কমল মুৎসুদ্দির ডায়রী
জৈব প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন একরাশ প্রশ্নমালা অধমের মস্তকে ক্রমাগত হুল ফুটাইতেছে, অজৈবতে আনুগত্যের বিবেকে জ্বলনের মাত্রা সহ্যের সীমা অতিক্রম করিবার পর হুঁশ ফিরিলো কয়েকটি কথা না লিখিলেই নয়। জানি বড়ো মানুষের ঢাক 'চড়াম চড়াম'শব্দে বাজিতে পছন্দ করে , তবে সংখ্যা লঘিষ্ঠ হইলেও বিপরীত দৃষ্টান্ত ও দৃষ্টিপটে ভাসিয়া ওঠে যেমন চলচ্চিত্রে কালীরাম বাবুর জয়ঢাকটি ফাঁসিয়া ছিল সেমত বাস্তবের গুড় বাতাসা বাবুর ঢাকটিও আপাতত স্তব্ধ, ভাবিয়া ছিলাম সুখ না হউক শান্তি অন্তত আসিবেন, ধারাবাহিক জিজ্ঞাসাবাদ ও গ্রেফতারীতে লজ্জিত হইয়া অধোমুখে বলিয়া ফেলিবেন 'আমি ব্যার্থ'
হায় ওরে পাষাণ হৃদয়, টলিল না, জলবৎতরলং সরলীকরণ করিলেন 'চারজনাকে ঢুকাইয়াছে আমি সুযোগ পাইলেই আটজনাকে ঢুকাইব'
প্রশ্ন জাগিল তৎক্ষণাৎ এ হেন উক্তি কি জননীর মুখে শোভা পায়? যাহার বিদ্যার ব্যাপ্তি স্বয়ং বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহিত তুলনীয়, তিনি কি বিদ্যাসাগর রচিত 'ভুবন ও তাহার মাসীর ' নীতি কাহিনী অধ্যায়ন করেন নাই ?
আশঙ্কা জাগে যাহারা তদন্তের স্বার্থে কারাবন্দী তাহাদিগের চেতনায় যদি কদাপি 'ভুবনের' বিবেক জাগিয়া ওঠে, জগজ্জননীর আপন সন্তান সন্ততি সম অনুসারী, অনুগামীদের শাসন করিবার কথা ,তাহা না করিয়াই তিনি অপরের দোষ দেখিতে ব্যাগ্র , শোষণের সুর বাজাইলেন কন্ঠে, প্রশ্ন জাগিল তবে কি ' কুপুত্র যদ্যপি হয়, কুমাতা কদাপি নয়?' এ প্রবাদ মিথ্যা?
ভাবিয়াও রোমাঞ্চ জাগে আদবানি বাবু স্বয়ং মঞ্চে আসিয়া রিলায়েন্স ভুলিয়া রিয়ালি রবি ঠাকুর উদ্ধৃত করিলেন, অবশেষে অটলবিহারী বাবুর উল্লেখ করিয়া তাহার প্রদত্ত আপনার 'অগ্নিকন্যা' নামটি স্মরণ করাইলেন, ২০হাজার কোটি অর্থ বিনিয়োগের বার্তা দিলেন , উল্লেখ্য আপনি বঙ্গের অধিষ্ঠাত্রী হইবার পর হইতে বঙ্গের চতুর্দিকে যে পরিমাণ অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটিয়াছে তাহাতে আপনার নাম মাহাত্ম্য লইয়া প্রশ্ন জাগিতেই পারেনা, এ বিষয়ে পরবর্তীতে আসিব, আপাতত বিনিয়োগের বার্তায় আসি, নিন্দুকে ক্রম্বান্বয়ে প্রশ্ন তুলিতেছে বিগত বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন গুলি হইতে কি বিনিয়োগ আসিয়াছে তাহার শ্বেত পত্র প্রকাশ করিতে হইবে,এই বাণিজ্য সম্মেলন কি শুধু মাত্র অশ্ব ডিম্ব প্রসব করে? ঢক্কা নিনাদ সার? ভোজন বিলাস হয় বটে, আর্থিক আশ্বাস ও জুটিয়া যায় তবে বিনোদন হইলেও প্রকৃত বিনিয়োগ নহে। জানা নাই, এ প্রশ্ন তাই উত্তর বিহীন থাকিয়া যায়।
অধমের চক্ষু দুটি আপাতত নিদ্রা দেবীর আনুকূল্যে জ্বলিতেছে নিদ্রামগ্ন হইবার পূর্বে জ্বলুনির জ্বলন্ত উদাহরণ স্বরূপ শেষ কটি কথা লিপিবদ্ধ করিয়া যাই, দেখিলাম পুলিশ বাবুদিগের সহিত আপনার এক একান্ত অগ্নি চক্ষু অনুগামীর কথোপকথন ,যে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আপনি সেই দপ্তরের আপনার অধস্তন আধিকারিকের কি দুর্দশা, পড়াশোনা করিয়া,তাগদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মী এক অতি সামান্য 'বোমারু' র (আপনি বলিয়া ছিলেন বাস টার্মিনাল দিয়া কি হবে,তুমি তো বোমা নিক্ষেপ শিল্পে পারদর্শী ) নিকট অপদস্থ হইতেছেন, আর তাহা লইয়া সংবাদ মাধ্যমের আলোচনার আসনে বসিয়া স্বনামধন্য বর্গফুট বাবু অগ্নি চক্ষু স্বদলীয়ের হয়ে গজল গাহিতেছেন, আবার অপরদিকেই ক্যামেরা ঘুরিলেই দেখা যায় গ্রাম জ্বলিতেছে, নিস্ক্রিয় পুলিশ বাবু, হঠাৎই জ্বলিয়া উঠিলেন পুলিশ বাবু আক্রান্ত অসহায় গ্রামবাসীদিগের সহিত সাক্ষাৎ করিতে চাওয়া অধ্যাপককে গ্রামে প্রবেশ করিতে বাধা দিলেন , অবশ্য অধ্যাপক আপনাদের চক্ষুতে ভয়ানক, পাঠকের নিশ্চিত স্মরণে আছে 'যাহা বিজেপি তাহা তৃণমূল ' এই বাণীর প্রণেতা মুকুল চন্দ্র কে ভ্যাণিশ করিতে চাহিয়া ছিলেন,অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এ হেন অভিযোগ আনিয়া অধ্যাপককে যাৎপরণাই ব্যাতিব্যাস্ত করাইয়াছিলেন আপনার পুলিশ বাবুদিগের দ্বারা , নিরীহ অধ্যাপককে অপমান করিতে বাধে নাই অথচ আইন শৃঙ্খলা কে অবজ্ঞা করা মস্তান দেখিলে আপনার পুলিশ বাবুদিগের নত মস্তক হইতে হয়, ইহা কি কুৎসা ? না রটনা? সংবাদ মাধ্যম দেখাইতেছে প্রাক্তন বিচারপতির সহিত ফোনালাপ করিতে চাহিতেছেন না জয়নগর থানার দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত আধিকারিক, নিন্দুকে বলে বলে অগ্নিকন্যার অগ্নিবানে বিদ্ধ আপামর প্রশাসন, তাই শোষণ মিলিবে কিন্তু শাসন ফিরিবে কি উপায়ে। ধর্মীয় অনুশাসন নহে, জাত বিদ্বেষ নহে, আদবানি বাবুর ন্যায় ভাঙ্গা ভাষায় নহে, ভালোবাসার সহিত আবার কবে একসাথে জীবনের জয়গান গাহিতে পারিব ? কানে ভাসিয়া আসিতেছে রক্ত মাংসের ঠাকুরের বানী
"এরা চাহে না তোমারে চাহে না যে, আপন মায়েরে নাহি জানে।
এরা তোমায় কিছু দেবে না, দেবে না— মিথ্যা কহে শুধু কত কী ভাণে।।"
কমল মুৎসুদ্দি