এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • একটি মৌমাছির মৃত্যু এবং 

    Angsuman Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১২২ বার পঠিত
  • আমি ঘরে থাকি। তাই ঘরটা আমার। আমার ঘরের পাশে একটা গাছ আছে। তাই গাছটা আমার। আমার বলেই গাছের ফুল, ফল, পাতা সব আমার। গাছের ডালে একটা মৌচাক হয়েছে। মৌচাকটাও আমার মৌচাকের মধুও আমার। মৌচাক থেকে মধু খেতে গিয়ে একটা মৌমাছি আমার দিকে তেড়ে এল। আমি গাছের একটা পাতা সুদ্ধ ডাল দিয়ে তাড়িয়ে দিতে গেলাম। মৌমাছিটা রেগে গিয়ে আমার হাতে হুল ফোটাল। রাগের জ্বালায় মারলাম একটা বাড়ি। আঘাত পেয়ে মৌমাছিটা মাটিতে পড়ে ছটফট করতে লাগল তারপর বাঁচার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে বারবার ওঠার চেষ্টা করল। আবার দিলাম একটা মোক্ষম আঘাত। একেবারে থেঁতলে গেল। বেঁচে ওঠার ইচ্ছেটাকে একেবারে শেষ করে দিলাম। আমাকে মধু খেতে বাধা দেবার শোধ তুলে নিলাম। কয়েকটা মৌমাছি চাক থেকে বেরিয়ে এসে ঐ মরা মৌমাছিটার চারপাশে ভনভন করতে লাগল। করুকগে। আমার কী? একটু পরে আবার চাকের মধ্যে ঢুকে যাবে।

    কিন্তু না। আরও মৌমাছি এসে জড়ো হল। অন্য গাছ থেকেও মৌমাছির দল এসে জুটতে লাগল। "ধুত্তোর" বলে ঝাঁটা দিয়ে মরা মৌমাছিটা ঝেঁটিয়ে দিলাম। এত দূরে ঝেঁটিয়ে ফেললাম যাতে আর ওরা সন্ধান না পায় আর আমিও নির্ঝঞ্ঝাটে মধু খেতে পারি। মৌমাছিগুলো তাও উড়তে উড়তে ভনভন করতে লাগল। সারা গাছের ডালে ডালে পাতায় পাতায় মৌমাছির ভনভন। 
    এবার দেখি কোত্থেকে কালো কালো নির্বিষ পিঁপড়ে সারি বেঁধে আসছে। পিঁপড়ে তো! তাও নির্বিষ! না আছে কামড়ের জোর, না আছে বিষ ঢালার ক্ষমতা। নিশ্চয় মরা মৌমাছির গন্ধ পেয়ে আসছে, ভোজ সারবে।  কী আশ্চর্য পিঁপড়েগুলো মৌমাছিদের সঙ্গে মিশে গেল। গাছের ডালে ডালে পাতায় পাতায় যত মৌমাছি তত পিঁপড়ে! আরও পিঁপড়ে আসতে লাগল! গাছটা কালো কালো পিঁপড়েতে ভরে গেল। গাছের পাতা থেকে ডালে, ডাল থেকে কাণ্ড কালো পিঁপড়েতে ভরে গিয়েছে। মাটি ফুঁড়ে এদিক ওদিক থেকে কত রকম পিঁপড়ে এসে যোগ দিচ্ছে - ছোট, বড়, শুঁড় ওয়ালা , ডানা ওয়ালা, কত রকম রঙের। গাছের গোড়া, উঠোন সমস্ত জায়গাটা পিঁপড়েতে ভরে গেছে। অনেক হয়েছে, আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। বড় বড় কয়েক বালতি জল ধরে রেখেছিলাম, সব বালতির জল ঢেলে দিলাম গাছের গোড়ায়। জলের শ্রোতে ভাসতে ভাসতে পিঁপড়েগুলো হাবুডুবু খেতে লাগল। বাহ্ কী দারুণ একটা কাজ করলাম! এবার বেশ মজা লাগছে। জলের শ্রোতে কিরকম আকুলি বিকুলি করছে বাঁচার জন্য। গাছে উঠে মৌমাছিদের সঙ্গে যোগ দেবার সাহস দেখ এবার! ভেসে যাক উৎপাত সব। সব ভেসে যাক, শব ভেসে যাক জলের তোড়ে। উৎপাতশব।

    উৎপাতের শব দেখতে দেখতে ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। এবার বিশ্রামের দরকার। চোখদুটো একটু বুজে এসেছিল তখনই কেমন যেন অস্বস্তি বোধ হল। চোখ খুলে দেখি আমার সারা বিছানায় পিঁপড়ে ঘুরছে! আমার সারা শরীরে পিঁপড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, মাথার ওপর ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি ভনভন করছে! কী সর্বনাশ এত মৌমাছি হুল ফুটিয়ে দিলে আমি মরে যাব! তারপর আমার মরা শরীর থেকে ঐ পিঁপড়েগুলো মাংস খুবলে খুবলে খাবে! এ্যাই কে আছ? কোথায় গেল সবাই? এত জোরে চিৎকার করছি শুনতে পারছ না? কোথায় আমার পোষা কুত্তাগুলো? এতদিন ধরে তোদের খাইয়ে খাইয়ে কী করলাম যদি তোরা আমাকে রক্ষা করতে না পারবি? এ্যাই কে কোথায় আছিস শিগগির আয়.. ঐ তো, ঐ তো আমার কয়েকটা কুত্তাকে দেখতে পাচ্ছি কিন্তু ওরা ওখানে ওরকম ছটফট করছে কেন? তবে কি ওদের.. হ্যাঁ ঠিক তাই... ওদের চোখে মুখে সর্বত্র পিঁপড়ে আর মৌমাছি কামড়ে ধরেছে... ওরা যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে... আর আমার সারা শরীরে পিঁপড়ে... চোখ মুখ নাক কান দিয়ে দলে দলে পিঁপড়ে ঢুকছে, আমার সবকিছু মৌমাছি আর পিঁপড়ের দখলে... ওফ আমি সহ্য করতে পারছি না আমার সারা শরীরে মৌমাছিরা হুল ফোটাচ্ছে.. পিঁপড়েগুলো শরীরের মাংস খাওয়া শুরু করেছে.... আমি শেষ হয়ে যাব... আমাকে বাঁচাও... আমাকে বাঁচাও... আমি বাঁচতে চাই ঐ মরা মৌমাছিটার মত!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.***.*** | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৪537841
  • yes
  • পাপাঙ্গুল | 49.36.***.*** | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৫৪537844
  • ভাল লাগল 
  • :|: | 174.25.***.*** | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:১৬537847
  • তাই নাকি? সত্য বলছেন? বন্যাটা মমতা প্রতিশোধ নেবার জন্য করেছে? কলকাতার লোকেদের শাস্তি দিয়েছে ইচ্ছাকৃত ভাবে জেলার লোকেদের উপর জল ঢেলে দিয়ে? 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন