আপনি নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন,স্কুল-কলেজ বাদে অফিস কাছারি, সিনেমাহল, প্রেক্ষাগৃহ সবই একে একে খুলে যাচ্ছে।
সন্তানকে স্কুল-কলেজে পাঠানো নিয়ে সমাজ দ্বিধা বিভক্ত হয়েছে। যাঁদের সামর্থ্য আছে, যাঁরা কিঞ্চিৎ সুবিধাজনক অবস্থানে বিরাজ করেন, তাঁরা অনলাইন শিক্ষাকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন।
যাঁদের সামর্থ্য নেই, নিষ্ফল আক্রোশে মাথা কুটে মরলেও শেষমেষ ধার করে হোক, জমি বিক্রি করে হোক, মোবাইলের বন্দোবস্ত করার পরেও, কেউ পাহাড়ের মাথায়, কেউ গাছের উপর চড়ে 'শিক্ষাব্যবস্থা' জারী রাখবার চেষ্টা করছেন। গত দু'দিন আগে বাঁকুড়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবী জানানোর জন্য কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে নন-বেলেবল ধারায় আটক করা হয়েছে।
মিজোরাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের অনলাইন সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে লুংলে ও মায়ানমার সীমান্তের সিয়াহায় ছাত্রছাত্রীদের খাতা পেন নিয়ে পাহাড়ের মাথায় উঠে যেতে বাধ্য হতে হয়েছিল, কারণ, অন্যত্র ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। কেবল দুর্গম এলাকাই নয়, এদেশের বেশীরভাগ গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট কানেকশনের দুর্বল অবস্থা কারও অজানা নয়।
অথচ, UGC চেষ্টা করছে, কলেজ ইউনিভার্সিটিতে ব্লেন্ডেড লার্নিং অর্থাৎ মিশ্র শিক্ষা পদ্ধতিকে ধীরে ধীরে শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রথমে উচ্চশিক্ষায় টেকনিক্যাল কোর্সে ২০% অনলাইন পড়াশোনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। গতবছর ঠিক হয়, যে কোনো কোর্সে ৪০% পর্যন্ত অনলাইন করা হবে।
ব্লেন্ডেড লার্নিংয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে শিক্ষার বিষয়ে আপত্তির কিছু নেই। টেকনোলজিকে গ্রহন করতে অসুবিধে কি? ভিডিও লেকচার,পডকাস্ট, রেকর্ডিং... বেশ ভালোই তো!
কিন্তু এর জন্য যে পরিকাঠামো দরকার, তা কি আমাদের দেশের বড়সড় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলিরও আছে? যেখানে সরকার দেশবাসীর বিনামূল্যে টিকাকরণে হাত বাড়াতে অনিচ্ছুক ছিলেন, সেখানে শিক্ষার মত 'অপ্রয়োজনীয়' বিষয়ে কত খরচ করতে রাজী হবেন মহামান্য সরকার?
শিক্ষাখাতে টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর বদলে, সরকার চলতি ২০২১-২২ সালে সমগ্র শিক্ষাখাতে ৬০০০ কোটির বেশী টাকা কমিয়েছে।
দেশে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বর্তমানে ৩০ হাজারেরও বেশী শিক্ষক পদ শূন্য এবং ক্রমাগত এই সংখ্যাটা বাড়ছে, যা আর কখনওই পূরণ করা হবে না।
এবার একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাক। বিশ্বব্যাপী অনলাইন শিক্ষা বাজারের আয়তন, ২০১৯- এ ছিল ১৮৭.৮৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৫-এ তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩১৯.১৬৭ বিলিয়ন ডলারে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি এই বাজারের প্রধান ক্রেতা হয়ে উঠবে। বিকাশশীল দেশ হিসাবে ভারতের 'শিক্ষা ক্রেতা'র সংখ্যাটা সহজেই অনুমেয়। ফলে, দৈত্যাকার টেক করপোরেশনগুলো (tech-corporation) এই বাজারে বিপুল টাকা নিয়োগ করছে।
অর্থাৎ, বিষয়টা খুব স্পষ্ট, ধীরে ধীরে শিক্ষা ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ করতে পারলে, তবেই এসব অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপনার সন্তানের শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে। প্রচুর খরচ করে, ঘটিবাটি বেচে এসব এলিট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করবেন আপনার সন্তানকে।
ওদিকে সর্বসাধারণের জন্য 'গো-বিজ্ঞান' শিক্ষার চুষিকাঠি হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাদের শান্ত করা হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকদিন আগেই বেসরকারিকরণ হয়ে গেছে। সরকারি স্কুলে পড়াশুনা বহুবছর আগে থেকেই সেরকম হয়না। তার আসল কারণ সেরকম ভালো ছাত্র ওসব স্কুলে পড়তে যায় না, সরকারি স্কুলের teacher রা অনেক ভালো হওয়া সত্বেও।
পুঁথিগত শিক্ষা ওভাররেটেড। দেশে graduate দের unemployment highest.
https://www.statista.com/statistics/1001039/india-unemployment-rate-by-education-level/
এই জন্যই নিউ এডুকেশন পলিসি implement করা দরকার, যাতে কার্যকরী শিক্ষা দিয়ে যুবশক্তি কে কাজে লাগানো যায়। মুখস্ত বিদ্যাভিত্তিক নম্বর সর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে এবার।
সে ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোথায়? তার জন্য বরাদ্দ অর্থ কোথায়? শহর ছাড়িয়ে গ্রাম এলাকায় গেলেই চোখে পড়ে, সরকারি স্কুল ছাড়া গত্যন্তর নেই, সেই সব বাচ্চাদের কী হবে?