বৃত্তরৈখিক - পর্ব ৩ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৯ আগস্ট ২০২০ | ২১৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
জয়মালিকা সেনের কর্মকাণ্ডের ঠিক ঠিক মতো সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যাখ্যা খুঁজে পান না সোমেশ্বর। শুনেছেন, শুরু হয়েছিলো বনসৃজনের পরিকল্পনা নিয়ে। পাথুরে, ঊষর পাহাড়িয়া জমিতে বহু গাছ পুঁতেছিলেন তিনি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধুবান্ধব, এবং বহু যত্নে বাঁচিয়েছিলেন তাদের, বাড়িয়েও ছিলেন। কত গাছ? হদিশ করা মুশকিল। হয়তো এক লক্ষ, পাঁচ লক্ষও হয়তো বা। এ সবই শোনা কথা। জয়মালিকা নিজেই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যার কথা বলেন। কিন্তু আসলে সংখ্যাটি অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক। জমি এবং প্রকৃতির চরিত্র অনেকটাই বদলিয়ে দেবার মতো যথেষ্ট সংখ্যক বৃক্ষরোপণ যে হয়েছিলো, সে বিষয়ে তো সন্দেহ নেই। আজ এখানে ধান ফলে, প্রতিটি মরশুমে শাক-সবজিও ফলানো হয়। বড় বড় ফলের গাছ, আম-কাঁঠাল-আতা-গাবের অভাব নেই। ফুল ফোটে হাজারো রকমের, বসন্তে অশোক-পলাশের লাল, নীল পাহাড়ের পটে অপরূপ শোভা ধরে। গো পালন হয়, প্রায় পঁয়ত্রিশ-চল্লিশটা ষাঁড়-গোরু-মোষের সংসার।
বৃত্তরৈখিক (১২) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২০ নভেম্বর ২০২০ | ৩১৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
মধ্য হাওড়ার এই অঞ্চলটিতে এক কামরার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার অনেক। বেশির ভাগই কিঙ্করদের মতো দেশভাগতাড়িত, কিন্তু কিছু কিছু এমন পরিবারও আছে যারা হাওড়া-হুগলি-মেদনিপুরের গ্রাম থেকে আসা। এদের অল্প-স্বল্প জমিজমা আছে, এক সময় হয়তো বেশিই ছিল, কমতে কমতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে জমির আয়ে সংসার এখন আর চলবার মতো নয়। গ্রামের এই নিম্নবিত্ত ভদ্রলোকশ্রেণীর মানুষরা এখন শহরে ছোটখাটো চাকরি-বাকরি করে, তাদের আর্থিক সামর্থে ছোট কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ বাড়ি বা অধুনা গজিয়ে-ওঠা কোন ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া চলে না, অতএব বাঙাল-রিফিউজিদের সঙ্গে ঝগড়া-সমঝোতা করে ভদ্রলোকদের জন্যে চিহ্ণিত নাগরিক দোতলা-তিনতলা পাকাবস্তিই এদেরও আবাসস্থল।
বৃত্তরৈখিক (১৪) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১২ ডিসেম্বর ২০২০ | ২৮৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সময় জয়মালিকার কাছে বড় দামি। দু বছর তো এই কলেজেই সময় নষ্ট হয়ে গেলো তার, বিকাশদার কথা শুনে। শুনছে বিকাশদাও নাকি ছেড়ে দেবে, সরকারি কলেজে জয়েন করবে নাকি। কিন্তু জয়মালিকার তো সময় নেই, সে অপেক্ষা করতে চায় না। সে শুধু চায় আরও বেশি বেশি লোক তার ছবি দেখুক। মিসেস পাণ্ডে সেই স্কুলের সময়েই বলেছিলেন সে আঁকে অন্য সবায়ের মতো নয়, ঠিক নিজের মতো কোরে। তার মানে তার নিজের স্টাইল তো তৈরি হয়েই গেছে, তাহলে আর কেন কলেজে যাওয়া !
জয়মালিকা ভেবেছিলো অন্তত একজন তাকে ঠিক ঠিক বুঝবে। তাই শক্তিদার সমর্থন চেয়েছিলো ও। কিন্তু শক্তিদা, শক্তিদার মতো মানুষও, ঐ বিকাশদার মতোই কথা বললো। সব আর্টেই অনুশীলন করতে হয় রে জয়ি, কঠোর অনুশীলন, বলেছিলো শক্তিদা। কিন্তু কেন? কেন সবাইকেই অনুশীলন করতে হবে?
বৃত্তরৈখিক (১৫) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ | ২০২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কনেপক্ষ এসে পৌঁছোলো যখন, দুপুর তখন গড়িয়ে গেছে। সাত-আট জন লোক। প্রথমে সীরিয়স মীটিং, তারপর খাওয়া-দাওয়া, হাঁড়িয়া পান আকণ্ঠ; অনেক রাত পর্যন্ত সেদিন তিরিশটা বাড়ির ছোট গ্রামটার আবালবৃদ্ধবনিতা জেগে রইলো। পরের দিন সকালে দুটো সাদা মোরগ সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার সময় কনেপক্ষ জানিয়ে গেলো বিয়ে পাকা, দিনও ঠিক হয়ে গেলো। মাস দুয়েক পরের এক শুভদিন !
বৃত্তরৈখিক (২৯) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১০ এপ্রিল ২০২১ | ২৩৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
অস্থির বোধ করে জয়মালিকা। কলকাতা শহরে তার কোম্পানীর গেস্ট হাউজে একা একা বিছানায় শুয়ে গত কয়েক বছরের নানা ঘটনার কথা মনে আসে তার। যে এগজিবিশন আজ তার এত পরিচিতি এনে দিয়েছে, কলকাতার নানা খবরের কাগজ আর পত্রিকা তাকে নিয়ে এতো আলোচনা করেছে যে এগজিবিশনের ফলে, কয়েক বছর আগে সেই এগজিবিশনেরই একটা ছোট সংস্করণ এই খোদ কলকাতা শহরেই তো অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। কেউ আসেনি সেদিন দেখতে, একটা লাইনও আলোচনা হয়নি কোথাও ! কী হলো এর মধ্যে, তফাৎটা কোথায় ! নিলীনের বই? কিন্তু, কতোটা আলোচনা হয়েছে নিলীনের বইকে নিয়ে? নিলীনের বই-ই যদি খ্যাতি এনে দিয়ে থাকে তার, তাহলে সে বই নিজে খ্যাতি পেয়েছে কতটুকু?