নির্বাচনী প্রচারে জনজীবনের মূল বিষয়গুলি কি উপেক্ষিত? : অচিন চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : বিধানসভা-২০২১ | ০৬ এপ্রিল ২০২১ | ৩৯৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
মানবোন্নয়ন হলেই কি বিনিয়োগ হুড়মুড় করে চলে আসবে? না। বিনিয়োগ আসে দশরকম কারণে। খয়রাতি বেশির কারণে বিনিয়োগ কমবে না। বিনিয়োগ যে কারণে কমবে সেখানে প্রশাসনিকতার একটা ভূমিকা আছে। প্রশাসনিকতা কতটা সক্রিয় তার উপর অনেকটা নির্ভর করছে এবং অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের মানসিকতার দিক থেকেও দেখতে হবে। একটা ইতিহাস থাকে অনেক সময় এবং সেখানে ইতিহাসের কতকগুলো মিথ, সেগুলোও চালু থাকে। এখানে যেমন চালু ধারণা শ্রমিক অসন্তোষ অনেক বেশি বলে বিনিয়োগ হত না, হয় না। আমরা আমাদের গবেষণা থেকে দেখিয়েছি যে শ্রমিক অসন্তোষটা যে ছিল না তা নয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ার অন্য অনেকগুলো কারণ ছিল। এগুলো নানান রকম গবেষণা থেকে আজকাল উঠে আসছে। কিন্তু মানুষের মনে এই যে অতিকথাগুলো ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে, সেগুলোর জন্য কিন্তু আমাদের একটা প্রধান বাধা হচ্ছে, জনজীবনে যেগুলো প্রয়োজনীয় জিনিস, সেগুলো নিয়ে আমরা খুব একটা কথা বলে উঠতে পারছি না। এইটা কিন্তু আমাদের একটা ধারাবাহিক লড়াইয়ের ব্যাপার, আমি বলব। এই মিথগুলো, এই ভ্রান্ত ধারণাগুলো, এগুলোর সঙ্গে লড়তে হবে। একটু পরিসংখ্যান মিশিয়ে, মানুষজন যেগুলো নিয়ে চর্চা করেন, সেগুলোর ভিতরে ঢুকে একটু একটু বোঝার চেষ্টা করা।
নির্বাচনী প্রচারে জনজীবনের মূল বিষয়গুলি কি উপেক্ষিত? : অচিন চক্রবর্তী, অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়, কুমার রাণা
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : বিধানসভা-২০২১ | ২৯ এপ্রিল ২০২১ | ৩৪৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কৃষককে একটা শ্রেণি হিসেবে দেখার সমস্যা আছে। কারণ কৃষক এক রকম নয়, কৃষকের অনেক স্তর রয়েছে। এবং ভারতবর্ষে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রদেশে, বিভিন্ন রাজ্যে এই স্তরবিন্যাসটাও ভীষণ আলাদা। পাঞ্জাব, হরিয়ানায় কৃষকদের যে শ্রেণিবিন্যাস আর আমাদের পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের যে শ্রেণিবিন্যাস— দুটো একেবারেই মেলে না, ঐতিহাসিক ভাবেই মেলে না, খুবই আলাদা। পশ্চিমবঙ্গে কেন কৃষি আন্দোলন খুব একটা জোরদার হচ্ছে না, নির্বাচনী বিষয় হয়ে উঠছে না, তারও একটা কারণ সম্ভবত এই তফাতটার মধ্যেই আছে।
জনসংখ্যা নিয়ে গালগল্প ও বাস্তব: একটি গুরুত্বপূর্ণ বই : অচিন চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | বইপত্তর | ৩০ মে ২০২১ | ৩৮৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
কুরেশির বিশ্লেষণে যেমন আছে তথ্যের সমাহার তেমনই আছে যুক্তির জোর। বস্তুত, বইটাতে তিনি যা লিখেছেন তার অনেক কিছুই জানা। অবশ্য, সবার নয়, যাঁরা জানতে চান তাঁদের – অনেকেতো জানতে চানই না। এ বই, বিশেষত শেষের দিকে, “জনসংখ্যার রাজনীতি” বিষয়ক অষ্টম অধ্যায়টা পাঠকের মনকে বিশেষভাবে বিচলিত করবে। এই অধ্যায়ে কুরেশি হিন্দুত্ববাদের প্রবক্তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচারিত জনসংখ্যা বিষয়ক গালগল্পগুলোকে ভেদ করে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরেছেন। আশা করা যায় যে, এখানে উপস্থাপিত তথ্য ও সেগুলোর ব্যাখ্যা ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক বিভাজন রোধ করার কাজে লাগবে।
ভ্যাকসিনের নীতি ও রাজনীতি : একটি বক্তৃতা : ডঃ অচিন চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০৪ জুন ২০২১ | ২৮৮৯ বার পঠিত
আজকে ১৩৮ কোটি মানুষ প্রত্যেকেই মনে করবে টিকা নেওয়া দরকার যত টাকাই লাগুক না কেন, সেটা অসম্ভব। হাজার বারোশ টাকা খরচ করে টিকা নিতে যাবে ভারতের কত শতাংশ মানুষ? অনেকের ক্ষমতা নেই, কিন্তু এটা পুরোপুরি ক্রয় ক্ষমতার প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা হল আমি এতে খরচ করব কি করব না এটা অর্থনীতির নিয়ম। এর সঙ্গে ন্যায্যতার প্রশ্ন। অর্থনীতির প্রশ্ন আর ন্যায্যতার প্রশ্ন আলাদা করে বলতে চাইছি এই কারণে যে, আমেরিকাতে শোনা যাচ্ছে আমি ততক্ষণ সুরক্ষিত নই যতক্ষন না সবাই সুরক্ষিত। এটার মানে হচ্ছে আমার নিজের সুরক্ষার জন্য অন্যদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু এটা সংক্রমক রোগ, অতএব যতক্ষণ সেটা ঠেকাতে না পারছি আমি সুরক্ষিত নই। এখানে কিন্তু একটা সেল্ফ ইন্টারেস্ট-ই আমাকে এই কথা বলাচ্ছে। সরকারও একরকম ভাবে এই সেল্ফ ইন্টারেস্টটা মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, তোমার প্রয়োজনেই দরকার অন্যদের ফ্রিতে টিকা দেওয়ার। এটা আমরা অর্থনীতির যুক্তি দিয়ে বলতে পারি। এখানে প্রশ্ন হল, যদি রোগটা সংক্রমক না হয় তাহলে কি আমি প্রতিবেশীর থেকে সেই ইন্টারেস্টটা দেখতে পাব না? আমার যদি হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে আমি তো সংক্রমণ করছি না কাউকে, তাহলে কি পাশের বাড়ির মানুষটির কিছু এসে যাবে না? সেল্ফ ইন্টারেস্ট ছাড়া সমাজে আর কিছু আমাদের প্রণোদিত করবে না? তাহলে টিকার বন্টনের ক্ষেত্রে সব যুক্তিগুলোকে যদি শুধু সেল্ফ ইন্টারেস্টে নিয়ে আসি, যেটা এক্সটার্নিলিটির আর্গুমেন্ট, তাহলে ন্যায্যতার বা সমানুভুতির কোনও পরিসর থাকবে না? এই এক্সটার্নিলিটির জন্য অবশ্যই সরকারের ভূমিকা আছে। একজনও যদি সংক্রমিত থাকে তাহলে বাকিদের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। ফলে সরকার এই ভাবে বোঝাচ্ছে যে, যতক্ষণ না সবাই সুরক্ষিত হচ্ছে তুমিও সুরক্ষিত নও। এটা আমি আমার সেল্ফ ইন্টারেস্ট থেকেই চাইব সবাই সুরক্ষিত হোক। এমনকি দরকার হলে পাশের বাড়ির লোকের যদি পয়সা না থাকে, আমি তাকে পয়সা দিয়ে বলব টিকাটা নিতে। কারণ আমি নিজে সুরক্ষিত থাকতে চাই। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের অন্য মোটিভেশন নিয়েও ভাবতে হবে।