এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাংলাদেশের লোক দার্শনিক আরজ আলী ম

    Kulada Roy
    অন্যান্য | ২২ এপ্রিল ২০১১ | ১৩৮২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kulada Roy | 74.72.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০১১ ১০:২১471119
  • বাংলাদেশের লোক দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরকে নিয়ে আলোচনার জন্য নিচের লেখাটা সংকলিত করে দিলাম--
    আরজ আলী মাতুব্বর: আমাদের লোক দার্শনিক, এক বিস্ময় !
    ...........................................

    বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার এক লোক দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর। নাগরিক বুদ্ধিজীবি মহলের আলোকিত অংশে তার অবস্থান অনুঙ্কÄল হলেও মাটি এবং মানুষের মধ্য থেকে বেড়ে উঠা মানবতা এবং সমাজ দর্শনের এক পথিকৃত হিসাবে তিনি সমাদৃত।
    তিনি তার প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মের জন্য পাকিস্তান আমলে সরকার কর্তৃক নিষিদ্দ হন। তার লিখিত বইয়ের মধ্যে সত্যের সন্ধান, সৃষ্টি রহস্য, সীজের ফুল, শয়তানের জবানবন্দী অন্যতম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় পাঠ করার জন্য আরজ আলী মাতুব্বরের লিখিত ভাষণের নির্বাচিত অংশ এখানে উদ্ধৃত করা হলো, যার মাধ্যমে তাঁর ঘটনাবহুল জীবন ও তাঁর গড়ে ওঠা চিন্তাজগতের একটা রূপরেখা আমরা পেয়ে যেতে পারি। (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরজ আলী মাতব্বরের লিখিত ভাষণটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন )

    তিনি বরিশাল মেডিকেল কলেজকে মরনোত্তর চক্ষু ও দেহ দান করেছিলেন। মানুষকে জ্ঞান বিতরনের জন্য তিনি তার অর্জিত সম্পদ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন আরজ মনি্‌জল পাবলিক লাইব্রেরী। ।১৯৬০ সালের পর তার অর্জিত সকল সম্পদ তিনি দান করে দিয়েছিলেন ।
    আরজ আলী মাতুব্বরে জন্ম ১৯০০ সালে ১৭ ডিসেম্বর ,বাংলা ১৩০৭ সালের ৭ পৌষ বরিশাল শহর হতে ১১ কিমি দক্ষিনে চরবাড়িয়া ইউনিয়নে লামচরি গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারে । মাতুব্বর ছোটকালেই তার বাবাকে হরিয়েছেন। বাবার মৃত্যর পর তিনি মা এবং বড় বোনের কাছেই বড় হন।অদারিদ্রতার কারনে তার প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশি দুর এগোতে পারেনি। তার পর ও তিনি বিভিন্ন লাইব্রেরি থেকে ধার করে বই পড়তেন।অএবং নিজেকে একজন স্বশিক্ষিত মানুষ রুপে গড়ে তুলেছিলেন। কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা তিনি তার এবং তার পরিবারের আর্থিক অবশার পরিবর্তন করে ছিলেন। তিনি জমি কিনে নিজেই চাষাবাদ শুরু করেছিলেন। জ্ঞানপিপাসু এই মানুষ নিজে বই সংগ্রহ করে নিজেই একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বসত ১৯৬১ ঝড়ে তার বাড়িঘর সহ লাইব্রেরিটি কির্তনখোলা নদীতে গিয়ে পড়ে।
  • Kulada Roy | 74.72.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০১১ ১০:২৩471120
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরজ আলী মাতুব্বরে ভাষণ
    ---------------------------------------------

    বরিশাল শহরের অদূরে লামচরি গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম আমার ৩রা পৌষ, ১৩০৭ সালে। চার বছর বয়সে আমার বাবা মারা যান, ১৩১১ সালে। আমার বাবার বিঘা পাঁচেক কৃষিজমি ও ক্ষুদ্র একখানা টিনের বসতঘর ছিলো। খাজনা অনাদায়হেতু ১৩১৭ সালে আমার কৃষিজমিটুকু নিলাম হয়ে যায় এবং কর্জ-দেনার দায়ে মহাজনরা ঘরখানা নিলাম করিয়ে নেন ১৩১৮ সালে। তখন স্বামীহারা, বিত্তহারা ও গৃহহারা হয়ে মা আমাকে নিয়ে ভাসতে থাকেন অকূল দু:খের সাগরে। সে সময়ে বেঁচে থাকতে হয়েছে আমাকে দশ দুয়ারের সাহায্যে। তখন আমাদের গ্রামে কোনোরূপ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিলো না। শরীয়তি শিক্ষা দানের জন্য জনৈক মুন্সি একখানা মক্তব খোলেন তাঁর বাড়িতে ১৩২০ সালে। এতিম ছেলে বলে আমি তাঁর মক্তবে ভর্তি হলাম অবৈতনিকভাবে। সেখানে প্রথম বছর শিক্ষা করলাম স্বর ও ব্যঞ্জনবর্ণ তালপাতায় এবং বানান-ফলা কলাপাতায়, কেননা আমার বই-স্লেট কেনার সঙ্গতি ছিলো না। অত:পর এক আত্মীয়ের প্রদত্ত রামসুন্দর বসুর ‘বাল্যশিক্ষা’ নামক বইখানা পড়ার সময় ছাত্রবেতন অনাদায়হেতু মুন্সি সাহেব মক্তবটি বন্ধ করে দিলেন ১৩২১ সালে। আর এখানেই হলো আমার আনুষ্ঠানিক বিদ্যাশিক্ষার সমাপ্তি বা সমাধি। পড়া-লেখা শেখার প্রবল আগ্রহ আমার ছিলো। কিন্তু কোনো উপায় ছিলো না। পেটের দায়ে কৃষিকাজ শুরু করতে হয় অল্প বয়সেই। আমার বাড়ির পাশে একজন ভালো পুঁথিপাঠক ছিলেন। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে আমি তাঁর সাথে পুঁথি পড়তে শুরু করি, বাংলা ভাষা পড়বার কিছুটা মতা অর্জনের উদ্দেশ্যে এবং উদ্দেশ্য আংশিক সফল হয় জয়গুন, সোনাভান, জঙ্গনামা, মোক্তল হোসেন ইত্যাদি পুঁথি পাঠের মাধ্যমে। এ সময়ে আমার পাড়ার দু’টি ছেলে বরিশালের টাউন স্কুল ও জিলা স্কুলে পড়তো। তাদের পুরোনো পাঠ্যবইগুলো এনে পড়তে শুরু করি ১৩৩৫ সাল থেকে এবং তা পড়ি ১৩৪৩ সাল পর্যন্ত। কেন তা জানি না, সাহিত্য, গণিত, ভূগোল, ইতিহাস ইত্যাদির চেয়ে বিজ্ঞানের বই ও প্রবন্ধগুলো আমার মনকে আকর্ষণ করতো বেশি। তখন থেকেই আমি বিজ্ঞানের ভক্ত। আমার মা ছিলেন অতিশয় নামাজী-কালামী একজন ধার্মিকা রমণী। এবং তার ছোঁয়াচ লেগেছিলো আমার গায়েও কিছুটা। কিন্তু আমার জীবনের গতিপথ বেঁকে যায় আমার মায়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি দু:খজনক ঘটনায়। ১৩৩৯ সালে মা মারা গেলে আমি মৃত মায়ের ফটো তুলেছিলাম। আমার মাকে দাফন করার উদ্দেশ্যে যে সমস্ত মুন্সি, মৌলবি ও মুসল্লিরা এসেছিলেন, ‘ফটো তোলা হারাম’ বলে মায়ের নামাজে জানাজা ও দাফন করা ত্যাগ করে তাঁরা লাশ ফেলে চলে যান। অগত্যা কতিপয় অমুসল্লি নিয়ে জানাজা ছাড়াই আমার মাকে সৃষ্টিকর্তার হাতে সমর্পণ করতে হয় কবরে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে ছবি তোলা দূষণীয় হলেও সে দোষে দোষী স্বয়ং আমিই, আমার মা নন। তথাপি কেন যে আমার মায়ের অবমাননা করা হলো, তা ভেবে না পেয়ে আমি বিমূঢ় হয়ে মা’র শিয়রে দাঁড়িয়ে তাঁর বিদেহী আত্মাকে উদ্দেশ করে এই বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, “মা! আজীবন ছিলে তুমি ধর্মের একনিষ্ঠ সাধিকা। আর আজ সেই ধর্মের নামেই হলে তুমি শেয়াল-কুকুরের ভ্যক্ষ। সমাজে বিরাজ করছে এখন ধর্মের নামে অসংখ্য কুসংস্কার। তুমি আমায় আশীর্বাদ করো, আমার জীবনের ব্রত হয় যেন কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূরীকরণ অভিযান। আর সে অভিযান সার্থক করে আমি যেন তোমার কাছে আসতে পারি। তুমি আশীর্বাদ করো মোরে মা, আমি যেন বাজাতে পারি সে অভিযানের দামামা।”আমি জানি যে, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূরীকরণ অভিযানে সৈনিকরূপে লড়াই করবার যোগ্যতা আমার নেই। কেননা আমি পঙ্গু। তাই সে অভিযানে অংশ নিতে হবে আমাকে বাজনাদার রূপে। প্রতিজ্ঞা করেছি যে, সে অভিযানে দামামা বাজাবো। কিন্তু তা পাবো কোথায়? দামামা তৈরির উপকরণ তো আমার আয়ত্তে নেই। তাই প্রথমেই আত্মনিয়োগ করতে হলো উপকরণ সংগ্রহের কাজে।

    বিজ্ঞান, ধর্মতঙ্কÄ ও বিবিধ বিষয়ে কিছু কিছু জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীর সদস্য হয়ে সেখানকার পুস্তকাদি অধ্যয়ন করতে শুরু করি ১৩৪৪ সাল থেকে। স্বয়ং মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত বলে যদিও ইসলাম ধর্মের মূলতঙ্কÄ সম্বন্ধে কিছু কিছু তঙ্কÄ জানার সুযোগ ছিলো, কিন্তু হিন্দু, বৌদ্ধ, পার্সি, ইহুদি, খ্রীস্টান ইত্যাদি ধর্ম সম্বন্ধে বিশেষ কিছুই আমার জানার সুযোগ ছিলো না। তাই সেসব ধর্ম সম্বন্ধে কিছু কিছু জানার আগ্রহ নিয়ে পড়তে থাকি বরিশালের শংকর লাইব্রেরী ও ব্যাপ্টিস্ট মিশন লাইব্রেরীর কিছু কিছু বই। বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের দর্শন বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদির সাহেব জানতেন আমার সাধনার উদ্দেশ্য কি। তাই উদ্দেশ্যসিদ্ধির সহায়ক হবে বলে তিনি আমাকে দর্শনশাস্ত্র চর্চা করতে উপদেশ দেন এবং তাঁর উপদেশ ও সহযোগিতায় দর্শনসমুদ্রের বেলাভূমিতে বিচরণ করতে থাকি ১৩৫৪ সাল থেকে। তখন দিন যেতো মাঠে আমার রাত যেতো পাঠে। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে দীর্ঘ ১৮ বছর সাধনার পর কতিপয় ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসকে দর্শনের উত্তাপে গলিয়ে বিজ্ঞানের ছাঁচে ঢেলে তার একটি তালিকা তৈরি করছিলাম প্রশ্নের আকারে ১৩৫৭ সালে। এ সময় স্থানীয় গোঁড়া বন্ধুরা আমাকে ধর্মবিরোধী ও নাখোদা (নাস্তিক) বলে প্রচার করতে থাকে এবং আমার দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম ছেড়ে শহর পর্যন্ত। লোক পরম্পরায় আমার নাম শুনতে পেয়ে ত্‌ৎকালীন বরিশালের লইয়ার ম্যাজিস্ট্রেট ও তাবলিগ জামাতের আমির জনাব এফ. করিম সাহেব সদলে আমার সাথে তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হন ১৩৫৮ সালের ১২ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে আমার বাড়িতে গিয়ে। সে দিনটি ছিলো রবিবার, সাহেবের ছুটির দিন। তাই তিনি নিশ্চিন্তে আমার সাথে তর্কযুদ্ধ চালান বেলা ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বরিশালে গিয়ে তিনি আমাকে এক ফৌজদারি মামলায় সোপর্দ করেন ‘কম্যুনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে। সে মামলায় আমার জবানবন্দি তলব করা হলে উপরোল্লিখিত তালিকার প্রশ্নগুলোর কিছু কিছু ব্যাখ্যা লিখে ‘সত্যের সন্ধান’ নাম দিয়ে তা জবানবন্দিরূপে কোর্টে দাখিল করি ত্‌ৎকালীন বরিশালের পুলিশ সুপার জনাব মহিউদ্দীন সাহেবের মাধ্যমে, ২৭শে আষাঢ়, ১৩৫৮ সালে (ইং ১২.. ৫১)। ‘সত্যের সন্ধান’-এর পাণ্ডুলিপিখানার বদৌলতে সে মামলায় দৈহিক নিষ্কৃতি পেলাম বটে, কিন্তু মানসিক শাস্তি ভোগ করতে হলো বহু বছর। কেননা ত্‌ৎকালীন পাকিস্তান তথা মুসলিম লীগ সরকারের স্থানীয় কর্তৃপ নির্দেশ দিলেন যে, ‘সত্যের সন্ধান’ বইখানা আমি প্রকাশ করতে পারবো না, ধর্মীয় সনাতন মতবাদের সমালোচনামূলক অন্য কোনো বই লিখতে পারবো না এবং পারবো না কোনো সভা-সমিতিতে বক্তৃতামঞ্চে দাঁড়িয়ে স্বমত প্রচার করতে। যদি এর একটি কাজও করি, তবে যে কোনো অজুহাতে আমাকে পুন: ফৌজদারিতে সোপর্দ করা হবে। অগত্যা কলম-কালাম বন্ধ করে ঘরে বসে থাকতে হলো ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। এভাবে নষ্ট হয়ে গেলো আমার কর্মজীবনের অমূল্য ২০টি বছর। বাংলাদেশে কুখ্যাত পাকিস্তান সরকারের সমাধি হলে পর ‘সত্যের সন্ধান’ বইখানা প্রকাশ করা হয় ১৩৮০ সালে, রচনার ২২ বছর পর। তারপরে আমার লিখিত বই ‘সৃষ্টি রহস্য’ প্রকাশিত হয় ১৩৮৪ সালে, ‘স্মরণিকা’ ১৩৮৯ সালে এবং ‘অনুমান’ নামের ক্ষুদ্র একখানা পুস্তিকা ১৩৯০ সালে। এ প্রসঙ্গে সভাসীন সুধীবৃন্দকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আমার লিখিত যাবতীয় পুস্তক-পুস্তিকাই হচ্ছে আমার মায়ের মৃত্যুদিনে আকাক্সিত ‘দামামা’র অঙ্গবিশেষ। কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে, আমি ধর্মের বিরোধিতা করছি। বস্তুত তা নয়। পশু, পাখি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি সমস্ত জীবের এমনকি জল, বায়ু, অগ্নি ইত্যাদি পদার্থেরও এক একটি ধর্ম আছে। ধর্ম একটি থাকবেই। তবে তার সঙ্গে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার থাকা আমার কাম্য নয়। মানব সমাজে ধর্মের আবির্ভাব হয়েছিলো মানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্যই। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত ধর্মগুলো মানুষের কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই করছে বেশি, অবশ্য জাগতিক ব্যাপারে। ধর্মবেত্তারা সকলেই ছিলেন মানবকল্যাণে আত্মনিবেদিত মহাপুরুষ। কিন্তু তাঁরা তাঁদের দেশ ও কালের বন্ধনমুক্ত ছিলেন না। তাঁদের প্রবর্তিত সেকালের অনেক কল্যাণকর ব্যবস্থাই একালের মানুষের অকল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই ধর্মীয় সমাজবিধানে ফাটল ধরেছে বহুদিন আগে থেকেই। সুদ আদান-প্রদান, খেলাধুলা, নাচ-গান, সুরা পান, ছবি আঁকা, নারী স্বাধীনতা, বিধর্মীর ভাষা শিক্ষা, জন্মনিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ধর্মবিরোধী কাজগুলো এখন শুধু রাষ্ট্রীয় সমর্থনপুষ্টই নয়, লাভ করেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বিশেষত গান, বাজনা, নারী, নাচ ও ছবি - এ পাঁচটির একত্র সমাবেশ দেখতে পাওয়া যায় সিনেমা, রেডিও এবং টেলিভিশনে। কিন্তু সেসবের বিরুদ্ধে সনাতনপন্থীরা কখনো প্রতিবাদের ঝড় তোলেননি। অথচ প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন ফজলুর রহমান, বযলুর রহমান, আ... এনামুল হক, আবুল ফজল প্রমুখ মনীষীগণের দু’কলম লেখায়। কতকটা আমারও। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের ফলে ধর্ম হোঁচট খাচ্ছে পদে পদে। কোনো ধর্মের এমন শক্তি নেই যে, আজ ডারউইনের বিবর্তনবাদ বাতিল করে দেয়, নাকচ করে মর্গানের সমাজতঙ্কÄ এবং ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত করে কোপার্নিকাস-গ্যালিলিওর আকাশ তঙ্কÄ, নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তঙ্কÄ এবং আইনস্টাইনের আপেকিতা তঙ্কÄকে। মধ্যযুগে যুগমানবের আসনে সমাসীন ছিলেন ত্‌ৎকালীন মুনি-ঋষি ও নবী-আম্বিয়ারা। তাঁরা ছিলেন গুণী, জ্ঞানী ও মহ্‌ৎ চরিত্রের মানুষ, তবে ভাববাদী। তাঁদের আদেশ-উপদেশ পালন ও চরিত্র অনুকরণ করেছেন সেকালের জনগণ এবং তখন তা উচিতও ছিলো। কিন্তু সেই সব মনীষীরা এযুগের মানুষের ইহজীবনের জন্য বিশেষ কিছুই রেখে যাননি, একমাত্র পারলৌকিক সুখ-দু:খের কল্পনা ছাড়া। এ যুগের যুগমানবের আসনে সমাসীন আছেন - কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা। এঁরা সবাই এযুগের গুণী, জ্ঞানী ও মহ্‌ৎ চরিত্রের মানুষ। তবে এঁরা হচ্ছেন মুক্তমন, স্বাধীন চিন্তার অধিকারী ও বাস্তববাদী। এঁদের অবদান ছাড়া এ যুগের কোনো মানুষের ইহজীবনের এক মুহূর্তও চলে না। তাই এঁদের সম্মিলিত মতাদর্শ আমাদের মস্তকে গ্রহণ করা উচিত ভাববাদের আবর্জনার বোঝা ফেলে দিয়ে। বর্তমান যুগে বিজ্ঞানবিরোধী কোনো শিক্ষাই গ্রহণীয় নয়। এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, এঁদের সম্মিলিত মতাদর্শ কি? এক কথায় তার উত্তর হচ্ছে - মানবতা। হয়তো ঐ মানবতাই হবে আগামী দিনের মানুষের আন্তর্জাতিক ধর্ম তথা ‘মানবধর্ম’
  • Kulada Roy | 74.72.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০১১ ১০:২৬471121
  • আরজ আলী মাতুব্বর এর ‘অনুমান’
    লিখেছেন: পারভেজ আলম

    মূলত ‘অনুমান’ কোন তুচ্ছ বিষয় নয়। এর আশ্রয় না নিয়ে মানুষের এক মুহূর্তও চলে না। অনুমান করার শক্তি ক্ষীণ বলেই ইতর প্রাণী মানুষের চেয়ে এত পিছনে এবং মানুষ এত অগ্রগামী তার অনুমান করার শক্তি প্রবল বলেই। ভবিষ্যতের চিন্তা মাত্রেই অনুমান, কতক অতীতেরও। আর ভবিষ্যত ও অতীত বিষয়ের চিন্তা ও অনুমান করতে পারে বলেই মানুষ ‘মানুষ’ হতে পেরেছে। – আরজ আলী মাতুব্বর (অনুমান, ১৯৮৩)
    মাতুব্বর তার অনুমান নামক পুস্তকটির ভূমিকাতে এভাবেই মানুষের অনুমান ক্ষমতার গুরুত্বকে অনুধাবন করেছেন। শিল্প, সাহিত্য, দর্শন এমনকি বিজ্ঞানের জগতেও মানুষের সৃষ্ঠিশীলতার অন্যতম নিয়ামক তার অনুমান শক্তি। অনুমান শব্দটিকে যত দুর্বল ও লাগামছাড়া মনে হয় এটি আসলে তা নয়, কারণ মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী, প্রকৃতিগতভাবে যুক্তিবাদী, তার অনুমান যুক্তি নির্ভর, যুক্তিহীন অনুমান সে নিজের স্বার্থেই করতে চায়না। যুক্তিনির্ভর অনুমানকে উৎস ধরেই দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক তঙ্কÄ বিকশিত হয়, তবে আধুনিক বৈজ্ঞানিক তঙ্কÄকে অবশ্য পরীক্ষনের মাপকাঠি পেরোতে হয় অনেক ক্ষেত্রেই। প্রকৃতিগতভাবে যুক্তিবাদী হওয়া সঙ্কেÄও জীবন দর্শনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ কেন যুক্তির আশ্রয় না নিয়ে অন্ধবিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় তা নৃতাত্বিক ও মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনের বিষয়, আমি এখানে সে আলোচনা করার সাহস পাইনা। আমরা বরং আরজ আলী মাতুব্বর রচিত ‘অনুমান’ পুস্তকটি নিয়ে খানিকটা আলোচনা করব।
    ‘অনুমান’ পুস্তকটি যুক্তিনির্ভর ‘অনুমানে’র, প্রকৃত অর্থে ‘বিশ্লেষনে’র। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত এই পুস্তকে মাতুব্বর যে অনুমানগুলো করেছেন সেগুলো মূলত নৃতাঙ্কিÄক বা ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ। আরজ আলী মাতুব্বরের ‘সত্যের সন্ধানে’ বা ‘সৃষ্ঠিরহস্য’ নিয়ে যে পরিমাণ আলোচনা হয়েছে ‘অনুমান’ নিয়ে তা হয় নাই। অথচ অনুমান পুস্তকটি আরজ আলী মাতুব্বর রচিত অন্য যেকোন পুস্তকের চেয়ে বেশি বৈচিত্রধর্মী। ‘সত্যের সন্ধানে’ জিজ্ঞাসা নির্ভর দর্শনের পুস্তক, টমাস পেইন রচিত ‘TheAgeofReason’ এর সাথে এর তুলনা করা চলে। অন্যদিকে ‘সৃষ্ঠিরহস্য’ তথ্যনির্ভর প্রবন্ধ পুস্তক, জিজ্ঞাসা নির্ভর দর্শন এখানেও উপস্থিত। এই পুস্তকগুলো তথ্য ও যুক্তি তর্ক নির্ভর, সাহিত্যের শিল্পগুন এখানে খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন। ‘অনুমান’ই একমাত্র পুস্তক যাতে আরজ আলী মাতুব্বরের লেখার শিল্পগুনের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়। আগের পুস্তকগুলোর বিনয় এখানে অনেকটাই অনুপস্থিত, তিনি এখানে নায়ককে ভিলেন বানিয়েছেন, বানিয়েছেন ভিলেনকে নায়ক, রম্য করেছেন, খোঁচা দিতে ছাড়েননি, ফিকশন তৈরি করেছেন, ধারণ করেছেন লোকায়ত বাঙলা সাহিত্যের বিপ্লবী চেতনাকে। আগেই বলেছি এই পুস্তকের বৈচিত্রের কথা, কিন্তু সে বৈচিত্র শুধু বিষয়বস্তুতে সীমাবদ্ধ নয়, বৈচিত্র রয়েছে শিল্পমানেও। এই পুস্তক পড়তে গেলে খটকা লাগে, কোথাও কোথাও তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন, আকাশ ছুঁয়েছেন, তার লেখার ত্যাজে পাঠককে প্রায় অন্ধ করে ফেলেছেন, আবার কিছু অংশে তিনি বিষয়বস্তুর বিচারে ও লেখার ধারাবাহিকতায় খুব একটা বিবেচনার পরিচয় দেন নাই। বিষয়বস্তু ও শিল্পমানের বৈচিত্রের এ কারণ বিশ্লেষনের প্রয়োজন আছে, আরজ আলী মাতুব্বরকে বোঝার জন্য এবং তিনি লোকায়ত বাঙলা সাহিত্যের যে ধারার প্রতিনিধিত্ব করেন তার খাতিরে।
    এই পুস্তকে অধ্যায় রয়েছে সাতটা, যার মধ্যে প্রথম ছয়টা প্রবন্ধ এবং সর্বশেষ ‘সমাপ্তি’ অধ্যায়ে আরজ আলী মাতুব্বর অনেকটা তার পাঠকদের কাছে শেষ বিদায় নিয়েছেন, তখন তার বয়স ছিল তিরাশি, পঁচাশি বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন । প্রবন্ধ ছয়টার মধ্যে প্রথম প্রবন্ধ ‘রাবণের প্রতিভা’ ও সর্বশেষ প্রবন্ধ ‘শয়তানের জবানবন্দি’ সবচেয়ে শক্তিশালী ও সর্বাপেক্ষা অধিক আলোচনার দাবিদার। ‘ফেরাউনের কীর্তি’ অনেকটা ‘রাবণের প্রতিভা’র ধাঁচেই রচিত, তবে ‘রাবণের প্রতিভা’র তুলনায় খানিকটা নিরাবেগ। ‘ভগবানের মৃত্যু’ অপেক্ষাকৃত ছোট প্রবন্ধ হলেও শিল্পগুন বিচারে শক্তিশালী প্রবন্ধ, এতে রম্য রয়েছে, অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে তির্যক বান রয়েছে। অন্যদিকে ‘আধুনিক দেবতঙ্কĒ‘মেরাজ’ অপ্রকৃত বৈজ্ঞানিক (pseudoscientific) তথ্যের দোষে দুষ্ট।
    ‘অনুমান’ পুস্তকটি বৃহ্‌ৎ না হলেও বিস্তৃত আলোচনার দাবি রাখে। স্বল্প পরিসরে খুব ভালোভাবে তা করা সম্ভব না। ব্যক্তিগত পছন্দের কারণেই ‘শয়তানের জবানবন্দি’র উপর জোর দিতে চাই। বিশ্লেষণ এই অভাজনের একান্তই ব্যক্তিগত। দোষ ত্রুটি ও গাধামির ক্ষেত্রে উপদেশ এবং গালাগালি দুটোকেই অভিন্দন জানাই। বিনয়ের সাথে বলতে চাই, ‘রাবণের প্রতিভা’ আমার পড়া আধুনিক বাঙলা সাহিত্যের অন্যতম সাহসী প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধে আরজ আলী রাবণকে নায়ক বানিয়েছেন, রামকে বানিয়েছেন ভিলেন। এই কাজ তিনি করেছেন যুক্তি নির্ভর অনুমানের মাধ্যমে, যাকে আসলে যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ বলাই ভালো, এবং সেই বিশ্লেষনের পক্ষে তথ্য উপাত্তও তিনি কম হাজির করেন নাই। ‘রামায়ণ প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সাহিত্য কীর্তি, হিন্দুদের কাছে পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ। প্রশ্ন উঠতে পারে, এমন একটা পুস্তকের মূল চরিত্রগুলোর এমন অপ্রচলিত বিশ্লেষণ তিনি কেন করলেন। উত্তর হচ্ছে, এই কথাটা বোঝাতে যে, প্রচলিত ইতিহাস ও মিথ রচিত হয় বিজয়ীর হাতে, বিজীতের হাতে না। এটা আসলে অনেক পুরনো একটা বিষয়। দুটি পরস্পর বিরোধী জাতি বা গোষ্ঠী একই ঘটনার ইতিহাসকে নিজ নিজ স্বার্থে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে রচনা করে গেছে এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক রয়েছে। কিন্তু যেখানে বিজীতের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না কিংবা বিজীতের সমাজ সংস্কৃতি বিজয়ীর সমাজ সংস্কৃতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যায় সেখানে ইতিহাসের মূল রুপ খুঁজতে যাওয়া কষ্টসাধ্য, আর মিথ ও গাঁথার ক্ষেত্রেতো অনুমানের বিকল্প কিছুই থাকে না, তবে অবশ্যই যুক্তিনির্ভর অনুমানের। বাঙলা সাহিত্যে এই কাজটা খুব বেশি মানুষ করেন নাই। মধ্যযুগে কিছু কবি-সাহিত্যিক ধর্মীয় উপাখ্যানকে প্রেমোপাখ্যানে পরিণত করেছেন, কাহিনীতে ধর্মের চেয়ে মানুষের মূল্য বেশি দিয়েছেন, ‘ইউসুফ জোলেখা’, ‘মনসা মঙ্গল’কে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, বাঙলার লোকায়ত কবি ও বাউল শিল্পীরা বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় তঙ্কÄ-কাহিনীর সমালোচনা করেছেন, সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মাইকেল মধুসুধন দত্ত তার ‘মেঘনাদ বধ’ মহাকাব্যে মূল চরিত্র করেছিলেন রাবণপুত্র মেঘনাদ তথা ইন্দ্রজিতকে, কিন্তু মেঘনাদের চরিত্র সেখানে এক ট্রাজেডির নায়ক চরিত্র, রাম-রাবণের ব্যক্তিগত যুদ্ধের মাঝে বলি হওয়া ত্যাজোদীপ্ত মহান নায়ক, অনেকটা হ্যাক্টরের মত। ‘মেঘনাদ বধ’এ ধর্মীয় কাহিনীর ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ আছে, কিন্তু তা মূল কাহিনী বা বিশ্বাসকে সরাসরি আঘাত করে নাই, করেছে আবেগিভাবে। বৃটিশ শাসনামলে বাঙলাদেশে যে ইংরেজি শিক্ষিত সাহিত্যিক সমাজের উদ্ভব ঘটে, মধুসুদন সে সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যদিকে আরজ আলী গ্রাম বাঙলার কৃষক, পালা গানও গাইতেন একসময়। যে অন্যায় ও অন্ধ সংস্কার তিনি দেখেছেন, যার বিরুদ্ধে তিনি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তা আমাদের আবহমান বাঙলার মাটি মানুষের মাঝে বিরাজমান। নিজের চেষ্টায় আধুনিক সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানের চর্চা করলেও তার চিন্তাধারার মূল শিকড় লোকায়ত বাঙলার নিজস্ব সম্পদ, তার সাহিত্যের শিল্পগুন লোকায়ত বাঙলার কবি বাউলের চিন্তাধারা আর আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান যুক্তিবাদের মিলিত সংস্করন, একান্তই মৌলিক। ‘রাবণের প্রতিভা’য় চরীত্রের বিপরীতধর্মী বিশ্লেষণ করেই তিনি ক্ষান্ত হন নাই। জাতে, সংস্কৃতিতে এবং চিন্তা চেতনায় আরজ আলী অনার্য। বেদ বিরোধী, অনার্য, স্বদেশভূমি রক্ষার যুদ্ধে শহীদ রাবণের প্রতি সহানুভুতি জানাতে তিনি দেরি করেন নাই। রামের বিরুদ্ধে তার বিশ্লেষণ যুক্তিপুর্ণ, তবে তা শ্লেষাত্মক ও বিদ্রুপধর্মী, রাম বিরোধী এই শ্লোকাত্মক মনভাব তিনি খোলাখুলি ভাবেই করেছেন বলে মনে হয়। ‘ফেরাউনের কীর্তি’ও ধর্মীয় গাঁথার ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ, কিন্তু ‘রাবণের প্রতিভা’র মত আবেগ, সহানুভুতি, শ্লেষ, ঘৃণা এখানে খুঁজে পাওয়া যায়না। ফেরাউন যে কোন একক ব্যাক্তি নন, তাওরাতের ইশ্বর ‘জেহোভা’যে শুধুমাত্র ইহুদিদের ইশ্বর, এসব অনেকের কাছেই নতুন কথা হলেও আরজ আলী মাতুব্বরের নিজস্ব বক্তব্য এই প্রবন্ধটিতে কম। রাবণ ও রামের প্রতি অনুভুতি ও আবেগের যে তীব্রতা তিনি পোষণ করেন, মুসা বা ফেরাউন রামেসিসের ক্ষেত্রে তা তিনি করেন না। যুক্তি তর্ক নয় বরং তথ্যই এই প্রবন্ধের মূল উপজীব্য। আগেই বলেছি, ‘ভগবানের মৃত্যু’ ছোট কিন্তু শক্তিশালী। রম্য করে এর আগে আরজ আলী আর কোন লেখা শুরু করেন নাই। তার এই রম্য ব্যাঙ্গধর্মী। তিনি এই লেখা শেষও করেছেন ব্যাঙ্গ দিয়ে। ভগবান নামের অর্থ তিনি বিশ্লেষণ করেছেন, বলেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মাঝে স্রষ্টা সম্পর্কে ধারণার কথা, এবং এইসব কল্প কাহিনীর অসারতাও তিনি তুলে ধরেছেন। শিশুশুলভ অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে তির্যক বাণ হেনেছেন তিনি এ লেখায়। তবে এই সব কল্প কাহিনী ও অন্ধ বিশ্বাসের উৎপত্তি সন্ধানে ব্যাপক আলোচনা তিনি করেন নাই, যতটুকু করেছেন তাতেও খুব বেশি গভীরতা নাই। এই প্রবন্ধের শক্তি এর পরিষ্কার ও শ্লোকাত্মক কথনে, বরাবরের মতই জিজ্ঞাসা ধর্মী, তবে বিনয়ের বাহুল্যহীন। ‘আধুনিক দেবতত্ম’‘মেরাজ’ নি:শন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ, অন্তত আমাদের সময়কার পাঠকদের কাছেতো বটেই। দুটি প্রবন্ধই অপ্রকৃত বৈজ্ঞানিক তথ্য ও তঙ্কেÄর আলোচনা। এই ক্ষেত্রে অবশ্য লেখককে খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। তিনি বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন, একনিষ্ঠ পাঠক ছিলেন, কিন্তু বিজ্ঞানী ছিলেন না। আর যে যুগে এই পুস্তক তিনি লিখেছেন সেই যুগে newagemysticism, newageoccultism এই সব popularculture এর আবর্জনা নিয়ে শুধু সাধারণ মানুষই নয় বরং অনেক বিজ্ঞানীও মেতেছিলেন, এখনো অনেকে মেতে আছেন। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে ভুত, প্রেত, আত্মা, দেবতা বা স্রষ্টা অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে তখন রহস্য ও ভাববাদ প্রিয় মানুষ আশ্রয় খুজেছে ভিনগ্রহবাসী অতি উন্নত প্রানীদের পৃথিবীতে আগমন ও আমাদের সভ্যতায় তাদের অবদানের তঙ্কেÄ, যেসব তঙ্কেÄ প্রকৃত বৈজ্ঞানিক যুক্তি তর্কের চেয়ে কল্পনা ও অতিরঞ্জনেরই বেশি অবদান। প্রকৃতপক্ষে, ‘এরিক ফন দানিকেন’ বা ‘জেচারিয়ান শিচিন’এর মত তথাকথিত নৃতাঙ্কিÄক বা বিজ্ঞানীদের এইসব আধুনিক দেবতঙ্কÄ মূল ধারার বিজ্ঞানীরা ‘পুছেনা’ বললেই চলে, বৈজ্ঞানিক তঙ্কÄ বা প্রমান হওয়ার মত তথ্য প্রমান এই তঙ্কÄগুলোর নাই বলেই। বাংলাদেশের কিছু পেপারব্যাক প্রকাশনী সে সময় দানিকেন সাহেব ও তার তঙ্কÄকে এদেশে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছিলো, দু:খের বিষয় সে সময় এদেশের জ্ঞানীগুনী জন এগিয়ে এসে এই সব তঙ্কেÄর অতিরঞ্জন ও অতিকথনের বিরুদ্ধে কিছু বলেন নাই। আরজ আলী মাতুব্বর ইংরেজি পড়তে পারতেন না, এই সব তঙ্কÄ সম্বন্ধে বিদেশী মূলধারার বিজ্ঞানীদের লেখাও তিনি তাই পড়তে পারেন নাই। অন্যদিকে ‘সত্যের সন্ধানে’র মত দর্শনের পুস্তক হিসেবে বা ‘সৃষ্টি রহস্যে’র মত তথ্যপুঞ্জ হিসেবে তিনি ‘অনুমান’কে লেখেন নাই, বরং গুরুত্ব দিয়েছেন অনুমানের উপর, তাই হয়ত এইসব তঙ্কÄ কতটা বৈজ্ঞানিক বা অবৈজ্ঞানিক তা নিয়ে তিনি বিচার করেন নাই। যতকিছুই হোক, এই প্রবন্ধ দুটি এই পুস্তকের দুর্বল অংশ। এই পুস্তকের সর্বশেষ প্রবন্ধের নাম ‘শয়তানের জবানবন্দি’‘অনুমান’ পুস্তকটিকে যদি এর একটি মাত্র প্রবন্ধের জন্য হলেও স্মরণ করতে হয় তবে তা হচ্ছে এই ‘শয়তানের জবানবন্দি’। পুরো পুস্তকে এই লেখাটি অন্য সব লেখার চেয়ে অনেক উঁচুতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। আরজ আলী মাতুব্বরের ‘শয়তানের জবানবন্দী’ আর শফিকুর রহমানের ‘স্বর্গ মুসলমানের’ ছাড়া এ জাতীয় লেখা বাঙলা সাহিত্যে আর আছে কিনা আমি জানিনা, থাকলেও খুব বেশি যে নাই তা নি:সন্দেহে বলা যায়। দার্শনিক আরজ আলী নয়, বরং সাহিত্যিক আরজ আলী এ লেখায় তার স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। ফিকশন ধাঁচের এ লেখায় ইসলাম, খৃষ্টান ও ইহুদী ধর্ম স্বীকৃত মানব জাতির মহাশত্রু শয়তানকে তিনি বিপ্লবাত্মকরকম ভিন্ন রুপে উপস্থাপন করেছেন। একঙ্কÄবাদী এই তিনটি ধর্মেই শয়তান খোদা বিরোধী চরিত্র, মানব জাতিকে প্রতারিত করতে সর্বদা ব্যস্ত। ইহুদী ধর্মের প্রাথমিক যুগে অবশ্য শয়তানের বিশেষ গুরুত্ব ছিলনা, তাওরাতের কোথাও শয়তানকে খুঁজে পাওয়া যায়না। বিবি হাওয়াকে গন্ধম ফল বা জ্ঞান বৃক্ষের (treeofknowledge) ফল খাওয়ানোর যে কাহিনী তাওরাতে বর্ণিত আছে তাতে যে প্রতারণাকারীর কথা বলা আছে তাকে সাপ বলা হয়েছে, শয়তান বলা হয়নি, পরবর্তিকালে অবশ্য ইহুদী ও খৃষ্টানরা এই সাপকে শয়তানের সাথে মিলাতে শুরু করে। ইহুদী ধর্মে শয়তান চরিত্রটি গুরুত্ব পেতে শুরু করে ঈসা নবীর জন্মের কয়েকশ বছর আগে থেকে। পরবর্তিতে খৃষ্টান ধর্মে শয়তান শুধুমাত্র খোদাবিরোধী হিসেবেই নয় বরং খোদার বিপরীত শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। খৃষ্টান ধর্মে শয়তান অনেকটা প্রাচীন পারস্যের জোরাস্ট্রিয়ান ধর্মের আহরীমানের মত, যে সকল খারাপ ও পাপের প্রভু অন্যদিকে আল্লাহ হচ্ছেন সকল ভালো ও পূণ্যের প্রভু। শয়তান কোথা থেকে এলো তার অবশ্য পরিষ্কার ধারণা ইহুদী বা খৃষ্টান ধর্মে খুঁজে পাওয়া কষ্ট। কেননা, বিভিন্ন ইহুদী রহস্যধর্মী ধর্মীয় পুস্তকের বিলিয়াল, বেলযেবাব, লুসিফার প্রমুখ চরিত্রকে পরবর্তিতে শয়তানের সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে, যে চরিত্রগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নৃতাঙ্কিÄক পরিচয় রয়েছে। ইসলাম ধর্মে শয়তানের প্রকৃত নাম বলা হয়েছে ‘আযাযিল’। এই আযাযিল নামটি ইহুদি বা খৃষ্টান ধর্মে শয়তানের সাথে সম্পর্কিত না। তাওরাতে আযাযিল নামে এক মরুভূমির ভুতের কথা আছে। অন্যদিকে ‘BookofEnoch’ বা ‘নবী ইউনুসের পুস্তক’ নামক সহিফায় আযাযিলের নাম একজন পথভ্রষ্ট ও পতিত ফেরেস্তার নাম হিসেবে পাওয়া যায়, তবে তার পতনের ঘটনা মানব সৃষ্টির অনেক পরের ঘটনা, নুহ নবীর সময়কার। সে যাই হোক, শয়তান সম্পর্কে খৃষ্টান ও ইসলামের ধারণা প্রায় একই রকম। ইসলাম ধর্মে শয়তানের ক্ষমতা ও পরিচয় নিয়ে অনেক ইসলামী চিন্তাবীদকেই ইসলামের প্রাথমিক যুগে ধন্ধে পরতে হয়েছে। শয়তান পতনের পূর্বে ফেরেশতা ছিলেন না জ্বীন ছিলেন তা নিয়েও ভাবনা চিন্তা কম হয় নাই। কোরআন শরিফে শয়তানের এ পরিচয়ের কোন মীমাংসা নাই। সুরা আল বাক্কারার তিরিশ থেকে সাঁইত্রিশ নং আয়াতে ইবলিশ কর্তৃক আদমকে সিজদা না করার, মানে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কাহিনী বর্ণিত আছে। এখানে বলা হয়েছে যে সকল ফেরেশতাই আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী আদমকে সিজদা করেছিল, শুধু ইবলিস এই আদেশ মান্য করে নাই। এসব আয়াতে ইবলিশকে ফেরেশতাদের একজন ছাড়া অন্যকিছু মনে করার কোন কারণ নাই। কিন্তু পরবর্তিতে বিভিন্ন ইসলামী কাহিনী ও হাদিসে শয়তানকে জ্বীন জাতির অন্তর্ভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যে কিনা তার ইবাদতের জোরে ফেরেশতাদের সর্দার হতে পেরেছিল। যাই হোক, শয়তানকে ফেরেশতা হিসেবে মানতে এই অনিচ্ছার কারণ রয়েছে। ইসলাম ধর্ম মতে ফেরেশতারা আল্লাহর দাসানুদাস, তাদের মুক্তচিন্তা করার ক্ষমতা নেই, তারা প্রোগ্রাম করা রোবটের মত, প্রোগ্রামের বাইরে যাওয়ার উপায় নেই, তাই আল্লাহর আদেশ অমান্য করার মত ক্ষমতাও তাদের নেই, সুতুরাং শয়তানের পক্ষে ফেরেশতা হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সমস্যা হল, সুরা বাক্কারার এই সাতটি আয়াতেই আবার দেখা যায়, আল্লাহ যখন মানুষ বানাতে চাইলেন ফেরেশতারা তখন শুরুতে মৃদু আপত্তি তুলেছিলেন, যা মুক্তচিন্তার পরিচয়। আবার আল্লাহ যখন ফেরেশতাদের বলছিলেন, আমি সবই জানি, তোমরা আমাকে যা বল তাও যা গোপন কর তাও, তখন আমরা দেখি যে ফেরেশতাদের তথ্য গোপন করার ক্ষমতাও রয়েছে, মুক্তভাবে চিন্তা তারা করতে পারে বৈকি। শয়তানের ক্ষমতা নিয়ে ইসলাম যে সমস্যার সম্মুখীন হয়, তা মূলত তাওহিদ বা একঙ্কÄবাদের সাথে সম্পর্কিত। ইসলামে শয়তান খৃষ্টান ধর্মের মত AntiGod নয়, বরং অনেক কম ক্ষমতার অধিকারী, LesserBeing, আল্লাহ সকল শুভ কর্মের উৎস হলেও শয়তান সকল অশুভের দন্ডমুণ্ডের কর্তা নন, তিনি শুধু আল্লাহর কাছ থেকে মানুষকে দাগা দেয়ার ক্ষমতা অনুরোধ করে চেয়ে নিয়েছেন, ভালো মন্দ যাবতীয় সবকিছুর নিয়ন্ত্রক আসলে আল্লাহ। তারপরও, সাধারণত মুসলমানরা পাপকর্মের জন্য শয়তানকেই দায়ী করে থাকেন। ‘শয়তানের জবানবন্দী’তে শয়তান তাই প্রশ্ন করেছেন, “ শুভ কাজের কর্তা আল্লাহতা’লা এবং অশুভকাজের কর্তা শয়তান।’ যদি তাই হয় তাবে ‘আল্লাহ অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও সর্বশক্তিমান’— এ কথাটির সঠিকতা কি? প্রশ্ন এখানে তাওহীদের, আর এখানেই শুরু হয় যাবতীয় গোলমালের, প্রশ্ন আসে, পাপের জন্য দায়ি আসলে কে- মানুষ, শয়তান, না আল্লাহ স্বয়ং। প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাকদির বা আমোঘ নিয়তির ধারণা, সবকিছুই যেখানে আগে থেকে ঠিক করা, মানুষের যা পরিবর্তন করার ক্ষমতা নেই, সেখানে মানুষের পাপ বিচার করা হয় কোন মাপকাঠিতে, শয়তানেরই বা মানুষকে পাপের পথে নিয়ে যাওয়ার দায় নেয়ার যৌক্তিকতা কোথায়? এসব প্রশ্ন কোন নতুন প্রশ্ন নয়, পরস্পর বিরোধী তঙ্কÄ একটি মূল মতবাদের অংশ হলে এসব প্রশ্ন যাগেই। আমাদের গ্রাম বাঙলার মানুষের এসব প্রশ্ন নিয়ে ভাবার ও প্রশ্ন করার একটা নিজস্ব ধরণ আছে। লৌকিক বাঙলার প্রগতিশীলশ্রেনী, সে হাজার বছর আগের বৌদ্ধ সহজীয়াদের থেকে শুরু করে বাউলদের সময় পর্যন্ত ধর্মীয় মতবাদের স্ববিরোধী তঙ্কেÄর বিরুদ্ধে প্রশ্নের একটা নির্দিষ্ট ‘ধাঁচ আছে। আরজ আলীর ‘শয়তানের জবানবন্দী’ সেই ‘ধাঁচের প্রতিনিধিত্ব করে, আবার, এই লেখা প্রচলিত বাঙলা সাহিত্যের বিচারে একেবারেই আনকোরা, আধুনিক। যেসব ভাবনা আমাদের মনে প্রতিনিয়ত উঁকি দেয়, যেসব প্রশ্ন আমরা করতে গিয়েও সাহস পাইনা, যে সব চিন্তা আমরা পাঁপের ভয়ে ভূলে যেতে চেষ্টা করি, এই ফিকশনে সেইসব ভাবনা আর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। শয়তানের প্রতিমূর্তি এখানে কোন দন্ত, শিংবহুল দানবের প্রতিমূর্তি নয়, বরং জুব্বা পাগড়ি দাড়িওয়ালা ত্যাজোদীপ্ত সৌম্য মূর্তি। শয়তানকে নিয়ে প্রচলিত ধারণার বাইরে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে নতুন বিষয় নয়। খৃষ্টপূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে নস্টিক (Gnostic) রা তাওরাতে বর্ণিত সাপ তথা শয়তানকে মানুষের শত্রুর বদলে বন্ধু হিসেবে গণ্য করত, কেননা এই সাপ গন্ধম তথা জ্ঞানের ফল মানুষকে খাইয়েছিল আর তার ফলেই মানুষ ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা লাভ করেছিল, নির্বোধ পশু থেকে পরিণত হয়েছিল বোধসর্বস্য মানুষে। ইরাক, সিরিয়া ও তুর্কিতে বসবাসকারী ‘ইয়েজিদী’ গোত্রের লোকজন বিশ্বাস করে শয়তান আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা এবং আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবেই তিনি পৃথিবী শাসন করছেন। এসব অবশ্য ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয়। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ হতে পারে ‘জন মিল্টনে’‘প্যারাডাইস লস্ট’‘প্যারাডাইস লস্ট’ এ শয়তানের প্রতি সহানুভুতি জাগে, এখানে সে কেন্দ্রীয় চরিত্র, স্বর্গ হতে বিতাড়িত, শয়তানের শোকগাথা এই এপিক। ‘শয়তানের জবানবন্দি’তে ঠিক শয়তানের শোকের কথা তেমন নেই, যাও আছে তা শ্লেষপূর্ণ। প্যারাডাইস লস্টের মত শয়তান এখানে দু:খবাদী চরিত্র নয়, শয়তানের প্রতি সহানুভুতি নয় বরং নিজের জন্যই সহানুভুতি জেগে ওঠে পাঠকের। শয়তান এখানে বিদ্রোহী, তবে ঠিক স্রষ্টার বিরুদ্ধে না, বরং মানুষের প্রচলিত পশ্চাৎপদ অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে। শয়তানকে কোন একক চরিত্র হিসেবে গণ্য করা এই কাহিনীতে সম্ভব না, কোন একক কাহিনীর বর্ণনাও এখানে নেই। শয়তান এখানে আমাদের মনের বিভিন্ন সময়ের এক একটি জিজ্ঞাসু চরিত্রের প্রতিবিম্ব।
    অনুমান এমন একটি পুস্তক যেখানে আরজ আলী মাতুব্বরের শিল্প চেতনা এবং জিজ্ঞাসু চরিত্র স্বকীয়তার সর্বোচ্চ মাত্রায় উদ্ভাসিত। এই পুস্তকটি নিয়ে এত স্বল্প পরিসরে বিস্তৃত আলোচনা সম্ভব না। যতটুকু আলোচনা করেছি তা একেবারেই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। আগেই বলেছি, দোষ ত্রুটি ও গাধামির ক্ষেত্রে উপদেশ এবং গালাগালি দুটোকেই অভিনন্দন জানাই। সবশেষে সবাইকে ‘অনুমান’ পুস্তকটি যারা পড়েননি তাদের পড়ার অনুরোধ জানাই, যারা পড়েছেন তাদের কাছে পুস্তকটি সম্বন্ধে আলোচনা ও বিশ্লেষনের আশা রাখি। আসসালামু আলাইকুম।
  • Kulada Roy | 74.72.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০১১ ১০:৩০471122
  • উপর্যুক্ত দুটি নিবন্ধে 'ঙ্কÄ' শব্দটি ভুলভাবে 'ঙ্কÄ' প্রকাশিত হয়েছে এখানে। পাঠকগণ দযা করে কষ্ট স্বীকার করে পড়বেন।
  • achintyarup | 121.24.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০১১ ১৯:৩৯471123
  • গত বছর পাঁচেক ধরে আরজ আলী মাতুব্বরের লেখা পড়ছি। এইরকম একজন স্বশিক্ষিত মানুষের চিন্তার গতি এবং স্বচ্ছতা দেখলে অবাক হতে হয়। কয়েকমাস আগে বাংলাদেশ থেকে কিনে আনলাম আরজ আলী রচনাবলীর তৃতীয় খণ্ড, যেখানে ওঁর আত্মজীবনী আছে। অসাধারণ।
  • Nina | 68.84.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০১১ ২১:০২471124
  • সত্যি জীবন কত ছোট, কত কি শেখার জানার যে বাকী থেকে যায়!
    কুলদাভাই আপনাকে শ্রদ্ধা জানাই। আর আপনার লেখাগুলিকে মুগধতা

    চিন্টুবাবু এবার দেশে গেলে তোমার সঙ্গে মোলাকাত কোরবই আর তোমার কাছে কিছু বইএর সন্ধান জেনে কিনে আনব (তোমার কয়েকটা ঝেঁপে দেব )

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন