এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মুর্শিদাবাদ দাঙ্গা

    PRABIRJIT SARKAR লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ মে ২০২৫ | ৫১ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • ১১ ও ১২ই এপ্রিল রাতে মুর্শিদাবাদে  বেতবোনা ও ধুলিয়ানে হিন্দুদের ওপর কি অত্যাচার হয়েছিল ?  কলকাতা হাই কোর্ট নিযুক্ত অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন

    [১]

    (২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন ২০২৫-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। এই প্রতিবাদ কিছু এলাকায়  পরিকল্পনা মাফিক হিন্দুদের বিরুদ্ধে হিংসায় রূপ নেয়। এতে হিন্দুদের  প্রাণহানি, ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ধ্বংস, মন্দির আক্রান্ত হওয়া এবং বহু হিন্দু গৃহচ্যুত হন।

    এই ঘটনার তদন্ত করতে কলকাতা হাই কোর্ট একটি তিন সদস্যের স্বাধীন অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে।

    জগিন্দর সিং – জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রেজিস্ট্রার (আইন)

    সত্য অর্ণব ঘোষাল – পশ্চিমবঙ্গ লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সদস্য সচিব

    সৌগত চক্রবর্তী – পশ্চিমবঙ্গ বিচার বিভাগীয় পরিষেবার রেজিস্ট্রার

    মূল পর্যবেক্ষণ ও তথ্য:

    ১. পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা:
    ১১ ও ১২ এপ্রিল হিংসার সময় পুলিশ পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ছিল।

    আক্রান্ত এলাকাগুলি থানার কাছাকাছি হলেও পুলিশের কোনো উপস্থিতি বা সাহায্য ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দারা সাহায্যের জন্য একাধিকবার ফোন করলেও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

    ২. পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক আক্রমণ:
    এটি হঠাত করে হওয়া আক্রশ না। বেছে বেছে আগুন ধরানো হয়েছে হিন্দুদের বাড়িতে। আগুনে সম্পূর্ন পোড়া না হওয়া পর্যন্ত মুসলমান গুন্ডারা অপেক্ষা করেছে। যারা অধিকাংশ ছিল ১৫-২৫।  এবং স্থানীয়। কোন বাইরের লোক ছিল না। প্রতিবেশী মুসলমান সম্প্রদায় এই কাজ করেছে।

    বেতবোনা গ্রামে ১১৩টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  বাড়িতে ঢুকে সব জামা কাপড়ে কেরোসিন দেওয়া হয়। তারপরে সেগুলো জ্বালানো হয়।

    ধুলিয়ান শহরে একটি বড় গার্মেন্টস মল, দোকানপাট ও মন্দির ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়।

    ৩. রাজনৈতিক যোগসূত্র:
    স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন ধুলিয়ান পৌরসভার চেয়ারম্যান মেহবুব আলম- হিংসার নেতৃত্ব দিয়েছেন। উনি দাঁড়িয়ে থেকে আগুন ধরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এবং এখনো পুলিশ বা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নি।

    অপর এক তৃণমূল বিধায়ক ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও হস্তক্ষেপ করেননি।

    এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, অনেক আক্রমণ স্থানীয় মুসলমান তৃনমূল নেতাদের  প্ররোচনায় সংগঠিত হয়েছে।

    ৪. প্রাণহানি:
    ১২ এপ্রিল হরগোবিন্দ দাস (৭৪) ও তাঁর পুত্র চন্দন দাস (৪০)-কে তাঁদের নিজ বাড়িতে কুঠার দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

    যারা হত্যা করেছেন, তারা প্রতিবেশী মুসলমান। কুড়ুল দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলা হয়েছে। হরগোবিন্দ দাশ এবং চন্দন দাশ না মারা যাওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করেছে এবং বারবার কুড়ুল দিয়ে মেরেছে।

    ৫. গৃহচ্যুতি ও জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তন:
    শতাধিক হিন্দু পরিবার হিংসা থেকে বাঁচতে মালদহ জেলায় আশ্রয় নেন।

    পরে পুলিশ তাঁদের জোর করে ফিরে আসতে বাধ্য করে, যদিও তখনো এলাকায় হুমকি বিদ্যমান ছিল। তারা ইচ্ছা করে ফিরে আসেন নি। তাদের জোর করে তাদের গ্রামে ফেরানো হয়েছে।  

    ৬. ঘরবাড়ি ধ্বংস ও সম্পত্তি লুণ্ঠন:
    আক্রমণকারীরা কেরোসিন ঢেলে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।স্থানীয় জলের সংযোগ কেটে দেওয়া হয় যাতে আগুন নেভানো না যায়।

    বাসিন্দাদের জামাকাপড় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ধ্বংস করে দেওয়া হয়। যাতে তারা আর গ্রামে ফিরে না আসেন।

    কমিটির সুপারিশ:
    (১) ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যক্তি-ভিত্তিক পূর্ণ পুনর্বাসন প্যাকেজ প্রদান।

    (২) স্বীকৃত মূল্যায়নকারীর মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির নিরপেক্ষ মূল্যায়ন।

    (৩)কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী (CAPF)-এর স্থায়ী উপস্থিতি, যাতে ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন