বাঙালী বিরাট আঁতেল। সে সারা পৃথিবীর বিষয় নিয়ে চিন্তিত। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, মধ্যপ্রাচ্য, লাতিন আমেরিকা নিয়ে সে জ্বালাময়ী ভাষণ দেয় অথবা প্রবন্ধ লেখে। তাই তার নিজের অবস্থার কথা তার মনে থাকেনা।তার দেশভাগ হয়, তাকে ছিন্নমূল হয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসতে হয়। এনিয়ে অবশ্য সে কিছু বলেনা। বরং এনিয়ে কেউ তথ্যনিষ্ঠ আলোচনা করলে তাকে হিন্দুত্ববাদী, সাম্প্রদায়িক বলে গাল পাড়ে!
একইভাবে গোর্খারা দার্জিলিং অঞ্চল দখল করে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি জানায়, বাঙালি নির্বিকার থাকে।
জনৈক ধর্মোন্মাদ ভিন্নধর্মীর মাথা কেটে ফেলার হুমকি দেয়, কাউকে গাছে বেঁধে পেটাতে চায়! বাঙালির গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হয়না! কেউ আবার একে সাবঅল্টার্ন রাজনীতি বলে চালাতে চায়!
খোদ কলকাতায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে নোটিশ দেওয়া হয়, স্কুলে বাংলাভাষায় কথা বলা যাবেনা, বললে ফাইন হবে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি চুপ করে বসে থাকে। (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তাঁরা নিশ্চিতভাবেই শ্রদ্ধেয়।) বরং অনেক অভিভাবক মিষ্টি হেসে বলেন, আজকের দিনে ইংরেজি না শিখলে তো চলেনা! ইংরেজির গুরুত্ব কেউ অস্বীকার করেনি, কিন্তু তারজন্য মাতৃভাষার অসম্মান কেন হবে? এনিয়ে অবশ্য কেউ কোনো কথা বলেনা! মহারাষ্ট্র বা তামিলনাড়ুর কোনো স্কুলে এইরকম নোটিশ পড়লে পরেরদিন সেই স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হতো!
আসলে বাঙালি বিশ্বমানব হতে চেয়েছে। সেটা দোষের কিছু নয়, তবে নিজের দেশের ও সমাজের সভ্যতাকে অস্বীকার করে করতে গেলে খুবই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে! রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ নিজের দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করেই আন্তর্জাতিক স্তরে প্রকাশিত হয়েছেন, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার মহৎ চিন্তারাশিকে আত্মস্থ করেছেন! আর তথাকথিত শিক্ষিত বাঙালি সমাজ নিজেদের সমাজ-সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে বিশ্বমানব হতে গেছেন! স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের অবস্থা ময়ূরপুচ্ছধারী বায়স অপেক্ষা বিশেষ ভালো নয়!
এঁদের মধ্যে এখন অনেকে আবার একটি চূড়ান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত দলের শরণ নিয়েছেন, অথবা প্রাণপণে ভিরাট হিন্দু হবার চেষ্টা করছেন! তবে কোনোটাতেই বিশেষ লাভ হবে বলে মনে হয় না!
নিজের সভ্যতা, সমাজকে অস্বীকার করে বিশ্বমানব সাজতে গেলে চতুর্দিক থেকে মারই জোটে! এটাই সেই জাতির ভবিতব্য!
বাঙালীর এখন সেই দশাই চলছে! নিজে না জাগলে এই বিপদ থেকে ঠেকায় কে?