মলমাস প্রসঙ্গে একটা আলোচনায় ফেসবুকে একটা গ্রুপে এইটা লিখেছিলাম, এখানেও থাক।
আমি জ্যোতিষের কিছু বুঝি না, বোঝার দরকারও মনে করি না। কিন্তু মল মাসের সাথে জ্যোতিষের কিছু নেই, নিছক ক্যালেন্ডারের হিসেবের ম্যাথেমাটিক্স। যদিও অঙ্কটা সরল নয়, কিন্তু কনসেপ্টটা খুবই সরল। আর এক শতাব্দীতে একবার আসে এরকম মোটেই না, গড়ে এক দশকের একটু বেশিতে একটা করে হওয়ার কথা, এক্স্যাক্ট হিসেবটা ভুলে গেছি।
যাই হোক, কনসেপ্টে আসি। ক্যালেন্ডার বানানোর চিরকালীন সমস্যা পৃথিবীর বার্ষিক গতি, আহ্নিক গতি, চাঁদের চক্র আর সূর্যের রাশি সংক্রমণের গতিগুলোর বিদঘুটে গরমিল। দিন হয় আহ্নিক গতির হিসেবে, আর একটা সৌর বছর ( যা বার্ষিক গতির হিসেব ) পূর্ণ সংখ্যক দিনে নয়। তাই কোন একটা দিনের মাঝখানে ( মাঝখানটাও প্রতি বছর আলাদা আলাদা সময়, নইলে দিনের মাঝখান কথাটার কোন মানে নেই, দুপুর দুটোও দিনের যেমন মাঝখান, রাত বারোটাও দিনের ততখানিই মাঝখান ) বছর শেষ হচ্ছে, এমন বিদঘুটে জিনিস না করতে চাইলে এই সমস্যা কোনও একটা ভাবে সমাধান করতে হবে। মানুষের ইতিহাসে সব সভ্যতা যারা ক্যালেন্ডার বানিয়েছে, তারা এইটা এক এক ভাবে সমাধান করেছে।
ইংরেজি ক্যালেন্ডার সমাধান করে চার বছর অন্তর লিপ ইয়ার এ একটা দিন জুড়ে, তাতে আবার উল্টোদিকে ভুল হয়, তাই ১০০ দিয়ে ভাগ যাওয়া সালে সেইটা নেই, তাতেও আবার তার উল্টোদিকে একটু ভুল হয়, তাই ৪০০ দিয়ে ভাগ গেলে আবার এক্সট্রা দিনটা আছে।
আমাদের ক্যালেন্ডারে ওইভাবে সমাধান করা শক্ত, কারণ আমাদের ক্যালেন্ডার এমনিই পৃথিবীর জটিলতম। চাঁদ আর সূর্য দুইয়ের হিসেব রাখে বলে। প্রসঙ্গত সেই গরমিলগুলো বলে নি। পৃথিবী সূর্যকে একপাক ঘুরে আসার পথে সূর্যের পিছনে বারোটা নক্ষত্রমণ্ডলীকে দেখা যায়, যাদের এক একটাকে রাশি আর সবকটাকে একসাথে রাশিচক্র বলে। এক সৌর মাস হচ্ছে সূর্যের এক এক রাশিতে থাকার সময়। সূর্যের এক রাশি থেকে আর এক রাশিতে যাওয়াকে বলে সংক্রমণ, দিনটাকে সংক্রান্তি। তাই সৌর মাস হল এক সংক্রান্তি থেকে পরেরটা। এবার সবকটা সৌরমাস সমান নয়, তবে কাছাকাছি। এবারে চাঁদ পৃথিবীকে একপাক ঘুরে আসতে যা সময় নেয় সেটাও পূর্ণ সংখ্যক দিন নয়, আবার একটা গোটা সৌর মাসও নয়। তাই চান্দ্রমাস ( মানে এক অমাবস্যা থেকে পরেরটা, বা এক পূর্ণিমা থেকে পরেরটা ) আর সৌরমাসেরও গরমিল আছে, আর এক সৌর বছরে যেখানে বারোটা সৌরমাস হতে বাধ্য, বাই ডেফিনিশন, সেখানে এক সৌর বছরে চান্দ্রমাসের সংখ্যা বারোটার বেশি, আবার পূর্ণসংখ্যা নয় সেটাও।
এই হিসেবের গরমিলটা মেলাতেই মলমাস ( মিলিয়ে দেওয়ার মাস থেকে এই নাম কিনা ভাষাতাত্ত্বিকরা বলতে পারবেন হয়ত), সিমপ্লি লিপ মান্থ আসলে। কখন হয়? যখন একটা গোটা চান্দ্র মাস পুরোটা একটা সৌর মাসের মধ্যেই শুরু ও শেষ হয়। তাই কোন একটা বার পাঁচটা আছে কিনা বিবেচ্য নয় ( যদিও থাকে, কিন্তু রবিবারই হতে হবে এমন না), বিবেচ্য হচ্ছে দুটো পূর্ণিমা বা দুটো অমাবস্যা একটাই সৌরমাসে আছে কিনা। থাকলে সেই মাসটা গোনা হয়না, নইলে গরমিলটা প্রতি বছর জমা হতে হতে একসময় পৌষমাসে ৪০ডিগ্রি গরম পেতাম আর ইংরেজি মে মাস চলত।
তাতেও ভুল থেকে গেছে, সেইটা যৎসামান্য হলেও সেইটা জমা হতে হতে এতগুলো শতাব্দীতে অনেকটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বাংলা ক্যালেন্ডার বা পাঁজি যবে সংক্রান্তি বলে, আকাশে সত্যি সত্যি সূর্যের সেই বছরের সেই সংক্রমণটা আসলে ২১ দিন মত আগে হয়ে গেছে। এক্স্যাক্ট ভুলের পরিমাণদুটো বার করলে এই পাঁজির ব্যবস্থাটা কতদিন সংস্কার হয়নিটাও বার করা যায়।
ভালো লাগল৷ দিন পাঁচেক আগে আমিও লিখেছিলাম এটা নিয়ে: মহালয়া আর দুর্গাপুজোঃ গাঁটছড়া ভাঙার গপ্পো৷
ধন্যবাদ অতনুবাবু। আপনার মহানগরে লেখাটা পড়লাম। বেশ ভাল হয়েছে। প্রসঙ্গত আমারও লেখার মূল তথ্যসূত্র পলাশ বরণ পালের লেখালিখিই।
যাঁরা খেরোর খাতায় নতুন লেখালিখি করছেন, গুরুচণ্ডা৯-র টেকনিকাল ফীচারগুলো তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা করার জন্য আগামী শনিবার ভারতীয় সময় রাত ৮-১০টা আমরা একটা ওয়েবিনার করছি গুগল মীট-এ। ইচ্ছে আছে আগামী কয়েক সপ্তাহ জুড়ে প্রতি শনিবার ঐ নির্দিষ্ট সময়ে ওয়েবিনার করার। আপনাদের কী কী অসুবিধে হচ্ছে লিখতে বা একটা সামাজিক মাধ্যম হিসেবে গুরুচণ্ডালির পূর্ণ স্দ্ব্যবহার করতে, সেটাও আমরা নোট করব, যাতে এটাকে আরও উন্নত করা যায়, প্রযুক্তিগতভাবে। সম্ভব হলে থাকবেন। শনিবার রাত আটটায় নিচের লিংকে ক্লিক করেই মীটিং এ জয়েন করা যাবে।