পলাশীর যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল। সিরাজ হেরে গেলেন, জিতল ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। বাংলার ধনসম্পদ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিল লুটেরারা। এদের অন্যতম নবকৃষ্ণ দেব। The Corporation That Changed the World: How the East India Company Shaped the Modern Multinational’ শীর্ষক বইয়ে লেখক নিক রবিনস লিখেছেন সিরাজের রাজত্বের পতনের পর বাংলার তোষাখানা লুট করতে ব্রিটিশদের সাহায্য করেন নবকৃষ্ণ। রাতারাতি “৮০০ কোটি টাকা মূল্যের সোনা, রুপো, এবং গয়নাগাঁটি” ভাগ করে নেন তাঁরা নিজেদের মধ্যে।
ইংরেজদের পক্ষ নেওয়ার জন্য পেলেন নবকৃষ্ণ পেলেন ‘রাজা বাহাদুর’ খেতাব; অতঃপর ১৭৬৬ সালে ‘মহারাজা বাহাদুর’। সবথেকে বড়ো কথা, গোটা সুতানুটি অঞ্চলের তালুকদার হয়ে গেলেন তিনি। সামান্য মুনশী থেকে বিশাল সাম্রাজ্য ও ধন-দৌলতের মালিক— এমনই চমকপ্রদ উত্থান রাজা নবকৃষ্ণ দেবের।
১৯৯৭-এর ৫ই অক্টোবর কলকাতার
আনন্দবাজার’ পত্রিকার রবিবাসরীয়তে ‘ক্লাইভের দুর্গোৎসব’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক নির্মল কর উল্লেখ করেছেন :
"নবকৃষ্ণ দেব ছিল ইংরেজদের চাকর। কোনো সময় ছিল ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রাইভেট টিউটর। উন্নতি করে হয়েছিল তালুকদার, চার হাজারি মনসবদার। পলাশীতে সিরাজের পতনে যারা সবচেয়ে বেশি উল্লসিত হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিল নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র আর কলকাতার নবকৃষ্ণ দেব।"
অঢেল টাকা এসেছে , এবার চাই খানিকটা সম্মানও।
ক্লাইভ নবকৃষ্ণকে বোঝালেন কলকাতায় একটি বিজয় উৎসব করার জন্য। ‘হিন্দু ভাবাবেগ’ রক্ষা পেয়েছে বলে কথা! নবকৃষ্ণ তখনই বাংলার বাসন্তীপূজোকে এগিয়ে এনে লাগিয়ে দিলেন "দুর্গাপূজা"। এর আগে শরৎকালে নবপত্রিকার পূজো প্রচলিত ছিল।
রাজা শশাঙ্কের রাজত্বকালে বাংলায় শিব পুজোর প্রচলন ছিল, দুর্গা পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায় না। পাল যুগে বাংলায় বৌদ্ধ প্রভাব বিস্তৃত হলে এখানে মূর্তি পুজো কমে যায়। পরে সেনযুগে আবার এর বাড়বাড়ন্ত হলে রণরঙ্গিনী নানা দেবী পূজিতা হন দস্যু তস্কর ও নিষ্ঠুর জমিদারদের দ্বারা।
দেখতে দেখতে গড়ে উঠলো একচালা প্রতিমা। প্রতিমার গা ভর্তি সোনার গয়না ঝলমল করে উঠলো। দুর্গার কেশদামে গুঁজে দেয়া হলো ২৬টি স্বর্ণনির্মিত স্বর্ণচাঁপা। নাকে ৩০টি নথ। মাথায় সোনার মুকুট। তারপর তোপধ্বনির পর সন্ধিপূজোর শুরু। দৈনিক নৈবেদ্য দেওয়া হল ২৩ মণ চালের।সাহেব মেমরা ত বটেই, ওয়ারেন হেস্টিংস পর্যন্ত হাতীতে চড়ে এসেছিলেন সেই পূজায়। ক্লাইভ দক্ষিণা দিয়েছিলেন ১০১ টাকা। সাহেবসুবোরা মৌজ করে দেখলেন বাঈজী নাচ, এছাড়াও পানভোজন ও মনোরঞ্জনের নানা উপচার তো ছিলই।
এই পুজোর বিপুল সাফল্য অনুপ্রেরণা জোগায় অন্যান্য ধনী ব্যবসায়ীদের, যাঁরা স্ব স্ব গৃহে ধুমধাম সহকারে চালু করে দেন দুর্গাপূজা। বাড়ির পুজোয় কোনও ইউরোপীয়ের, বিশেষ করে ব্রিটিশের উপস্থিতি, হয়ে ওঠে অর্থ, সামাজিক প্রতিষ্ঠা, এবং কোম্পানির সঙ্গে সান্নিধ্যের প্রতীক।
উইকিপিডিয়ার শেষ আপডেট অনুযায়ী, বিশ্বে বাঙালী মুসলমান হল ১৮৫ মিলিয়ন এবং বাঙালী হিন্দুর সংখ্যা হল ৮০ মিলিয়ন। তাহলে দুর্গা পূজা সর্বজনীন হয় কি ভাবে ? আর বাঙালীর সেরা উৎসবই বা হয় কিভাবে?
এছাড়া বাংলার মুলনিবাসী ও আদিবাসীরা দুর্গা পুজাকে তাদের পরাজয়ের প্রতীক বলে মনে করে। যে দুর্গাকে অসুর হত্যার কারণে হিন্দু সম্প্রদায় পূজা করে সেই অসুরকেই নিজেদের রাজা বলে বাংলার মূলনিবাসী ও আদিবাসীরা পূজা করে এবং দুর্গাপুজাকে তারা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখান করে। দুর্গাপুজোর দিনগুলোতে তারা বুক চাপড়ে কাঁদে।
এই হল দুর্গাপূজার ইতিহাস।
এই প্রোপাগান্ডা গত কয়েক বছর ধরে ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে!