এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুদেব ভট্টাচার্য | ***:*** | ১১ জুন ২০১৮ ০০:৪৯377414
  • সতর্কীকরণঃ 'উমা রিভিউ' (স্পয়লার রয়েছে)

    হ্যাঁ উমা দেখব বলেই ঢুকেছিলাম কড়কড়ে ২২০ টাকার টিকিট কেটে আইনক্সে। বুঝতে পারিনি বিসর্গটা সাইলেন্ট ছিল।টাকাগুলি বাবুঘাটে বিসর্জন দিয়ে হল থেকে বেরোনোর পরে আমাদের সত্যিই তখন ‘উঃ মাগো’ দশা!
    আদ্যন্ত অ্যাবসার্ড একটি সিনেমা। আবেগমথিত হয়ে অন্ধের মত স্ক্রীপ্ট লিখলে যা দাঁড়ায় তারই উদাহরণ উমা। শুধু আবেগটাই আছে। কিন্তু আবেগটাকে বাস্তবের পথে ফ্লো করানোর ব্যাপার নজরে আসেনি। ডিরেক্টর সিনেমাটিকে বাস্তবের পটভূমিকায় কেন করেছেন বুঝলাম না। এর থেকে উমা ইন ওয়াণ্ডারল্যাণ্ড হলে বেশি বিশ্বাসযোগ্য হত।
    বাবার নাম হিমাদ্রি (হিমালয়)। মায়ের নাম মেনকা। ভিলেইনের নাম মহীতোষ শূর (পড়ুন মহিষাসুর)। আর মূল চরিত্র উমা! সিরিয়াসলি? এত মোটা দাগে বোঝাতে হল!
    একটি টার্মিনাল রোগে আক্রান্ত মেয়ের শেষ ইচ্ছাপূর্ণ করতে নেমেছেন তার বাবা হিমাদ্রি। তিনি তাই মার্চ মাসে ঠাঠাপোড়া রোদে দুর্গাপুজো তৈরী করতে চান কলকাতা শহর জুড়ে। হ্যাঁ পুরো কলকাতা জুড়েই হল সেই প্ল্যান। হিমাদ্রি একজন এন-আর-আই ধনকুবের। তাই খোলামকুচির মত টাকা ওড়ানোটা কোনো ফ্যাক্টরই নয়। সুতরাং এয়ারপোর্ট থেকে বেলগাছিয়া জুড়ে লাগানো হল লাইট, হোর্ডিং। কেবল চ্যানেলে দেখানো হল পাঁচ দিন ধরে ফেক পুজোর খবর। এমনকি 'আনন্দবাজার', 'এই সময়' ইত্যাদি সব খবরের কাগজেও ছাপিয়ে নেওয়া হল হেডলাইনসহ পঞ্চমী থেকে বিজয়ার গোটা পাঁচেক সংস্করণ। এখানেই শেষ নয়। নিউ ইয়র্ক, ব্যাংকক আর লণ্ডনের থিমে দুদিনের মধ্যে গড়ে উঠল বিশাল বিশাল প্যাণ্ডেল দেশপ্রিয় পার্ক, মুদিয়ালি, কলেজস্কোয়ারে। (ক্লাবের পার্মিশন, সরকারী অনুমতি, পুলিশের অনুমতি, বাঁশ পোঁতা, কাঠামো বানানো, থিম পুজোর যাবতীয় সরঞ্জাম, আইস্ক্রিমওয়ালা, ভেঁপু ওয়ালা, বেলুন থেকে সি ই এস সির পার্মিশন, হোর্ডিং লাগানো, লাইট ডেকরেশন, মূর্তি আনা, ফেক পুরোহিত, নকল ভিড়, রেডিও অ্যানাউন্সমেন্ট, মাইক বাজানো, ট্রাফিক জ্যামের সুব্যবস্থা – সঅঅঅব হয়ে গেল দুদিনের মধ্যে।)
    একটা গোটা আবাসন ভাড়া নেওয়া হল। আবাসিকদের স্যাক্রিফাইস দেখে চোখে জল চলে আসে মাইরি। আহা! দুদিন আগে যাকে এরা কেউ চিনত না, তার মেয়ের জন্য আবাসিকরা দুর্গাপুজো করার অনুমতি দিল, তাদের বাড়িতে ঝুলল লাইট, পাঁচ দিন ধরে নতুন জামা কাপড় পরে তারা নাটক করতে লাগল, অফিস কামাই থেকে নকল পুজোর ঘোরার প্ল্যান সবই করতে লাগল। এমনকি মেয়েটির মায়ের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য নিয়ে আসা হল শ্রাবন্তীকে, অন্যান্য ভূমিকায় সবাই অভিনয় করতে লাগল। এমনকি বিসর্জনের দিন একগাদা লরি আর নকল ভিড় ভাড়া করে বাবুঘাটে দেব, নুসরত, প্রসেনজিত,মিমি মায় গোটা টলিউড নেচে এল কোমর দুলিয়ে। সত্যিই তো এরকম কলকাতা ভাগ্যিস সৃজিত দেখালেন আমাদের। না হলে জানতামই না এত স্যাক্রিফাইস, এত পরের জন্য ভালবাসা, এত মেলোড্রামা আমার শহরের কোনায় কোনায় লুকিয়ে আছে।

    ফেসবুকের প্রতি চরম তাচ্ছিল্য ও ব্যক্তিগত বিরূপ মনোভাব সৃজিত কায়দা করে ঢুকিয়েছেন অঞ্জন দত্তের ডায়ালগে। বোধহয় আগের সিনেমাগুলির কড়া সমালোচনার তিক্ত অভিজ্ঞতার ফল এই ফেসবুক বিরোধিতা। এভাবেই ব্যক্তিগত মতামত ঢোকানোর ছলে তিনি নিজেও একবার ঢুকে পড়লেন সিনেমাতে (হালের ফ্যাশন)। ইনিয়ে বিনিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে অনেক কিছুই করলেন কিন্তু জমলো না।
    অন্য দিকে জ্বলন্ত চাড্ডি সমস্যাকে তুলে ধরতে নিয়ে এলেন এক চাড্ডি আবাসিককে (ভিলেন মহিতোষ শূর)। কিন্তু তিনিও শেষ অবধি আর চাড্ডি রইলেন না। উমার গদগদ ‘আংকল’ ডাকে তিনিও একগাদা ছানার সন্দেশ মুখে দিয়ে হাউহাউ করে কেঁদে উঠলেন। অন্যদিকে সৃজিতবাবু আসল চাড্ডিকে কলঙ্ক মুক্ত করতে সিনেমায় নিয়ে এলেন বাবুল বাবুকে। তিনিও অনতিবিলম্বেই মহীতোষ বাবুর মত রত্নাকর থেকে বাল্মিকি হলেন। সিংহের বিক্রমে 'তোড় দেঙ্গে ফাঁড় দেঙ্গে' করতে করতে ছুটে আসা বিহারী গুণ্ডা (বাবুল) উমার ডাক শুনেই নস্টালজিয়ায় ভিজে মিউ মিউ করতে করতে বেরিয়ে গেলেন। এমনকি শেষে ছট পুজোর ঠেকুয়া খেতেও নেমন্তন্ন দিলেন।
    সারা সিনেমা জুড়ে ছানাকাটা অভিনয়, নেতিয়ে পড়া গল্প আর গ্যাদগ্যদে বাস্তববর্জিত আবেগের মধ্যে একটু খানি ঠাণ্ডা বাতাস অঞ্জন বাবু এবং অনির্বাণের অভিনয় আর সুইৎজারল্যাণ্ডের ল্যান্ডস্কেপ।
    সিনেমাতে একটি জায়গায় একটি চরিত্র তার সহ অভিনেতাকে বলেছিলেন, “গাঁজা খেয়েছ নাকি?”
    সিনেমার শেষে আমারও এই একই প্রশ্ন রইল ডিরেক্টরের প্রতি।
  • | ***:*** | ০৬ আগস্ট ২০১৮ ১৪:৪৬377415
  • অসাধারণ সিনেমা রিভিউ
  • শঙ্খ | ***:*** | ০৯ আগস্ট ২০১৮ ২১:০৮377416
  • হ্যাহ হ্যাহ হ্যাহ। গোলা হয়েছে রিভিউ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন