বার্বিকিউ কেন করবেন? সম্প্রতি এক বারবিকিউতে অংশগ্রহনকারী এক পড়শীর কথায়, কারন আগুনে কিছু পুড়িয়ে খাওয়া আমাদের আদিম প্রবৃত্তি। উই পে হোমেজ টু আওয়ার অ্যানসেস্টরস :-)
কখন করবেন? সবচেয়ে ভালো সময় হলো শীতকাল। আগুনের ওম উপভোগ করতে পারবেন, ওপর দিকে তাকালে পরিষ্কার আকাশ দেখতে পাবেন যেখানে অনেক তারা ঝকঝক করছে।
কোথায় করবেন? বাড়ির ছাদে বা বাগানে, একটু খোলা জায়গায়। যেখানে অনেকে মিলে জড়ো হয়ে গল্প করা যায়, নানা উপকরন জড়ো করে রাখা যায়। বাগানে বা বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় করলে সুবিধে হলো পড়শীরাও ফোন করে জিগ্যেস করতে পারবে কি হচ্ছে, আর তার পর চলে আসতে পারবে।
এবার আসি উপকরনের কথায়। উপকরনের তিন ভাগঃ আগুন, খাদ্য, পানীয়।
আগুন জ্বালানোর জন্য চাই কাঠকয়লা আর স্টার্টার ব্লক বা ছোট কাঠের টুকরো। দোকানে কংক্রিটের রিং পাওয়া যায়, ওরকম একটা কিনে আনুন। ডায়ামিটার দেড় থেকে দু ফুট, হাইট ছ ইঞ্চি। প্রথমে তিন বা চারটে ইঁট বা টাইল পেতে তার ওপর রিংটা বসিয়ে দিন। তাতে করে রিং এর নীচে ফাঁক থাকবে, সেখান দিয়ে হাওয়া ঢুকতে পারবে। এবার রিং এর ভেতর কয়লা দিয়ে একটা বেড বানান। কয়লার ভেতর পাঁচ ছটা স্টার্টার ব্লক বা কাঠের টুকরো গুঁজে দিন, তার ওপর আরও কিছু কয়লা ফাঁক ফাঁক করে পেতে দিন। চাইল অল্প খানিকটা কেরোসিন ছড়িয়ে দিতে পারেন। প্রথমে স্টার্টার ব্লকে আগুন ধরান, দশ পনেরো মিনিট পর সেই আগুনটায় পাশের কয়েকটা কয়লা ধরে যাবে। এবার একটা হাতপাখা বা নিউজপেপার বা ব্লোয়ার নিয়ে একদিকে বসে হাওয়া করতে থাকুন। খুব করে হাওয়া দিতে হবে, একজন ক্লান্ত হয়ে গেলে আরেকজনকে বসতে হবে। আর একটা চিমটে দিয়ে কয়লাগুলোকে অল্প অল্প খোঁচাতে আর টার্ন করতে থাকুন। মোটামুটি আধ ঘন্টা পরে পুরো বেডটাতে আগুন ধরে যাবে, তারও আধ ঘন্টা পর গনগনে লাল আগুনের বেড তৈরি হবে। অর্থাত বার্বিকিউ শুরুর অন্তত এক বা দেড় ঘন্টা আগে থেকে আগুন বানানো শুরু করতে হবে। অবশ্য অ্যামাজনে নানারকম বার্বিকিউ স্ট্যান্ডও পাওয়া যায়, সেও কিনতে পারেন।
এবার খাদ্য। নানারকম খাবার বানানো যায়, যেমন চিকেন (উইংস, ব্রেস্ট কিউব, লেগ, ইত্যাদি), প্রন, মাছ। এছাড়াও আলু, পনীর, পাইনআপেল, নানান সবজি। এগুলো ছোটছোট কিউব করে আলাদা আলাদা পাত্রে রাখুন। মাংস ম্যারিনেট করে রাখুন। টক দই, পেঁয়াজ-রসুন পেস্ট, চাট মসলা, লেবুর রস ইত্যাদি দিয়ে ম্যারিনেট তৈরি করতে পারেন।
পানীয়র মধ্যে ওয়াইন, বিয়ার, আর রাম অবশ্যই থাকা উচিত। এছাড়া যার যেমন পছন্দ। গেস্টরা একেকজন একেকটা বোতল নিয়ে এলে ভালো হয়। আর একটা কুলার বক্স থাকলে ভালো হয়, সেটা বার্বিকিউর জায়গায় রেখে দেওয়া যায়। একটা টেবিলও চাই, তার ওপর খাবার, প্লেট ইত্যাদি রাখতে হবে।
বার্বিকিউ শুরু করার সবচেয়ে প্রসস্ত সময় হলো রাত নটা থেকে। ততক্ষনে আগুনও গনগনে হয়ে উঠবে। প্রথমে একটা জালের র্যাক রিংটার ওপর বসিয়ে দিন। অন্যথায়, এরকম র্যাক অ্যামাজনে কিনতে পাওয়া যায়ঃ
এবার মাংস, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ ইত্যাদি একটা একটা করে শিকে গেঁথে নিন (ওপরের র্যাক কিনলে অবশ্য শিক লাগবে না)। অল্প অল্প গ্যাপ রেখে গাঁথবেন। এরকম তিনটে বা চারটে শিক তৈরি হয়ে গেলে র্যাকের ওপর বসিয়ে দিন। একটা ব্রাশ দিয়ে ঘি বা তেল হাল্কা করে ব্রাশ করতে থাকুন আর দু তিন মিনিট পরপর শিকগুলো ঘোরাতে থাকুন। ক্রমাগত ঘোরাতে না থাকলে একদিক পুড়ে যাবে, আর র্যাকের সাথে স্টিক করে যাবে। মাঝেমাঝে ব্রাশ না করলেও র্যাকের সাথে স্টিক করে যাবে। ঠিকমতো আগুনের আঁচ হলে মোটামুটি ছ সাত মিনিটে মাংস পুরো তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। একটা ফর্ক দিয়ে মাংসের গায়ে গেঁথে দেকে নিন ভেতর অবধি সেদ্ধ হয়েছে কিনা। একদম লাস্টে ঐ ব্রাশটা দিয়েই বার্বিকিউ সস লাগিয়ে নিন, তারপর আগুন থেকে তুলে শিক থেকে ছাড়িয়ে প্লেটের ওপর রাখুন। খোসাশুদ্ধ আলু আগুনের মধ্যে গুঁজে দিন, দুতিন মিনিট পর একবার ঘুরিয়ে নিন। বার করে নিন, জ্যাকেট ছাড়িয়ে সস সহ পরিবেশন করুন।
একজন খাবার শিকে গাঁথবেন, একজন রোস্ট করবেন, একজন প্লেটে সব খাবার তুলতে থাকবেন, একজন ড্রিংকস বানাবেন, একজন গানের ব্যবস্থা করবেন। শীতকাল আসছে, বার্বিকিউড চিকেন অথবা ফিশ, চিল্ড বিয়ার সহযোগে উপভোগ করুন। রাতের দিকে ডোরস চালাতে ভুলবেন না।