এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  ভ্রমণ   যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে

  • মঙ্গোলিয়া সফর

    যোষিতা লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৩ মে ২০২৩ | ২৬২২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • মঙ্গোলিয়া সফরের খুঁটিনাটি লিখছি এখানে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • যোষিতা | ০৩ মে ২০২৩ ২১:১০740064
  • চেঁচামিচি করে লাভ নেই, মরক্কো ও রোডেশিয়ার গল্প শেষ হয় নি স্বীকার করছি নতমস্তকে। ওগুলো লিখব। এখন মুড নেই।
    এখন নতুন বেড়ানোর গল্প লিখতে চাচ্ছি। এবারের গন্তব্য মঙ্গোলিয়া। প্রথমে ইচ্ছে ছিল বৈকাল হ্রদে যাবার। কিন্তু স্যাংশনের ক্যালোর ব্যালোরে রাশিয়ায় যাওয়া অনেক ঝামেলা। তার ওপর কমাস পরে অ্যামেরিকা যাবার প্ল্যান। এখন পাসপোর্টে রাশিয়ার স্ট্যাম্প দেখলে অ্যামেরিকার ইমিগ্রেশন কাকু/কাকিমা যদি রেগে মেগে ঢুকতে না দেয়, তখন তো গুচ্ছের টাকা গচ্চা যাবে! তাই আপাতত রাশিয়া স্থগিত, পরে যাবো।
    কিন্তু মন বেড়ুবেড়ু করতে চাচ্ছে, কোথায় যাবো?
    বৈকালের অল্প দক্ষিণেই মঙ্গোলিয়া। ব্যাস। 
    রাত বারোটা নাগাদ ঠিক করে ফেললাম মঙ্গোলিয়া ঘুরতে যাবার। 
    রাজধানী উলানবাতর দুনিয়ার শীতলতম রাজধানীশহর। ভোর হতেই টিকিট কেটে ফেলেছি, তারপরে অফিসে ছুটির দরখাস্ত করলাম। মোট দুসপ্তাহের ছুটি। একটু ঘুরপথে যেতে হবে, রাশিয়ার ওপর দিয়ে ইয়োরোপের সিংহভাগ দেশেরই ফ্লাইট উড়ছে না। ইচ্ছে থাকলে ঘুরপথে সমস্যা হয় না।
    আমার ইচ্ছে ছিল দুটো জায়গায় বিশেষ করে যাবার। গোবি এবং গঙ্গা।
    উলানবাতর অবধি নাহয় পৌঁছনো গেল, কিন্তু তারপর?
    এবারে আমি একটু পরিকল্পনা করে বেরোতে চাই। বরাবর হুটহাট করে বেরিয়ে পড়ি, কিন্তু এবার সেটা করছি না। কারনটা পরে লিখছি।
    টিকিট কেনা হলো, উলানবাতরে নদিন নরাতের হোটেলও বুক করলাম। এবার ম্যাপ খুলে বসলাম ঠাণ্ডা মাথায়।
    ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ঠাণ্ডা মাথা গরম হয়ে গেছে।
    আগে ভালো করে স্টাডি করে নিয়ে টিকিট কাটা উচিত ছিল বুঝলাম। আমার স্ট্রিটস্মার্ট অ্যাটিটিউড এখানে ফেল করেছে।
    তবে দমবার লোক আমি নই। বুঝেছি কেন খুব বেশি টুরিস্ট ওদেশে যায় না। 
    সব ধীরে ধীরে লিখছি। হয়ত মঙ্গোলিয়া যেতে আগ্রহীদের কাজে দিতে পারে।
     
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৩ মে ২০২৩ ২১:৩৬740065
  • বাঃ! বেড়ানোর গল্প খুব পছন্দের আমার। আসতে থাকুক, অপেক্ষায় রইলাম।
  • যোষিতা | ০৩ মে ২০২৩ ২২:০৭740066
  • হিসেবমত বছরে তিরিশটা ওয়ার্কিং ডে আমার প্রাপ্য ছুটির আণ্ডারে পড়ে। তা যে রেটে ছুটি নিই, ওতে আমার জাস্ট পোষায় না, কিছু বেশিই নিতে হয়, হিসেব করি না।
    এবছরে রোডেশিয়া ঘুরতেই প্রায় অর্ধেক শেষ, তারপরে নিলাম আরও ষোলো দিন মত। বেড়াতে যাবার আগে কটা দিন বিশ্রামের জন্য, ফিরে আসবার পরেও তিনদিন পথশ্রমের ক্লান্তি দূর করতে বিশ্রাম নেবো।
    নইলে হুট করে অফিসে জয়েন করলে কাজে বিঘ্ন ঘটবে। জেটল্যাগ থাকে, সেটাও ঘটনা। হাজারটা ঘরের কাজ থাকে, গুচ্ছের চিঠিপত্র জমা হয়ে থাকে চিঠির বাক্সে, সেসব মন দিয়ে পড়ে দেখতে হয়, ফের পুরোনো রেজিমে ফিরে আসতে হয়, এইসমস্ত আর কি।
     
    কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে যাচ্ছি, যাইহোক, একটু পুরোনো কথা আসবে এখন।
    ছাত্রাবস্থায় ফার্স্ট ইয়ারে আমার একজন মঙ্গোলিয়ান রুমমেট ছিল, তার নাম তুমে। তুমের প্রসঙ্গ আমার "দশকর্ম ভাণ্ডার" বইয়ে "ময়ূর ময়ূরী" অধ্যায়ে লিখেছিলাম। তুমে আমার চেয়ে দুবছর সিনিয়র ছিল, ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাবস্টেশন স্পেশালিটি বিভাগে পড়ত তুমে।
    সেটা ছিল গত শতাব্দীর আশির দশকের দ্বিতীয় ভাগ। আমাদের মূল্যবোধ আজকের মত ছিল না। মঙ্গোলিয়ানদের নিয়ে এমন সব রসিকতা করা হতো, যা আজকের দিনে অশ্লীল, লেখার অযোগ্য।
    অথচ তখন কত সহজে, কত কম খরচেই মঙ্গোলিয়া বেড়িয়ে আসার সুযোগ ছিল আমার।
    মূর্খ ছিলাম, যাই নি। তখন লোভ ছিল পশ্চিম ইয়োরোপের হাজার আলোর ঝলকানিওলা দেশগুলো দেখবার।
    এখন মনে করলে আক্ষেপ হয়। হেলায় হারিয়েছি দুর্লভ সব সুযোগ।
    সেজন্যই "মোংরু" গল্পে আমার মঙ্গোলিয়ার মানস সফর হয়েছিল মোংরুর সঙ্গে।
    এবার বর্তমানে ফিরে আসা যাক।
     
  • যোষিতা | ০৪ মে ২০২৩ ০০:৫৮740067
  • আমার এক প্রাক্তন সহকর্মী মিতা (নাম পরিবর্তিত) কে বললাম যে মঙ্গোলিয়া যাচ্ছি গোবি দেখতে।
    মিতা গোবিতে খুব একটা গুরুত্ব দিল না, কিন্তু চেঙ্গিজ খাঁ র সমাধিটা দেখতে সাজেস্ট করল।
    আমি উল্টে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, চেঙ্গিজ খাঁর রিলিজিয়ন কী ছিল বল?
    ও স্মার্টলি বলল, খাঁ যখন, তখন মুসলিমই হবে।
    চেঙ্গিজ খাঁর টাইমে অত পাহাড় মরুভূমি ডিঙিয়ে ইসলাম ধর্ম মঙ্গোলদের টাচ করতে পারেনি সেটা বোঝাতে বোঝাতে আধঘন্টার ডেটা ওর মোবাইলেই খরচ হলো। ব্যাড লাক।
    আজকের দিনেই মঙ্গোলিয়া যাওয়া শুধু টাফই নয়, ভেরি টাফ। স্বয়ং মার্কো পোলো... যাকগে, কথায় কথা বাড়ে। ঘ্যাম নিতে চাইলে নিতে পারতাম, তবে সে লোভ সামলে নিলাম।
    তখন অন্য প্রসঙ্গ এলো, ওদের কালচার ফুড হ্যাবিট ইত্যাদি নিয়ে মিতা প্রশ্ন ও সাজেশানে আমায় কাঁপিয়ে দিল হোয়াটস্যাপ কলের ভেতরেই।
    গ্র্যাজুয়েশনের সময় বা হায়ার সেকেন্ডারিতে ও জিওগ্রাফ ছিল, হিস্ট্রি ছিল কিনা জানি না। খুব বেশিদিন আগের ব্যাপারও নয়, মানে আমি যখন তুমের রুমমেট, সে সময়ে ও হায়ার সেকেন্ডারির জিওগ্রাফি মুখস্থ করছে। 
    মনে হয় সিলেবাসেই গ্যাঁড়াকল, সেই "যখন হবো দাদার মতো বড়ো, তখন নিয়ে দাদার খাঁচাখানা, ভালোভালো পুষব পাখির ছানা" টাইপ ব্যাপার।
    ওর ধারণা নাকি সিলেবাসের পাঠ্য তা জানি না, যা বলল, তাতে আমার অবাক হবার চেয়েও রাগটা হলো বেশি।
    যা বুঝলাম, মিতার হিসেব মতো, মঙ্গোলিয়া সেই চেঙ্গিজ খাঁ র যুগেই পড়ে আছে, আর আমরা রকেটের স্পীডে এগিয়ে গেছি। আফ্রিকার অনেক দেশের ব্যাপারেও এরকম মানসিকতা দেখেছি বহুজনের মধ্যে।
    আমি একটা বোমা মারার লোভ সামলাতে পারিনি।
    ইন্টারনেট থেকে খুঁজে পেতে উলানবাতরের এক আধটা ফোটে পাঠিয়ে দিলাম।
    কোলকাতার প্রায় এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা যে দেশের, সেটার সম্পর্কে হালকা করে ধারণাটা অন্ততঃ হোক।
    গল্প তো বলব অনেক, দেখব আর বলব, তবে আমার উদ্দেশ্য চেঙ্গিজ খাঁ র কল্পিত সমাধি নয়, আমি দেখব আজকের দেশটাকে, তাদের মানুষের সঙ্গে শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতি নিয়ে মিশব।
    রেসপেক্ট। এটা সবসময় দরকার।
    যে দেশে যাবো, তাদের সঙ্গে মিশব সম্মান দিয়ে। চিড়িয়াখানায় টিকিট কেটে খাঁচার পশু দেখতে যাচ্ছি না।
  • যোষিতা | ০৪ মে ২০২৩ ০১:২৭740068
  • এই কবিতাটা ক্লাস ফাইভের কিশলয়ে ছিল।
    এখন টুকে দিলাম ইন্টারনেট থেকে।
    এই কবিতাটা আজও মনকে চাঙ্গা করে দেয়। যতবার মনে করি, ততবার দেশ দেখতে বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে।
    কবির নাম আশা করি বলে দিতে হবে না।
     
    থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে, –
    কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।
    দেশ হতে দেশ দেশান্তরে
    ছুটছে তারা কেমন করে,
    কিসের নেশায় কেমন করে মরছে যে বীর লাখে লাখে,
    কিসের আশায় করছে তারা বরণ মরন-যন্ত্রণাকে।
    কেমন করে বীর ডুবুরি সিন্ধু সেঁচে মুক্তা আনে,
    কেমন করে দুঃসাহসী চলছে উড়ে স্বর্গপানে।
    জাপটে ধরে ঢেউয়ের ঝুঁটি
    যুদ্ধ-জাহাজ চলছে ছুটি,
    কেমন করে আনছে মানিক বোঝাই করে সিন্ধু-যানে,
    কেমন জোরে টানলে সাগর উথলে ওঠে জোয়ার-বানে।
    কেমন করে মথলে পাথার লক্ষ্মী ওঠেন পাতাল ফুঁড়ে,
    কিসের আভিযানে মানুষ চলছে হিমালয়ের চুড়ে।
    তুহিন মেরু পার হয়ে যায়
    সন্ধানীরা কিসের আশায়;
    হাউই চড়ে চায় যেতে কে চন্দ্রলোকের অচিন পুরে;
    শুনবো আমি, ইঙ্গিত কোন ‘মঙ্গল’ হতে আসছে উড়ে।।
    কোন বেদনায় টিকি কেটে চণ্ডু-খোর এ চীনের জাতি
    এমন করে উদয়-বেলায় মরণ-খেলায় উঠল মাতি।
    আয়র্লণ্ড আজ কেমন করে
    স্বাধীন হতে চলছে ওরে;
    তুরস্ক ভাই কেমন করে কাটল শিকল রাতারাতি!
    কেমন করে মাঝ-গগনে নিবল গ্রীসের সূর্য-বাতি।।
    রইব না কো বদ্ধ খাঁচায়, দেখব এ-সব ভুবন ঘুরে-
    আকাশ-বাতাস চন্দ্র-তারায় সাগর-জলে পাহাড়-চুঁড়ে।
    আমার সীমার বাঁধন টুটে
    দশ দিকেতে পড়ব লুটে;
    পাতাল ফেড়ে নামব নীচে, উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে;
    বিশ্ব- জগৎ দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।।
  • যোষিতা | ০৪ মে ২০২৩ ০২:২৭740069
  • ম্যাপ দেখে তো দেশ সম্পর্কে ধারণা করা যায় না, দূরত্বও বড্ড আপেক্ষিক। 
    উলানবাতরের সিটি সেন্টারে মোটামুটি ভালোর দিকেই হোটেল বুক করলাম। সম্বল তো বুকিং ডট কম, টাকা পয়সা মার যাবার চান্স নেই বলেই জানি। পৌঁছনোর দুদিন আগে পর্যন্ত ফ্রি ক্যানসেলেশনের সুবিধে আছে।
    আমি জানি, মঙ্গোলিয়া পঁয়ত্রিশ বছর আগের সেই সমাজতান্ত্রিক দেশটা এখন নয়। রুশ আধিপত্যে রুশ ভাষার প্রচলন যেমন থাকবেই মঙ্গোল ভাষার পাশাপাশি, তেমনি এরা আজকাল নির্ঘাৎ ইংরিজি শিখে ফেলেছে।  তিন দশমিক তিন মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশটায় সিংহভাগ মানুষই থাকে রাজধানীতে। মঙ্গোল ভাষার হরফ আজও সিরিলিক।
    ভাষার সমস্যা হবে না মোটেই। 
    ভুল যেটা করেছিলাম সেটা মারাত্মক। ভেবেছিলাম উলানবাতরকে কেন্দ্র করে নানান জায়গায় দিনের বেলা যাব এবং রাতে হোটেলে ফিরে আসব। 
    দুশো কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়াই যায়। বেশ ভোরে বের হলে আড়াইশো যাব, আড়াইশো ফিরব। গুগল তো সেরকমই বলছে। দূরত্বের হিসেব করে একশো কিমি প্রতিঘন্টা হিসেবে কি আরেকটু কম বা বেশি স্পীড দেখিয়ে বলে দিচ্ছে অমুক জায়গা যেতে এত সময় লাগবে। কিন্তু যাব কেমন করে?
    কিছু গাইডেড ট্যুরের অফার দেখলাম, এক দেড় দিনের ট্যুর, হয় উলানবাতরে ঘিরে, নয় সাতআট কি নদশ দিনের ট্রিপ কোনও একটা নির্দিষ্ট জায়গায়। সঙ্গে একবার করে চেঙ্গিজ খাঁর স্মৃতি টিতি দেখাবে। সবই গ্রুপ ট্যুর। কোনওটাই জুলাইয়ের আগে নয়। সেপ্টেম্বরেই বেশি, তবে এখনও পর্যন্ত লোক হয় নি তেমন। লোক কম হলে দাম বেশি দিতে হবে। মে মাসে কিচ্ছুটি নেই। থাকলেও যেতাম না। দলে ভিড়ে গেলে কী হাল হয় বুড়োবুড়ির তা মরক্কোর মরুভূমিতে জানা গেছে।
    চিন্তায় চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিনিসটা দাম্পত্যকলহের রূপ নিল। একটা রাত্রি প্রায় নিদ্রাহীন কাটল, পরদিন অফিস কামাই হয়ে গেল।
    নিজের ট্রিপ নিজেই তৈরি করতে হবে। টারগেট করতে হবে দুতিনটে জায়গা। গোবি মরুভূমি, সবচেয়ে বড়ো লেকটা, যেটা সাইবেরিয়ায়, এবং এবং এবং .. ইয়েস, গঙ্গা!
  • যোষিতা | ০৪ মে ২০২৩ ০৩:৪৮740070
  • শিবের গীত একটু বড়ো হচ্ছে, ধান ভাঙার টাইমে এই গীত কাজে দেবে, সেজন্যই বলা। 
    ম্যাপ দেখে বুঝলাম ইনারমঙ্গোলিয়া নামক জায়গাটা চীনের দখলে, জানা গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার বছর দুয়েকের মধ্যেই ঐ বিস্তীর্ণ মরু চীন গাপ করে ফেলেছে। ইনার মঙ্গোলিয়ার প্রায় বর্ডারে গঙ্গা। দারিগঙ্গা প্রদেশের অন্তর্গত এই সুবিশাল হ্রদ। গঙ্গা লেক দেখবার জন্য প্রাঞ আঁকুপাকু করে উঠল, দুর্গম গোবির ভেতর দিয়ে রাস্তা, রাস্তা ভালো হলে টানা এগারো ঘন্টার ড্রাইভ উলানবাতর থেকে। মধ্যে থেমে থেমে কোথাও রাত্রিযাপন করে তবে যাওয়া যেতে পারে। ঐখানে পৌঁছেও থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। চারটে দিন আসতে যেতে কেটে যাবে। অচেনা দেশের দুর্গম মরুভূমির পথে ভাষা না জানা একজনকে দিয়ে ড্রাইভ করানো নিরাপদ নয়। রেল লাইন আছে কি ওদিকে?
    মস্ত একটা রেললাইন তো রয়েছে, যেটা ট্রান্সসাইবেরিয়ান রেলওয়ের কর্ড লাইন।
    মূল লাইনটা মস্কো থেকে ভ্লাদিভাস্তোক যায়। অন্যটা বৈকালের কাছে এসে ঘুরে যাচ্ছে, বলা ভালো ইরকুৎস্কের কাছে। মঙ্গোলিয়াকে ফুঁড়ে দিচ্ছে রাশিয়ার নাউষ্কি বর্ডারে। তারপরেই মঙ্গোলিয়ার উত্তরে সুখবাতর সীমান্ত স্টেশন। এই রেলপথ সোজা চলে যাচ্ছে দক্ষিণে চীন সীমান্ত ভেদ করে রাজধানী বেজিং অবধি। 
    সপ্তাহে প্রতিদিন চলে না। উলানবাতরের মধ্যে দিয়ে যায় বটে, তবে দারিগঙ্গা প্রভিন্সে পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক সময় লাগে। পথে অনেক স্টেশনে থামে তো বটেই, তার ওপর ট্রেনের গতিবেগ শীতের সময়ের গতিবেগ অনুসারে মেপে রাখা হয়েছে।
    "শীতের সময়ের গতিবেগ" ব্যাপারটা কী?
    এটা ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলপথ বা বৈকাল-আমুর রেলপথের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। শীতের সময়ে ট্রেন লাইনে স্তুপীকৃত হয় তুষার। জমাট তুষার। হয়ত আধমানুষ কি এক বা দেড়মানুষ প্রমাণ উচ্চতার তুষার। তখন ড্রাইভার কেমন করে ট্রেন চালাবে? তাই ট্রেনের সামনে তুষার সরানোর যন্ত্র তুষার সরাতে সরাতে লাইন পরিষ্কার করতে করতে যায়। ফলত গতিবেগ কমবেই। তাছাড়া সাইবেরিয়ায় ঘোলাটে তুষারঝড়ে কিচ্ছু দেখা যায় না। ট্রেনের স্পীড তাই কম। এই একই যুক্তিতে এই কর্ড লাইনের ট্রেনেও গতি কম, যাত্রীও বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক। চীন থেকে রাশিয়া, রাশিয়া থেকে চীনে যাবার শর্টকাট। মালবাহী ট্রেনও চলে। লোকোমেটিভ দ্বিতীয় সস্তার যান, প্রথম হচ্ছে জলপথ। ল্যান্ডলকড মঙ্গোলিয়ায় জলপথ সোনার পাথরবাটি। এই রেলপথ তিনটে দেশের বানিজ্যের জন্য সুলভ পথ। আমাদের মত সখের খামখেয়ালি টুরিস্টদের জন্য ইহা প্রযোজ্য নহে। 
    তাহলে দারিগঙ্গা কেমনে যাব? উলারবাতর থেকে কেনও ডোমেস্টিক ফ্লাইট কি যাবে কাছাকাছি এয়ারপোর্টে? প্রচুর ডোমেস্টিক এয়ারপোর্ট রয়েছে আইআটা কোডও দেখতে পাচ্ছি তাদের।
    কিন্তু ফ্লাইট দেখা যাচ্ছে না। পরপর দশ পনের দিন খোঁজ করে একটাও ফ্লাইটের শিডিউল পেলাম না। কেসটা কী?
    হঠাৎ উলানবাতর থেকে কোন একটা শহরে ফ্লাইট দেখতে পেলাম, প্রায় বিশ পঁচিশ হাজার ডলার টিকিটের দাম! পাগোল হয়ে গেলাম নাকি? ঠিক দেখছি?
    ফোর আই প্রিন্সিপলে বাবুকে দিয়ে চেক করালাম — ঠিকই দাম আছে। প্রাইভেট ফ্লাইট। মানে এবিপি আনন্দের ভাষায় "প্লেন চার্টার করেছ নাকি!"
     
    এবার খোঁজ করা হলো ড্রাইভার সহ গাড়ি। সেই বুকিং ডট কম ই অগতির গতি। দেড়শো থেকে দুশো ডলার গাড়ির ভাড়া অ্যাভারেজ। ছোট গাড়ি। ল্যান্ড ক্রুইজার হলে আট্টু বেশি। তার ওপর পেট্রলের খরচ আছে এবং যেখানে যেখানে যাব সেখানে সেখানে ড্রাইভারের যাবতীয় খরচ যেমন হোটেল, তিনবেলার খাওয়া দাওয়া সবই বহন করতে হবে। 
    যাক, একটা উপায় তো অন্তত মিলেছে। নদিনের ট্রিপে তাহলে কত খরচ হবে মোট?
    হিসেব করতে বসলাম। গাড়িভাড়া আটেরোশো প্লাস পেট্রল কম করে চার থেকে সাড়ে চারশো, চারহাজার কিলোমিটার মিনিমাম ঘোরা হবে যেহেতু, হোটেল নয় ইন্টু দুটো ঘর ইন্টু কম করে পঁচাত্তর, এবং খাবারের খরচ আরও ষোলোশো, তিনটে মিল ইন্টু তিনজন ইন্টু নয় দিন ইন্টু কুড়ি ডলার অন অ্যাভারেজ। কম করেও সওয়া পাঁচহাজার ডলার। 
    বিভিন্ন জায়গায় ঢুকবার এন্ট্রি ফি ধরিনি। 
    মাথা ঝিম ঝিম করছিল। ট্রিপ ক্যানসেল করে দেব? ফ্লাইটের টাকা নন রিফান্ডেবল, যা গেছে যাক, নাকি দশটা দিন উলানবাতরের হোটেল এবং আশে পাশে ঘুরে ফিরে আসবো?
    প্রচণ্ড টানা পোড়েনের পর ভাবলাম, নাহ, যাবো। যাবোই। তবে হোটেলগুলো বুক করতে হবে। এবং উলানবাতরের এই টানা হেটেলের বুকিংটা ক্যানসেল করতে হবে। 
    গাড়ি যখন তখন পাওয়া যাবে। কিন্তু ট্র্যাভেল আইটেনারিটা আগে তৈরি করে নিই। জীবন তো একটাই। যাবই সালা!
     
  • যোষিতা | ০৪ মে ২০২৩ ১২:১২740076
  • মনের মধ্যে তবু খচখচানি রয়েই গেল। মনকে প্রবোধ দিচ্ছি কেবলই এই বলে, যে মরে যাবার পর ভগবানের মুখোমুখি হলে সে যখন জিজ্ঞেস করবে যে তুই গোটা জীবনে সাহস করে একটিবার মঙ্গোলিয়া ঘুরে আসতে পারলি না? তুই এটা কী করলি?
    তখন কী জবাব দেব আমি? 
    ঘরের লোককে বলছি, বিদেশে বিভুঁইয়ে বাঙালীদের কতো হাই মেইনটেনান্স ওয়াইফ থাকে, পরবর্তী বং মীটের জন্য তারা একেকজন অঞ্জলি জুয়েলার্স কিংবা ধনতড়াসের বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠার তাগিদে কতো খরচ করে, সব্যসাচীর বুটিক থেকে ডিজাইনার ব্লাউজ বা কুর্তি বা আরও যা যা পোশাক আছে সেসবের জন্য খরচ করতে পেছপা হয় না, শাড়ীতে প্রিয়গোপাল বিষয়ী কি বীরেন বসাকের ঐতিহ্য তারাই বয়ে নিয়ে চলে, খরচ করতে ডরায় না, সেসব তো করছি না,  শুধু আমরা দুজনে একটা রোমাঞ্চকর ভ্রমণে যাব, আবিষ্কার করব অজানা মরুভূমি, ছুঁয়ে নেব অদেখা লেকের জল। কটা টাকার জন্য পিছিয়ে যাবার মানেই হয় না।
    সাপোর্ট পেলাম, মেন্টাল সাপোর্ট।
    হোটেল খুঁজছি সম্ভাব্য স্টপওভারের জায়গাগুলোতে। বুকিং ডট কম আমাকে ক্রমাগত নিরাশ হতাশ হাহুতাশ স্টেজে পৌঁছে দিল। সার্চ দিলে কিসুই আসে না। একটু সরে সরে অন্য স্টপওভার খুঁজি, তাও কিস্যুটি নাই। আসলে কম জনসংখ্যাওয়ালা দেশের এটাই  সমস্যা, এবং ম্যাক্সিমাম লোকজন তো উলানবাতরেই থাকে, দূরের হোটেলগুলো বুকিং ডট কমের আওতায় আসতে পারে নি। 
    তাহলে উপায়?
    স্থানীয় কারো সঙ্গে যোগাযোগ যদি করা যেত, ফোনে কিংবা ইমেইলে। উলানবাতরের হোটেলের জন্য যে ইমেইল ঠিকানা ছিল সেটায় বুকিং ডট কমের প্রভাব রয়েছে দেখলাম, ফোন নম্বর একটা রয়েছে, তবে সে নম্বরের সঙ্গে হোটাসঅ্যাপ বা টেলিগ্রাম কিছুই নেই। সরাসরি কল করলে কেউ ধরছে না, কী গেরো!
    আমার সেই পুরোনো রুমমেট তুমেকে কি কনট্যাক্ট করা যায়? ফেসবুকে খুঁজব? 
    ফেসবুকে তুমের ছড়াছড়ি, সবাই তারা নবীনা, আমার তুমে তো বুড়ি হয়ে গেছে। আরেকজন ছিল বটে, একজন ভারতীয়ের বান্ধবী, পরে বিয়েও করেছিল, কিন্তু তারা কো কিয়েভে সেটল করে গেছল, যুদ্ধ শুরু হতেই মনিপুরে চলে গেছে, তাকে ফেসবুকে নক করা যায় বটে, কিন্তু তার আগে নিজেই আরেকটু চেষ্টা করি। লোকাল কোনও ট্যুর অপারেটর যদি পাই, বা লোকাল কোনও গ্যারেজ, যারা গাড়ি ভাড়া দেয়। ইংরিজি আর রাশিয়ান দুটো ভাষাতেই সার্চ করা হোক, ধৈর্য চাই, আমি মাথা ঠাণ্ডা করতে ব্রেক নিলাম কিছুক্ষণ।
     
     
  • যোষিতা | ০৪ মে ২০২৩ ১৩:৪৫740077
  • ইউরেকা!
    পেয়েছি। আছে, আছে... গোটা চারেক লোকাল প্রোভাইডার আছে, তাদের সঙ্গে সাইটেই মেসেজ দেওয়া যায়, তারা সময় করে ইমেইলে উত্তর দেবে। ঝপাঝপ মেসেজ করতে লাগলাম ইংরিজি এবং রাশিয়ানে, কোন ভাষাটা লেগে যায় তা বুঝতে পারছি না।
    মেসেজ করবার পর, আরেকটু খুঁটিয়ে দেখি গোটা দুয়েকের হোয়াটস্যাপ নম্বর, ফোন এবং ফ্যাক্স নম্বরও আছে।
    আর আমায় পায় কে?
    ছঘন্টার সময়ের তফাৎ আমাদের মধ্যে, আমাদের রাত মানে তাদের ভোররাত, ঝপাঝপ হোয়াটস্যাপে মেসেজ করলাম, তোমাদের থেকে গাড়ি ভাড়া করব, আমরা দুজন লোক, সবচেয়ে ছোট্ট গাড়িটা চাই ড্রাইভারসহ, নদিনের জন্য কত পড়বে কোটেশন পাঠাও।
    ঘন্টা চারেক পরে কোটেশন এলো না, তবে উত্তর এলো, কোথায় কোথায় যাব, উলানবাতরের বাইরে যাব কি না। উত্তর পেয়েই সোজা কল করে বসলাম। ফোনের ওপারে মিষ্টি মতো মেয়ের গলা।
    পরে বুঝেছি ইনিই কোম্পানীর তরুণী মালকিন। নাম তার বোগি।
    বোগি যেমন ভাল শ্রোতা, তেমনি বুদ্ধিমতি। সে বলল তোমরা যেসব জায়গায় যেতে চাচ্ছো তার একটায় যেতেই লোকের দশদিন কাবার হয়ে যায়, প্রথমত দুর্ম, ব্রেক জার্নি তো লাগবেই, দ্বিতীয়ত পুঁচকে গাড়ি নিয়ে যেতেই পারবে না, রেঞ্জরোভার বা ল্যান্ডক্রুইজার ছাড়া অসম্ভব। তবে অ্যাভিস বা বুকিংডটকম তো দালাল কোম্পানী, ওরা অনেক প্রফিট রাখে।
    — সেইজন্যই তো তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম।
     
    প্রায় এক অর্ধেক দামে বোগি আমাদের গাড়ির ব্যবস্থা করে দিল। বলল, এখন অফ সীজন, ডিসকাউন্ট রেটে দিচ্ছি, তবে ড্রাইভাবের জন্য হোটেল খাবার দাবার পেট্রলের খরচ ইত্যাদি তোমাদের দায়িত্ব।
    — বোগি, হোটেল তো বুক করতেই পারছি না অনলাইনে?
    — কোথায় কোথায় যাবে বলো?
    — খুবসগুল লেক, গোবি মরুভূমি এবং গঙ্গা লেক।
    — গঙ্গা লেক কেন?
    বোগির এই প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য আমাকে একটু সময় নিতে হলো।
     
     
  • যোষিতা | ০৪ মে ২০২৩ ১৪:৫৮740078
  • কথায় আছে সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার। গঙ্গোত্রী দেখিনি, গঙ্গাসাগর দেখিনি, গঙ্গানদী একবারই দেখেছি সেই ফারাক্কায় গভীর রাতে ট্রেনের জানলা দিয়ে। এখন গঙ্গা লেক দেখবার একটা অদম্য ইচ্ছে ছিল, যেটাকে খানিকটা তীর্থ আর খানিকটা গ্লোবট্রটারীয় কৌতুহলের কম্বিনেশন বলা যেতে পারে।
    কিন্তু এসব আমি ঐ মেয়েকে কেমনে বোঝাবো?
    যাহোক তাহোক করে জোড়াতালি দিয়ে একটা যুক্তি দিলাম। বোগি শুনে নিয়ে বলল — গঙ্গা লেকে যেও না।
    — কেন একথা বলছ?
    — যাত্রাপথ দুর্গম, ম্যাপ দেখে বুঝতে পারবে না। যেতেই দুতিন দিন লেগে যাবে, আমি ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলেছি, সে জানে। গোটা পথে থাকবার মতো হোটেল নেই, গ্রাম পথে পড়লে কারও আতিথ্য নিতে হবে, তবে সেখানে বাথরুম টয়লেট বাড়ির বাইরে, কিছু দূরে। নয়ত তাঁবুর ব্যবস্থা করা যায়।
    — না না, তাঁহু নয়। রাতের মরুভূমি কেমন তা সাহারায় গিয়ে জেনেছি। তারওপর এ হচ্ছে শীতল মরুভূমি।
    — এগজ্যাক্টলি। এবং গঙ্গা লেকে পৌঁছেও তোমরা লেকের কাছে যেতে পারবে না।
    — কেন?
    — সেরকম রাস্তা নেই, গোটা লেকটাই বেড়া গিয়ে ঘেরা।
    এসব শুনে দমে গেলাম। গঙ্গা আমাকে না ডাকলে তো তার কাছে যাওয়া যাবে না। এ হচ্ছে নিয়তির নির্বন্ধ। 
    — তাহলে অন্য কিছু সাজেস্ট করো।
    — ঠিক আছে।
     
    এর পরে ঐ বোগিই আমাদের পুরো ট্র্যাভেল প্ল্যান বানিয়ে ফেলল। দিনে দুতিন বার করে মেসেজিং এবং ফোনালাপ। তার ব্যস্ততার মধ্যেই সে সময় বের করে সমস্ত ব্যবস্থা করল। আমরা উলানবাতরের হোটেল বুকিং ক্যানসেল করে দিলাম। বোগি আরও ভাল হোটেলে সামান্য বেশি দামে আমাদের ব্যবস্থা করে দিল। গোটা যাত্রাপথের সর্বত্র সে আমাদের হোটেল বুকিং করে ফেলেছে। সব মিলিয়ে মোটামুটি এখন এস্টিমেট চারহাজারে দাঁড়িয়েছে।
    বোগি একবারও আমাদের পাসপোর্টের কপি চায় নি। একটা ডলার বা ইউরোও সে অ্যাডভান্স নেয় নি। আমরা ওদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে চাচ্ছি না, পুরোটাই ক্যাশ নেব, ক্যাশ ফুরোলে ক্রেডিট কার্ড।
    চমৎকার ট্র্যাভেল আইটেনারি বানিয়েছে বোগি, চমৎকার সব হোটেল, বুকিং ডট কমের চেয়ে ঢের সস্তায়, ওর নিজের যোগাযোগ খাটিয়ে।
    দালালে যেন আমাদের ঠকাতে না পারে।
    শুধু আমাদের দুজনের নামটুকু তাকে জানিয়েছি।
    ভাবা যায়?
    এয়ারপোর্টে আমার নাম লেখা বোর্ড নিয়ে ড্রাইভার অপেক্ষা করবে। বোগির এই অপশনে যদি আমরা নিজেরা সব বুক করতাম ছ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারত, এতটুকুও বাড়িয়ে বলছি না।
    বোগি আরও বলেছে, টাকা ভাঙানোর সময়ে সাবধানে ভাঙিও, ছিনতাই না হয়ে যায়। পারলে এয়ারপোর্টে ভাঙিয়ে নিও।
    শেষে বলল, এখানে খুব ঠাণ্ডা, লেকগুলো সব জমে রয়েছে শীতের জন্য গরম পোশাক সঙ্গে আনতে ভুলো না যোষিতা।
    এমন ভালো মেয়ে, এমন ভালো মানুষ এখনও আছে দুনিয়ায়। 
    শিবের গীত এখানের শেষ মনে হচ্ছে। মাঝে তিনটে দিন, সোমবার ভোরে  রওনা হয়ে মঙ্গলবার ভোরে পৌঁছব উলানবাতর। 
    ধান ভাঙার গান গল্প ফের চালু হয়ে যাবে তখন।
  • দীমু | 182.69.***.*** | ০৪ মে ২০২৩ ২১:৪৭740081
  • ও এই ট্রিপটা এখনো শুরু হয়নি
  • যোষিতা | ০৪ মে ২০২৩ ২১:৫৫740082
  • দীমু,
    সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৫ মে ২০২৩ ১০:৫৩740085
  • আমার কথাটি কোথায় যেন উড়ে চলে গেছে। তাই আবার যাত্রাশুরুর শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলাম‌।
  • সুস্মিতা বসু | 157.4.***.*** | ০৬ মে ২০২৩ ১২:১৮740089
  • যা:,এখানেই আপাতত ইতি!
  • দীমু | 182.69.***.*** | ০৭ মে ২০২৩ ১৩:২৭740099
  • অদ্ভুত জায়গা। সফরনামা পড়ার জন্য অপেক্ষা করব।
  • যোষিতা | ০৮ মে ২০২৩ ০৩:৪৭740102
  • কাল সকালে রওনা হচ্ছি। জিনিসপত্র গোছানো হয়ে গিয়েছে। ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়ে পড়ব এয়ারপোর্ট অভিমুখে। এখান থেকে ইসতানবুল, সেখানে সাড়ে তিন ঘন্টার অপেক্ষা এবং ট্রান্সফার, তারপরে অন্য বিমানে আটঘন্টার ওপর সময়। তুরস্ক থেকে বিমান উড়বে রাশিয়ার ওপর দিয়ে, তারপর কিছুক্ষণ কাজাখস্তানের আকাশের ওপর দিয়ে উড়ে ফের রুশ আকাশ হয়ে মঙ্গোলিয়ার আকাশ।
    কখনও কোথাও যাবার আগে আমি এত বিচার বিবেচনা করি নি, তবু আজ সন্ধেবেলা কন্যা ফোন করে বকে দিল কষে।
    — তোমরা কোথাও যাবার আগে প্ল্যান করে যাও না, হুট করে ম্যাপের মধ্যে একটা দেশ পছন্দ করেই বাচ্চাদের মত সেখানে যাবার টিকিট কেটে ফেলো, এদিকে আমি চিন্তায় মরি।
    আমরা চুপচাপ শুনে গেলাম, কন্যা ভুল বলে নি।
    — যেখানে যাচ্ছো, সেখানকার ক্রাইম রেটের খোঁজ নিয়েছ?
    — না, মানে সেকরম ক্রাইম টাইম আর কী হতে পারে? বড়োজোর পকেটমার, ছিনতাইকারি...
    কথা শেষ করতে দিল না মেয়ে।
    —  বাহ, কোনও খোঁজখবরই করো নি। সেবার যখন ইন্ডিয়াতে তোমরা কিডন্যাপড হয়েছিলে, আর যেবার তোমাদের পেছনে গুন্ডা লেগেছিল, আমার কী অবস্থা হয়েছিল মনে আছে? ফরেন মিনিস্ট্রির সঙ্গে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগে বুঝি?
    — সরি।
    — গিয়েই রোজ ফোন করবে।
    — করব। কিন্তু যদি ইন্টারনেট না থাকে তাহলে...
    — ডিরেক্ট কল করবে, যত খরচই হোক না কেন। তোমরা যখন তখন আমাকে না জানিয়ে যেখানে খুশি চলে যাও, তারপর যখন বিপদে পড়ো তখন আমার কী অবস্থা হয় সেটা বোঝো না?
    — না, না, চিন্তা করিস না, রোজ জানিয়ে দেব যে কোথায় আছি।
    — প্রত্যেকটা হোটেলের ফোননম্বর, ঠিকানা, পুরো ট্র্যাভেল আইটেনারি আমাকে পাঠাও।
    — পাঠাচ্ছি।
    ফোন ছেড়ে দেবার পরে ভাবলাম, আমরা শিশু হয়ে গেছি, ও আমাদের অভিভাবক বনে গেছে সময়ের সঙ্গে।
     
    কাস্টমসের নিয়মকানুন অনেকটাই রাশিয়ার মতো মঙ্গোলিয়ায়। পুরো দেশটাই বসে আছে ঠাশা খনিজ পদার্থের ওপরে, অসম্ভব দামী খনিজ ভরা এই দেশ, অথচ দেশে আট শতাংশ মানুষ বেকার, খনিজ চলে যাচ্ছে অন্য দেশে।
    সীমান্তবর্তী একশ কিলোমিটার অবধি সীমান্তরক্ষীদের আওতায় পড়ে। সেজন্যই গঙ্গা লেক দুর্গম? হতেও পারে।
    সোনা, রুপো, টাংস্টেন, তামা, মলিবডেনাম, কয়লা, টিন, ফ্লোরাইট, ইউরেনিয়াম, রেয়ার আর্থ খনিজ, এসবের স্তুপের ওপর বিস্তীর্ণ মরু, মরূদ্যান, স্তেপ।
    মাত্র আটটি বর্ডার পয়েন্টে সাধারণ বিদেশীদের যাতায়াত বৈধ, যেগুলোর একটা, হ্যাঁ, মাত্র একটা বিমানবন্দর, চেঙ্গিজ খান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
    বাকিগুলো স্থলসীমা, তিনটে চীনের সঙ্গে চারটে রাশিয়ার সঙ্গে। আরও প্রচুর বর্ডারপোস্ট আছে, তবে সেগুলো পার হবার অধিকার মোঙ্গল, রুশ এবং চৈনিক ছাড়া আর কারো নেই।
    যত জানছি, তত কৌতুহল বাড়ছে।
  • যোষিতা | ২২ মে ২০২৩ ০২:৫২740144
  • জুরিখ থেকে ইস্তানবুল প্রবল আনন্দ উত্তেজনায় ফ্লাইটে ছটফট করছি। আগে যেবার ইস্তানবুলে বেড়াতে গেছলাম, সেবারে ছিল পুরোন এয়ারপোর্ট। এবার নতুন এয়ারপোর্ট বানিয়েছে, যথারীতি আগের মতোই ব্যস্ত এবং কিছুটা আনঅর্গানাইজড, তবে যেহেতু অসংখ্য ফ্লাইট যাতায়াত করছে, কাজেই প্রচণ্ড ভিড়, এবং সকলেই প্রায় কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য দৌড়োদৌড়ি করছে। গোদের ওপর বিষফোঁড়াও তৈরী হয়েছে, দুবাইয়ের নকল করতে গিয়ে সম্ভবত গাদাগাদা ডিউটি ফ্রি শপ। হাঁটতে হাঁটতে দিশে হারিয়ে যায়। দুবাইয়ে তিরিশ বছর আগে পর্যন্ত গোটা কয়েক ডিউটি ফ্রি শপ ছিল, তারপর নতুন এয়ারপোর্ট বানালো, বাড়াতেই থাকলো টার্মিনাল, দোকানে দোকানে ছয়লাপ করে ফেললো, লোকে হন্তদন্ত হয়ে জিনিস কিনেই চলেছে, কসমেটিক্স, জুয়েলারি, মদ, সিগারেট, ইলেকট্রনিক্স, কাপড়চোপড়, খাবার, ঘড়ি, যে যেটা পারছে। এয়ারপোর্টগুলো বিশাল বিশাল শপিং মল হয়ে যাচ্ছে। ইস্তানবুলও ঐ পথেই দৌড়চ্ছে। সাড়ে তিনঘন্টার ব্রেক ছিল, কিন্তু দৌড়োদৌড়িতেই ক্লান্ত হলাম আমরা। আরেকদফা সিকিওরিটি চেক, জলের বোতল ফেলে দিতে গিয়েও ফেলতে দিল না সিকিওরিটির লোকটি, মৃদু রসিকতা করে বলল, ফেলবেন না, খেয়ে নিন, ওপরে জল আছে ভরে নেবেন আবার বোতলে।
    যেহেতু আমাদের একটিই হ্যান্ড লাগেজ তাই কষ্টটা কম। শেষমেশ গেটের কাছে পৌঁছে বসবার জায়গা পেয়ে আমরা বুড়োবুড়ি নিশ্চিন্ত হলাম। 
    এখন সামনে টানা সাড়ে আটঘন্টার যাত্রা। জুরিখের থেকে আবার উলানবাতর ছঘন্টা এগিয়ে, তাই পৌঁছতে পৌঁছতে তারিখ বদলে যাবে।
    এই লাউঞ্জে সকলেই প্রায় মঙ্গোলিয়ান, অন্তত তাদের চেহারা দেখে সেরকমই আঁচ করছি। মস্ত বড়ো এয়ারবাস, প্রচুর যাত্রী জড়ো হয়েছে, ফ্যাশনদুরস্ত তরুণীরা যেমন রয়েছে, তেমনি সবকরম বয়সের মানুষই অপেক্ষারত, কয়েকজন বাচ্চা ছুটে ছুটে খেলছে। গোটা দুতিন ইয়োরোপীয় চেহারার পুরুষ, দেখে মনে হচ্ছে বিজনেস ট্র্যাভলার।
    আমাদের পাশের ফাঁকা চেয়ারটিতে এসে বসলেন এক মঙ্গোল পুরুষ। এসেই আলাপ জমালেন আমাদের সঙ্গে। ওঁর নাম আগি। তখনও বোর্ডিং শুরু হতে মিনিট দশেক দেরি, আমরা জানতে চাচ্ছিলাম দেশটা সম্পর্কে, তার বর্তমান পরিস্থিতি ইত্যাদি। আগি চমৎকার আলাপি মানুষ, চমৎকার ইংরিজি বলেন। তিনি কলম্বো থেকে ফিরছেন এখন দেশে। সরাসরি উলানবাতরে কোনও ফ্লাইট নেই। ভারতীয়দের জন্যও দিল্লি থেকে কোনোও উড়ান চালু হয় নি, সকলের জন্যই অগতির গতি ঘুর পথে ইস্তানবুল হয়ে যাওয়া।
    আগি একজন সমাজবিজ্ঞানী। মানে প্রথমে সেরকমই বললেন।
    আমরা কোথায় কোথায় ঘুরব, সেসব বলছিলাম, আফশোস করছিলাম, যে গঙ্গা লেক এ যাত্রায় দেখা সম্ভব হচ্ছে না।
    — গঙ্গা লেক কেন?
    ভ্যালিড প্রশ্ন আগির।
    আমরা খুব একটা ভেঙে বলতে চাই না।
    — গঙ্গা লেকটা কোথায় বলুন তো?
    আবার প্রশ্ন করে আগি।
    — ঐ আপনাদের দারিগঙ্গা অঞ্চলে, মোস্ট প্রোব্যাবলি সুখবাতার প্রভিন্সের দক্ষিণে...
    — হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি।
    — আমাদের একজন জানিয়েছেন যে লেকটা বেড়া দিয়ে ঘেরা, অগম্য।
    — ঠিক কথা। চীন সীমান্তের কাছে, ওটা সিকিওর্ড এরিয়া। তবে আমি ব্যবস্থা করম দিতে পারি, আমি বর্ডার সিকিওরিটির লোক। যাবেন আপনারা?
    — না না, মানে আমাদের তো ট্যুর প্ল্যান অলরেডি অন্যভাবে করা হয়ে গেছে।
    এর মধ্যে বোর্ডিং শুরু হয়ে গেছে, সবাই ঢুকে যাচ্ছে বিমানে। আমরা রয়ে সয়ে পরে উঠব। আগি আমাদের তার ফোননং দেন। দরকারে যেন যোগাযোগ করি। 
    অবশ্যই করব। হঠাৎ খটকা লাগে, সমাজবিজ্ঞানী শ্রীলঙ্কা সফর সেরে ফিরছেন, অথচ তিনি বর্ডার সিকিওরিটি ফোর্সের লোক? কেসটা কী?
    টিউবলাইটের মতো স্মৃতি থেকে আলো জ্বলে ওঠে, এতবছর সোভিয়েত দেশে বাস করার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি ইনি আসলেই কে।
    আমরা গুটি গুটি বোর্ডিং এর জন্য এগোতে থাকি।
  • :|: | 174.25.***.*** | ২২ মে ২০২৩ ০৩:১৭740145
  • কে? 
  • kk | 2601:14a:502:e060:4e45:978f:e90:***:*** | ২২ মে ২০২৩ ০৪:০৮740146
  • "সাসপেন্সফুল মিউজিক প্লেয়িং" ...
  • যোষিতা | 194.56.***.*** | ২২ মে ২০২৩ ১২:৫৯740148
  • আমার এযাবদকালের সমস্ত অভিজ্ঞতা একত্রিত করে বলতে পারি, যে আয়েরোফ্লোৎ এবং এয়ারইন্ডিয়া/ইন্ডিয়ান ব্যতীত সমস্ত বিমানেরই তৃতীয়বিশ্বের সেক্টরের উড়ানে পরিষেবা তো বটেই বিমানগুলির ভেতরের বসবার জায়গা পর্যন্ত কম-কম। ইদানীং হাঁটু ঠেকে যাচ্ছে সামনের সীটের পশ্চাদ্দেশে। আমি গত বিশ বছরে লম্বা হয়েছি বলে আন্দাজ হচ্ছে না, কিন্তু বিমানযাত্রার মান খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। এমিরাটসেরই দুবাই কোলকাতা সেক্টরের মান, জুরিখ দুবাই সেক্টরের সঙ্গে তুলনীয় নয়। খাবার দাবার না খেলেও চলবে, কিন্তু লেগরুম কম দেওয়া তো মধ্যযুগীয় লেভেলের অত্যাচার। টার্কিশ এয়ারলাইন্সও অনুরূপ পথ অনুসরণ করছে।
    আগির সীট নম্বর সাত নম্বর সারিতে, থার্ড ক্লাসের (যাকে আদর করে ইকোনমি ক্লাস বলা হয়ে থাকে) প্রথম সারি, সুতরাং তার লেগরুমের সমস্যা হবে না, আমরা অনেক পেছনে তিরিশ টিরিশ নম্বর সারিতে। প্রায় সাড়ে তিনশো কি আরও বেশি ছেলেবুড়োকাচ্চাবাচ্চা বিজনেসমেন পর্যটক তরুণতরুণীকে নিয়ে এয়ারবাস মাখনের মত কখন যে টেক অফ করেছে টেরও পাই নি।
    আমরা চলেছি পশ্চিম থেকে পূর্বে, পৃথিবী যে ডিরেকশনে নিজের অক্ষ বরাবর ঘোরে, অর্থাৎ সূর্য গব গব গবাৎ করে ডুবে যাবার আগে ঝুঁকে পড়ে জানলা দিয়ে কৃষ্ণসাগর দেখতে লাগলাম। দেখতে দেখতে রাশিয়ার আকাশে ঢুকে পড়েছে বিমান, অদিকাংশটাই রুশ আকাশে উড়বে, মধ্যে অল্পক্ষণ কাজাখস্তানের ওপর দিয়েও যাবে বৈকি।
    আমরা দুজনেই পথশ্রমে ও বয়সের ভারে ক্লান্ত। এরকম করে বসে ঘুমোনো যায় না।
  • | ২২ মে ২০২৩ ২০:১৬740149
  • আরেকটা ভীষণ ইন্টারেস্টিং  জায়গা।  লেখাটা শেষ হবে তো।
  • aranya | 2601:84:4600:5410:f59e:3c6b:b893:***:*** | ২২ মে ২০২৩ ২০:৫০740151
  • দারুণ
  • যোষিতা | ২৯ মে ২০২৩ ০৬:৩৮740175
  • বড্ড তাড়াতাড়ি ভোর হয়ে গেল, ঘুমে চোখ বুজে আসছে, ঘাড়ে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে, যে কোনও মুহূর্তে স্টিফ নেক হয়ে গেলেই চিত্তির, বেড়ানোর বারোটা বাজবে। ব্লাডার ফুল, অথচ উঠবার শক্তি নেই, বিমান নামছে, জানলার বাইরে দেখা যাচ্ছে ধূসর দেশটা, কিচ্ছু নেই যেন। সামনের মনিটরে ফ্লাইটের ফ্রন্ট ভিউও ঝাপসা। সকাল প্রায় সাতটা। ক্রমশঃ উলানবাতরের কাছাকাছি চলে আসতাই হাইরাইজ বিল্ডিংগুলো দেখা গেল। অসংখ্য হাইরাইজ বাড়ি। মনে হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়নের দেশের সব্বাই বুঝি ঐখানেই থাকে। আবার শহর ছাড়িয়ে একটু দূরে চলে গেল বিমান তারপর অবতরণ, ঘড়াৎ করে চাকা গুলো বের হয়ে গেল, সামান্য পরেই ধূধূ প্রান্তরের মধ্যে রানওয়েতে নিখুঁত ল্যান্ডিং। কারো হুড়োতাড়া নেই, ধীরে সুস্থে বেরিয়ে দেখি বিমান বন্দরে আর মাত্র একটা বিমান। এমন শুনশান এয়ারপোর্ট তখনও পর্যন্ত আর কোত্থাও দেখিনি আমি। তালিবান রাজত্বের গোড়ার দিকে আফগানিস্তানের কাবুল বিমান বন্দরেও জঙ্গি বিমান বাদ দিলেও এর চেয়ে বেশি বিমান ছিল। বাসে করে টার্মিনালে, সেখানে ইমিগ্রেশন। দুটো লাইন, একটা মঙ্গোলদের জন্য, অন্যটা বিদেশীদের। বিদেশীদের লাইনে দশ পনেরোজন, অন্যটায় স্বাভাবিকভাবেই বেশি মানুষ, কিন্তু প্রচুর কাউন্টার, ফিঙ্গারপ্রিন্টের মেশিন, চোখের মনি স্ক্যান, সব আছে। কোথায় থাকব, কতদিনের জন্য এসেছি, কিছুই জিজ্ঞাসা করে না ইমিগ্রেশনে। কেন জিজ্ঞাসা করে না, পরে বুঝেছি।
  • যোষিতা | ২৯ মে ২০২৩ ০৭:১৫740177
  • বোগিকে মনে আছে নিশ্চয়? সেই বোগি পাঠিয়েছে আমাদের জন্য গাড়ি। একটা কালো ল্যান্ড ক্রুইজার। এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই দেখি সারথি উপস্থিত আমার নাম লেখা বোর্ড নিয়ে। চনমনে হাসিখুশি মঙ্গোল ভদ্রলোক, তার নাম ইদ্রেই। সে আমাদের নিয়ে চলল গাড়িতে। বোগি বলেছিল বেজায় ঠাণ্ডা হবে উলান বাতরে। কিন্তু আমরাও তো শীতপ্রধান দেশে থেকে থেকে অনেকটাই গা সওয়া, তাই আমার শীত করছিল না,  জামার ওপরে একটা পঞ্চো পরে থাকতেই গরম লাগছিল। 
    বড্ডো তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেছি, হোটেলে দশটার আগে আর্লি চেক ইন করাও সম্ভব নয়,  কিন্তু ইদ্রেই বলল তাড়াতাড়ি মোটেই না। হোটেল সত্তর কিলোমিটার মত পথ। 
    — সেকী! এতটা দূরে কেন? আমাদের হোটেল উলান বাতরে নয়?
    — একেবারে শহরের কেন্দ্রস্থলে।
    — সেরকমই তো জানতাম, পার্লামেন্ট হাউসের পাশের রাস্তাতেই।
    — ঠিকই। তবে উলানবাতর শহর এখান থেকে অন্ততঃ পঞ্চাশ পঞ্চান্ন কিলোমিটার, আর হোটেল শহরের অনেক ভেতরে। তার ওপর শহরে ঢুকলেই ট্র্যাফিকের চাপে প্রচুর সময় লেগে যায়, দুঘন্টার বেশিও লেগে যেতে পারে হোটেল পৌঁছতে। 
    আমরা শুনেছিলাম বটে, যে নতুন এয়ারপোর্ট তৈরি হয়েছে, পুরোন এয়ারপোর্টটা শহরের বেশ কাছেই ছিল, হ্যাঁ, দেখেছিলাম এয়ারপোর্টদুটোর আলাদা কোড। পুরোনটা এখন অচল, এবং গোটা দেশে একটাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ডোমেস্টিক তো বেশ কয়েকটা দেখেছি ইন্টারনেটে সার্চ করে করে। একটাতে ফ্লাইট বুক করবার প্রাণান্ত চেষ্টাও চালিয়েছিলাম উইথ নো সাকসেস।  মনে আছে, খুবসগুল এয়ারপোর্ট ছিল সেটা।
    কিন্তু হোটেলে যাওয়া এখন খুব জরুরি। লাগেজ রাখতে হবে, টয়লেট যেতে হবে, টাকা ভাঙাতে হবে, বোগিকে পেমেন্ট করতে হবে। ঘরে পরে ঢুকলেও চলবে।
    ইদ্রেইর পাশে বসে দল্প করতে করতে চলেছি।
    ইদ্রেই বেশ ইংরিজিও বলছে। ওর ছ সাত বছর বয়সে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের পতন হয়, অব্যবহিতকাল পরেই মঙ্গোলিয়াও শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে বহুপার্টি সিস্টেম কায়েম করে। অবশ্য এখন ক্ষমতাসীন পার্টি কমিউনিস্ট পার্টি, তবে তারা নির্বাচনের দ্বারা ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। 
    ইদ্রেই যেই জেনেছে,যে আমি রাশিয়ান জানি, অমনি নিজের রাশিয়ান জ্ঞান ফলাতে শুরু করেছে। ছোটবেলায় তো সে রাশিয়ান ইস্কুলেই পড়ত।
    বাচ্চাদের একটা জনপ্রিয় গানের কটা  শব্দ তার মনে আছে। কিন্তু অর্থ ভুলে গেছে। তাকে পুরো গানটা আমি শোনাই পথে যেতে যেতে, অর্থ বোঝাই। শহরতলি পেরিয়ে গাড়ি শহরে ঢুকতে থাকে। যানজটে অনেক সময় কেটে যায়। তবু আমরা তা টের পাই না।
     
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন