এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা   সমাজ

  • এক মুক্তিযোদ্ধার কাহিনী 

    দীপ
    আলোচনা | সমাজ | ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ৩৬৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • (এর লেখক আহমাদ ইশতিয়াক। লেখাটি ফেসবুকে প্রকাশিত। আমি শুধু এখানে ভাগ করে নিলাম মাত্র।)
     
    অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ন দাসের কাছে।
    .
    গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয় তাহলে তাঁর সঙ্গে দেখা করে কিছুক্ষণ কথা বলে একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে নিবো।
    .
     কিন্তু আমার জন্য সবচেয়ে ঝক্কির বিষয় ছিলো এটি যে, আমি তাঁর বাসা চিনিনা। আবার তাঁর ফোন নাম্বারও কারো কাছে নেই। কয়েকজন বন্ধু মারফতে কেবল এটাই জানলাম মানুষটি মনিপুরীপাড়ার একটি ভাড়া বাড়িতে পরিবার সমেত থাকেন। 
    .
    কিন্তু মনিপুরী পাড়ায় তো হাজারের উপর বাড়ি। তিনি কোন বাড়িতে থাকেন এটি কি করে বের করবো! জানা নেই কিছুই। কেবল ভাবনা যদি কোনভাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করার একটা সুযোগ মিলে। সেই চিন্তা থেকেই গেলাম মণিপুরীপাড়ায়। কয়েকজন বয়স্ক লোককে জিজ্ঞেস করলাম, সবার প্রতিউত্তর একটাই, এমন নামে তো কাউকে চিনিনা।  
    .
    হঠাৎ মনে হলো আমি এলাকার সিকিউরিটি ইনচার্জের সাহায্য নিচ্ছিনা কেন! কারণ সিকিউরিটি ইনচার্জ হয়তো জানতে পারে। মণিপুরী পাড়ার সিকিউরিটি ইনচার্জকে ফোন দিয়ে পরিচয় বলে তাঁর নাম জানিয়ে বললাম যদি ফোন নাম্বার বা বাসার ঠিকানাটা পাওয়া যায়। সিকিউরিটি ইনচার্জ বললেন, ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই, তবে বাসার ঠিকানাটা দিতে পারি। তিনি তো বাসা থেকে তেমন বের হননা। কারো সাথে দেখাও করেননা কথাও বলেন না। কারো সাথেই যোগাযোগ নেই। অতঃপর সিকিউরিটি ইনচার্জ মারফত বাসার ঠিকানাটা পাওয়া গেল।
    .
    ঠিক তখনই লোডশেডিং শুরু হওয়ায় এক ঘণ্টা তিনি যে বিল্ডিংয়ে থাকেন সে বিল্ডিংয়ের চারপাশে ঘুরঘুর করলাম। বিদ্যুৎ আসতেই বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি বেয়ে উঠলাম চতুর্থ তলায়। মনে তখন ধুকধুক করছে। যদি একটাবার তাঁর সঙ্গে দেখা হয় তবে কি প্রথমে কি করবো তাই ভাবছি। ভাবলাম প্রথমে তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম বা নমস্কার জানাবো। 
    .
    চারতলায় উঠে কলিংবেল টিপতেই ভিতর থেকে প্রশ্ন এলো ' কে এসেছেন ? আপনি কে?' বললাম, 'একটা প্রয়োজনে আপনার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।'
    .
     জবাব পেয়ে দরজা খুলেই বললেন ‘কি প্রয়োজন? কোথা থেকে এসেছেন?’ বললাম, ‘অমুক পত্রিকা থেকে এসেছি একটা বিশেষ দরকারে। তিনি বললেন 'কি দরকার?' আমি বললাম, 'যদি অনুমতি দেন তো একটু আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’ তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে এবার আপনি আসতে পারেন।’  
    .
    বললাম, ‘ভিতরে আসবো?’ পুরোটা বলার আগেই আমার মুখের উপর দিয়েই দড়াম করে তিনি দরজা বন্ধ করে দিয়ে ভিতর থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে বললেন, ‘আপনি চলে যান। আমি এসব বিষয়ে কথা বলিনা।' 
    .
    আমার তখন কী যে অনুভূতি হয়েছিলো তা আমি আসলে ভাষায় বর্ণনা করতে পারবো না। আমার দেশটির উপর তীব্র ঘৃণা জন্মালো। মনে হলো আমি মাটি খুঁড়ে তখনই ঢুকে পড়ি। কিংবা মরে যাই। আর তীব্র এক লজ্জাবোধ আমাকে চরমভাবে গ্রাস করলো। তিনি শিবনারায়ণ দাস যাকে আমরা সামান্য স্বীকৃতিটুকু দিতেও চরম কার্পণ্য করেছি। 
    .
    তিনি সেই শিবনারায়ণ দাস যার নকশাকৃত পতাকা আমরা গোটা মুক্তিযুদ্ধকালে ব্যবহার করেছি। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় তাঁর নকশা করা পতাকাতেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।  
    .
    দেশ স্বাধীনের পর সে পতাকা থেকে মানচিত্র ছিঁড়ে তুলে পটুয়া কামরুল হাসানকে নিয়ে আমরা পতাকা সংশোধন করিয়ে শিবনারায়ণ দাসকে ইতিহাস থেকে পুরোপুরি মুছে দিয়েছি। মূল পতাকার নকশা করেও আজ অব্দি কোন প্রকার স্বীকৃতি পাননি শিবনারায়ণ দাস।
    .
    তিনি সেই শিবনারায়ণ দাস যিনি ১৯৭০ সালে ছিলেন কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা। ডাকসাইটে এই ছাত্রনেতা মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণেও প্রাণ বাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন। তাঁর স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরীও নিজেও ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। 
    .
    তাঁর বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী চিকিৎসক সতীশচন্দ্র দাস মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়ার পরেও শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতিটুকুও পাননি।   
    .
    কেন তাঁদের অভিমান হবেনা বলতে পারেন? কেন তাঁর আমাদের উপর রাগ হবেনা? আমার ভাগ্য ভালো যে তিনি আমার মুখের উপর দরজা আটকে চলে যেতে বলেছিলেন। অন্তত জুতাপেটা করেননি। 
    .
    শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গী ছাত্রনেতারা মন্ত্রী হয়েছেন, নেহাতই হয়েছেন এমপি। কেউ পেয়েছেন দলের সর্বোচ্চ পদ, রাজপথে পাজেরো হাঁকিয়ে বেড়িয়েছেন। এটি হওয়াটাই তো স্বাভাবিক ছিল। কারণ তাঁদের ত্যাগের ফলেই তো নির্মিত এই স্বদেশ। অথচ শিবনারায়ণ দাসকে আজ ধুঁকে ধুঁকে শ্বাসকষ্টে ভুগতে হয়।
    .
    আজ শিবনারায়ণ দাস একটি ভাড়া বাসায় আশ্রয়ী হয়ে থাকেন। সেই বাড়ির প্রতিবেশীদের কাছেই শুনেছি চিকিৎসা করতে হলে আজো চারবার করে ভাবতে হয় শিবনারায়ণ দাসকে। 
    .
    শিবনারায়ণ দাস যেন আজ এক বিস্মৃত ইতিহাস। যাকে আমরা স্রেফ ভুলে গেছি। আমাদের এক অনন্য কারিগরকে আমরা স্রেফ উচ্ছেদ করেছি। পাঠ্যপুস্তকে জাতীয় পতাকার ইতিহাস লেখা হয়েছে তাঁকে বাদ দিয়েছি।  
    সর্বত্র জাতীয় পতাকার ডিজাইনার হিসেবে পটুয়া কামরুল হাসানের নাম। নেই কোথাও শিবনারায়ণ দাসের নাম। 
    .
    এসব ক্ষোভ অভিমান আর প্রচণ্ড কষ্টবোধ থেকেই পুরোপুরি নিভৃতচারী হয়ে গিয়েছিন শিবনারায়ণ দাস। প্রচার বিমুখ শিবনারায়ণ এড়িয়ে চলেছেন সমস্ত কিছু। 
    .
    এই মানুষটিকে পদে পদে আমরা অপমান করেছি। লাঞ্ছিত করেছি, অপদস্ত করেছি। কিন্তু এরপরেও কি আমাদের বিন্দুমাত্র আত্মসমালোচনা হবেনা? এভাবেই শিবনারায়ণ দাস চলে গেছেন। আমরা কখনোই তাঁকে স্পর্শ করার সুযোগটুকুও পাইনি। 
    .
    আজ সকালে চির ঘুমের দেশে পাড়ি জমালেন শিবনারায়ণ দাস। আমৃত্যু শিবনারায়ণ দাস সেই অভিমানটুকু জিইয়ে রেখেছিলেন। 
    .
    কেনইবা রাখবেন না, আমাদের ইতিহাসের অনন্য সেই কারিগরকে যে আমরা তীব্র অবহেলিত, অবাঞ্চিত করে রেখেছিলাম। কি অদ্ভুত আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য ভাবতেই ভীষণ লজ্জা লাগে।
     
    আজ মৃত্যুর পর হয়তো শিবনারায়ণ দাস পুষ্পস্তবক পাবেন। তাঁর কফিন হয়তো ফুলে ফুলে ঢেকে যাবে। নানাজন নানা বিবৃতি দিবে। প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রীরাও শোকবার্তা পাঠাতে পারেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে যে শিবনারায়ণ দাস ধুঁকতে ধুঁকতে বেঁচেছিলেন, সেই হিসেব টার কি হবে? হয়তো কখনো শিবনারায়ণ দাস মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় পদক পাবেন, তাতে আদৌ শিবনারায়ণ দাসের কি হবে?
     
    বেঁচে থাকতে যে মানুষটিকে আমরা মূল্যায়ন করিনি, স্রেফ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও কার্পণ্য করেছি, সেই মানুষটার সামান্য পচা ফুলের স্তবকে কি আসে যায়?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • jsl | 134.238.***.*** | ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১১742890
  • সরকারী মুক্তিযুদ্ধ সনদে দুজনেরই নাম আছে। যতদূর জানি, সনদে নাম থাকলে সরকারীভাবে প্রাপ্য জিনিসগুলি পাওয়া যায়।

    একটা দেশ স্বাধীনতার আন্দোলন জে প্রতীক নিয়ে করে, স্বাধীনতার পর তা অনেক সময় বদলায়। ভারতের জাতীয় পতাকা অনেক বদলের মধ্য দিয়ে গেছে।
    অনেক স্বাধীনতা যোদ্ধা অভীষ্ট লাভের পর ক্যারিয়ারে মন দেন বা দুর্নীতিগ্রস্ত হন, পাজেরো গাড়ি নিয়ে ঘোরেন বা ব্যবসা করেন বা মন্ত্রী হন, কারো স্বপ্ন আরো দীর্ঘমেয়াদী হয়, অনেকর স্বপ্নভঙ্গ হয়, অনেকে লড়ে যান, অনেকে তিক্ত হয়ে পড়েন।
    কিন্তু শিব নারায়ন দাশকে বাংলাদেশ ইতিহাস থেকে মুছে দিয়েছে - এটা মিথ্যে কথা। বাংলাদেশের লোক বললেও মিথ্যে।

    তার প্রমান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা অনুসন্ধানের পাতা দেখা যেতে পারে।

    এসব তথ্য খুঁজে বের করা বা যাঁচাই করা বেশ সোজা। আর যাঁচাই না করে ছড়িয়ে দেওয়া তো আরোই সোজা।

    http://ff.molwa.gov.bd/ps

    মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
    বীর মুক্তিযোদ্ধা অনুসন্ধান

    সাময়িক সনদ
    ক্রমিক নং 9177
    সনদ নং167904
    নামঃ শিব নারায়ন দাশ
    পিতার নামঃ স্বর্গীয় সতীশ চন্দ্র দাশ
    গ্রামঃ বাগিচাগাঁও
    পোষ্ট অফিস/ইউপি/পৌরসভাঃকুমিল্লা
    থানা/উপজেলাঃ কুমিল্লা আদর্শ 
    সদরজেলাঃ কুমিল্লা

    স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দ সৈনিক গেজেট
    গেজেটের পৃষ্ঠা ও তারিখ7700, 13-07-2017
    গেজেট নং 217
    নামঃ গীতশ্রী চৌধুরী
    পিতার নামঃ মৃত অসিত রঞ্জন চৌধুরী
    গ্রামঃ কান্দিরপাড় নজরুল এভিনিউ রোড
    পোষ্ট অফিস/ইউপি/
    পৌরসভাঃ কুমিল্লা সদর
    থানা/উপজেলাঃ কুমিল্লা 
    সদরজেলাঃ কুমিল্লা
  • মনমাঝি | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ২২:১৫742897
  • "স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার নকশা কিন্তু করা হয়ে গিয়েছিলো স্বাধীনতার কিছু আগেই। বাংলাদেশের প্রথম পতাকাটির নকশা কিন্তু ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ সংগঠনের কিছু কর্মী এবং ছাত্রনেতার হাত ধরে। ১৯৭০ সালের ৬ ই জুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১০৮ নং কক্ষে পতাকার প্রাথমিক নকশাটি করা হয় যার নকশাকাররা হচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আব্দুর রব, কাজী আরেফ আহমেদ, শাহজাহান সিরাজ, মনিরুল ইসলাম (মার্শাল মনি), স্বপন কুমার চৌধুরী; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাস, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু, ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ, কামরুল আলম খান (খসরু) সহ আরো অনেকে।
    সেখানে হওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবুজ পটভূমিতে লাল সূর্যের মাঝে হলুদ বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত পতাকার নকশাটি চূড়ান্ত হয়। এই বাংলাদেশের মানচিত্রটি একটি বিশেষ কারণবশত পতাকায় যোগ করা হয়। সে সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত স্লোগান ছিলোঃ “জয় বাংলা”। সে ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, যে কোন বাংলার কথা বলা হচ্ছে? পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা নাকি দুই বাংলাই? তখন সিদ্ধান্ত হয় পতাকায় দেয়া থাকবে তৎকালীন পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) এর ভূমি প্রতিকৃতি তথা মানচিত্র। মজার ব্যাপার হলো দেশ স্বাধীন হলে যে ঐ মানচিত্রের প্রয়োজন হবে না সে সিদ্ধান্তটিও ওখানে নেয়া হয়েছিলো- যা কিনা পরবর্তীতে পটুয়া কামরুল হাসানের নকশা করা পতাকার (বর্তমান পতাকা) ক্ষেত্রে সত্যি হয়েছিলো।

    পূর্বে নকশাকৃত বাংলাদেশের পতাকা

    ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত পতাকা
    অ্যাপোলো টেইলর্স এর মালিক বজলুর রহমান লস্করের দেয়া কাপড় নিয়ে কামরুল আলম খান (খসরু) তখন ঢাকা নিউ মার্কেটের বিহারী দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে আনেন। এ ঘটনার স্মৃতি রোমন্থনকালীন শিবনারায়ণ দাসের এক বক্তব্য অনুসারে, রাত প্রায় ১২ টার দিকে পতাকাটি সেলাই করতে যাওয়া হয় এবং ঐ মধ্যরাত্রে দর্জিদের তুলে কাজটির কথা বলা হয়। পতাকার কাজের কথা শুনে কিন্তু দর্জিরা একটুও আপত্তি করেননি বরং বিনা পারিশ্রমিকে কাজটি করে দিয়েছিলেন তারা।

    এরপরে, ইউসুফ সালাউদ্দিন আহমেদ এবং হাসানুল হক ইনু পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমান বুয়েট) কায়েদে আজম হলের (বর্তমান তিতুমীর হল) ৩১২ নং কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে মানচিত্রের বই নেন এবং তাঁরা ট্রেসিং পেপারে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র আঁকেন। ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাস অতঃপর হলুদ রং এবং ম্যাচের কাঠি ব্যবহার করে মানচিত্রটি পতাকার লাল বৃত্তের মাঝে আঁকেন। এভাবেই প্রস্তুত হয় বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা যা কিনা ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথম উত্তোলিত হয়।
    প্রথম উত্তোলনটি করেন ছাত্রনেতা ও ‘ডাকসু’র তদানীন্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আ স ম আবদুর রব, এ সময় অন্যান্য ছাত্রনেতা ও কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ২৩ শে মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এর বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পতাকার লাল বৃত্তটি ছিলো উদীয়মান লাল সূর্যের প্রতীক। ‘সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যক্টবুক’ অনুযায়ী, বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি বুঝাতে পতাকায় সবুজ রং ব্যবহার করা হয়েছিল। তৎকালীন পতাকাটি তাই ছিলো উজ্বল সবুজে বিরাজমান লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) এর মানচিত্র।
    বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পটুয়া কামরুল হাসানকে পতাকাটির নতুন নকশা, ব্যাখ্যা ও এর উপর প্রতিবেদন করার নির্দেশ দেন। কামরুল হাসান কর্তৃক নকশা করা মানচিত্রবিহীন পতাকাটিই বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে সর্বত্র প্রচলিত। কামরুল হাসানের কিন্তু বর্তমান পতাকাটি মাপজোখ ও তৈরি করতে বেশ সময় লেগেছিলো। পতাকার জন্য ১৯৭২ সালে প্রণীত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা।"
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন