‘আমি কী নারীবাদী?’: ‘নারীর প্রতি সহিংসতা’ গবেষণার অভিজ্ঞতা : ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ১০ মার্চ ২০১৪ | ১৪৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
নৃবিজ্ঞানের জেন্ডার পঠনপাঠনের কোর্স পড়তে পড়তে নারী হিসেবে আমার মাঝে যৌন নিপীড়ন নিয়ে নানান রকমের সচেতনতা তৈরী হয়েছিলো। তারপরেও ব্যক্তি জীবনে আমি ভাবতাম যা কিছু আমার জীবনে দমনমূলক, নিপীড়নমূলক তার কারণ কোন না কোন ভাবে আমি, আমার অসাবধানতাই আমাকে উৎপীড়নের সুযোগ করে দিচ্ছে কিংবা আমি যেহেতু নারী তাই নিপীড়িত হবই। এই লালিত বোঝাপড়া সমেত আমি ধর্ষিত নারীদের নৃশংস নিপীড়ন অভিজ্ঞতা শুনতে শুরু করি।
ধর্ষিত নারীদের নিপীড়ন অভিজ্ঞতার কথন শুনতে শুনতে গবেষক আমার জীবন মূল্যবোধ, ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেতে থাকে। সহিংসতাবিদ্ধ নারীর সাথে আমার ‘যন্ত্রণা’ বোধে মিলের জায়গা তৈরী হয়। ১৮ জন নারীর যৌন উৎপীড়ন অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে করতে, লেখতে লেখতে কখনও আমি রেগে উঠি, কখনও আমার অসহায় লাগতে থাকে, আমার গা গুলিয়ে বমি আসতে থাকে, আমি হাঁপিয়ে উঠি, প্রতিনিয়ত অসুস্থ বোধ করি। আমি দেখতে থাকি মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারে বসবাসে অভ্যস্ত আমার আজীবন ‘নির্ভরতা আর শ্রদ্ধার’ সম্পর্কগুলো ভাঙ্গতে শুরু করেছে, আমার মধ্যবিত্ত শ্রেণীচৈতন্যের ধরে নেয়া ধারণাগুলো (আমার বাবা, ভাই তো নয়ই আমার পরিচিত কোন মানুষই ধর্ষক হতে পারে না) নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে (তারমানে কিন্তু এই নয় যে পিতা কিংবা ভাই মাত্রই ধর্ষক)। গবেষণা আমাকে এই বোঝাপড়ায় পৌঁছে দেয় যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণীভেদে নারী আসলে কেবল ‘ভোগের বস্তু’ তাই যেকোন সময়ে, যেকোন পরিসরে, যেকোন সম্পর্কে নারী ধর্ষণের শিকার হতে পারে