এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আমাদের  গ্রামের বাড়ির কালীপুজো

    Bratin Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ অক্টোবর ২০২১ | ১১৫৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • দেখতে দেখতে আবার কালীপুজো এসে গেলো। এটাই আমাদের বাড়ির ফ্যমিলি গেটটুগেদার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মসূত্রে এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে যাওয়া সবাই এই ক`টা দিন অন্ততঃ তারকেশ্বরের কাছে আমাদের দেশের বড়িতে থাকার চেষ্টা করেন। এবারে অবশ্য বরুনদাদা-দের পুজো, তাতে অবশ‍্য আনন্দ কিছুমাত্র কম নয়। দাদুরা দু ভাই ছিলেন। এক বছর ওদের পালা, এক বছর আমদের এই রকম। এবারে অনুপুস্থিতির তালিকা বেশ বড়। ছোটকাকারা আসে নি মুম্বাই থেকে। মেজদা হায়দ্রাবাদ থেকে, কিংবা বুড়ু (সেজ কাকার মেয়ে) ব্যাঙ্গালুরু থেকে। অশোকরা অবশ‍্য এসে গেছে (জেঠুর ছোট ছেলে) পুণে থেকে। মেজদি-রা(জেঠুর মেজ মেয়ে) নাগপুর থেকে। আর আমরা লোকালরা। যেমন বোন, অরবিন্দ, ভাগনী তিতলি আর তিন্নি, পিসীরা, পিসীর দুই ছেলে রকেট আর বুলেট, বৌমারা রত্না আর ঈশিতা, ছেলেরা ডোডো আর কাজু, নকাকা, নকাকীমা, সেজকাকা, সেজকাকীমা, বাপন আর নবনীতা, বড়দা, বৌদি, ভদু, বড়দি, জামাইবাবু এবং আমরা। 
     
    সেই ছোট্ট বেলায় যখন প্রায় পুরো পুজোর ছুটিটাই গ্রামের বাড়িতে কাটাতাম। তখন দেখতাম পোঁটা কাকা কেমন করে এক মেটে, দো-মেটে থেকে আস্তে আস্তে ঠাকুর বানাতো। শিবের গাঁজারর কলকে, ধুতরো ফুল কিংবা মায়ের পায়ে বাঁশপাতা এই সব ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা এই সব বিষয়ে আমাদের ছিল অদম্য কৌতূহল। সাজ পরানোর দায়িত্বে থাকতো মেনলি নকাকা। বহু বছরের অভিজ্ঞতা কাকার। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঠাকুরের সাজ পরনোর সময় হেল্পারের কাজ পেত। শিবের জটা, মায়ের চুল এই সবও ঠিক মতো পরাতে হত। এমন কি ন‍্যাড়া কাটা মুন্ডুকেও বাবরি চুল আর মোটা গোঁফ দিয়ে মানানসই করে তোলা হত। 
     
    আরেকটা স্মৃতি বাজি শুকোতে দেওয়া। এখনকার ইনস্যান্ট যুগের ছেলেপিলেরা বুঝতে পারবে না। কিন্তু আমাদের ছোটবেলায় বহু আগে বাজি কেনা হত, তারপরে নিয়ম করে সেগুলোকে রোদে দেওয়া। অবশ্য আগে আমাদের বাড়ি তুবড়ি এবং রংমশালও তৈরী হত কদিন আগে অবধি। এখন লোকবলের অভাবে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। 
     
    পুজো শুরু হরে হতে প্রায় ১১/১১:৩০। ততক্ষনে উপোস করা লোক্জনদের অবস্থা বেশ খারাপ। উপোসের মোটামুটি তিনটে ক্যাটাগেরি। নিঢাল - অর্থাৎ কিচ্ছু খাবে বা পান করবে না, চা-হাল - যেটা আমি করি, মানে জল খাওয়া যাবে না। কিন্তু চা চলতে পরে। আর লুচি-ঢাল - এরা মোটামুটি ভাত ছাড়া সবই খায়। ঠাকুর মশায় পুজোতে বসতে খনিকক্ষণ পরে আমরা বেড়িয়ে পরি দুদিকে দুটো হ্যজাক হাতে কেউ থাকে।
    তখনও গ্রামে পর্যাপ্ত ইলেকট্রিক আলো নেই।
    মাঝে আমাদের ২৫/৩০ জনের বিশাল দল, ইনক্লুডিং ঢাকী। এই সময় কোন বাড়ির লোকজন ঘুমোচ্ছে বুঝতে পারলে জোরে জোরে ঢাক বজিয়ে তাদের ঘুমের দফা রফা করে দেওয়া, কোনো বাড়ির একটাই দরজা থাকলে তার শেকল তুলে দেওয়া, কারোর বাড়ির নৈবেদ্যর  ২/৪ টে ডাব সরানো এই সব "মহৎ" কাজ করে থাকি। এর পরে বাড়ি ফিরে বাড়ির বাকি পুজো দেখতাম। পুষ্পাঞ্জলি প্রায় ভোরের দিকে 4:30/5 টা নাগাদ। পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া শুরু হলেই ঘুমিয়ে পরা ঠাকুরদের তুলে লুচি ভাজতে লাগিয়ে দেওয়া হত। পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে সরবতে গলা ভিজিয়ে আমরা সবাই লাইন দিয়ে বসে পরতাম। সাথে সাথে পাতে পরতো গরমাগরম লুচি, ফুলকপির তরকারি ইত‍্যাদি। শেষপাতে কখনো কখনো পায়েস...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 68.184.***.*** | ২৭ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৩৯500278
  • ঠাকুর তৈরীর আরেকটু ডিটেল বর্ণনা দিলে পারতে। গ্রামের পুজো তো শহরের পুজোর থেকে অন্যরকম হয়। তাই পুজোর বর্ণনাও থাকলে পড়তে ভালো লাগতো। অনেকেই তো আমরা জানিনা গ্রামের পুজো কেমন হয়। আচ্ছা, এই যে 'নিঢাল', 'লুচি-ঢাল' এমনি নাম হয়েছে, এই 'ঢাল' মানে কী? খাবার?
    আর যে 'বেরিয়ে পরি' বা 'ঘুমিয়ে পরা' লিখেছো সেগুলো 'পড়ি' আর 'পড়া' হবে না?
  • Bratin Das | ২৭ অক্টোবর ২০২১ ২১:৪৬500286
  • 1. "র"  আর "ড়" নিয়ে মাঝেমাঝে  ই গোলমাল  হয়।
     
    2. নিঢাল শব্দ টা আমরা ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি। "চা" আর "লুচি" টা মজা করে বলা। তবে যারা উপোস করে, তাদের সত‍্যিই ওই তিনটে ক‍্যাটেগরী।
     
    3. ঠাকুর তৈরীর কটা ধাপ আছে।
     প্রথমে কাঠের কাঠামো র ওপর খড় দিয়ে কাঠামো বানানো হয়। এটাকে বলা হয় একমেটে। এরপরে তারপরে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়, সেটাকে বলে দো মেটে। এর পরে পর পুরো মূর্তি  তে সাদা রঙ দেওয়া হয়। তারপর সেটা শুকিয়ে গেলে  আসল রঙ দেওয়া হয়। পুজোর দিন সন্ধ‍্যে বেলা একটা তেল লাগায় যেটাকে আমরা বলি ঘাম তেল এতে মায়ের মূর্তি চকচক করে। এটা র কম্পোশিসন টা কী ঠিক জানি না। 
  • r2h | 2405:201:8005:9947:f515:59d3:8a30:***:*** | ২৭ অক্টোবর ২০২১ ২৩:৪২500293
  • ওহো, আমি তো শুধু নোয়াদার ঢাল, ঝাপটের ঢাল, পিচকুড়ির ঢাল এসব জানতাম। চা লুচিরও আবার ঢাল হয়?

    এই প্রসঙ্গে মনে হলো, আমার খুব বোলপুর বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে। মানে ঐ মাঠঘাট বা নিদেনপক্ষে রামকিঙ্করের সুজাতা (জয়া, এই রাবীন্দ্রিকতার চক্করে সুজাতা হয়ে গেলেন) ঐসবের জন্যে। কিন্তু শান্তিনিকেতন বেড়াতে যাওয়াটা কেমন যেন বোকা বোকা লাগে, মানে মনে হয় যেন ওখানে গেলেই একটু রাবীন্দ্রিক দাবি দাওয়া নিয়ে যেতে হবে। তাই কিছুতে যাওয়া হয় না।

    মানবজীবনে যে কত রকমের সমস্যা।
  • বিপ্লব রহমান | ২৮ অক্টোবর ২০২১ ০৬:২৪500307
  • আরে, এ তো দারুণ ব্যাপার! এমন যৌথ পরিবারের এমন মহামিলন সত্যিই বিরল। 
     
    লেখার আটপৌরে স্টাইলটি বেশ, মনে হয় চায়ের কাপ হাতে লেখক সামনে বসে এই গল্প বলছেন। তবে লেখাটি খুব আঁটসাঁট মনে হলো। আরও বিস্তারিত লিখলে পারতেন। 
     
    শুভ 
  • Abhyu | 47.39.***.*** | ২৮ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩৮500309
  • ঢাক বাজানোর ছবিটা বড়ই ভালো।
  • অপু | 2401:4900:3ee1:beb2:0:54:6dc5:***:*** | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৪:২৬500492
  •  অভ‍্যু, তবে আর বলছি কী!!  :)))
     
    তবে ওটা ঠিক ঢাক নয়। আমরা বলি কারা- দগরা। ঢাক হচ্ছে সেটা  যেটা মাটিয়ে বসিয়ে রেখে অবিরাম পেটা হ য়। সাইজেও 
    অনেকটা বড়।। আর তার পেছন দিকে নাকি বকের পালক লাগানো থাকে।
  • অপু | 2401:4900:110a:756f:0:6e:69c0:***:*** | ১১ নভেম্বর ২০২১ ০০:৫৩500995
  • বিপ্লব বাবু অনেক ধন‍্যবাদ আপনার  সহৃদ ময় মন্তব‍্যের জন‍্যে।
     
    ভালো থাকবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন