ঠিক জায়গায় ধরেছ।
কনটেন্ট নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু মহারাণীর সাম্রাজ্য হারানোর যন্ত্রণা যদি নিজে না অনুভব করি তাহলে সেটা মহারাণীর ভাট হয়ে যাবে।
আর টেনিসনের কবিতায় যন্ত্রণা কোথায়? বরং এই বিশ্বে সব কিছুই ঠিক ঠাক চলছে--এমন ভাব। ওনার কবিতায় সাম্রাজ্যের সংকট?
আমি দেখতে পাই নি।
যেমন উপন্যাসে তলস্তয়, নিজে রাশিয়ার ওপরতলার লোক। কিন্তু অবক্ষয় ও পচন দেখতে পাচ্ছেন। জীবনে অনুভব করেছেন। তাই ওয়ার অ্যান্ড পীস এবং আনা কারেনিনা সেসময়ের খবরের কাগজের রিপোর্ট না হয়ে মহান সাহিত্য হয়। দর্পণ হয়।
আবার অনেক বামপন্থী সাহিত্যিকের রচনা --কবিতা ও গদ্য-- শ্রমিক কৃষকের জীবনের সঙ্গে ধারণাটি দলের চোথা পড়ে লেখা।
তারমানে এই নয় যে যান্ত্রিক ভাবে গিয়ে কয়দিন কুলিমজুরে ধাওড়াতে গিয়ে থাকলে বা চাষির সঙ্গে খেতে নেমে ধান কাটলেই ভাল বামপন্থী সাহিত্য লেখা যাবে।
সে চেষ্টাও হয়েছে।
বড়া কমলাপুরের কৃষক আন্দোলনের সময় উদ্দীপিত গোপাল হালদার মানিক বন্দ্যোকে বললেন ওই এলাকা গিয়ে দেখে আসতে। মানিক গেলেন না। তবে তার আগে সুন্দরবন এবং আরও কিছু জায়গায় এঁদের সঙ্গে গিয়ে গ্রাম দেখার অভিজ্ঞতা আছে। ছোট বেলায় বাবার বদলির চাকরির সুবাদে বহু প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরেছেন।
সেই সব মিলে জারিত হয়ে লেখা হোল "ছোট বকুলপুরের যাত্রী" ও "হারাণের নাত জামাই"য়ের মত গল্প। অথচ পার্টির নির্দেশ মেনে বারবার গ্রামে যাওয়া গোপাল হালদারের হাত দিয়ে ভাল লেখা তেমন বেরোল কোথায়? "একদা" উপন্যাস ছাড়া? প্রবাসী লেখক নয়, খাস বাংলায় একটা "ঢোঁড়াই চরিত মানস" বা হিন্দি ফণীশ্বর নাথ রেণুর "ময়লা আঁচল" এর সমকক্ষ কোন গদ্য কোথায়?
তারাশংকরের হাঁসুলী বাঁকের মত গ্রামসমাজের অন্ত্যজদের নিয়ে লেখা উপন্যাস বামপন্থীদের কলমে?
এসব সবাই জানি।
বলতে চাইছি কোন ব্যক্তিবিশেষ তাঁর সামগ্রিক দর্শন ও কল্পনার জোরে এইসব সীমাকে অতিক্রম করে যান।
ধ্যেৎ , বকবক করতে করতে কবিতা ছেড়ে কোথায় চলে গেছি? আজ কিছু ব্যক্তিগত কারণে মন চঞ্চল। তাই বড্ড বেশি ভাট বকছি।
কবিতা আমার মতে বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন করা। অনেকটা ধ্যানের মধ্যে দিয়ে কাব্যরূপ মেটাফর শব্দের রূপকল্পকে ধরতে যাওয়া। না, কোন স্পিরিচুয়াল অর্থে ধ্যান বলছি না। কাব্যচিন্তাটি মনে কেন্দ্রীভূত হয়ে নাওয়া খাওয়া ভুলিয়ে অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যায়। সমান্তরাল ভাবনাবিশ্ব গড়ে তোলে --সেই কথা বলছি।
আর দুঃখ? সমস্ত আনন্দের কোর লেভেলে দুঃখা আছে-- হারিয়ে ফেলার ভয়। শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়।
যেমন দুর্গাপুজো এলেই আমার মনে বিসর্জনের ঢাক বেজে ওঠে।
"নবমী নিশি রে! তোর দয়া নাই রে"?
কীটস যেমন মেলাঙ্কোলিকেই ভবিতব্য মেনে দুখের মধ্যেই আনন্দ খোঁজেন।
ভারতে গৌতম বুদ্ধের ফার্স্ট প্রিন্সিপল--জগত দুঃখময়।
রাধাকৃষ্ণন বৌদ্ধদর্শনের প্রারম্ভ হিসেবে বলছেন-- টিরানি অফ পেইন। দুঃখের স্বেচ্ছাচার।
আমি হেলসিংকিতে, কোলকাতা থেকে সময় আড়াই ঘন্টা পিছিয়ে। এবার বোধহয় ঘুম না আসায় ভাট বকছি--বুড়োদের স্বভাব।