কোহলির ইতর ভাষা দেখলাম কয়েকজন এখানে নরমালাইজ করলেন। কোহলির মত অভদ্র ইতররা ভুলে যায় ক্রিকেটের মাঠ পশ্চিম দিল্লির মালের ঠেক নয়। খেলার মাঠে একজন টপ ক্লাস প্লেয়ার নোংরামি করছে, অথচ সেটাকে সমর্থন করার লোকের অভাব নেই।
লোকটা হারতেও শেখেনি।
খ, চৈতন্যের সমসময়ে 'কাস্ট জিনিস টা খানিকটা চ্যালঞ্জড হচ্ছে' কি? আমার এ বিষয়ে সামান্য খটকা আছে।
প্রথমত, বিমানবিহারী মজুমদার ‘চৈতন্যচরিতের উপাদান’-এ চৈতন্য-আন্দোলনের প্রথম পর্বে হিন্দু ভক্তদের যে জাতিগত পরিসংখ্যান দিয়েছেন তাতে ব্রাহ্মণের সংখ্যা ২৩৯, কায়স্থ ২৯, বৈদ্য ৩৭ ও সুবর্ণবণিক ১। অর্থাৎ চৈতন্য-আন্দোলন প্রথম থেকেই ব্রাহ্মণদের কব্জায় ছিল।
দ্বিতীয়ত, চৈতন্যের জীবিতকালেই বৃন্দাবনে গড়ে উঠেছিল চৈতন্য-আন্দোলনের আরেকটি শক্তিশালী কেন্দ্র যার যুগ্ম অধিকর্তা ছিলেন কর্ণাট ব্রাহ্মণ সনাতন ও রূপ গোস্বামী। তাঁদেরই নেতৃত্বে ষড়গোস্বামী চৈতন্য প্রচারিত ধর্মের দার্শনিক ভিত্তি স্থাপন করেন এবং তার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিরাটাকার গ্রন্থাবলী রচনায় ব্যস্ত হন। চৈতন্যের প্রয়াণের পর গৌড়ীয় বৈষ্ণবরা নীলাচল থেকে উৎখাত হয়ে বৃন্দাবনে আশ্রয় নেন এবং প্রায় তখন থেকেই বৃন্দাবন গোস্বামীদের আধিপত্য শুরু হয়।
তৃতীয়ত, চৈতন্যের মৃত্যুর পরেই তাঁর অনুগামীরা বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়েন। এঁদের একত্র করতে ষোড়শ শতকের আটের দশকে রাজশাহীর খেতুরিতে নিত্যানন্দপত্নী জাহ্নবাদেবীর নেতৃত্বে এক বিশাল বৈষ্ণব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই খেতুরি উৎসবেই ‘ব্রাহ্মণ্যবাদী' গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম ঘোষিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। গৌড়ীয় বৈষ্ণববাদের রূপকার হলেন বৃন্দাবনের ষড়গোঁসাই, প্রধানত সনাতন গোস্বামী। এঁদের হাত ধরেই গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মে ব্রাহ্মণ্যবাদ আসর জমিয়ে বসে এবং বিষ্ণুপ্রিয়া-সহ চৈতন্যের মূর্তিকে কৃষ্ণের পাশে বসিয়ে অবতারূপে পুজো করা শুরু হয়। মজার কথা হল বিষ্ণুপ্রিয়া তখন বেঁচে থাকলেও তাঁকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, এমনকি জাহ্নবাদেবী নবদ্বীপে এসেও তাঁর সাথে দেখা করেননি।
চতুর্থত, চৈতন্য শঙ্খবণিক ও তন্তুবায় অধ্যুষিত অঞ্চলে হরিসংকীর্তনের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রথম প্রচার শুরু করলেও তাঁর জীবদ্দশাতেই তাঁর আন্দোলনের রাশ চলে গিয়েছিল উচ্চবিত্ত ও উচ্চবর্ণের মানুষদের হাতে। মল্লরাজা বীর হাম্বির, পঞ্চকোটের রাজা হরিনারায়ণ, প্রাদেশিক শাসন কর্তা রায় রামানন্দ, প্রভূত বিত্তশালী উদ্ধারণ দত্ত, জমিদারপুত্র কৃষ্ণদাস প্রমুখেরা চৈতন্য-আন্দোলনের প্রাথমিক স্তর থেকেই নেতৃত্বে আসীন ছিলেন। এছাড়াও মনে রাখতে হবে হিরণ্যদাস ছিলেন সপ্তগ্রামের রাজা, অদ্বৈত আচার্যের পূর্বপুরুষ রাজা গণেশের মন্ত্রণাদাতা ছিলেন, জীব গোস্বামীর পূর্বপুরুষ ছিলেন কর্ণাটকের রাজা। কাজেই বর্ণাশ্রমশাসিত হিন্দু সমাজে চৈতন্য যতই ‘অস্পৃশ্য-দুষ্ট যবন চণ্ডাল’কে স্থান দিতে চান না কেন এই আন্দোলনের আর্থ-সামাজিক চরিত্রের মৌল অসঙ্গতি কিন্তু প্রথম থেকেই ছিল। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা এই আন্দোলনের সংস্কারমূলক দিকটির প্রতি সহানুভতিশীল ছিলেন না এবং চৈতন্যর মৃত্যুর পরেই কালবিলম্ব না করে তাকে বিপথে পরিচালিত করতে (যার বীজ বপণ করা হয়েছিল বৃন্দাবনে রূপ-সনাতনের নেতৃত্বে) উদ্যোগী হয়েছিলেন।
কাজেই ওই যে আপনি লিখলেন, "উনবিংশ শতকের সোশাল রিফর্ম এর হাত দিয়ে আধুনিকতা ফর্ম তখন নিচ্ছে তখন সেটা সেটাকে রেকগনাইজ না করায় একটা এলিটিজম এ আবদ্ধ হচ্ছে" তো আমার মতে সেটা চৈতন্যের জীবদ্দশাতেই হয়েছে এবং তার মূল কারিগর রূপ ও সনাতন গোস্বামী।
আসলে আজকাল ভাটিয়ালিতে খুব সতর্ক থাকি প্রচল পথ পরিহার করার বিষয়ে। ফালতু খিল্লির খোরাক হয়ে কী লাভ? তবুও আপনি যদি এ ব্যাপারে কিছু লেখেন, তাহলে খুবই খুশি হব।
এলেবেলে জীবনে কোনও দিন চৈতন্যের আগে শ্রী ও পরে দেব বসিয়ে বলে না এবং লেখেও না। চৈতন্যের এই অবতারত্ব আরোপে সে যারপরনাই অসন্তুষ্ট। তবে হ্যাঁ, এই লোকটিকে নিয়ে একটি বড় আকারের লেখার প্রস্তুতি সে গোপনে নিচ্ছে। বইপত্তর জোগাড়ও করছে।