কেকেদা,আরেকটা বলি?
তখন চেচনিয়াতে হেভি গৃহযুদ্ধ চলছে। না, ভুল বললাম দাগিস্তানের ঝামেলা। চেচেন-ইঙ্গুশেতিয়া অটোনমাস রিপাবলিকে রাস্তায় খোলা কালাশনিকভ বাগিয়ে দুদল ঘুরে বেড়াচ্ছে। ১৯৯১এর জুলাই। অগস্টেই দেশটা টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, তবে সেসব কেউ জানে না।
একটা বাঙালি ছেলে ছুটিতে বাড়ি যাবে বলে আমার শহরে এসেছে, চেচেন-ইঙ্গুশেতিয়ার সদর শহর গ্রোজনি থেকে। রুশ ফেডারেশন বলে দিয়েছে ঐ শহর থেকে সব বিদেশিদের চলে যেতে, যখন তখন খুন হয়ে যাবার সমূহ আশঙ্কা। বাঙালি বলতে তখন আমি একাই। ছুটির মাস, সকলে দেশে বিদেশে ঘুরতে গেছে। আমার পয়সা নেই, বসে আছি। ছেলেটা খবর পেয়ে আমার কাছে এলো। আলাপ করলাম। বলল, দিদি বাড়ি যাবো, টিকিট কাটতে হবে, চলো আমার সঙ্গে এয়ারপোর্টে।
— তোকে তো এখান থেকে টিকিট দেবে না! তুই মস্কো গেলি না কেন?
— ওরে বাবা, মস্কো থেকে বিরাট দাম। এখান থেকে দিল্লি কাছে হবে, দামও সস্তা। তুমিও চলো দেশে।
— আমার পয়সা নেই।
— আমি দিচ্ছি, তুমি পরে ফেরৎ দিও।
চললাম এয়ারপোর্ট। পথে যেতে যেতে গল্প করছে, ছবছর বয়সে ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল ছেলেটার। মা মানত করেছিল, এখন দিব্যি আছে। হাতে মাদুলি টাদুলি আছে। বিন্দাস প্রকৃতির। কোনও চাপ নেয় না।
এয়ারপোর্টের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে হ্যা হ্যা করে কাউন্টারের সামনে গিয়ে হাসছে। আমাকে বলছে, আরে চাপ নিও না, আমার হাতে মা মাদুলি পরিয়ে দিয়েছে, আমি চাপ নিই না। টিকিট দেবে না কেন? দেবে, দেখো না।
সত্যিই দুজনের টিকিট হয়ে গেল। আমরা দিল্লি গেলাম। কোলকাতা যাবার জন্য তেমন টাকা পয়সা নেই। সেকেন ক্লাসের দুটো টিকিট মেরে কেটে হবে। দিল্লি পৌঁছতে সন্ধে। রেল স্টেশনের বাইরে বসে আছি, হোটেলে থাকার টাকা নেই।
রাত দশটা নাগাদ পুলিশ এসে উঠিয়ে দিচ্ছে। স্টেশনে ঢুকে পড়লাম। স্টেশনমাস্টারের ঘরে গিয়ে কনফিডেন্সের সঙ্গে বলছে আমাদের একটু ওয়েটিং রুমে যেতে দেবেন? টিকিট নেই, কাল সকালে কাউন্টার খুললে কাটব টিকিট। স্টেশনমাস্টার ব্যবস্থা করে দিলেন। পরদিন সকালে টিকিটও পেয়ে গেলাম, দিনের দিন টিকিট। অবিশ্বাস্য!