এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যে ভারত বাঁচাবে

    Eman Bhasha লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৭০ বার পঠিত
  • যে ভারত বাঁচবে, বাঁচাবে।।
     
    ইমানুল হক
     
    ১৯৯৮-এ গুজরাতে নির্বাচনী সমীক্ষায় গিয়ে সুরাত স্টেশনে চোখ টানে মননঋদ্ধ প্রাচীরচিত্র। 
    সেখানে লেখা ছিল:
     
    মন্দির মসজিদ নে বাঁট লিয়া ভগবানকো
    সাগর বাঁটো জমিন বাঁটো
    মৎ বাঁটো ইনসানকো 
     
    ২০০২-এ গণহত্যা-পরবর্তী কালে ত্রাণ নিয়ে গিয়ে দেখি, সেই দেওয়ালে অন্য ছবি আঁকা। আর আসল ভারতের চেহারা দেখি, আমদাবাদ শাহ আলম ত্রাণ শিবিরে।
    ভগবতী দেবী দু’মাস ধরে ছিলেন ত্রাণ শিবিরে। ‘সহেলি’ রোশেনারার দুঃখে অংশীদার হবেন বলে। ‘মুসলমান’-দের তেমন ঘেন্না করেন না বলে তাঁর বাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভগবতী দেবী এক থালায় খেতেন অন্যদের সঙ্গে। ত্রাণ শিবিরে তো কারও নিজের থালা ছিল না।
    — কেন এলেন এখানে?
    — উও মেরি সহেলি হ্যায়। মেরি জান। পাশাপাশি ঘর। বিয়ের পর থেকে দু’জন দু’জনের সুখদুঃখের সঙ্গী। আজ বিপদের দিনে ওকে ফেলে যাব কোথায়?
    এটাই ভারত। ধর্ম সমন্বয় ও পরমত সহিষ্ণুতাই শেষ কথা বলবে। অন্ধ ধর্ম-রাজনীতি ব্যবসায়ীরা নয়। সাম্প্রদায়িকতা আসলে আর কিছু নয়, ধর্ম-ব্যবসার রাজনৈতিক চেহারা।
    অসামান্য জীবনপ্রবাহী সংবেদী চিন্তক একটি বইয়ের ঠিকানা জানানোর জন্য সেমন্তী ঘোষকে ধন্যবাদ। (‘না, নিছক...’, ১৯-১) ধন্যবাদ সাবা নাকভিকে ‘ইন গুড ফেথ’-এর মতো বই লেখার জন্য। যে বই ভারতকে আর এক রকম ভাবে চিনতে পাঠকদের প্রণোদিত করে। আমাদের দেশের প্রকৃত মূলস্রোত, সমন্বয়ের ধারাটিকে উজ্জ্বল আলোকে চিহ্নিত করেছেন সাবা।
    এই সূত্রে একটি শোনা ও জানা কাহিনির অবতারণা। ‘কহানি’ নয়, সত্য। যে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ-রামমন্দির নিয়ে এত দাঙ্গা-খুনোখুনি-রক্তপাত-গোলযোগ, নির্বাচনী নোট-ঘোঁট-প্রধানমন্ত্রিত্বের বিবেকহীন যাত্রা এই কাহিনি সেই অযোধ্যার বিবদমান প্রতিপক্ষের।
    অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণ আন্দোলনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রধান মুখ মহন্ত রামচন্দ্র পরমহংস। মুখের প্রভাব এতটাই, তাঁর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করতে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রামচন্দ্রের বন্ধু ছিলেন বাবরি মসজিদের অ্যাকশন কমিটির শীর্ষনেতা হাসিম আনসারি। এক জন চান মন্দির গড়তে, অন্য জন মসজিদ রক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ। দুই প্রতিপক্ষ প্রায় প্রতিদিন বিকেলে সভাসমিতি না-থাকলে আড্ডা মারতেন। আড্ডা গড়াত অনিবার্য তর্কে। তর্ক মানেই ঝগড়া। খুব একচোট গালাগালি। তার পর বসে যেতেন এক থালায় খেতে। পরের ঘটনাটি বিস্ময়কর। মাঝে মাঝে দু’জনে ঘরের ভিতর ঢুকে যেতেন। খেয়ালকারীরা দেখতেন, হাসিম আনসারির পকেটে ৫০০ টাকার নোট ঢুকিয়ে দিচ্ছেন রামচন্দ্র পরমহংস।
    ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অযোধ্যার সরযূকুণ্ড আশ্রমের যুগলকিশোর শরণ শাস্ত্রীজি। সম্প্রীতি রক্ষার অতন্দ্র সৈনিক। নাগপুরে আসগর আলি ইঞ্জিনিয়ারের সেকুলার ফোরামের আয়োজনে সর্বভারতীয় কর্মশালায় তাঁর মুখে শোনা এই কাহিনি।
    এক দিন যুগলকিশোররা চেপে ধরেন রামচন্দ্রকে। তিনিও যেতেন আড্ডায়।— আপনাদের এত ঝামেলা, তবু টাকা দেন কেন হাসিম ভাইকে?
    — আরে ওটা হাসিমকে নয়। চাঁদা দিই। বাবরি মসজিদ কমিটিকে। জবাব রামচন্দ্রের।
    — চাঁদা? বাবরি কমিটিকে!
    — আরে ব্যাটা, ও আমার বচপন কা জিগরি দোস্ত। একসঙ্গে ডাংগুলি খেলেছি, ন্যাংটোবেলা থেকে। দু’বার গুন্ডাদের হাত থেকে আমার জান বাঁচিয়েছে। ওর ঘরে থেকেছি। খেয়েছি। ওকে চাঁদা না-দিয়ে আমার উপায় আছে?
    একটু থেমে রামচন্দ্রের সংযোজন: তা ছাড়া দোস্তকে চাঁদা না-দিলে পাপ হবে।
    ধর্ম-ব্যবসায়ীরা এই কাহিনি যদি জানতেন!
    Emanul Haque 
     
    আনন্দবাজার, ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ তে প্রকাশিত
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরক সেনগুপ্ত | 2405:201:801e:1861:8097:22e1:73bd:***:*** | ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:০০540791
  • সত্যি কারের ভারতবর্ষের চেহারা এই দেশের যে কোন গ্রামে দেখতে পাওয়া যেতো বা এখনও যায় এই পাশাপাশি বসত বাড়ি,এক ভিটের থেকে আর এক ভিতে যেতে কোনো সময় চিন্তা করতে হতো না বা হয়নি।উৎসবে সবাই সবার ঘরে যেতো নেমন্তন্ন রক্ষা করতে।তারই প্রতিফলন ওই পকেটে টাকা।
  • syandi | 2402:e280:3d81:135:e5f4:d8ed:e8b7:***:*** | ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৫৪540848
  • ভগবতী দেবী এবং রোশেনারার বন্ধুত্বকে হাসিম আনসারি ও রামচন্দ্র পরমহংসের বন্ধুত্বর চাইতে অনেক নির্মল এবং বিশুদ্ধ বলে মনে হল। 
  • Eman Bhasha | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:২৩540858
  • ধন্যবাদ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন