পড়লাম। এই মনুকে তদানীন্তন ভারতবর্ষে কতজন মানুষ মানতেন? তাঁকে ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠতম মান্য ক্যানন হিসেবে কারা তুলে ধরল? কখন? কেন? সেই তুলে ধরাটাকে কোন ভারতীয় 'মহাপুরুষ'রা এন্ডোর্স করলেন? কেন?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর চাইলাম। এখানেও দিতে পারেন বা পরের সংখ্যার লেখাতেও দিতে পারেন।
এলেবেলে,
ভাই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার জানা নেই, তাই আপনাকেই দিতে হবে। আপনার লেখা বইটি মন দিয়ে পড়েছি, (যদিও একটি পাঠ যথেষ্ট নয়)। তাতে খানিকটা আলোচনা আছে, এ'নিয়ে আপনি পড়েছেন এবং ভেবেছেন, তাই বলছি।
আমার এই লেখাটার ফোকাস খুব সীমিত। আজকাল ভারতের ধর্ম, দর্শন, সংস্কৃতি নিয়ে যে একতরফা সংকীর্ণ ও বিকৃত প্রচার চলছে তার বিরুদ্ধে মান্য ধার্মিক গ্রন্থ, পুরাণ ও দর্শনে বাস্তবে কী লেখা আছে তার একটা শর্ট মেড ইজি বের করা, ওইটুকুই। এটা আমার বুড়ো বয়সের একান্ত নিজস্ব প্রজেক্ট। ওপরে গিয়ে চিত্রগুপ্তকে জবাব দিতে হবে না?
তবু দুটো কথা বলার ছিল।
এক, মনু বিধবাবিবাহের পক্ষে বলেননি। বিদ্যাসাগর তাঁর সেই "নষ্টে মৃতে প্রব্রজিতে--" শ্লোক পরাশর থেকে নিয়েছিলেন । অর্থাৎ এখানে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল , মনু নয়-যাকে পান তাঁকে ধরে বিধবাবিবাহ যে শাস্ত্রসম্মত সেটা বলা। কিন্তু দু'মাস পরে বহুবিবাহ রোধের সময় ফের মনু।
দুই, আমরা যেমন মহাত্মা গান্ধীকে জাতির জনক বলে জানি। এই টাইটেলটি অবশ্যই কোন একজন ব্যক্তি শুরু করেছিলেন এবং কোন এক প্রভাবশালী গ্রুপ প্রচার করেন। আজ যদি আমরা, যারা এটা স্কুল থেকে পড়ে জেনে বড় হয়েছি তাঁদের যদি মহাত্মার নোয়াখালিতে যৌন পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা জান না অথচ বাপ ডাকছ - বলে তিরস্কার করেন তাহলে ন্যায় হবে কি? তেমনই বিদ্যাসাগর/রামমোহন তাঁদের সময়ের সমাজে সেই সময়ের প্রেজুডিস অনুযায়ী খানিকটে ছাড় পেতে পারেন বলে আমার ধারণা। এ নিয়ে পরে বিস্তৃত কথা বলা যাবে।
অসাধারন। কেন এতদিন জানি নি।
রঞ্জনদা,
কোথাও একটা মারাত্মক ভুল করছেন। মনুসংহিতা মনুর একার লেখা নয়।
এখানে অতি সামান্য কিছু আলোচনা আছে।
@সে,
মহাভারত রামায়ণ কোনটাই একা বেদব্যাস বা বাল্মীকির লেখা নয়। সবগুলোতেই কয়েক হাজার বছরের পলিমাটির চিহ্নগুলো স্পষ্ট। অনেকেই গোটা উত্তর কান্ডকে রামায়ণের প্রক্ষিপ্ত অংশ মনে করেন।
আমি ইউটিউবে আপনার প্রোগ্রামের বিদুষী ধর্মপালের সঠিক বিশ্লেষণ শুনেছি। দুহাজার বছরেরও আগে সংকলিত মানুষের অনেক হাত পড়েছে, কিছু পাল্টছে -- সেটাই স্বাভাবিক।
কিন্ত বর্তমান লেখাটি কোন টেক্সটভিত্তিক সোশিও অ্যানথ্রোপলজিক্যাল আলোচনা নয়। এটার ফোকাস খুব ছোট, তাহল ভারতীয সংস্কৃতির নামে একপেশে প্রচারের মোকাবিলার উদ্দেশ্যে সাধারণ পাঠককে মনুসংহিতার প্রকট ব্রাহ্মণ্যবাদী পিতৃতন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া। তারজন্য নথিবদ্ধ প্রচলিত শ্লোক নিয়ে কথা বলা পর্যাপ্ত মনে হয়।
"সংকলিত মনুসংহিতায় অনেক মানুষের হাত" হবে।
অটোকারেকশন !!
" কিন্ত বর্তমান লেখাটি কোন টেক্সটভিত্তিক সোশিও অ্যানথ্রোপলজিক্যাল আলোচনা নয়। এটার ফোকাস খুব ছোট, তাহল ভারতীয সংস্কৃতির নামে একপেশে প্রচারের মোকাবিলার উদ্দেশ্যে সাধারণ পাঠককে মনুসংহিতার প্রকট ব্রাহ্মণ্যবাদী পিতৃতন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া। তারজন্য নথিবদ্ধ প্রচলিত শ্লোক নিয়ে কথা বলা পর্যাপ্ত মনে হয়। " — বটেই তো। মনুসংহিতার গোড়ার দিকের শ্লোকগুলোও আসুক, সেগুলোর ফোকাস দেখছি না এই লেখায়। এটাও বলা দরকার নয় কি যে সময়ের সঙ্গে এতে সংযোজন হয়েছে পিতৃতন্ত্র ও ব্রাহ্মন্যবাদকে পোক্ত করতে। হ্যাঁ, মনু অবশ্যই শূদ্রের কোনও অধিকারে বিশ্বাস করতেন না। এটা ঠিক। কিন্তু গৌরী ধর্মপাল ও রোহিনী ধর্মপাল (বিদুষী শব্দটি ওঁর নাম নয়), এখন যে নতুন ধারায় কাজ করে চলেছেন সেটাই তো ধার্মিক আচারকে সঙ্গে রেখে চমৎকার কাজ।
আপনি বাংলায় লিখছেন, তাই ধরে নিচ্ছি আপনার পাঠক মূলতঃ বাঙালি। সেই বাঙালিদের একাংশ কিন্তু পরিবর্তিত আচারবিধিকে সমর্থন করছেন।
মনুসংহিতা কজন বাঙালি পড়েছেন বলা শক্ত, সংখ্যা আমার জানা নেই। কিন্তু মানুষ আধুনিক হচ্ছে তার প্রমাণ মহিলা পৌরোহিত্যকে তারা সাপোর্ট করছে। উপবীত ম্যান্ডেটরি নয়। একটি সিনেমাও হয়ে গেছে গেল বছর। "ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি"। এই বিষয়ের ওপরেই।
বঙ্গদেশের মানুষ মনুসংহিতার (শেষের অংশগুলির) নিয়মাবলী কতটা জানে সেটা সমীক্ষানির্ভর কিন্তু নতুন ভাবে বৈদিক বিবাহ অনুষ্ঠান, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের প্রচলন যে হচ্ছে সেটা আশাব্যাঞ্জক ঠেকছে।
সত্যিই ভাল খবর।
এই নতুনভাবে প্রচলিত 'বৈদিক বিবাহ অনুষ্ঠান' নিয়ে বিস্তারে জানতে আগ্রহী। খুবই ভালো একটা ব্যাপার এটা।
ঐতো ওপরে লিংক দিয়েছি বৈদিক বিবাহের ব্যাপারে। আলোচনা ও কিছু তথ্য আছে।
কিন্তু বাংলার মানুষ যেমন মনু জানেন না, তেমনই বেদও বিন্দুবিসর্গ জানেন না। সেই বাঙালি তাহলে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করবেন কেন?
করেন বুঝি?
'বৈদিক বিবাহ অনুষ্ঠান' নাম কেন? কোন মন্ত্র সেই অনুষ্ঠানে উচ্চারিত হয়?
আপনি আমার দেয়া লিংকটা দয়া করে দেখে নিন।
অবশ্যই দেখব। যাঁর ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে তিনি আমার পরিচিত ঋকের জননী। যাদবপুরের সংস্কৃতের গেস্ট লেকচারার নন্দিনী ভৌমিকও এই কাজটা করে থাকেন। আগে এক ঘন্টার ভিডিওটা শুনি, পরে আপত্তি থাকলে লিখব।
@সে,
মনে হোল আমার অবস্থানটি আর একটু স্পষ্ট করা দরকার।
আপনার আপত্তিগুলোঃ
১ "মনুসংহিতার গোড়ার দিকের শ্লোকগুলোও আসুক, সেগুলোর ফোকাস দেখছি না এই লেখায়"।
২ " এটাও বলা দরকার নয় কি যে সময়ের সঙ্গে এতে সংযোজন হয়েছে পিতৃতন্ত্র ও ব্রাহ্মন্যবাদকে পোক্ত করতে"।
৩ বঙ্গদেশের মানুষ মনুসংহিতার (শেষের অংশগুলির) নিয়মাবলী কতটা জানে সেটা সমীক্ষানির্ভর কিন্তু নতুন ভাবে বৈদিক বিবাহ অনুষ্ঠান, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের প্রচলন যে হচ্ছে সেটা আশাব্যাঞ্জক ঠেকছে।
আমার উত্তরঃ
১ গোড়ার দিকের শ্লোক? আমার আগের কিস্তিটায় --মনুসংহিতায় কী আছে (১)-- স্পষ্ট করে বারোটা অধ্যায়ের নাম এবং তার বিষয়বস্তুগুলো লিস্টি করে দেয়া আছে। তার ছোট একটা অংশে নারী নিয়ে কথাবার্তা। এই কিস্তিটা কেবল নারী নিয়ে যাতে অধ্যায় ১, ২, ৩, ৫, ৭, এবং ৯ থেকে নারী সম্বন্ধিত শ্লোক কোট করা হয়েছে। অর্থাৎ মনু যে যে অধ্যায়ে নারী নিয়ে বিধান দিয়েছেন।
অধ্যায় শ্লোকের মোট সংখ্যা
১ ১
২ ৩
৩ ৩৩
৫ ৯
৭ ৩
৮ ৩
৯ ২২
আপনি সম্ভবতঃ আপনার উল্লিখিত ওয়েবনারে রোহিণী ধর্মপালের একটি উক্তিটিকে ভিত্তি করেছেন --যে মনু তৃতীয় অধ্যায়ে নারীদের সম্বন্ধে এত ভাল কথা বলেছেন তিনি পরে নবম অধ্যায়ে মেয়েদের নিয়ে এত নোংরা কথা কেন বলবেন? এটা পরে অন্য কেউ করেছেন?
ওনার বৈদিক সাহিত্যে পান্ডিত্যের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে সবিনয়ে বলছি -- আমি সহমত নই। উনি এবং অনেকেই তৃতীয় অধ্যায়ের ওই একটি শ্লোক “যত্র নার্য্যন্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ।
যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ”।।(৩/৫৬)
নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু গোটা তৃতীয় অধ্যায়ে আর একটি শ্লোকও নেই- এক'থাটাও আমার লেখায় আছে। উপরের সূচী দেখুন-- নবম অধ্যায়ে ২২ শ্লোক উদ্ধৃত করেছি, কিন্তু ওঁর প্রশংসিত তৃতীয় অধ্যায় থেকেই ৩৩টি শ্লোক, পঞ্চম অধ্যায় থেকে ৯ টি শ্লোক। অর্থাৎ আমি নারী নিয়ে মনু কোন ভাল ভাল কথা বলেছেন, আমি তার উল্লেখ করিনি এমন নয়।
উনি যা বলেননি তা আমি কী করে আনব?
কাজেই আপনার আপত্তিটি বোধহয় তাড়াহুড়োর ফল।
২ না, দরকার নেই। দু'আড়াই হাজার বছর আগের গ্রন্থে অনেকের হাত পড়বে সেতো স্বাভাবিক। কাশীদাসী মহাভারতের ছোট অংশটা কাশীদাসের নিজের লেখা, বাকিটা তাঁর ভাইপো নন্দরাম দাসের। উনি বিরাটপর্ব অব্দি পৌঁছে মারা যান।
'আদি সভা-বন-বিরাটের কতদূর,
তাঁহা রচি কাশীদাস গেলা স্বর্গপুর"।
এবং অন্তিম ইচ্ছাঃ "আজ্ঞা দেহ আমি এবে যাই পরলোকে,
রচিতে নাপালাম পোথা পাই বড় শোকে।
আশীর্বাদ করি বাপু বলি হে তোমারে,
পান্ডব চরিত্র বাপু রচিবা আদরে।
তাঁর আজ্ঞা শিরে ধরি ভাবি রাধাশ্যাম,
দ্রোণপর্ব ভারত রচিল নন্দরাম"।।
দেখছেন তো, বড় অংশটাই উনি লিখে যেতে পারেননি। তবু ওটা কাশীদাসী মহাভারতই বলা হয়, বাকি টেক্সচুয়াল বিশ্লেষণ মহাভারত পাঠে আনন্দলাভের বিষয় নয়।
ওয়েবনারে আপনার কথা ধরেই বলি। আপনি এগুলোকে আইন বা সংবিধানে সংশোধনের সঙ্গে সঠিক ভাবে তুলনা করেছেন। তাই যখন কোর্টে আইনের প্রয়োগ হবে তখন তো সংশোধিত রূপ নিয়েই কথা হবে, তাই না?
এছাড়া আমি অধিকাংশ কোট তৃতীয় অধ্যায় থেকেই দিয়েছি। আপনার কথার মানে হয় অরিজিনাল মনুতে ব্রাহ্মণবাদ বা নারীর অবমাননা কম ছিল, আমার তা মনে হয়না। তিন থেকে পাঁচ অধ্যায়ের শ্লোকগুলোই তার প্রমাণ ।
৩ দেখুন, রোহিণী ধর্মপালের বক্তব্য এবং ওঁরা যা করছেণ তা হোল বৈদিক মতে বিবাহ, মনুমতে নয়। বৈদিক মতে কি ছিল সেটা তো আমার প্রবন্ধের বিষয় নয়। আমার পুরো ফোকাস মনুর বিধানে নারীর স্থান।নারী পৌরোহিত্যে পিতৃতন্ত্রে আঘাত পড়ে তাই সমর্থন যোগ্য। মনুতে কোথাও নারীর পৌরোহিত্যের সমর্থন নেই।
কিন্তু নারী পৌরোহিত্য পিতৃতন্ত্রে এবং গোঁড়ামিতে আঘাত হানে তাই আমার পূর্ণ সমর্থন।
আমার কাছে আশাব্যঞ্জক হোল যে ক্রমশঃ বিয়ে ও পারলৌকিক ক্রিয়াতে ধর্মের এবং পুরোহিতের ভূমিকা হ্রাস পাচ্ছে। এটা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে।
কাল রাতে পুরো ভিডিওটা শুনলাম। ঋকের দৌলতে ফেসবুকে আগেই দেখেছি কিন্তু সেখানে কিছু লিখিনি ইচ্ছে করেই।
সঞ্চালক মনু জানেন না সেটা স্পষ্ট। যোশিতা ভুল জানেন। তিনটে ভুল তিনি গোটা ভিডিওটায় উচ্চারণ করছেন। ১. স্ত্রীধনের কথা বলেছেন ঠিকই অথচ মনু যে একাধিক শ্লোকে বিধবা নারীর (স্ত্রী বা কন্যা) স্বামী ও পিতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার বিষয়ে দৃঢ় উচ্চারণ করেছেন, সেটা তিনি জানেন না। ২. ব্রাহ্মবিবাহকে আলাদা বলেছেন অথচ বিবাহে শালগ্রাম শিলার উপস্থিতি নিয়ে দেবেন ঠাকুরের সঙ্গে কেশব সেনের গণ্ডগোলের বিষয়টাও জানেন না। ৩. মনুকে হাস্যকরভাবে সংবিধান ও সেই সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছেন। কিন্তু মনু যে আইন নন, আচরণবিধি বা কোড অফ কনডাক্ট মাত্র - এই বেসিকটাই তিনি জানেন না।
রোহিনী ধর্মপাল যে মন্ত্রের কথা বলেছেন তার ভাষা বাংলা ও সংস্কৃত (ক্ষেত্রবিশেষে ইংরেজিও)। সেটা বৈদিক শ্লোক হওয়ারই কথা কারণ গোটা সাক্ষাৎকারে তিনি যে একটিমাত্র শ্লোক বলেছেন, সেটি 'মধুবাতা ঋতায়তে'। এছাড়াও তিনি যে ঋগ্বেদের মন্ত্র উচ্চারণ করে থাকেন, সেটা নিজে মুখেই জানিয়েছেন।
তাহলে বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে এইরকম - বিবাহের ক্ষেত্রে আমরা স্মৃতি থেকে শ্রুতির উজানের দিকে এগোচ্ছি মাত্র। সেটা ভালো কি মন্দ তা আলাদা আলোচনা দাবি করে। উপরন্তু তিনি 'ঋষিষা'-র উল্লেখ করেছেন অথচ সুকুমারী ভট্টচার্য দেখিয়েছেন এই ঋষিষাদের অস্তিত্ব বৈদিক যুগেই কমতে শুরু করে।
বাঙালি তার বিয়ের অনুষ্ঠানটাকে ইদানীং অ্যাপার্ট ফ্রম আদার্স দেখানোর চেষ্টা করছে হুতোম কথিত 'এই এক নতুন'-এর মতো। বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাজ বেঙ্গলে! আগে কেউ পুরোহিতকে পাত্তাও দিত না বিয়েবাড়িতে, সব মিলিয়ে সমবেত আনন্দ করাটাই বড় ছিল। ইদানীং পুরোহিত আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন। এই যা পার্থক্য। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিকতার শিকড় অত পলকা নয় যে সামান্য একদিনে রিচ্যুয়ালের পরিবর্তনে তা ভেঙেচুরে পড়বে।
আমার কন্যা যে বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে, সেখানে বিগত প্রায় দশ বছর ধরে স্কুলেরই সংস্কৃতের দিদিমণি স্কুলের সরস্বতী পুজোয় পৌরোহিত্য করে আসছেন। স্মার্ত রঘুনন্দনের জন্ম ও কর্মভুমিতে তাই নিয়ে সামান্যতম গণ্ডগোলও হয়নি। কিন্তু তাঁর কথা কলকাতা তথা বাংলার অন্য অঞ্চলের মানুষরা জানেন কি না জানি না।
এখানে প্রথমে দিলাম নন্দিনী ভৌমিকের সাক্ষাৎকার।
আর এই থাকল তাঁর পরিচালিত বিবাহের অনুষ্ঠানের ভিডিও
অবশ্য এত সবের পরেও জানতে পারলাম না কেন বাঙালি বেদের শরণাপন্ন হবেন!!!
যোশিতা যোষিতা
ইরিব্বাস! বিশ্বেন্দুদার পুরনো লেখা ভেসে উঠেছে। ২০১৩-তে গুরু খায় না মাথায় মাখে জানতাম না। বিশ্বেন্দুদা তারও প্রায় পাঁচ বছর পরেও আমার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিলেন। কিন্তু এলেবেলে নামক শুয়োরটি ঠিক বিশ্বেন্দুদা নামক কচুটাকে চিনে ফেলেছে গো! ম্যাক্স ম্যুলার তু তো গয়া রে!!
না রঞ্জনদা, "তাড়াহুড়োর ফল" নয়। তবে পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে যাঁরা গলা ফাটান, তাঁরাও পিতৃতান্ত্রিক এটাই আলোচনাগুলো পড়লে প্রকাশ পাচ্ছে। মনুসংহিতার নারী বিষয়ক অংশের সমালোচনা করলেই পিতৃতান্ত্রিকতার বাইরে বের হওয়া যায় না সেটা আরও একবার প্রমাণ হলো।
আলোচনা আরও হোক, তবে আর ফুট কাটব না। লাভ নেই।
ঠিক। বরং ২৩.১৫-তে করা প্রশ্নের উত্তরে ২৩.১৭-তে উত্তর দেওয়া ঢের সুবিধাজনক! এবং তার পরে দীর্ঘ মন্তব্যের ভিত্তিতে ফুট না কাটার সিদ্ধান্তটিও!!
সে
"তবে পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে যাঁরা গলা ফাটান, তাঁরাও পিতৃতান্ত্রিক এটাই আলোচনাগুলো পড়লে প্রকাশ পাচ্ছে।"
-- এ তো সাক্ষ্য বা যুক্তি ছাড়াই রায় দেয়া।
১ প্রথম দিকের শ্লোক বাদ দিয়েছি? দেখালাম, দিইনি। দেখালাম নারী সম্বন্ধে মনু ওই একটি ছাড়া আর কোনও সম্মানজনক কথা বলে যাননি। বরং ওই তৃতীয় অধ্যায় থেকেই সবচেয়ে বেশি কোট করেছি। আমি যদি ভুল হই তো কয়েকটা বা অন্ততঃ দুটো উদাহরণ দিন যে আমি মনুস্মৃতির প্রথম দিকের নারীর প্রশংসাসূচক শ্লোক উল্লেখ করিনি।
২ রোহিণী ধর্মপাল বৈদিক পদ্ধতিতে বিয়ে করান, ভালো কথা। তার সঙ্গে এই মনুকেন্দ্রিক লেখাটির সম্পর্ক কী? বেদের পরের দিকে এসেছে উপনিষদ। তার পরে এসেছে দর্শনের সূত্রগ্রন্থগুলো।
বেদান্তদর্শনের ব্রহ্মসূত্রের শাংকরভাষ্য দেখুন।
জগত মিথ্যা বলা শংকরাচার্যও ব্রহ্মসূত্রের গোড়াতেই অধিকার প্রশ্নে স্পষ্ট করছেন মনুকে মানতে হবে। ফলে যাদের উপনয়ন হয়নি যারা যজ্ঞোপবীত ধারণ করেনা তারা বেদ ও উপনিষদ পাঠে অধিকারী নয়।এমনকি বেদপাঠের অপরাধে শূদ্রের কানে গরম ইত্যাদি ঢেলে দেবার শাস্তিরও অনুমোদন করছেন।
৩ যে কোন রোগ বা অসমব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আগে স্বীকার করতে হবে যে রোগটি বিদ্যমান। চাপা দিয়ে রাখলে পরে বড় ঘা ফুটে বেরোয়। তাই পিতৃতন্ত্রের বিরোধিতা করতে হলে আগে তার সমস্ত কংক্রিট এক্সপ্রেশনের দিকে আঙুল তুলতে হবে।
একজন নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বা একজন মহিলা রাষ্ট্রপতি প্রতিভা দেবীসিং দিয়ে যেমন ভারতে নারীর ক্ষমতায়নের সিদ্ধান্ত টানা ভুল হবে তেমনই বিশাল উপনিষদ সম্ভারে কেবল গার্গী, মৈত্রেয়ী, অপাল, বিশ্বাবারা, ঘোষার উদাহরণ দিয়ে বৈদিক যুগে নারীদের দারুণ সম্মান ছিল ভাবাটাও একরকম আত্মপ্রবঞ্চনা হবে।
রোহিণী ধর্মপাল আপনার ওয়েবনারে বৃহদারণ্যক উপনিষদ থেকে যে যাজ্ঞবল্ক্য ও গার্গীর দুটো ডিবেটের উদাহরণ দিলেন সেই গ্রন্থেরই পঞ্চম অধ্যায় দেখুন। যেখানে বলা হচ্ছে নারীকে শয্যায় নিয়ে আসার জন্যে পুরুষ আগে তাঁকে মিষ্টবাক্য উপহার বসন আভরণ দিয়ে রাজি করাবেন। তাতে উনি ' নো মিন্স নো' বলে দিলে হাত বা লাঠি দিয়ে প্রহার করে বশে আনতে হবে। মানা হয় গোটা বৃহদারণ্যক উপনিষদ যাজ্ঞবল্ক্য রচনা করেছিলেন।
কাজেই পুরো বৃহদারণ্যক একসঙ্গে দেখলে আমরা রোহিণী ধর্মপালের বলা গ্লোরিফায়েড ছবির বদলে অন্যরকম চিত্র পাচ্ছি।
আমার শেষ কথাঃ কোন আলোচনায় বা বিতর্কে কথাবার্তাগুলো বিষয় বা আলোচ্য বিন্দুতে সীমিত থাকাই কাম্য। বক্তার প্রতি বাণ নিক্ষেপ কি কোন আলোচনাকে এগোতে সাহায্য করে?
রঞ্জন অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। আমাদের মত লোক যারা সনাতন দর্শন আর সংস্কৃতের ভয়ে মূল টেক্সটের কাছে ঘেঁষতে পারি না তাদের কিঞ্চিৎ সাহায্য করবে এটা। আপনার বুড়ো বয়সের প্রজেক্ট বেঁচে থাক। ...
তবে মহিলা পৌরহিত্য ( কথাটা এখানে উঠেছে বলেই বলছি ) নিয়ে প্রশ্ন আছে মনে। ধর্ম ভাল বুঝি না তাই জানা নেই যে জন্ম- বিবাহ-মৃত্যুর জন্য মিডলম্যান লাগবে কেন! তাই মিডলম্যান নারী হলেন কি পুরুষ হলেন তাতে কতটা পিতৃতান্ত্রিকতার অদল-বদল হয় তা বুঝি না । যদি ঈশ্বর থাকেনই , তাহলেও নিজের বক্তব্য নিজের মুখে সোজা সাপটা বলতে পারব না? আর মহিলা পুরোহিতও আমি আমার স্কুলে চিরকালই দেখে এসেছি। তাই সেটা যে বিরাট একটা বিপ্লব কিছু তাও মনে হয় নি কোনদিনই বরং পুরোহিত ব্যাপারটাই গন্ডগোলের লেগেছে .
আর একটা মজার গল্প বলার লোভ সামলাতে পারছি না। সম্প্রতি একটি বিয়ে হয় "বৈদিক রীতি" অনুসরণ করে। এবং বিয়ে দিয়ে মহিলা পুরোহিতের দল বেরিয়ে যাওয়ার পর পুরোহিত এসে আবার "হিন্দু মতে" বিয়ে দেন, কারণ ছেলের বাড়ি এইসব ঢপের বিয়ে মানে না । কাজেই নতুন প্রথা কতটা সামাজিক প্রথা ভাঙছে আর সালংকারা , সুশোভিতা , সুশিক্ষিতা ব্যক্তিত্বশালিনী মহিলার দল কতটা ইভেন্ট বিউটিফিকেশনের পার্ট হচ্ছে সেটাও ভাবার।
স্বাতী রায়,
আপনার সঙ্গে পুরোপুরি সহমত। আমি 'সে' ম্যাডামকে প্রথম বক্তব্যেই বলেছি যে আমি খুশি যে ক্রমশঃ বিয়ে এবং পারলৌকিক কাজে ক্রমশঃ পুরোহিতের ভূমিকা শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এগুলো ব্যক্তিমানুষের একান্ত ব্যক্তিগত অনুভুতির জায়গা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। তাতে উনি রেগে গেলেন।
আরেকটা কথা বলে দিই। এ লেখাগুলো পড়ে ভাববেন না আমি আদৌ সংস্কৃত জানি বা ওই টেক্সটগুলো সংস্কৃতে পড়েছি। আমার বিদ্যে হায়ার সেকেন্ডারির সময় মুখস্থ করে কোনরকমে সংস্কৃতের পেপার ক্লিয়ার করা এবং তারপর ভুলে যাওয়া। আমি মূল সংস্কৃত শ্লোকের পাশাপাশি বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি টীকা মিলিয়ে পড়ে লিখছি।
আমার প্রোজেক্টের লক্ষ্য হোল সংস্কৃত ভাষার ভয় দেখিয়ে আজকাল যে ঐতিহ্যের নামে একতরফা দক্ষিণপন্থী ব্যাখ্যা হচ্ছে তার বিরোধিতা করা, জায়গা না ছেড়ে দেয়া।
এর তৃতীয় ভাগের পর আসবে শংকরাচার্যের 'মায়াবাদ বা কেবল 'ব্রহ্ম সত্য জগত মিথ্যা ' দর্শনের কাটাছেঁড়া।