পেন্ডুলাম : জয়ন্ত দে
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ | ১৪৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
কিন্তু ওরা বোঝেনি আমরাও ভেতরে ভেতরে তৈরি ছিলাম। ন্যাকড়ার বল বানিয়ে কেরোসিনে চোবানো হল। বোমা বাঁধা হল। এমনকি টেরিটরিয়াল আর্মিতে কাজ করে এরকম কিছু লোক বন্দুকের যোগান দিল। বোমা-লাঠি-বন্দুক নিয়ে গঠিত হল প্রতিরোধ বাহিনী।
এরপর বাবা কী বলবে আমি জানি। বাবা আজ সংক্ষেপে বলছে, তবু আমি জানি বাবা কী বলবে। ছেলেটি কঠিন চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার বুকের ভেতর ছটফট করছে হাওয়া। বাবাকে থামাতেই হবে। গলা তুলে ডাকার চেষ্টা করি, বাবা, বাবা ও... ।
বাবা হুঙ্কার দিয়ে ওঠে, বন্দে মাতারম! ফিয়ার্স লেনে, সাগর দত্ত লেনে প্রচুর হিন্দু মরছে। ঠিক হল একটা হিন্দুর লাশ দেখলে দশটা মুসলমানের লাশ ফেলতে হবে। একদিকের হিন্দুদের রেসকিউ করলাম, অন্যদিকে হিন্দু হত্যার বদলা। লাশে লাশে ভরে গেল কলকাতা। আর এ সময়েই লুটে এনেছিলাম এ ঘড়ি। এক মুসলমানের অন্দরমহল থেকে। সেই ১৯৪৬! আজ কত বছর? কত বছর হল?
সেফটিপিন : জয়ন্ত দে
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১৫ অক্টোবর ২০২০ | ৪২২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
‘বউদি অত টাকা পাবে কোথায়—।’
‘বউদি আর পাবে কোথায়!’ মানিক হাসে, ‘বউদির অনেক কাজের বাড়ির বাবু ধরা আছে। তাদের কাছ থেকে পাঁচ দশ করে কালেক্ট করবে। মাসে মাসে আমি দিলে তাদের শোধ করে দেবে। আর সুদটা বউদির পকেটে ঢুকবে। প্ল্যান আমার ছকা ছিল। ওই হারামির বাচ্চা বাবু সাহা সব লাগিয়ে দিল মল্লিক ঠিকেদারকে। নইলে আমার সব প্ল্যান পাক্কা।’ মানিক আবারও হাসল। ‘আমাকে চুরির বদনাম দিয়ে বাড়ি চলে এল—থানায় গেল না। চুরির মাল খুঁজল না। শুধু হল্লা, নে সাহস থাকে আমাকে পুলিসে দে। দু দুটো টুলু পাম্প, আচ্ছা আমিও ছাড়ব না। ওরা ভয় পেয়ে গেছে রূপা বুঝেছে—আমি যদি ঠিকেদারি লাইনে নামি ওরা আমার সঙ্গে পারবে না।’
রূপার মনে হল, মানিক ঠিক কথাই বলেছে, সত্যি সত্যি চুরি হলে ওরা থানা পুলিশ করত না—ছেড়ে দিত? কেউ ছেড়ে দেয়?
পেন্ডুলাম : জয়ন্ত দে
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২০৪১ বার পঠিত
অগত্যা জামা টেনে পকেটে মানিব্যাগ ঠেসে বেরিয়ে পড়লুম। ফিরে মিষ্টির প্যাকেট রান্নাঘরে জমা করে বসলুম বারান্দায়। গল্প খুব জমে উঠেছে...
... আমরাও ঠিক করে ফেললাম, একজন হিন্দু মরলে দশজন মুসলমান মারব। আমাদের ভেতর তখন আগুন জ্বলছে। জিন্নার ডাইরেক্ট অ্যাকশন, লীগ প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দির মুসলমান যুবসমাজকে সর্বশক্তি নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান, এক-একটা হিন্দুর দোকান লুট হচ্ছে– জওহরলাল পান্নালাল, কমলালয় স্টোর্স, কে.সি বিশ্বাসের মতো বড় দোকান। মুসলমান দোকান ওরা চিহ্ন দিয়ে রেখেছিল, লুটের হাত থেকে বাঁচাতে। এমন কি হাঙ্গামা হতে পারে ধরে নিয়ে মুসলমানদের জন্য এ্যাম্বুলেন্স মজুত রেখেছিল। লীগ প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে করে লীগের লোকদের জন্য ছোরাছুরি, পেট্রল, কেরোসিনও নিয়ে যাওয়া হয়।
আমি সামুর ছেলের দিকে তাকাই। চোখ দুটো বড়। যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে, ঠোঁট দুটো একটু ফাঁকা, শুকনো খট খট করছে। বুঝতে পারি মুখ দিয়েই এখন বাতাস চলছে ওর। নিচু স্বরে বলি, বাবা।
কিন্তু ওরা বোঝেনি আমরাও ভেতরে ভেতরে তৈরি ছিলাম। ন্যাকড়ার বল বানিয়ে কেরোসিনে চোবানো হল। বোমা বাঁধা হল। এমনকি টেরিটরিয়াল আর্মিতে কাজ করে এরকম কিছু লোক বন্দুকের যোগান দিল। বোমা-লাঠি-বন্দুক নিয়ে গঠিত হল প্রতিরোধ বাহিনী।
এরপর বাবা কী বলবে আমি জানি। বাবা আজ সংক্ষেপে বলছে, তবু আমি জানি বাবা কী বলবে। ছেলেটি কঠিন চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার বুকের ভেতর ছটফট করছে হাওয়া। বাবাকে থামাতেই হবে। গলা তুলে ডাকার চেষ্টা করি, বাবা, বাবা ও... ।