মা মারা যাওয়ার পর সর্বশেষ বাড়ি গিয়েছিলাম গত জানুয়ারি মাসে। রংপুর আমার গ্রামের বাড়ি। গিয়েছিলাম মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী তথা শ্রাদ্ধানুষ্ঠান উপলক্ষে। সে সময়ই হারাধনের সাথে আমার সর্বশেষ দেখা হয়। রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হারাধন রায়, গতকাল যাকে হত্যা করা হয়েছে।
হিন্দু আইনে মেয়েদের সমঅধিকার আন্দোলন নিয়ে তার সাথে আলাপ আলোচনা করেছিলাম।
হারাধন বয়সে আমার চেয়ে ছোট, কিন্তু নেতৃত্ব যোগ্যতায় আমার চেয়ে উপরে ছিল। পরপর তিনবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিল; মৃত্যুর আগে সেই ছিল রংপুর সিটি করপোরেশনের একমাত্র হিন্দু কাউন্সিলর। মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ছিল; ছিল আওয়ামী লীগ নেতাও।
তাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, সে বর্ণনা বিশ্ববাসীর জানা উচিত। তালেবানরা সফল হলে আমরা কয়জন বাঁচতে পারব জানি না।
জননেতা হারাধনকে রায়কে কোটা আন্দোলনকারীরা পিটিয়ে মেরেছে। রবীবার দুপুর ১টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে। রংপুর মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কালীবাড়ি মন্দিরের গেট থেকে আন্দোলনকারীরা তাঁকে ধরেছিল। এরপর পিটিয়ে পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর এবং তাঁর মরদেহের উপর নৃত্য করেছে। এরপর লাশের একটি পা তার দিয়ে বেঁধে নগরীর রাজপথ দিয়ে টেনে নিয়ে যায়। রংপুর সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের সামনে নেওয়ার পর সেখানে রাজপথের উপর ওভারব্রীজে মরদেহটি পা ওপর দিকে করে ঝুলিয়ে দেয়।
প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে ঘটনাগুলো ঘটছিল।
এক পর্যায়ে মৃতদেহটি বাঁধন ছিড়ে মাটিতে পড়ে যায়। তারপর আর উঠায়নি। প্রায় ৭ ঘন্টা মৃতদেহ সেখানেই রাজপথে পড়েছিল।
মরদেহ সৎকারের জন্য আত্মীয় স্বজন ও পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা নেতৃবৃন্দ আকুতি জানাতে থাকলে রাত ৭টার দিকে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে উদ্ধার করে লাশ মর্গে নিয়ে যায়। কাউন্সিলর হারাধনের মরদেহ এখনো মর্গেই পড়ে রয়েছে। শুধু হারাধনই না হারাধনের ভাগ্নেকেও একইসাথে উল্লাস করে পিটিয়ে মারা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে সিপিবির সভাপতি সাংবাদিক প্রদীপ ভৌমিককেও গতকাল একইভাবে সেখানকার প্রেসক্লাব থেকে বের করে হত্যা করেছে বাংলার তালেবানি বিপ্লবীরা। সিপিবি এই তালেবানদের সঙ্গে বর্তমানে বিপ্লবী কর্মে শরীক আছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে হিন্দুদের, আওয়ামী লীগের এবং কমিউনিস্ট নেতাদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছিল সেভাবেই এরা হত্যাযোগ্য শুরু করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রজনীতে যেভাবে পিলখানায় হত্যাযোগ্য চালানো হয়েছিল, আমাদের দেশি তালবানরা সেভাবেই গতকাল সিরাজগঞ্জের হেমায়েতপুর থানা জ্বালিয়ে দিয়ে ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশের লাশ পুকুরে ভাসছিল।
আজ যেভাবেই হোক ওরা গণভবনের দখল নিতে চায়। অনিশ্চিত অন্ধকারের পথে এগিয়েছে এক বিশাল প্রজন্ম।
-Journalist পুলক ঘটক