এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মায়াবী থ্রিলার 

    Sudeep Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ জুন ২০২১ | ১৭২৬ বার পঠিত
  • আজকাল গ্রুপে অনেকে ইংরেজি বইয়ের রেকামেন্ডেশন দিচ্ছে দেখে এই বইটা সাজেস্ট করার ইচ্ছে হল। অসম্ভব জনপ্রিয় বই, অনেকেই পড়ে থাকতে পারেন। না'হলে পড়ে দেখতে পারেন। টাইমলাইনে বছরখানেক আগে লিখেছিলাম, সেটাই কপি পেস্ট করে দিলাম।


    অ্যামাজন বেস্টসেলারের তালিকায় থাকা কোন বই হাতে পেলে আমি ভয়ে ভয়ে থাকি। কয়েকবার রাম ঠকান ঠকেছি, মাঝখানে বই ছেড়ে দেওয়া আমার নীতিবিরুদ্ধ, ফলে বইটা শেষ করতে গিয়ে রীতিমত নাকানি চোবানি খেতে হয়েছে। 


    এই বইটা নিয়েও আমার দ্বিধা কম ছিল না। আমাজন বেস্ট সেলার লিস্টে এক নম্বরে বিরাজ করছে, কিন্তু তেমন কোনও আলোচনা নেই কেন? ভয়ে ভয়ে বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম। আমার ইংরেজি ভাষাজ্ঞান খুবই সীমিত, লিটারারি স্টাইল নিয়ে বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে আমি ভ্যাবা গঙ্গারামের মতো বসে থাকি, কিছুই মাথায় ঢোকে না। সেই ভয়ও ছিল কম নয়!


    পড়ার পর বলতে বাধ্য হচ্ছি যে বইটা না পড়লে সত্যিই মিস করতাম। গত দু' এক বছরের মধ্যে পড়া বইগুলোতে এই বইটা আমাকে যেভাবে মুগ্ধ করেছে, অন্য কোন বই করেছে বলে মনে হয় না। আশ্চর্যের কথা হল, অনেকের মতে এটা থ্রিলার। যদি সত্যিই এটা থ্রিলার হয় তাহলে বলতে হয়,  এমন মায়া জড়ানো আর মনকাড়া থ্রিলার কস্মিনকালেও পড়িনি। আমি অবশ্য এটাকে থ্রিলার বলব না। মানুষের জীবনে প্রকৃতির কী মাহাত্ম্য, সেটাই এই কাহিনীর প্রধান আকর্ষণ।


    যাকগে, হোয়্যার দ্যা ক্রড্যাডস সিংগ একটা মেয়ের জীবনের গল্প। গল্প শুরু হয়েছে ১৯৫০ এর দশকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্শল্যান্ডে সমাজ বহির্ভূত একদল মানুষ বাস করত। এরকম একটা পরিবারের মেয়ে কিয়া। ভাগ্যের টানে একে একে প্রত্যেকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে থাকে। জলাভূমির অবসাদগ্রস্ত বিষাদময় জীবন সহ্য না করতে পেরে কিয়ার মা চলে যান। ভাই বোনরা চলে যায়, মদ্যপ বাবাও ছেড়ে চলে যায়। মার্শল্যান্ডের বিস্তীর্ণ জলাভূমির একাকিত্বে থেকে যায় বছর দশেকের একটি মেয়ে। একা। 


    সরকারি লোকেরা একা মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করতে চেষ্টা করেছে, হয়ত ফস্টার হোমে পাঠিয়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিল। কিন্তু কিয়ার জীবন যে বাঁধা ধরা গতে চলবে না, সেটা হয়ত অনেক আগেই ঠিক হয়েছিল। কিছুতেই সে সামনে আসতে চায় না। মানুষজন দেখলেই সে লুকিয়ে পড়ে, কিন্তু প্রকৃতির মাঝে সে সাবলীল, সহজ। একা থাকার কৌশল প্রকৃতি তাকে শিখিয়ে দিচ্ছে, একই সঙ্গে গভীর হচ্ছে মার্শল্যান্ডের সঙ্গে কিয়ার সম্পর্ক। পোকামাকড়, পাখি পাখালি, বন ও বনজদের সঙ্গে নিয়ে সে বড় হতে থাকে। ডেলিয়া যেভাবে এই সম্পর্ক বুনে তুলেছেন, তার কোন তুলনা নেই। অপূর্ব লেখনীর মাধ্যমে টুকরো টুকরো করে এমন একটা জগৎ তুলে ধরেছেন, যার সঙ্গে একাত্ম হতে কোন অসুবিধে হয় না। এক একটা লাইন বারবার পড়েছি। ভাষার ব্যবহার এতটাই প্রাণবন্ত যে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল এই অবাস্তব সারভাইভালের গল্প কী আসলে লেখিকার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা?


    এই ঘটনার প্রায় বারো চোদ্দ বছর পর সেই জলাভূমিতে একটা লাশ পাওয়া যায়। সন্দেহ যায় মার্শ গার্লের ওপর। এই কয়েক বছরে বাইরের জগতের কিছু মানুষের সঙ্গে কিয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, কিন্তু মোটের ওপর এই জংলী মেয়েকে নিয়ে সকলেই সন্দিহান। সমান্তরাল ভাবে কিয়ার বড় হওয়া আর হত্যা রহস্যের তদন্ত চলতে থাকে। 


    গত এক বছরে আমি তেরোটা দেশের পঞ্চাশ থেকে ষাটজন বন্ধুকে এই বইটা পড়ার পরামর্শ দিয়েছি বার বার। আমাজন বেস্টসেলার হলেও অনেকেই এই বইটা পড়েনি আগে। এর মধ্যে কয়েকজন ইতিমধ্যেই বইটা পড়ে ফেলেছে এবং অন্যান্য বন্ধু বান্ধবদের পড়তে বলেছে। 


    ডেলিয়া ওয়েন্স সত্তর বছর বয়সে এসে প্রথম উপন্যাস লিখেছেন এবং পর পর ছক্কা মেরেছেন। তিরিশ চল্লিশ বছর আগে থেকে লিখলে কোথায় পৌঁছে যেতেন সেটা ভেবে আর লাভ নেই। বরং প্রার্থনা করি অন্তত পক্ষে আরো একটা বই যেন ডেলিয়া লেখেন। বইটা নিয়ে সিনেমাও হচ্ছে, প্রধান ভূমিকায় 'নরম্যাল পিপল' খ্যাত অভিনেত্রী ডেইজি এডগার জোন্স। সিনেমা হলে অনেকেই হয়তো দেখবেন কিন্তু বইটা পড়বেন কিনা বলতে পারছি না। বরং আগেভাগে পড়ে নিন। ঠকবেন না।


    https://www.goodreads.com/book/show/36809135-where-the-crawdads-sing



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ইন্দ্রাণী | ০২ জুলাই ২০২১ ১৩:২১495535
  • এক সহকর্মীর কথায় বইটি পড়েছিলাম। ডেলিয়া ওয়েন্সের প্রথম উপন্যাস। উনি ওয়াইল্ডলাইফ সায়েন্টিস্ট- নন ফিকশন বই রয়েছে।
    কাহিনীতে একটি হত্যা রয়েছে, তার তদন্ত, কোর্ট রুম সবই আছে- কিন্তু একে থ্রিলার বলতে দ্বিধা করব। যদিও থ্রিলারের মত পরিচয় উন্মোচন রয়েছে উপন্যাসের একদম শেষে- তবে একটি নয় দুটি উন্মোচন - কিয়ার খুব কাছের মানুষও যে পরিচয় জানতে পারে নি; আর নিবিষ্ট পাঠকের কাছে অন্তত একটি পরিচয় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত রয়ে গিয়েছিল শেষটুকু পড়া অবধি।
    গল্পের টান একদম গোড়া থেকেই - ছোটো মেয়ের একলা বেঁচে থাকা -
    উপন্যাসের নাম, গল্পের ভাষা মায়াময়- কোনো কোনো লাইন যত্ন করে রেখে দেওয়ার। কবিতা এই বই এর চরিত্রের মত।

    একটা সময়ের পর ঘটনাবলী অনুমেয় মনে হচ্ছিল- আদালতের ঘটনাবলীও । দুটি সময়ের পাশাপাশি চলা ইদানিংকালে পড়া দুটি থ্রিলারকে মনে করাচ্ছিল- যেখানে অবশ্য বিভিন্ন সময়কাল দুর্দান্তভাবে ব্যবহার হয়েছিল- এই বইতে তা হয় নি। গারদে ছবি আঁকাও অন্য একটি থ্রিলারকে মনে করিয়েছে।

    সমাপ্তিতে আবার ফিরে এসেছে সেই মায়া এবং জিতে গিয়েছে। বইএর তিন চতুর্থাংশ পার করে যে কবিতা ছিল, সেটি আবার মনে এসেছে-
    'Sunsets are never simple.
    .......Sunsets are in disguise,
    Covering truths, covering lies.'

    গোটা কাহিনী জুড়ে এই অনুরণন আসি আসি করেও আসে নি বা এলেও আগাগোড়া বজায় থাকে নি। এইটি পাঠকের খেদ। তবু মায়া রহিয়া গেল ...

  • Sudeep Chatterjee | ০৩ জুলাই ২০২১ ১১:১৯495559
  • আমারও তাই মত। এটা থ্রিলার তো নয়ই। কবিতা বলাই ঠিক।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন