কাল সকালে রওনা হচ্ছি। জিনিসপত্র গোছানো হয়ে গিয়েছে। ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়ে পড়ব এয়ারপোর্ট অভিমুখে। এখান থেকে ইসতানবুল, সেখানে সাড়ে তিন ঘন্টার অপেক্ষা এবং ট্রান্সফার, তারপরে অন্য বিমানে আটঘন্টার ওপর সময়। তুরস্ক থেকে বিমান উড়বে রাশিয়ার ওপর দিয়ে, তারপর কিছুক্ষণ কাজাখস্তানের আকাশের ওপর দিয়ে উড়ে ফের রুশ আকাশ হয়ে মঙ্গোলিয়ার আকাশ।কখনও কোথাও যাবার আগে আমি এত বিচার বিবেচনা করি নি, তবু আজ সন্ধেবেলা কন্যা ফোন করে বকে দিল কষে।
— তোমরা কোথাও যাবার আগে প্ল্যান করে যাও না, হুট করে ম্যাপের মধ্যে একটা দেশ পছন্দ করেই বাচ্চাদের মত সেখানে যাবার টিকিট কেটে ফেলো, এদিকে আমি চিন্তায় মরি।
আমরা চুপচাপ শুনে গেলাম, কন্যা ভুল বলে নি।
— যেখানে যাচ্ছো, সেখানকার ক্রাইম রেটের খোঁজ নিয়েছ?
— না, মানে সেকরম ক্রাইম টাইম আর কী হতে পারে? বড়োজোর পকেটমার, ছিনতাইকারি...
কথা শেষ করতে দিল না মেয়ে।
— বাহ, কোনও খোঁজখবরই করো নি। সেবার যখন ইন্ডিয়াতে তোমরা কিডন্যাপড হয়েছিলে, আর যেবার তোমাদের পেছনে গুন্ডা লেগেছিল, আমার কী অবস্থা হয়েছিল মনে আছে? ফরেন মিনিস্ট্রির সঙ্গে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগে বুঝি?
— সরি।
— গিয়েই রোজ ফোন করবে।
— করব। কিন্তু যদি ইন্টারনেট না থাকে তাহলে...
— ডিরেক্ট কল করবে, যত খরচই হোক না কেন। তোমরা যখন তখন আমাকে না জানিয়ে যেখানে খুশি চলে যাও, তারপর যখন বিপদে পড়ো তখন আমার কী অবস্থা হয় সেটা বোঝো না?
— না, না, চিন্তা করিস না, রোজ জানিয়ে দেব যে কোথায় আছি।
— প্রত্যেকটা হোটেলের ফোননম্বর, ঠিকানা, পুরো ট্র্যাভেল আইটেনারি আমাকে পাঠাও।
— পাঠাচ্ছি।
ফোন ছেড়ে দেবার পরে ভাবলাম, আমরা শিশু হয়ে গেছি, ও আমাদের অভিভাবক বনে গেছে সময়ের সঙ্গে।
কাস্টমসের নিয়মকানুন অনেকটাই রাশিয়ার মতো মঙ্গোলিয়ায়। পুরো দেশটাই বসে আছে ঠাশা খনিজ পদার্থের ওপরে, অসম্ভব দামী খনিজ ভরা এই দেশ, অথচ দেশে আট শতাংশ মানুষ বেকার, খনিজ চলে যাচ্ছে অন্য দেশে।
সীমান্তবর্তী একশ কিলোমিটার অবধি সীমান্তরক্ষীদের আওতায় পড়ে। সেজন্যই গঙ্গা লেক দুর্গম? হতেও পারে।
সোনা, রুপো, টাংস্টেন, তামা, মলিবডেনাম, কয়লা, টিন, ফ্লোরাইট, ইউরেনিয়াম, রেয়ার আর্থ খনিজ, এসবের স্তুপের ওপর বিস্তীর্ণ মরু, মরূদ্যান, স্তেপ।
মাত্র আটটি বর্ডার পয়েন্টে সাধারণ বিদেশীদের যাতায়াত বৈধ, যেগুলোর একটা, হ্যাঁ, মাত্র একটা বিমানবন্দর, চেঙ্গিজ খান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
বাকিগুলো স্থলসীমা, তিনটে চীনের সঙ্গে চারটে রাশিয়ার সঙ্গে। আরও প্রচুর বর্ডারপোস্ট আছে, তবে সেগুলো পার হবার অধিকার মোঙ্গল, রুশ এবং চৈনিক ছাড়া আর কারো নেই।
যত জানছি, তত কৌতুহল বাড়ছে।