শাশুড়ির গল্প?আমাকে দেখে শ্বশুরবাড়ির তেলুগু কাজের মাসি বলল--খুব ভাল সোন্দর জামাই পেয়েছ।
শাশুড়ি হাসতে গিয়ে বিষম খেলেন। ওঁর ইশারায় ছোটশালি বলল-- শান্তাম্মার পক্ষে এমন কমেন্ট স্বাভাবিক। তেলুগু ফিলিমের হিরোগুলো হিন্দি ফিল্মের ভিলেনের মত দেখতে। রজনীকান্তকে দেখলেই ঠাওর হয়।
সেদিন সন্ধ্যায় ছোটশালিকে নিয়ে সিনেমায় যাওয়ার কথা ছিল। বলে দিলাম-- মাথা ধরেছে।
আসলে আমার শাশুড়ি প্রথম দিন থেকেই আমায় অপছন্দ করতেন এবং ভাইস ভার্সা!
ওনার কারণঃ সুন্দরী ছিলেন। আর আমার আলটপকা মন্তব্য-- মেয়ে দেখতে রাজি হইনি, কারণ মেয়ের মাকে আগেই দেখে ফেলেছিলাম -- কোন ছোটলোক রঙ চড়িয়ে ওনার কানে তুলে দিয়েছিল। উনি ভুরু কুঁচকে -- ভদ্রঘরের ছেলের এ কী পিবিত্তি?
আমার কারণঃ উনি বড্ড পাকা। যখন গান্ধীজির ছেলে মেয়ের কথা তুললাম ওনার বিষম লাগলো। বললেন --গান্ধীজির ছেলেমেয়ে কখনও শুনিনি তো! কোন সিরিয়ালেও দেখায় নি।
ফলে একদিকে স্ত্রী যখন ছত্তিশগড়ে প্রথম কন্যার জন্মের সময় সিজারিয়ানের জন্য ওটিতে ভর্তি, তখন আমার আর শাশুড়ির তুমুল ঝগড়া চলছে-- যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হইবে সে কোন মাধ্যমে লেখাপড়া শিখিবে? উনি- ইংলিশ মিডিয়াম, আমি- বাংলা বা হিন্দি মিডিয়াম।
শেষে উনি বললেন- ঠিক আছে, তুমি যদি তোমার বাচ্চাকে মূর্খ বানাতে চাও তো--
আমি তেলে বেগুনে জ্বলে-- আপনি কোন মিডিয়ামে পড়েছিলেন যদি দয়া করে জানান!
ওনার মুখ চুপসে বেগুনি।
এটা বিলো দ্য বেল্ট!
দেশভাগের আগে ছিলেন যশোরের সিভিল সার্জনের মেয়ে। বাচ্চা মেয়েকে গভর্নেস পড়াত, আদব-কায়দা শেখাত। দেশভাগের দাঙ্গায় হারালেন বাবা-মা দুজনকেই। কোনরকমে প্রাণ হাতে করে বাচ্চা মেয়ে মামাবাড়ির সঙ্গে এসে ভবানীপুরে উঠল। পড়াশুনোর কথাই ওঠে না। চোদ্দ বছরে বিয়ে দেওয়া হল। বিলাসপুরের রেলের লেবার কোয়ার্টারে অনেক দারিদ্র্যের মধ্যে সংসার চালালেন। ভোপাল এসে ভেল'এর চাকরিতে জীবনে কিছু স্বাচ্ছন্দ্য এল। কিন্তু নিজের চার সন্তানের সঙ্গে মানুষ করলেন মাসতুতো বোন এবং দুই ননদের ছেলেদেরও।
এদিকে শ্বশুর মশাই ভোপাল্ বাজারে বাংলা নাটকের একচ্ছত্র পরিচালক। ফলে সময়ে অসময়ে গুচ্ছের চায়ের ফরমাশ। ফের ব্রিজ খেলে কখন ফিরবেন তার জন্যে জেগে বসে থাকা।
অনেক গুণ ওনার। কাউকে চোখে দেখে তার জামাকাপড়ের ম্যাপ দর্জিকে সঠিক বলে দেন। সিনেমাতে হিরোর সোয়েটার দেখে ঘরে এসে ডিজাইন হুবহু তুলতে পারেন।
আজ আমার মত বুড়ো জামাই ওনার সঙ্গে আড্ডা দেয়, ওনার গলায় যূথিকা রায় ও শীলা সরকারের পুরনো বাংলা গান শোনে। বাদ যায় না ধনঞ্জয় ও পান্নালাল।
আমি জিগাই-- গীতা পড়ে কী বুঝলেন?
--ভালো লাগেনি। ভগবান নানান যুক্তিতক্কো দিয়ে অর্জুনকে নিজের ঘরের লোকজনকে মারতে উসকে দিল কেন? এ কীরকম ভগবান?
আমি চেঁচিয়ে উঠি-- আপনিই গীতা ঠিক বুঝেছেন। আপনি আর দামোদর কোশাম্বী।
--কোশাকুশি? তিনি আবার কে?