাই প্রাকটিস করব এই জাতীয় ল্যাখা।
  • aka | 24.42.***.*** | ২২ মে ২০১১ ০৫:৪৭474652
  • পোস্টমর্ডান ডিসকোর্সের লইগ্যা এমন উন্নত মানের প্রবন্ধ যে কলোনিয়াল হেজিমনির বিরুদ্ধে ক্ষমতার উৎসকে এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে এই নিয়ে কোনই সন্দেহ নাই, এই যে নতুন স্ট্রাকচারালিজম এবং উত্তরাধুনিকতার সবথেকে বড় মাল্টিপ্লিসিটি তা আমি অপার হইয়া বসিয়া পইড়্যা ফেলছি।
  • Kulada Roy | 74.72.***.*** | ২২ মে ২০১১ ১০:৪০474653
  • পড়তে পড়তে ধবাস কইরা পইড়া যাবেন কিন্তু। নো থামাথামি। থামলে বেপদ আছে। খুব সাবধান।
  • aka | 24.42.***.*** | ২২ মে ২০১১ ১১:০১474654
  • বোঝো! তাইলে দৌড়তে দৌড়তে পড়তে হয়। ঠিকাছে বসে পড়া ক্যান্সিল।
  • Kulada Roy | 74.72.***.*** | ২২ মে ২০১১ ১১:২৩474655
  • দ্যাখেন আকা
    আমি বুঝিতে বুঝিতে একদম বুজিয়া গিয়াছি।অএ ছাড়া উপায় কি?
    উপায় একটা আশার আশঙ্কা আছে। এই ধুতরধুনিক লেখক ক্লান্তি বোধ করলে তাহার সাহাযেয় আগানী মিউজিকসহ পি মুন্সী আইসা পড়বেন। তিনি জ্যান্ত সুফি কুপিও বটে। তার লিখিত দুইখানা বহিই এই তেলেসমাসি ভাষায় লিখিত। পড়িতে হাউস করিলে ভোদকা সহকারে অজু করে নিতে হবে। একক্যানের নাম ভাবান্দোলন, আরেক ক্যানের নাম মোকাবেলা। আরেকক্যানের নাম সেবাদাসনামা। উহা হিজরীপূর্ব সনে লিখিত কবিতা।অকাব্য ভাষায় ব্যবহৃত অক্ষরের নাম হায়ারোক্লিপ। অধরাক্ষর।
  • kallol | 115.24.***.*** | ২২ মে ২০১১ ২৩:২৫474656
  • উত্তরাধুনিক লেখক হতে গেলে সর্বপ্রথম আপনাকে নিতে হবে একটি কলমি নাম।
    +++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
    রণজিত গুহ, শহীদ আমিন, জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে, গৌতম ভদ্র, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দীপেশ চক্রবর্তি, গায়েত্রী স্পিভাক, রবিশংকর বল, উদয়ন ঘোষ, এডোয়ার্ড সঈদ, জাঁক দেরিদা, মিশেল ফুকো হগলই তো দেহি নিজ নামেই ল্যাখে।
  • pi | 72.83.***.*** | ২২ মে ২০১১ ২৩:৪২474657
  • :)

    'এখন উত্তরাধুনিক লেখা কিন্তু মূলত সংকর ভাষায় লিখতে পারলে ভালো। কারণ, উত্তরাধুনিকতা সব কিছুই ধারণ করে। আপনি মেশাবেন ত্‌ৎসম নামপদ আর আঞ্চলিক উপভাষার ক্রিয়াপদ বা অব্যয়। যেমন : 'ধারণা থেকে', না বলে বললেন, 'ধারণা থিকা' ; বা, 'সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে' না লিখে লিখলেন 'সাম্প্রদায়িকতার লগে', কিংবা, 'অন্য কাজ করেছি' ব্যবহার না করে চালালেন 'অন্য কাম করসি'।
    একটিই বাগধারা মনে জানবেন, জগাখিচুড়ি। '

    এমনি 'জগাখিচুড়ি' ভাষা কিন্তু কুলাদাদার লেখাতেই পেয়েছি। উপাদেয় ই তো লাগে। :)
    ডিমভাজা অর নো ডিমভাজা :)
  • kallol | 115.24.***.*** | ২৩ মে ২০১১ ০৭:৩৬474644
  • কুলদাবাবু যে ওনার অঞ্চলের কথ্য বাঙ্গাল ভাষায় সাহিত্যকর্ম করেন - সেও তো উত্তর আধুনিকতার লক্ষণ। আমার তো খুবই ভালো লাগে। এই যে উনি মাঝে মাঝে একটা ছদ্ম যৌনতার আশ্রয় নেন - ""ভাবতেই তো একেবারে দাঁড়িয়ে যায়, প্রায় পড়েই যায়।"" বেশ উত্তর আধুনিক টাইপের। শুধু যখন উনি উদ্ধৃত বাক্যবন্ধের ব্যাখ্যায় কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গীতে ""লোম"" ও ""চোখের জল""এর উল্লেখ করেন তখন কেমন ভদ্র ও আধুনিক আধুনিক লাগে।
  • aranya | 144.16.***.*** | ২৩ মে ২০১১ ০৭:৫৯474645
  • কল্লোল-দা, ঐ ছদ্ম যৌনতার উদাহরণ-গুলো কুলদাবাবুর লেখা নয়, উনি যার রচনার সমালোচনা করছেন, সেই 'মহাস্থবির জাতক'-এর লেখা।
  • Kulada Roy | 74.72.***.*** | ২৩ মে ২০১১ ০৯:৪৩474646
  • দাদাগো, আমি এই নোটটি লিখি নাই। ওটা লিখেছেন-মহাস্থবির জাতক। আমাদের দেশের একশ্রেণীর ভূযা তালেবর লেখকদের ভঙ্গি নিয়ে তিনি সম্ভবত মজা করেছেন। এরা উত্তরাধুনিক বলে দাবী করেন তাদের লেখাগুলো। আসলে এটা তাদের একটা ক্যামোফ্লেজ। তারা সাম্প্রদায়িক পাকিপন্থী জঙ্গীবাদিদের হযে কাজ করেন। তরুণ শিক্ষিতদের ভেড়ানোর জন্য এটা তাদের কৌশল। সম্প্রতি তাদের এখানেও উঁকিঝুঁকি মারতে দেখা যাচ্ছে।
    আমি কোনো লেখকের পর্যায়েই পড়ি না। আমার যা ইচ্ছে তাই লিখি। একে নাম দিয়েছি ছাতামাতা লেখা। এগুলি লিখতে গিয়ে আমি আমার নিজের এলাকার ভাষাটাকে নিয়ে আসি। ইচ্ছে করেই করি। এ ভাষাগুলো আমার এলাকার মানুষ ব্যবহার করত। আমিতো তাদের গল্পটাই বলতে চেষ্টা করছি। এটা হারিয়ে যাচ্ছে। আমি আমার লেখায় সেগুলো জিঁইয়ে রাখার চেষ্টা করছি।
    কেন হারিয়ে যাচ্ছে--তার নানাবিধ কারণ আছে। এই ভাষার সঙ্গে প্রমিত ভাষার দ্বন্দ্ব নেই বলেই মনে হয়। আর এইসব ধুতরাধুনিক লেখকরা প্লান করেই প্রমিত ভাষাকে অকার্যকর করার চেষ্টা করছে। তার ধরন কিন্তু এই আঞ্চলিক ভাষার মত নয়। ওটা একটা খিচুড়ি ভাষা। একটি নতুন খিছুড়ি ভাষা চালুর মাধ্যমে ভাষা সাম্প্রদায়িকতার চল করাই এদের লক্ষ্য। ওদের টার্গেট প্রমিত ভাষা এবং আঞ্চলিক বাঙাল ভাষাটাকেও বদলে দেওয়া। এটা নিয়ে সম্ভব হলে এক সময় লিখব।
  • kallol | 220.226.***.*** | ২৩ মে ২০১১ ১১:১৭474647
  • দাদাগো,
    আমার বন্ধুভাগ্যের পূণ্যফলে আমার দেশের বহু উত্তর আধুনিক মননের মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। সে আমার পরম সৌভাগ্য বলে আমি মনে করি। এদের সাথে জড়িয়ে গেছি সেই ৭০এর দশক থেকে। ঘটনাচক্রে এঁরা প্রত্যেকেই আমার অগ্রজসমান। তাই এঁদের পরম স্নেহ ও মাত্রাছাড়া প্রশ্রয় পেয়েছি যা আজও আমার পথচলার প্রধান জ্বালানী। ১৯৯০এ যখন বার্লিন দেওয়াল ও সমাজতন্ত্রের সাথে সাথে আমারও বিশ্বাস ভাঙ্গছিলো, যখন মনে হয়েছিলো অন্তিম পরাজয় গ্রাস করছে আমায়। আমার তিন দশকের বিশ্বাস, স্পর্ধা, স্বপ্ন, রোমাঞ্চ যখন ভুমিকম্পে ভেঙ্গে পড়া বাসার মতো বিপর্যস্ত। আর আমি সেই ভগ্নস্তুপে পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছি আমার আমিকে, তখন এঁরাই হাত ধরেছেন পরম মমতায়, হাঁটতে শিখিয়েছেন অন্য পথে, যে পথের মুক্তি ঘটেছে গন্তব্যের বাঁধন থেকে।
    আমার অসীম সৌভাগ্য, আমি ইতিহাসের ছাত্র তো দূরস্থান, ধূলোর কণাও নই, তবু দেখেছি ইতিহাস কংগ্রেসের কোন এক আলোচনা সভায় ইরফান হাবিবকে ফালাফালা করে দিচ্ছে তাঁরই ভাবশিষ্য গৌতম ভদ্র ইতিহাসের হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া নিয়ে। ইতিহাস যতখানি সরকারী মহাফেজখানার দলিলে, আদালতের নথিতে থাকে তার চেয়েও অনেক বেশী থাকে লোকগাথায়, লোকগানে, অতিকথায়, প্রবাদে। সেই প্রথম শুনছি বড় ইতিহাসের অন্যদিকে ছোট ইতিহাস। গৌতমদা, দীপেশদা (চক্রবর্তি), রঘুদা (বন্দ্যোপাধ্যায়), শুভেন্দুদা (দাশগুপ্ত), কেয়াদি (দেব/দাশগুপ্ত), পার্থদা (চট্টোপাধ্যায়), জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে, শাহীদ আমিন, গেল ওম্বেট এঁদের আড্ডায় নানান সময়ে ল্যাংবোট হিসাবে থেকেছি। চোখের সামনে, চেতনার জানালায় গড়ে উঠতে দেখেছি উত্তর আধুনিকতার পশ্চিম বঙ্গজ অধ্যায়, গড়ে উঠতে দেখেছি সাব-অল্টার্ণ স্টাডিজ।
    এই মুক্তমনা মানুষগুলোকে লোকে ভুল বুঝেছে, গাল পেড়েছে, এমনকি সাম্প্রদায়িক (কখনো সরাসরি বিজেপি/আর এস এস) বলেছে। এঁদের কারুর কারুর গোপন রক্তক্ষরণের বোবা সাক্ষী আমি।
    সব ভাবনাই একসময় প্রাতিষ্ঠানিকতার রূপ পায়, তখন শুরু হয় পাতন প্রক্রিয়া, যাতে জলজ উদ্ভিদ আর কাদা ছোঁয়া জল শুদ্ধ, স্বচ্ছ ও ভদ্রজনের পেয় হয়ে ওঠে। জল থেকে জীবন হারিয়ে যায়।
    সেই জলও ছেড়ে আসতে হয়। ওঁরা তাইই করেছেন, আবার নতুন পথে, নতুন ভাবনায়, নতুনতর জীবনবোধে। আমি আজও ওঁদের ল্যাংবোট হয়ে ঘুরে বেড়াই।
    তাই আপনি যখন উত্তর আধুনিকতার সংজ্ঞা দিতে চান, তখন মনে হয় এই সংজ্ঞায়িত করার ঝোঁকের বিরুদ্ধে লড়াইই ছিলো আধুনিকতা পেরিয়ে উত্তর আধুনিকতার অন্যতম পরিচয়। তাই সেই চেতনকে চিহ্নিত করতে নতুন নামে সাজেনি সে। আধুনিকতা পেরিয়ে - উত্তর আধুনিকতায় এটুকুই তার পরিচয়।
    প্রত্যেকের ব্যক্তিগত মতামত থাকে। সবাই তাতে একমত নাও হতেই পরেন। তাতে অন্যমতকে গাল পাড়ার মানে হয় না। বিরোধীতা আর গাল পাড়া প্রেক্ষিত বিশেষে এক নয়।
  • kallol | 220.226.***.*** | ২৩ মে ২০১১ ১১:২৪474648
  • আর একটা কথা। আপনার আঞ্চলিক কথ্য ভাষার সাহিত্য, যারে আপনি ""ছাতামাতা"" বলতে চান, তাও এই উত্তর আধুনিক চিন্তার অংশই।
    ভাষা বদলায় নিজের মতো করে। ওটা আটকানো যায় না। চিমটি কাটলে কেউ উ: বলে কেউ আউচ। তবে চর্চা ধরে রাখা অবশ্যই যায়, যেটা আপনি করছেন। কোন কিছু আটকানোর জন্য নয়, ঐ ভাষাটা আপনি ভালবাসেন বলেই তার চর্চা করে যেতেই পারেন। পথকে গন্তব্যের বাঁধন থেকে ছুটি দিয়ে দেখার চেষ্টা করতে পারেন।
  • Kulada Roy | 74.72.***.*** | ২৩ মে ২০১১ ১৮:০৫474649
  • দাদাগো,
    আমি উত্তরাধুনিকের বিপক্ষে নই। হাওয়াটাতো এখন এইরকমই বইছে। হাওয়া পাল্টাবো কেমন করে। পাল্টাতে গেলে যে শক্তি দরকার--সেটার জন্য তো গডোর স্মরণ নিতে হবে। তিনিতো নির্বিকার। আমার কথা শুনবেন কেন? আমি শুধু জোর করে কোনো কিছু গড়ার বিপক্ষে। পরিবর্তনটা আসবে স্বাভাবিকভাবে। সেটা যেন কাউকে বিব্রত না করে হয়।
    আমাদের দেশে যারা উত্তরাধুনিকের নামে হল্লাবল্লা করছে--যারা এইটার পেটেন্ট নেওয়ার কোসেস করে, তারাতো কোনো ধুনিকই নন। তারা মনে করছে--জোর করে আবার পাকিন্থায় ফেরত যাওয়া দরকার। উত্তরাধুনিকের নামে সাম্প্রদায়িক শক্তির হয়ে কাজ করছে--সরাসরিই। আপত্তিটা সেইখানে।
    আমার কাছে সম্প্রীতিটাই বড় বিষয়। সম্প্রীতিটাই আগে খোঁজা দরকার। খণ্ড মানুষ হয়ে লাভ কি?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন